প্রেরিতগণের কার্য-বিবরণ
৩২শ অধ্যায়—একটা সংস্কারমুক্ত মণ্ডলী
করিন্থীয় মণ্ডলীর কাছে লেখা প্রথম চিঠিতে,পৌল পৃথিবীতে ঈশ্বরের কাজের সমর্থনের ভিত্তিরূপে সাধারণ নীতিমালার বিষয়ে বিশ্বাসীদের নির্দেশ দেন। তাদের জন্য তার প্রৈরিতিক কাজের কথা লিখতে গিয়ে তিনি প্রশ্ন করেন : AABen 275.1
“কে কখন আপনি ধন ব্যয় করিয়া যুদ্ধে যায় ? কে দ্রাক্ষাক্ষেত্র প্রস্তুত কওে, আর তাহার ফল না খায় ? অথবা কে পাল চরায়, আর পালের দুগ্ধ না খ্য় ? আমি কি মানুষের মত এ সকল কথা কহিতেছি ? অথবা ব্যবস্থাও কি ইহা বলে না ? কারণ মোশীর ব্যবস্থ্ায় লেখা আছে, “শস্যমর্দ্দনকারী বলদের মুখে জাল্তি বাঁধিও না।” ঈশ্বর কি বলদেরই বিষয় চিন্তা করেন ? কিম্বা সর্ব্বথা আমাদেও নিমিত্ত ইহা করেন ? বস্তুতঃ আমাদেরই নিমিত্ত ইহা লিখিত হইয়াছে, কারণ যে চাস কওে, প্রত্যাশাতেই চাস করা তাহার উচিৎ ; এবং যে শস্য মাড়ে, ভাগ পাইবার প্রত্যাশাতেই শসম্মাড়া তাহার উচিৎ।” AABen 275.2
প্রেরিত আরও প্রশ্ন করেন, “আমরা যখন তোমাদের কাছে আত্মিক বীজ বপন করিয়াছি, তখন যদি তোমাদের মাংসিক ফল গ্রহণ করি, তবে তাহা কি মহৎ বিষয়? যদি তোমাদেও উপওে কর্ত্তৃত্ব করিবার অন্য লোকদের অধিকার থাকে, তবে কি আমাদের আরও অধিকার নাই ? তথাচ আমরা এই কর্ত্তৃত্ব ব্যবহার করি নাই, বরং সকলি সহ্য করিতেছি, যেন খ্রীষ্টের সুসমাচারের কোন বাধা না জন্মাই। তোমরা জান না যে, পবিত্র বিষয়ে কার্য্য যাহারা করে, তাহারা পবিত্র স্থানের বস্তু খায়, এবং যজ্ঞবেদিও সেবা যাহারা কওে, তাহারা যজ্ঞবেদির সহিত অংশী হয়? সেরূপে প্রভু সুসমাচার প্রচারকদের জন্য এই বিধান করিয়াছেন যে, তাহাদের উপজীবিকা সুসমাচার হইতে হইবে।” ১ করিন্থীয় ৯:৭—১৪ পদ। AABen 275.3
মন্দিরে যারা সেবাকাজ করে সে সব যাজকদের ভরণপোষণের জন্য সদাপ্রভুর পরিকল্পনা সম্পর্কে পৌল এখানে উলে—খ করেছেন। যাদের এই পবিত্র পদের জন্য পৃথক করে রাখা হয়েছিল, তারা যাদের কাছে আধ্যাত্মিক আশীর্ব্বাদের সেবা দান করতো সেই সব ভ্রাতৃগণ তাদের ভরণপোষণ বহন করতো। “আর লেবির সন্তানদের মধ্যে যাহারা যাজকত্ব প্রাপ্ত হয়, তাহারা ব্যবস্থানুসারে প্রজাবৃন্দের অর্থাৎ নিজ ভ্রাতৃগণের কাছে দশমাংশ গ্রহণ করিবার বিধি পাইযাছে।” ইব্রীয় ৭ : ৫ পদ। সদাপ্রভু লেবির বংশকে মন্দির ও যাজকত্ব সংক্রান্ত পবিত্র পদসমূহের জন্য মনোনীত করেছিলেন। “কেননা সদাপ্রভুর নামে পরিচর্য্যা করিতে নিত্য দণ্ডায়মান হইবার জন্য তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভ তোমার সকল বংশের মধ্য হইতে তাহাকে ও তাহার সন্তানগণকে মনোনীত করিয়াছেন।” (দ্বিতীয় বিবরণ ১৮ : ৫ পদ।) সমস্ত আয়ের এক দশমাংশ সদাপ্রভু নিজের বলে দাবি করেছেন, আর এই দশমাংশ দিতে অস্বীকার করাকে তিনি ডাকাতি করার সমতুল্য মনে করেন। AABen 275.4
পরিচর্যা কাজের ভরণপোষণের এই পরিকল্পনার কথা পৌল এখানে উলে—খ করেন যখন তিনি বলেন, “সেইরূপে প্রভু সুসমাচার প্রচারকদের জন্য এই বিধান করিয়াছেন যে, তাহাদের উপজীবিকা সুসমাচার হইতে হইবে।” পরে তীমথিয়ের কাছে লেখার সময় প্রেরিত বলেছিলেন, “কার্য্যকারী আপন বেতনের যোগ্য।” ১ তীমথিয় ৫ : ১৮ পদ। AABen 276.1
তাঁর সেবাকাজে ভরণপোষণে ঈশ্বরের পরিকল্পনায় দশমাংশ দান একটা অংশ মাত্র। অসংখ্য দান ও উপহার ঐশ্বরিকভাবে সুনির্দিষ্ট করা আছে। যিহূদীদের রীতিতে দরিদ্রদের অভাব মোচন ও ঈশ্বরের কাজ চালিয়ে রাখার জন্য উদারতার আত্মা পোষণ করতে শিক্ষা দেওয়া হতো। কোন কোন বিশেষ অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছাদান থাকত। শস্যসংগ্রহ ও দ্রাক্ষাসংগ্রহের সময়, ক্ষেতের প্রথম ফল — ভূট্টা, দ্রাক্ষারস, ও তেলকে সদাপ্রভুর কাছে দানস্বরূপে উৎসর্গ করা হত। ফসল তোলার পওে পড়ে থ্কা শস্য ও ক্ষেতের কোণাগুলো দরিদ্রদের জন্য সংরক্ষিত থাকত। মেষদের লোম ছেদনের সময় প্রথম লোম, প্রথম মাড়া গম, ঈশ্বরের জন্য পৃথক রাখা হতো। এইভাবে সব পশুর প্রথমজাত, ও প্রথমজাত পুত্র সন্তানের মুক্তিমূল্য প্রদান করা হতো। প্রথম ফলগুলো মন্দিরে সদাপ্রভুর সামনে আনতে হতো আর পরে তা যাজকদের ব্যবহারের জন্য দিয়ে দেওয়া হতো। AABen 276.2
বদান্যতার এই রীতি দিয়ে সদাপ্রভু ইস্রায়েলদের এই শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন যে, সব কিছুতে তিনি প্রথমে থাকবেন। এই ভাবে তাদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া হতো যে, তাদের পশু,পাখী, ক্ষেত—খামার, সব কিছুর মালিক ঈশ্বর, আর তিনিই ফসল বৃদ্ধি ও পাঁকার জন্য সূর্যের আলো ও বৃষ্টি পাঠিয়ে থাকেন। তাদেও অধিকারের সব কিছু তাঁর ; আর তারা তাঁর সব সম্পত্তির তত্ত্বাবধায়ক। AABen 276.3
ঈশ্বরের উদ্দেশ্য এই না যে খ্রীষ্টানরা, যারা সুযোগ—সুবিধায় যিহূদী জাতির থেকে অনেক এগিয়ে, তারা তাদের থেকে কম মুক্তহস্তে দান করবে। ত্রাণকর্তা বলেছেন, “আর যে কোন ব্যক্তিকে অধিক দতাত হইয়াছে, তাহার নিকটে অধিক দাবি করা যাইবে।” লূক ১২ : ৪৮ পদ।ইব্রীয়দেও কাছ থেকে যে বদান্যতা দাবি করা হয়েছিল তা অধিকাংশে তাদের নিজেদের জাতির উপকারের জন্য ; বর্তমানে ঈশ্বরের কাজ সরা পৃথিবীতে প্রসারিত হয়েছে। তাঁর অনুসারীদের হাতে, খ্রীষ্ট সুসমাচারের অমূল্যধন অর্পণ করেছেন, আর এই পৃথিবীর কাছে পরিত্রাণের এই আনন্দ বার্তা দেবার দায়িত্ব তিনি তাদের ওপরই ন্যস্ত করেছেন। বাস্তবিক আমাদের নৈতিক বাধ্যবাধকতা প্রাচীন ইস্রায়েলের থেকে অনেক অনেক বেশী। AABen 277.1
ঈশ্বরের কাজ যতই প্রসারতা লাভ করতে থাকবে, সাহাযের ডাক তত ঘন ঘন আসতে থাকবে। এই ডাকসমূহে সাড়া দিতে গিয়ে, খ্রীষ্টানরা সেই আদেশের দিকে মনোযোগ দেবে, “তোমরা সমস্ত দশমাংশ ভাণ্ডারে আন, যেন আমার গৃহে খাদ্য থাকে।” মালাখি ৩ : ১০ পদ। যদি খ্রীষ্টান নমধারীরা তাদের চাঁদা ও দশমাংশ বিশ্বস্তভাবে ঈশ্বরের কাছে আনে, তাঁর ভাণ্ডার পরিপূর্ণ থাকবে। তাহলে সুসমাচারের কাজ চালিয়ে নিয়ে যাবার জন্য তহবিল গঠন করতে মেলা, লটারী, বা আমোদ—প্রমোদের পার্টিদেবার প্রয়োজন হবে না। AABen 277.2
লোকেরা তাদেও সম্পদ আত্মপ্রশ্রয়ে, ক্ষুধা চরিতার্থ করতে, ব্যক্তিগত সাজগোজ, অথবা ঘরবাড়ী তৈরী করতে প্রলোভিত হয়। এই সব ব্যাপারে মণ্ডলীর অনেক সদস্যরা যথেচছ এমন কি অপব্যয়কর ভাবে ব্যয় করতে ইতস্ততঃ করে না। কিন্তু যখন পৃথিবীতে তাঁর কাজের প্রসারতার জন্য সদাপ্রভুর ভাণ্ডারে কিছু দিতে বলা হয়, তখন তারা গম্ভীর হয়ে পড়ে। হয়ত, কোন ভাবে এড়ানো যাবে না অনুভব করে, তারা প্রায়ই বাজে খরচে যে অর্থ ব্যয় করে তার থেকে অনেক কম কিছু বের করে দেয়। তারা খ্রীষ্টের সেবার প্রতি প্রকৃত কোন প্রেম প্রদর্শন ও আত্মাগণের পরিত্রাণের জন্য ঐকান্তিক কোন আকর্ষণ অনুভব করে না। আশ্চর্যের বিষয় এই যে এই রকম লোকদের খ্রীষ্টিয় জীবন খর্বকায়, অসুস্থ জীবনযাপন ! AABen 277.3
যার অন্তর খ্রীষ্টের প্রেমে আলোকিত সে মানুষের কাছে দত্ত, পৃথিবীর কাছে মঙ্গল, দয়া, ও সত্যের ঐশ্বর্যরাশী উপস্থাপন করার মত সর্বোচ্চ , পবিত্রতম কাজের অগ্রগতির জন্য, সাহায্য করাকে কেবল একটা কর্তব্য বলে মনে করবে না, বরং সুখদায়ক বলে মনে করবে। AABen 278.1
লোভের মনোভাব মানুষকে স্বার্থোপায় চরিতার্থ করার জন্য ব্যয় করতে পরিচালিত করে, যা সঙ্গতভাবে ঈশ্বরের সম্পদ, আর এই মনোভাব তাঁর কাছে এখন যেমন ঘৃণ্য, যখন তিনি তাঁর ভাববাদীর মাধ্যমে তাঁর লোকদের কঠোর ভাবে তিরস্কার করেছিলেন তখনও তেমনই ছিল, তিনি বলেন, “মনুষ্য কি ঈশ্বরকে ঠকাইবে ? তোমরা ত আমাকে ঠকাইয়া থাক। কিন্তু তোমরা বলিতেছ, কিসে তোমাকে ঠকাইয়াছি ? দশমাংশে ও উপহারে। তোমরা অভিশাপে শাপগ্রস্ত ; হাঁ, তোমরা সমস্ত জাতি, আমাকেই ঠকাইতেছ।” মালাখি ৩ : ৮,৯ পদ। AABen 278.2
বদান্যতার মনোভাবই স্বর্গীয় মনোভাব। এই মনোভাব খ্রীষ্টের ক্রুশের ওপর আত্মত্যাগের মাধ্যমে সর্বোচ্চ প্রকাশ পায়। আমাদের জন্য পিতা তাঁর একজাত পুত্রকে দান করেছিলেন; আর খ্রীষ্ট, তাঁর সব কিছু পরিত্যাগ করলেন, তারপরে, মানুষ যেন উদ্ধার পেতে পারে সে জন্য নিজেকে দান করলেন। কালভেরীর ক্রুশ খ্রীষ্টের প্রত্যেক অনুসরণকারীর বদান্যতার অনুভূতিতে নাড়া দেওয়া উচিৎ। দান করার মূলনীতি এখানে বর্ণনা করা হয়েছে। “যে বলে, আমি তাঁহাতে থাকি, তাহার উচিত যে তিনি যেরূপ চলিতেন, সেও তদ্রূপ চলে।” ১ যোহন ২:৬ পদ। AABen 278.3
অন্যদিকে, স্বার্থপরতার মনোভাব শয়তানের মনোভাব। জাগতিকদের জীবনে লাভ করার মূলনীতি বর্ণনা করা হয়েছে। তারা সুখ ও আরাম লাভ করার প্রত্যাশা করে কিন্তু তাদের বপনের ফসল দুর্দশা ও মৃত্যু। AABen 278.4
যতদিন ঈশ্বর তাঁর সন্তানদের আশীর্বাদ করা বন্ধ না করেন, ততদিন তারা তাঁর দাবি করা তাঁর অংশ ফেরৎ দিতে অঙ্গীকার বদ্ধ। তারা শুধু যে তাঁর নিজস্ব অংশ সদাপ্রভুর কাছে অর্পণ করবে কেবল তা—ই না, কিন্তু তারা তাঁর ভাণ্ডারে কৃতজ্ঞতার দান, মুক্তহস্তে শ্রদ্ধাঞ্জলীও প্রদান করবে। তারা হৃষ্টচিত্তে তাদের আশীর্বাদের প্রথম ফল—তাদের অতিপ্রিয় সম্পদ, তাদের সর্বোত্তম ও পবিত্রতম সেবা সৃষ্টিকর্তার কাছে উৎসর্গ করবে। এইভাবে তারা প্রচুর আশীর্বাদ লাভ করবে। ঈশ্বর নিজে তাদের আত্মাকে জলসিক্ত বাগানের মত করবেন যেখানে জলের অভাব হবে না। আর যখন শেষ প্রচুর ফসল সংগৃহিত হবে, তখন তারা গৃহকর্তার কাছে যে শষ্যের আঁটি নিয়ে আসবে তা তাদের কাছে ধার দেওয়া তালন্তের নিঃস্বার্থ ব্যবহারের ক্ষতি পূরণ করে দেবে। AABen 278.5
ঈশ্বরের মনোনীত বার্তাবাহকেরা, যারা অদম্য পরিশ্রমে নিয়োজিত আছে, ভ্রাতৃগণের আন্তরিক ও সহানুভূতিশীল সমর্থনের সাহায্য ছাড়া, কখনও তাদের নিজ দায়িত্বে যুদ্ধক্ষেত্রে যেতে বাধ্য করা উচিৎ হবে না। যারা পরিচর্যাকাজে নিজেদের নিয়োজিত করার জন্য তাদের জাগতিক চাকরীবাকরী ছেড়ে দিয়েছে, মণ্ডলীর সদস্যদের তাদের সঙ্গে উদারভাবে ব্যবহার করা উচিৎ। যখন ঈশ্বরের পরিচর্যাকারীদের উৎসাহ দেওয়া হয়, তখন তাঁর কাজ দ্রুত অগ্রসর হয়। কিন্তু যখন মানুষের স্বার্থপরতার জন্য, তাদের বৈধ সমর্থন বন্ধ কওে দেওয়া হয়, তখন তাদের হাত দুর্বল হয়ে পড়ে, আর তাদের কর্মক্ষমতা ভীষণ ভাবে পঙ্গু হয়ে পড়ে। AABen 279.1
যারা নিজেদের তাঁর অনুগামী বলে দাবি করে তাদের বিরুদ্ধে ঈশ্বরের অসন্তোষ প্রজ্জ্বলিত হয়ে ওঠে, তবুও তিনি সক্রিয় সেবাকাজে নিয়োজিত থাকার সময় নিবেদিত কার্যকারীদের জীবনের প্রয়োজনীয় জাগতিক কাজের বিভিন্ন বিভাগের শারীরিক ও মানসিক কাজে বিশ্বস্ত কার্যকারীরা ভাল বেতন পেতে পারে। সত্য প্রচার, ও আত্মাগণকে খ্রীষ্টের কাছে পরিচালিত করার কাজ, যে কোন সাধারণ ব্যবসার থেকে কি বেশী প্রয়োজনীয় না ? আর যারা এই কাজে বিশ্বস্তভাবে নিয়োজিত আছে তারা কি ন্যায্যভাবে যথেষ্ট মজুরী পাবার যোগ্য না ? নৈতিক ও শারীরিক মঙ্গলের মূল্য অনুমানের দ্বারা আমরা জাগতিক ও স্বর্গীয় বিষয়ে আমাদের মূল্যায়ন প্রকাশ করতে পারি। AABen 279.2
সেবাকাজের খরচ জোগানোর জন্য ধনাগাওে অনেক তহবিল থাকতে পারে, আর মিশনারী উদ্যোগে সাহায্যেও ডাক এলে, ঈশ্বরের লোকদের হৃষ্টচিত্তে ও মুক্তহস্তে দান করা প্রয়োজন। পরিচর্যাকারীদের ওপর একটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে যেন তারা মণ্ডলীসমূহের সামনে ঈশ্বরের কাজের সব অভাব অভিযোগ তুলে ধরে ও তাদের উদার হতে শিক্ষা দেয়। যখন এ বিষয়ে অবহেলা করা হয়, আর মণ্ডলীসমূহ অন্যদের সাহায্য দিতে ব্যর্থ হয়, তখন কেবল সদাপ্রভুর কাজই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, কিন্তু বিশ্বাসীদের কাছে যে আশীর্বাদ আসার কথা তা প্রত্যাহার করা হয়। AABen 279.3
এমন কি সবচেয়ে গরীব লোকেরও ঈশ্বরের কাছে উপহার আনা উচিৎ। যারা তাদের থেকেও বেশী অভাবগ্রস্ত তাদের সাহায্যের জন্য আত্মত্যাগ করে তারা খ্রীষ্টের অনুগ্রহের সহভাগী হয়। গরীব মানুষের দান, আত্মত্যাগের ফল, ঈশ্বরের সামনে ধূপের সুগন্ধের মত উঠে আসে। আর প্রত্যেক আত্মত্যাগের কাজ দাতার অন্তরে হিতসাধনের মনোভাবকে শক্তিশালী করে, যেন আমরা তাঁর সাথে নিবিড় ভাবে সংযুক্ত হতে পারি, যিনি ধনী ছিলেন,তথাপি আমাদের জন্য গরীব হলেন, যেন আমরা তাঁর দরিদ্রতায় ধনবান হতে পারি। AABen 280.1
যারা অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করছে অথচ ঈশ্বরের কাজের সাহায্যের জন্য তাদের উপহার দিতে ইচ্ছুক, তাদের উৎসাহের জন্য বিধবার যথাসর্বস্য দুটো সিকি পয়সা ধনাগারে দানের কথা লেখা হয়েছে। খ্রীষ্ট শিষ্যদেও দৃষ্টি ঐ মহিলার দিকে আকর্ষণ করলেন যে তার “যাহা কিছু ছিল, সমস্ত জীবনোপায় রাখিল।” মার্ক ১২:৪৪ পদ। যাদের ভিক্ষা দিতে আত্মত্যাগের প্রয়োজন হয় না, তাদের বিরাট অঙ্কের দানের চেয়ে তিনি বিধবার উপহারের অনেক বেশী মূল্য দিলেন। তাদের প্রাচুর্যের থেকে তারা একটা ক্ষুদ্র অংশ দান করেছে। তার দান আনার জন্য, বিধবাকে, আগামী কালের অভাব মিটানোর জন্য ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করে, এমন কি নিজেকে নিজের প্রয়োজনীয় বস্তু থেকে বঞ্চিত করতে হয়েছে। তার বিষয়ে ত্রাণকর্তা বলেন, “আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, ভাণ্ডারে যাহারা মুদ্রা রাখিতেছে, তাহাদে সকল অপেক্ষা এই দরিদ্রা বিধাব অধিক রাখিল।” ৪৩ পদ। এভাবে তিনি এই শিক্ষা দিলেন যে বেশী অঙ্কের দান দিয়ে পরিমাপ করা যায় না, কিন্তু দান করা অংশ ও দাতা যে উদ্দেশ্যে অনুপ্রাণিত হয়ে দান করেছে তার ওপর নির্ভর করে মূল্য নিরূপণ করা হয়। AABen 280.2
মণ্ডলীগুলোর মধ্যে প্রেরিত পৌলের পরিচর্যার সময় তিনি তারঅক্লান্ত প্রচেষ্টা দিয়ে নতুন বিশ্বাসীদের অন্তরে ঈশ্বরের কাজের জন্য বিরাট কিছু করতে অনুপ্রাণিত করছিলেন। প্রায়ই তিনি তাদের বদান্যতার প্রাচীনবর্গের সাথে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “সকল বিষয়ে আমি তোমাদিগকে দৃষ্টান্ত দেখাইয়াছি যে, এই প্রকারে পরিশ্রম করিয়া দুর্ব্বলদিগকে সাহায্য করিতে হইবে, এবং প্রভু যীশুর বাক্য স্মরণ করা উচিত, কেননা তিনি আপনি বলিয়াছেন, গ্রহণ করা অপেক্ষা বরং দান করা ধন্য হইবার বিষয়।‘‘ করিন্থীয় তিনি লিখেছেন, “কিন্তু আমি বলি এই, যে অল্প পরিমানে বীজ বুনে, সে অল্প পরিমানে শস্য কাটিবেঃ আর যে ব্যক্তি আশীর্ব্বাদের সহিত বীজ বুনে, সে আশীর্ব্বাদের সহিত শস্যও কাটিবে। প্রত্যেক ব্যক্তি আপন পন হৃদয়ে যেরূপ সঙ্কল্প করিয়াছে, তদনুসারে দান করক, মনোদুঃখপূর্ব্বক কিম্বা আবশ্যক বলিয়া না দিউকঃ কেননা ঈশ্বর হৃষ্টচিত্ত দাতাকে ভাল বাসেন।‘‘ প্রেরিত ২০:৩৫; ২ করিন্থয় ৯:৬, ৭ পদ। AABen 280.3
জাগতিক সম্পদের দিক থেকে মাকিদনিয়ার প্রায় সব বিশ্বাসীরা গরিব ছিল, কিন্তু তাদের অন্তর ঈশ্বর ও তাঁর সত্যের প্রতি প্রেমে উপচে পড়ছিল, তারা আনন্দের সঙ্গে সুসমাচারের খরছ বহন করেছিল । যীহূদী বিশ্বাসীদের সাহায্যের জন্য যখন পরজাতীয় মণ্ডলীগুলোতে সাধারণ দান সংগ্রহ করা হতো,তখন অন্যান্য মণ্ডলীগুলোতে মাকিদনিয় বিশ্বাসীদের দানশীলতাকে উদাহরণরূপে তুলে ধরা হতো। করিন্থীয় বিশ্বাসীদের কাছে লিখবার সময় প্রেরিত তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ কওে বলেন, “আর ভাতৃগণ, মাকিদনিয়া দেশস্থ মণ্ডলীসমূহে ঈশ্বরের যে অনুগ্রহ দত্ত হইয়াছে, তাহা আমরা তোমাদগকে জ্ঞাত করিতেছি। ফলতঃ ক্লেশরূপ মহাপরীক্ষার মধ্যেও তাহাদের আনন্দের উপচয় এবং অগাধ দীনতা তাআহাদের দানশীলতারূপ ধনের উদ্দেশে উপচিয়া পড়িয়াছে। কেননা আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে, তাহারা সাধ্য পর্য্যন্ত, বরং সাধ্যের অতিরিক্ত পরিমানে স্ব—ইচ্ছায় দান করিয়াছিল, বিস্তর অনুনয় সহকাওে সেই অনুগ্রহের সম্বন্ধে, এবং পবিত্রগণের পরিচর্য্যায় সহভাগিতার সম্বন্ধে, আমাদের কাছে অনুরোধ করিয়াছিল।” ২ করিন্থীয় ৮:১—৪ পদ । AABen 281.1
মাকিদনিয় বিশ্বাসীদের আত্মত্যাগের ইচ্ছা তাদের সর্বান্তকরণ উৎসর্গীকরণের ফলে এসেছিল। ঈশ্বরের আত্মা দ্বারা অনুপ্রানিত হয়ে তারা “আপনাদিগকেই প্রথমে প্রভুর এবং আমাদের উদ্দেশে প্রদান করিল।” (২ করিন্থীয় ৮:৫ পদ।), তারপরে তারা তাদের দান গ্রহণ করার জন্য তাকে পীড়াপীড়ি করেছে। তাদের সরলতা ও সততা, এবং ভাতৃগণের প্রতি প্রেমে, তারা আনন্দের সঙ্গে আত্ম— অস্বীকার করেছে, আর এইভাবে হিতসাধনের ফলের প্রাচুর্য লাভ করেছে। AABen 281.2
সেখানের ভাতৃগণকে সবল করার জন্য পৌল যখন তীতকে করিহ্ণে পাঠান, তখন তিনি তাকে দানের অনুগ্রহে মন্ডলীকে গেঁথে তুলতে নির্দেশ দেন, আর বিশ্বাসীদের কাছে একটা ব্যক্তিগত চিঠিতে তিনি নিজের আবেদনও যোগ করেন। তিনি অনুনয় করেন, ” তোমরা যেমন সর্ব্ববিষয়ে উপচিয়া পরিতেছ—বিশ্বাসে, বক্তৃতায়, জ্ঞানে, সর্ব্বপ্রকার যত্নে, এবং আমাদের প্রতি তোমাদেও প্রেমে তেমনি যেন এই অনুগ্রহ—কার্য্যেও উপচিয়া পড়। “আর এখন সেই কার্য্যও সমাপ্ত কর; যেমন ইচ্ছা করায় আগ্রহ ছিল, তদ্রুপ যাহার যাহা আছে, তদনুসারে যেন সমাপ্তিও হয়। কেননা যদি আগ্রহ থাকে, তবে যাহার যাহা আছে, তদনুসারে তাহা গ্রাহ্য হয়; যাহার যাহা নাই, তদনুসারে নয়। “আর ঈশ্বর তোমাদিগকে সর্ব্বপ্রকার প্রাচুর্য্য থ্কায় তোমরা সর্ব্বপ্রকার সৎকর্ম্মেও নিমিত্ত উপচিয়া পড়। … আর এই দানশীলতা আমাদের দ্বারা ঈশ্বরের প্রতি ধন্যবাদ সম্পন্ন করে।” ২ করিন্থীয় ৮:৭, ১১, ১২; ৯:৮—১১ পদ। AABen 282.1
নিঃস্বার্থ বদান্যতা প্রাথমিক মন্ডলীকে একটা আনন্দের মিছিলে শামিল করেছিল; কারণ বিশ্বাসীরা জানত যে তাদের প্রচেষ্টায়, যারা অন্ধকারে আছে তাদের কাছে সুসমচারের বার্তা পাঠানোর জন্য সাহায্য করছে। তাদের হিতসাধন ইচ্ছা এই সাক্ষ্য দেয় যে, তারা ঈশ্বরের অনুগ্রহ বৃথা গ্রহণ করে নি। আত্মার পবিত্রীকরণ ছাড়া এই রকম উদারতা উৎপন্ন করা কীভাবে সম্ভব? বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীদের কাছে এটা অনুগ্রহের একটা আশ্চর্য কাজ। AABen 282.2
খ্রিষ্টীয় বদান্যতার সঙ্গে আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধি নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ। তাদের জীবনে ত্রাণকর্তার বদান্যতা প্রকাশের সুযোগ লাভের জন্য খ্রিষ্টের অনুসারীদের উল—াস করা উচিৎ। তারা যেমন সদাপ্রভুকে দান করে তাদের এই নিশ্চয়তা আছে যে তাদের ধন তাদের আগেই স্বর্গীয় প্রাঙ্গনে পৌছে যাচ্ছে। মানুষেরা কি তাদের সম্পত্তি নিরাপদ করতে চায়? তারা ক্রুশের ক্ষতচিহ্ন ধারণকারীর হাতে তা ন্যস্ত করক। তারা কি তাদের ধন উপভোগ করতে চায়? তারা কি তাদের বিষয়সম্পত্তি বাড়াতে চায়? তারা ঐশ্বরিক আদেশে কর্ণপাত করক, “তুমি সদাপ্রভুর সম্মান কর আপ্নাআর ধনে, আর তোমার সমস্ত দ্রব্যের অগ্রিমাশে ; তাহাতে তোমার গোলাঘর সকল বহু শস্যে পূর্ণ হইবে, তোমার কু নূতন দ্রাক্ষারস উথলিয়া পড়িবে ।” হিতোপদেশ ৩:৯ , ১০ পদ । তারা তাদে বিষয়সম্পদ স্বার্থপূর্ণ উদ্দেশ্যে জমা করার চেষ্টা কর ক, তা তাদের চির ক্ষতিতে পরিণত হবে । কিন্তু তাদে সম্পদ ঈশ্বরকে দেওয়া হোক , সেই মুহূর্ত থেকে তা তাঁর নামাঙ্কন বহন করে । তা তাঁর নিত্যতা দিয়ে AABen 282.3
মুদ্রাঙ্কিত হয় । ঈশ্বর ঘোষণা দিয়েছেন, ” ধন্য তোমরা, যাহারা সমস্ত জলপ্রবাহের ধারে বীজ বপন কর, ।” যিশাইয় ৩২:২০ পদ। AABen 283.1
যেকোনো জায়গায় ঈশ্বরের কাজে বা মারবতার সেবায় আমাদেও সাহায্যেও প্রয়োজন, সেখানে ঈশ্বর দান অবিরত বিতরণ করলে তা দ্রিদ্রতায় পরিণত হয় না । ” কেহ কেহ বিতরণ করিয়া আরও বৃদ্ধি পায়; কেহ কেহ বা ন্যায্য ব্যয় অস্বীকার করিয়া কেবল অভাবে পড়ে ।” হিতোপদেশ ১১:২৪ পদ । বীজবাপক তার বীজ ছড়িয়ে দিয়ে তা বহুগুণে বৃদ্ধি করে । সুতরাং যারা ঈশ্বরের দান বিতরণে বিশ্বস্ত এটা তাদের জন্যও প্রযোজ্য । বিতরণ করে তারা তাদের আশীর্বাদ বৃদ্ধি করে । ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছেন, ” দেও, তাহাতে তোমাদিগকেও দেওয়া যাইবে ; লোকে বিলক্ষণ পরিমাণে চাপিয়া ঝাঁকিয়া উপচিয়া তোমাদের কোলে দিবে ।” লূক ৬:৩৮ পদ । AABen 283.2
ইংরাজী পান্ডূলিপি ২০৯ পৃষ্ঠা AABen 283.3