মণ্ডলীর জন্য উপদেশ
দশমাংশ দান ঈশ্বর নিরূপিত বিধি
দশমাংশ অ স্বেচ্ছাদত্ত উপহারি সুসমাচারের আয়। মানবকে যে ধন-সম্পত্তি দেওয়া হইয়াছে, তাহার একটী অংশ অর্থাৎ দশমাংশ, ঈশ্বর নিজের বলিয়া দাবি করেন।7 CCh 144.1
আমাদের উপরে ঈশ্বরের যে দাবি, তন্মাধ্যে অন্যান্য সকল দাবিই জরিত রহিয়াছে, ইহা যেন সকলের স্মরণে থাকে। তিনি আমাদিগকে বদান্যতা সহকারে দিয়া থাকেন এবং তিনি মানবের সহিত এই নিয়ম করিয়াছেন যে, মানবের অধিকার ভুক্ত সমস্ত কিছুরই দশ ভাগের একভাগ ঈশ্বরের। সদাপ্রভু দয়াপরবশ হইয়া তাঁহার ধনাধ্যক্ষদিগের হস্তে তাঁহার ধনসম্পত্তি গচ্ছিত রাখেন, কিন্তু দশমাংশ সম্বন্ধে তিনি বলেনঃ- উহা আমার। ঈশ্বর মানবকে যে অনুপাতে তাঁহার ধন-সম্পত্তি দিয়াছেন, ঠিক্ সেই অনুপাতে তাহার বিষয়-বস্তুর অবিকল দশমাংশ ঈশ্বরকে ফিরাইয়া দেওয়া মানবের অবশ্য কর্ত্তব্য। এই সুনির্দ্দিষ্ট বন্দোবস্তটী স্বয়ং যীশু খ্রীষ্টই করিয়াছেন।8 CCh 144.2
বর্ত্তমান সত্য জগতের পাপান্ধকার-ময় স্থানে লইয়া যাইতেই হইবে; আর এই কার্য্যটী প্রথমে নিজ গৃহেই আরম্ভ হইতে পারে। খ্রীষ্টের অনুগামীবর্গের স্বার্থপর জীবন যাপন করা কর্ত্তব্য নহে; কিন্তু খ্রীষ্টের আত্মার অনুপ্রাণিত হইয়া তাঁহার সহিত ঐক্য রক্ষা করিয়া কার্য্য করা কর্ত্তব্য।9 CCh 144.3
যে মহৎ কার্য্য সম্পাদনার্থ যীশু এই পৃথিবীতে অবতীর্ণ হইয়াছেলেন, বলিয়া ঘোষণা করেন, তাহা পরিসমাপ্তির দায়িত্ব ভার তাঁহার অনুগামি-গণের উপর অর্পিত হইয়াছিল। এই মহৎ কার্য্যটীকে স্বাবলম্বী করিয়া তুলিবার জন্য তিনি তাঁহারা লোকদিগকে পর্য্যাপ্ত অর্থ সংগ্রহের একটী পরিকল্পনা দান করিয়াছিলেন। দশমাংশ সম্বন্ধে ঈশ্বরের এই পরিকল্পনাটি যেমন অতি সরল অ সোজা, তেমনি সুন্দর সাম্যভাবাপন্ন। সকলেই বিশ্বাসে অ সাহসে ভর করিয়া ইহা গ্রহণ করিতে পারে, কারণ ইহার উৎপত্তি ঈশ্বর হইতে। ইহার মধ্যে সরলতা ও উপকারিতা জড়িত রহিয়াছে এবং ইহা বুঝিতে কিংবা কার্য্যে খাটাইতে বহু বিদ্যার প্রয়োজন হয় না। সকলেই হৃদয়ঙ্গম করিতে পারে যে, পরিত্রাণের বহুমূল্য কার্য্য সম্পাদনার্থ তাঁহারা অংশ গ্রহণ করিতে পারে। প্রত্যেক নরনারী ও যুবকযুবতী সদাপ্রভুর জন্য এক একটি কোষাধ্যক্ষ হইতে পারে এবং ধনকোষের উপরে দাবি দাওয়া গ্রহণের জন্য একটী প্রতিনিধি হইতে পারে। প্রেরিত পৌল বলেনঃ- “তোমরা প্রত্যেকা আপনাদের নিকটে কিছু কিছু রাখিয়া আপন আপন সঙ্গতি অনুসারে অর্থ সঞ্চয় কর।” ১ করিন্থীয় ১৬:২। CCh 145.1
এই প্রথা দ্বারা মহৎ মহৎ উদ্দেশ্য সাধিত হইতেছ। প্রত্যেক ব্যক্তিই যদি এই প্রথার অনুসরণ করিত, তাহা হইলে প্রত্যেকেই ঈশ্বরের এক এক জন সর্তক ও বিশ্বস্ত কোষাধ্যক্ষ হইতে পারিত, এবং জগৎকে শেষ চেতনাবাণী প্রদানের মহৎ কার্য্যটী পরিচালিত করিবার জন্য অর্থের কোনই অকুলান হইত না। সকলেই এই প্রথার অনুসরণ করিলে ধনভাণ্ডার পূর্ণ হইয়া যাইবে এবং দাতারাও আর দরিদ্র থাকিবে না। অর্থের প্রত্যেকটী বিনিয়োগের ফলে বর্ত্তমান সত্যে বিস্তার কার্য্যে তাহারা অধিকতর দৃঢ়রূপে সংযুক্ত হইবে। “এইরূপে তাহারা আপনাদের নিমিত্ত ভাবীকালের জন্য উত্তম ভিত্তিমূলস্বরূপ নিধি প্রস্তুত” করিবে, “যেন যাহা প্রকৃতরূপে জীবন, তাহাই ধরিয়া রাখিতে পারে।” ১ তীম-থিয় ৬ঃ ১৯। CCh 145.2
অধ্যবসায়ী ও সুব্যবস্থিত কার্য্যকারিগণ যখন দেখিতে পাইবে যে, তাঁহাদের দানশীলতা — কার্য্যের মূলে রহিয়াছে, ঈশ্বরের ও সহমানবের প্রতি প্রেম পোষণ, এবং তাঁহাদের ব্যক্তিগত কার্য্য, তাঁহাদের প্রয়োজনীয়তার কার্য্যক্ষেত্র প্রসারিত করিতিছে, তখন তাঁহারা হৃদয়ঙ্গম করিবে যে, খ্রীষ্টের সহকার্য্যকারী হওয়া একটী মহা আশীর্ব্বাদের বিষয়। যে নৈতিক অন্ধকার জগৎকে সমাচ্ছন্ন করিয়াছে, তাঁহার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিবার জন্য সাহায্য — দানার্থ খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী সাধারণতঃ আপনাদের ধনসম্পত্তি দান করিতে অস্বীকার করে। খ্রীষ্টের অনুগামীবর্গ যে পর্য্যন্ত না কার্য্য তৎতর ও উদ্যোগী কার্য্যকারী হন, তাবৎ ঈশ্বরের কার্য্য যেরূপ অগ্রসর হওয়া উচিত, সেরূপ অগ্রসর হইতে পারেনা।10 CCh 146.1