মণ্ডলীর জন্য উপদেশ

26/327

খ্রীষ্টের যথার্থ অনুগামিগণ তাঁহার জন্য সাক্ষ্য দিবে

আপনাদের প্রত্যেকই যদি এক একটী জীবন্ত মিশনারী হইতেন, তাহা হইলে বর্ত্তমানকালীন বার্ত্তাটী সমুদয় দেশে- প্রত্যেক জাতি ও ও বংশ ও ভাষাবাদীর নিকটে অতি দ্রুত গতিতে ঘোষিত হইত।6 CCh 110.1

যাহারা ঈশ্বরের নগরে প্রবেশ করিবে, এই পার্থিব জীবন-কালে তাহদের প্রত্যেকেরই আচারব্যবহারে খ্রিষ্টকে প্রকাশ করিতে হইবে। কারণ এতদ্দ্বরাই তাহারা খ্রীষ্টের বার্ত্তাবাহক ও তাঁহার সাক্ষীরূপে নির্ণীত হইবে। সমুদয় মন্দ আচারব্যহারের বিরুদ্ধে তাহাদের সুস্পষ্ট ও সুনির্দ্দষ্ট সাক্ষ্য প্রদান করিতে হইবে এবং ঈশ্বরের মেষশাবক, যিনি জগতের পাপভার লইয়া যান, তাঁহার দিকে পাপীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করিতে হইবে। যাহারা তাঁহাকে গ্রহন করে, তাহাদের প্রত্যেককে তিনি ঈশ্বরের সন্তান হইবার ক্ষমতা দান করেন। একমআত্র নূতন জুন্মের দ্বারা দিয়া আমরা প্রবেশ করি তাহা সরল, কিন্তু নর-নারী এবং সন্তানসন্ততিগণকে ইহার মধ্যে দিয়া আমাদের চালাইয়া লইয়া যাইতে হইবে এবং তাহাদিগকে শিক্ষা দিতে হইবে যে, পরিত্রাণ পাইবার জন্য তাহাদের অবশ্যই নূতন অন্তঃকরণ ও নূতন আত্মা লাভ করিতে হইবে। পুরাতন, বংশগত স্বভাবের উপরে জয় লাভ করিতে হইবে। কারণ, মনের স্বাভাবিক বৃত্তিগুলির পরিবর্ত্তনের নিতান্ত প্রয়োজন। সকল প্রকার প্রতারণা, ছল-চাতুরী, মিথ্যা-প্রবঞ্চনা ও কুবাক্য আবশ্যি বজর্জন করিতে হইবে। নূতন জীবন,- যে জীবন নরনারীকে খ্রীষ্টের মত করিয়া তুলে, সেইরূপ জীবন যাপন করিতে হইবে।7 CCh 110.2

হে আমার ভ্রাতা ও ভগ্নিগণ, যে মন্ত্র-জাল আপনাদিগকে আবদ্ধ করিয়া রাখিয়াছে, আপনারা কি তাহা ছিন্ন করিত অভিলাষী নহেন? মৃত্যুর নিষ্ক্রিয়তার সহিত যে অলসতার তুলানা করা যায়, আপনারা কি তাহা হইতে উন্থিত হইবেন না? কার্য্য করিবার ইচ্ছা থাকুক বা না থাকুক, কার্য্যে রত হউন। যীশুর কাছে লোকদিগকে আনিবার ও তাহাদিগকে সত্যের তত্ত্বজ্ঞান দিবার নিমিত্ত ব্যক্তিগত কার্য্যে নিবিষ্ট থাকুন। ঐরূপ পরিশ্রমে উত্তেজক ও বলকারক এই উভয়-বিধ ঔষধ পাইবেন; ইহা আপনাকে উত্তেজনা ও বল, এই উভয়ই দান করিবে। কার্য্যের ফলে আপনার আধ্যাত্মিক শক্তি উত্তরোত্তর সতেজ হইবে, আর এতদ্দ্বারা আপনি আপনার নিজের পরিত্রাণ অধিকতর কৃতকার্য্যতার সহিত সাধন করিতে পারিবেন। মৃত্যুতে যেমন সংজ্ঞা থাকে না, বহু নামধারী খ্রীষ্টিয়ান তেমনি অচৈতন্য অবস্থায় রহিয়াছে। তাহাদিগকে জাগরিত করিবার জন্য প্রত্যেক প্রকার চেষ্টা করিতে হইবে। চেতনা দিতে হইবে, অনূনয়-বিনয় করিতে হইবে, ভর্তসনা করিতে হইবে। তাহাদের শীতল স্বভাব যেন ঈশ্বরের মধুর প্রেমে উষ্ণ ও বিগলিত হয়, তজজন্য প্রার্থনা করিতে হইবে। তাহারা শুনিতে না চাহিলেও আপনার পরিশ্রম বিফল হইবে না। অন্যের আশীর্ব্বাদের চেষ্টায়, আপনি নিজে আশীর্ব্বাদ প্রাপ্ত হইবেন।8 CCh 111.1

কেহ যেন মনে না করে যে, যে প্রভুর কার্য্যের অংশ গ্রহন করিতে অপারক, কারণ সে অশিক্ষিত। ঈশ্বর আপনার জন্য একটী কার্য্য রাখিয়াছে। তিনি প্রত্যেককেই নিজ নিজ কার্য্য দিয়াছেন। আপনি নিজেই শাত্র অনুসন্ধান করিতে পারেন। “তব বাক্য সমূহের বিশ্বাস আলক প্রদান করে, তাহা আমায়িকদিগকে বুদ্ধিমান করে।” গীতসংহিতা ১১৯:১৩০। আপনি কার্য্যের জন্য প্রার্থানা করিতে পারেন সরলান্তঃকরণে বিশ্বাসের সহিত প্রার্থনা করিলে ঈশ্বর তাহা শুনিবেন। ফল কথা আপনার সামর্থ্যানুযায়ী আপনার কার্য্য করিতে হইবে।9 CCh 111.2

মানবগণ কি হইতে পারে এবং তাহাদের প্রভাবের দ্বারা ধ্বংসোন্মুখ লোকদের আত্মার পরিত্রাণের জন্য তাহারা কি অসাধ্য সাধন করিতে পারে, তাহা প্রকাশার্থে স্বর্গীয় আধ্যাত্মিক সত্ত্বাগণ মানবের সহিত সহযোগিতার অপেক্ষায় আছেন। CCh 112.1

মরুপ্রান্তের জাহাজ ধ্বংসের ন্যায় সর্ব্বদেশের যে সহস্র সহস্র ব্যক্তি আপন আপন পাপে বিনষ্ট হইয়া যাইতেছে, তাহাদের রক্ষার নিমিত্ত ধৈর্য্য ও অধ্যবসায় সহকারে কার্য্য করণার্থে খ্রিষ্ট আমাদের প্রত্যেককে আহ্বান করিতেছেন। যাহারা খ্রীষ্টের গৌরবের অংশী হইবে, তাহাদের আবশ্যক,- দুর্ব্বল, দীন দুঃখী ও হতাশদিগের সাহায্য করিয়া তাঁহার পরিচর্য্যারও অংশী হওয়া।10 CCh 112.2

প্রত্যেক বিশ্বাসীরই সর্ব্বান্তঃকরণে মণ্ডলীর প্রতি অনুরক্ত থাকা কর্ত্তব্য। মণ্ডলীর শ্রীবৃদ্ধি তাঁহার প্রথম লক্ষ্যের বিষয় হওয়া উচিত। নিজের মঙ্গল চেষ্টা না করিয়া মণ্ডলীর মঙ্গলার্থে সে যদি মণ্ডলীর সঙ্গে সংযুক্ত হইবার গুরু-দায়িত্ব উপলব্ধি না করে, তবে তাহাকে ছাড়াও মণ্ডলী বেশ চালিতে পারে। ঈশ্বরের জন্য প্রত্যেকরই কিছু না কিছু করিবার ক্ষমতা আছে। অনেকে আছে, অনাবশ্যক বিলাসিতার জন্য প্রভূত অর্থ ব্যয় করিয়া নিজেদের লালসা চরিতার্থ করিয়া থাকে, কিন্তু মণ্ডলী প্রতিপালনের জন্য অর্থদান করা, তাহারা বড়ই কষ্টকর বলিয়া মনে করে। তাহারা মণ্ডলীর সকল প্রাকার সুজগ-সুবিধা ভোগ করিতে চাহে, কিন্তু তাহারা চাহে, যেন অন্যে তাহাদের খরচটা বহন করে। CCh 112.3

খ্রীষ্টের মণ্ডলীকে যথাযতরূপে সৈন্যদলের সঙ্গে তুলনা করা যায়। প্রত্যেক সৈন্যর জীবন পরিশ্রমের, ক্লেশের ও বিপদের জীবন। অন্ধকারের কর্ত্তৃত্বাধিপতি,- যে কখনও নিদ্রা যায় না এবং কখনও তাঁহার কার্য্য হইতে অবসর গ্রহণ করে না, তৎ পরিচালিত সতর্ক শ্ত্রুগণ চতুর্দ্দিকে বিদ্যমান। কোন খ্রীষ্টীয়ান অসতর্ক হইলেই, এই পরাক্রান্ত শত্রু হঠাৎ ভীষণরূপে আক্রমণ করিয়া থাকে। মণ্ডলীর সভ্যগণ কার্য্যতৎপর ও জাগরূক না হইলেই, উক্ত শত্রুর করাল কবলে পতিত হইবে। যুদ্ধক্ষেত্রে যাইয়া অর্দ্ধাংশ সৈন্য অলসতা করিলে কিংবা নিদ্রা গেলে, ইহার ফল কি হইবে? ফল হইবে, পরাজয়, বন্দিত্ব কিংবা মৃত্যু। শত্রুগণের হস্ত হইতে কেহ পলায়ন করিলে তাহার কি পুরস্কার লাভের যোগ্য বলিয়া বিবেচিত হইবে? না, তাহারা ত্বরায় মৃত্যুদণ্ডাজ্ঞা প্রাপ্ত হইবে। খ্রীষ্টের মণ্ডলীও অসতর্ক ও অবিশ্বস্ত হইলে, এতদপেক্ষা গুরুতর শাস্তি প্রাপ্ত হইবে। খ্রীষ্টীয়ান সৈন্য নিদ্রাতুর হইবে, ইহা অপেক্ষা অধিকতর ভয়াবহ ব্যাপার আর কি হইতে পারে? যাহারা অন্ধকারের অধিপতির কর্ত্তৃত্বাধীনে, তাহারা জগতের বিপরীতে কতটা অগ্রসর হইতে পারে? যুদ্ধের দিনে যাহারা সে দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে, পশ্চাদ্দিকে ফিরিয়া উদাসীন ভাবে দাঁড়াইয়া থাকে, যুদ্ধে তাহাদের কোন দায়িত্ব আছে বলিয়া বধ না করে, তাহাদের ঐ ভাব পরিবর্ত্তন করা, নতুবা তৎক্ষণাৎ দল ত্যাগ করা অপেক্ষাকৃত ভাল। CCh 112.4