মণ্ডলীর জন্য উপদেশ
ঈশ্বরের সহকার্য্যকারী হইবার সুযোগ
তাঁহার কার্য্য পরিচালনার নিমিত্ত তিনি মানবের উপরে নির্ভর করেন না। তাঁহার ধনকোষে তিনি সোজাই স্বর্গ হইতে অর্থ প্রেরণ করিতে পারিতেন, যদি তিনি স্বীয় পরিণামদর্শিতাগুনে দেখিতে পাইতেন যে, ইহা করা মানবের পক্ষে সর্ব্বোত্তম। মানবের সাহায্য না লইয়াও, তিনি এমন উপায়রাশি উদ্ভাবন করিতে পারিতেন, যদ্দ্বারা তিনি দুতগণকে পাঠাইয়া জগতের কাছে তাঁহার সত্য প্রচার করিতে পারিতেন। জগতের নিকট তাঁহার দাবী দাওয়া ঘোষণার নিমিত্ত আকাশমন্ডলে জ্বলন্ত অক্ষরে সত্য লিখিয়া দিতে পারিতেন। ঈশ্বর, কোন মানবের স্বর্ণ কিংবা রৌপ্যের উপরে নির্ভরশীল নহেন। তিনি বলেনঃ- “বনের সমস্ত জন্তু আমার, সহস্র পর্ব্বতীয় পশু আমার।” আমি ক্ষুধিত হইলে তোমাকে বলিব না, কেননা জগৎ ও তাঁহার সমস্তই আমার।” গীত ৫০ঃ ১০, ১২। ঈশ্বরের কার্য্যের শ্রীবৃদ্ধির জন্য আমাদের দ্বারা যাহা কিছু সাহায্যের প্রয়োজন হয়, তাহা তিনি স্বইচ্ছায় আমাদের মঙ্গলের জন্যই বন্দোবস্ত করিয়াছেন। তাঁহার সহিত সহকার্য্যকারী করিয়া তিনি আমাদিগকে সম্মানিত করিয়াছেন। মানবগণ যেন তাঁহাদের দানশীলতার অভ্যাস বজায় রাখিতে পারে, তজ্জন্য ঈশ্বরের সহিত মানবের সহযোগিতা রক্ষা করা আবশ্যক, ইহা ঈশ্বর নির্দ্দিষ্ট বিধান। CCh 146.2
বিশ্রামবার পালনের জন্য যে নৈতিক বিধি দত্ত হইয়াছিল, তাহা লঙ্ঘনহেতু লোকেরা শাস্তি ভোগ করিতে বাধ্য হইত; এতদ্ব্যতীত ঐ ব্যবস্থা বোঝাস্বরূপ হইত না। ইব্রীয়গনের উপরে যে প্রথা প্রবর্ত্তিত হইয়াছিল, প্রবর্ত্তকের দ্বারা তাহা বাতিল কিংবা শিথিল করা হয় নাই । একমাত্র খ্রীষ্টের দ্বারা মুক্তি, খ্রীষ্টীয় যুগে ইহা যেমন অধিকতর পূর্ণমাত্রায় লোকে বুঝিতে পারিবে, এক্ষনে দশমাংশ দানের বিধিও তেমনি, নিঃশক্তি হইবার পরিবর্ত্তে, অধিকতর পূর্ণমাত্রায় পালিত ও বিস্তৃত হইবে। CCh 147.1
খ্রীষ্টের মৃত্যুর পর সুসমাচার বিস্তৃতির ও উহা প্রসারের জন্য অধিকতর উপকরনের আবশ্যকতা হইয়া পড়িয়াছে, এই জন্যই ইব্রীয় শাসনকালে যেমন দানের ব্যবস্থার আবশ্যকতা ছিল, এক্ষনে তদপেক্ষা অধিকতর জরুরী আবশ্যকতা দেখা দিয়াছে। জগতের অন্যান্য যুগে যেমন, এক্ষনে ঈশ্বর তদপেক্ষা কম দান চাহেন না, কিন্তু অধিকতর মাত্রায় চাহেন। আমরা যে পরিমাণে দান করিতে ও উপহার, দিতে হইবে, ইহাই খ্রীষ্টের মূলনীতি। তিনি বলিয়াছেনঃ- “যে কোন ব্যক্তিকে অধিক দত্ত হইয়াছে, তাঁহার নিকট অধিক দাবী করা যাইবে।” লূক ১২ঃ৪৮।11 CCh 147.2
ঈশ্বরের বাক্য হইতে জ্যোতি-প্রবাহ নির্গত হইতেছে, সুতরাং উপেক্ষিত সুযোগগুলির সদ্ব্যবহারের জন্য জাগরিত হইতে হইবে। দশমাংশ ও উপহার দানে সকলে যখন বিশ্বস্তভাবে ঈশ্বরের প্রাপ্য ঈশ্বরকে প্রত্যর্পণ করিবে, তখন বর্ত্তমান সত্য শ্রবণের পথ জগতের জন্য উম্মুক্ত হইবে। ঈশ্বরের প্রজাবৃন্দের হৃদয়গুলি যদি খ্রীষ্টের প্রেমে পূর্ণ হইত, মণ্ডলীর প্রত্যেক সভ্য যদি ত্যাগ স্বীকারের আত্মায় সম্পূর্ণরূপে সিক্ত হইত, যদি সকলেই পূর্ণ উদ্যম প্রদর্শন করিত, তাহা হইলে, দেশে কিংবা বিদেশে মিশন কার্য্যের জন্য অর্থের অভাব হইত না। আমাদের বৈভব বহুগুনে বৃদ্ধি পাইত, সুবিধার সহস্র সহস্র দ্বার উন্মুক্ত হইত, এবং আমরা প্রবেশের জন্য নিমন্ত্রন পাইতাম। তাঁহার লোকেরা জগৎকে অনুগ্রহের বার্ত্তা দান করিবে, ঈশ্বরের এই মহৎ উদ্দেশ্য যদি কার্য্যে পরিণত হইত, তবে ইহার বহু পুর্ব্বেই খ্রীষ্ট এই পৃথিবীতে পুরাগমন করিতেন এবং সাধুবৃন্দ ইতঃপুর্ব্বেই ঈশ্বরের নগরে প্রবেশ করিতে পারিতেন।12 CCh 147.3