প্রেরিতগণের কার্য-বিবরণ

27/59

২৬শ অধ্যায়—করিন্থ নগরীর আপল্লো

করিন্থ ত্যাগ করার পর পৌল ইফিষে পরিচর্যা কাজ করেছিলেন। তিনি আসন্ন একটি ধর্মীয় উৎসবে যোগ দেওয়ার জন্য যিরূশালেমের দিকে যাচ্ছিলেন এবং ইফিষে তিনি মাত্র কিছুদিনের জন্য ছিলেন। তিনি সমাজগৃহের যিহূদীদের সাথে মত বিনিময় ও আলোচনা করেছিলেন। এতে করে সেখানকার যিহূদীদের মধ্যে তিনি এতটাই প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছিলেন যে, তারা তাঁকে তাদের মধ্যে পরিচর্যা কাজ চালিয়ে যাবার জন্য সুযোগ করে দিয়েছিলেন। তবে যিরূশালেমে যাওয়ার চিন্তা থাকায় সেখানে তিনি আর বেশিদিন অবস্থান করতে পারলেন না। তবে “ঈশ্বরের ইচ্ছা হইলে” তিনি তাদের কাছে ফিরে আসার জন্য প্রতিজ্ঞা করলেন। আক্কিলা ও প্রিষ্কিলা তাঁকে ইফিষে সঙ্গ দিয়েছিলেন এবং তিনি যে কাজ শুরু করেছিলেন তা চালিয়ে নেওয়ার ভার তাদের উপরে ন্যস্ত করলেন। এ সময়ই “আপল্লো নামক এক জন যিহুদী ইফিষে আসিলেন; তিনি জাতিতে আলেক্সান্দ্রীয়, এক জন সুবক্তা, এবং শাস্ত্রেক্ষমতাপন্নছিলেন।” AABen 225.1

তিনি বাপ্তিস্মদাতা যোহনের প্রচার শুনেছিলেন, তিনি মন পরিবর্তনের বাপ্তিস্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং তিনি একজন জীবন্ত সাক্ষী হিসেবে এই সাক্ষ্য বহন করছিলেন যে, ভাববাদীর পরিচর্য কাজ বিফলে যায়নি। আপল্লো সম্পর্কে শাস্ত্র এ কথা বলে যে, “তিনি প্রভুর পথের বিষয়ে শিক্ষা পাইয়াছিলেন, এবং আত্মাতে উত্তপ্ত হওয়াতে যীশুর বিষয়ে সূক্ষ্ণরূপে কথা বলিতেন ও শিক্ষা দিতেন, কিন্তু কেবল যোহনের বাপ্তিস্ম জ্ঞাত ছিলেন।” ইফিষে থাকাকালে আপল্লো “সমাজ—গৃহে সাহসপূর্বক কথা কহিতে আরম্ভ করিলেন।” AABen 225.2

তাঁর শ্রোতাদের মধ্যে আক্কিলা ও প্রিষ্কিলাও ছিলেন, যারা মনে করেছিলেন তিনি এখনো সুসমাচারের পূর্ণ প্রত্যাদেশ পাননি। কাজেই তাঁরা “তাঁহার উপদেশ শুনিয়া তাঁহাকে আপনাদের নিকটে আনিলেন, এবং ঈশ্বরের পথ আরও সূ²রূপে বুঝাইয়া দিলেন।” তাদের এই শিক্ষার মধ্য দিয়ে আপল্লো শাস্ত্র সম্পর্কে আরও পরিষ্কার উপলব্ধি লাভ করলেন এবং তিনি খ্রীষ্ট বিশ্বাসের অন্যতম এক সফল প্রচারক হয়ে উঠলেন। AABen 225.3

আপল্লো আখায়াতে যাওয়ার জন্য খুব আকাক্সক্ষী ছিলেন এবং ইফিষের বিশ্বাসী ভাইয়েরা “তাঁহাকে গ্রহণ করিতে শিষ্যদিগকে পত্র লিখিলেন,” যেন তাঁরা আপল্লোকে খ্রীষ্টের পক্ষে একজন পরিচর্যাকারী হিসেবে খ্রীষ্টের মণ্ডলীতে সর্বান্তকরণে গ্রহণ করেন। তিনি করিন্থে গেলেন, যেখানে প্রকাশ্যে ও ঘরে ঘরে গিয়ে প্রচার কাজের মধ্য দিয়ে “ক্ষমতার সহিত লোকসাধারণের সাক্ষাতে যিহূদিগণকে একেবারে নিরুত্তর করিলেন,” কারণ “যীশুই যে খ্রীষ্ট, ইহা শাস্ত্রীয় বচন দ্বারা” তিনি প্রমাণ করেছিলেন। পৌল সত্যের বীজ বপন করেছিলেন, এখন আপল্লো তাতে জল সেচন করলেন। সুসমাচার প্রচারে আপল্লো যে সাফল্য লাভ করেছিলেন তাতে অনেক বিশ্বাসী তাকে পৌলের চেয়েও বড় কার্যকারী হিসেবে সাব্যস্ত করতে শুরু করলেন। পরিচর্যাকারীদের মধ্যে এই তুলনা করার কারণে মণ্ডলীতে দলভেদ সৃষ্টি হল এবং তাতে সুসমাচারের প্রসারের পথে প্রতিবন্ধকতা আসতে লাগল। AABen 226.1

করিন্থে পৌল যে দেড় বছর অতিবাহিত করেছিলেন সে সময় তিনি সুসমাচারকে অত্যন্ত সরলভাবে বিশ্বাসীদের কাছে উপস্থাপন করেছিলেন। “বাক্যের কি জ্ঞানের উৎকৃষ্টতা অনুসারে” তিনি করিন্থে যাননি; বরং তিনি ভীত ও কম্পিত হয়ে ও “আত্মার ও পরাক্রমের প্রদর্শনযুক্ত” হয়ে তিনি “ঈশ্বরের সাক্ষ্য জ্ঞাত” করেছিলেন, যেন তাদের “বিশ্বাস মনুষ্যদের জ্ঞানযুক্ত না হইয়া ঈশ্বরের পরাক্রমযুক্ত হয়।” ১ করিন্থীয় ২:১, ৪, ৫। AABen 226.2

সেখানকার মণ্ডলীর পরিস্থিতি অনুসারেই পৌল এভাবে শিক্ষা দিয়েছিলেন। “হে ভ্রাতৃগণ, আমি তোমাদিগকে আত্মিক লোকদের ন্যায় সম্ভাষণ করিতে পারি নাই,” পরবর্তীতে তিনি তাদের কাছে ব্যাখ্যা করেছেন, “কিন্তু মাংসময় লোকদের ন্যায়, খ্রীষ্ট সম্বন্ধীয় শিশুদের ন্যায় সম্ভাষণ করিয়াছি।আমি তোমাদিগকে দুগ্ধ পান করাইয়াছিলাম, অন্ন দিই নাই, কেননা তখন তোমাদের শক্তি হয় নাই; এমন কি, এখনও তোমাদের শক্তি হয় নাই।” ১ করিন্থীয় ৩:১, ২। পৌল যে শিক্ষাগুলো দিয়েছিলেন সেগুলো গ্রহণ করার ক্ষেত্রে করিন্থীয় বিশ্বাসীদের অনেকেই খুব ধীরগতির ছিলেন। তারা যে সুযোগ ও সম্ভাবনা পেয়েছিলেন সে তুলনায় তাদের আত্মিক জ্ঞান সেভাবে বৃদ্ধি পায়নি। যখন তাদের খ্রীষ্টিয় অভিজ্ঞতায় আরও বহুদূর এগিয়ে যাবার কথা ছিল, যখন তাদের বাক্যের নিগূঢ় সত্য উপলব্ধি করে তা কাজে পরিণত করার কথা ছিল তখনও তারা অনেক পেছনে পড়ে ছিলেন, যে কারণে শিষ্যদেরকে যীশু বলেছিলেন, “তোমাদিগকে বলিবার আমার আরও অনেক কথা আছে, কিন্তু তোমরা এখন সেই সকল সহ্য করিতে পার না।” যোহন ১৬:১২। ঈর্ষা, অধর্ম চিন্তা এবং অপবাদ অনেক খ্রীষ্টিয়ানের অন্তরকেই পবিত্র আত্মার কাজকে বাধাগ্রস্থ করে, যিনি “সকলই অনুসন্ধান করেন, ঈশ্বরের গভীর বিষয় সকলও অনুসন্ধান করেন।” ১ করিন্থীয় ২:১০। তারা পার্থিব জ্ঞানে যতটাই জ্ঞানী হোক না কেন, খ্রীষ্টের জ্ঞানে তারা শিশুমাত্র। AABen 226.3

পৌলের কাজ ছিল করিন্থীয় বিশ্বাসীদেরকে খ্রীষ্ট বিশ্বাসের প্রাথমিক শিক্ষা তথা হাতেখড়ি দেওয়া। তাঁর দায়িত্ব ছিল অন্তরে পবিত্র আত্মার কাজ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ এই মানুষদেরকে সঠিকভাবে শিক্ষা দান করা। সে সময় তারা পরিত্রাণের রহস্য সম্পর্কে জ্ঞাত ছিল না; কারণ “প্রাণিক মনুষ্য ঈশ্বরের আত্মার বিষয়গুলি গ্রহণ করে না, কেননা তাহার কাছে সেই সকল মূর্খতা; আর সেই সকল সে জানিতে পারে না, কারণ তাহা আত্মিকভাবে বিচারিত হয়।” ১৪ পদ। পৌল বীজ বপন করেছেন এবং অন্যরা জল সেচন করেছেন। যারা তাঁকে অনুসরণ করেছে তাদের দায়িত্ব ছিল তিনি যেখানে তাঁর কাজ শেষ করেছেন সেখান থেকেই আবার তা শুরু করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং মণ্ডলীকে আত্মার আলোয় ও জ্ঞানে আলোকিত করা। AABen 227.1

প্রেরিত পৌল যখন করিন্থে তাঁর কাজ শুরু করলেন সে সময় তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, যে সত্যটিকে তিনি শিক্ষা দিতে চান সেই সত্যটি তাঁকে অবশ্যই খুব সাবধানতা ও বিজ্ঞতার সাথে প্রকাশ করতে হবে। AABen 227.2

তিনি জানতেন তাঁর শ্রোতাদের মধ্যে এমন অনেকে আছে যারা অহঙ্কারের কারণে মানবীয় বিভিন্ন মতাদর্শের ঘোরতর সমর্থক ও বিশ্বাসী। তারা আরাধনায় ভুল পদ্ধতি অনুসরণ করে, কারণ তারা আত্মিকভাবে অন্ধ এবং পার্থিব জ্ঞানগ্রন্থে তারা সত্য খুঁজে বেড়ানোর আশা করে, অথচ তা শাস্ত্রে প্রকাশিত আত্মিক ও অনন্ত জীবনের বাস্তবতাকে অগ্রাহ্য করে। তিনি আরও জানতেন যে, সমালোচকেরা উন্মুক্ত বিশ্বে খ্রীষ্ট ধর্মের সত্যকে বিকৃতভাবে প্রকাশের চেষ্টা করবে এবং গোঁড়া মৌলবাদীরা খ্রীষ্টের সুসমাচারকে সম্পূর্ণভাবে অগ্রাহ্য করবে। AABen 227.3

খ্রীষ্টের ক্রুশের পাদদেশে আত্মাদের নিয়ে আসার এই প্রচেষ্টায় পৌল কখনোই অধর্মাচারীদেরকে সরাসরি তিরস্কার করেননি, কিংবা পবিত্র ঈশ্বরের দৃষ্টিতে তাদের পাপ কতটা ভয়ানক সেটা তিনি কখনো দেখানোর চেষ্টা করেননি। বরং তিনি জীবনের প্রকৃত লক্ষ্য তাদের সামনে উপস্থাপন করেছেন এবং স্বর্গীয় শিক্ষকের পাঠ দানের মধ্য দিয়ে তাদের অন্তরকে দ্রবীভূত করতে চেয়েছেন, যেন তা গ্রহণ করে তারা তাদের জাগতিক পাপ ও অধর্ম থেকে মুক্ত হয়ে পবিত্র ও ধার্মিক হয়। তিনি বিশেষভাবে ব্যবহারিক জীবনে ধার্মিকতা ও পবিত্রতার চর্চার বিশ্বাস করতেন, যা বিশ্বাসীদের ঈশ্বরের রাজ্যের একজন সদস্য হিসেবে গণ্য হওয়ার জন্য অবশ্যই পালনীয় একটি দায়িত্ব। খ্রীষ্টের সুসমাচারের জ্যোতি তাদের অন্ধকার মননকে ভেদ করে দিচ্ছে, এমনটা দেখার আকাঙ্ক্ষা ছিল তার, যেন তারা দেখতে পায় ঈশ্বরের দৃষ্টিতে তাদের এই সমস্ত অপকর্ম কতটা বিঘ্নজনক। এ কারণে তিনি তাদের কাছে খ্রীষ্ট ও তাঁর ক্রুশারোপণের বাক্য শিক্ষা দিতেন। তিনি তাদেরকে দেখাতে চেয়েছিলেন যে, তাদের একাগ্র অধ্যয়ন এবং তাদের সবচেয়ে বেশি আনন্দ হওয়া উচিত প্রভু যীশু খ্রীষ্টের উপরে বিশ্বাস এনে ঈশ্বরের কাছে নিজ পাপের জন্য অনুতাপ ও মন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে পরিত্রাণের অমোঘ সত্য লাভ করা। AABen 227.4

দার্শনিক পরিত্রাণের আলো থেকে সরে গেছেন, কারণ তা তার অহঙ্কারী মতাদর্শগুলোকে লজ্জার মুখে ফেলেছে; পার্থিব মানব তা গ্রহণ করতে অস্মীকৃতি জানিয়েছে, কারণ তাতে তার পার্থিব প্রতিমাকে পৃথক করে ফেলতে হবে। পৌল দেখলেন যে, খ্রীষ্টকে ভালবাসার আগে বা তাঁর ক্রুশকে বিশ্বাসের চোখে দেখার আগে খ্রীষ্টের চরিত্রকে অবশ্যই উপলব্ধি করতে হবে। এখানেই শুরু হতে হবে সেই অধ্যয়নের, যা হয়ে উঠবে যুগে যুগে সমস্ত পরিত্রাণপ্রাপ্তদের বিজ্ঞান ও প্রশংসা—গীত। ক্রুশের জ্যোতিতেই কেবল মানব জাতির আত্মার প্রকৃত মূল্য অনুধাবন করা যায়। AABen 228.1

ঈশ্বরীয় অনুগ্রহের পরিশুদ্ধকারী ক্ষমতা মানুষের স্বভাবগত মতাদর্শকে পরিবর্তন করে দেয়। পার্থিব মনমানসিকতা নিয়ে যারা চলে তাদের কাছে স্বর্গ আকাক্সিক্ষত নয়; তাদের স্বভাবসুলভ অপরিশুদ্ধ হৃদয় সেই পবিত্র ও বিমল স্থানটির জন্য কোন আগ্রহ অনুভব করে না এবং সেখানে যদি তাদের প্রবেশ করার কখনো সুযোগ হয় তাহলেও তারা সেখানে আকর্ষণীয় কিছু খুঁজে পাবে না। মানুষের হৃদয়কে যে সকল প্রবণতা সব সময় প্রভাবিত করে থাকে সেগুলোকে অবশ্যই খ্রীষ্টের অনুগ্রহ দ্বারা ঢেকে ফেলতে হবে এবং তবেই কেবল পাপে পতিত মানুষ স্বর্গে প্রবেশ করে পবিত্র সাধু ব্যক্তি ও স্বর্গদূতদের সহভাগিতা লাভ করার জন্য সমর্থহবে। মানুষ যখন পাপের কাছ থেকে দূরে সরে খ্রীষ্টীতে নতুন জীবন শুরু করে , তখন স্বর্গীয় ভালবাসায় তার হৃদয় পূর্ণ হয়; তার উপলব্ধি হয়ে ওঠে শুদ্ধ; সে এক অবারিত আনন্দ ও প্রজ্ঞার ঝর্ণা থেকে পান করে এবং চিরন্তন দিবসের জ্যোতি তার পথকে আলোকিত করে তোলে , কারণ জীবনের জ্যোতি তার কাছ থেকে আর কখনো বিচ্যুত হয় না । AABen 228.2

পৌল তাঁর করিন্থীয় ভাইদেরকে এই বিষয়ে বিশেষভাবে প্রভাবিত করতে চেয়েছিলেন যে , তিনি ও তাঁর সহযোগী পরিচর্যাকারীরা নেহায়েত ঈশ্বরের কাছ থেকেঅভিষেকপাওয়াব্যক্তিযারাঈশ্বরীয় সত্যশিক্ষাদেন, তারাপ্রত্যেকেএকইকাজেনিযুক্তরয়েছেনএবংতারা প্রত্যেকেই তাদের কাজের সাফল্যের জন্য ঈশ্বরের উপরে সমানভাবে নির্ভরশীল । মণ্ডলীতে বিভিন্ন পরিচর্যাকারীদের মাধ্যমে আগত বিশ্বাসীদের দলভেদ তৈরি হতে থাকাটা মোটেও ঈশ্বরের পরিকল্পনা নয় , বরং তা মানুষের স্বভাবসুলভ আচরণ নির্দেশ করে । “কেননা যখন তোমাদের এক জন বলে , আমি পৌলের , আর এক জন , আমি আপল্লোর , তখন তোমরা কি মনুষ্যমাত্র নও ? ভাল , আপল্লো কি ? আর পৌল কি ? তাহারা ত পরিচারকমাত্র , যাহাদের দ্বারা তোমরা বিশ্বাসী হইয়াছ , প্রত্যেককে প্রভু যেমন দায়িত্ব দিয়াছেন । আমি রোপণ করিলাম , আপল্লো জল সেচন করিলেন , কিন্তু ঈশ্বর বৃদ্ধি দিতে থাকিলেন । অতএব রোপক কিছু নয় , সেচকও কিছু নয় , বৃদ্ধিদাতা ঈশ্বরই সার ।’’ ১ করিন্থীয় ৩:৪— ৭ । AABen 229.1

পৌলই সর্বপ্রথম করিন্থে সুসমাচার প্রচার করেন এবং তিনিই সেখানে প্রথম মণ্ডলী প্রতিষ্ঠা করেন । প্রভুই সেখানে তাঁকে কাজে নিযুক্ত করেছেন । পরবর্তীতে ঈশ্বরের নির্দেশেই অন্যান্য কর্মীরাও সেখানে যুক্ত হন যেন তারা তাঁর পক্ষে সেখানে পরিচর্যা কাজ চালিয়ে যেতে পারেন । যে বীজ বপন করা হয়েছে তাতে অবশ্যই জল দিতে হবে , আর এটি ছিল আপল্লোর কাজ । তিনি তাঁর সমস্ত কাজে পৌলকে অনুসরণ করেছেন যেন তিনি পৌলের শুরু করা কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন এবং বপন করা বীজকে অঙ্কুরিত হওয়ার সুযোগ দিতে পারেন । পৌল মানুষের হৃদয়কে ঈশ্বরের কাছে নিয়ে এসেছিলেন , কিন্তু ঈশ্বরই সমস্ত কিছুর বৃদ্ধি দান করেছেন । মানুষ নয় , কেবল ঈশ্বরই শক্তিই চরিত্রের রূপান্তর ঘটায় । যারা বপন করে ও যারা সেচন করে তারা কেউই বীজের বৃদ্ধি সাধন করে না; তারা ঈশ্বরের অধীনে থেকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করেন কেবল ,যেভাবে ঈশ্বর তাঁর সাথে এই পৃথিবীতে কাজ করার জন্য আরও অনেককে প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত করেছেন । কেবলমাত্র মহান কার্যকারীই সমস্ত সাফল্য, সম্মান ও মহিমার যোগ্য । AABen 229.2

ঈশ্বরের সকল পরিচর্যাকারীর মেধা বা যোগ্যতা এক রকম নয় , কিন্তু তারা প্রত্যেকেই ঈশ্বরের পক্ষে কার্যকারী । তারা প্রত্যেকেই মহান শিক্ষকের কাজ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন এবং এরপর তারা যা শিখেছেন তা অন্যকে জানিয়েছেন । ঈশ্বর তাঁর প্রত্যেক কার্যকারীকে একেকটি কাজ দিয়েছেন । তাদের দান ও তালন্তে বৈচিত্র্য রয়েছে, কিন্তু সমস্ত কর্মীই ঐক্যে আবদ্ধ হয়ে কাজ করেন এবং তারা পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণায় তাঁরই পবিত্র প্রভাবের অধিনে নিয়ন্ত্রিত হন । তারা যখন পরিত্রাণের সুসমাচার সকলকে জ্ঞাত করবেন তখন অনেকেই ঈশ্বরের শক্তিতে মন পরিবর্তন করে প্রভুকে গ্রহণ করবে । ঈশ্বরের মধ্য দিয়ে খ্রীষ্টের সাথে মানুষের কার্যকারিতা সুপ্ত হয়ে পড়বে এবং দশ সহস্রের মধ্যে খ্রীষ্ট সর্বশ্রেষ্ঠ রূপে প্রতীয়মান হবেন , যিনি এক ও অদ্বিতীয় । AABen 230.1

“আর রূপক ও সেচক একই উভয়েই এক , এবং যাহার যেরূপ নিজের শ্রম , সে তদ্রূপ নিজের বেতন পাইবে । কারণ আমরা ঈশ্বরেরই সহকার্যকারী; তোমরা ঈশ্বরেরই ক্ষেত্র , ঈশ্বরেরই গাঁথনি।’’ ৮,৯ পদ । এই শ্রাস্ত্রাংশে প্রেরিত পৌল মণ্ডলীকে একটি ফসলের ক্ষেতের সাথে তুলনা করেছেন , যেখানে কৃষক শ্রম দেয় এবং ঈশ্বরের দ্রাক্ষালতার যত্ন নেয়; আবার একটি দালানের সাথেও তুলনা করা হয়েছে যা প্রভু পবিত্র মন্দির হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে । ঈশ্বর হলেন প্রধান কার্যকারী এবং তিনি প্রত্যেকটি মানুষকে তার কাজে সাহায্য করার জন্য নিয়োজিত করেছেন । প্রত্যেককেই তাঁর তত্ত্বাবধানে থেকে কাজ করছে। এভাবেই তিনি তাঁর সহকার্যকারীদের মধ্য দিয়ে কাজ করেন । তিনি তাদেরকে বিশেষ দক্ষতা ও যোগ্যতা দেন এবং যখন তারা তাঁর নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলে তখন তারা চূড়ান্ত সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হন । AABen 230.2

ঈশ্বরের সেবকেরা একসাথে কাজ করেন , আন্তরিকতা ও সহমর্মিতায় পরস্পর আবদ্ধ হন , “সমাদরে এক জন অন্যকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান’’ করেন । রোমীয় ১২:১০ । এখানে কোন নির্দয় সমালোচনার , বা একে অপরের কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করার কোন অবকাশ নেই । যাকে যাকে প্রভু তাঁর বাক্য দান করেছেন তাদের প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু দায়িত্ব পালন করার রয়েছে । প্রত্যেকেরই নিজস্ব স্বতন্ত্রতা রয়েছে যেন অন্য কারও সাথে তার নিজস্বতা বিলীন না হয় । তথাপি প্রত্যেকেরই অপরাপর বিশ্বাসী ভাইয়ের সাথে একচিত্ত হয়ে সম্প্রীতি বজায় রেখে কাজ করতে হবে । প্রভু কাজে তাঁর প্রত্যেক কার্যকারীকে অবশ্যই একতায় আবদ্ধ হতে হবে । কেঊ নিজেকে শ্রেষ্ঠ ভাবতে পারবে না , কোন সহকর্মী সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করতে পারবে না বা অন্যকে ছোট ভাবতে পারবে না । ঈশ্বরের অধীনে তারা প্রত্যেকেই তাঁর কাজ করছেন । এ কারণে তারা প্রত্যেকেই শ্রদ্ধেয় , ভালবাসার পাত্র এবং তারা প্রত্যেকেই একে অপরের কাছে উৎসাহিত হবেন । একসাথে তারা লক্ষ অর্জনের জন্য সামনে এগিয়ে যাবেন । AABen 230.3

এই নীতিমালা আমরা করিন্থীয় মণ্ডলীর কাছে লেখা পৌলের প্রথম চিঠিটি পড়ে জেনেছি । প্রেরিত পৌল বলেছেন , “খ্রীষ্টের সেবক’’ হলেন “ঈশ্বরের নিগূঢ়তত্ত্ব রূপ ধনের অধ্যক্ষ;’’ এবং তাদের কাজ সম্পর্কে তিনি বলেছেন: “ধনাধ্যক্ষের এই গুন চাই , যেন তাহাকে বিশ্বস্ত দেখিতে পাওয়া যায় । কিন্তু তোমাদের দ্বারা কিম্বা মানুষিক বিচার—দিনের সভা দ্বারা যে আমার বিচার হয় , ইহা আমার মতে অতি ক্ষুদ্র বিষয়; এমন কি , আমি আমার নিজেরও বিচার করি না । কারণ আমি আমার নিজের বিরুদ্ধে কিছু জানি না , তথাপি ইহাতে আমি নির্দোষ বলিয়া প্রতিপন্ন হইতেছি না; কিন্তু যিনি আমার বিচার করেন , তিনি প্রভু । অতএব তোমরা সময়ের পূর্বে , যে পর্যন্ত প্রভু না আইসেন , সেই পর্যন্ত কোন বিচার করিও না; তিনি অন্ধকারের গুপ্ত বিষয় সকল দিপ্তিতে আনিবেন , এবং হৃদয়সমূহের মন্ত্রণা সকল প্রকাশ করিবেন; আর তৎ্কালে প্রত্যেক জন ঈশর হইতে আপন আপন প্রশংসা পাইবে । ‘’১ করিন্থীয় ৪:১—৫। AABen 231.1

কোন মানুষকে ঈশ্বরের কোন পরিচর্যাকারীর বিচার করার দায়িত্ব দেওয়া হয়নি । একমাত্র প্রভুই মানুষের কাজের বিচার করতে পারেন এবং তিনি প্রত্যেককে তার কাজ অনুসারে প্রতিফল দেবেন । AABen 231.2

এরপর প্রেরিত পৌল সরাসরি তাঁর ও আপল্লোর কাজের মধ্যে যে তুলনা করা হচ্ছিল সে প্রসঙ্গে কথা বললেন: “হে ভ্রাতৃগণ , আমি আপনার ও আপল্লোর উদাহরণ দিয়া তোমাদের নিমিত্তে এইসকল কথা কহিলাম; যেন আমাদের দ্বারা তোমরা এই শিক্ষা পাও যে , যাহা লিখিত আছে , তাহা অতিক্রম করিতে নাই , তোমরা কেহ যেন এক জনের পক্ষে অন্য জনের বিপক্ষে গর্ব না কর । কেননা কে তোমাকে বিশিষ্ট করে? আর যাহা না পাইয়াছ , এমনই বা তোমার কি আছে? আর যখন পাইয়াছ , তখন যেন পাও নাই এইরূপ শ্লাঘা কেন করিতেছ?’’ ৬ , ৭ পদ । AABen 231.3

তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা খ্রীষ্টের পক্ষে পরিচর্যা কাজ করতে গিয়ে যে সকল কষ্ট ও নির্যাতন সহ্য করেছেন সে বিষয়ে তিনি মণ্ডলীকে স্পষ্ট ভাষায় বললেন । “এখনকার এই দণ্ড পর্যন্ত , “তিনি দ্ব্যর্থ কণ্ঠে বললেন , “আমরা ক্ষুধার্ত , তৃষ্ণার্ত ও বস্ত্রহীন রহিয়াছি , আর মুষ্টাঘাতে আহত হইতেছি , ও অস্থির—বাস রহিয়াছি; এবং স্বহস্তে কার্য করিয়া পরিশ্রম করিতেছি; নিন্দিত হইতে হইতে আশীর্বাদ করিতেছি , তাড়িত হইতে হইতে সহ্য করিতেছি , অপবাদিত হইতে হইতে বিনয় করিতেছি অদ্য পর্যন্ত আমরা যেন জগতের আবর্জনা , সকল বস্তুর জঞ্জাল হইয়া রহিয়াছি । আমি তোমাদিগকে লজ্জা দিবার জন্য নয় , কিন্তু আমার প্রিয় বৎস বলিয়া তোমাদিগকে চেতনা দিবার জন্য এই সকল লিখিতেছি । কেননা যদিও খ্রীষ্টে তোমাদের দশ সহস্র পরিপালক থাকে , তথাচ পিতা অনেক নয়; কারণ খ্রীষ্ট যীশুতে সুসমাচার দ্বারা আমিই তোমাদিগকে জন্ম দিয়াছি ।’’ ১১—১৫ পদ । AABen 232.1

যিনি সুসমাচারের পরির্চযাকারীদেরকে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করেন তিনি অপমানিত হন , যখন তিনি সুসমাচারের শ্রোতাদের মধ্যে কোন একজন পরিচর্যাকারীর প্রতি বিশেষ অনুরাগ পোষণ করতে এবং ভিন্ন কোন পরিচর্যাকারীর শ্রমকে অবজ্ঞা করতে দেখেন । প্রভু তাঁর লোকদেরকে কাছে সহায় প্রেরণ করেন , যারা হয়তো সবসময় তাদের পছন্দমত হয় না , কিন্তু তাকে অবশ্যই লোকদের প্রয়োজন আছে; কারণ মানুষের মাঝে দূরদৃষ্টি নেই এবং তাদের জন্য সবচেয়ে ভাল কী সেটা তারা বুঝতে পারে না । একটি মণ্ডলীতে খ্রীষ্টত্বে্র সমস্ত গুণাবলী দিয়ে পরিপূর্ণ করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল যোগ্যতা বা গুণ একজন পরিচর্যাকারীর মধ্যে পাওয়া অধিকাংশ সময়ই দুষ্কর; এ কারণে ঈশ্বর অনেক সময় তাদের কাছে ভিন্ন পরিচর্যাকারীদেরও পাঠান , যাদেরহয়তো সেই গুণগুলো আছে যা অন্যদের নেই বা ঘাটতি আছে । AABen 232.2

মণ্ডলী যেভাবে প্রধান কার্যকারীকে গ্রহণ করেছে সেভাবে তিনি তাঁর যে সকল সহকার্যকারীকে তাদের কাছে প্রেরণ করেন তাদের প্রত্যেককেই তাদের গ্রহণ করা উচিত । ঈশ্বরের পরিচর্যাকারীরা যে সত্য উপস্থাপন করেন তা নম্রতায় গ্রহণ ও প্রশংসা করা উচিত , কিন্তু কোন পরিচর্যাকারীকেই পূজনীয় বলে গণ্য করা উচিত নয় । AABen 232.3

খ্রীষ্টের অনুগ্রহের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের পরিচর্যাকারীগণ জ্যোতি ও আশীর্বাদের দূত হয়ে উঠেছেন । ঐকান্তিক ও দীর্ঘসহিষ্ণু প্রার্থনার মধ্য দিয়ে তারা পবিত্র আত্মার অভিষেক গ্রহণ করেছেন এবং আত্মার জয়ের ভার বহন করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছেন ।ক্রুশের বিজয় সংবাদ চারদিকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তাদের হৃদয়আন্দোলিতহচ্ছেএবংতাদেরকাজেরসুফলতারাঅবশ্যইদেখতেপাবেন । মানবীয়কোনধরনেরজ্ঞানেরপ্রকাশ না ঘটিয়ে এবং নিজেকে উচ্চীকৃত করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা পোষণ না করে তারা শয়তানের আক্রমণ প্রতিরোধ করার মত শক্তিশালী এক কার্য সাধন করেছেন । অনেক আত্মা অন্ধকার থেকে আলোয় ফিরে আসবে এবং অনেক মণ্ডলী স্থাপিত হবে । মানুষ মন পরিবর্তন করবে , কিন্তু মানবীয় প্রচেষ্টার কারণে নয় , বরং খ্রীষ্টের রক্তের গুণে । আমিত্বকে পেছনে রাখা হবে; সামনে প্রকাশ পাবেন কেবলমাত্র যীশু , কালভেরীর বিজয়ী বীর । AABen 233.1

আজ যারা খ্রীষ্টের জন্য কাজ করছেন তারাও প্রৈরিতিক যুগের পরিচর্যাকারীদের মতই সুসমাচার প্রচারে একই রকম যোগ্যতা ও সাফল্যের পরিচয় দিতে পারেন । পৌল ও আপল্লো , সীল ও তিমথি , পিতর , যাকোব ও যোহনকে ঈশ্বর যে ক্ষমতা দিয়েছিলেন সেই একই ক্ষমতা তিনি আজ তাঁর যে কোন পরিচর্যাকারীকে দেওয়ারজন্য ইচ্ছুক । AABen 233.2

প্রৈরিতিক যুগের এমন কয়েকটি বিপথগামী আত্মা ছিল যারা নিজেদেরকে খ্রীষ্টের বিশ্বাসী বলে দাবি করত ঠিকই , অথচ তাঁর পরিচর্যাকারীদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে অস্বীকৃতি জানাত । তারা এই ঘোষণা করেছিল যা , তারা কোন মানুষের কাছে শিক্ষা পায়নি বরং সুসমাচারের পরির্যাকারীদের কোন ধরনের সাহায্য না নিয়ে তারা সরাসরি খ্রীষ্টের কাছ থেকে দীক্ষা লাভ করেছে । তারা নিজেদেরকে স্বাধীন আত্মা বলে পরিচয় দিত এবং মণ্ডলীর অধীনস্থ হতে অস্বীকৃতি জানাত । এ ধরনের মানুষেরা আসলে দারুনভাবে প্রচঞ্চনার শিকার । AABen 233.3

ঈশ্বর তাঁর মণ্ডলীতে বিভিন্ন তালন্ত ও ক্ষমতাবিশিষ্ট পরিচর্যাকারীদের স্থাপন করেছেন যেন তাদের একীভূত জ্ঞানের মধ্য দিয়ে অনেকের অন্তর পবিত্র আত্মার সংর্স্পশে আসতে পারে । যে সমস্ত মানুষ নিজস্ব মানবীয় চরিত্রের অপরিবর্তনীয় বৈশিষ্ট্য অনুসারেই চালিত হয় তারা সেই সব মানুষের সাথে একত্রে ভার বহন করতে অসম্মত হয় , যাদের ঈশ্বরের পক্ষে পরিচর্যা কাজের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে । ফলে তারা আত্নবিশ্বাসে অন্ধ হয়ে ওঠে এবং সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না । এ ধরনের মানুষদেরকে মণ্ডলীর নেতা হিসেবে বেছে নেওয়া একেবারে নিরাপদ নয়; কারণ তারা নিজেদের বিচার বুদ্ধি অনুসারে চলে এবং অপর বিশ্বাসী ভাইদের বিচার বিবেচনাকে একেবারেই আমলে নেয় না । যাদের নিজেদেরই প্রতি মুহূর্তে পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত তারা যখন খ্রীষ্টের নম্রতা থেকে শিক্ষা না নিয়ে নিজেদের ক্ষমতায় বিশ্বসীদের আত্মার অভিবাকত্ব গ্রহণ করতে যার তখন তাদের মধ্য দিয়ে বিপক্ষতার কাজ করার পথ সুগম হয় । AABen 233.4

শুধুমাত্র প্রভাব খাটিয়ে দায়িত্ব পালন করা যায় না । বিপক্ষ অনেক সময় মানুষকে এ কথা বিশ্বাস করায় যে , ঈশ্বর তাদেরকে পরিচালনা দিচ্ছেন , অথচ বাস্তবে তারা কেবল মানবীয় প্ররোচণা অনুসারে চালিত হচ্ছে । কিন্তু যদি আমরা সতর্কতার সাথে লক্ষ করি এবং বিশ্বাসী ভাইদের পরামর্শ গ্রহণ করি তাহলে আমরা ঈশ্বরের ইচ্ছা উপলব্ধি করতে পারব; কারণ তিনি আমাদেরকে প্রতিজ্ঞা করে বলেছেন , “তিনি নম্রদিগকে ন্যায় বিচারের সাথে চালান , নম্রদিগকে আপন পথ দেখাইয়া দেন ।’’ গীতসংহিতা ২৫:৯ । AABen 234.1

আদি খ্রীষ্টের মণ্ডলীতে এমন অনেকেই ছিল যারা পৌল বা আপল্লো কাউকে মানত না , বরং পিতরকে তাদের নেতা হিসেবে বিবেচনা করত । তারা বিশ্বাস করত খ্রীষ্ট যখন এই পৃথিবিতে বিচরণ করেছেন সে সময় পিতরই প্রভুর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ শিষ্য ছিল , অন্য দিকে পৌল ছিলেন বিশ্বাসীদের উপর নির্যাতনকারী । তাদের এই চিন্তাধারা এবং অনুভূতি ছিল একান্তভাবে মানবীয় আবেগতাড়িত । তাদের মধ্যে উদারচিত্ততা , বদান্যতা বা সুবিবেচনার লেশমাত্র ছিল না , যা খ্রীষ্টের অন্তরে বিরাজ করত । AABen 234.2

দলভেদের এই আত্মার কারণে খ্রীষ্টিয় মণ্ডলীতে এক দারুন অমঙ্গল ঘটার আশঙ্কা ছিল এবং সে কারণে পৌলকে প্রভু আদেশ দিলেন যেন তিনি এ ব্যাপারে মণ্ডলীকে সতর্ক করেন ও দ্ব্যর্থ কণ্ঠে প্রতিবাদ করেন । যারা বলত , “আমি পৌলের,আমিআপল্লোর ,আর আমি কৈফার , আর আমি খ্রীষ্টের ,’’ তাদেরকে প্রেরিত পৌল জিজ্ঞসা করেছেন , “খ্রীষ্ট কই বিভক্ত হইয়াছেন? পৌল কি তোমাদের নিমিত্ত ক্রুশে হত হইয়াছে? অথবা পৌলের নামে কি তোমার বাপ্তাইজিত হইয়াছ?’’ “অতএব কেহ মনুষ্যের শ্লাঘা না করুক ,’’ তিনি তাদের কাছে আবেদন জানিয়েছেন , “কেননা সকলই তোমাদের ; পৌল, কি আপ্ললো , কি কৈফা , কি জগৎ , কি জীবন , কি মরণ , কি উপস্থিত বিষয় , কি ভবিষ্যৎ বিষয় , সকলই তোমাদের; আর তোমরা খ্রীষ্টের , ও খ্রীষ্ট ঈশ্বরের ।’’ ১ করিন্থীয় ১:১২, ১৩; ৩:২১—২৩ । AABen 234.3

পৌল ও আপল্লোর মধ্যে দারুন সুসম্পর্ক ছিল । করিন্থীয় মণ্ডলীর অবনতির কারণে আপল্লোর দারুণভাবে হতাশ ও দুঃখার্ত হয়েছিলেন । তিনি কখনোই নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের চেষ্টা করেননি , বা অন্যদের তা প্রকাশের জন্য উৎসাহিতও করেননি , বরং তিনি বিবাদ থেকে দ্রুত নিজেকে সরিয়ে এনেছেন । পৌল যখন পরবর্তীতে তাকে পুনরায় করিন্থ প্রদর্শনের জন্য অনুরোধ করেন , তখন তিনি অসম্মতি জানান এবং যতদিন না করিন্থ মণ্ডলী আত্তিকভাবে ভাল একটি অবস্থানে এসে পৌঁছাবে ততদিন তিনি সেখানে পরিচর্যা কাজ করবেন না বলে জানালেন। AABen 235.1