প্রেরিতগণের কার্য-বিবরণ
৩৪ অধ্যায়—পবিত্রীকৃত পরিচর্যাকাজ
খ্রীষ্ট তাঁর জীবন ও শিক্ষামালার ভেতর দিয়ে নিঃস্বার্থপরতার একটা নিখুঁত দৃষ্টান্ত দিয়েছেন, যার উৎস ঈশ্বর। ঈশ্বরের অস্থিত্ব নিজের জন্য না। পৃথিবী সৃষ্টি করে, সমস্ত বস্তু ধারণ করে,তিনি অবিরত অন্যদের পরিচর্যা করে যাচ্ছেন। “তিনি ভাল মন্দ লোকদের উপরে আপনার সূর্য্য উদিত করেন, এবং ধার্ম্মিক অধার্ম্মিকগণের উপরে জল বর্ষান।” মথি ৫:৪৫ পদ। পরিচর্যার এই আদর্শ পিতা পুত্রের কাছে সমর্পণ করেছেন। তাঁর আদর্শ দিয়ে পরিচর্যার মানে বুঝানোর জন্য যীশুকে মানবজাতির প্রথমে দাঁড়াতে দেওয়া হয়েছে। তাঁর সমুদয় জীবন একটা পরিচর্যার নিয়মের অধীন ছিল। তিনি সকলের সেবা AABen 295.1
করেছেন, সকলকে পরিচর্যা দান করেছেন। AABen 295.2
যীশু বার বার তাঁর শিষ্যদের মধ্যে এই মূলনীতি প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করেছেন। যখন যাকোব ও যোহন শ্রেষ্টতা পাবার জন্য অনুরোধ করেছিল, তিনি বলেছিলেন, “তোমাদেও মধ্যে যে কেহ মহান্ হইতে চায়, সে তোমাদেও পরিচারক হইবে ; এবং তোমাদেও মধ্যে যে কেহ প্রধান হইতে চায়, সে তোমাদেও দাস হইবে : যেমন মনুষ্যপুত্র পরিচর্য্যা পাইতে আইসেন নাই, কিন্তু পরিচর্য্যা করিতে, এবং অনেকের পরিবর্ত্তে আপন প্রাণ মুক্তির মূল্যরূপে দিতে আসিয়াছেন।” মথি ২০:২৬—২৮ পদ। খ্রীষ্ট স্বর্গারোহনের পর থেকে পৃথিবীতে তাঁর কাজ তাঁর মনোনীত প্রতিনিধিদের দ্বারা পরিচালনা করেছেন, তাদের মাধ্যমে তিনি মনুষ্য সন্তানদের সঙ্গে কথা বলেন আর তাদের প্রয়োজনে পরিচর্যা করেন। তাঁর প্রতিনিধিরূপে কাজ করা ঈশ্বর কর্তৃক অভিষিক্ত মানুষদের দ্বারা মন্ডলীর মহান কর্তা তাঁর কাজ করান। AABen 295.3
তাঁর মন্ডলীকে বাক্য ও ধর্মতত্ব দিয়ে গঠন করার জন্য ঈশ্বর যাদের ডেকেছেন তাদের পদমর্যাদা একটা অতি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। খ্রীষ্টের পরিবর্তে তারা নরনারীদের সবিনয় মিনতি করে ঈশ্বরের সঙ্গে পুনর্মিলনসাধন করবে, আর তারা কেবল ঊর্দ্ধ থেকে শক্তি ও জ্ঞান প্রাপ্ত হয়েই এই কাজ সম্পন্ন করতে পারবে। AABen 295.4
যে সব লোকদের তাদের সেবা যত্নে গচ্ছিত রাখা হয়েছে, খ্রীষ্টের পরিচর্যাকারীরা তাদের আধ্যাত্মিক অভিভাবক। তাদের কাজ প্রহরীদের মত। প্রাচীন কালে প্রহরীদের প্রায়ই নগরের দেয়ালের ওপর মোতায়েন করা হতো, যেখানে, সুবিধাজনক অবস্থান থেকে, তারা বিশেষ বিশেষ স্থানের ওপর চোখ রাখত, আর শত্র“র দেখা পাওয়া মাত্র চারিদিকে হুশিয়ারী পাঠিয়ে দিত। তাদের বিশ্বস্ততার ওপর ভেতরের সকলের নিরাপত্তা নির্ভর করত। নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে তাদের একে অন্যকে ডাকতে হতো, নিশ্চিত হতে হতো যে তারা সকলে সজাগ আছে আর তাদের কোন দুর্ঘটনা ঘটে নি। আনন্দধ্বনি বা AABen 296.1
হুশিয়ারী একজন থেকে অন্যজনের কাছে পৌঁছানো হতো, প্রত্যেকে সেই ডাকের পুনরাবৃত্তি করত যতক্ষণ না তা নগরের চারিদিকে প্রতিধ্বনিত হত। প্রত্যেক পরিচর্যাকারীর কাছে সদাপ্রভু এই ঘোষণা দিচ্ছেন, “হে মনুষ্য—সন্তান, আমি তোমাকেই ইস্রায়েল—কুলের প্রহরী নিযুক্ত করিলাম ; অতএব তুমি আমার মুখে বাক্য শ্রবণ কর, ও আমার নামে তাহাদিগকে সচেতন কর। আমি যখন দুষ্ট লোককে বলি, হে দুষ্ট, তোমাকে নিশ্চয় মরিতে হইবে, তখন তুমি তাহার পথের বিষয়ে সেই দুষ্ট লোককে সচেতন করিবার নিমিত্ত যদি কিছু না বল, তবে সেই দুষ্ট নিজ অপরাধ প্রযুক্ত মরিবে ; কিন্তু আমি তোমার হস্ত হইতে তাহার রক্তের পরিশোধ লইব। পরন্তু তুমি সেই দুষ্টকে তাহার পথ হইতে ফিরাইবার জন্য তাহার পথের বিষয়ে সচেতন করিলে যদি সে আপন পথ হইতে না ফিরে, তবে সে নিজ অপরাধ প্রযুক্ত মরিবে, কিন্তু তুমি আপন প্রাণ রক্ষা করিলে।” যিহিষ্কেল ৩৩:৭—৯ পদ। AABen 296.2
যাদের ঈশ্বরের মন্ডলীর অভিভাবক, ঈশ্বরের রহস্যময়তার তত্বাবধায়করূপে মনোনীত করা হয়েছে, তাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সম্পর্কে ভাববাদীর বাক্য ঘোষণা দিচ্ছে। শত্র” নিকটবর্তী হওয়া মাত্র হুশিয়ারী সঙ্কেত দেবার জন্য তারা সিয়োনের প্রাচীরের ওপর প্রহরীরূপে দাঁড়ানো থাকবে। আত্মাগণ প্রলোভনে পড়ার মত বিপদে আছে, ঈশ্বরের পরিচারকগণ তাদের দায়িত্বে বিশ্বস্ত না হলে তারা বিনষ্ট হয়ে যাবে। যদি কোন কারণে তাদের আধ্যাত্মিক বোধশক্তি এত অনুভূতিহীন হয়ে পড়ে যে তারা বিপদ উপলব্ধি করতে অক্ষম হয়, আর তাদের বিপদ সঙ্কেত দিতে ব্যর্থতার কারণে লোকেরা বিনষ্ট হয়, ঈশ্বর তাদের হাত থেকে যারা বিনষ্ট হয়েছে তাদের রক্ত দাবী করবেন। AABen 296.3
সিয়োনের প্রাচীরের ওপরের প্রহরীদের ঈশ্বরের এত কাছে থাকা, আর পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণার সঙ্গে এত সংবেদনশীল হওয়া একটা সুযোগ, যেন তিনি তাদের মাধ্যমে কাজ করে নরনারীদের বিপদের কথা জানিয়ে দিতে পারেন আর তাদের একটা নিরাপদ স্থানের নির্দেশ দিতে পারেন। পাপের নিশ্চিত পরিণাম সম্পর্কে বিশ্বস্তভাবে তাদের সতর্ক করবে, আর বিশ্বস্তভাবে তারা মন্ডলীর স্বার্থ সুরক্ষা করবে। কোন সময়ও তারা তাদের পাহারা শিথিল করবে না। তাদের কাজে দেহের সর্বাঙ্গের অনুশীলন প্রয়োজন। তূরীর ধ্বনির মত তাদের স্বর ওপরে উঠবে, আর একটাও দ্বিধান্বিত, অনিশ্চিত স্বর ধ্বনিত হবে না। বেতনের জন্য তাদের কাজ করতে হবে না, কারণ তারা এর ব্যতিক্রম AABen 297.1
কিছু করতে পারে না, কারণ তারা অনুভব করতে পারে যে, যদি তারা সুসমাচার প্রচার করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তাদের ওপরে অভিশাপ আছে। ঈশ্বরের মনোনীত , উৎসর্গীকরণের রক্তে মুদ্রাঙ্কিত, তারা নরনারীদেও আসন্ন বিনাশ থেকে উদ্ধার করবে। AABen 297.2
একজন পরিচর্যাকারী যে খ্রীষ্টের সাথে একজন সহকর্মী, তার কাজের পবিত্রতা ও কৃতকার্যতার সঙ্গে তা সম্পাদন করতে যে ত্যাগস্বীকার ও পরিশ্রম প্রয়োজন সে সম্পর্কে তার একটা গভীর উপলব্ধি থাকতে হবে। সে তার সুযোগ—সুবিধা ও আরামআয়েস নিয়ে গবেষণা করবে না। সে আত্ম ভুলে থাকবে। হারাণো মেষ খোঁজার সময় সে অনুভব করতে পারে না যে সে ক্লান্ত, শীতার্ত, ও ক্ষুধার্ত। তার দৃষ্টিতে একটাই বস্তু—হারাণোদের উদ্ধার। যে ইম্মানূয়েলের রক্তরঞ্জিত পতাকাতলে কাজ করে তার সেই কাজ AABen 297.3
করতে হবে যার জন্য সাহসিক প্রচেষ্টা ও ধৈর্যপূর্ণ কষ্ট সহিষ্ণুতার প্রয়োজন হবে। ক্রুশের সৈনিক যুদ্ধের প্রথম কাতারে পিছু না হটে দাঁড়িয়ে থাকে। যখন শত্র” তার বিরুদ্ধে আক্রমন চালাতে থাকে, তখন সে, সাহায্যের শক্ত ঘাঁটির দিকে ফেরে, আর যখন সে সদাপ্রভুর কাছে বাক্যের প্রতিজ্ঞাসকল উপস্থিত করে, তখন তাকে সেই সময়ের জন্য শক্তিমন্ত করা হয়। সে তখন ওপর থেকে তার শক্তির প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারে। সে যে বিজয় লাভ করে তা তাকে আত্ম—প্রশংসায় পরিচালিত করে না, কিন্তু তা তাকে সর্বশক্তিমানের দিকে আরও বেশী নির্ভর করতে সহায়তা করে। সেই শক্তির ওপর নির্ভর AABen 297.4
করে, সে পরিত্রাণের বার্তা এত জোরালো ভাবে উপস্থিত করবে যে তা অন্যদের মনকেও স্পন্দিত করবে। AABen 297.5
যে বাক্য শিক্ষাদান করে সে অবশ্যই প্রার্থনা ও তাঁর বাক্য অধ্যয়নের মাধ্যমে ঈশ্বরের সাথে অবিরাম, সচেতন যোগাযোগ রক্ষা করবে, কারণ এখানেই শক্তির উৎস। ঈশ্বরের সাথে যোগাযোগ পরিচর্যাকারীর প্রচেষ্টায় তার প্রচারের প্রভাব থেকেও অনেক বেশী শক্তি যোগাবে। এই শক্তি থেকে সে AABen 298.1
অবশ্যই নিজেকে বঞ্চিত হতে দেবে না। যা অস্বীকার করা যাবে না এমন ঔকান্তিকতার সাথে, সে অবশ্যই তাকে তার কর্তব্য ও পরীক্ষা—কালের জন্য শক্তিমন্ত ও দুর্ভেদ্য করার জন্য, আর জীবন্ত অগ্নি দিয়ে তার ঠোঁট দুটো স্পর্শ করার জন্য ঈশ্বরের কাছে অনুরোধ করবে। চিরন্তন বাস্তবতার ওপর খ্রীষ্টের AABen 298.2
প্রতিনিধিদের প্রায়ই খুব হালকা অবলম্বন থাকে। লোকেরা যদি ঈশ্বরের সঙ্গে চলে, তিনি তাদের পাথরের গুহার মধ্যে লুকিয়ে রাখবেন। এইভাবে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় , মোশি যেমন তাঁকে দেখেছিলেন, তারাও তেমন ঈশ্বরকে দেখতে পাবে। তিনি যে শক্তি ও আলো প্রদান করেন তাতে তারা তাদের সীমিত বিচারে যা সম্ভব মনে করে তার থেকে আরও বেশী বুঝতে ও আরও বেশী সম্পাদন করতে পারবে। যারা হতাশাগ্রস্ত তাদের বিরুদ্ধে শয়তানের কলাকৌশল সবচেয়ে বেশী সফলতার সঙ্গে ব্যবহৃত হয়। যখন নিরুৎসাহিতা পরিচর্যাকারীকে প— বিত করার আশঙ্কা দেখা দেয়, তখন সে ঈশ্বরের সামনে তার অভাব—অভিযোগ খুলে ধরুক। যখন আকাশমন্ডল পৌলের ওপর নির্মম হয়ে উঠেছিল, তখন তিনি আরও পূর্ণভাবে ঈশ্বরকে বিশ্বাস করেছিলেন। অনেক মানুষের চেয়ে তিনি দুর্দশার অর্থ বেশী জানতেন, যখন প্রলোভন ও বিবাদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন তখন তার বিজয়ধ্বনি শুনুন, তার পা স্বর্গমূখী হয়েছিল: “বস্তুতঃ আপাততঃ আমাদে যে লঘুতর ক্লেশ হইয়া থাকে, তাহা উত্তর উত্তর অনুপমরূপে আমাদেও জন্য অনন্তকালস্থ্য়ী গুরুতর প্রতাপ সাধন করিতেছে ; আমরা ত দৃশ্য বস্তু লক্ষ্য না করিয়া অদৃশ্য বস্তু লক্ষ্য করিতেছি ; কারণ যাহা যাহা দৃশ্য, তাহা ক্ষণকালস্থায়ী, কিন্তু যাহা যাহা অদৃশ্য, তাহা অনন্তকালস্থায়ী।” ২ করিন্থীয় ৪:১৭, ১৮ পদ। পৌলের চোখদুটো সব সময় অদৃশ্য ও অনন্তকালস্থায়ী বস্তুর প্রতি নিবদ্ধ ছিল। তিনি যে অতিপ্রাকৃতিক শক্তির সঙ্গে লড়াই করছেন এ কথা বুঝতে পেরে, তিনি তার সির্ভরতা ঈশ্বরের ওপর ন্যস্ত করেছিলেন, আর এখানেই তার শক্তি নিহিত ছিল। যিনি অদৃশ্য তাঁর দিকে দৃষ্টি দিলে বল ও আত্মার জন্য সক্রিয় শক্তি লাভ করা যায় আর মন ও চরিত্রের ওপর জাগতিক শক্তি ছিন্ন হয়। AABen 298.3
একজন পাষ্টার যাদের সঙ্গে কাজ করে তাদের সঙ্গে খোলাখুলি ভাবে মিশবে, এই ভাবে সে তাদের সাথে পরিচিত হবে আর জানবে কীভাবে তার শিক্ষা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী তৈরী করতে হবে। একজন প্রচারক যখন তার বক্তৃতা প্রচার করে, তখন তার কাজ কেবল আরম্ভ হয়। তার কিছু ব্যক্তিগত কাজ করার দরকার আছে। সে লোকদের ঘরে ঘরে যাবে আর আন্তরিকতা ও নম্রতা সহকারে তাদের সাথে কথা বলবে আর প্রার্থনা করবে। এমন কতগুলো পরিবার আছে যাদের ঘরে ঈশ্বরের অনুগ্রহের তত্বাবধায়ক গিয়ে উন্নত পথের দিকে তাদের দৃষ্টি না ফেরালে তারা কোন দিনও ঈশ্বরের সত্যের নাগাল পাবে না। কিন্তু যারা এই কাজ করবে তাদের হৃদয় খ্রীষ্টের হৃদয়ের সাথে একই তালে ধুঁক ধুঁক করতে হবে। AABen 299.1
এই আদেশ থেকে অনেক কিছু বুঝতে পারা যায়, “বাহির হইয়া রাজপথে রাজপথে ও বেড়ায় বেড়ায় যাও, এবং আসিবার জন্য লোকদিগকে পীড়াপীড়ি কর, যেন আমার গৃহ পরিপূর্ণ হয়।” লূক ১৪:২৩ পদ। পরিচর্যাকারীরা যাদের জন্য কাজ করে,তাদের কাছে সত্য শিক্ষা দেবার সময় তাদেও খুব কাছাকাছি আসুক, যেন তারা এই ভাবে যখন ঈশ্বরের সাথে সহযোগিতা করে, তখন তিনি তাদের আধ্যাত্মিক শক্তি পরিহিত করবেন। খ্রীষ্ট তাদের কাজে পরিচালনা দান করবেন, কথা বলার জন্য বাক্য দেবেন যা শ্রোতাদের অন্তরের গভীরে প্রবেশ করবে। পৌলের সঙ্গে এই কথাগুলো বলতে পারা প্রত্যেক পরিচর্যাকারীর সৌভাগ্য, “কারণ আমি তোমাদিগকে ঈশ্বরের সমস্ত মন্ত্রণা জ্ঞাত করিতে সঙ্কুচিত হই নাই।” “কোন হিতকথা গোপন না করিয়া তোমাদিগকে সকলই জানাইতে, এবং সাধারণ্যে ও ঘরে ঘরে AABen 299.2
শিক্ষা দিতে, সঙ্কুচিত হই নাই ; ঈশ্বরের প্রতি মনপরিবর্ত্তন এবং আমাদের প্রভু যীশুর বিশ্বাস বিষয়ে. . . সাক্ষ্য দিয়া আসিতেছি।” AABen 299.3
ত্রাণকর্তা ঘরে ঘরে গিয়ে রোগীদের সুস্থ করতেন, দুঃখার্তদের সান্তনা দিতেন, যাতনাগ্রস্তদের উপশম, ও অশান্তদের কাছে শান্তির বাণী বলতেন। তিনি শিশুদের কোলে তুলে নিতেন আর তাদের আশীর্বাদ করতেন, আর পরিশ্রান্ত মায়েদের কাছে আশা ও সান্তনার কথা বলতেন। অব্যর্থ কোমলত ও অমায়িকতা দিয়ে তিনি মানুষের যে কোন রকম কষ্ট ও যন্ত্রনার মোকাবেলা করতেন। নিজের জন্য না কিন্তু অন্যের জন্য তিনি পরিশ্রম করতেন। তিনি সকলের ভৃত্য ছিলেন। তিনি যাদের সংস্পর্শে এসেছিলেন তাদের সকলের কাছে বল ও আশা নিয়ে আসা—ই তার খাদ্য ও পানীয় ছিল। নর—নারীরা রব্বিদের শিখানো ধর্মীয়মতবাদ ও পুরুষানুক্রমিকভাবে মৌখিক হস্তান্তরিত শিক্ষামালার বদলে যখন তাঁর মুখনিঃসৃত এত ভিন্ন সত্যের বার্তা শুনতো, তখন তাদের অন্তরে আশার সূত্রপাত হতো। তাঁর শিক্ষায় এমন আন্তরিকতা ছিল যে তাঁর বাক্যগুলো বিশ্বাসযোগ্য শক্তির সঙ্গে তাদের অন্তরের অন্তস্থলে প্রবেশ করতো। AABen 299.4
ঈশ্বরের পরিচর্যাকারীগণকে খ্রীষ্টের কাজ করার পদ্ধতি শিখতে হবে, যেন তারা যাদের জন্য কাজ করছে, তাদের আধ্যাত্মিক প্রয়োজনে তাঁর বাক্যের ভান্ডার থেকে এনে মিটাতে পারে। কেবল এভাবেই তারা তাদের বিশ্বাসযোগ্যতার প্রমান দিতে পারে। খ্রীষ্ট অবিরত নির্দেশ পেয়ে তা বিতরণ করার সময় যে আত্মা তাঁর মধ্যে অধিষ্ঠান করতেন, এই পৃথিবীতে ত্রাণকর্তার কাজ করার সময় সেই একই উৎস তাদের জ্ঞান ও তাদের শক্তির গোপন রহস্য হবে। AABen 300.1
অনেকে যারা পরিচর্যা কাজে শ্রম দিয়েছে কিন্তু সফলতা লাভ করতে ব্যর্থ হয়েছে কারণ তারা সদাপ্রভুর কাজে অবিভক্ত মনোযোগ দেয়নি। আত্মাগণকে ত্রাণকর্তার কাছে পরিচালিত করার মত মহান কাজ ব্যতিরেকে পরিচর্যাকারীদের আর কোন একচেটিয়া স্বার্থ থাকা অনুচিত। যে সব মৎস্যধারীদের খ্রীষ্ট ডেকেছিলেন, তারা তৎক্ষণাৎ তাদের জালদড়ি ফেলে তাঁর পশ্চাদগামী হয়েছিল। পরিচর্যাকারীগণ ঈশ্বরের জন্য গ্রহণযোগ্য কাজের সাথে একই সময় তাদের ব্যক্তিগত বৃহৎ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বোঝা বহন করতে পারে না। এ রকম বিভক্ত স্বার্থ তাদের আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকে নি®প্রভ করে দেয়। হৃদয় ও মন পার্থিব বিষয়াদিতে ব্যস্ত থাকে, আর খ্রীষ্টের সেবাকাজ দ্বিতীয় স্থানে চলে আসে। তারা তাদের পারিপার্শিক অবস্থাকে ঈশ্বরের দাবি পূরণ করার জন্য নির্দিষ্ট পথে পরিচালিত না করে, ঈশ্বরের কাজকে তারা তাদের পারিপার্শিক অবস্থা অনুযায়ী পরিচালিত করার চেষ্টা করে। AABen 300.2
তার উচ্চ আহ্বানের জন্য পরিচর্যাকারীর সবটুকু শক্তির প্রয়োজন। তার সর্বোত্তম ঈশ্বরের অধিকারে। সে কখনো ফট্কা বাজারীতে যোগ দেবে না, বা তার মহান কাজের দূরে সরিয়ে নিয়ে যেতে পারে, এমন কোনো ব্যবসা করবে না। পৌল বলেছিলেন, “কেহ যুদ্ধ করিবার সময়ে আপনাকে সাংসারিক ব্যাপাররূপ পাশে বদ্ধ হইতে দেয় না, যেন তাহাকে যে ব্যক্তি যোদ্ধা করিয়া নিযুক্ত করিয়াছে, তাহারই তুষ্টিকর হইতে পারে।” ২ তীমথিয় ২:৪ পদ। প্রভুর সেবায় পরিচর্যাকারীর অবাধ উৎসর্গীকরণের প্রয়োজনীয়তার ওপর প্রেরিত জোর দিয়েছেন। যে পরিচর্যাকারী সম্পূর্ণভাবে ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গীকৃত সে নিজেকে তার পবিত্র আহ্বানে সম্পূর্ণভাবে সাড়া দিতে বাধাস্বরূপ কোনো ব্যবসায় নিয়োজিত হতে অস্বীকার করবে। সে জাগতিক কোনো সম্মান বা ধনদৌলতের চেষ্টা করছে না ; কিন্তু যিনি মানব জাতির জন্য অনন্ত জীবনের ধনরাশী আনার জন্য নিজেকে দান করেছিলেন, সেই ত্রাণকর্তার কথা অন্যের কাছে বলাই তার একমাত্র উদ্দেশ্য হবে। এই পৃথিবীতে ধন সঞ্চয় করা না, কিন্তু মনোযোগহীন ও অবিশ্বস্তদের দৃষ্টি অনন্তকালের বাস্তবতার দিকে আকর্ষণ করাই তার সর্বোচ্চ আকাঙ্খা হবে। তাকে হয়তো বিরাট লাভজনক কোনো জাগতিক ব্যবসায় যোগ দেবার আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে, কিন্তু এই রকম প্রলোভনের উত্তরে সে বলবে, “মনুষ্য যদি সমুদয় জগৎ লাভ করিয়া আপন প্রাণ খোয়ায়, তবে তাহার কি লাভ হইবে?” মার্ক ৮:৩৬ পদ। AABen 301.1
শয়তান খ্রীষ্টের কাছে এই প্ররোচনা উপস্থিত করেছিল, সে জানতো যে, যদি তিনি তার প্রস্তাব গ্রহণ করেন, তাহলে এই পৃথিবীকে কখনো মুক্তিপণ দিয়ে উদ্ধার করা যাবে না। সে এখন অন্য ছদ্মবেশে একই প্রলোভন ঈশ্বরের পরিচর্যাকারীদের সামনে উপস্থিত হয়েছে, সে জানে যে, যারা এই প্রতারণায় প্রতারিত হবে, তারা তাদের বিশ্বস্থতায় মিথ্যা প্রমাণিত হবে। AABen 301.2
ঈশ্বরের ইচ্ছা না যে তাঁর পরিচর্যাকারীরা ধনী হবার জন্য প্রচেষ্টা চালায়। এ বিষয়ে পৌল তীমথিয়কে লিখেছিলেন, “কেননা ধনাসক্তি সকল মন্দের একটা মূল ; তাহাতে রত হওয়াতে কতক লোক বিশ্বাস হইতে বিপথগামী হইয়াছে, এবং অনেক যাতনারূপ কণ্টকে আপনারা আপনাদিগকে বিদ্ধ করিয়াছে। কিন্তু তুমি, হে ঈশ্বরের লোক, এই সকল হইতে পলায়ন কর ; এবং ধার্ম্মিকতা, ভাক্ত, বিশ্বাস, প্রেম, ধৈর্য্য, মৃদুভাব, এই সকলের অনুধাবন কর।” যেমন আদর্শে তেমনি নীতিমালায়, যারা খ্রীষ্টের প্রতিনিধি তাদের কাজ, “যাহারা এই যুগে ধনবান, তাহাদিগকে এই আজ্ঞা দেও, যেন তাহারা গর্বিবতমনা না হয়, এবং ধনের অস্থিরতার উপওে নয়, কিন্তু যিনি ধনবানের ন্যায় সকলই আমাদের ভোগার্থে যোগাইয়া দেন, সেই ঈশ্বরেরই উপরে প্রত্যাশা রাখে ; যেন পরের উপকার করে, সৎক্রিয়ারূপ ধনে ধনবান হয়, দানশীল হয়, সহভাগীকরণে তৎপর হয় ; এইরূপে তাহারা আপনাদের নিমিত্ত ভাবীকালের জন্য উত্তম ভিত্তিমূলস্বরূপ নিধি প্রস্তুত করুক, যেন, যাহা প্রকৃতরূপে জীবন, তাহাই ধরিয়া রাখিতে পারে।” ১ তীমথিয় ৬:১০, ১১, ১৭—১৯ পদ। AABen 301.3
পরিচর্যাকারীদের কাজের পবিত্রতা সম্পর্কে প্রেরিত পৌলের অভিজ্ঞতাসমূহ ও তার শিক্ষামালা, যারা সুসমাচারের পরিচর্যা কাজে নিয়োজিত, তাদের কাছে অনুপ্রেরণা ও সাহয্যের উৎস। পাপীদের জন্য ভালবাসায় পৌলের অন্তর জ্বলতো, আর তিনি তার সমস্ত শক্তি আত্মালাভের জন্য ব্যয় করতেন। তার চেয়ে আত্ম—ত্যাগী, অধ্যবসায়ী কার্যকারী কেউ কখনো ছিল না। অন্যদের আশীর্বাদ করতে যতগুলো সুযোগ—সুবিধা ব্যবহার করা যায়,তা দিয়ে তিনি তার পাওয়া আশীর্বাদগুলোকে মূল্যায়ন করতেন। বিপদগ্রস্তদের সাহায্য করা বা ত্রাণকর্তার বিষয়ে কথা বলার কোনো সুযোগ তিনি হাত ছাড়া করেন নি। খ্রীষ্টের সুসমাচার প্রচার ও মণ্ডলী স্থাপন করার জন্য তিনি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় গিয়েছিলেন। যে কোনো জায়গায় তিনি কথা শোনাবার সুযোগ পেয়েছেন, তিনি ভুলের প্রতিকার করার চেষ্টা করেছেন, আর নর—নারীদের পা ধার্মিকতার দিকে ফিরিয়েছেন। AABen 302.1
পৌল যতগুলো মণ্ডলী স্থাপন করেছিলেন তিনি সেগুলোকে কখনো ভুলে যান নি। একটা মিশনারী যাত্রা শেষ করে, তিনি ও বার্ণবা তাদের ফেলে আসা পথে ফিরে গিয়ে তাদের প্রতিষ্ঠিত মণ্ডলীগুলো পরিদর্শন করলেন আর সেগুলোর মধ্য থেকে লোক বেছে নিলেন যেন তাদের প্রশিক্ষিত করে সুসমাচার প্রচার কাজে সংযুক্ত করতে পারেন। AABen 302.2
পৌলের কাজের বৈশিষ্টের মধ্যে আজকের পরিচর্যাকারীদের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা নিহিত আছে। পরিচর্যা পদের জন্য যুবকদের প্রশিক্ষণ দেওয়াকে প্রেরিত তার কাজের একটা অংশরূপে গড়ে তুলেছিলেন। তিনি তার মিশনারী যাত্রাগুলোতে তাদেও সাথে কওে নিয়ে যেতেন, এভাবে তারা যে অভিজ্ঞতা অর্জন করতো তা তাদের দায়িত্বপূর্ণ পদ গ্রহণ করতে যোগ্য করে তুলতো। যখন তাদের থেকে দূরে চলে যেতেন তষনও তিনি তাদের কাজের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন, আর তীমথিয় ও তীতের কাছে লেখা চিঠিগুলো তার প্রমাণ যে তিনি তাদের কৃতকার্যতার জন্য কত গভীরভাবে আকাঙ্খিত ছিলেন। AABen 302.3
আজকের অভিজ্ঞ কার্যকারীরা একটা খুব ভাল কাজ করবে যদি তারা সমস্ত কাজের ভার নিজেরা বহন করার চেষ্টা না করে, যুব কার্যকারীদের প্রশিক্ষিত করে তাদের কাঁধে কাজের ভার চাপিয়ে দিতে পারে। AABen 303.1
খ্রীষ্টের পরিচর্যাকারীরূপে পৌল তার ওপর ন্যস্ত করা দায়িত্বের কথা, বা তার দিক থেকে কোনো অবিশ্বস্তার কারণে যদি আত্মাগণ বিনষ্ট হয়, তাহলে ঈশ্বর তাকে যে দায়ী করবেন এ কথা তিনি কখনো ভুলে যান নি। তিনি সুসমাচার সম্পর্কে বলেন, “তোমাদের পক্ষে ঈশ্বরের যে দেওয়ানী কার্য্য আমাকে দত্ত হইয়াছে, তদনুসারে আমি মণ্ডলীর পরিচারক হইয়াছি, যেন আমি ঈশ্বরের বাক্য সম্পূর্ণরূপে প্রচার করি ; তাহা সেই নিগূঢ়তত্ব, যাহা যুগযুগানুক্রমে ও পুরুষপুরুষানুক্রমে গুপ্ত ছিল, কিন্তু এখন তাঁহার পবিত্রগণের কাছে প্রকাশিত হইল ; কারণ পরজাতিগণের মধ্যে সেই নিগূঢ়তত্বের গেনরব—ধন কি, তাহা পবিত্রগণকে জ্ঞাত করিতে ঈশ্বরের বাসনা হইল ; তাহা তোমাদের মধ্যবর্ত্তী খ্রীষ্ট, গৌরবের আশা ; তাঁহাকেই আমরা ঘোষণা করিতেছি, সমস্ত জ্ঞানে প্রত্যেক মনুষ্যকে সচেতন করিতেছি ও প্রত্যেক মনুষ্যকে শিক্ষা দিতেছি, যেন প্রত্যেক মনুষ্যকে খ্রীষ্টে সিদ্ধ করিয়া উপস্থিত করি ; আর তাঁহার যে কার্য্যসাধক শক্তি আমাতে সপরাক্রমে নিজ কার্য্য সাধন করিতেছে, তদনুসারে প্রাণপণ করিয়া আমি সেই অভিপ্রায়ে পরিশ্রমও করিতেছি।” কলসীয় ১:২৫—২৯ পদ। AABen 303.2
এই কথাগুলো খ্রীষ্টের পক্ষের কার্যকারীদের সামনে এক বিরাট সাফল্যের সম্ভাবনা উপস্থিত করে, অথচ যারা নিজেদের মহান শিক্ষকের অধীনে রেখে, প্রতিদিন খ্রীষ্টের ইস্কুলে শিক্ষা গ্রহণ করে, তারা সকলেই এই সাফল্য অর্জন করতে পারে। ঈশ্বরের আজ্ঞাধীনের শক্তি অপরিসীম, পরিচারক যে তার দারুণ প্রয়োজনে সদাপ্রভুর সঙ্গে নিজেকে আবদ্ধ করে সে নিশ্চিত হতে পারে যে সে তা পাবে যা তার শ্রোতাদের কাছে জীবনের জন্য জীবনের সুস্বাদ হবে। AABen 303.3
পৌলের লেখায় দেখা যায় যে সুসমাচারের পরিচারকগণ যা শিক্ষা দেয়, তারা সেই সত্যের আদর্শ হবে, “আমরা কোন বিষয়ে ব্যাঘাত জন্মাই না, যেন সেই পরিচর্য্যা—পদ কলঙ্কিত না হয়।” তার নিজের কাজের বিষয়ে করিন্থীয় বিশ্বাসীদের কাছে তার লেখা চিঠিতে তিনি আমাদের জন্য একটা ছবি রেখে গিয়েছেন: “কিন্তু ঈশ্বরের পরিচারক বলিয়া সর্বববিষয়ে আপনাদিগকে যোগ্যপাত্র দেখাইতেছি,—বিপুল ধৈর্য্য,ে নানা প্রকার ক্লেশে, অনাটনে, সঙ্কটে, প্রহারে, কারাবাসে, উপপবে, পরিশ্রমে, অনিন্দ্রায় অনাহারে ; শুদ্ধতায়, জ্ঞানে, চিরসহিষ্ণুতায়, মধুর ভাবে, পবিত্র আত্মায়, অশপট প্রেমে, সত্যের বাক্যে, ঈশ্বরের পরাক্রমে ; দক্ষিণ ও বাম হস্তে ধার্ম্মিকতার অস্ত্রশস্ত্র দ্বারা, গৌরব ও অনাদরক্রমে, অখ্যাতি ও সুখ্যাতিক্রমে ; আমরা প্রবঞ্চকের ন্যায়, অথচ সত্যবাদী ; অপরিচিতের ন্যায়, অথচ সুপরিচিত ; ম্রিয়মানের ন্যায়, অথচ দেখ, জীবিত আছি ; শাসিতের ন্যায়, অথচ হত নহি ; দুঃখিতের ন্যায়, কিন্তু সর্ববদা আনন্দিত ; দীনহীনের ন্যায়, কিন্তু অনেকের ধন দাতা ; আমাদের যেন কিছুই নাই, অথচ আমরা সর্ববাধিকারী।” ২ করিন্থীয় ৬:৩, ৪—১০ পদ। AABen 304.1
তিনি তীতের কাছে লিখেছিলেন, “সেইরূপে যুবকদিগকে সংযত হইতে আদেশ কর। আর আপনি সর্বববিষয়ে সৎক্রিয়ার আদর্শ হও, শিক্ষাতে অবিকার্য্যতা, ধীরতা, এবং অদূষ্য নিরাময় বাক্য প্রদর্শন কর ; যেন বিপক্ষ আমাদের বিষয়ে মন্দ বলিবার সূত্র না পাওয়াতে লজ্জিত হয়।” তীত ২:৬—৮ পদ। AABen 304.2
ঈশ্বরের দৃষ্টিতে তাঁর সেই সব পরিচর্যাকারীদের চেয়ে বেশী মূল্যবান আর কিছুই নাই, যারা পৃথিবীর খিলজমিগুলোতে গিয়ে ফসল চয়নের আশায় সত্যের বীজ বপন করে। তাঁর দাসেরা যারা হারানোদের খোঁজার সময় যে সনির্বন্ধ মিনতি করে তা এক মাত্র খ্রীষ্ট ছাড়া আর কেউ পরিমাপ করতে পারে না। তিনি তাদের তাঁর আত্মার অংশ প্রদান করেন, আর তাদের প্রচেষ্টায় আত্মাগণ পাপের থেকে ধার্মিকতার দিকে ফিরে যেতে পরিচালিত হয়। AABen 304.3
যারা তাদের ক্ষেত—খামার, তাদের ব্যবসা, যদি প্রয়োজন হয় তাদের পরিবার—পরিজনকে পরিত্যাগ করে তাঁর জন্য মিশনারী হতে ইচ্ছুক, ঈশ্বর সেই সব লোকদের ডাকছেন। আর সেই সব ডাকে সাড়া পাওয়া যাবে। অতীতে এমন সব লোক ছিল যারা হারাণোদের অভাব মিটাতে ও খ্রীষ্টের প্রেমে আলোড়িত হয়ে বিদেশে, পৌত্তলিক ও নরখাদকদের মধ্যে অনুগ্রহের বার্তা প্রচার করতে যাবার জন্য ঘর—বাড়ীর আরাম—আয়েস, বন্ধুবান্ধবদের সমাজ, এমন কি স্ত্রী সন্তানদের পরিত্যাগ করেছিল। অনেকে এই প্রচেষ্টায় প্রাণও হারিয়েছে, কিন্তু কাজ চালিয়ে নেবার জন্য অন্যদের প্রস্তুত করা হয়েছে। এইভাবে ধাপে ধাপে খ্রীষ্টের কাজ বৃদ্ধি পেয়েছে, আর এইভাবে বোনা বীজ প্রচুর শস্য উৎপাদন করেছে। ঈশ্বরের জ্ঞান চারদিকে প্রসারিত হয়েছে আর পৌত্তলিক দেশগুলোতে ক্রুশের পতাকা উড্ডিয়মান হয়েছে। AABen 304.4
একজন পাপীর মনপরিবর্তনের জন্য পরিচারক তার রসদের সবটুকু খরচ করতে সচেষ্ট হবে। যে আত্মাকে ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন আর খ্রীষ্ট যার জন্য মহামূল্য দান করেছেন, সামনের সম্ভাবনার কারণে তা মহামূল্যবান, যে আধ্যাত্মিক সুযোগ তাকে দেওয়া হয়েছে, ঈশ্বরের বাক্য দিয়ে যদি শক্তিমন্ত করা যায় তাতেÍ সে দক্ষতার অধিকারী হবে, আর সুসমাচারে উপস্থাপিত আশার মাধ্যমে অমরত্ব লাভ করতে পারবে। খ্রীষ্ট যদি নিরানব্বইটা পরিত্যাগ করে একটা হারাণো মেষকে খুঁজে উদ্ধার করতে আসতে পারেন, আমার কি এর থেকে কম কিছু করে নির্দোষ প্রমাণিত হতে পারবো ? খ্রীষ্ট যেভাবে কাজ করেছেন সেভাবে কাজ না করা, যেভাবে তিনি আত্মত্যাগ করেছেন সেভাবে আত্মত্যাগ না করা, কি পবিত্র দায়িত্বের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা, ও ঈশ্বরের প্রতি অপমান করা হয় না ? AABen 305.1
একজন খাঁটি পরিচারকের অন্তর আত্মা লাভের জন্য আকুল আকাঙ্খায় পূর্ণ থাকে। সময় ও শক্তি ব্যয় করা হয়, ক্লান্তিকর প্রচেষ্টা এড়িয়ে যাওয়া হয় না ; যে সত্য তার নিজের আত্মায় এমন আনন্দ ও শান্তি ও সুখ এনে দিয়েছে, সেই সত্য অন্যেরা অবশ্যই শুনবে। খ্রীষ্টের আত্মা তার ওপর অধিষ্ঠান করেন। তাকে হিসাব দিতে হবে, এই ভাবে সে আত্মাগণের খোঁজ করে। তার চোখ দুটোকে কালভেরীর ক্রুশের ওপর স্থাপন করে, ঊচ্চীকৃত ত্রাণকর্তার ওপর দৃষ্টি রেখে, তাঁর অনুগ্রহের ওপর নির্ভর করে, তিনি তার সঙ্গে তার ঢাল হয়ে, তার শক্তি হয়ে, তার দক্ষতা হয়ে, শেষ পর্যন্ত থাকবেন এ কথা বিশ্বাস করে, সে ঈশ্বরের পক্ষে কাজ করে যাবে। আমন্ত্রণ ও অনুরোধের সঙ্গে, ঈশ্বরের প্রেমের নিশ্চয়তা মিশিয়ে, সে যীশুর কাছে জয় করে নিয়ে আসার জন্য আত্মাগণকে খোঁজ করে, আর স্বর্গে যারা “আহূত ও মনোনীত ও বিশ্বস্ত” প্রকাশিত ১৭:১৪ পদ, তাদের সঙ্গে সে গণিত হয়। ইংরাজী পান্ডুলিপি AABen 305.2