প্রেরিতগণের কার্য-বিবরণ

56/59

৫৫ অধ্যায়—অনুগ্রহের দ্বারা পরিবর্তন

শিষ্য যোহনের জীবনে প্রকৃত শুদ্ধতা দৃষ্টান্তের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে। খ্রীষ্টের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থাকার বছরগুলোতে তিনি ত্রাণকর্তার দ্বারা সতর্ক এবং সাবধান হয়েছিলেন; আর এই তিরস্কারগুলো তিনি মেনে নিয়েছিলেন। স্বর্গীয় একজনের চরিত্রের মত তাঁর কাছে প্রকাশ পেয়েছিল, যোহন তাঁর নিজের দোষগুলো দেখতে পেয়েছিলেন এবং প্রভুর বাক্যের মধ্য দিয়ে নিজেকে নত করেছিলেন। দিনের পর দিন যীশুর কোমলতা ও ধৈর্যশীলতা দেখে এবং তাঁর নম্রতার ও সহিষ্ণুতার শিক্ষা শুনতে শুনতে তিনি তাঁর ভেতরে যে উগ্র মেজাজ রয়েছে তা দেখতে পেলেন। নিজেকে তিনি প্রভুর ভালবাসার মধ্যে হারিয়ে ফেলেছেন, এটা দেখতে না পাওয়া পর্যন্ত দিন দিন খ্রীষ্টের দিকে তাঁর হৃদয় আকর্ষিত হচ্ছিল। ক্ষমতা এবং কোমলতা, মহিমা ও নম্রভাব, দৃঢ়তা এবং ধৈর্য, যা তিনি ঈশ্বরের পুত্রের প্রাত্যহিক জীবনের মধ্যে দেখতে পেয়েছিলেন, তাঁর অন্তর শ্রদ্ধা ভক্তি আর ভালবাসায় পূর্ণ হয়েছিল। তিনি তাঁর রাগ, উচ্চাভিলাষের মানসিকতাকে খ্রীষ্টের প্রতাপের কাছে সমপর্ণ করেছিলেন এবং স্বর্গীয় ভালবাসা তাঁকে রূপান্তরিত এক চরিত্রে পরিণত করেছিল। AABen 470.1

যোহনের জীবনে শুদ্ধতার কাজের যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য ছিল তা তাঁর সহ শিষ্য যিহূদার কাছে ছিল একটি অভিজ্ঞতা। তাঁর সঙ্গীদের মত যিহূদাও নিজেকে খ্রীষ্টের একজন শিষ্য বলে স্বীকার করেছিল, কিন্তু কেবলমাত্র ঈশ্বর—ভক্তের ধারণাকেই সে পোষণ করেছিল। খ্রীষ্টের চরিত্রের সৌন্দর্য তার কাছে অগোচর ছিল না। সে প্রায়ই ত্রাণকর্তার কথা শুনত এবং তাতে তার নিজেকে দোষী বলে মনেও হত, কিন্তু কখনোই সে নিজেকে নম্র করেনি কিংবা নিজের পাপ স্বীকার করেনি। স্বর্গীয় পরিচালককে প্রতিরোধ করার দ্বারা সে তার প্রভুকে অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছিল, যাঁকে সে ভালবাসে বলে স্বীকার করেছিল। যোহন নম্রভাবে তাঁর বিরুদ্ধে যে দোষত্রুটি ছিল তা স্বীকার করেছিলেন। কিন্তু যিহূদা তার বিবেককে অগ্রাহ্য করল এবং নিজেকে পরীক্ষায় পতিত হতে দিল। এতে সে আরও দৃঢ়ভাবে তার মন্দ অভ্যাসগুলোর উপরে নিজেকে স্থাপন করল। সত্যের অনুশীলন, যা খ্রীষ্ট শিক্ষা দিয়েছিলেন, তা ছিল তার ইচ্ছা এবং উদ্দেশ্যের বিপরীত এবং স্বর্গ থেকে প্রজ্ঞা লাভ করার জন্য সে যথাযথভাবে তার চিন্তাগুলোকে ত্যাগ করেনি। আলোতে চলার পরিবর্তে সে অন্ধকারে চলা বেছে নিয়েছিল। শয়তান তার উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ লাভ না করা পর্যন্ত মন্দ ইচ্ছা, লোলুপতা, প্রতিহিংসাপরায়ণ মন্দ ভাব, অন্ধকার এবং দুষ্ট চিন্তাসমূহকে সে লালন করেছিল। AABen 470.2

যারা নিজেদের খ্রীষ্টের অনুসারী বলে স্বীকার করেন, যোহন ও যিহূদা তাদেরকে উপস্থাপন করে থাকেন। উভয় শিষ্যের স্বর্গীয় আদর্শের প্রতি মনোনিবেশ করা এবং অনুসরণ করার সমান সুযোগ ছিল। উভয়ে ঘনিষ্ঠভাবে যীশুর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং তাঁর শিক্ষা শোনার সমান সুযোগ লাভ করেছিলেন। তাদের দুজনেরই চরিত্রের মারাত্মক দোষ ত্রুটিগুলো প্রকাশিত ছিল; উভয়ে স্বর্গীয় অনুগ্রহ লাভ করতে পারতেন যা চরিত্রের পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম। যখন একজন যীশুর শিক্ষায় নিজেকে বিনম্র করেছিলেন তখন অন্য জন প্রকাশ করেছিলেন যে, তিনি বাক্যের কার্যকারী নন, কিন্তু কেবল শ্রোতা মাত্র। একজন প্রতিদিন মৃত্যুবরণ করছিলেন এবং পাপের উপরে জয়লাভ করছিলেন। এতে সত্যের মধ্য দিয়ে নিজেকে তিনি শুদ্ধ করছিলেন। আর অন্য জন অনুগ্রহের পরিবর্তনকারী ক্ষমতাকে প্রতিরোধ করেছিল এবং স্বার্থপর ইচ্ছাগুলোকে প্রশ্রয় দিয়েছিল, যা শয়তানের দাসত্বের কাছে তাকে নিয়ে গিয়েছিল। খ্রীষ্টের সঙ্গে কথোপকথনের ফলস্বরূপ ঠিক এই রকম রূপান্তরকারী চরিত্র যোহনের মধ্যে ক্রমাগতভাবে দৃষ্ট হয়েছিল। হয়তো তাঁর মধ্যে চিহ্নিত ব্যক্তি দোষ ত্রুটি ছিল, কিন্তু যখন তিনি খ্রীষ্টের একজন প্রকৃত শিষ্যে পরিণত হয়েছিলেন, ঈশ্বরের অনুগ্রহ তাঁকে রূপান্তরিত এবং খাঁটি করেছিল। আয়নায় প্রভুর মহিমা দেখার মত যতক্ষণ যাকে তিনি গভীরভাবে ভালবেসেছেন, তাঁর মত হতে না পেয়েছিলেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি স্বর্গীয় আলো থেকে পরিবর্তিত হচ্ছিলেন। AABen 471.1

যোহন ছিলেন পবিত্রতার একজন শিক্ষক এবং মন্ডলীর কাছে তাঁর লিখিত পত্রসমূহে খ্রীষ্টিয়ানদের আচরণ সম্পর্কে অভ্রান্ত নিয়মসমূহ উল্লেখ করেছেন। “আর তাঁর উপরে এই প্রত্যাশা যে কাহারও আছে,” তিনি লিখেছেন, “যে আপনাকে বিশুদ্ধ করে যেমন তিনি বিশুদ্ধ।” “যে বলে আমি তাঁহাতে থাকি, তাহার উচিত যে তিনি যেমন চলিতেন সেও তদ্রæপ চলে।” ১ যোহন ৩:৩; ২:৬। তিনি শিক্ষা দিয়েছেন যে, খ্রীষ্টিয়ানদের অবশ্যই হৃদয়ে এবং জীবনে বিশুদ্ধ হতে হবে। প্রকাশ্যে স্বীকার যদি সে না করে তাহলে কখনোই সে সন্তুষ্টি লাভ করতে পারবে না। ঈশ্বর যেমন তাঁর নিজ পরিমন্ডলে পবিত্র, ঠিক তেমনি একজন পতিত মানুষ খ্রীষ্টের উপর বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে তার নিজ পরিমন্ডলে পবিত্র হতে পারে। AABen 471.2

“ফলতঃ ঈশ্বরের ইচ্ছা এই,” প্রেরিতদ পৌল লিখেছেন, “তোমাদের পবিত্রতা।” ১ থিষলনীকীয় ৪:৩। নিজ লোকদের সঙ্গে তাঁর সমস্ত রকম কার্যসাধনের জন্য ঈশ্বর চান মন্ডলীর পবিত্রতা। তিনি অনন্তকাল থেকে তাদের বেছে নিয়েছেন যাতে তারা পবিত্র হতে পারে। তিনি তাঁর পুত্রকে তাদের জন্য মৃত্যুবরণ করতে পাঠিয়েছিলেন যেন তারা সত্যের প্রতি বাধ্যতার মধ্য দিয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সমস্ত ব্যক্তি স্বার্থ পরিত্যাগ করে পবিত্র হতে পারে। তিনি তাদের কাছ থেকে ব্যক্তিগত একটি কাজ, অর্থাৎ ব্যক্তিগতভাবে নিজেদের সমর্পণ করা প্রত্যাশা করেছিলেন। ঈশ্বর তাদের দ্বারা সম্মানিত হয়ে থাকেন যারা তাঁকে বিশ্বাস করেছে বলে প্রকাশ্যে স্বীকার করে, কেবল তাঁরই মত হওয়ার জন্য সম্মত থাকে এবং তাঁর আত্মা দ্বারা পরিচালিত হয়। তখন ত্রাণকর্তার পক্ষে সাক্ষী হিসেবে তারা অন্যের কাছে বলতে পারবে যে, ঈশ্বরের অনুগ্রহ তাদের জন্য কী করেছে। ভালবাসার নীতির কাজের মধ্য দিয়ে প্রকৃত পবিত্রতা আসে। “ঈশ্বর প্রেম, আর প্রেমে যে থাকে, সে ঈশ্বরে থাকে, আর ঈশ্বর তাহাতে থাকেন।” ১ যোহন ৪:১৬। যার হৃদয় খ্রীষ্টেতে স্থির তাখে, তার জীবন ঈশ্বর ভক্তির কাজ বাস্তবে প্রকাশ করবে। তার চরিত্র খাঁটি, উনড়বত, মর্যাদাসম্পনড়ব এবং মহিমান্বিত হবে। খাঁটি শিক্ষা ধার্মিকতার কাজের সঙ্গে মিশে যায়, স্বর্গীয় আদেশ পবিত্র নীতির সঙ্গে মিশ্রিত করে। AABen 472.1

যারা পবিত্রতার আশীর্বাদ লাভ করতে চাইবে তাদের প্রথমে আত্মত্যাগের অর্থ কী তা জানতে হবে। খ্রীষ্টের ক্রুশ হল প্রধান স্তম্ভ, যার দ্বারা বোঝানো হয়েছে যে, “তারা উত্তর উত্তর অনুপমরূপে আমাদের জন্য অনন্তকাল স্থায়ী গুরুতর প্রতাপ সাধন করিতেছে।” “কেহ যদি আমার পশ্চাৎ আসিতে ইচ্ছা করে,” খ্রীষ্ট বলেন, “তবে সে আপনাকে অস্কীকার করুক, আপন ক্রুশ তুলিয়া লউক এবং আমার পশ্চাৎগামী হউক।” ২ করিন্থীয় ৪:১৭; মথি ১৬:২৪। এটি হল আমাদের সহ—মনুষ্যদের জন্য আমাদের ভালবাসার সুগন্ধ যা ঈশ্বরের প্রতি আমাদের ভালবাসার প্রকাশ। এটি পরিচর্যায় ধৈর্যশীলতা যা আত্মার শান্তি বয়ে নিয়ে আসে। নম্রতা, অধ্যবসায়, কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়েই ইস্রায়েল জাতির মঙ্গল অবস্থার ক্রমাগত উনড়বতি সাধিত হয়েছিল। ঈশ্বর তাকেই উচ্চীকৃত করেন এবং শক্তিশালী করেন যারা স্বইচ্ছা প্রণোদিত হয়ে খ্রীষ্টের পথে চলতে চায়। AABen 472.2

পবিত্রতার কাজ এক মুহূর্ত, এক ঘণ্টা, এক দিনের কাজ নয়, কিন্তু এটি সারা জীবনের কাজ। সুখের পাখায় ভর করে উড্ডীন হওয়ার অনুভ‚তি দিয়ে এটি লাভ করা যায় না। বরং এটি অব্যাগতভাবে পাপে মৃত্যু এবং খ্রীষ্টের জন্য অব্যাহতভাবে জীবিত থাকার ফল। অন্যায় কখনো সঠিক বলে গণ্য হতে পারে না, কিংবা দুর্বল ও থেমে থেমে প্রচেষ্টা দিয়ে চরিত্রের সংস্কার সাধন করা সম্ভব নয়। এটি কেবল দীর্ঘ, নিরবচ্ছিনড়ব প্রচেষ্টা, কঠোর নিয়মানুবর্তিতা এবং কঠোর পরিশ্রম দ্বারা করতে হবে, যাতে আমরা জয় লাভ করতে পারি। একদিন আমাদের বিরোধীরা কত শক্তিশালী হবে তা আমরা জানিনা। যতক্ষণ পর্যন্ত শয়তান রাজত্ব করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত নিজেদের দমনে রাখতে হবে, প্রলুব্ধকারী পাপের উপরে জয়লাভ করতে হবে; এ জীবনের স্থায়িত্ব যতদিন হবে, ততদিন এমন কোন স্থান থাকবে না যেখানে আমাদের থামতে হবে; এমন কোন নির্দিষ্ট বিষয় বা লক্ষ্য থাকবে না যেখানে আমরা পৌঁছাতে পারি এবং বলতে পারি, আমি সম্পূর্ণভাবে অর্জন করেছি। সমগ্র জীবনব্যাপী বিশ্বস্ততার ফল হল পবিত্রতা। AABen 473.1

প্রেরিত এবং ভাববাদীদের মধ্যে কেউ কখনো এই দাবী করতে পারেন না যে, তাঁরা নিষ্পাপ। যে সকল মানুষ ঈশ্বরের খুব কাছে থাকেন, যে সকল মানুষ মন্দকার্যে নিজেদের ব্যাপৃত রাখার পরিবর্তে স্বইচ্ছায় নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে থাকেন, ঈশ্বর যাদের তাঁর স্বর্গীয় আলো আর শক্তি দিয়ে সম্মানিত করেন, তারা তাদের পাপ পঙ্কিলতার স্বভাব নম্র হয়ে স্বীকার করেছেন। তারা মাংসিক শক্তির উপরে নির্ভর করেন না। তারা এই কথা স্বীকার করে বলেন যে, তাদের নিজেদের কোন ধার্মিকতা নেই কিন্তু তারা সম্পূর্ণভাবে খ্রীষ্টের ধার্মিকতায় বিশ্বাস করেন। AABen 473.2

যারা খ্রীষ্টের দিকে দৃষ্টিপাত করবেন তাদের সকলের প্রতি এই রকম ঘটবে। আমরা খ্রীষ্টের কাছে আসব এবং আরও স্পষ্টভাবে তাঁর চরিত্রের পবিত্রতা সম্বন্ধে উপলব্ধি করতে পারব, আরও স্পষ্টভাবে তাঁর চরিত্রের পবিত্রতা সম্বন্ধে উপলব্ধি করতে পারব, আরও স্পষ্টভাবে আমাদের পাপের গুরুতর পঙ্কিলতা দেখতে পাব এবং আমাদের আত্মপ্রশংসা এবং নিজেদের উনড়বত করার বিষয়গুলো কম উপলব্ধি করব। অন্তর দিয়ে ঈশ্বরের পিছনে চলা অব্যাহত থাকবে; তাঁর সামনে আন্তরিক, ভগড়বচ‚র্ণ হৃদয়ে পাপের ক্ষমা এবং হৃদয়কে নম্র করা অব্যাহত থাকবে। আমাদের খ্রীষ্টিয় অভিজ্ঞতার প্রথম পদক্ষেপ আমাদের অনুতাপকে গভীর করবে। আমরা জানি যে, আমাদের প্রাচুর্য হলেন একমাত্র খ্রীষ্ট। প্রেরিতগণ যে স্বীকারোক্তি করেছেন সেটা আমাদের নিজেদেরও স্বীকারোক্তি: “যেহেতু আমি জানি যে, আমাতে (অর্থাৎ আমার মাংসে) উত্তম কিছুই বাস করে না;” “কিন্তু আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের ক্রুশ ছাড়া আমি যে আর কোন বিষয়ে শ্লাঘা করি, তাহা দূরে থাকুক।” রোমীয় ৭:১৮; গালাতীয় ৬:১৪। AABen 473.3

স্বর্গদূতদের লেখায় ঈশ্বরের লোকদের পবিত্র যুদ্ধ এবং সংগ্রামের বিষয় লিপিবদ্ধ করা হোক, তাঁদের প্রার্থনা ও চোখের জলের বিষয় লিপিবদ্ধ করা হোক; কিন্তু “আমি নিষ্পাপ, আমি পবিত্র।” একথা কোন মানুষের মুখ থেকে নির্গত হলে তা ঈশ্বরকে অসম্মানিত করবে, আর এই কথা যেন লিপিবদ্ধ করা না হয়। কোন পবিত্র মুখ কখনো এই রকম ধৃষ্টতাপূর্ণ কথা প্রকাশ করবে না। AABen 474.1

প্রেরিত পৌল তৃতীয় স্বর্গ পর্যন্ত পৌঁছেছিলেন এবং দুর্বোধ্য কিছু বিষয় দেখেছিলেন যা মুখে বলা সম্ভব নয়, কিন্তু তবুও তিনি বিনম্রভাবে বর্ণনা করেছেন, “আমি যে এখন পাইয়াছি, কি¤¦া এখন সিদ্ধ হইয়াছি, তাহা নয়; কিন্তু যাহার নিমিত্ত খ্রীষ্ট যীশু কর্তৃক ধৃত হইয়াছি, কোন ক্রমে তাহা ধরিবার চেষ্টায় দৌড়াইতেছি।” ফিলিপীয় ৩:১২। যুদ্ধে পৌলের বিশ্বাসের উত্তম যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার বিবরণ স্বর্গের দূতগণ লিখুন। স্বর্গাভিমুখে তাঁর দৃঢ়তার সঙ্গে ছুটে চলায় স্বর্গ আনন্দ করুক, আর চোখের সামনে সযতেড়ব রাখা এই পুরস্কারের কারণে তিনি অন্য সব কিছুকে মূল্যহীন বলে মনে করেছেন। স্বর্গদূতেরা তাঁর সাফল্যের কথা বলতে আনন্দ লাভ করেন কিন্তু পৌল তাঁর প্রাপ্তিতে কোন অহঙ্কার করেননি। পৌলের মনোভাব হল এমনই মনোভাব যা প্রত্যেক খ্রীষ্ট বিশ্বাসীকে অক্ষয় মুকুট লাভের জন্য প্রাণপণে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য গ্রহণ করা উচিত। যারা ঈশ্বরের ব্যবস্থার আয়নায় দেখতে পেয়ে উচ্চকণ্ঠে পবিত্রতার ঘোষণা করতে ইচ্ছুক থাকে তাকে সেই উপলব্ধি করতে দাও। AABen 474.2

তারা এটিকে সুদূরপ্রসারী দাবী হিসেবে দেখতে পান এবং চিন্তার প্রভেদকারী হিসেবে এর কাজ এবং হৃদয়ের উদ্দেশ্য বুঝতে পারেন, তারা নিষ্পাপতা নিয়ে কোন গর্ব করেন না। “যদি আমরা বলি যে,” তাঁর ভ্রাতৃবর্গকে নিজের কাছ থেকে পৃথক না রেখে যোহন বলছেন, “আমাদের পাপ নাই, তবে আপনারা আপনাদিগকে ভুলাই, এবং সত্য আমাদের অন্তরে নাই।” “যদি আমরা বলি যে, পাপ করি নাই, তবে তাঁহাকে মিথ্যাবাদী করি, এবং তাঁহার বাক্য আমাদের অন্তরে নাই।” “যদি আমরা আপন আপন পাপ স্বীকার করি, তিনি বিশ্বস্ত ও ধার্মিক, সুতরাং আমাদের পাপ সকল মোচন করিবেন, এবং আমাদিগকে সমস্ত অধার্মিকতা হইতে শুচি করিবেন।” ১ যোহন ১:৮,১০,৯। AABen 474.3

যারা প্রকাশ্যে পবিত্রতা ব্যক্ত করে, যারা ঘোষণা করে যে, তারা সম্পূর্ণভাবে প্রভুর, যারা ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাসমূহ যথার্থভাবে ঘোষণা করে, তারা তাঁর আদেশ পালন করতে অসম্মত হয় না। ব্যবস্থার লঙ্ঘনকারীরা সব কিছু দাবী করে যা ঈশ্বরের সন্তানদের কাছে প্রতিজ্ঞা করা হয়েছে; কিন্তু এটি তাদের অনুমানে মাত্র, কারণ যোহন আমাদের বলেছেন যে, ঈশ্বরের প্রতি ভালবাসা যার আছে সে তাঁর সমস্ত আদেশের প্রতি বাধ্যতার প্রকাশ ঘটাবে। কেবল সত্যের তত্তে¡ বিশ্বাস করা, খ্রীষ্টের বিশ্বাসের কথা জোরালোভাবে প্রকাশ করা, খ্রীষ্ট একজন ভন্ড এ কথা বিশ্বাস না করা, বাইবেলের এই ধর্মে কোন চাতুর্যপূর্ণ কল্পকাহিনী নেই বলে বিশ্বাস করা, এসবই যথেষ্ট নয়। “যে ব্যক্তি বলে, আমি তাঁহাকে জানি, তথাপি তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন না করে,” যোহন লিখেছেন, “সে মিথ্যাবাদী এবং তাহার অন্তরে সত্য নাই। কিন্তু যে তাঁহার বাক্য পালন করে, তাহার অন্তরে সত্যই ঈশ্বরের প্রেম সিদ্ধ হইয়াছে, ইহাতেই আমরা জানিতে পারি যে, তাঁহাতে আছি।” “আর যে ব্যক্তি তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করে, সে তাঁহাতে থাকে ও তিনি তাহাতে থাকেন।” ১ যোহন ২:৪,৫; ৩:২৪। AABen 475.1

যোহন এই শিক্ষা দেননি যে, পরিত্রাণ বাধ্যতার মধ্য দিয়ে অর্জন করা যায়; কিন্তু এই বাধ্যতা হল বিশ্বাস এবং ভালবাসার ফল। “আর তোমরা জান, পাপভার লইয়া যাইবার জন্য তিনি প্রকাশিত হইলেন,” তিনি বলছেন, “এবং তাঁহাতে পাপ নাই। কেহ তাঁহাতে থাকে, সে পাপ করে না; যে কেহ পাপ করে, সে তাঁহাকে দেখে নাই এবং জানেও নাই।” ১ যোহন ৩:৫,৬। যদি আমরা খ্রীষ্টেতে থাকি, যদি ঈশ্বরের ভালবাসা আমাদের অন্তরে বাস করে, তাহলে আমাদের উপলব্ধি, আমাদের চিন্তাসমূহ, আমাদের কার্যসকল ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে সমন্বয় সাধিত হবে। পবিত্র হৃদয় ঈশ্বরের ব্যবস্থার নীতির নঙ্গে একীভূত হয়। AABen 475.2

অনেকে আছেন যারা ঈশ্বরের আদেশের প্রতি বাধ্য থাকার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করার পরও তাদের অন্তরে খুব সামান্যই শান্তি এবং আনন্দ থাকে। এই বিষয়ে তাদের উপলব্ধির অভাব হল বিশ্বাসকে কার্যে পরিণত করার ব্যর্থতার ফল। তারা এমনভাবে হাঁটেন যেন তারা লবণ—ভ‚মিতে আছেন, শুষ্ক মরুভ‚মিতে আছেন। যখন দৃঢ়ভাবে অনেক বেশি বলার সামর্থ্য তাদের থাকে, তখন তারা অতি সামান্যই বলেন; কারণ ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার কোন সীমা নেই। সত্যের প্রতি বাধ্যতার মধ্য দিয়ে যেভাবে পবিত্রীকরণ আসে তা এমন কিছুই নেই যার দ্বারা যথার্থভাবে প্রকাশ করা যেতে পারে। বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে চরিত্রের সমস্ত অভাব পূরণ হতে পারে, সমস্ত মন্দতা ধৌত হয়, সমস্ত দোষ সংশোধিত হয়, সমস্ত উৎকর্ষতার উনড়বতি সাধিত হয়। AABen 476.1

খ্রীষ্টিয় বিশ্বাসের বিকাশ সাধন এবং পাপের মধ্যে বিরোধের প্রার্থনা হল কৃতকার্য হওয়ার স্বর্গীয় ঘোষণা। স্বর্গীয় অনুপ্রেরণার এই উত্তর আসে বিশ্বাসের প্রার্থনায়। এটি প্রার্থনাকারীর অন্তরের সকল বিনম্র অনুরোধ কার্যে পরিণত করে। পাপের ক্ষমার জন্য, পবিত্র আত্মার জন্য, খ্রীষ্টের মত মনোভাব, তাঁর কাজ করার জন্য প্রজ্ঞা এবং শক্তি, তিনি যে সব দানের প্রতিজ্ঞা করেছেন তার যে কোন দানের জন্য আমরা অনুরোধ করতে পারি; আর এতে তাঁর প্রতিজ্ঞা হল “তোমরা তা পাবে।” AABen 476.2

এই প্রতিজ্ঞা পর্বতে ঈশ্বরের সঙ্গে ছিল, মোশী যেখানে ঐ চমৎকার গৃহের নমুনা দেখেছিলেন, যেটি হবে তাঁর বাস করার স্থান। এটি পর্বতে ঈশ্বরের সঙ্গে যোগাযোগের গোপন স্থানে ছিল, যার মধ্য দিয়ে আমরা মানবজাতির জন্য তাঁর গৌরবময় আদর্শ গভীরভাবে চিন্তা করতে পারি। সকল যুগে স্বর্গের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমের দ্বারা অনুগ্রহের শিক্ষা তাঁর সন্তানদের অন্তরে ক্রমাগতভাবে প্রকাশ করার দ্বারা ঈশ্বর তাঁর সন্তানদের জন্য তাঁর উদ্দেশ্য সম্পাদন করেন। তাঁর সত্য ব্যক্ত করার রীতি বাক্যের মধ্য দিয়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, “অরুণোদয়ের ন্যায় তাঁহার উদয় নিশ্চিত।” হোশেয় ৬:৩। ঈশ্বর যেখানে আলোকিত করতে পারেন সেখানে যদি তিনি নিজেকে দাঁড় করান, তাহলে ভোরের আংশিক অন্ধকার দূরীভ‚ত হয়ে মধ্যাহ্নের উজ্জ্বল আলোয় তিনি এগিয়ে যেতে পারবেন। AABen 476.3

প্রকৃত পবিত্রকরণের অর্থ হল খাঁটি ভালবাসা, পরিপূর্ণ বাধ্যতা, ঈশ্বরের ইচ্ছাকে যথাযথভাবে মেনে বশ্যতা স্বীকার করা। সত্যের প্রতি বাধ্যতার মধ্য দিয়ে আমরা ঈশ্বরের কাছে পবিত্র হতে পারি। জীবন্ত ঈশ্বরের সেবা করার জন্য আমাদের নৈতিক চেতনা অবশ্যই মন্দ কার্যসমূহ থেকে পরিষ্কৃত হতে হবে। তবুও আমরা খাঁটি নই; কিন্তু আমাদের সুযোগ রয়েছে নিজের বিপর্যস্ত অবস্থা এবং পাপ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখার এবং পূর্ণরূপে এগিয়ে যাওয়ার। তাহলেই ‘দারুন সম্ভাবনা,’ উচ্চ এবং পবিত্র গুণসমূহ সকলের নাগালের মধ্যে অবস্থান করবে। এই বর্তমান যুগে অনেকে আছেন যারা তাদের আত্মিক জীবন অধিকতর উনড়বত করতে পারছেন না। এর কারণ হল, তারা কেবলমাত্র নিজেদের সাধ্যের সীমাবদ্ধতা অনুসারে সে আঙ্গিকেই ঈশ্বরের ইচ্ছাকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন। যখন তারা নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী চলতে থাকে তখন তারা এই ভেবে আত্মতৃপ্তি লাভ করে যে, তারা ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুযায়ী জীবন যাপন করছে। নিজের সঙ্গে এগুলোর কোন বিরোধ নেই। অপর দিকে অনেকে আছেন যারা তাদের আনন্দ আর আরাম আয়েশের স্বার্থপর ইচ্ছার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়ী হয়েছেন। তারা সৎ এবং আন্তরিক, কিন্তু তারা অক্লান্ত প্রচেষ্টার, মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে উপনীত হওয়ার মত অবস্থার এবং অব্যাহত বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছেন। এর প্রতিরোধের পরিবর্তে তারা তাদের তন্দ্রালু চোখ বন্ধ করে রেখেছেন এবং প্রলোভনের ক্ষমতা হতে নিজেদের পতিত হতে দিয়েছেন। AABen 476.4

ঈশ্বরের বাক্যে যে নির্দেশনাসমূহ রয়েছে তাতে মন্দ কোন বিষয়ের স্থান নেই। ঈশ্বরের পুত্র ঘোষণা করেছেন যে, তিনি সকল মানুষকে তাঁর কাছে টেনে আনবেন। তিনি জগতকে ঘুম পাড়ানোর জন্য আসেননি, বরং তিনি এসেছেন সেই সঙ্কীর্ণ পথের সন্ধান দিতে, যে পথ দিয়ে গমন করলে অবশ্যই সকলে অবশেষে ঈশ্বরের নগরীর দ্বারের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হবে। যেখানে যাবার জন্য তিনি নির্দেশ দেবেন সেখানে যাবার জন্য যে পথ তিনি দেখিয়ে দেবেন তাঁর সন্তানদের অবশ্যই সেই পথে যেতে হবে। যেকোন আরাম আয়েশের কিংবা নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার বাসনা ত্যাগ স্বীকার করা, যে কোন শ্রমের অথবা দুঃখ কষ্টের মূল্য, তাদের নিজেদের সঙ্গে এই যুদ্ধ অব্যাহতভাবে চালিয়ে যেতে হবে। AABen 477.1

একমাত্র পবিত্র হওয়ার মধ্য দিয়ে মানুষ ঈশ্বরের কাছে উপস্থিত হওয়ার মত গৌরব অর্জন করতে পারে। সময় অত্যন্ত দ্রুত বেগে অনন্তের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যা কিছু ঈশ্বরের নিজের তা যেন আমরা ঈশ্বরের পিছনে সরিয়ে না রাখি, যা অক্ষয় তা গ্রহণ করতে যেন অস্বীকার না করি। তিনি এই হৃদয় সৃষ্টি এবং পরিত্রাণ উভয়ই করেছেন, এটি তাঁর। তিনি আপনার বুদ্ধি চান; এটি তাঁকে দিন; এটি তাঁর। তিনি আপনার অর্থ চান; এটি তাঁকে দিন; এটি তাঁর। “আর তোমরা নিজের নও, কারণ মূল্য দ্বারা ক্রীত হইয়াছ।” ১ করিন্থীয় ৬:১৯,২০। তিনি পবিত্র হৃদয়ের আনুগত্য চান, এটি বিশ্বাসের চর্চা দ্বারা প্রস্তুত হয়, যা ভালবাসার মধ্য দিয়ে তাঁর পরিচর্যার কাজ করে। তিনি আমাদের সামনে শ্রেষ্ঠ আদর্শ যথার্থ গুণ তুলে ধরেছেন। আমাদের জন্য তিনি যেমন ঈশ্বরের সম্পূর্ণ বাধ্যগত ছিলেন, তিনি চান যেন আমরাও সম্পূর্ণরূপে এবং যথার্থভাবে তাঁর বাধ্যগত থাকি। AABen 477.2

“ফলতঃ ঈশ্বরের ইচ্ছা এই,” প্রেরিত পৌল আপনাদের সম্পর্কে বলছেন, “তোমাদের পবিত্রতা।” ১ থিষলনীকীয় ৪:৩। আপনার ইচ্ছাও কি তাই? আপনার পাপগুলো সামনে এসে দাঁড়ালে পাহাড়ের মত মনে হতে পারে; কিন্তু যদি আপনি আপনার হৃদয়কে নত নম্র করেন এবং আপনার পাপ স্বীকার করেন, প্রভু ক্রুশীয় মৃত্যুর গুণ এবং ত্রাণকর্তার পুনরুত্থানে বিশ্বাস করেন, তাহলে তিনি আপনাকে ক্ষমা করবেন এবং সমস্ত অধার্মিকতা থেকে তিনি আপনাকে ধৌত করবেন। ঈশ্বর আপনার কাছে এই দাবী করেন যেন আপনি তাঁর ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে পালন করেন। এই ব্যবস্থা হল তিনি আপনাকে যা বলতে চান তার প্রতিধ্বনি, যা এখনো পবিত্র, হ্যাঁ, পবিত্র। খ্রীষ্টের অনুগ্রহের পরিপূর্ণতার জন্য আকাক্সক্ষী হোন। তাঁর ধার্মিকতা দিয়ে আপনার হৃদয় পূর্ণ করার জন্য তীব্র আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তুলুন। এই কাজে ঈশ্বরের যে বাণী ঘোষিত হয়েছে তা হল শান্তি, এর ফল হল প্রশান্তি এবং এর নিশ্চয়তা চিরকালের। AABen 478.1

এইভাবে যদি আপনি অন্তরের তীব্র আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ঈশ্বরকে অনুসরণ করেন তাহলে তাঁর মহা অনুগ্রহের অননুসন্ধেয় ধনের সন্ধান লাভ করবেন। যদি আপনি এই ধনগুলোর প্রতি গভীরভাবে মনোযোগী হন তাহলে এই সকলের অধিকারী হতে পারবেন এবং তাঁর ক্রুশে আত্মোৎসর্গের গুণের কথা প্রকাশ করতে পারবেন, তাঁর ধার্মিকতায় নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন, তাঁর প্রজ্ঞায় পরিপূর্ণ হতে পারবেন এবং তাঁর ক্ষমতা আপনাকে পিতা ঈশ্বরের সামনে “নিষ্পলক ও নির্দোষ অবস্থায়” উপস্থিত করবে। ২ পিতর ৩:১৪। AABen 478.2