প্রেরিতগণের কার্য-বিবরণ

16/59

১৫শ অধ্যায়—বন্দীত্ব থেকে মুক্তি

“তৎকালে হেরোদ রাজা মন্ডলীর কয়েক জনের প্রতি উপদ্রব করিবার জন্য হস্তক্ষেপ করিলেন।” যিহূদিয়ার সরকার ব্যবস্থা তখন হেরোদ আগ্রিপ্পের অধীনে ছিল, যিনি রোম সম্রাট ক্লডিয়াসের অনুগত ছিলেন। হেরোদ গালীলের শাসনকর্তাও ছিলেন। তিনি নিজেকে যিহূদী ধর্মের একজন কট্টর সমর্থক হিসেবে প্রচার করতেন এবং যিহূদী রীতিনীতি রক্ষায় তিনি অত্যন্ত উৎসাহী ছিলেন। নিজের অবস্থান ও সম্মান আরও দৃঢ় করার জন্য যিহূদীদের সমর্থন পাওয়ার আশায় তিনি খ্রীষ্টের মন্ডলীর উপরে নির্যাতন চালাতে আরম্ভ করলেন, বিশ্বাসীদের বাড়িঘরে লুটতরাজ চালাতে লাগলেন এবং মন্ডলীর নেতৃস্থানীয় সদস্যদেরকে ধরে ধরে বন্দী করতে লাগলেন। তিনি যোহনের ভাই যাকোবকে কারাগারে নিক্ষেপ করলেন এবং একজন জল্লাদকে দিয়ে তার শিরোচ্ছেদ করালেন, ঠিক যেভাবে আরেক হেরোদ বাপ্তিস্মদাতা যোহনকে শিরোচ্ছেদ করিয়েছিলেন। এই উদ্যোগে যিহূদীরা বেশ সন্তুষ্ট হয়েছে দেখে তিনি পিতরকেও বন্দী করলেন। AABen 116.1

তাড়ীশূন্য রুটির পর্বের সময় এই নিষ্ঠুর কাজগুলো করা হতে লাগল।যিহূদীরা যখন মিসরের বন্দীদশা থেকে উদ্ধার লাভের জন্য উৎসব পালন করছিল এবং ঈশ্বরের বিধি বিধানের প্রতি তাদের ভক্তি প্রকাশ করছিল, একই সময়ে তারা খ্রীষ্টের বিশ্বাসীদের উপরে নির্যাতন চালানো ও তাদের হত্যা করার মধ্য দিয়ে সেই বিধান লঙ্ঘন করছিল। AABen 116.2

যাকোবের মৃত্যু বিশ্বাসীদের মধ্যে দারুন শোক ও হাহাকার সৃষ্টি করল। পিতরকেও যখন কারাবন্দী করা হল তখন পুরো মন্ডলী উপবাস এবং প্রার্থনায় নিমগড়ব হল। AABen 116.3

______________________________________«

এই অধ্যায়টি প্রেরিত ১২:১—২৩ পদের উপর ভিত্তি করে রচিত

______________________________________«

যাকোবের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করায় হেরোদকে যিহূদীরা অনেক প্রশংসা করল, যদিও তা নিভৃতে করার কারণে অনেকে মনঃক্ষুণড়ব হয়েছিলেন, কারণ জনসম্মুখে এই মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হলে বিশ্বাসীরা এবং যারা তাদেরকে সমর্থন করেন তারা সকলেই আরও বেশি ভীত সন্ত্রস্ত হত। এ কারণে হেরোদ পিতরকে বন্দী করলেন, যেন তিনি প্রকাশ্যে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে পারেন। কিন্তু তাকে এই পরামর্শ দেওয়া হল যে, বৃদ্ধ প্রেরিত পিতরকে জনসমক্ষে হত্যা করার জন্য যিরূশালেমে নিয়ে আসাটা খুব একটা নিরাপদ হবে না। তারা ভয় পাচ্ছিলেন যে, পিতরকে দেখে হাজার হাজার উপস্থিত মানুষের মনে তাঁর জন্য সহানুভূতি জেগে উঠতে পারে। AABen 117.1

যাজক ও প্রাচীনবর্গও এই ভয় পাচ্ছিলেন যে, পাছে পিতর জনসমক্ষে এমন কোন কথা বলে বসেন যার জন্য লোকেরা যীশুর জীবন ও চরিত্র সম্পর্কে আবার চিন্তা করতে শুরু করে — যা তাদের উদ্দেশ্যের সম্পূর্ণ বিপরীত হবে। খ্রীষ্টের কথা প্রচারে পিতরের একাগ্রতার কারণে অনেকেই সুসমাচার গ্রহণ ক্েরছিলেন এবং শাসনকর্তারা ভয় পাচ্ছিলেন যে, তাঁকে জনসমক্ষে আনা হলে তিনি হয়তো যিরূশালেমের ধর্মধামে আসা হাজার হাজার লোকেরা সামনে আবারও তাঁর বিশ্বাসের সাক্ষ্য দিতে শুরু করবেন, যার কারণে সম্রাট হয়তো তাঁকে মুক্ত করে দেওয়ার আদেশ দেবেন। AABen 117.2

বিভিন্ন মত ও দ্বিমতের কারণে পরবর্তী তাড়ীশূন্য রুটির উৎসব পর্যন্ত পিতরের মৃত্যুদন্ড কার্যকর পিছিয়ে দেওয়া হল। এ সময় মন্ডলীর সদস্যরা গভীর ধ্যান ও মগড়বতায় পিতরের জন্য প্রার্থনা করছিলেন। পিতরের জন্য তারা অনবরতভাবে প্রার্থনা করছিলেন, কারণ তারা অনুভব করেছিলেন হয়তো এবার আর তিনি মুক্তি পাবেন না। তারা বুঝতে পেরেছিলেন যে, এমন একটি স্থানে এসে তারা পৌঁছেছেন যেখানে ঈশ্বর স্বয়ং সাহায্য না করলে খ্রীষ্টের মন্ডলী ধ্বংস হয়ে যাবে। AABen 117.3

ইতোমধ্যে বিভিন্ন জাতি থেকে আগত উপাসনাকারীরা ঈশ্বরের আরাধনার জন্য নির্মিত পবিত্র মন্দির দর্শন করতে এসেছিলেন। সোনা ও দামী পাথরে সুসজ্জিত এই মন্দিরটি সত্যিই দেখার মত ছিল। কিন্তু যিহোবা আর ঐশ্বর্যে ভরা ঐ দালানে অবস্থান করছিলেন না। ইসরাইল জাতিগতভাবে ঈশ্বরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। খ্রীষ্ট যখন তাঁর পার্থিব পরিচর্যার শেষ পর্যায়ে এসে শেষবারের মত এই মন্দিরের দিকে চোখ তুলে তাকিয়েছিলেন তখন তিনি বলেছিলেন, “দেখ, তোমাদের গৃহ তোমাদের নিমিত্ত উৎসনড়ব হইয়া পড়িয়া রহিল।” মথি ২৩:৩৮। এর আগ পর্যন্ত তিনি এই মন্দিরকে তাঁর পিতার গৃহ বলেছেন; কিন্তু ঈশ্বরের পুত্রকে যখন ঐ মন্দিরের চৌহদ্দি থেকে সরিয়ে দেওয়া হল তখন ঈশ্বরের উপস্থিতিও তাঁরই মহিমার জন্য নির্মিত মন্দির থেকে চিরতরে সরে গেল। AABen 117.4

অবশেষে পিতরের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার দিন নির্ধারণ করা হল, কিন্তু তখন পর্যন্ত বিশ্বাসীদের প্রার্থনা স্বর্গে উত্থাপিত হচ্ছিল; এবং তারা যখন সমস্ত শক্তি ও মমতা দিয়ে সাহায্যের জন্য আকুলভাবে প্রার্থনা করে যাচ্ছিলেন, তখন ঈশ্বরের দূতগণ এই বন্দী প্রেরিতদের দিকে দৃষ্টিপাত করছিলেন। AABen 118.1

এর আগে কারাগার থেকে প্রেরিতদের মুক্তি লাভের ঘটনা মনে করে হেরোদ এবার দ্বিগুণ নিরাপত্তা সাবধানতা অবলম্বন করলেন। পিতর যেন কোনভাবেই ছাড়া না পান সেজন্য তাঁর সাথে ষোলজন সৈন্যকে মোতায়েন করা হয়েছিল, যারা পালাক্রমে দিনরাত তাঁকে পাহারা দিত। তাঁকে একটি কারাকক্ষে দুই জন সৈন্যের মাঝখানে শেকল দিয়ে বন্দী করে রাখা হয়েছিল। তাঁর দুই হাতেই শেকল লাগানো ছিল এবং শেকল দুটির অপর প্রান্ত দুই রক্ষীর হাতের লাগানো ছিল। তাদেরকে ফাঁকি দিয়ে পালানো তাঁর পক্ষে কোনভাবেই সম্ভব ছিল না। কারাগারের দ্বার খুব মজবুত করে লাগানো ছিল এবং তার সামনে কড়া পাহারা বসানো ছিল। সে কারণে মানবীয় প্রচেষ্টায় কারাগার থেকে বের হওয়ার সমস্ত পথ একেবারে বন্ধ ছিল। কিন্তু মানুষের ব্যর্থতা ঈশ্বরের সম্ভাবনা উন্মোচন করে। AABen 118.2

পিতরকে পাহাড় কেটে তৈরি করা একটি কারাকক্ষে রাখা হয়েছিল এবং তার দরজা ছিল মজবুত ধাতুর তৈরি; উপরন্তু পাহারায় যে সমস্ত রক্ষীকে বসানো হয়েছিল তাদের প্রত্যেককেই বন্দীকে ঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে কড়া জবাবদিহি করতে হত। কিন্তু যে নি—িদ্র দরজা ও কারাকক্ষ এবং রোমীয় সৈন্যবাহিনী পিতরের কাছে মানবীয় সমস্ত সাহায্য নিয়ে আসার পথ বন্ধ করে দিয়েছিল, তা পিতরকে উদ্ধারের ক্ষেত্রে ঈশ্বরের সাফল্য লাভের পথকে বরং আরও সুগম করে দিয়েছিল। হেরোদ স্বয়ং সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন এবং তাঁকে সম্পূর্ণ পরাস্ত হতেই হত। ঈশ্বর তাঁর পরাক্রমের মধ্য দিয়ে সেই মহামূল্য প্রাণকে রক্ষা করলেন যাকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য যিহূদীরা অভিসন্ধি করছিল। AABen 118.3

এটিই ছিল মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার আগের সর্বশেষ রাত। শক্তিশালী একজন স্বর্গদূতকে পাঠানো হল পিতরকে উদ্ধার করার জন্য। ঈশ্বরের পবিত্র ব্যক্তিকে যে দুর্ভেদ্য দ্বার বন্দী করে রেখেছিল তা কোন মানুষের সহায়তা ছাড়াই খুলে গেল। উর্ধ্ব থেকে আসা স্বর্গদূত সেখানে প্রবেশ করলেন এবং একান্ত নিঃশব্দে দরজা তাঁর পেছনে বন্ধ হয়ে গেল। তিনি কারাকক্ষে প্রবেশ করলেন, যেখানে পিতর অন্তরে ঈশ্বরের উপরে পরিপূর্ণ আস্থা নিয়ে ঘুমোচ্ছিলেন। AABen 119.1

স্বর্গদূতের দেহ থেকে নির্গত আভায় কারাকক্ষ ভরে গেল, কিন্তু তাতে প্রেরিত জাগলেন না। তিনি জেগে উঠলেন স্বর্গদূতের স্পর্শে এবং তাঁর এই কণ্ঠ শুনে, “শীঘ্র উঠ।” তিনি ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখলেন পুরো কারাকক্ষ স্বর্গীয় জ্যোতিতে ভরে গেছে এবং তাঁর সামনে একজন স্বর্গদূত মহাপ্রতাপে দাঁড়িয়ে আছেন। যন্ত্রের মত তিনি এই আদেশ পালন করলেন এবং উঠতে গিয়ে তিনি খেয়াল করলেন তাঁর হাতে আর শেকল পরানো নেই। AABen 119.2

স্বর্গদূতের কণ্ঠ আবারও তাঁকে বলল, “কোমর বাঁধ, ও তোমার জুতা পর,” এবং আবারও পিতর যন্ত্রের মত আদেশ অনুসরণ করলেন। মাঝরাতের আগন্তুককে দেখে পিতর মনে মনে ভাবছিলেন তিনি বোধহয় স্বপড়ব দেখছেন বা কোন দর্শনের মধ্যে আছেন। আরও একবার স্বর্গদূত আদেশ দিলেন, “গায়ে কাপড় দিয়া আমার পশ্চাৎ পশ্চাৎ আইস।” তিনি দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন এবং পেছনে আসতে লাগলেন সদালাপী পিতর, যিনি এখন বিস্ময়ে একেবারেই নিশ্চুপ হয়ে রয়েছেন। রক্ষীদের পার হয়ে তারা ভারী হুড়কো বসানো দরজার কাছে পৌঁছে গেলেন এবং সেটা নিজে থেকেই খুলে গেল। তারা দরজা দিয়ে বের হওয়ার সাথে সাথে সেটা আবার বন্ধ হয়ে গেল এবং ভেতরে রক্ষীরা একইভাবে পড়ে রইল। AABen 119.3

দ্বিতীয় দরজাটির কাছে তারা পৌছে গেলেন, যার ভেতরে এবং বাইরে রক্ষী বসানো ছিল। সেটাও প্রথম দরজাটির মত খুলে গেল, অথচ কোন হুড়কো খুলতে হল না। তারা বেরিয়ে যাওয়ার পরপরই সেটা নিঃশব্দে বন্ধ হয়ে গেল। একইভাবে তারা তৃতীয় দ্বারটিও পার হয়ে গেলেন এবং অবশেষে তারা বাইরের খোলা রাস্তায় এসে পড়লেন। কোন কথার আওয়ার ভেসে এল না; কোন পদধ্বনি শোনা গেল না। স্বর্গদূত বাতাসে ভাসতে ভাসতে উজ্জ্বল জ্যোতি ছড়িয়ে এগিয়ে যেতে লাগলেন এবং তার পেছনে হতবিহবল পিতর যেন স্বপড়বাদৃষ্ট হয়ে এগিয়ে আসতে লাগলেন। এভাবে তারা একের পর এক রাস্তা ও গলি পেরিয়ে যেতে লাগলেন এবং তখনই স্বর্গদূতের দায়িত্ব সম্পনড়ব হওয়ার পর তিনি হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে গেলেন। AABen 119.4

স্বর্গীয় জ্যোতি হঠাৎ করেই নিষ্প্রভ হয়ে পড়ল এবং পিতর নিজেকে গাঢ় অন্ধকারে আবিষ্কার করলেন; কিন্তু ধীরে ধীরে তাঁর দৃষ্টি অন্ধকারে সয়ে এল এবং তিনি নিজেকে আবিষ্কার করলেন নির্জন একটি রাস্তায়। গভীর রাতের ঠান্ডা হাওয়া তাঁর চুল এলোমেলো করে দিচ্ছিল। এতক্ষণে তিনি বুঝতে পারলেন যে, আসলেই তিনি মুক্ত হয়েছেন এবং নগরীতে তাঁর পরিচিত একটি এলাকায় এসে পড়েছেন। তিনি বুঝতে পারলেন যে, এই স্থানটিতে তিনি বেশ কয়েকবারই এসেছেন এবং আগামীকালও তাঁর এখান দিয়ে শেষবারের মত যাওয়ার কথা ছিল। AABen 120.1

বিগত কয়েক মুহূর্তের ঘটনা তিনি মনে করার চেষ্টা করলেন। তিনি তাঁর ঘুমিয়ে পড়া, দুই রক্ষীর মাঝখানে বন্দী অবস্থায় থাকা এবং তাঁর পায়ের জুতো ও বহির্বাস খুলে নেওয়ার কথা স্মরণ করলেন। কিন্তু তিনি এবার নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলেন তাঁর পায়ে জুতো রয়েছে এবং গায়েও বহির্বাস বা চাদর রয়েছে। শক্ত লোহার বেড়ী পড়ে থাকার কারণে তাঁর কব্জি ফুলে লাল হয়ে গেছে। তিনি বুঝতে পারলেন যে, কোন দর্শন বা স্বপড়ব দেখছেন না, বরং তিনি সত্যিই মুক্তি লাভ করেছেন। আগামীকালই তাঁর মৃত্যুকে বরণ করার কথা; কিন্তু আজ একজন স্বর্গদূত তাঁকে বন্দীত্ব ও মৃত্যু থেকে উদ্ধার করেছেন। “তখন পিতর সচেতন হইয়া কহিলেন, এখন আমি নিশ্চয় জানিলাম, প্রভু নিজ দূতকে প্রেরণ করিলেন, ও হেরোদের হস্ত হইতে এবং যিহূদী লোকদের সমস্ত আকাঙ্ক্ষা হইতে আমাকে উদ্ধার করিলেন।” AABen 120.2

তখনই প্রেরিত পিতর সেই গৃহে গেলেন যেখানে তাঁর ভাইয়েরা একত্রিত হয়ে সেই মুহূর্তেই তাঁর জন্য প্রার্থনা করছিলেন। ” পরে তিনি বাহিরের দ্বারে আঘাত করিলে রোদা নাæী এক জন দাসী শুনিতে আসিল; এবং পিতরের স¦র চিনিয়া আনন্দ বশতঃ দ্বার খুলিল না, কিন্তু ভিতরে দৌড়াইয়া গিয়া সংবাদ দিল, পিতর দ্বারের সম্মুখে দাঁড়াইয়া আছেন। তাহারা তাঁহাকে কহিল, তুমি পাগল; কিন্তু সে দৃঢ়রূপে বলিতে লাগিল, না, তাহাই বটে! তখন তাঁহারা কহিল, উনি তাঁহার দূত। AABen 120.3

“কিন্তু পিতর আঘাত করিতে থাকিলেন; তখন তাঁহারা দ্বার খুলিয়া তাঁহাকে দেখিতে পাইল, ও চমৎকৃত হইল। তাহাতে তিনি হস্ত দ্বারা নীরব হইবার জন্য ইঙ্গিত করিয়া, প্রভু কিরূপে তাঁহাকে কারাগার হইতে উদ্ধার করিয়া আনিয়াছেন, তাহা তাহাদের কাছে বর্ণনা করিলেন।” এরপর পিতর“বাহির হইয়া অন্য স্থানে চলিয়া গেলেন।” বিশ্বাসীদের অন্তর আনন্দ ও প্রশংসায় পরিপূর্ণ হল, কারণ ঈশ্বর তাদের প্রার্থনা শুনেছেন এবং পিতরকে হেরোদের হাত থেকে উদ্ধার করেছেন। AABen 121.1

সকালে অনেক লোক প্রেরিত পিতরের বিচার দেখার জন্য জমায়েত হল। হেরোদ পিতরকে কারাগার থেকে নিয়ে আসার জন্য তাঁর সেনাপতিকে পাঠিয়ে দিলেন এবং সাথে সুসজ্জিত বিরাট এক সৈন্যদল দিলেন যেন পথিমধ্যে পিতর কোনভাবে পালাতে না পারেন, উপরন্তু এর মধ্য দিয়ে যারা পিতরের প্রতি সহমর্মিতা দেখাচ্ছিলেন তাদেরকে নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি রাজা হিসেবে তার ক্ষমতারও প্রকাশ তিনি করতে চাচ্ছিলেন। AABen 121.2

দ্বাররক্ষীরা যখন দেখল পিতর পালিয়ে গেছেন, তখন তারা আতঙ্কে পূর্ণ হল। পিতর যদি কোনভাবে পালিয়ে যান তাহলে তাকে পাহারা দেওয়ার দায়ভার যে সৈন্যদের উপর ছিল, তাদের জীবন দিয়ে মূল্য দিতে হবে এমনটা বলা হয়েছিল। আর এখন পিতরের এই পালিয়ে যাওয়ার দায়ভার সর্বাংশে তাদের উপরেই এসে পড়ে। সেনাপতি যখন পিতরকে নেওয়ার জন্য এলেন তখনও সৈন্যরা কারাগারের দরজায় মোতায়েন ছিল এবং দরজার খিল ও হুড়কো যথাস্থানে বসানো ছিল, এমনকি দুই সৈন্যের হাতেও বেড়ী পরানো ছিল; অথচ কয়েদী উধাও। AABen 121.3

পিতরের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা যখন হেরোদের কানে এল তখন তিনি একাধারে অত্যন্ত বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ হলেন। কারারক্ষীদেরকে বিশ্বাসঘাতকতার দায় দিয়ে তিনি তাদেরকে হত্যা করার আদেশ দিলেন। হেরোদ জানতেন যে, মানবীয় কোন শক্তি পিতরকে মুক্ত করতে পারেন না, কিন্তু তিনি কোনমতেই এই ঘটনার পেছনে ঐশ্বরিক কোন ক্ষমতার হাত আছে বলে স্বীকার করতে চাইলেন না এবং নিজেকে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে দুঃসাহসিক এক অবস্থানে দাঁড় করালেন। AABen 121.4

কারাগার থেকে পিতরের উদ্ধারের কিছুদিন পরই হেরোদ কৈসরিয়াতে যান। জনগণের মধ্যে জনপ্রিয়তা তৈরি করার জন্য তিনি এক বিরাট উৎসবের আয়োজন করেছিলেন। এই উৎসবে দেশের সমস্ত অঞ্চল থেকে আমোদ প্রমোদ অনুরাগী লোকেরা অংশগ্রহণ করেছিল এবং সেখানে প্রচুর খাওয়াদাওয়া ও মদ্যপান হচ্ছিল। অত্যন্ত জমকালো ও নাটকীয়ভাবে হেরোদ জনতার সামনে উপস্থিত হন। তিনি রূপা ও সোনা দিয়ে তৈরি আলখেল্লা পরেছিলেন, ফলে তাতে রোদের আলো পড়ে তা আরও বেশি চোখ ধাধানো উজ্জ্বলতা সৃষ্টি করেছিল। তার এই জমকালো চেহারা ও পরিচ্ছদ এবং নাটকীয় ভাষণের কারণে জনতার কাছে তিনি অত্যন্ত ক্ষমতাশালী ব্যক্তি বলে সাব্যস্ত হয়েছিলেন। ভরপেট খাওয়া ও মদ্যপানের কারণে জনতার সমস্ত বোধবুদ্ধি এমনিতেই লোপ পেয়েছিল। কাজেই তারা হেরোদের বাহ্যিক চাকচিক্য এবং মন ভোলানো কথা শুনে তারা তার ভ‚য়সী প্রশংসা করতে শুরু করল এবং বলল, পৃথিবীর কোন মানুষের চেহারা বা কণ্ঠ এমন হতে পারে না। এরপর তারা তাকে এমন সম্মান দিল যা এর আগে পার্থিব কোন শাসককে কেউ দেয়নি। জনতা হেরোদকে দেবতা সাব্যস্ত করে তাকে পূজো করার চিন্তা শুরু করল। AABen 121.5

যাদের কণ্ঠস্বর এখন এক জঘন্য অপরাধীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হচ্ছে তারাই মাত্র কয়েক বছর আগে চিৎকার করে বলেছিল যীশুকে ক্রুশে দাও! ক্রুশে দাও! যিহূদীরা যীশুকে গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছিল, যাঁর পোশাক বহু ব্যবহারে ও ভ্রমণের ক্লেশে নোংরা বা ছেঁড়া ছিল, তথাপি সেই পোশাকের নিচে ছিল এক স্বর্গীয় ভালবাসায় পূর্ণ অন্তর। নম্রতাপূর্ণ বাহ্যিক পরিচ্ছদ দেখে তারা প্রভুর জীবন ও তাঁর মহিমার সঠিক মূল্যায়ন করতে পারেনি। অথচ যীশুর ক্ষমতা যেভাবে তাঁর আশ্চর্য কাজের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে তা আর অন্য কোন মানুষ কখনো করতে পারেনি। কিন্তু তারা একজন ধৃষ্ট রাজাকে দেবতা বলে আরাধনা করতে চাইছে কেবল তার দূষিত ও নিষ্ঠুর হৃদয় সোনা ও রূপা দিয়ে তৈরি পোশাকে মোড়ানো রয়েছে বলে। AABen 122.1

হেরোদ জানতেন তাকে যে সমস্ত প্রশংসা ও গৌরব দেওয়া হচ্ছে তার কোন কিছুই তার প্রাপ্য নয়, তথাপি খুব আগ্রহ সহকারে তিনি জনতার এই পৌত্তলিকতাধর্মী অভিবাদন তার ন্যায্য দাবী মনে করে গ্রহণ করলেন। তার হৃদয় বিজয়ের আনন্দে এবং অহঙ্কারে পূর্ণ হল যখন তিনি জনতার এই মন্তব্য শুনতে পেলেন, “এ দেবতার রব, মানুষের নয়।” AABen 122.2

কিন্তু হঠাৎ করেই তার মধ্যে ভয়ানক এক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেল। তার চেহারা মৃত মানুষের মত মলিন এবং ফ্যাকাশে হয়ে গেল। তার সমস্ত লোমক‚প থেকে বড় বড় ঘামের ফোঁটা পড়তে লাগল। তিনি এক মুহূর্ত সেখানে এমনভাবে দাঁড়িয়ে থাকলেন যেন প্রচন্ড বেদনা ও আতঙ্ক তাকে গ্রাস করেছে। এরপর তার ভীত সন্ত্রস্ত সঙ্গীদের দিকে তার ভয়ার্ত ও পান্ডুবর্ণ মুখটি ফিরিয়ে তিনি যেন বলতে চাইলেন, যাকে তোমরা দেবতার আসনে বসাতে চাইছিলে সে এখন মৃত্যুকে বরণ করছে। AABen 123.1

এইমাত্র যিনি প্রচন্ড উৎসবমুখর পরিবেশে জনতার প্রশংসা ও অভিবাদন গ্রহণ করছিলেন, তিনিই এখন সবচেয়ে তীব্র যন্ত্রণায় বিদ্ধ হয়েছেন। মাত্র এক মুহূর্ত আগেই তিনি এই মানুষের ফাঁপা প্রশংসায় অহংকারে ফুলে উঠছিলেন; আর এখন তিনি বুঝতে পারলেন যে, তার চেয়েও অনেক গুণ বেশি শক্তিশালী একজন শাসকের কোপের নিচে তিনি পড়েছেন। তীব্র অনুশোচনা তাকে পেয়ে বসল; তিনি স্মরণ করলেন যীশুর অসংখ্য অনুসারীকে তিনি নির্যাতন করেছেন; নিষ্পাপ যাকোবকে তিনি হত্যা করার আদেশ দিয়েছেন; এবং প্রেরিত পিতরকে তিনি হত্যা করার পরিকল্পনা করেছিলেন। তিনি আরও স্মরণ করলেন নিজের উপরে বিরক্ত ও হতাশ হয়ে তিনি কীভাবে কারারক্ষীদের জীবন অন্যায়ভাবে কেড়ে নিয়েছেন। তিনি অনুভব করলেন যে, এবার ঈশ্বর সরাসরি তার এই কৃতকর্মের শাস্তি তাকে দিচ্ছেন। শরীরের এই বেদনা ও অন্তরের এই পীড়ন থেকে তিনি মুক্তি পেলেন না এবং তিনি মুক্তি চাইলেনও না। AABen 123.2

ঈশ্বরের বিধান অনুসারে হেরোদের বিচার করা হয়েছিল, যেখানে বলা হয়েছে, “আমার সাক্ষাতে তোমার অন্য দেবতা না থাকুক” (যাত্রাপুস্তক ২০:৩); এবং তিনি জানতেন যে, মানুষ তাকে দেবতা হিসেবে পূজো করায় তিনি যদি তা গ্রহণ করেন তাহলে তার পাপ সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করবে এবঙ তিনি প্রত্যক্ষভাবে যিহোবার কোপানলে পড়বেন। AABen 123.3

যে স্বর্গদূত স্বর্গের রাজসভা থেকে পিতরকে উদ্ধার করতে নেমে এসেছিলেন, তিনিই আবার ঈশ্বরীয় ক্রোধ ও বিচার নিয়ে হেরোদের কাছে আসলেন। স্বর্গদূত পিতরকে স্পর্শ করেছিলেন তাকে ঘুম থেকে জাগাবার জন্য; কিন্তু এই দুষ্ট রাজাকে তিনি একইভাবে স্পর্শ করলেও তার প্রভাব দাঁড়াল ভিনড়ব। স্বর্গদূত রাজা হেরোদের অহঙ্কারী মনকে নিচু করলেন এবং তার উপরে আত্মার দৃষ্টিতেই তাদের দেখা সম্ভব। কেবল মাত্র আত্মার কানই স্পষ্টভাবে এই স্বর্গীয় কণ্ঠ্য শুনতে পারে। AABen 123.4

“সদাপ্রভুর ধূত, যাহারা তাকে ভয় করে, তাহাদের চারিদিকে শিবির স্থাপন করেন, আর তাহাদিগকে উদ্ধার করেন ।” গীতসংহিতা ৩৪:৭। সর্বশক্তিমানের শাস্তি বর্তালেন। হেরোদ শরীর ও মনে প্রচন্ড কষ্ট নিয়ে তার পাপের ফলস্বরূপ ঈশ্বরের প্রদত্ত শাস্তি মাথায় নিয়ে মৃত্যুবরণ করলেন। AABen 123.5

ঐশ্বরিক বিচারের এই নিদর্শন উপস্থিত জনতার উপরে এক পরাক্রমী প্রভাব ফেলেছিল। খ্রীষ্টের প্রেরিতগণ কারাগার থেকে মুক্ত হওয়া ও নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যাওয়ার মধ্য দিয়ে লোকদের কাছে যে বার্তা পৌঁছে দিয়েছিলেন, সেটি যেন আরও সুদূরে বিস্তৃত হয়ে আরও বহু মানুষকে খ্রীষ্টের বিশ্বাসী করে তুলল যখন তারা অত্যাচারী শাসকের উপরে ঈশ্বরের আনীত বিচারের কথা শুনল। AABen 124.1

স্বর্গদূতের কাছ থেকে ফিলিপ নির্দেশনা পেয়েছিলেন যেন তিনি এমন এক স্থানে যান যেখানে একজন মানুষ সত্য জানার জন্য অন্বেষণ করছে; কর্ণীলিয়ের কাছে ঈশ্বরের একজন দূত দর্শন দিয়ে বার্তা দিয়েছিলেন; কারাবন্দী ও মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পিতরকেও একজন স্বর্গদূত সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় মুক্ত করে এনেছিলেন — এর সবই স্বর্গ ও পৃথিবীর মধ্যকার সুদৃঢ় যোগাযোগ নির্দেশ করে। AABen 124.2

ঈশ্বরের কার্যকারীদের জন্য স্বর্গদূতদের এই দর্শন নিশ্চয়ই শক্তি ও সাহস বয়ে নিয়ে আসে। আজকের দিনে এবং প্রেরিতদের যুগেও স্বর্গের দূতগণ পৃথিবীর এক কোণ থেকে আরেক কোণে বিচরণ করছেন, যারা কষ্ট পাচ্ছে তাদেরকে সান্ত¡না দিচ্ছেন, অননুতপ্তদের মন পরিবর্তন করতে সাহায্য করছেন এবং খ্রীষ্টের পক্ষে আত্মা জয় করছেন। আমরা তাদেরকে স্বশরীরে দেখতে পাই না; কিন্তু তথাপি তারা আমাদের সাথে আছেন, দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন, পরিচালনা করছেন, সুরক্ষা দিয়ে ঘিরে রাখছেন। AABen 124.3

এক দৈব সিঁড়ি দ্বারা স্বর্গকে পৃথিবীর খুব কাছে নিয়ে আসা হয়েছে, যার ভিত্তি খুব দৃঢ়ভাবে পৃথিবীর বুকে স্থাপিত রয়েছে এবং তার সর্বোচ্চ চ‚ড়া গিয়ে পৌঁছেছে স্বর্গের সিংহাসনের কাছে। স্বর্গদূতেরা এই সিঁড়ি ধরে সব সময় ওঠা নামা করছেন এবং অভাবী ও দুর্দশাগ্রস্ত আর্তমানবতার ক্রন্দন পিতা ঈশ্বরের কাছে পৌছে দিচ্ছেন, আবার পিতা ঈশ্বরের কাছ থেকে আশীর্বাদ ও আশা, সাহস ও সহায় প্রভুর সন্তানদের অন্তরে দান করছেন। স্বর্গীয় জ্যোতি থেকে সৃষ্টএই স্বর্গদূতেরা আত্মায় এক স্বর্গীয় আবেশ সৃষ্টি করেন এবং আমাদেরকে অদেখা ও চিরন্তন সেই মহান সত্তার কাছাকাছি নিয়ে আসেন। আমরা তাদেরকে আমাদের স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখতে পাই না; কিন্তু কেবলমাত্র আত্মার দৃষ্টিতে তাদেরকে দেখা সম্ভব। কেবলমাত্র আত্মার কানই স্পষ্টভাবে এই স্বর্গীয় কণ্ঠস্বর শুনতে পারে। AABen 124.4

“সদাপ্রভুর দূত, যাহারা তাঁহাকে ভয় করে, তাহাদের চারিদিকে শিবির স্থাপন করেন, আর তাহাদিগকে উদ্ধার করেন।” গীতসংহিতা ৩৪:৭। ঈশ্বর তাঁর স্বর্গদূতদেরকে আদেশ দিয়েছেন যেন তারা তাঁর মনোনীত লোকদেরকে সমস্ত দুঃখ কষ্ট থেকে মুক্ত করেন এবং তাদেরকে “তিমির—বিহারী মারী হইতে” এবং “মধ্যাহ্নের সাংঘাতিক ব্যাধি হইতে” রক্ষা করেন। গীতসংহিতা ৯১:৬। যেভাবে মানুষ তার বন্ধুর সাথে কথা বলে সেভাবে স্বর্গদূতগণ বারবার মানুষের সাথে কথা বলেছেন এবং তাদেরকে সুরক্ষা দান করেছেন।স্বর্গদূতদের উৎসাহব্যঞ্জক বার্তা বারবারই বিশ্বাসীদের নিষ্প্রভ হয়ে পড়া আশাকে আবারও পুনরুজ্জীবিত করেছে এবং তাদের অন্তরকে স্বর্গস্থ বিষয়ের উপরে স্থিত করেছে, যেন তারা বিশ্বাসে উজ্জ্বল ও শুভ্র পোশাক, রাজমুকুট, বিজয়ীদের পাতার মুকুট দেখতে পান, যা তারা এই সমস্ত পীড়ন অতিক্রম করে ঈশ্বরের সিংহাসনের সামনে উপস্থিত হলে লাভ করবেন। AABen 125.1

পরীক্ষিত, পীড়িত ও প্রলোভিত মানুষের কাছে আসা স্বর্গদূতদেরই কাজ। যাদের জন্য খ্রীষ্ট মৃত্যুবরণ করেছিলেন তাদের জন্য তারা অনবরত কাজ করে চলেছেন। পাপী মানুষেরা যখন নিজেদেরকে ত্রাণকর্তার কাছে সমর্পণ করার জন্য আসে তখন স্বর্গদূতেরা সেই সংবাদ উর্ধ্বে প্রেরণ করেন এবং স্বর্গের বাহিনীগণের মাঝে তখন তুমুল আনন্দ হয়। “তদ্রুপ এক জন পাপী মন ফিরাইলে স¦র্গে আনন্দ হইবে; যাহাদের মন ফিরান অনাবশ্যক, এমন নিরানব্বই জন ধার্মিকের বিষয়ে তত আনন্দ হইবে না।” লূক ১৫:৭। অন্ধকারকে দূরে ঠেলে দেওয়ার জন্য এবং খ্রীষ্টকে সকলের কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমরা যখনই একটি সফল পদক্ষেপ নিই তখনই স্বর্গে সেই খবর পৌছে দেওয়া হয়। আর এই সংবাদ যখন স্বর্গে পিতার কাছে পৌঁছায় তখন স্বর্গের বাহিনীগণ আনন্দ করেন। AABen 125.2

স্বর্গের সমস্ত কর্তৃত্ব এই যুদ্ধ অবলোকন করছেন যা ঈশ্বরের পরিচর্যাকারীরা চরম নৈরাশ্যজনক পরিস্থিতিতেও চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। খ্রীষ্টিয়ানরা যখনই ত্রাণকর্তার ঝান্ডা বহন করে বিশ্বাসের লড়াইয়ের জন্য সামনে এগিয়ে যান, তখনই নতুন করে বিজয় আসে এবং নতুন সম্মান প্রাপ্তি ঘটে। স্বর্গের সমস্ত দূতগণ ঈশ্বরের নম্র ও বিশ্বাসী লোকদের সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন; আর প্রভুর বাহিনীর কার্যকরীরা যখন জগতের তাঁর প্রশংসা ও বন্দনা গাইছেন তখন স্বর্গদূতেরাও তাদের সাথে গলা মিলিয়ে ঈশ্বর ও তাঁর পুত্রের মহিমা গাইছেন। AABen 125.3

স্বর্গদূতদের কার্যক্রম সম্পর্কে আমাদের আরও বেশি উপলব্ধি করা প্রয়োজন। এ কথা স্মরণ করা ভাল যে, ঈশ্বরের প্রত্যেক প্রকৃত সন্তানই স্বর্গস্থ সত্তার সহায় পেয়ে থাকেন। নম্র ও মৃদুশীল যে ব্যক্তিরা ঈশ্বরকে ও তাঁর সমস্ত প্রতিজ্ঞায় বিশ্বাস করেন তাদের সাথে জ্যোতি ও পরাক্রমের অদৃশ্য বাহিনী উপস্থিত থাকেন। করূব ও সরাফ সহ যে সমস্ত পরাক্রমী স্বর্গদূতেরা ঈশ্বরের ডান পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন, “সকলে কি সেবাকারী আত্মা নহেন? যাহারা পরিত্রাণের অধিকারী হইবে, উঁহারা কি তাহাদের পরিচর্যার জন্য প্রেরিত নহেন?” ইব্রীয় ১:১৪। AABen 126.1