মণ্ডলীর জন্য উপদেশ

66/327

মণ্ডলীর মধ্যে অনৈক্য

বিভিন্ন মণ্ডলীর ভ্রাতৃগণকে লইয়া যিরুশালেমে যে একটী বিশেষ সভা আহূত হইয়াছিল, আন্তিয়খিয়া হইতে প্রতিনিধিগণ আসিয়া সেই সভায় যোগদান করিয়া পরজাতিগণের মধ্যে প্রচার কার্য্যে ঈশ্বর তাঁহা-দিগকে কিরূপ সুফল দান করিয়াছেন, তাহা বর্ণনা করিলেন এবং পরিত্রাণ পাইবার নিমিত্তে পরজাতী খ্রীষ্টীয়ানগণের ছিন্নত্বক্ হইতে ও মোশির বিধান পালন করিতে হইবে, কয়েকজন খ্রীষ্টীয়ান ফরীশী আন্তিয়খিয়ার গিয়া এই কথা প্রচার করায় যে গণ্ডগোল উপস্থিত হইয়াছিল, তাহাও সুস্পষ্টরুপে জানাইলেন । তাহাতে সভাস্থ সকলে আগ্রহ সহকারে এই বিষয় আলোচনার প্রবৃত্ত হইলেন । CCh 206.1

পরজাতীয় খ্রীষ্টীয়ানগণের উপরে জাজ্ঞিক-বিধি আরোপ করা পবিত্র আত্মার বিহিত বোধ হইল না ; আর এই বিষয় লইয়া পবিত্র আত্মার মনে যেরূপ, প্রেরিতগণের মনেও ঠিক্ সেইরুপ ভাবের উদায় হইল । যাকোব এই মহাসভায় সভাপতিত্ব করিয়া নিম্নলিখিত বাক্যে তাঁহার শেষ সিদ্ধান্ত জ্ঞাপন করিলেন— “আমার বিচার এই, পরজাতিগণের মধ্যে যাহারা ঈশ্বরের প্রতি ফিরে, তাহাদিগকে আমরা কষ্ট দিব না ।” আর এই ঘোষণার পরেই উক্ত আলোচনার নিবৃত্তি ঘটে । CCh 206.2

উক্ত ঘটনায় ইহাই প্রতীয়মান হই যে, মহা-সভা যে সিদ্ধান্তে উপনীত হইয়াছিল, তাহা ঘোষণা করিবার নিমিত্ত যাকোবকেই মনোনীত করা হইয়াছিল । খ্রীষ্টধর্ম্মের বিরুদ্ধ-ভাবাপন্ন যে সকল রীতিনীতি ছিল, পরজাতী খ্রীষ্টীয়ানদিগকে সেগুলি ত্যাগ করিতে বলা হইয়াছিল । প্রেরিতগণ ও প্রাচীনবর্গ পরজাতীদিগকে পত্র দ্বারা জানাইয়া দিলেন, যেন তাহারা প্রতিমার প্রসাদ, ব্যভিচার, গলা টিপিয়া মারা প্রাণীর মাংস এবং রক্ত— এই সকল হইতে পৃথক্ থাকে । তাহাদিগকে বিশেষ ভাবে বলা হইছিল, যেন তাহারা আজ্ঞা সকল পালন করে ও পবিত্র জীবন যাপন করে । তাহাদিগকে ইহাও জানাইয়া আশ্বস্ত করা হইয়াছিল যে, প্রেরিতগণ যাহদিগকে কোন আজ্ঞা দেন নাই, এমন কোন কোন ব্যক্তি গিয়া ছিন্নত্বক হইবার বিষয় ঘোষণা করিয়াছিল ।6 CCh 206.3

যে মহা-সভায় এই গুরুতর বিষয় মীমাংসা হইয়াছিল, তাহা প্রেরিতগণকে, যিহূদি ও পরজাতী খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী-গঠনকারী নামজাদা শিক্ষকগণকে, এবং বিভিন্ন স্থানের মনোনীত প্রতিনিধিগণকে লইয়া গঠিত হইয়াছিল । যিরুশালেমের প্রাচীনবর্গ, আন্তিয়াখিয়ার প্রতিনিধিগণ, এবং বিশেষ প্রতিপত্তিশালী মণ্ডলীসমূহের সভ্যগণও উপস্থিত ছিলেন । মহাসভাটী জ্ঞানগর্ভ বিচারানুযায়ী ও ঈশ্বরের ইচ্ছানুযায়ী-স্থাপিত মণ্ডলীর মর্যাদানুযায়ী, এই সকল সিদ্ধান্তে উপনীত হইয়াছিলেন । তাঁহাদের সুচিন্তার ফল স্বরূপ তাঁহারা সকলেই দেখিতে পাইলেন যে, পরজাতিগণের উপরে পবিত্র আত্মা বর্ষণ করিয়া ঈশ্বর নিজেই এই সমস্যার সমাধান করিয়াছেন । আর তাঁহারা হৃদয়ঈম করিতে পারিলেন যে, পবিত্র আত্মার ইচ্ছানুযায়ীই তাহাদের চলা আবশ্যক । CCh 207.1

এই বিষয়ে মত প্রকাশ করিবার জন্য সমুদয় খ্রীষ্টীয়ানকে ডাকা হই নাই । “প্রেরিতগণ ও প্রাচীনবর্গ”, প্রভাবশালী ও বিচক্ষন ব্যক্তিগণ এই সিদ্ধান্তে জারী করিয়াছিলেন, আর ইহা সাধারনতঃ খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীগণ কর্ত্তৃক গৃহীত হইয়াছিল । এই সিদ্ধিন্তে যে সকলেই সন্তুষ্ট হইয়াছিল, এমনও নহে ; কারন তথায় এমন উচ্চভিলাষী ও আত্ম-প্রত্যয়ী লোক ছিল, যাহারা ইহাতে অসম্মত ছিল । এই সকল লোক নিজের দায়িত্বে কর্মরত ছিল । তাহারা অন্যের খুঁত ধরায় ও তিক্তবচসায় এবং নূতন নূতন পরিকল্পনার তৎপর ছিল । সুসমাচার বার্তা শিক্ষা দিবার নিমিত্ত ঈশ্বর যাঁহাদিগকে নিযুক্ত করিয়াছিলেন, তাঁহাদের কর্ম্ম ভাঙ্গিয়া ফেলিবার জন্য তাহারা সর্ব্বদা সচেষ্ট ছিল । প্রথম হইতেই এই সকল বাধা বিপত্তির মধ্য দিয়া মণ্ডলীর যাইতে হইতেছে, এবং শেষ পর্য্যন্ত এইরূপই যাইতে হইবে ।7 CCh 207.2