মণ্ডলীর জন্য উপদেশ

83/327

১৬ অধ্যায়

অভাব-অনটন ও দুঃখ-ক্লেশে খ্রীষ্টীয়ানের মনোভাব

মানবগণ তাহাদের প্রতিবাসীকে প্রেম করে কিনা, তাহা প্রদর্শনার্থে ঈশ্বর অধুনা তাহাদিগকে এক সুবর্ণ সুযোগ দান করিয়াছেন । যে ব্যক্তি ইশরকে এবং তাহার সহ-মানবকে প্রকৃতই প্রেম করে, সে দীন-দরিদ্র, ক্লেশাপন্ন, আহত ও মৃতকল্প লোকদের প্রতি কৃপা প্রদর্শন করিয়া থাকে । প্রত্যেকের অবহেলিত কার্য্য সুসম্পন্ন করিতে এবং মানবজাতির মধ্যে সৃষ্টিকর্তার প্রতিমূর্ত্তি পুনঃ প্রতিষ্ঠিত করিতে ঈশ্বর প্রত্যেক মাববকেই অনুরোধ করিতেছেন ।1 CCh 235.1

এই কার্য্য সম্পাদনার্থে উদ্যমের, আত্ম-ত্যাগের ও আত্মোৎসর্গের প্রয়োজন । কিন্ত ঈশ্বর আপনার একজাত পুত্রকে আমাদের নিমিত্ত দান করিয়া ত্যাগস্বীকারের যে চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করিয়াছেন, তাহার সহিত আমাদের নগণ্য ত্যাগস্বীকারের কী তুলনা হইতে পারে ?2 CCh 235.2

উত্তরাধিকারসূত্রে অনন্ত জীবন লাভের সর্ত্তাবলী সম্বন্ধে আমাদের ত্রাণকর্তা অতি প্রাঞ্জল ভাষায় বর্ণনা করিয়াছেন । যাহারা আমাদের মনোযোগের, সহানুভূতির, ও প্রেমের ভিখারী, লূক ১০ : ৩০-৩৬ পদের আহত ও লুণ্ঠিত ব্যক্তি দ্বারা তাহাদিগকে য়নির্দেশ করে । সে সকল অভাবগ্রস্ত ও দুর্ভাগ্য মানব আমাদের দৃষ্টিপথে পতিত হয়,— তাহারা যে কেহই হউক না কেন,— আমরা যদি তাহাদের তুচ্ছ করি, তবে আমাদের অনন্ত জীবন লাভের কোনই আশা নাই ; কারণ আমরা ঈশ্বরের কোনই দাবী-দাওয়া পালন করিতেছি না । এই সকল দুঃস্থ লোক হয়তো আমাদের বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজন নহে বলিয়া আমরা তাহাদের প্রতি দয়ালু ও সহানুভূতিসম্পন্ন নহি । যে দ্বিতীয় আজ্ঞাটীতে শেষ ছয়টী আজ্ঞা ঝুলিতেছে, সহমানবের প্রতি সহানুভূতিহীন হইলে আপনি সেই আজ্ঞাটী লঙ্ঘন করিতেছেন । আবার এক আজ্ঞায় স্থলিত হইলে সকল আজ্ঞার জন্যই দায়ী হইতে হয় । দশ আজ্ঞার প্রথম চারিটী আজ্ঞায় ঈশ্বরের যে দাবীদাওয়া রহিয়াছে, যাহারা অভাবগ্রস্ত ও ক্লেশাপন্নদিগের প্রতি উদাসীন, তাহারা সেই সকল দাবীদাওয়া পালনের নিমিত্ত আপন আপন হৃদয় একাগ্র করে না । আর ইহাতে প্রতিমাগণ, হৃদয় ও প্রীতি সমূহ অধিকার করিয়া লয়, ফলে ঈশ্বর অবমানিত হইয়া হৃদয়ের উপরে আর একচ্ছত্র রাজত্ব করেন না ।3 CCh 235.3

যেমন লৌহ-লেখনী দ্বারা প্রান্তরের উপরের লেখা হইয়া থাকে, তেমনি বিবেকের উপরে লেখা হইবে যে, যে বাক্তি দয়া , সহানুভূতি ও ধার্ম্মিকতার অবমাননা করে, যে কেহ দরিদ্রদিককে তুচ্ছ করে, ক্লেশাপন্ন মানবজাতির অভাব অভিযোগের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করে, যে কেহ নির্ম্মম ও অভদ্র, চরিত্র গঠন কার্য্যে ঈশ্বর তাহার সহিত সহযোগিতা রক্ষা করিতে পারেন না । অন্যের প্রতি আমরা যখন কোমল সহানুভূতি-সম্পন্ন হই এবং তাহাদের অভাব মোচনের জন্য সর্ব্বপ্রকার সুযোগসুবিধা দান করি ও তাহাদের উপকার সাধন করি, তখনই অতি সহজে মনের ও অন্তঃকরণের উৎকর্ষ সাধিত হয় । আমাদের নিজেদের জন্য যত অধিক পারি, তত অধিক গ্রহণ করা ও দখলে রাখা আত্মার পক্ষে হানিকর । কিন্ত খ্রীষ্টের দলে থাকিয়া যাহারা ঈশ্বর-নির্দিষ্ট কার্য্যই করিবে, তাহারা খ্রীষ্টের যাবতীয় গুণাবলী ধারণ করিবে ।4 CCh 236.1

খ্রীষ্ট, সামাজিক উচ্চপদ ও জাতিভেদ মানেন না, তিনি জাগতিক সম্মান ও ধনসম্পত্তি হেয় জ্ঞান করেন । কিন্ত চরিত্রের ও উদ্দেশ্যে সম্পাদনের উচ্চমূল্য দিয়া থাকেন । যাহারা সবল ও জগতের কাছে প্রীতির পাত্র, তিনি তাহাদের পক্ষ অবলম্বন করেন না । পতিত মানবের উদ্ধার কল্পে জীবন্ত ঈশ্বরের পুত্র আপনাকে অবনত করিলেন । অঙ্গীকারের ও আশ্বাসের বাক্য দ্বারা হারাণ ও ধবংসোম্মুখ ব্যক্তিগণকে রক্ষার নিমিত্ত তিনি প্রতি নিয়ত চেষ্টা করিতেছেন । ঈশ্বরের অনুগামীগণের মধ্যে কে দুঃস্থগণের প্রতি সদয় ব্যবহার করিবে ও পর দুঃখে দুঃখিত হইবে, স্বর্গীয় দূতগণ তাহা মনোযোগ পূর্ব্বক দেখিতেছেন । ঈশ্বরের প্রজাগণের মধ্যে কাহারা যীশুর প্রেম প্রদর্শন করিবে, দূতগণ তাহা সুক্ষভাবে সন্দর্শন করিতেছেন ।5 CCh 236.2

আপনি কেবল পরোপকার করিবেন, ঈশ্বর মাত্র ইহাই চাহেন না, কিন্ত তিনি চাহেন, আপনার প্রফুল্ল বদন, আপনার আশার বাণী ও আপনার হস্ত দ্বারা আঁকড়াইয়া ধরণ । প্রভুর ক্লেশাপন্নদিগের সহিত সাক্ষাৎ করিতে গিয়া এমন অনেককে দেখিতে পাইবেন, যাহাদের মধ্য হইতে আশা চলিয়া গিয়াছে ; এইরূপ লোকদের হৃদয়ে আশার সঞ্চার করিয়া দিবেন । যাহাদের জীবন-খাদ্যের প্রয়োজন, ঈশ্বরের বাক্য হইতে তাহদিগকে জীবন-খাদ্য দান করিবেন । কেহ বা এমন আত্মিক-ব্যাধিগ্রস্ত, যাহার কোন জাগতিক মলম নাই, কিংবা চিকিৎসক তাহা সুস্থ করিতে পারে না ; এইরূপ লোকদের জন্য প্রার্থনা করিবেন ও তাহদিগকে যীশুর নিকটে লইয়া আসিবেন।6 CCh 237.1