পিতৃকুলপতিগণ ও ভাববাদীগণ

22/333

৬—শেথ: মানুষ যখন ঈশ্বরের প্রতি ফিরে এল

তার জন্মাধিকারের উত্তরাধিকারী হবার জন্য আদম আর একজন সন্তান লাভ করলেন । শেথ তার নাম, যে নাম তার ছেলেকে দেয়া হল তার অর্থ হল “নিযুক্ত” অথবা “ক্ষতিপূরণ”, “কেননা (মা বলিলেন), কয়িন কর্তৃক নিহত, হেবলের পরিবর্তে ঈশ্বর আমাকে আর একটি সন্তান দিলেন।” তার অন্যান্য ছেলেদের আদমের সাথে তার ছেলে শেথের চেহারার সাদৃশ্য অনেক বেশী ছিল, হেবলের পদক্ষেপের অনুসরণ করার জন্য (শেথ ছিলেন) অত্যন্ত উপযুক্ত চরিত্র। তথাপি তিনি কয়িনের থেকে কোন ভাবেই কোন অধিক স্বাভাবিক চরিত্রের অধিকারী ছিলেন না। কয়িনের মত শেথও তার মাতাপিতার পতিত চরিত্রের বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হন। কিন্তু তিনি পরিত্রাণদাতার বিষয়ে উপদেশ প্রাপ্ত হন। যেমন হেবল করে থাকবেন, ঠিক তেমনি তিনিও পাপী মানুষের মনকে স্রষ্টার প্রতি সম্মান ও বাধ্যতা দেখাবার দিকে ফেরাতে সচেষ্ট ছিলেন। PPBeng 45.1

“পরে শেথেরও পুত্র জন্মিল, আর তিনি তাহার নাম ইনোশ রাখিলেন । তকালে লোকেরা সদাপ্রভুর নামে ডাকিতে আরম্ভ করিল।” দুই শ্রেণীর পার্থক্য আরো প্রকট হয়ে উঠল। এক শ্রেণীর প্রকাশ্য ভাবে ঈশ্বরের প্রতি বাধ্যতা স্বীকার, আর অন্য শ্রেণীর ঈশ্বরের প্রতি ঘৃণা ও অবাধ্যতা। PPBeng 45.2

পতিত হওয়ার পূর্বে আমাদের প্রথম মাতা-পিতা শাব্বাথ পালন করতেন যা এদন বাগানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, এবং স্বর্গ হতে বিতাড়িত হওয়ার পরও তারা তা পালন করতে থাকলেন। যা সকলে দ্রুত বা ধীরে শিক্ষা করে তারা তা শিক্ষা করেছিলেন, তা হল স্বর্গীয় নীতি পবিত্র ও অলঙ্ঘনীয় এবং অবাধ্যতা শাস্তি অবশ্যই পেতে হয়। যারা ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন তারা সকলেই শাব্বাথকে সম্মান করতেন কিন্তু কয়িন ও তার বংশধরেরা ঈশ্বর যে দিনে বিশ্রাম করেছিলেন সে দিনকে সম্মান করত না। PPBeng 45.3

এখন কয়িন একটি শহর স্থাপন করল এবং তার বড় ছেলের নামে শহরটির নামাকরণ করল। সে ঈশ্বরের সম্মুখ হতে সরে গিয়েছিল যেন যারা এই পৃথিবীর দেবতাদের আরাধনা করে তাদের এক বৃহৎ দলের প্রধান হিসাবে সে পৃথিবী হতে সম্পদ ও আনন্দ খুঁজে নিতে পারে। যা কিছু শুধু পৃথিবীর সহিত সম্পর্কিত এবং বস্তু সম্পর্কিত উন্নীত তাতে তার বংশধরেরা সুখ্যাতি অর্জন করল । কিন্তু মানুষের জন্য ঈশ্বর যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন তারা ছিল তার বিপক্ষে। তার লাইনের পঞ্চমতম বংশধর লেমক, হত্যার অপরাধের সহিত বহু-বিবাহের অপরাধও যুক্ত করল। হেবল মেষপালকের জীবন যাপন করতেন, আর শেথের বংশধর একই পথ অনুসরণ করলেন, এবং নিজেদের পৃথিবীতে পরদেশী ও প্রবাসী” হিসাবে গণ্য করলেন ও “আরো উত্তম দেশের, অর্থাৎ স্বর্গীয় দেশের” অনুসন্ধানে থাকলেন। ইব্রীয় ১১:১৩, ১৬ । PPBeng 45.4

কিছুকাল পর্যন্ত এই দুই শ্রেণী পৃথক পৃথক থাকলেন। তাদের প্রথম বাসস্থান হতে ছড়াতে ছড়াতে কয়িনের বংশধরেরা, যেখানে শেথের বংশধরেরা থাকত সে সকল সমভূমি ও উপত্যকাতে ছড়িয়ে পড়ল। তাদের সংক্রামক প্রভাব হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য পরবর্তী দলের লোকেরা (অর্থাৎ শেথের বংশধরেরা) পাহাড়ে পালিয়ে গেল এবং সেখানে ঈশ্বরের পবিত্রতা রক্ষা করতে থাকল। কিন্তু কালক্রমে তারা উপত্যকার অধিবাসীদের সাথে মেলামেশার সাহস গেল। “ঈশ্বরের পুত্রেরা মনুষ্যদের কন্যাদিগকে খুব সুন্দরী” দেখতে পেল। তাদের সহিত বিবাহে আবদ্ধ হয়ে শেথের সন্তানেরা ঈশ্বরকে অসন্তুষ্ট করল। তাদের সম্মুখস্থ অসংখ্য প্রলোভনের কারণে অনেকেই পাপের মধ্যে জড়িয়ে পড়ল, এবং তাদের শুদ্ধ ও পবিত্র চরিত্র হারিয়ে ফেলল। কলুষিতদের সহিত মেলামেশার ফলে তারাও তাদের মতই হয়ে পড়ল। সপ্তম আজ্ঞার নিষেধের প্রতি অবহেলা দেখিয়ে “যাহার যাহাকে ইচ্ছা, সে তাহাকে বিবাহ করিতে লাগিল।” শেখের সন্তানেরা “কয়িনের পথে” চলতে লাগল । যিহূদা ১১। তারা পৃথিবীর উন্নতি ও আনন্দে মনোনিবেশ করল এবং ঈশ্বরের আজ্ঞার অবহেলা করতে শুরু করল। পৃথিবী পাপে পরিপূর্ণ হয়ে পড়ল । PPBeng 46.1