প্রেরিতগণের কার্য-বিবরণ

14/59

১৩শ অধ্যায়—প্রস্তুতির দিনগুলো

বাপ্তিস্ম গ্রহণের পর পৌল তাঁর উপবাস ভঙ্গ করলেন এবং “কয়েক দিন দম্মেশকস্থ শিষ্যগনের সঙ্গে থাকিলেন; এবং অমনি সমাজ—গৃহে সমাজ—গৃহে যীশুকে এই বলিয়া প্রচার করিতে লাগিলেন যে, তিনিই ঈশ্বরের পুত্র।” তিনি সাহসিকতার সাথে নাসরতীয় যীশুকেই বহুল প্রতীক্ষিত মশীহ হিসেবে ঘোষ্ণা দিতে লাগলেন, যিনি “শাস্ত্রানুসারে.... আমাদের পাপের জন্য মরিলেন, ও কবর প্রাপ্ত হইলেন,... তৃতীয় দিবসে উত্থাপিত হইয়াছেন;” এরপর তিনি তাঁর বারো জন শিষ্য সহ আরও অনেককে দেখা দিয়েছেন। “সকলের শেষ,” পৌল আরও বললেন,“অকালজাতের ন্যায় যে আমি , আমাকেও দেখা দিলেন।” ১ করিন্থীয় ১৫:৩,৪,৮। ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে উপস্থিত তাঁর যুক্তিগুলো এতটাই অকাট্য ছিল এবং তিনি এতটা একাগ্রভাবে তাঁর বক্তব্যে ঈশ্বরের ক্ষমতা প্রকাশ করতেন যে , যিহূদীরা স্তম্ভিত হয়ে থাকত এবং তাঁকে কিছু বলার মত অবস্থা তাদের থাকত না। AABen 99.1

পৈলের মন পরিবর্তনের ঘটনাটি যিহূদীদের কাছে অত্যন্ত বিস্ময়ের ব্যাপার হয়ে উঠল। যিনি দামেস্কে গিয়েছিলেন ” প্রধান যাজকদের নিকটে ক্ষমতা ও আজ্ঞাপত্র লইয়া” (প্রেরিত২৬:১২) বিশ্বাসীদেরকে বন্দী করে শাস্তি দেওয়ার জন্য , তিনি এখন ক্রূশবিদ্ধ ও পুনরুত্থিত যীশুর সুসমাচার প্রচার করছেন, যারা ইতোমধ্যে শিষ্য হয়েছেন তাদের মণ্ডলীতেই তিনি ক্রমাগতভাবে নতুন বিশ্বাসী যোগ করছেন। AABen 99.2

এর আগে পৌল যিহূদী ধর্মের উৎসাহী রক্ষক এবং যীশুর অনুসারীদের প্রতি চরম বিদ্বেষী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর অসম সাহস, স্বাধীনচেতা মনোভাব , অধ্যবসায় ,মেধা ও শিক্ষা তাঁকে যে কোন দায়িত্ব পালনের জন্য দারুনভাবে যোগ্য প্রমাণিত করেছিল। তিনি খুব স্পষ্ট ভাষায় যে কোন বিষয়ে ব্যাখ্যা করতে পারতেন এবং তীব্র রসবোধ দিয়ে তাঁর AABen 99.3

______________________________________«

এই অধ্যায়টি প্রেরিত ৯:১৯—৩০ পদের উপর ভিত্তি করে রচিত AABen 99.4

______________________________________«

প্রতিদ্বন্দীকে কোণঠাসা করে দিতে পারতেন। আর এখন যিহূদীরা এই যুবকটিকে এমন লোকদের সাথে হাত মেলাতে দেখছে যাদেরকে তিনি আগে নির্যাতিত করেছেন, উপন্ত তিনি যীশুর নামে নির্ভীকভাবে প্রচার করে চলেছেন। AABen 100.1

একজন সেনাপতি যখন যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত হন তখন সেটা তাঁর বাহিনীর জন্য ক্ষতিস্বরূপ, তবে তাঁর এই মৃত্যু শত্রুপক্ষের জন্য বাড়তি কোন শক্তি যোগান দেয় না। কিন্তু কোন প্রভাবশালী ব্যক্তি যখন শত্রুপক্ষে যোগ দেয় , তখন তাঁর স্থানটি যে শুধু শুণ্য হয়ে অড়ে তাই নয়, বরং সেই সাথে যার সাথে তিনি যোগ দিচ্ছেন সেও দারুনভাবে লাভবান হয়। তার্ষ নগরীর শৌল দামেস্কে যাওয়ার পথে খুব সহজেই প্রভুর হাতে মারা পড়তে পারতেন এবং তাতে করে পরিকল্পনা অনুসারে শৌলকে যে শুধু বাচিয়েই রাখলেন তা নয়, উপরন্তু তিনি তাঁর মন পরিবর্তন করলেন এবং সুসমালোচক পৌলের ছিল দৃঢ় প্রত্যয় এবং অদম্য সাহস, যা আদি মণ্ডলীর প্রত্যেক পরিচরযাকারীর অন্যতম কাঙ্ক্ষিত গুণ ছিল। AABen 100.2

পৌল যখন দামেস্কে খ্রীষ্টের নাম প্রচার করছিলেন সে সময় যারা তাঁর কথা শুঞ্ছিল প্রত্যেককে অবাক হয়ে বলতে লাগল, ” এ কি সে ব্যক্তি নয়, যে এই নামে যাঁহারা ডাকে , তাঁহাদিগকে যিরূশালেমে উৎপাটন করিত, এবং এখানে এই জন্যই আসিয়াছিল , যেন তাঁহাদিগকে বন্ধন করিয়া প্রধান যাজকপদের নিকট লইয়া যায়?” পৌল এই ঘোষণা দিলেন যে, তিনি কোন হঠকারি চিন্তা বা প্ররোচণার কারণে তাঁর বিশ্বাস পরিবর্তন করেননি , বরং তিনি সমস্ত সাক্ষ্য প্রমান পেয়ছেন বলেই মন পরিবর্তন করেছেন। সুসমাচার প্রচারের মধ্য দিয়ে তিনি খ্রীষ্টের সম্পর্কে সমস্ত ভাববাণীর ব্যাখ্যা করতে লাগলেন। তিনি দেখালেন যে , এই সমস্ত ভবিষ্যদ্বাণী নাসরতীয় যীশুর মধ্য দিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সাধিত হয়েছে। তাঁর বিশ্বাসের ভিত্তি ছিল এই ভবিষ্যদ্বাণির সুস্পষ্ট বাক্য। AABen 100.3

পৌল যখন তাঁর বিস্ময়াভুভূত শ্রোতাদেরকে বলছিলেন যেন তারা ” মন ফিরায়, ও ঈস্বরের প্রতি ফিরিয়া আইসে, মন পরিবর্তনের উপযোগী কার্য করে” (প্রেরিত২৬:২০), তখন তিনি “উত্তর উত্তর শক্তিমান হইয়া উঠিলেন, এবং দম্মেশক—নিবাসী যিহূদীগকে নিরুত্তর করিতে লাগিলেন, প্রমাণ দিতে লাগিলেন যে ইনিই খ্রীষ্ট।” কিন্তু অনেকেই তাদের অন্তর শক্ত করল এবং তাঁর মন পরিবর্তনের এই ঘটনায় তাদের বিস্ময় পরিবর্তিত হতে শুরু করল ঘৃণায়, যা তারা যীশুর প্রতিও দেখিয়েছিল। AABen 100.4

বিরোধিতা এত বেশি পরিমাণে বাড়তে লাগল যে , পৌল আর দামেস্কে পরিচর্যা কাজ করতে পারলেন না। স্বর্গের একজন দূত তখন তাঁকে জানালেন যেন তিনি “আরব দেশে” চলে যান(গালাতীয় ১:১৭) , যেখানে তিনি নিরাপদে কাজ করতে পারবেন। AABen 101.1

এখানে এই মরুদ্যানের মাঝে পৌল গবেষণা ও ধ্যানের জন্য খুব কম সুযোগ পেয়েছেন । তিনি খুব শান্তভাবে তাঁর অতীত অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করলেন এবং অনুতাপ করলেন। তিনি তাঁর সমস্ত অন্তঃকরণ দিয়ে ঈশ্বরের কাছে এই নিশ্চয়তা লাভ করতে চাইছিলেন যে, যীশু যেন তাঁর আসন্ন পরিচর্যা কাজে তাঁর সাথে সাথে থাকেন। তিনি তাঁর পূর্বের সমস্ত ধ্যান ধারণা ও সংস্কার মন থেকে ঝেড়ে ফেললেন যা এতদিন ধরে তাঁর জীবনকে একটি অবস্থানে নিয়ে এসেছে , এবং সত্যের উৎস থেকে সমস্ত নির্দেশণা পেয়ে অন্তরকে পূর্ণ করতে লাগলেন। যীশু তাঁর সাথে সাথে রহাকলেন এবং তাঁকে বিশ্বাসে প্রতিষ্ঠিত করলেন, সেই সাথে তাঁকে প্রচুর পরিমাণে পেজ্ঞা ও অনুগ্রহ দান করলেন। AABen 101.2

মানুষের মন যখন ঈশ্বরের মনের সাথে আম্মিলিত হয় , সসীম যখন অসীমের সাথে মিলিত হয় , তখন শ্রীর, মন ও আত্মার যে অনুভূতি হয় তা অননুমেয়। এ ধরনের মিলনেই মানুষের সর্বোচ্চ শিক্ষা নিহিত। এটিওই ঈশ্বর কর্তৃক মানুষের জন্য তাঁর নিজ শিক্ষণ পদ্ধতিঃ “ঈশ্বরের সহিত পরিচিত হও” (ইয়োব ২২:২১), এটিই মানব জাতির প্রতি তাঁর বার্তা। AABen 101.3

অননিয়েরর সাথে সাক্ষাৎ হওার প পৌলকে যে দায়িত্ব ভার দেওয়া হইয়েছিল তা তাঁর অন্তরের ক্রমবর্ধমান ভার আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। যখন পৌল এই কথাটি শুনলেন , “ভ্রাতঃ শৌল, দৃষ্টিপ্রাপ্ত হও,” ঠিক তখন পৌল প্রথমবারের মত এই ঈশ্বরভক্ত মানুষটির চেহারা চোখের সামনে দেখতে পেলেন এবং অননিয় পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হয়ে তাঁকে বলে উঠলেনঃ ” আমাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বে তোমাকে নিযুক্ত করিয়াছেন, যেন তুমি তাঁহার ইচ্ছা জ্ঞাত হও ,এবং সেই ধর্মময়কে দেখিতে ও তাঁহার মুখের বাণী শুনিতে পাও; কারণ তুমি যাহা যাহা দেখিয়াছ ও শুনিয়াছ, সেই বিষয়ে সকল মনুষ্যের নিকটে তাঁহার সাক্ষী হইবে । আর এখন কেন বিলম্ব করিতেছ? উঠ, তাঁহার নামে ডাকিয়া বাপ্তাইজিত হও, ও তোমার পাপ ধুইরা ফেল।” প্রেরিত ২২:১৩—১৬। AABen 101.4

দামেস্কের পথে যীশু যখন শৌলকে পথরুদ্ধ করলেন সে সময় তিনি যীশুর মুখে যে কথা শুনেছিলেন তাঁর সাথে এই কথার চমৎকার মিল তিনি খুঁজে পেলেন। যীশু তাঁকে বলেছিলেনঃ “তুমি যে যে বিষয়ে আমাকে দেখিয়াছ, ও যে যে বিষয়ে আমি তোমাকে দর্শন দিব, সেই সকল বিষয়ে যেন তোমাকে সেবক ও সাক্ষী নিযুক্ত করি, এই অভিপ্রায়ে তোমাকে দর্শন দিলাম। আমি যাহাদের নিকটে তোমাকে প্রেরণ করিতেছি, সেই প্রজালোকদের ও পরজাতীয় লোকদের হইতে তোমাদের উদ্ধার করিব, যেন তুমি তাহাদের চক্ষু খুলিয়া দেও, যেন তাহারা অন্ধকার হইতে জ্যোতির প্রতি , এবং শয়তানের কর্তৃত্ব হইতে ঈশ্বরের প্রতি ফিরিয়া আইসে,যেন আমাতে বিশ্বাস কর্ণ দ্বারা পাপের মোচন ও পবিত্রীকৃত লোকদের মধ্যে অধিকার প্রাপ্ত হয়।” প্রেরিত ২৬:১৬—১৮। AABen 102.1

তিনি যখন এই বিষয়টি নিজের অন্তরে রেখে চিন্তা করতে শুরু করলেন তখন তিনি আরও স্পষ্টভাবে বুঝতে পারলেন “ঈশ্বরের ইচ্ছাক্রমে যীশু খ্রীষ্টের আহূত প্রেরিত” হওয়ার অর্থ কী (১ করিন্থীয় ১:১)। তাঁর এই আহ্বান “মানুষ্যদের হইতে নয় , মানুষ্যের দ্বারাও নয় , কিন্তু যীশু খ্রীষ্টের দ্বারা, এবং যিনি মৃতগণের মধ্য হইতে তাঁহাকে উঠাইয়াছেন , সে পিতা ঈশ্বরের দ্বারা নিযুক্ত ।” গলাতীয় ১:১ । তাঁর সামনে যে বড় কাজ পড়ে আছে তাঁর জন্য তিনি অনেকটা সময় ঢরে পবিত্র শাস্ত্র অধ্যায়ন করলেন ,“তাহাও বিজ্ঞানের বাক্য নয় যেন খ্রীষ্টের ক্রূশ বিফল না হয়,” “বরং আত্মার ও পরাক্রমের প্রদর্শনযুক্ত ,” যে যারা শ্রবণ করে তাদের বিশ্বাস “মানুষ্যদের জ্ঞানযুক্ত না হইয়া ঈশ্বরের পরাক্রমযুক্ত হয়।” ১ করিন্থীয় ১:১৭; ২:৪,৫। AABen 102.2

পৌল যখন পবিত্র শাস্ত্র অধ্যায়ন করেছেন সে সময় তিনি শিখেছেন যে , “যেহেতু মাংস অনুসারে জ্ঞানবান অনেকে নাই , পরাক্রমী অনেক নাই , উচ্চপদস্থ অনেক নাই; কিন্তু ঈশ্বর জগতীস্থ মূর্খ বিষয় সকল মনোনীত করিলেন, যেন জ্ঞানবানদিগকে লজ্জা দেন; এবং ঈশ্বর জগতের দুর্বল বিষয়ে সকল মনোনীত করিলেন, যেন শক্তিমন্ত বিষয় সকলকে লজ্জা দেন’ এবং জগতের যাহা যাহা নীচ ও যাহা যাহা তুচ্ছ , যাহা যাহা আছে , সেই সকল অকিঞ্চন করেন; যেন কোন মানুষ্য ঈশ্বরের সাক্ষাতে শ্লাঘা না করে।” ১ করিন্থীয় ১:২৬—২৯। আর তাই ক্রূশের আলোকে জগতের প্রজ্ঞাকে বিচেবনা করে , পৌল বলেছেন, “মানে স্থির করিয়াছিলাম, তোমাদের মধ্যে আর কিছুই জানিব না , কেবল যীশু খ্রীষ্টকে , এবং তাঁহাকে ক্রূশে হত বলিয়াই জানিব।” ১ করিন্থীয় ২:২ । পরবর্তীতে পৌল তাঁর গোটা পরিচর্যা কাজের কাল জুড়ে কখনোই তাঁর প্রজ্ঞা ও শক্তির উৎস থেকে দৃষ্টি সরাননি। বেশ কয়েক বছর পরেও তিনি কীভাবে এ কথা ঘোষণা করেছেন শুনুনঃ “আর বাস্তবিক আমার প্রভু খ্রীষ্ট যীশুর জ্ঞানের শ্রেষ্ঠতা প্রযুক্ত আমি সকলই ক্ষতি বলিয়া গণ্য করিতেছি ; তাঁহার নিমিত্ত সমস্তেরই ক্ষতি সহ্য করিয়াছি... যেন খ্রীষ্টকে লাভ করি , এবং তাঁহাতেই যেন আমাকে দেখিতে পাওয়া যায়; আমার নিজের ধার্মিকতা, যাহা ব্যবস্থা হইতে প্রাপ্য, তাহা যেন আমার না হয় ,কিন্তুযে ধার্মিকতা খ্রীষ্টে বিশ্বাস দ্বারা হয়, বিশ্বাসমূলক যে ধার্মিকতা ঈশ্বর হইতে পাওয়া যায় , তাহাই দুঃখভোগের সহভাগিতা জানিতে পারি।” ফিলিপীয় ৩:৮ — ১০। AABen 102.3

আরব থেকে পৌল “দম্মেশকে ফিরিয়া” আসিলেন (গালাতীয় ১:১৭) এবং “যীশুর নামে সাহাসপূর্বক প্রচার ” করতে শুরু করলেন। তাঁর যুক্তি তর্কের প্রজ্ঞায় টিকতে না পেরে যিহূদীরা “তাঁহাকে বধ করিবার জন্য চেষ্টা করিতে লাগিল।” নাগরীর প্রধান দ্বার দিন —রাত কঠোর পাহারা দেওয়া হত যেন তিনি কোনভাবে পালাতে না পারেন। এই সমস্যার কারণে শিষ্যরা ঈশ্বরের সাহায্য কামনা করলেন এবং অবশেষে “তাঁহার শিষ্যগন তাঁহাকে রাত্রে লইয়া একটি ঝুড়িতে করিয়া প্রাচীর দিয়া নামাইয়া দিল।” প্রেরির ৯:২৫। AABen 103.1

দম্মেশক থেকে পালাবার পর পৌল যিরূশালেমে গেলেন। তাঁর ধর্মান্তরের পর প্রায় তিন বছর এর মধ্যে কেটে গেছে । তাঁর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল পিতরের সাথে দেখা করা , যা তিনি পরবর্তীতে বলেছেন, ষরের পৌঁছানোর পর তিনিই ” শিষ্যবর্গের সহিত যোগ দিতে চেষ্টা করিলেন; কিন্তু সকলে তাঁহাকে ভয় করিল , তিনি যে শিষ্য, ইহা বিশ্বাস করিল না।” তাদের জন্য এ কথা বিশ্বাস করা কষ্টকর ছিল যে , তিনি একজন পূর্বতন ফরীশী ছিলেন এবং মণ্ডলীর প্রচুর ক্ষতি সাধন করেছেন, অথচ এখন তিনি যীশুর একজন অনুসারী হয়েছেন । “তখন বার্ণবা তাহার হাত ধরিয়া প্রেরিতদের নিকটে লইয়া গেলেন, এবং পথের মধ্যে তিনি কিরূপে প্রভুকে দেখিতে পাইয়াছেন, ও প্রভু যে তাহার সহিত কথা বলিয়াছেন, এবং কিরূপে তিনি দম্মেশকে যীশুর নামে সাহসপূর্বক প্রচার করিয়াছেন, এই সকল তাহাদের কাছে বর্ণনা করিলেন ।” AABen 103.2

এই কথা শুনে শিষ্যেরা তাকে নিজেদের একজন হিসেবে গ্রহণ করে নিলেন। খুব দ্রুত তারা অনেকভাবে প্রমাণ পেলেন যে, তিনি শ্বীষ্টের অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন। অযিহুদীদের কাছে ভবিষ্যৎ প্রেরিত এখন শহরে এসে গেছেন, যেখানে তার পূর্বতন অনেক সহযোগী বাস করেন এবং এই যিহুদী নেতাদের যা ত্রাণকর্তার আগমনের মধ্য দিয়ে পরিপূর্ণতা পেয়েছে। পৌল এ ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলেন যে, ইন্বায়েলের এই যে ধর্মগুরুদের সাথে এক সময় তিনি ওঠাবসা করেছেন তারা নিশ্চয়ই আন্তরিকতার সাথে তার কথা শুনবেন। কিন্তু তিনি তার যিহুদী ভাইদের ধ্যান ধারণাকে খাটো করে দেখেছিলেন এবং তাদের সাথে কথা বলতে গিয়ে বরং তিনি হতাশ হলেন । যদিও তিনি “প্রভুর কথোপকথন ও তর্ক করিতেন,” যিহুদী মণ্ডলীর প্রধান হিসেবে যে নেতারা তাহাকে বধ করিবার জন্য চেষ্টা করিতে লাগিল।” পৌলের হৃদয় দুখে ভারাক্রান্ত হল। তাদের মধ্যে একজনকেও যদি তিনি সত্যের পথে আনতে পারতেন তাহলে তিনি তার জীবন উৎসর্গ করতেও রাজি ছিলেন। তিনি লজ্জাবনত চিত্তে সাক্ষ্যমর দ্ভিফানের মৃত্যুতে তার সক্রিয় অংশগ্রহণের কথা স্মরণ করলেন, আর এখন তিনি সেই স্তিফানের প্রচারিত সত্যকেই তার জীবনের মুলমন্ত্র হিসেবে প্রচার করছেন। AABen 104.1

যারা বিশ্বাস করতে অস্বীকৃতি জানালেন তাদের পক্ষে ভার বহন করেন পৌল ধর্মধামে প্রার্থনা করতে লাগলেন, যেমনটা তিনি পরবর্তীতে নিজেই সাক্ষ্য দিয়েছেন, সে সময় তিনি গভীর নিদ্রায় মগ্ন হয়েছিলেন; আর তখন স্বর্গের একজন দূত তার কাছে এসে উপস্থিত হয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, “ত্বুরা কর, শীঘ্ব যিরূশালেম হইতে বাহির হও, কেননা এই লোকেরা আমার বিষয়ে তোমার সাক্ষ্য গ্রাহ্য করিবে না।” প্রেরিত ২২:১৮। AABen 104.2

পৌল যিরূশালেমেই থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যেখানে তিনি সরাসরি বিরোধিতার মুখোমুখি হতে পারবেন । তার কাছে পালিয়ে যাওয়াটা ছিল কাপুরুষোচিত কাজ, কারণ এখানে থেকে তিনি গোড়া যিহুদীদের মধ্যে সুসমাচারের বার্তা প্রচার করার মানস করেছিলেন, যদিও এর জন্য হয়তো এখানেই তার জীবন বিসর্জন দিতে হত । আর তাই এই দর্শনের জবাবে তিনি বললেন, “প্রভূ, তাহারা ত জানে যে, যাহারা তোমাতে বিশ্বাস করিত, আমি প্রতি সাজ—গৃহে তাহাদিগকে কারাবদ্ধ করিতাম ও প্রহার করিতাম; আর যখন সম্মতি দিতেছিলাম, ও যাহারা তাহাকে বধ করিতেছিল, তাহাদের বন্ত্র রক্ষা করিতেছিলাম।” কিন্তু ঈশ্বর চাননি যে তার এই দাস নিজ জীবনকে এভাবে বিপন্ন করবেন; তাই স্বর্গের দূত তাকে জবাব দিলেন, “প্রস্থান কর, কেননা আমি তোমাকে দূরে পরজাতিগণের কাছে প্রেরণ করিব ।” প্রেরিত ২২:১৯—২১। AABen 105.1

এই দর্শনটির কথা জানতে পেরে বিশ্বাসী ভাইয়ের পৌলকে গোপনে যিরূশালেম থেকে পালিয়ে যেতে সুযোগ করে দিলেন, কারণ যে কোন মুহূর্তে তাকে মেরে ফেলা হতে পারে। “ভ্রাতৃগণ ইহা জানিতে পাইয়া তাহাকে কৈসরিয়াতে লইয়া গেলেন, এবং সেখান হইতে তার্ষ নগরে পাঠাইয়া দিলেন ।” পৌলের প্রস্থানের কারণে যিহুদীদের ভয়াবহ নিপীড়ন কিছু দিনের জন্য বন্ধ হল এবং মণ্ডলী কিছু দিনের জন্য রেহাই পেল, যার ফলে আরও অনেক মানুষ মগ্ডলীতে বিশ্বাসী হিসেবে যুক্ত হতে লাগল । AABen 105.2