পিতৃকুলপতিগণ ও ভাববাদীগণ

21/333

করিনের শাস্তি

আবার ঈশ্বর কয়িনকে বললেন, “তুমি কি করিয়াছ? তোমার ভ্রাতার রক্ত ভূমি হইতে আমার কাছে ক্রন্দন করিতেছে।” কয়িন চিন্তা করার সময় পেয়েছিল। সে যা করেছে এবং তা গোপন করার জন্য যে মিথ্যা বলেছে তার গুরুত্ব সে অনুধাবন করতে পারল; কিন্তু তথাপি সে বিদ্রোহীই থাকল, এবং শাস্তি প্রদানে আর দেরী করা হল না। স্বর্গীয় স্বর ভয়ঙ্কর বাণী উচ্চারণ করলেনঃ “আর এখন, যে ভূমি তোমার হাত হইতে তোমার ভাইয়ের রক্ত গ্রহণের জন্য আপন মুখ খুলিয়াছে, সেই ভূমিতে তুমি পলাতক হইলে । ভূমিতে কৃষি কাজ করিলেও তাহা আপন শক্তি দিয়া তোমার উপকার আর করিবে না; তুমি পৃথিবীতে পলাতক ও ভব ঘুরে হইবে।” PPBeng 42.3

অনুগ্রহকারী স্রষ্টা তথাপি তার জীবন রক্ষা করলেন এবং অনুতাপ করার সুযোগ তাকে দিলেন। কিন্তু কয়িন তার জীবন কালে তার হৃদয়কে শুধু কঠিনতর করে তুলল, স্বর্গীয় কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের উৎসাহ দিল, এবং পাপীদের বংশের প্রধানরূপে পরিগণিত হল। তার প্রভাব দুর্নীতি পরায়ণতার ক্ষমতাকে এমন বৃদ্ধি করল যে পৃথিবী দুর্নীতি ও অত্যাচারে পরিপূর্ণ হয়ে উঠল আর এর ধ্বংস প্রয়োজন হয়ে পড়ল । PPBeng 43.1

যদি পাপীকে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে ও চিরকাল বেঁচে থাকতে দেয়া হত তা হলে এর ফল কি হ'ত, কয়িন ও তার বংশধরদের অন্ধকারময় ইতিহাস এর দৃষ্টান্ত। ঈশ্বরের ধৈর্য্য দুষ্টকে আরো সাহসী ও বিদ্রোহী করে তুলল। কয়িনের উপর শাস্তি উচ্চারণের পনের শত বৎসর পর, অপরাধ ও নোংরামীতে পৃথিবী পরিপূর্ণ হয়ে পড়ল । এটি প্রমাণিত হলো যে পতিত জাতির উপর মৃত্যুদন্ড উচ্চারণ ন্যায় ও অনুগ্রহ পূর্ণ ছিল। মানুষ দীর্ঘকাল যাবত যতই পাপের মধ্যে বাস করে জীবন যাপন করতে থাকল, ততই তারা বেপরোয়া হয়ে উঠতে থাকল । PPBeng 43.2

শয়তান অনবরত ঈশ্বরের শাসন ও তাঁর চরিত্রকে মিথ্যা দিয়ে রঞ্জিত করে চলেছে এবং পৃথিবী নিবাসীদিগকে তার ছলনার মোহে আবদ্ধ রাখার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। ঈশ্বর আদি হতে শেষ পর্য্যন্ত দেখতে পান। তার পরিকল্পনাসমূহ ছিল দীর্ঘস্থায়ী ও ব্যাপক, শুধুমাত্র বিদ্রোহ দমনের জন্যই নয়, কিন্তু সমগ্র বিশ্বের নিকট এই বিদ্রোহের চরিত্র উন্মোচীত করার জন্য ও এর মাধ্যমে পাপের সহিত তার ব্যবহারের প্রজ্ঞা ও ধার্মিকতার দায়ীত্ব প্রমাণের জন্য। PPBeng 43.3

অন্যান্য পৃথিবীর অধিবাসীরা এই পৃথিবীর মহা-প্লাবনের আগের অবস্থা আগ্রহ সহকারে অবলোকন করছিল। ঈশ্বরের ব্যবস্থাকে এক পাশে রেখে লূসিফর যে প্রশাসন ব্যবস্থা স্বর্গে চালু করতে চেয়েছিল সেই প্রশাসন ব্যবস্থার ফলাফল তারা দেখতে সক্ষম হল। মানুষের হৃদয়ের চিন্তাসমূহ সর্বদাই মন্দ (আদিপুস্তক ৪:২৫, ৩৬), স্বর্গীয় নীতি পবিত্রতা, শান্তি ও প্রেমের বিরুদ্ধে যুদ্ধকারী । ইহা ছিল চরম কলুসতার এক দৃষ্টান্ত । PPBeng 43.4

যখন বিদ্রোহের সম্পূর্ণ মূলোৎপাটনের তাঁর পরিকল্পনা ধাপে ধাপে পরিপূর্ণতা লাভ করতে থাকল, মহা বিতর্কের সত্য সমূহ উন্মোচীত হ'ল, তখন ঈশ্বর সমগ্র বিশ্বের মহানুভূতিতা লাভ করলেন। দেখা যাবে যে যারা স্বর্গীয় আদর্শ পরিত্যাগ করেছেন তারা সকলেই খ্রীষ্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধে শয়তানের পক্ষ অবলম্বন করেছেন । যখন এই পৃথিবীর বিচারকর্তার বিচার হবে, এবং যারা তার পক্ষ অবলম্বন করেছেন তাদের ভাগ্য নিরূপিত হবে, তখন সমগ্র বিশ্ব ঘোষণা করবে, “ন্যায্য ও সত্য তোমার মার্গ সকল, হে জাতিগণের রাজন।” প্রকাশিত বাক্য ১৫:৩। PPBeng 44.1