মণ্ডলীর জন্য উপদেশ
সর্ব্বসমক্ষে যে প্রার্থনা উৎসর্গ করা হয়, তাহা দীর্ঘ হওয়া উচিত নহে
খ্রীষ্ট স্বীয় শিষ্যগণের মনে এই ধারনা বদ্ধমূল করিয়া দিয়াছিলেন যে, তাহাদের প্রার্থনা ক্ষুদ্র হওয়া এবং যাহা আবশ্যক, কেবল তাহারই জন্য প্রার্থনা করা উচিত ; আর কিছুরই জন্য নহে । পার্থিব ও আধ্যাত্মিক আশির্ব্বাদ সমূহের জন্য আকাঙ্ক্ষা করিয়া এবং সেই সকলের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করিয়া কত বড় প্রার্থনা করিতে হইবে, তাহা তিনি চুম্বকে জানাইয়া দিয়াছেন । এই আদর্শ প্রার্থনাটী কত সম্পূর্ণ ! মানবের যাহা কিছু আবশ্যক তাহার সকলই ইহার অন্তর্ভুক্ত । যে কোন সাধারণ প্রার্থনার জন্য এক কিংবা দুই মিনিটই যথেষ্ট । ঈশ্বরের আত্মা দ্বারা উৎসর্গীকৃত ও বিশেষভাবে তাঁহার আত্মা দ্বারা রচিত বা লিখিত প্রার্থনার কোন উদাহরণ থাকিতে পারে । আকাঙ্খিত প্রাণ ঈশ্বরের জন্য ছট্ফট্ করে ও আর্ত্তনাদ করে । যাকোব যেরূপ মল্লযুদ্ধ করিয়াছিলেন, আত্মা তেমনি মল্লযুদ্ধ করেন এবং যে পর্যন্ত না ঈশ্বরের শক্তি বিশেষ ভাবে প্রকাশিত হয়, তাবৎ তিনি নিবৃত্ত হন না । আর ঈশ্বর এইরুপই চাহেন । CCh 304.3
কিন্তু অনেকে উপদেশের ভাবে নীরস প্রার্থনা উৎসর্গ করে । ইহারা মানুষের নিকট প্রার্থনা করে, ঈশ্বরের নিকটে নহে । তাহারা যদি ঈশ্বরের নিকটে প্রার্থনা করিত এবং কি করিতেছে তাহা যদি বাস্তবিকই হৃদয়ঙ্গম করিত, তবে তাহারা তাহাদের ধৃষ্টতার জন্য ভয়াভিভূত হইত ; কারণ তাহারা প্রার্থনার আকারে সদাপ্রভুকে এক উপদেশ দান করে, তাহাতে মনে হয় যেন, পৃথিবীতে যাহা কিছু ঘটিতেছে, সেই সকল সাধারণ বিষয় লইয়া বিশ্বমণ্ডলের সৃষ্টিকর্ত্তাকে এক বিশেষ উপদেশ দান করা আবশ্যক । এই সকল প্রার্থনা শব্দকারক তৈজস্ ও ঝমঝমকারী করতাল সদৃশ । স্বর্গে ইহার মূল্য অতি নগণ্য । ঈশ্বরের দূতগণ যেমন উহা শুনিয়া বিরক্ত হন, মর্ত্তের মানবগণ—যাহাদিগকে বাধ্য হইয়া উহা শুনিতে হয়, তাহারাও তেমনি বিরক্ত হয় । CCh 305.1
যীশুকে প্রায়ই প্রার্থনা করিতে দেখা যাইত । তিনি নির্জ্জন কুঞ্জবনে, কিংবা পর্ব্বতে গমন করিয়া তাঁহার পিতার নিকটে তাঁহার বিনতি উৎসর্গ করিতেন । দিনের কার্য্য ও উদ্বেগাদি যখন শেষ হইত এবং শ্রান্ত ও ক্লান্ত লোকেরা যখন বিশ্রাম করিতে যাইত, যীশু তখন প্রার্থনায় রত থাকিতেন । কাহাকেও প্রার্থনা করিতে নিরুৎসাহিত করা উচিত নহে, কারণ অতি অল্পই প্রার্থনা করা ও তাহাতে জাগিয়া থাকা হয় । ইহার উপরে আবার আত্মায় ও জ্ঞানে প্রার্থনা করা আরও বিরল । সর্ব্বদাই ব্যগ্র ও ইষ্টফলপ্রদ প্রার্থনা উৎসর্গ করা যায় এবং ইহাতে কখনও কোন ক্লান্তি ও বিরক্তিরও উদ্রেক হয় না । যাহারা প্রার্থনা ভালবাসে, এইরূপ প্রার্থনায় তাহাদের সকলেরই ভাব উদ্দীপিত হয় এবং তাহারা সকলেই পুনরায় আত্মার সবল হইয়া উঠে । CCh 305.2
গুপ্ত প্রার্থনায় অবহেলা করা হয় বলিয়া ঈশরোপাসনায় সমবেত হইয়া অনেকেই সুদীর্ঘ, বিরক্তিকর ও নীতিবিরুদ্ধ প্রার্থনা উৎসর্গ করিয়া থাকে । এক সপ্তাহ পূর্ব্বে তাহারা যে কর্ত্তব্যকর্ম্মে অবহেলা করিয়াছে, তাহার উল্লেখ করিয়া তাহারা ঘুরাইয়া ফিরাইয়া প্রার্থনা করিয়া থাকে, আশা করে, তাহারা প্রার্থনা করিতে যে অবহেলা করিয়াছে, এইরূপে তাহারা তাহাদের অবহেলা পূরণ করিবে এবং তাহাদের যে বিবেক তাহাদিগকে দোষী করিতেছে ও কশাঘাত করিতেছে তাহা শান্ত করিবে । প্রার্থনা দ্বারা তাহারা নিজেদিগকে ঈশ্বরের অনুগ্রহ ভাজন করিতে আশা করে । কিন্তু তাহারা নিজেরা যেমন আধ্যাত্মিক অন্ধকারে নিম্নতর অবস্থায় রহিয়াছে, এই সকল প্রার্থনা সাধারণতঃ অন্যকেও তেমনি ঘোরতর আধ্যাত্মিক অন্ধকারে নিমগ্ন করে । জাগ্রত থাকা ও প্রার্থনা করা সম্বন্ধে খ্রীষ্টীয়ানগণ যদি খ্রীস্টের শিক্ষামালা অন্তরের সহিত গ্রহণ করিত, তবে তাহারা ঈশ্বরোপাসনায় অধিকতর অভিজ্ঞ হইত ।2 CCh 306.1