মণ্ডলীর জন্য উপদেশ
৫ম অধ্যায়
ঈশ্বর আপনার জন্য একটী কার্য্য রাখিয়াছেন
যে সকল নরনারী আমাদের সভ্যশ্রেণীভুক্ত, যে পর্য্যন্ত না তাঁহার পুরোহিত ও মণ্ডলীর কার্য্যকারিগণের সহিত সঙ্ঘ-বদ্ধ হইয়া কার্য্য ররেন, তাবৎ এই পৃথিবীতে ঈশ্বরের কার্য্য কখনও শেষ হইবে না।1 CCh 108.1
খ্রীষ্টের প্রত্যেক অনুগামীকেই বলা হইয়াছে, “তোমরা সমুদয় জগতে জাও, সমস্ত সৃষ্টির নিকটে সুসমাচার প্রচার কর।” (মার্ক ১৬:১৫)। খ্রীষ্টের জীবনে অভিষিক্ত প্রত্যেক ব্যক্তিই, তাহার সহমানবগণে পরিত্রাণার্থে কার্য্য করিবার জন্য অভিষিক্ত। হারাণদিগের উদ্ধারের নিমিত্ত, খ্রীষ্টের মন্র আত্মা লাভার্থে যেরূপ প্রবল আকাঙ্ক্ষা ছিল, তাঁহার অনুগামীদের মধ্যে ঠিক্ সেরূপ আকাঙ্ক্ষা থাকা আবশ্যক। সকলে ঐ একই স্থান পূরণ করিতে পারে না, কিন্তু সকলেরই জন্য স্থান আছে এবং কার্য্যও আছে। যাহারা ঈশ্বরের আশীর্ব্বাদ পাইয়াছে, তাহদের কর্ত্তব্য, তাঁহার কার্য্যে ব্রতী হওয়া। ঈশ্বরের নিকট হইতে প্রাপ্ত প্রত্যেকটী দান, তাঁহার রাজ্য-বিস্তারের জন্য নিয়োগ করা।2 CCh 108.2
আত্মার পরিত্রাণের জন্য যে সকল কার্য্য করা যায়, প্রচার কার্য্যটী তন্মধ্যে একটী ক্ষুদ্র কার্য্য। ঈশ্বরের আত্মা পাপী মানবদিগকে সত্ত্য সম্বন্ধে চেতনা দান করেন, আর তিনি তাহাদিগকে মণ্ডলীর হস্তে সমর্পণ করেন। পুরোহিতগণ তাঁহাদের কার্য্য করিতে পারেন, কিন্তু মণ্ডলীর যাহা করা বিধেয়, তাঁহারা কখনই তাহা করিতে পারেন না। বিশ্বাসে এবং অভিজ্ঞতায় যাহারা শিশু, ঈশ্বর চাহেন, যেন মন্দলী তাঁহাদের লালন পালন করেন; গল্পগুজব করিবার জন্য নহে, কিন্তু প্রার্থনা করিবার জন্য মণ্ডলীর সভ্যেরা যেন তাহাদের কাছে যান এবং তাহাদিগকে এমন কথা বলেন, যাহা “রৌপ্যের ডালিতে সুবর্ণ নাগরঙ্গ ফলের তুল্য।”3 CCh 108.3
পৃথিবীতে জ্যোতিস্বরূপ হইবার জন্য পুরাকালে ঈশ্বর যেমন প্রাচীন ইস্রায়েলকে আহ্বান করিয়াছিলেন, তেমনি তিনি এই বর্ত্তমান কালে তাঁহার মণ্ডলীকে আহ্বান করিয়াছেন। তাঁহার পবিত্র সান্নিধ্যে আনয়ন করিবার জন্য, সত্যের সুতীক্ষ্ণ খড়্গ দ্বারা।— প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দূতের বার্ত্তা দ্বারা, তিনি তাঁহার মণ্ডলীর লোকদিগকে বিভিন্ন মণ্ডলী হইতে ও জগৎ হইতে সম্পূর্ণ পৃথক্ করিয়াছেন। তিনি তাহাদিগকে তাঁহার ব্যবস্থার তত্ত্বাবধায়ক করিয়াছেন এবং এই সময়ের জন্য ভাববাণীর মহা সত্যগুলি তাহাদের হস্তে গচ্ছিত রাখিয়াছেন। পুরাকালীন ইস্রায়েলগণকে-দত্ত পবিত্র দৈববাণীর ন্যায় এই পবিত্র সত্যগুলিও জগতে দান করিতে হইবে। CCh 109.1
যে লোকেরা ঈশ্বরের বার্ত্তা সমূহের জ্যোতি প্রাপ্ত হইয়া তাঁহার প্রতিনিধির ন্যায় দ্রুত গতিতে জগতের সর্বত্র যাইয়া চেতনাবাণী ঘোষণা করেন, তাহাদিগকে প্রকাশিতবাক্যে ১৪শ অধ্যায়ের দূতত্রয় বলিয়া নির্দ্দেশ করা হইয়াছে। খ্রীষ্ট স্বীয় শিষ্যদিগকে বলেন, “তোমরা জগতের দীপ্তি” মথি ৫:১৪। যে কেহ যীশুকে গ্রহন করে, কালভেরির ক্রুশ তাহার প্রত্যেক ব্যক্তিকেই কহে, “প্রাণের মূল্য দেখ। ‘তোমারা সমুদয় জগতে যাও, সমস্ত সৃষ্টির নিকটে সুসমাচার প্রকার কর’।” মার্ক ১৬:১৫। কোন কিছুকেই এই কার্য্যের প্রতিবন্ধক হইতে দেওয়া উচিত নহে। এই সময়ের জন্য এইটীই সর্ব্বপ্রয়োজনীয় কার্য্য; আর ইহা অনন্তকেলের ন্যায় সুদূরপ্রসারী। মানবত্মার মুক্তির জন্য আত্ম-যজ্ঞ উৎসর্গ করিয়া যীশু যে অসীম প্রেম প্রদর্শ্ন করিয়াছেন, তাহাই তাঁহার সকল শিষ্যকে কার্য্য প্রণোদিত করিবে।4 CCh 109.2
যে কেহ খ্রীষ্টের হস্তে আত্ম সমর্পণ করে, তিনি তাহার প্রত্যেককে, কতই না আনন্দে গ্রহন করিয়া থাকেন। তিনি মূর্ত্ত প্রেমের নিগূঢ়তত্ত্ব জগতে প্রকাশ করিতে পারেন, তজজন্য তিনি ঈশ্বরের সহিত মানবত্বের মিলন করিয়া দেন। ইহার বিষয় আলাপ করুন, ইহার বিষয় প্রার্থনা করুন, এই সম্বন্ধে গান করুন, তাঁহার সত্যের বার্তায় জগৎ পরিপূর্ণ করুন এবং দূর দূরান্তরে উহা লইয়া যাউন।5 CCh 109.3