পিতৃকুলপতিগণ ও ভাববাদীগণ

23/333

আদমের আয়ূষ্কাল

প্রায় এক হাজার বৎসর পর্যন্ত আদম পাপের ঢেউকে থামিয়ে দিতে চেষ্টা চালালেন। তার বংশধরদের ঈশ্বরের পথ সম্বন্ধে উপদেশ দিতে তাকে আদেশ করা হয়েছিল, এবং ঈশ্বর তার কাছে যা কিছু প্রকাশ করেছেন তিনি তা অত্যন্ত মূল্যবান বস্তু হিসেবে রক্ষা করতেন। বংশ পরম্পরায় তা শিক্ষা দিতেন । নবম বংশধরদের কাছে স্বর্গের মানুষের যে পবিত্র ও সুখময় সম্পত্তি রয়েছে তার বর্ণনা করলেন এবং যে কষ্ট ভোগের মাধ্যমে তাকে ঈশ্বর তাঁর ব্যবস্থা শক্তভাবে পালন করার প্রয়োজনীয়তা শিক্ষা দিয়েছেন এবং তাদের পরিত্রাণের যে অনুগ্রহ পূর্ণ বন্দোবস্ত করা হয়েছে তার ব্যাখ্যা দান সহকারে তিনি পতনের ইতিহাস তাদের নিকট তুলে ধরলেন। যে পাপ তার বংশধরদের উপর এমন ভয়ঙ্কর কষ্ট নিয়ে এসেছে তার জন্য তাকে প্রায়ই তীব্র ভাবে নিন্দা করা হত । PPBeng 46.2

যখন তিনি এদন বাগান ছেড়ে যান, তখন তাকে মৃত্যুবরণ করতে হবে একথা চিন্তা করে তিনি ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়তেন। তার নিজের পাপের জন্য অনুশোচনায় পরিপূর্ণ হয়ে ও হেবলের মৃত্যু ও কয়িনের অস্বীকৃতির দ্বারা সৃষ্ট দ্বিগুণ বিরহে ব্যথা পাওয়ার পর, আদম মানসিক যন্ত্রণার ভারে নূয়ে পড়লেন । যদিও প্রথমে মৃত্যুদন্ডকে ভয়ঙ্কর মনে হত, তথাপি প্রায় এক হাজার বৎসর যাবৎ পাপের ফলাফল দেখতে দেখতে, তার মনে হয়েছিল যে কষ্ট ও দুঃখভোগের জীবনকে অবসান করানো ঈশ্বরের অনুগ্রহেরই প্রকাশ । PPBeng 47.1

যেমন অনেকে ধারণা করে থাকেন, মহা বন্যার আগের যুগে একটি অজ্ঞতা ও বর্বরতার যুগ ছিল না । লোকদের প্রচন্ড শারীরিক ও মানসিক শক্তি ছিল, এবং তাদের সুবিধাদি ছিল অতুলনীয়। তাদের মানসিক ক্ষমতা অল্প বয়সেই বৃদ্ধি পেত, এবং যারা ঈশ্বরকে ভয় করে জীবন যাপন করতেন, জীবনভরই তারা জ্ঞানে এবং বুদ্ধিতে বৃদ্ধি পেতে থাকতেন। (তাদের সাথে তুলনায়) আমাদের কালের বিখ্যাত পন্ডিতদের মানসিক ও শারীরিক ক্ষমতায় নিম্নতর মনে হবে। যখন মানুষের বয়স কমে আসতে থাকল ও তার শারীরিক শক্তি ক্ষয় পেল, তখন তার মানসিক ক্ষমতাও হ্রাস পেল । PPBeng 47.2

এটা সত্যি যে আধুনিক যুগের লোকেরা তাদের পূর্ব পুরুষদের কার্য- ফলের উপকার পাচ্ছেন। জ্ঞান সমৃদ্ধ মনের লোকেরা যারা পেছনে আসবে তাদের জন্য নিজ কাজের ফল রেখে গেছেন। কিন্তু ঐ কালের লোকদের সুযোগ কতই না অধিক ছিল! তারা তাদের মধ্যে শত শত বৎসরের জন্য তাকে পেয়েছিল যে ঈশ্বরের সাদৃশ্যে তৈরী হয়েছিল। আদম স্রষ্টার নিকট হতে সৃষ্টির ইতিহাস শিক্ষা করেছিলেন; তিনি নিজে নয় শতাব্দির ঘটনাবলী অবলোকন করেছেন। মহা-বন্যার আগের লোকদের স্মৃতিশক্তি খুবই প্রখর ছিল যে তারা যা কিছু তাদের বলা হত তা ধরে রাখতে এবং পরবর্তী বংশধরদের কাছে হুবহু বর্ণনা করতে পারতেন। শত শত বৎসর কাল ধরে সাত পুরুষ এক সাথে পৃথিবীপৃষ্ঠে বাস করেছিলেন এবং সকলের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দ্বারা লাভবান হচ্ছিলেন । PPBeng 47.3

ধর্মীয় অন্ধকারে পূর্ণ যুগ না হয়ে বরং ঐ যুগ ছিল মহা আলোর যুগ। সমস্ত পৃথিবীর সুযোগ ছিল আমাদের নিকট থেকে শিক্ষা লাভ করার এবং যারা ঈশ্বরকে ভয় করতেন তারা খ্রীষ্টকে এবং দূতগণকেও শিক্ষকরূপে পেতেন । এবং ঈশ্বরের বাগান যা অনেক শতাব্দি ধরে মানুষের মধ্যে ছিল, তাও তাদের নিকট এক নীরব সাক্ষীরূপে দাঁড়িয়ে ছিল । এদন বাগান দৃষ্টির সীমায় ছিল এবং এর প্রবেশ পথ প্রহরা-রত দূতদের দ্বারা রক্ষিত ছিল। দৃশ্যমান বাগান, দুটি বৃক্ষের ইতিহাস, এগুলো অবশ্যম্ভাবি বাস্তব ছিল। আর আদম যখন তাদের মধ্যে ছিলেন, তখন ঈশ্বরের সর্বময় কর্তৃত্বের অস্তিত্বের বাস্তবতা সম্বন্ধে দ্রুত কোন প্রশ্ন উত্থাপন করা হত না। অন্যায় ও অবিচার বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও, একদল লোক ছিলেন যারা ঈশ্বরের সাথে যোগাযোগ রাখতেন, তারা বুদ্ধি সম্পন্ন এবং অত্যন্ত কৃতকার্যতা সম্পন্ন লোক। তাদের এক মহা উদ্দেশ্য ছিল বিশুদ্ধ চরিত্র সৃষ্টি করা, শুধুমাত্র তাদের সময়ের লোকদের মধ্যে নয়, কিন্তু ভবিষ্যৎ বংশধরদের মধ্যে। শাস্ত্রে মাত্র অল্প কয়েকজনের কথা আছে, কিন্তু প্রত্যেক যুগে ঈশ্বরের বিশ্বস্ত সাক্ষী, খাঁটি হৃদয়ে আরাধনাকারী লোক ছিলেন । PPBeng 47.4