মণ্ডলীর জন্য উপদেশ
২১ অধ্যায়
বাইবেল
যাহারা গভীর ভাবে শাস্র অনুসন্ধান করে না, তাহাদের হইতে সত্যের সহস্র সহস্র মুক্তা শাস্রে লুক্কায়িত থাকে । সত্যের খনি কখনও নিঃশেষিত হয় না । বিনম্রমনে যত অধিকতর মাত্রায় শাস্র অনুসন্ধান করিবেন, তত অধিকতর মাত্রায় আপনার অনুরাগ বৃদ্ধি পাইবে, আর তত অধিকতর উচৈচঃস্বরে পৌলের ন্যায় বলিয়া উঠিবেন : — “আহা ! ঈশ্বরের ধনাঢ্যতা ও প্রজ্ঞা কেমন অগাধ ! তাঁহার বিচার সকল কেমন বোধাতীত ! তাঁহার পথ সকল কেমন অননুসন্ধেয় ।” (রোমীয় ১১ : ৩৩) ।1 CCh 282.1
খ্রীষ্টের ও তাঁহার বাক্যের মধ্যে পূর্ণ সামঞ্জস্য রহিয়াছে । খ্রীষ্ট যেমন দীপ্তিতে আছেন, তেমনি যাহারা দীপ্তিতে গমনাগমন করিতে চাহে, গৃহীত ও পালিত বাক্যগুলি তাহাদের প্রত্যেকের চরণের নিমিত্ত এক অভ্রান্ত পথ খুলিয়া দেয় । ঈশ্বরের লোকেরা যদি তাঁহার বাক্যের মর্ম্ম উপলব্দি করিতে পারে, তাহা হইলে এই পৃথিবীতে মণ্ডলীর মধ্যেই আমরা স্বর্গ লাভ করিতে পারি । ঈশ্বরের বাক্য অনুসন্ধানের নিমিত্ত খ্রীষ্টীয়ানের ব্যগ্র ও ক্ষুদার্ত্ত হইয়া কর্ত্তব্য । শাস্রের সহিত শাস্র অনুসন্ধান করিয়া দেখিবার ও ঈশ্বরের বাক্য ধ্যান করিবার নিমিত্ত সময়ের জন্য তাহারা ব্যাকুল হইবে । প্রাতঃকালের খবরের কাগজ, পত্রিকাদি, কিংবা উপন্যাসাদি অপেক্ষা, বাক্যের দীপ্তির জন্য তাহারা অধিকতর উৎসুক হইবে । ঈশ্বরের পুত্রের মাংস ভক্ষণ ও রক্ত পান তাহাদের সর্ব্বাধিক আকাঙ্ক্ষার বিষয় হইবে । আর ইহার ফলে, তাহাদের জীবন ঈশ্বরের বাক্যের মূলনীতিগুলির ও প্রতিজ্ঞাগুলির অনুরূপ হইবে । ইহার উপদেশমালা তাহাদের নিকটে জীবন বৃক্ষের পত্র সদৃশ হইবে । ইহা তাহাদের মধ্যে জলের এক উৎস হইয়া অনন্ত জীবন পর্য্যন্ত উথলিয়া উঠিবে । শ্রম ও ক্লান্তি ভুলাইয়া দিয়া অনুগ্রহের শীতল জলধারা আত্মাকে সতেজ ও পুনর্জজীবিত করিবে । প্রত্যাদিষ্ট বাক্য দ্বারা তাহারা সবল ও উৎসাহিত হইবে ।2 CCh 282.2
বাইবেল লিখিবার পদ্ধতি ও ইহাতে লিখিত বিষয় সমূহ এত সুপ্রসারিত যে, প্রত্যেকটী মন আকৃষ্ট করিবার ও প্রত্যেকটী হৃদয় স্পর্শ করিবার মত ইহার মধ্যে কিছু আছে । ইহার পৃষ্ঠাগুলিতে সর্ব্বাপেক্ষা প্রাচীন ইতিহাস ; সর্ব্বাপেক্ষা সত্য জিবন-চরিত ; রাজ্য শাসনের নিমিত্ত রাজকীয় আইন কানুন ও পারিবারিক সুশৃঙ্খলা জন্য মূলনীতিগুলি এত বিজ্ঞতার সহিত লিখিত আছে যে, কোন মানবীয় জ্ঞান কখনও তাহার সমকক্ষ হইতে পারে নাই । সর্ব্বাপেক্ষা নিগূঢ় দর্শন-তত্ত্ব, সর্ব্বাপেক্ষা সুমধুর ও সর্ব্বাপেক্ষা উত্তেজনাপূর্ণ, সর্ব্বাপেক্ষা করুণ ও সর্ব্বাপেক্ষা উন্নত ধরণের কবিতা সমূহ ইহার মধ্যে সন্নিবেশিত আছে । মূল্যের দিক্ দিয়া দেখিতে হইলে বলিতে হইবে যে, যে কোন মানবীয় লেখকের গ্রন্থাদি অপেক্ষা বাইবেলের মূল্য অপরিমেয় উচ্চতর ; কিন্ত প্রধান মূল চিন্তার সহিত ইহার সম্পর্কের বিষয় চিন্তা করিয়া দেখিলে স্বীকার করিতে হয় যে, ইহার মূল্য উহা অপেক্ষাও অধিকতর সীমারহিত ও উচ্চ । এই চিন্তা-আলোকে দেখিলে প্রত্যেকটী বিষয়ে নূতনত্ব দেখা যাইবে । সর্ব্বাপেক্ষা সরল ভাবে যে সকল সত্য ইহাতে বর্ণিত হইয়াছে, তাহাতে এরূপ মূলনীতি রহিয়াছে, যাহা স্বর্গের মত উচ্চ ও অনন্ত বিস্তৃত ।3 CCh 283.1
শাস্রকলাপ হইতে প্রতিদিন কোন নূতন শিক্ষা লাভ করিবেন । গুপ্তধনের ন্যায় শাস্র অনুসন্ধান করিবেন, কারণ ইহাতে অনন্তজীবনের কথা রহিয়াছে । এই সকল পবিত্র লেখনী সম্যকরূপে হৃদয়ঙ্গম করিবার নিমিত্ত জ্ঞান ও বুদ্ধির জন্য প্রার্থনা করিবেন । এরূপ করিলে ঈশ্বরের বাক্যে নূতন প্রভা দেখিতে পাইবেন ; আপনি অনুভব করিবেন যে, সত্য সম্বলিত বিষয়গুলিতে আপনি নূতন ও অমূল্য দীপ্তি প্রাপ্ত হইয়াছেন ; আর ইহার জন্য শাস্রের মূল্য আপনার কাছে ক্রমাগত বাড়িয়া যাইতে থাকিবে ।4 CCh 283.2
বাইবেলের সত্য সমূহ গ্রহণ করিলে জাগতিকতা ও হীনতা হইতে মন উন্নত হইবে । ঈশ্বর বাক্যের যথোচিত গুণাবধারণ করিতে পারিলে যুবক ও বৃদ্ধ উভয়েই আভ্যন্তরিক সততা ও মূলনীতির এমন এক শক্তি লাভ করিতে পারিবে, যদ্দ্বারা তাহারা পরীক্ষার উপরে জয়লাভে সমর্থ হইবে ।1 CCh 284.1