প্রেরিতগণের কার্য-বিবরণ
২৫শ অধ্যায়—থিষলনীকীয় পত্র
পৌল যখন করিন্থে অবস্থান করছিলেন সে সময় সীল ও তীমথি মেসিডোনিয়া থেকে ফিরে আসার কারণে তিনি দারুনভাবে উৎফুল্ল হয়েছিলেন। তাঁরা পৌলের জন্য সেই সব মানুষের “বিশ্বাস ও প্রেমের শুভ সংবাদ” নিয়ে এসেছিলেন, যারা থিষলনীকিতে প্রথম প্রচার যাত্রায় খ্রীষ্টের সুসমাচারে বিশ্বাস করেছিলেন। শত প্রলোভন ও প্রতিকূলতার মধ্যেও থিষলনীকির এই বিশ্বাসীরা ঈশ্বরের প্রতি নির্ভরশীল ছিলেন বলে তাদের প্রতি পৌলের অন্তর আর্দ্র হয়ে উঠেছিল। তিনি সশরীরে গিয়ে তাদের সাথে দেখা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেটা সম্ভব ছিল না বলে তিনি তাদেরকে চিঠি লিখলেন। AABen 213.1
থিষলনীকী মণ্ডলীর কাছে লেখা এই চিঠিতে প্রেরিত পৌল তাদের বিশ্বাসের বৃদ্ধির আনন্দময় সংবাদ জানতে পেরে ঈশ্বরের গৌরব করেছেন। “হে ভ্রাতৃগণ,” তিনি বলছেন, “তোমাদের বিষয়ে আমরা সমস্ত সঙ্কটের ও ক্লেশের মধ্যে তোমাদের বিশ্বাস দ্বারা আশ্বাস পাইলাম; কেননা যদি তোমরা প্রভুতে স্থির থাক, তবে এখন আমরা বাঁচি। বাস্তবিক তোমাদের কারণ আমরা আপন ঈশ্বরের সাক্ষাতে যে সকল আনন্দে আনন্দ করি, তাহার প্রতিদান বলিয়া তোমাদের জন্য ঈশ্বরকে কি প্রকার ধন্যবাদ দিতে পারি? আমরা যেন তোমাদের মুখ দেখিতে পাই, এবং তোমাদের বিশ্বাসের ত্রুটি সকল পূর্ণ করিতে পারি, এই জন্য রাত দিন অতিশয় প্রার্থনা করিতেছি।” AABen 213.2
______________________________________«
এই অধ্যায়টি থিষলনীকীয়দের নিকট প্রেরিত পৌলের পত্রের ভিত্তিতে রচিত
______________________________________«
“আমরা প্রার্থনাকালে তোমাদের নাম উল্লেখ করিয়া তোমাদের সকলের নিমিত্ত সতত ঈশ্বরের ধন্যবাদ করিয়া থাকি; আমরা তোমাদের বিশ্বাসের কার্য, প্রেমের পরিশ্রম ও আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট বিষয়ক প্রত্যাশার ধৈর্য আমাদের ঈশ্বর ও পিতার সাক্ষাতে অবিরত স্মরণ করিয়া থাকি।” AABen 214.1
থিষলনীকীর অনেক বিশ্বাসী “প্রতিমাগণ হইতে ঈশ্বরের দিকে” ফিরে এসেছেন। তারা “বহু ক্লেশের মধ্যে সেই বাক্য গ্রহণ” করেছেন এবং তাদের অন্তর “পবিত্র আত্মার আনন্দে” পূর্ণ হয়েছিল। প্রেরিত পৌল ঘোষণা করেছেন যে, প্রভুকে অনুকরণের ক্ষেত্রে তারা “মাকিদনিয়া ও আখায়াস্থ সমস্ত বিশ্বাসী লোকের আদর্শ” হয়েছেন। এই কথা মোটেও অত্যুক্তি ছিল না, “কেননা তোমাদের হইতে প্রভুর বাক্য ধ্বনিত হইয়াছে, কেবল মাকিদনিয়াতে ও আখায়াতে নয়, কিন্তু ঈশ্বরের প্রতি তোমাদের যে বিশ্বাস, তাহার বার্তা সর্বত্র ব্যাপ্ত হইয়াছে।” AABen 214.2
থিষলনীকীয় বিশ্বাসীরা সত্যিকার মিশনারী ছিলেন। তাদের অন্তর ত্রাণকর্তার প্রতি পরম ভক্তিতে পূর্ণ ছিল, কারণ তিনি তাদেরকে “আগামী ক্রোধ হইতে” রক্ষা করেছেন। খ্রীষ্টের অনুগ্রহের মধ্য দিয়ে তাদের জীবনে এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল। তাদের কাছে প্রভুর বাক্য যখন প্রচারিত হয়েছিল তখন তার মধ্য দিয়ে এই পরিবর্তন সাধনকারী শক্তি প্রবাহিত হয়েছিল। সত্যের বাক্য তাদের হৃদয় জয় করে নিয়েছিল এবং বিশ্বাসীদের মধ্যে নতুন আত্মা যোগদান করেছিল। AABen 214.3
প্রথম পত্রটিতে পৌল থিষলনীকীয়দের মধ্যে যেভাবে পরিচর্যা কাজ করেছেন সেই বিষয়ে কথা বলেছেন। তিনি ঘোষণা করেছেন যে, তিনি কোন প্রবঞ্চনা বা ছল চাতুরি দিয়ে বিশ্বাসীদের মন ভোলানোর চেষ্টা করেননি। “কিন্তু ঈশ্বর যেমন আমাদিগকে পরীক্ষাসিদ্ধ করিয়া আমাদের উপরে সুসমাচারের ভার রাখিয়াছেন, তেমনি কথা কহিতেছি; মনুষ্যকে সন্তুষ্ট করিব বলিয়া নয়, কিন্তু ঈশ্বর, যিনি আমাদের অন্তঃকরণ পরীক্ষা করেন, তাঁহাকে সন্তুষ্ট করিব বলিয়াই কহিতেছি। কারণ, তোমরা জান, আমরা কখনও চাটুবাদে কিম্বা লোভের জন্য ছলে লিপ্ত হই নাই, ঈশ্বর ইহার সাক্ষী; আর মনুষ্যদের হইতে সম্মান পাইতে চেষ্টা করি নাই, তোমাদের হইতেও নয়, অন্যদের হইতেও নয়, যদিও খ্রীষ্টের প্রেরিত বলিয়া আমরা ভারস্বরূপ হইলেও হইতে পারিতাম; কিন্তু যেমন স্তন্যদাত্রী নিজ বৎসদের লালন পালন করে, তেমনি তোমাদের মধ্যে কোমল ভাব দেখাইয়াছিলাম; সেইরূপে আমরা তোমাদিগকে স্নেহ করাতে কেবল ঈশ্বরের সুসমাচার নয়, আপন আপন প্রাণও তোমাদিগকে দিতে স্থির ইচ্ছুক ছিলাম, যেহেতু তোমরা আমাদের প্রিয়পাত্র হইয়াছিলে।” AABen 214.4
“আর বিশ্বাসী যে তোমরা,” প্রেরিত পৌল আরও বলেছেন, “তোমাদের কাছে আমরা কেমন সাধু, ধার্মিক ও নির্দোষাচারী ছিলাম, তাহার সাক্ষী তোমরা আছ, ঈশ্বরও আছেন। তোমরা ত জান, পিতা যেমন আপন সন্তানদিগকে, তেমনি আমরা তোমাদের প্রত্যেক জনকে আশ্বাস দিতাম, সান্ত্বনা করিতাম, ও দৃঢ়রূপে আদেশ দিতাম, যেন তোমরা ঈশ্বরের যোগ্য রূপে চল, যিনি আপন রাজ্যে ও প্রতাপে তোমাদিগকে আহ্বান করিতেছেন। AABen 215.1
“আর এই জন্য আমরাও অবিরত ঈশ্বরের ধন্যবাদ করিতেছি যে, আমাদের কাছে ঈশ্বরের বার্তারূপ বাক্য প্রাপ্ত হইয়া তোমরা মনুষ্যদের বাক্য নয়, কিন্তু ঈশ্বরের বাক্য বলিয়া তাহা গ্রহণ করিয়াছিলে; তাহা ঈশ্বরের বাক্যই বটে, এবং বিশ্বাসী যে তোমরা, তোমাদের মধ্যে নিজ কার্য সাধনও করিতেছে।” “কেননা আমাদের প্রত্যাশা, বা আনন্দ, বা শ্লাঘার মুকুট কি? আমাদের প্রভুযীশুর সাক্ষাতে তাঁহার আগমনকালে তোমরাই কি নও? বাস্তবিক তোমরাই আমাদের গৌরব ও আনন্দভূমি।” AABen 215.2
থিষলনীকীয়দের কাছে লেখা প্রথম পত্রে পৌল তাদেরকে মৃতদের ব্যাপারে মৌলিক সত্যটি গুরুত্ব সহকারে ব্যক্ত করেছেন। যারা মৃত্যুবরণ করেন তাদের বিষয়ে তিনি বলেছেন, “কিন্তু, হে ভ্রাতৃগণ, আমরা চাহি না যে, যাহারা নিদ্রাগত হয়, তাহাদের বিষয়ে তোমরা অজ্ঞাত থাক; যেন যাহাদের প্রত্যাশা নাই, সেই অন্য সকল লোকের মত তোমরা দুঃখার্ত না হও। কেননা আমরা যখন বিশ্বাস করি যে, যীশু মরিয়াছেন, এবং উঠিয়াছেন, তখন জানি, ঈশ্বর যীশু দ্বারা নিদ্রাগত লোকদিগকেও সেইরূপে তাঁহার সহিত আনয়ন করিবেন। . . . কারণ প্রভু স্বয়ং আনন্দধ্বনি সহ, প্রধান দূতের রব সহ, এবং ঈশ্বরের তূরীবাদ্য সহ স্বর্গ হইতে নামিয়া আসিবেন, আর যাহারা খ্রীষ্টে মরিয়াছে, তাহারা প্রথমে উঠিবে। পরে আমরা যাহারা জীবিত আছি, যাহারা অবশিষ্ট থাকিব, আমরা আকাশে প্রভুর সহিত সাক্ষাৎ করিবার নিমিত্ত একসঙ্গে তাহাদের সহিত মেঘযোগে নীত হইব; আর এইরূপে সতত প্রভুর সঙ্গে থাকিব।” AABen 215.3
থিষলনীকীয়রা খুব ভক্তির সাথে এই কথা গ্রহণ করেছিল যে, খ্রীষ্ট যখন আসবেন তখন যে সকল বিশ্বাসী জীবিত থাকবেন তাদের সকলকে তিনি সাথে করে নিয়ে যাবেন। তারা খুব সাবধানতার সাথে তাদের পরিবার পরিজনের জীবনের সুরক্ষা নিশ্চিত করার চেষ্টা করতেন যেন তারা কেউ মারা না যায় এবং প্রভুর আগমনের সময় যে আশীর্বাদ লাভের জন্য তারা প্রত্যাশা করছেন তা থেকে তারা কেউ যেন বঞ্চিত না হয়। কিন্তু যখন থিষলনীকীয়দের প্রিয়জনেরা একে একে চলে যেতে শুরু করল এবং সে সময় শেষবারের মত তারা প্রিয়জনদের প্রাণহীন মুখের দিকে তাকাত, তখন তারা ভবিষ্যৎ অনন্ত জীবনে পুনরায় তাদের দেখা পাবার আশা ত্যাগ করত। AABen 216.1
পৌলের লেখা চিঠিতে খুলে পড়ার পর তারা মহা আনন্দে উদ্ভাসিত হল, কারণ মণ্ডলী এখন মৃতদের সম্পর্কে প্রকৃত সত্যটি জানতে পেরেছে। পৌল তাদেরকে দেখিয়েছেন যে, খ্রীষ্টেতে যারা জীবন ধারণ করে তারা জাগতিকভাবে মৃত্যুবরণ করলেও প্রভুর সাথে তাদের সাক্ষাৎ হবেই। স্বর্গদূতদের তূরীধ্বনি এবং ঈশ্বরের মেঘরব নিদ্রাগত ব্যক্তিদের কান অবধি অবশ্যই পৌঁছাবে এবং জীবিতরা অনন্ত জীবনে প্রবেশ করার আগে মৃতরা জীবন ফিরে পাবে। “পরে আমরা যাহারা জীবিত আছি, যাহারা অবশিষ্ট থাকিব, আমরা আকাশে প্রভুর সহিত সাক্ষাৎ করিবার নিমিত্ত একসঙ্গে তাহাদের সহিত মেঘযোগে নীত হইব; আর এইরূপে সতত প্রভুর সঙ্গে থাকিব। অতএব তোমরা এই সকল কথা বলিয়া এক জন অন্য জনকে সান্ত্বনা দেও।” AABen 216.2
নব্য থিষলনীকীয় মণ্ডলীর কাছে এই নিশ্চয়তা যে আশা ও আনন্দ নিয়ে এসেছিল তা আমরা স্বাগত জানাতে পারি না। তারা বিশ্বাস করেছিল যে, এই এই চিঠিটি তাদের সুসমাচারীয় পিতা তাদেরকে লিখেছিলেন এবং তারা অন্তর দিকে তাকে ভালবাসত। তিনি তাদেরকে আগেও এই বিষয়গুলো জানিয়েছেন; কিন্তু সে সময় তারা নতুন ও অচেনা মতাদর্শগুলোকে অনুধাবন করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল এবং এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, কোন কোন ক্ষেত্রে তাদের মনের উপরে কিছুটা জোরও দিতে হয়েছে। কিন্তু তারা সত্যের জন্য ক্ষুধিত ছিল এবং পৌলের এই চিঠি তাদেরকে নতুন আশা যুগিয়েছিল এবং তাঁকে আরও বেশি করে ভালবেসে আরও গভীরভাবে বিশ্বাস করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল, যিনি তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে জীবন এনেছেন এবং মানুষকে অনন্ত জীবনের পথ দেখিয়েছেন। AABen 216.3
এখন তারা আনন্দ করছে কারণ তারা জেনেছে যে, তাদের বিশ্বাসী বন্ধুরা কবর থেকে জীবিত হয়ে উঠে ঈশ্বরের রাজ্যে অনন্ত জীবন যাপনের জন্য প্রবেশ করবে। যে অন্ধকার মৃতদের স্থানে ছিল তা কেটে যাবে। খ্রীষ্টিয়ান বিশ্বাস এক নতুন মাত্রা পেল এবং তারা খ্রীষ্টের জীবন, মৃত্যু ও পুনরুত্থানের এক নতুন মহিমা দেখতে পেল। AABen 217.1
“ঈশ্বর যীশু দ্বারা নিদ্রাগত লোকদিগকেও সেইরূপে তাঁহার সহিত আনয়ন করিবেন,” পৌল লিখেছেন। অনেকেই এই অংশটিকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মনে করেন যে, যারা নিদ্রাগত আছেন তাদেরকে যীশু স্বর্গ থেকে নিয়ে আসবেন; কিন্তু পৌল বুঝিয়েছেন যে, খ্রীষ্ট যেভাবে মৃত্যু থেকে জীবিত হয়েছেন সেভাবে ঈশ্বরও ঘুমন্ত সাধু ব্যক্তিদেরকে তাদের কবর থেকে উত্থিত করবেন এবং তাদেরকে সাথে করে স্বর্গে প্রবেশ করবেন। কি দারুন এক সান্ত্বনা! কি গৌরবের প্রত্যাশা! তবে তা শুধুমাত্র থিষলনীকীয় মণ্ডলীর জন্য নয়, করং জগতের সর্বত্র সমস্ত খ্রীষ্টিয়ানদের জন্য। AABen 217.2
থিষলনীকিতে পরিচর্যা কাজ করার সময় পৌল কালের চিহ্ন সম্পর্কে প্রচুর ব্যাখ্যা দিয়েছেন এবং তাদেরকে দেখিয়েছেন যে, মনুষ্য সন্তানের মেঘযোগে ফিরে আসার সময় অনেক চিহ্ন দেখা যাবে। এ কারণে তিনি এই বিষয়ে আর বিস্তারিত লেখার কথা ভাবেননি। তবে তিনি তাঁর পূর্ববর্তী শিক্ষার দিকে ইঙ্গিত দিয়েছেন। “হে ভ্রাতৃগণ,” পৌল বলেছেন, “বিশেষ বিশেষ কালের ও সময়ের বিষয়ে তোমাদিগকে কিছু লেখা অনাবশ্যক। কারণ তোমরা নিজেরা বিলক্ষণ জান, রাত্রিকালে যেমন চোর আইসে, তেমনি প্রভুর দিন আসিতেছে। লোকে যখন বলে, শান্তি ও অভয়, তখনই তাহাদের কাছে যেমন গর্ভবতীর প্রসববেদনা উপস্থিত হইয়া থাকে, তেমনি আকস্মিক বিনাশ উপস্থিত হয়; আর তাহারা কোন ক্রমে এড়াইতে পারিবে না।” AABen 217.3
আজকের পৃথিবীতে এমন অনেকেই আছে যারা খ্রীষ্টের আগমনের আগে যে চিহ্নগুলো দেখতে পাওয়ার কথা সেগুলো সামনে দেখেও চোখ বুজে থাকে। তারা সব কিছু বুঝেও চুপ থাকে এবং অন্যদিতে শেষকালের চিহ্ন সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণীগুলো খুব দ্রুত সম্পন্ন হচ্ছে এবং জগত এমন এক সময়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে যখন মনুষ্য সন্তান মেঘের মধ্যে প্রকাশ পাবেন। পৌল শিক্ষা দিয়েছেন যে, খ্রীষ্টের দ্বিতীয় আগমনের চিহ্নগুলোকে দেখেও এড়িয়ে যাওয়া রীতিমত পাপ। যারা এভাবে চিহ্নগুলোকে অবহেলা করবে তাদেরকে তিনি রাত্রির ও অন্ধকারের সন্তান বলে আখ্যা দিয়েছেন। যারা জাগ্রত ও অপেক্ষমান থাকে তাদেরকে তিনি এই বলে উৎসাহ দিয়েছেন: “কিন্তু, ভ্রাতৃগণ, তোমরা অন্ধকারে নও যে, সেই দিন চোরের ন্যায় তোমাদের উপরে আসিয়া পড়িবে। তোমরা ত সকলে দীপ্তির সন্তান ও দিবসের সন্তান; আমরা রাত্রিরও নই, অন্ধকারেরও নই। অতএব আইস, আমরা অন্য সকলের ন্যায় নিদ্রা না যাই, বরং জাগিয়া থাকি ও মিতাচারী হই।” AABen 217.4
আমাদের সময়ের মণ্ডলীগুলোতে প্রেরিত পৌলের এই শিক্ষাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যারা সেই মহা কালের দিকে এগিয়ে চলেছে তাদের জন্য পৌল খুব গুরুত্ব দিয়ে এই কথা বলেছেন: “কিন্তু আমরা দিবসের বলিয়া আইস, মিতাচারী হই, বিশ্বাস ও প্রেমরূপ বুকপাটা পরি, এবং পরিত্রাণের আশারূপ শিরস্ত্রাণ মস্তকে দিই; কেননা ঈশ্বর আমাদিগকে ক্রোধের জন্য নিযুক্ত করেন নাই, কিন্তু আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা পরিত্রাণ লাভের জন্য; তিনি আমাদের নিমিত্ত মরিলেন, যেন আমরা জাগিয়া থাকি বা নিদ্রা যাই, তাঁহার সঙ্গেই জীবিত থাকি।” AABen 218.1
জাগ্রত খ্রীষ্টিয়ানরাই কার্যকারী খ্রীষ্টিয়ান, যারা তাদের সবটুকু ক্ষমতা ও সামর্থ দিয়ে সুসমাচারের বিস্তারের জন্য কাজ করেন। একজন খ্রীষ্টিয়ান যখন তার ত্রাণকর্তাকে আরও বেশি করে ভালবাসতে শুরু করেন তখন তিনি অপরাপর খ্রীষ্টিয়ানদেরও আরও বেশি ভালবাসতে শুরু করেন। তিনি অনেক পরীক্ষা ও প্রলোভন সহ্য করবেন, যেমনটা তার প্রভু করেছেন; কিন্তু তিনি এই কষ্ট ও যন্ত্রণাকে তার অন্তরের শান্তিকে ভগ্ন করতে দেবেন না। তিনি জানেন এই পরীক্ষা অতিক্রম করলে তিনি আরও পরিশুদ্ধ ও খাঁটি হবেন এবং তিনি খ্রীষ্টের আরও ঘনিষ্ঠ সহভাগিতা লাভ করবে। যারা খ্রীষ্টের কষ্টভোগের সহভাগী হন তারা তাঁর সান্ত্বনার এবং তাঁর গৌরবেরও সহভাগী হন। AABen 218.2
“কিন্তু, হে ভ্রাতৃগণ, আমরা তোমাদিগকে নিবেদন করিতেছি,” পৌল তাঁর চিঠিতে বলেছেন, “যাঁহারা তোমাদের মধ্যে পরিশ্রম করেন ও প্রভুতে তোমাদের উপরে নিযুক্ত আছেন, এবং তোমাদিগকে চেতনা দেন, তাঁহাদিগকে চিনিয়া লও, আর তাঁহাদের কর্ম প্রযুক্ত তাঁহাদিগকে প্রেমে অতিশয় সমাদর কর। আপনাদের মধ্যে ঐক্য রাখ।” AABen 218.3
থিষলনীকীয় বিশ্বাসীদের মধ্যে মৌলবাদী ধ্যান ধারণা ও মতাদর্শ নিয়ে কেউ আসলে তারা খুবই বিরক্ত হতেন। কেউ কেউ ছিল যারা “অনিয়মিতরূপে চলে।” মণ্ডলীকে পুরোপুরি সংগঠিত করা হয়েছিল এবং বিভিন্ন কর্মকর্তাদেরকে পরিচর্যাকারী ও প্রাচীন হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাদের মধ্যেও এমন অনেকে ছিলেন যারা নিজেদের খেয়াল খুশিমত চলতেন, যারা মণ্ডলীর কর্তৃত্বকারীদের নির্দেশনা শুনতে চাইত না। তারা শুধু যে মানুষের কাছে গিয়ে ভিন্নমত প্রচার করত তা নয়, তারা প্রকাশ্যেও মানুষকে তাদের নিজস্ব অভিমত শোনানোর চেষ্টা করত। এদিকে লক্ষ্য করে পৌল থিষলনীকীয়দেরকে বিশেষভাবে তাদের মর্যাদা ও স্বতন্ত্রতার দিকে লক্ষ্য রাখতে বলেছেন যাদেরকে মণ্ডলীতে কর্তৃত্বপূর্ণ অবস্থানে রাখা হয়েছে। AABen 218.4
থিষলনীকীর বিশ্বাসীরা যেন সব সময় ঈশ্বরের প্রতি ভয় রেখে চলে সে ব্যাপারে চিন্তা রেখে পৌল তাদেরকে দৈনন্দিন জীবনের জন্য কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। “অতএব, হে ভ্রাতৃগণ,” তিনি লিখেছেন, “অবশেষে আমরা প্রভু যীশুতে তোমাদিগকে বিনয় করিতেছি, চেতনা দিয়া বলিতেছি, কিরূপে চলিয়া ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করিতে হয়, এই বিষয়ে আমাদের কাছে যে শিক্ষা গ্রহণ করিয়াছ, আর যেরূপ চলিতেছ, তদনুসারে অধিক উপচিয়া পড়। AABen 219.1
কেননা প্রভু যীশুর দ্বারা আমরা তোমাদিগকে কি কি আদেশ দিয়াছি, তাহা তোমরা জান। ফলতঃ ঈশ্বরের ইচ্ছা এই, তোমাদের পবিত্রতা— যেন তোমরা ব্যভিচার হইতে দূরে থাক।” “কারণ ঈশ্বর আমাদিগকে অশুচিতার নিমিত্ত নয়, কিন্তু পবিত্রতায় আহ্বান করিয়াছেন।” AABen 219.2
প্রেরিত পৌল অনুভব করেছিলেন যে, যারা তাঁর মধ্য দিয়ে খ্রীষ্ট ধর্মে দীক্ষিত হয়েছে তাদের আত্মিক যুদ্ধে বলীয়ান করার দায়ভার তাঁরই। তিনি চেয়েছিলেন যেন তরা একমাত্র সত্য ঈশ্বর এবং তিনি যাকে প্রেরণ করেছেন সেই প্রভু যীশু খ্রীষ্ট সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভ করে। পৌল তাঁর পরিচর্যার জীবনে কখনো কখনো নারী পুরুষের ছোট ছোট কিছু দলের দেখা পেয়েছেন যারা যীশুকে ভালবাসে। তিনি তাদেরকে নিয়ে প্রার্থনায় নত হয়েছেন এবং ঈশ্বরের কাছে যাচ্ঞা করেছেন যেন তিনি তাদের সাথে একটি জীবন্ত সম্পর্ক রক্ষা করেন। কখনো কখনো তাদেরকে সাথে নিয়ে অন্যদের কাছে সুসমাচারের আলো ছড়িয়ে দেওয়াটা তাদের জন্য সবচেয়ে ভাল পরিচর্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। আবার কখনো কখনো যাদের জন্য তিনি পরিচর্যা কাজ করেছেন তাদের কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়ার সময় তিনি ঈশ্বরের কাছে বিনতি করেছেন যেন তিনি তাদেরকে সমস্ত মন্দতা থেকে দূরে রাখেন এবং তাদেরকে আন্তরিক ও অধ্যবসায়ী পরিচর্যাকারী করে তোলেন। AABen 219.3
সত্যিকার মন পরিবর্তনের অন্যতম শক্তিশালী নিদর্শন হচ্ছে ঈশ্বর ও মানুষের প্রতি প্রেম। যারা যীশুকে তাদের ত্রাণকর্তা হিসেবে গহণ করেন তাদের অন্য সকলের প্রতি এক গভীর প্রেম অনুভ‚ত হয়। এটাই থিষলনীকীর বিশ্বাসীদের জীবনেও ঘটেছিল। “আর ভ্রাতৃপ্রেম সম্বন্ধে,” প্রেরিত পৌল লিখেছেন, “তোমাদিগকে কিছু লেখা অনাবশ্যক, কারণ তোমরা নিজেরা পরস্পর প্রেম করিবার জন্য ঈশ্বরের কাছে শিক্ষা পাইয়াছ; আর বাস্তবিক সমস্ত মাকিদনিয়ানিবাসী সমুদয় ভ্রাতৃগণের প্রতি তাহা করিতেছ। কিন্তু তোমাদিগকে বিনয় করিয়া বলিতেছি, ভ্রাতৃগণ, আরও অধিক উপচিয়া পড়, আর শান্ত ভাবে থাকিতে ও আপন আপন কার্য করিতে এবং স¦হস্তে পরিশ্রম করিতে সযত্ন হও— যেমন আমরা তোমাদিগকে আদেশ দিয়াছি— যেন বহিঃস্থ লোকদের প্রতি তোমরা শিষ্টাচারী হও, এবং তোমাদের কিছুরই অভাব না থাকে।” AABen 220.1
“প্রভু তোমাদিগকে পরস্পরের ও সকলের প্রতি প্রেমে বর্ধিষ্ণু করুন ও উপচিয়া পড়িতে দিউন; এইরূপে আপনার সমস্ত পবিত্রগণ সহ আমাদের প্রভু যীশুর আগমন কালে যেন তিনি আমাদের ঈশ্বর ও পিতার সাক্ষাতে তোমাদের হৃদয় পবিত্রতায় অনিন্দনীয়রূপে সুস্থির করেন।” AABen 220.2
“আর, হে ভ্রাতৃগণ, আমরা তোমাদিগকে বিনয় করিতেছি, যাহারা অনিয়মিতরূপে চলে, তাহাদিগকে চেতনা দেও, ক্ষীণসাহসদিগকে সান্ত্বনা কর, দুর্বলদের সাহায্য কর, সকলের প্রতি দীর্ঘসহিষ্ণু হও। দেখিও, যেন অপকারের পরিশোধে কেহ কাহারও অপকার না কর, কিন্তু পরস্পরের এবং সকলের প্রতি সর্বদা সদাচরণের অনুধাবন কর। সতত আনন্দ কর; অবিরত প্রার্থনা কর; সর্ববিষয়ে ধন্যবাদ কর; কারণ খ্রীষ্ট যীশুতে ইহাই তোমাদের উদ্দেশে ঈশ্বরের ইচ্ছা।” AABen 220.3
প্রেরিত পৌল থিষলনীকীয়দের সাবধান করে দিয়েছেন যেন তারা ভাববাণীর দানকে কোনভাবে অবজ্ঞা না করে। এ বিষয়ে তিনি বলেছেন, “আত্মাকে নির্বাপিত করিও না। ভাববাণী তুচ্ছ করিও না। সর্ববিষয়ের পরীক্ষা কর; যাহা ভাল, তাহা ধরিয়া রাখ।” এর সাথে তিনি সত্য থেকে মিথ্যাকে পৃথক করার ব্যাপারে বিশেষভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি তাদেরকে বলেছেন, “সর্বপ্রকার মন্দ বিষয় হইতে দূরে থাক;” এবং এই প্রার্থনা করে তাঁর পত্রটি শেষ করেছেন যেন তিনি তাদেরকে সম্পূর্ণভাবে অর্থাৎ “আত্মা, প্রাণ ও দেহে” পবিত্র করেন যেন তারা “আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের আগমন কালে অনিন্দনীয়রূপে রক্ষিত” হয়। এর সাথে তিনি যোগ করেছেন, “যিনি তোমাদিগকে আহ্বান করেন, তিনি বিশ্বস্ত, তিনিই তাহা করিবেন।” AABen 220.4
পৌল থিষলনীকীয়দের কাছে লেখা তাঁর প্রথম পত্রে খ্রীষ্টের দ্বিতীয় আগমন সম্পর্কে যে শিক্ষা দিয়েছেন তা তাঁর পূর্বেকার সমস্ত প্রদত্ত শিক্ষার সাথে দারুনভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তথাপি থিষলনীকীর কিছু কিছু বিশ্বাসী ভাই এই কথা ভুল ব্যাখ্যা করেছিল। তারা ভেবেছিল পৌল বোধহয় নিজেই ত্রাণকর্তার পুনরাগমন অবলোকন করার জন্য বেঁচে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করছেন। এই বিশ্বাসের কারণে তাদের নিজেদের উৎসাহ ও উদ্দীপনা আরও অনেক বেড়ে গিয়েছিল। যারা এর আগে দায়িত্ব ও কর্তব্য অবহেলার চোখে দেখত এখন তারা তাদের ভুল মতাদর্শকে আরও বেশি করে জোর দিতে লাগল। AABen 221.1
পৌল তাঁর দ্বিতীয় পত্রে তাঁর এই শিক্ষার ভুল ব্যাখ্যাকে সংশোধন করে তাদের সামনে সত্য প্রকাশ করতে চাইলেন। তিনি আবারও তাদের শুদ্ধতার প্রতি তাঁর দৃঢ় বিশ্বাসের কথা উল্লেখ করলেন এবং খ্রীষ্টের প্রতি তাদের বিশ্বাস যে খাঁটি এ ব্যাপারে তাঁর প্রত্যয় তিনি জানালেন। এছাড়া তিনি বললেন যে, একে অপরের প্রতি তাদের ভালবাসা ও প্রভুর জন্য তাদের ভক্তির অতুলনীয়। তিনি তাদেরকে বললেন, ধৈর্যধারণকারী ও দীর্ঘসহিষ্ণু বিশ্বাসী হিসেবে তিনি তাদেরকে অন্য মণ্ডলীর কাছে আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন, কারণ তারা শত পীড়ন ও প্রলোভনের মুখেও নিজেদেরকে অটল রেখেছেন এবং তিনি তাদের অন্তরকে প্রভুর দ্বিতীয় আগমনের প্রতি নিবদ্ধ রেখেছেন যখন ঈশ্বরের লোকেরা তাদের সমস্ত দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ থেকে মুক্ত হবে। AABen 221.2
“তোমরা যে সকল তাড়না ও ক্লেশ সহ্য করিতেছ,” তিনি লিখেছেন, “সেই সকলের মধ্যে তোমাদের ধৈর্য ও বিশ্বাস থাকায় আমরা নিজেরা ঈশ্বরের মণ্ডলী সকলের মধ্যে তোমাদের শ্লাঘা করিতেছি। . . . এবং ক্লেশ পাইতেছ যে তোমরা, তোমাদিগকে আমাদের সহিত বিশ্রাম দিবেন, [ইহা তখনই হইবে] যখন প্রভু যীশু স্বর্গ হইতে তাঁহার পরাক্রমশালী দূতগণের সহিত জ্বলন্ত অগ্নিবেষ্টনে প্রকাশিত হইবেন, এবং যাহারা ঈশ্বরকে জানে না ও যাহারা আমাদের প্রভু যীশুর সুসমাচারের আজ্ঞাবহ হয় না, তাহাদিগকে সমুচিত দণ্ড দিবেন। তাহারা প্রভুর মুখ হইতে ও তাঁহার শক্তির প্রতাপ হইতে অনন্তকালস্থায়ী বিনাশরূপ দণ্ড ভোগ করিবে, ইহা সেই দিন ঘটিবে . . . এই জন্য আমরা তোমাদের নিমিত্ত সর্বদা এই প্রার্থনাও করিতেছি, যেন আমাদের ঈশ্বর তোমাদিগকে তোমাদের আহ্বানের যোগ্য বলিয়া গণ্য করেন, আর মঙ্গলভাবের সমস্ত বাসনা ও বিশ্বাসের কর্ম সপরাক্রমে সম্পূর্ণ করিয়া দেন; যেন আমাদের ঈশ্বরের ও প্রভু যীশু খ্রীষ্টের অনুগ্রহ অনুসারে আমাদের প্রভু যীশুর নাম তোমাদের মধ্যে গৌরবান্বিত হয়, এবং তাঁহাতে তোমরাও গৌরবান্বিত কিন্তু খ্রীষ্টের আগমনের আগে ভাববাণী অনুসারে এই জগতে খ্রীষ্ট ধর্মকে প্রসারিত করতে হবে। প্রেরিত পৌল বললেন: “তোমরা কোন আত্মা দ্বারা, বা কোন বাক্য দ্বারা, অথবা, আমরা লিখিয়াছি মনে করিয়া কোন পত্র দ্বারা, মনের স্থিরতা হইতে বিচলিত বা উদ্বিগ্ন হইও না, ভাবিও না যে প্রভুর দিন উপস্থিত হইল; কেহ কোন মতে যেন তোমাদিগকে না ভুলায়; কেননা প্রথমে সেই ধর্ম—ভ্রষ্টতা উপস্থিত হইবে, এবং সেই পাপ—পুরুষ, সেই বিনাশসন্তান, প্রকাশ পাইবে, যে প্রতিরোধী হইবে ও ‘ঈশ্বর’ নামে আখ্যাত বা পূজ্য সকলের হইতে আপনাকে বড় করিবে, এমন কি, ঈশ্বরের মন্দিরে বসিয়া আপনাকে ঈশ্বর বলিয়া দেখাইবে।” AABen 221.3
পৌলের কথায় ভুল বোঝার মত কিছুই নেই। এ কথা ভাবার কিছু নেই যে, তিনি বিশেষ প্রত্যাদেশের মধ্য দিয়ে থিষলনীকীয়দেরকে খ্রীষ্টের আগমন সম্পর্কে সাবধান করে দিয়েছেন। এ ধরনের একটি অবস্থান বিশ্বাসের ক্ষেত্রে দ্বিধা তৈরি করতে পারে; কারণ হতাশা অনেক সময় অবিশ্বাসে রূপ নেয়। এ কারণে প্রেরিত পৌল তাঁর ভাইদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যেন তারা তাঁর নামে আসা এ ধরনের কোন বার্তা গ্রহণ না করে এবং এখানে তিনি স্পষ্টভাবে ভাববাদী দানিয়েলের ভবিষ্যদ্বাণীর সূত্র ধরে পোপীয় কর্তৃত্বের উত্থানের বিষয়ে বলেছেন, যা ঈশ্বরের লোকদের বিরোধিতা করবে। এই শক্তি যতক্ষণ পর্যন্ত না মারাত্মকভাবে ঈশ্বরবিরুদ্ধ কাজ করতে শুরু করে ততক্ষণ পর্যন্ত খ্রীষ্টের দ্বিতীয় আগমনের জন্য মণ্ডলীর অপেক্ষা করা বৃথা। “তোমাদের কি মনে পড়ে না,” পৌল জিজ্ঞেস করছেন, “আমি পূর্বে যখন তোমাদের কাছে ছিলাম, তখন তোমাদিগকে এই সকল বলিয়াছিলাম?” AABen 222.1
প্রকৃত মণ্ডলীকে যে সকল পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তা অত্যন্ত ভয়াবহ। এমনকি যখন প্রেরিত পৌল লিখছিলেন সে সময় “অধর্মের নিগূঢ়তত্ত্ব” কাজ শুরু করে দিয়েছে। ভবিষ্যতে আরও যা ঘটবে সেগুলো “শয়তানের কার্যসাধন অনুসারে মিথ্যার সমস্ত পরাক্রম ও নানা চিহ্ন ও অদ্ভুত লক্ষণ সহকারে হইবে, এবং যাহারা বিনাশ পাইতেছে, তাহাদের সম্বন্ধে অধার্মিকতার সমস্ত প্রতারণা সহকারে হইবে।” AABen 223.1
যারা “সত্যের প্রেম” গ্রহণ করতে অসীকৃতি জানাবে তাদের ব্যাপারে প্রেরিত পৌল বিশেষভাবে অনুযোগ করেছেন। “আর সেই জন্য,” যারা সত্যের বাক্য অগ্রাহ্য করে তাদের প্রত্যেকের জন্য তিনি কঠিনভাবে বলছেন, “ঈশ্বর তাহাদের কাছে ভ্রান্তির কার্যসাধন পাঠান, যাহাতে তাহারা সেই মিথ্যায় বিশ্বাস করিবে; যেন সেই সকলের বিচার হয়, যাহারা সত্যে বিশ্বাস করিত না, কিন্তু অধার্মিকতায় প্রীত হইত।” মানুষের প্রতি দয়া করে ঈশ্বর যে সাবধানবাণী প্রেরণ করেছেন তা মানুষ উপেক্ষা করতে পারে না। যারা এই সাবধান বাণী শুনেও মন ফিরায় না তাদের কাছ থেকে ঈশ্বর তাঁর আত্মা নিয়ে নেন যেন তারা তাদের প্রবঞ্চনার মাঝেই পড়ে থাকে। AABen 223.2
এভাবেই পৌল অধর্মের শক্তি দ্বারা সাধিত অপকর্মের রূপরেখা বর্ণনা করেছেন, যা খ্রীষ্টের দ্বিতীয় আগমনের পূর্বে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে অন্ধকার ও পীড়নের যুগ চালিয়ে যাবে। থিষলনীকীয় বিশ্বাসীরা তাৎক্ষণিকভাবে মুক্তি লাভের প্রত্যাশা করছিলেন; আর এখন তাদেরকে বলা হচ্ছে যেন তারা ঈশ্বর ভয়ে ভীত হয়ে তাদের যে দায়িত্ব আছে তা সঠিকভাবে গ্রহণ ও পালন করেন। AABen 223.3
এতদিন ধরে তারা তাৎক্ষণিকভাবে মুক্তির প্রত্যাশা করছিল বলে এখন নিত্যনৈমিত্তিক জীবন ও পার্থিব প্রতিবন্ধকতা তাদের কাছে যেন দ্বিগুণ বিঘ্ন জন্মাতে শুরু করল। এ কারণে তিনি তাদেরকে বিশ্বাসের দৃঢ় হতে বললেন: AABen 223.4
“হে ভ্রাতৃগণ, স্থির থাক, এবং আমাদের বাক্য অথবা পত্র দ্বারা যে সকল শিক্ষা পাইয়াছ, তাহা ধরিয়া রাখ। আর আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট আপনি, ও আমাদের পিতা ঈশ্বর, যিনি আমাদিগকে প্রেম করিয়াছেন, এবং অনুগ্রহ দ্বারা অনন্তকালস্থায়ী সান্ত্বনা ও উত্তম প্রত্যাশা দিয়াছেন, তিনি তোমাদের হৃদয়কে সান্ত্বনা দিউন, এবং সমস্ত উত্তম কার্যে ও বাক্যে সুস্থির করুন।” “প্রভু বিশ্বস্ত; তিনিই তোমাদিগকে সুস্থির করিবেন ও মন্দ হইতে রক্ষা করিবেন। আর তোমাদের সম্বন্ধে প্রভুতে আমাদের এই দৃঢ় প্রত্যয় আছে যে, আমরা যাহা যাহা আদেশ করি, সেই সকল তোমরা পালন করিতেছ ও করিবে। আর প্রভু তোমাদের হৃদয়কে ঈশ্বরের প্রেমের পথে ও খ্রীষ্টের ধৈর্যের পথে চালাউন।” AABen 223.5
ঈশ্বরই তাদেরকে বিশ্বাসী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে দিয়েছেন। সত্যের প্রতি তাদের ঐকান্তিক ভালবাসার জন্য যে আলোতে পথ চলছে সেটি এখন অন্যদের কাছে পৌছে দেওয়া তাদের দায়িত্ব। প্রেরিত পৌল তাদেরকে নির্দেশ দিলেন যেন তারা ভাল কাজে কখনো পিছ—পা না হয় এবং খ্রীষ্টের পক্ষে পরিচর্যা কাজ করার সময় তারা যেন পৌলের অধ্যবসায়ের আদর্শ অনুসরণ করে। যারা অলস জীবন কাটায় ও ভোগ বিলাসে গা ভাসিয়ে দেয় তাদেরকে তিনি অনুযোগ করে বলছেন, “বিনামূল্যে কাহারও কাছে অন্ন ভোজন করিতাম না, বরং তোমাদের কাহারও ভারস্বরূপ যেন না হই, তজ্জন্য পরিশ্রম ও আয়াস সহকারে রাত দিন কার্য করিতাম।” এর সাথে তিনি উল্লেখ করেছেন মণ্ডলী যেন এমন যে কাউকে তাদের সহভাগিতা থেকে বিচ্যুত করে যে ঈশ্বরের পরিচর্যাকারীর দেওয়া নির্দেশনাকে অগ্রাহ্য করে। “অথচ,” তিনি বলছেন, “তাহাকে শত্রুতা জ্ঞান করিও না, কিন্তু ভ্রাতা বলিয়া চেতনা দেও।” AABen 224.1
পৌল তাঁর এই পত্রটি শেষ করেছেন এই প্রার্থনার মধ্য দিয়ে যে, জীবনের শত ঝঞ্ঝা ও পরীক্ষার মধ্যেও বিশ্বাসীদের জন্য ঈশ্বরের শান্তি ও প্রভু যীশু খ্রীষ্টের অনুগ্রহ যেন তাদের সান্ত্বনা ও সহায়স্বরূপ হয়। AABen 224.2