মণ্ডলীর জন্য উপদেশ
কিরূপে ভৎসনা গ্রহণ করিতে হয়
যাহারা ঈশ্বরের আত্মা দ্বারা তিরস্কৃত হয়, ঈশ্বরের বিনীত প্রতিনিধির বিপক্ষে তাহাদের দণ্ডায়মান হওয়া কর্ত্তব্য নহে । তাহাদিগকে বিনাশ হইতে রক্ষার্থে ঈশ্বরই তাহাদের নিকটে কথা বলিয়াছেন ; কোন ভ্রান্ত মানব বলে নাই । তিরস্কার সহ্য করা মানব স্বভাবের পক্ষে অপ্রীতিকর ; এবং যে সকল মানব ঈশ্বরের আত্মা দ্বারা শিক্ষিত নহে, তিরস্কারের আবশ্যকতা বুঝিতে পারা, কিংবা উক্ত তিরস্কার যে আশীর্ব্বাদ আনয়নার্থে দত্ত হয়, তাহার মর্ম্ম উপলব্দি করা, তাহাদের পক্ষে অসম্ভব । পরীক্ষায় পতিত ও পাপে আসক্ত হইলে মানবের মন অন্ধকারাচ্ছন্ন হইয়া যায় । নৈতিক জ্ঞান বিকৃত, বিবেকের চেতনাবাণী অবজ্ঞাত, ও ইহার রব অপেক্ষাকৃত অস্পষ্টরূপে শ্রুত হয় । ভাল ও মন্দের মধ্যে যে কী পার্থক্য তাহা নির্দ্ধারণ করিয়া লইবার শক্তি সে ক্রমে ক্রমে হারাইয়া ফেলে, অবশেষে ঈশ্বরের সম্মুখে দাঁড়াইবার মত প্রকৃত জ্ঞান তাহার আর থাকে না । সে হইতো ধর্ম্মের রূপ রাখিতে পারে এবং উদ্যোগ সহকারে ইহার মতবাদগুলির সমর্থনও করিতে পারে, কিন্ত ইহা পালনের মন নাও থাকিতে পারে । বিশ্বস্ত ও সত্যময় সাক্ষী তাহার অবস্থা সম্বন্ধে বলেন : — “তুমি কহিতেছ, আমি ধনবান, ধন সঞ্চয় করিয়াছি, আমার কিছুরই অভাব নাই ; কিন্ত জান না যে, তুমিই দুর্ভাগ্য, কৃপাপাত্র, দরিদ্র, অন্ধ ও উলঙ্গ ।” তাহার অবস্থা এইরূপে বর্ণনা করিয়া ঈশ্বরের আত্মা যখন তাহাকে তিরস্কার করেন, তখন সে মনে করে, ইহা একটী মিথ্যা বার্তা । অতএব, এই অজুহাতে সে কি চেতনাবাণী অগ্রাহ্য করিতে পারে ? না, কখনই না । CCh 279.1
ঈশ্বর যথেষ্ট প্রমাণ দিয়াছেন, অতএব এক্ষণে যাহারা ইচ্ছা করে, তাহারা সাক্ষ্যকলাপের প্রকৃতির বিষয় নিঃসন্দিগ্ন থাকিতে পারে ; এবং যদিও তাহারা তাহাদের জীবনের পাপাচরণ দেখিতে না পায়, তথাপি ঐ সকল সাক্ষ্য ঈশ্বর হইতেই আসিয়াছে, ইহা মানিয়া লইয়া তিরস্কার সমূহ গ্রাহ্য করা তাহাদের অবশ্য কর্ত্তব্য । তাহারা যদি তাহাদের অবস্থা পূর্ণমাত্রায় বুঝিতে পারিত, তাহা হইলে ভৎসনার কি প্রয়োজন হইত ? তাহারা ইহা জানে না বলিয়া ঈশ্বর দয়া-পরবশ হইয়া তাহাদের সম্মুখে ইহা রাখিয়াছেন, যেন অনতিবিলম্বে তাহারা অনুতপ্ত অ সংশোধিত হইতে পারে । যাহারা চেতনাবাণী অগ্রাহ্য করিবে, তাহারা আত্ত্বপ্রতারিত হইবার নিমিত্ত অন্ধতায় আহত হইবে ; কিন্ত যাহারা ইহাতে মনোনিবেশ করিবে এবং প্রয়োজনীয় অনুগ্রহ লাভার্থে আপন আপন পাপ হইতে উদ্যোগ সহকারে পৃথক্ হইবে, প্রিয় ত্রাতা আসিয়া তাহাদের মধ্যে যেন বস-বাস করিতে পারেন, তজজন্য তাহারা তাহাদের হৃদয় দ্বার খুলিয়া দিবে । যাহারা ঈশ্বরের সহিত অতি ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িত, তিনি যখন কথা বলেন, তখন তাহারা তাঁহার রব জানে । আর প্রভু এইরূপ লোকদের ভ্রম দেখাইয়া দিয়াছেন বলিয়া, তাহারা প্রভুর নিকট কৃতজ্ঞ থাকিবে । CCh 280.1
ঈশ্বর দায়ূদের সহিত যেরূপ ব্যবহার করিয়াছিলেন, তদ্দ্বারা তিনি জ্ঞান লাভ করিয়া পবিত্রতমের শাসনের নীচে নম্রতায় বশ্যতা স্বীকার করিয়াছিলেন । ভাববাদী নাথন যখন বিশ্বস্তভাবে দায়ূদের প্রকৃত অবস্থা দেখাইয়া দিলেন, তখন দায়ূদ নিজ পাপ-সম্বন্ধে সম্যকরূপে অবগত হইয়া ঐ সকল ত্যাগ করিতে সাহায্য প্রাপ্ত হইলেন । তিনি বিনীত ভাবে উপদেশ গ্রহণ করিলেন এবং ঈশ্বরের সম্মুখে নিজেকে অবনত করিয়া উচৈচঃস্বরে কহিলেন, “সদাপ্রভুর ব্যবস্থা সিদ্ধ, প্রাণের স্বাস্থ্যজনক ।” (গীত ১৯ : ৭) । CCh 280.2
“তোমাদের শাসন যদি না হয়,— সকলেই ত তাহার ভাগী, তবে সুতরাং তোমরা জারজ, পুত্র নও ।” (ইব্রীয় ১২ : 8) । আমাদের প্রভু বলিয়াছেন, “আমি যত লোককে ভালভাসি, সেই সকলকে অনুযোগ করি ও শাসন করি ।” (প্রকাশিত ৩ : ১৯) । “কোন শাসনই আপাততঃ আনন্দের বিষয় বোধ হয় না, কিন্ত দুঃখের বিষয় বোধ হয় ; তথাপি তদ্দ্বারা যাহাদের অভ্যাস জন্মিয়াছে, তাহা পরে তাহাদিগকে ধার্ম্মিকতার শাস্তিযুক্ত ফল প্রদান করে ।” (ইব্রীয় ১২ : ১১) । “আমরা যেন তাঁহার পবিত্রতার ভাগী হইতে পারি” তজজন্য শাসন তিক্ত হইলেও পিতার কোমল প্রেমের দ্বারা উহা নির্ধারিত হইয়া থাকে ।” 11 CCh 281.1