প্রেরিতগণের কার্য-বিবরণ

25/59

২৪শ অধ্যায়—করিন্থ

খ্রীষ্টিয় যুগের প্রথম শতাব্দীতে করিন্থ শুধু গ্রীসে নয়, সমগ্র বিশ্বে একটি অন্যতম নেতৃস্থানীয় নগরী হিসেবে পরিচিত ছিল। গ্রীক, যিহূদী ও রোমীয় থেকে শুরু সারা বিশ্বের সমস্তদেশ থেকে আগত ব্যবসায়ী ও বিলাসপ্রিয় পর্যটকদের আনাগোনায় নগরীটির রাস্তা কোলাহলে পূর্ণ থাকত। দারুন এই বাণিজ্য কেন্দ্রটিকে রোমীয় সাম্রাজ্যের যে কোন স্থান থেকে খুব সহজেই আসা যেত, ফলে ঈশ্বর ও তাঁর সত্যের প্রতিষ্ঠার জন্য এই নগরীটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। AABen 203.1

যিহূদীদের মধ্যে যারা করিন্থে বসবাস করতেন তাদের মধ্যে ছিলেন আক্কিলা ও প্রিষ্কিলা, যারা পরবর্তীতে খ্রীষ্টের পক্ষে ঐকান্তিক কর্মী হয়ে ওঠেন। এই দুই ব্যক্তির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পর পৌল “তাহাদের সঙ্গে অবস্থিতি করিলেন।” AABen 203.2

করিন্থ শহলে পৌল তাঁর পরিচর্যার কাজের শুরুতেই বেশ কিছু গুরুতর প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছিলেন। প্রায় পুরো শহরটিই প্রতিমাপূজায় লিপ্ত ছিল। তাদের প্রিয় দেবী ছিল ভেনাস এবং এই দেবীর পূজা অর্চণার সাথে অনেক অনৈতিক কার্যকলাপ জড়িত ছিল। করিন্থীয়রা তাদের ব্যাপক অনৈতিক জীবনযাত্রার কারণে এমনকি অন্যান্য পরজাতীয়দের কাছেও কুখ্যাত হয়ে উঠেছিল। আপাতদৃষ্টিতে বর্তমানের ভোগবিলাস ব্যতীত আর কিছুই তাদের কাছে মুখ্য বিষয় ছিল না। AABen 203.3

______________________________________«

এই অধ্যায়টি প্রেরিত ১৮:১—১৮ পদের উপর ভিত্তি করে রচিত

______________________________________«

করিন্থে সুসমাচার প্রচার করতে গিয়ে পৌল এথেন্সের তুলনায় ভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করেছিলেন। এথেন্সে তিনি শ্রোতাদের চরিত্র ও স্বভাব বুঝে প্রচার করেছেন। তিনি যুক্তি দিয়ে যুক্তি খণ্ডন করেছেন, বিজ্ঞান দিয়ে বিজ্ঞানকে ব্যাখ্যা করেছেন, দর্শন দিয়ে দর্শনকে আলোকপাত করেছেন। পরবর্তীতে যখন তিনি তাঁর পরিচর্যা কাজ পর্যালোচনা করলেন তখন তিনি দেখতে পেলেন এথেন্সে তাঁর এই পদ্ধতি খুব সামান্যই ফল বয়ে এনেছে তখন তিনি করিন্থে ভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণের চিন্তা করলেন যেন সেখানকার ভাবলেশহীন ও উদাসীন মানুষগুলোর মনোযোগ তিনি কাড়তে পারেন। তিনি দীর্ঘ আলোচনা ও বিতর্ক এড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। করিন্থীয়দের ব্যাপারে তিনি বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে আর কিছুই জানিব না, কেবল যীশু খ্রীষ্টকে, এবং তাঁহাকে ক্রুশে হত বলিয়াই জানিব।” তিনি তাদের কাছে “জ্ঞানের প্ররোচক বাক্য” দিয়ে নয়, “বরং আত্মার ও পরাক্রমের প্রদর্শন” করে প্রচার করেছিলেন। ১ করিন্থীয় ২:২, ৪। AABen 204.1

যীশুকে যখন পৌল গ্রীকদের কাছে খ্রীষ্ট হিসেবে প্রচার করতে গেলেন তখন তিনি তাঁকে প্রকাশ করলেন একজন দরিদ্র যিহূদী হিসেবে, যিনি মন্দতায় পূর্ণ একটি শহরে বড় হয়েছিলেন। তাঁকে তাঁর নিজ নগরের লোকেরা প্রত্যাখ্যান করল এবং অবশেষে তাঁকে একজন অপরাধী সাব্যস্ত করে ক্রুশে টাঙিয়ে হত্যা করল। গ্রীকরা বিশ্বাস করত যে, মানব জাতিকে এই পতিত অবস্থান থেকে উত্তরণ ঘটানোর প্রয়োজন, কিন্তু তারা মনে করত দর্শন এবং বিজ্ঞান অধ্যয়নই একমাত্র প্রকৃতভাবে উত্তরণ ঘটাতে পারে ও মানব জাতিকে প্রকৃত মর্যাদা দিতে পারে। পৌল কি তাদেরকে এ কথা বিশ্বাস করাতে পেরেছিলেন যে, এই তুচ্ছীকৃত যিহূদী লোকটির ক্ষমতার উপরে বিশ্বাস করলে মানব জাতির সত্তার প্রত্যেকটি শক্তিই উন্নত ও মর্যাদা সম্পন্ন হবে? AABen 204.2

বর্তমান সময়ে পৃথিবীতে বসবাসকারী হাজারো মানুষের মনে কালভেরীর ক্রুশ জাগিয়ে তোলে পবিত্র ভক্তি। ক্রুশারোপণের দৃশ্যপটকে ঘিরে বিভিন্ন পবিত্র সংগঠন জড়িয়ে আছে। কিন্তু পৌলের সময়ে ক্রুশকে দেখা হত ঘৃণা ও আতঙ্কের অনুভ‚তি নিয়ে। ক্রুশে হত হয়েছেন এমন একজনকে মানব জাতির ত্রাণকর্তা হিসেবে উপস্থাপন করলে স্বাভাবিকভাবেই মানুষের কাছে তা হাস্যকর বিষয়ে পরিণত হবে এবং মানুষ তার বিরোধিতা করতে শুরু করবে। AABen 204.3

পৌল খুব ভাল করেই জানতেন করিন্থের যিহূদীরা ও গ্রীকরা তাঁর বার্তা কীভাবে গ্রহণ করবে। “আমরা ক্রুশে হত খ্রীষ্টকে প্রচার করি,” তিনি স্বীকার করেছেন, “তিনি যিহূদীদের কাছে বিঘ্ন ও পরজাতিদের কাছে মূর্খতাস্বরূপ।” ১ করিন্থীয় ১:২৩। তাঁর যিহূদী শ্রোতাদের মধ্যে এমন অনেকে ছিল যারা পৌলের প্রচার শুনে রাগান্বিত হত। গ্রীকদের কাছে আবার পৌলের সমস্ত কথাই খুব হাস্যকর বা বোকামি বলে মনে হত। ক্রুশকে মানব জাতির উন্নতি বা পরিত্রাণের বাহন হিসেবে উপস্থাপন করার কারণে তাঁকে নানাভাবে অপদস্থ হতে হত। AABen 205.1

কিন্তু পৌলের কাছে ক্রুশ ছিল অন্যতম প্রধান একটি আগ্রহের বিষয়। নাসরতীয় যীশুর অনুসারীদেরকে তাড়না দেওয়ার সময় তাঁকে স্বয়ং খ্রীষ্ট বাধা দান করার পর থেকে তিনি কখনোই ক্রুশকে মহিমান্বিত করা থেকে বিরত থাকেননি। সে সময় তাঁকে ঈশ্বরের অসীম ভালবাসার প্রত্যাদেশ দান করা হয়েছিল, যা উন্মোচিত হয়েছে খ্রীষ্টের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে; সেই সাথে তাঁর জীবনেও এক অসামান্য পরিবর্তন সাধিত হয়েছে, যার ফলে তিনি তাঁর জীবনের সমস্ত লক্ষ্য ও পরিকল্পনা ঈশ্বরের লক্ষ্য ও পরিকল্পনা অনুসারে সাজিয়েছেন। তখন থেকেই তিনি খ্রীষ্টেতে একজন নতুন মানুষ হয়েছেন। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে তিনি জানেন যে, একজন পাপী যখন মহান পিতাকে তাঁর পুত্রের উৎসর্গের মধ্য দিয়ে সর্বোত্তম ভালবাসা প্রকাশ করতে দেখে এবং নিজেকে ঐশ্বরিক ক্ষমতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়, তখন তার হৃদয়ে পরিবর্তন ঘটে এবং তখন খ্রীষ্টই তার পুরো সত্তা জুড়ে অবস্থান করেন। AABen 205.2

পৌল তাঁর মন পরিবর্তনের সময় সমস্ত মানুষকে সাহায্য করার জন্য আকাক্সক্ষী হয়েছিলেন, যেন তারা নাসরতীয় যীশুকে জীবন্ত ঈশ্বরের পুত্র হিসেবে দেখতে পায়, যিনি পরাক্রমে পরিবর্তনশীল এবং পরিত্রাণে সক্ষম। তখন থেকেই তিনি তাঁর জীবন দিয়ে চিরকালের জন্য এই ক্রুশবিদ্ধ যীশুর ভালবাসা ও শক্তি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। তাঁর প্রশস্থ হৃদয়ে সব ধরনের মানুষের জন্য সহমর্মিতা ছিল। তিনি ঘোষণা করেছেন, “গ্রীক ও যাহারা গ্রীক নয়, বিজ্ঞ ও অজ্ঞ সকলের কাছে আমি ঋণী।” রোমীয় ১:১৪। এক সময় তিনি মহিমার প্রভুকে তাঁর ভক্ত সাধুদের মধ্য দিয়ে প্রচণ্ড তাড়না করেছেন, যা এখন তাঁকে প্রভুর প্রতি প্রেমে আরও বেশি উদ্বুদ্ধ করেছে এবং এটিই তাঁর পরিচর্যা কাজের অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। একবারও যদি তিনি তাঁর কর্তব্যের পথে সামান্য পিছিয়ে পড়েন, তখনই তিনি ক্রুশের দিকে একটিবার নজর দেন ও খ্রীষ্টের প্রকাশিত অভ‚তপূর্ব ভালবাসার কথা স্মরণ করেন, আর তাতেই তিনি তাঁর মনের কটিবন্ধনী শক্ত করে বেঁধে আত্মত্যাগের চেতনা নিয়ে সামনে এগিয়ে যান। AABen 205.3

দেখুন কীভাবে প্রেরিত পৌল করিন্থের সমাজগৃহে প্রচার করছেন। তিনি মোশী ও অন্যান্য ভাববাদীদের গ্রন্থ থেকে যুক্তি উত্থাপন করছেন এবং তাঁর শ্রোতাদেরকে প্রতিজ্ঞাত মশীহের সুসংবাদ জানাচ্ছেন। শুনুন কীভাবে তিনি সমগ্র মানব জাতির মহাযাজক হিসেবে ত্রাণকর্তার কাজকে সহজ সরল ভাষায় ব্যাখ্যা করছেন। এমন একজন করে তিনি খ্রীষ্টকে উপস্থাপন করছেন যিনি তাঁর নিজ জীবন দানের মধ্য দিয়ে সমস্ত মানুষের পাপের ভার চিরকালের জন্য তুলে নিয়েছেন এবং এরপর স্বর্গের রাজসভায় বসে মানুষের জন্য তাঁর পরিচর্যা কাজ করছেন। পৌল তাঁর শ্রোতাদেরকে একথা বুঝিয়েছিলেন যে, যে মশীহের জন্য তারা এতদিন ধরে অপেক্ষা করছে তিনি ইতোমধ্যে এসে গেছেন; তাঁর মৃত্যু সমস্ত বলি উৎসর্গের কার্যকারিতা বিনষ্ট করেছে, এবং স্বর্গের সিংহাসনে তাঁর পরিচর্যা কাজ পেছনে একটি বিরাট ছায়া ফেলেছে এবং যিহূদী যাজকত্বের পরিচর্যাকে পরিষ্কার করেছে। AABen 206.1

“যীশুই যে খ্রীষ্ট,” পৌল “ইহার প্রমাণ যিহূদীদিগকে দিতেছিলেন।” পুরাতন নিয়মের শাস্ত্র থেকে তিনি দেখিয়েছেন যে, শাস্ত্রের ভবিষ্যদ্বাণী এবং যিহূদীদের সার্বজনীন বিশ্বাস ও প্রত্যাশা অনুসারে মশীহ্ অব্রাহাম ও দায়ূদের বংশ থেকে আসবেন; এরপর তিনি দায়ূদের প্রশংসা গীত অনুসারে আদিপিতা অব্রাহামের বংশ বৃত্তান্ত বর্ণনা করেছেন। তিনি প্রতিজ্ঞাত মশীহের চরিত্র ও কাজ সম্পর্কে ভাববাদীদের সাক্ষ্য থেকে পাঠ করেছেন এবং পৃথিবীতে তাঁর সাথে যে আচরণ করা হয়েছে তাও বলেছেন; এর পর তিনি তাদেরকে দেখিয়েছেন যে, সমস্ত পূর্বাভাসই নাসরতীয় যীশুর জীবন, পরিচর্যা ও মৃত্যুর মধ্য দিয়ে পরিপূর্ণতা পেয়েছে। AABen 206.2

পৌল দেখিয়েছেন যে, খ্রীষ্ট প্রথমে সেই জাতিকে পরিত্রাণ দিতে এসেছিলেন যারা তাদের জাতিগত গৌরব পুনরুদ্ধারের জন্য মশীহের আগমনের প্রতিক্ষা করছিল। কিন্তু যিনি তাদেরকে জীবন দান করতে চেয়েছিলেন তাঁকেই সেই জাতি প্রত্যাখ্যান করল এবং আরেকজনকে নেতা হিসেবে গ্রহণ করল, যার অধীনে রয়েছে কেবলই মৃত্যু। তিনি তাঁর শ্রোতাদের মধ্যে এই অনুশোচনা জাগিয়ে তুলতে চাইলেন যে, যিহূদী জাতি যদি কেবল অনুশোচনা করে তাহলেই কেবল তারা তাদের জাতির পূর্ণ বিনাশ থেকে মুক্ত হতে পারে। যে শাস্ত্রকে তারা সম্পূর্ণভাবে উপলব্ধি করে বলে গর্ব করত সেটি যে তারা আসলে সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারেনি সেই অজ্ঞতা তিনি তাদের কাছে প্রকাশ করলেন। তিনি তাদের পার্থিব চিন্তাধারা, তাদের উপাধি, পদমর্যাদা ও শৌর্যবীর্য নিয়ে করা সমস্ত অহঙ্কারের জন্য এবং তাদের স্বার্থপরতার জন্য বিশেষভাবে তাদের তিরস্কার করলেন। AABen 206.3

পবিত্র আত্মার শক্তিতে পৌল তাঁর নিজের অলৌকিক মন পরিবর্তন এবং পুরাতন নিয়মের শাস্ত্রের উপরে তাঁর অগাধ আস্থার কথা বললেন, যা নাসরতীয় যীশু ব্যতীত কখনোই সুসম্পন্ন হত না। তিনি ভাবগাম্ভীর্য নিয়ে এই কথাগুলো বলেছেন এবং তাঁর শ্রোতারা এতে মুগ্ধ না হয়ে পারল না যে, তিনি তাঁর সমস্ত অন্তঃকরণ দিয়ে ক্রুশবিদ্ধ ও পুনরুত্থিত ত্রাণকর্তাকে ভালবাসেন। তারা দেখল যে, তাঁর মন খ্রীষ্টতেই নিবদ্ধ এবং তাঁর পুরো জীবনটাই প্রভুর সাথে আবদ্ধ। তাঁর কথা এতটাই মনোমুগ্ধকর ছিল যে, একমাত্র যারা খ্রীষ্ট ধর্মের প্রতি তীব্র ঘৃণা পোষণ করে রেখেছিল তারাই শুধু এই কথায় বিচলিত হল না। AABen 207.1

কিন্তু করিন্থের যিহূদীরা প্রেরিত পৌলের প্রকাশ করা সমস্ত সাক্ষ্য প্রমাণ সামনে দেখেও চোখ ফিরিয়ে রাখল এবং তাঁর আবেদন শুনতে অসীকৃতি জানাল। যে আত্মায় পূর্ণ হয়ে তারা খ্রীষ্টকে প্রত্যাখ্যান করেছিল সেই একই আত্মায় তারা খ্রীষ্টের পরিচর্যাকারীকেও প্রত্যাখ্যান করল; উপরন্তু ঈশ্বর যদি তাঁকে পরজাতীয়দের মধ্যে সুসমাচার প্রচারের জন্য সেখান থেকে প্রস্থান করার মধ্য দিয়ে রক্ষা না করতেন তাহলে তারা সেখানেই তাঁর জীবন শেষ করে দিত। AABen 207.2

“কিন্তু তাহারা প্রতিরোধ ও নিন্দা করাতে তিনি বস্ত্র ঝাড়িয়া তাহাদিগকে কহিলেন, তোমাদের রক্ত তোমাদেরই মস্তকে বর্তুক, আমি শুচি; এখন অবধি আমি পরজাতীয়দের নিকটে চলিলাম। পরে তিনি তথা হইতে প্রস্থান করিয়া তিতিয় যুষ্ট নামে এক জন ঈশ্বর—ভক্তের বাটীতে প্রবেশ করিলেন, ইহার বাটী সমাজ—গৃহের পার্শ্বে ছিল।” AABen 207.3

সীল ও তীমথি “মাকিদনিয়া হইতে” পৌলকে সাহায্য করতে এসেছিলেন এবং তারা একসাথে পরজাতীয়দের মধ্যে পরিচর্যা কাজ করতে লাগলেন। যিহূদীদের মতই পরজাতীয়দের কাছেও পৌল ও তাঁর সঙ্গীরা খ্রীষ্টকে পশ্চাৎপদ জাতির কাছে প্রেরিত ত্রাণকর্তা হিসেবে প্রচার করতে লাগলেন। অনেক বেশি জটিল ও সুদূরপ্রসারী যুক্তি তর্ক ও আলোচনা এড়িয়ে ক্রুশের বার্তাবাহক প্রচার করলেন এই জগতের সৃষ্টিকর্তার কথা, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সর্বশক্তিমান শাসকের কথা। তাঁদের অন্তর ঈশ্বর ও তাঁর পুত্র যীশু খ্রীষ্টের প্রতি ভালবাসায় পূর্ণ ছিল এবং তাঁরা পরজাতীয়দের কাছে আবেদন জানালেন যেন তারা মানুষের জন্য এই মহান আত্মত্যাগ গভীরভাবে অনুধাবন করে। তাঁরা জানতেন যে, যারা বহু দিন ধরে পরজাতীয় ধর্ম বিশ্বাসের অন্ধকারে ঘুরপাক খাচ্ছে তারা যখনই কালভেরীর ক্রুশ থেকে জ্যোতি নির্গত হতে দেখবে তখন তারা নিজেরাই ত্রাণকর্তার কাছে এসে উপস্থিত হবে। “আর আমি ভ‚তল হইতে উচ্চীকৃত হইলে, ত্রাণকর্তা ঘোষণা করেছেন, “সকলকে আমার নিকটে আকর্ষণ করিব।” যোহন ১২:৩২। AABen 207.4

করিন্থে সুসমাচার প্রচারকরা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন যে, যাদের জন্য তারা এই পরিচর্যা দিচ্ছেন তাদের আত্মা এক ভয়াবহ বিপদের মুখে অবস্থান করছে; এবং তাঁদেরই উপরে সেই দায়িত্ব রয়েছে যেন তারা যীশু খ্রীষ্টের সত্য তাদের সামনে উপস্থিত করেন। তাঁদের বার্তা ছিল পরিষ্কার, সহজ এবং গোছানো — জীবনের কাছে জীবনের ত্রাণকর্তা এবং মৃতের কাছে মৃত। শুধু তাঁদের কথাতেই নয়, তাদের প্রতিদিনের জীবনেও সুসমাচারের এই সত্য প্রকাশ পেত। স্বর্গদূতেরাও তাঁদেরকে সাহায্য করতেন এবং ঈশ্বরের অনুগ্রহ ও ক্ষমতা নানাভাবে লোকদের মন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে দেখা যেত। “সমাজাধ্যক্ষ ক্রীষ্প সমস্ত পরিবারের সহিত প্রভুতে বিশ্বাস করিলেন; এবং করিন্থীয়দের মধ্যে অনেক লোক শুনিয়া বিশ্বাস করিল, ও বাপ্তাইজিত হইল।” AABen 208.1

প্রেরিতদের প্রতি যিহূদীদের যে ক্রোধ ও আক্রোশ ছিল তা এখন শতগুণে বেড়ে গেল। ক্রীষ্প বিশ্বাসী হওয়ায় ও বাপ্তিস্ম গ্রহণ করায় গোঁড়া এই বিরোধীরা দমে যাওয়ার বদলে আরও বেশি ক্রোধোন্মত্ত হয়ে উঠল। তারা পৌলের সামনে দাঁড়িয়ে যুক্তিতর্কে পারত না আবার তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনার মত যথেষ্ট প্রমাণও তারা তৈরি করতে পারছিল না। তারা সুসমাচার ও যীশুর নামের বিরুদ্ধে ঈশ্বরদ্রোহিতা করতে শুরু করল। রাগে অন্ধ হয়ে এমন কোন তিক্ত ভাষা নেই বা এমন কোন নীচ দুরভিসন্ধি নেই যা তারা চিন্তা করল না। তারা এ কথা অস্বীকার করতে পারল না যে, যীশু অলৌকিক কাজ করেছেন; কিন্তু তারা ঘোষণা করল যে, তিনি শয়তানের কাছ থেকে এই ক্ষমতা পেয়েছেন; আর তারা দুঃসাহসিকতার সাথে এই কথা বলে বেড়াতে লাগল যে, পৌলও একইভাবে শয়তানের কাছ থেকে অলৌকিক সব ক্ষমতা পেয়েছেন। AABen 208.2

যদিও পৌল করিন্থে বড় ধরনের সাফল্য পেয়েছিলেন, তথাপি তিনি এই পাপপূর্ণ শহরে যে সমস্ত মন্দতা অবলোকন করেছেন তাতে করে তাঁর হৃদয় অত্যন্ত ব্যথিত হল। পরজাতীয়দের মধ্যে যে দুরাচার তিনি দেখেছেন এবং যিহূদীদের কাছ থেকে যে ঘৃণা ও অবমাননা তিনি ভোগ করেছেন তার জন্য তিনি আত্মায় এক দারুন বিদ্বেষ অনুভব করলেন। তিনি সেখানে যা যা পেয়েছেন তা থেকে একটি মণ্ডলী আদৌ গঠন করা যায় কিনা তা নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়লেন। AABen 209.1

তিনি যখন আরও ভাল সম্ভাবনাময় কোন স্থানে যাওয়ার জন্য এই শহরটি ত্যাগ করার চিন্তা করছিলেন এবং তাঁর দায়িত্ব সম্পর্কে আরও ভাল করে বোঝার জন্য আকাঙ্ক্ষা অনুভব করছিলেন, সে সময় প্রভু একটি দর্শনের মধ্য দিয়ে তাঁর কাছে এলেন এবং বললেন, “ভয় করিও না, বরং কথা বল, নীরব থাকিও না; কারণ আমি তোমার সঙ্গে সঙ্গে আছি, তোমার ক্ষতি করণার্থে কেহই তোমাকে আক্রমণ করিবে না; কেননা এই নগরে আমার অনেক প্রজা আছে।” পৌল বুঝতে পারলেন এই দর্শনের মধ্য দিয়ে তাঁকে করিন্থ নগরেই থাকতে বলা হচ্ছে এবং প্রভু তাঁকে এই নিশ্চয়তা দিচ্ছেন যে, তিনি যে বীজ বপন করেছেন তা অবশ্যই বৃদ্ধি পাবে। শক্তি ও সাহস পেয়ে তিনি সেখানে প্রবল উৎসাহ ও অধ্যবসায় নিয়ে কাজ করতে লাগলেন। AABen 209.2

প্রেরিত পৌল সেখানে শুধু জনসমক্ষে প্রচার করতেন তা নয়; সেখানে এমন অনেকে ছিল যাদের কাছে এই প্রক্রিয়ায় যাওয়া যেত না। তিনি ঘরে ঘরে গিয়ে সুসমাচার প্রচারের জন্যও যথেষ্ট সময় দিতেন এবং এতে করে পারিবারিকভাবে তিনি অনেকের সাথে পরিচিত হলেন ও পরিচর্যার সম্পর্ক গড়ে তুললেন। তিনি অসুস্থ ও পীড়িত লোকদেরকে দেখতে যেতেন, যে কষ্ট পাচ্ছে তাকে সান্ত্বনা দিতেন এবং নির্যাতিতের পাশে দাঁড়িয়ে তাকে তুলে ধরতেন। তিনি যা কিছু করতেন ও যা কিছু বলতেন সব কিছুর মধ্য দিয়েই তিনি যীশুকে বিবর্ধিত করেছেন। এভাবেই তিনি “দুর্বলতা, ভয় ও মহাকম্পযুক্ত” হয়ে পরিচর্যা কাজ করেছেন। ১ করিন্থীয় ২:৩। AABen 209.3

“তথাপি আমরা সিদ্ধদের মধ্যে জ্ঞানের কথা কহিতেছি,” পরবর্তীতে পৌল ব্যক্ত করেছেন, “কিন্তু সেই জ্ঞান এই যুগের নয়, এবং এই যুগের শাসনকর্তাদেরও নয়, ইহারা ত অকিঞ্চন হইয়া পড়িতেছেন। কিন্তু আমরা নিগূঢ়তত্ত্বরূপে ঈশ্বরের সেই জ্ঞানের কথা কহিতেছি, সেই গুপ্ত জ্ঞান, যাহা ঈশ্বর আমাদের প্রতাপের জন্য যুগপর্যায়ের পূর্বে নিরূপণ করিয়াছিলেন। এই যুগের শাসনকর্তাদের মধ্যে কেহ তাহা জানেন নাই; কেননা যদি জানিতেন, তবে প্রতাপের প্রভুকে ক্রুশে দিতেন না। কিন্তু, যেমন লেখা আছে, ‘‘চক্ষু যাহা দেখে নাই, কর্ণ যাহা শুনে নাই, এবং মনুষ্যের হৃদয়াকাশে যাহা উঠে নাই, যাহা ঈশ্বর, যাহারা তাঁহাকে প্রেম করে, তাহাদের জন্য প্রস্তুত করিয়াছেন।” কারণ আমাদের কাছে ঈশ্বর তাঁহার আত্মা দ্বারা তাহা প্রকাশ করিয়াছেন, কেননা আত্মা সকলই অনুসন্ধান করেন, ঈশ্বরের গভীর বিষয় সকলও অনুসন্ধান করেন। কারণ মনুষ্যের বিষয়গুলি মনুষ্যদের মধ্যে কে জানে? কেবল মনুষ্যের অন্তরস্থ আত্মা জানে; তেমনি ঈশ্বরের বিষয়গুলি কেহ জানে না, কেবল ঈশ্বরের আত্মা জানেন। AABen 210.1

“কিন্তু আমরা জগতের আত্মাকে পাই নাই, বরং ঈশ্বর হইতে নির্গত আত্মাকে পাইয়াছি, যেন ঈশ্বর অনুগ্রহপূর্বক আমাদিগকে যাহা যাহা দান করিয়াছেন, তাহা জানিতে পারি। আমরা সেই সকল বিষয়েরই কথা, মানুষিক শিক্ষানুরূপ জ্ঞানের বাক্য দ্বারা নয়, কিন্তু আত্মার শিক্ষানুরূপ বাক্য দ্বারা কহিতেছি; আকি বিষয় আকি বিষয়ের সহিত যোগ করিতেছি।” ১ করিন্থীয় ২:৬—১৩। AABen 210.2

পৌল অনুধাবন করতে পেরেছিলেন যে, তিনি নিজে পর্যাপ্ত ছিলেন না কিন্তু পবিত্র আত্মার উপস্থিতিতে তাঁর অনুগ্রহরূপ প্রভাবে আপ্লুত হয়ে তিনি সমস্ত কিছুকে খ্রীষ্টের অন্তর অনুসারে চিন্তা করতেন। তিনি নিজের সম্পর্কে বলেছেন, “আমরা সর্বদা এই দেহে যীশুর মৃত্যু বহন করিয়া বেড়াইতেছি, যেন যীশুর জীবনও আমাদের দেহে প্রকাশ পায়।” ২ করিন্থীয় ৪:১০। প্রেরিত পৌলের শিক্ষায় খ্রীষ্টই ছিলেন কেন্দ্রীয় চরিত্র। “আমি আর জীবিত নই,” তিনি ঘোষণা করেছেন, “কিন্তু খ্রীষ্টই আমাতে জীবিত আছেন।” গালাতীয় ২:২০। নিজেকে নিভৃত রাখার মধ্য দিয়ে তিনি খ্রীষ্টকে উন্মোচিত ও উচ্চীকৃত করেছেন। AABen 210.3

পৌল ছিলেন অত্যন্ত সুবক্তা। খ্রীষ্ট ধর্মে মন পরিবর্তনের আগে তিনি অনেকবারই তাঁর উচ্চমার্গীয় বাগ্মিতা দিয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করে দিয়েছেন। কাব্যিক বর্ণনা ও কল্পপ্রসূত উপস্থাপন হয়তো মানুষের কাছে শুনতে ভাল লাগে, কিন্তু তা বাস্তব জীবনকে স্পর্শ করতে পারে না। এজন্যই প্রেরিত পৌল এমন সরল ভাষা ব্যবহার করেছেন যা মানুষের অন্তরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সত্যের প্রবেশ ঘটাবে। সত্যকে বিভিন্ন অলঙ্করণ দিয়ে ব্যক্ত করলে হয়তো শুনতে ভাল লাগে কিন্তু তাতে করে জীবনযুদ্ধে বিশ্বাসীদের যে শক্তি ও সাহস অর্জন করা প্রয়োজন সেটা সব সময় পাওয়া যায় না। পীড়িত আত্মান তাৎক্ষণিক অভাব ও বর্তমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে গেলে অবশ্যই খ্রীষ্ট ধর্মের মৌলিক নীতির কিছু বাস্তব শিক্ষা লাভের প্রয়োজন। AABen 211.1

করিন্থে পৌলের পরিশ্রম নিষ্ফল হয়নি। অনেকেই প্রতিমাপূজা থেকে মন ফিরিয়ে জীবন্ত ঈশ্বরের সেবা করতে শুরু করেছিল এবং খ্রীষ্টের পতাকাতলে এক বৃহৎ মণ্ডলী একত্রিত হয়েছিল। অনেককেই প্রচণ্ডভাবে অধঃপতিত জীবন থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে এবং তারা এখন ঈশ্বরের করুণায় এবং খ্রীষ্টের রক্তের গুণে সমস্ত পাপ থেকে পরিষ্কৃত হয়েছে। AABen 211.2

খ্রীষ্টকে মানুষের কাছে উপস্থাপনের এই অভিযানে পৌল যে অভাবনীয় সাফল্য লাভ করেছিলেন তা অবিশ্বাসী যিহূদীদেরকে আরও বেশি করে বিরোধী মনোভাবের করে তুলেছিল। তারা “এক যোগে পৌলের বিপক্ষে উঠিল, ও তাঁহাকে বিচারাসনের সম্মুখে” নিয়ে গেল। এই বিচারাসনে সে সময় উপবিষ্ট ছিলেন গাল্লিয়ো, যিনি আখায় প্রদেশের শাসনকর্তা ছিলেন। তারা আশা করেছিল আগের মত এবারও কর্তৃপক্ষ তাদেরর সাথে থাকবে। কাজেই তারা রাগান্বিত উচ্চস্বরে প্রেরিতের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো একে একে বলতে লাগলেন। তারা বললেন, “এই ব্যক্তি ব্যবস্থার বিপরীতে ঈশ্বরের ভজনা করিতে লোকদিগকে কুপ্রবৃত্তি দেয়।” AABen 211.3

যিহূদী ধর্ম রোমীয় শাসনের অধীনে সুরক্ষিত ছিল এবং পৌলের বিরুদ্ধে অভিযোগকারীরা মনে করেছিল যদি তাঁর বিরুদ্ধে ধর্মের আইন কানুন ভঙ্গ করার অভিযোগ আনা যায় তাহলে হয়তো তাঁকে বিচারের জন্য তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। তারা পৌলকে মেরে ফেলার চক্রান্ত করেছিল। কিন্তু গাল্লিয়ো অত্যন্ত সৎ মানুষ ছিলেন এবং তিনি এই উন্মত্ত ও ঈর্ষাকাতর যিহূদীদের কথায় চালিত হতে চাইলেন না। তাদের ঔদ্ধত্ব্য ও আত্ম— অহমিকার আচরণের জন্য তিনি পৌলের বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগ নাকচ করে দিলেন। পৌল যখন আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য মুখ খুললেন তখন গাল্লিয়ো বললেন তার আর কোন প্রয়োজন নেই। এরপর উগ্র অভিযোগকারীদের দিকে ফিরে তিনি বললেন, “কোন প্রকার অপরাধ কিম্বা দুষ্কার্য যদি হইত, তবে, হে যিহূদীরা, তোমাদের প্রতি সহিষ্ণুতা করা আমার পক্ষে যুক্তিসঙ্গত হইত; কিন্তু বাক্য বা নাম বা তোমাদের ব্যবস্থা সম্বন্ধীয় প্রশ্ন যদি হয়, তবে তোমরা আপনারাই তাহা বুঝিবে, আমি সেই প্রকার বিষয়ের বিচারকর্তা হইতে চাহি না।” AABen 211.4

যিহূদী ও গ্রীক উভয়েই খুব আগ্রহ নিয়ে গাল্লিয়োর রায় শোনার জন্য অপেক্ষা করছিল। আর যখন পৌলের বিরুদ্ধে আনীত মামলা একেবারেই খারিজ করে দেওয়া হল, তখন যিহূদীদের নিষ্ফল ক্রোধে ক্ষুব্ধ হয়ে ফুঁসতে থাকা ছাড়া আর কিছু করার ছিল না। যে উৎসুক জনতা এতক্ষণ যিহূদীদের পক্ষসমর্থন করছিল তারাও এখন বিজ্ঞ বিচারকের রায় শুনে নিজেদের ভুল বুঝতে পারল। ইউরোপে পৌলের পরিচর্যা কাজে এই প্রথমবারের মত জনতা তাঁর পক্ষ নিল। শাসনকর্তার চোখের সামনেই তারা প্রেরিতের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগকারীকে ধরে বেধড়ক মারল, কিন্তু গালিয়ো তাতে ভ্রূক্ষেপও করলেন না। “তাহাতে সকলে সমাজাধ্যক্ষ সোস্থিনিকে ধরিয়া বিচারাসনের সম্মুখে প্রহার করিতে লাগিল; আর গাল্লিয়ো সেই সকল বিষয়ে কিছু মনোযোগ দিলেন না।” এভাবেই খ্রীষ্টত্ব বিজয়ের পথে অগ্রসর হতে শুরু করল। AABen 212.1

এই ঘটনার পর সেখানে “পৌল আরও অনেক দিন অবস্থিতি” করলেন। এ সময় প্রেরিতগণ যদি করিন্থ ছেড়ে চলে যাওয়ার চিন্তা করতেন তাহলে যীশুর প্রতি বিশ্বাসী ভাইয়েরা এক ভয়ানক পরিস্থিতিতে পড়তেন। যিহূদীরা এই সুযোগে নতুন বিশ্বাসীদের উপরে অত্যাচার নির্যাতন চালাত এবং তাতে করে সেই অঞ্চলে খ্রীষ্ট ধর্মের প্রসার পুরোপুরি নিশ্চিহ্নও হয়ে যেতে পারত। AABen 212.2