মণ্ডলীর জন্য উপদেশ
ঈশ্বর যে সম্পদ দান করেন, তাহার দশ ভাগের এক ভাগ তিনি চাহেন
দশমাংশ দানের বিধি আমাদিগকে মোশির সময়ে লইয়া যায়। মোশির নিকটে নির্দ্দিষ্ট বিধি দিবার পুর্ব্বে এমন কি আদমের সময় হইতে, ঈশ্বর মানবকে ধর্ম্মের উদ্দেশে দান করিতে আদেশ দিয়াছিলেন। ঈশ্বরের আদেশ পালনার্থে উপহারাদি দান করিয়া তাঁহারা দেখাইতেন যে, তাঁহাদের প্রতি ঈশ্বরের অনুগ্রহ ও আশীর্ব্বাদরাশির জন্য তাঁহারা তাঁহার নিকট কৃতজ্ঞ। আদমের সময় হইতে বংশ পরম্পরায় এইরূপ চলিয়া আসিতেছিল বলিয়া অব্রাহামও সেইরূপ করিয়াছিলেন। তিনি পরাৎপরের যাজক মক্লীষেদককে দশমাংশ দান করিয়াছিলেন। ইয়োবের সময়েও ঐ বিধি প্রবর্ত্তিত ছিল। কর্পদ্দকহীন পলাতক যাকোব যখন বৈথেলে একাকী এক নিজর্জন স্থানে, প্রস্তর মস্তকে দিয়া রাত্রিকালে শায়িত ছিলেন, তখন তিনি প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলেনঃ- “তুমি আমাকে যে কিছু দিবে, তাহার দশমাংশ আমি তোমাকে দিব।” আদি ২৮ঃ২২ । দান করিবার জন্য ঈশ্বর কাহারও প্রতি জোর জুলুম করেন না। যাহা কিছু দান করা হয়, তাহা স্বেচ্ছায় করিতে হইবে। অনিচ্ছাকৃত উপহারের দ্বারা তিনি তাঁহার ধন-ভাণ্ডার পূর্ণ করিতে চাহেন না। CCh 148.1
কি পরিমানে দান করিতে হইবে তৎসম্বন্ধে ঈশ্বর বলিয়াছেন, - আয়ের দশ ভাগের এক ভাগ। দশমাংশ দান মানুষের বিবেক ও বদান্যতার উপরে নির্ভর করে ; মানুষ নিজের স্বাধীন বিচার-শক্তি দ্বারা পরিচালিত হইয়া এই বিধি পালন করিতে পারে। এই সম্বন্ধে সকলে স্বাধীন হইলেও, সকলের নিমিত্ত একটী নির্দ্দিষ্ট পরিকল্পনা রহিয়াছে। কিন্তু ইহাতে কোন জোর জবরদস্তি নাই। CCh 149.1
মোশির নিকটে ঈশ্বর যে বিধি দিয়াছিলেন, তাহাতে তিনি আয়ের দশ ভাগের এক ভাগ তাঁহার উদ্দেশে দান করিতে আদেশ দিয়াছিলেন। ঈশ্বর ইস্রায়েলদিগকে এই জীবনের সমস্ত প্রয়োজনীয় দ্রব্য দান করিয়াছিলেন এবং তালন্তগুলির উৎকর্ষ সাধন করিয়া তাঁহাকে প্রত্যার্পণ করিতে আদেশ দিয়াছিলেন। তিনি আয়ের দশ ভাগের এক ভাগ দআবী করিয়াছিলেন, আর ইহা তাঁহাকে ফিরাইয়া দেওয়া তাহাদের পক্ষে অতি ক্ষুদ্র কার্য্যই ছিল। তিনি বলেনঃ- “আমি তোমাদিগকে দশ ভাগের নয় ভাগ দিতেছি, মাত্র এক ভাগ তোমাদের নিকটে চাহিতেছি, উহা আমার। দশ ভাগের এই এক ভাগ ঈশ্বরকে না দিলে, লোকেরা ঈশ্বরকে ঠকায়। ঈশ্বর যেমন আয়ের দশ ভাগের এক ভাগ দাবী করিয়াছিলেন, তেমনি দোষার্থক উপহার, মঙ্গলার্থক উপহার ও ধনবাদের উপহারও দাবী করিয়াছিলেন। CCh 149.2
ঈশ্বরের দাবিকৃত দশমাংশ যাহারা ঈশ্বরকে না দেয়, স্বর্গীয় বিবরণ পুস্তকে তাহাদের বিপক্ষে উহা চুরি বলিয়া লেখা হইয়া থাকে। আর এইরূপে তাহারা সৃষ্টিকর্ত্তাকে প্রতারিত করিয়া থাকে ; এবং এই অবহেলা-জনিত পাপটী যখন তাহাদিগকে দেখাইয়া দেওয়া হয়, তখন ঐ পথ হইতে কেবল প্রত্যাবর্ত্তন করা এবং ঐ সময় হইতে বিধিমতে চলিতে আরম্ভ করাই যথেষ্ট নহে। কারণ ফিরাইয়া দিবার জন্য ধারদাতা ঈশ্বর তাহাদের হস্তে যে ধন সম্পত্তি গচ্ছিত রাখিয়াছিলেন, তাহা আত্মসাৎ করা সম্বন্ধে, স্বর্গীয় বিবিরন পুস্তকে লেখা হইয়াছে, এতদ্দ্বারা তাঁহার সংশোধন হইবে না। ঈশ্বরের সহিত ব্যবহারে যে অবিশ্বস্ততা এবং ঘৃণ্য অকৃতজ্ঞতা দেখাও হইয়াছে, তজজন্য অনুতাপের প্রয়োজন। CCh 149.3
জগতের যে কোন যুগে, যে কোন সময়ে ঈশ্বরের প্রজাবৃন্দ সন্তুষ্টচিত্তে ও ইচ্ছাপুর্ব্ব তাঁহার পরিকল্পনানু্যায়ী কার্য্য করিয়াছে, তাঁহার দাবী দাওয়া পূরণ করিয়াছে, এবং ধনসম্পত্তি দ্বারা ঈশ্বরের সমাদর করিয়াছে, সেই যুগে এবং সেই সময়ে তাহাদের গোলাঘর সকল বহু শস্যে পুর্ণ হইয়াছে। কিন্তু যখনই তাহারা দশমাংশে ও উপহারে ঈশ্বরকে ঠকাইয়াছে, তখনই তাহাদিগকে, বুঝাইয়া দেওয়া হইয়াছ হে, ইহা করিয়া তাহারা কেবল ঈশ্বরকে ঠকায় নাই, কিন্তু নিজেদিগকেই ঠকাইয়াছে, কারণ যে অনুপাতে তাহারা ঈশ্বরকে উপহার দিয়াছে, সেই অনুপাতে ঈশ্বর তাহাদিগকে আশীর্ব্বাদ করিয়াছেন।13 CCh 150.1
দুরদৃষ্টবশতঃ কেহ যদি দেনার মধ্যে থাকে, তবে দেনা পরিশোধের নিমিত্ত প্রভুর অংশ ব্যয় করা কোন মতেই কর্ত্তব্য নহে। তাহার ইহা বুঝা আবশ্যক যে, এইরূপ কাজ-কারবারের দ্বারা তাহাকে পরীক্ষা করা হইতেছে, এবং নিজের ব্যবহারের নিমিত্ত প্রভুর অংশ হাতে রাখিয়া, সে দাতাকে ঠকাইতেছে। তাহার যাহা কিছু আছে, তাহার জন্য সে ঈশ্বরের নিকটে ঋণী, কিন্তু সে যখন সদাপ্রভুর বর্জিজত ধন মানবের ঋণ পরিশোধের নিমিত্ত ব্যয় করে, তখন সে দ্বিগুন ঋণী হইয়া পড়ে। স্বর্গীয় বিবরণ পুস্তকে তাহার নামের পার্শ্বে, লেখা হইয়া থাকে “ঈশ্বরের প্রতি অবিশ্বস্ততা।” নিজের সুবিধার জন্য সদাপ্রভুর অর্থ ব্যয় করার নিমিত্ত ঈশ্বরের নিকট জবাবদিহি করিতে হইবে। ঈশ্বরের অর্থ অন্যায়রূপে ব্যয় করায় প্রতিপন্ন হইবে যে, অন্য বিষয়াদি পরিচালনাও তাহ্র নীতি-জ্ঞানের অভাব আছে। তাহার ব্যবসায় সংক্রান্ত সকল ব্যাপারেও ঐরূপ দেখা যাইবে। যে কেহ ঈশ্বরকে ঠকাইবে, সে এমন চরিত্র গঠন করি তুলিবে, যাহা তাহাকে উর্দ্ধে ঈশ্বরের পরিবার ভুক্ত হইতে বাধা দান করিবে।14 CCh 150.2