সুষম শিক্ষা

29/67

মৃত্যুর মধ্য দিয়ে জীবন

বীজ বােনার বিষয়টি উদার মনে দান করা শিক্ষা দেয়। “যে অল্প পরিমাণে বীজ বুনে সে অল্প পরিমাণে শস্যও কার্টিবে; আর যে ব্যক্তি আশীর্বাদের সহিত বীজ বুনে সে আশীর্বাদের সহিত শস্যও কাটিবে।” ২ করিন্থীয় ৯:৬। EdBen 100.1

সদাপ্রভু বলেন, “ধন্য তােমরা, যাহারা সমস্ত জলপ্রবাহের ধারে বীজবপন কর।” যিশাইয় ৩২:২০। জল প্রবাহের ধারে বীজ বােনার অর্থ যখনই আমার সাহায্য প্রয়ােজন তখন দান করা। এতে কেউ দরিদ্র হবে না । “যে প্রচুর পরিমাণে বীজ বপন করে, সে প্রচুর পরিমাণে শস্যও কাটবে।” বীজ ছড়িয়ে দেবার মাধ্যমে বীজবাপক তার বীজ বাড়িয়ে তােলেন। সুতরাং দানের মাধ্যমে আমরা আমাদের আশীর্বাদ বাড়াতে পারি। ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা একটি পর্যাপ্ততার প্রতিজ্ঞা রাখে যেন আমরা অবিরত দান করতে পারি। EdBen 100.2

যেমন আমরা ইহ জীবনের আশীর্বাদ ভাগাভাগি করি, তখন প্রাপকের কৃতজ্ঞতা অন্তঃকরণকে আত্মিক আশীর্বাদ লাভের জন্য প্রস্তুত করে, এবং অনন্ত জীবনের জন্য একটি ফসল উৎপন্ন হয়। EdBen 100.3

জমিতে বীজ বােনার মাধ্যমে, ত্রাণকর্তা আমাদের জন্য তাঁর আত্মোৎসর্গের দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “গােমের বীজ যদি মৃত্তিকায় পড়িয়া না মরে, তবে তাহা একটিমাত্র থাকে; কিন্তু যদি মরে তবে অনেক অনেক ফল উৎপন্ন করে।” যােহন ১২:২৪। কেবল খ্রীষ্টের বীজের ত্যাগ স্বীকারের মাধ্যমে ঈশ্বরের রাজ্যের জন্য ফল সংগ্রহ করা সম্ভব। উদ্ভিদ জগতের নিয়ম অনুসারে জীবন তারই মৃত্যুর ফল। EdBen 100.4

খ্রীষ্টের সঙ্গে সহকারী হিসেবে যারা ফল উৎপন্ন করেন তাদের। ব্যপারেও ঠিক তেমন; আত্ম-প্রেম, নিজ স্বার্থ ইত্যাদিকে বিসর্জন দিতে হবে; পৃথিবীর আবাদের তাগিদে জীবনকে লাঙলের ফলার হলরেখার মধ্যে নিক্ষেপ করতে হবে। মূলতঃ আত্মত্যাগের নিয়মই আত্ম-সংরক্ষণের নিয়ম। কৃষক জমিতে বীজ বােনার মাধ্যমে তার শস্য সংরক্ষণ করেন। সুতরাং সেই জীবন সংরক্ষণ করা হবে, যে জীবন ঈশ্বর এবং মানুষের সেবায় বিনামূল্যে দেয়া হয়। EdBen 100.5

বীজ মৃত্যু বরণ করে যেন সে নতুন জীবন নিয়ে অঙ্কুরিত হতে পারে। এর মাধ্যমে আমাদের পুনরুত্থানের শিক্ষা দেয়া হয়েছে। কবরের মধ্যে নামিয়ে রাখা মানব দেহ সম্পর্কে ঈশ্বর বলেছেন, “ক্ষয়ে বপন করা যায়, অক্ষয়তায় উত্থাপন করা হয়; অনাদরে বপন করা যায়, গৌরবে উত্থাপন করা হয়; দুর্বলতায় বপন করা যায়, শক্তিতে উত্থাপন করা হয়।” ১ করিন্থীয় ১৫:৪২, ৪৩। EdBen 101.1

বাবা-মা এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ এই শিক্ষা দেয়ার সময় ছাত্রছাত্রীদের হাতে কলমে শিক্ষা দেবেন। ছােট ছােট ছেলে-মেয়েরা নিজেরাই মাটি তৈরি করবে এবং বীজ বুনবে । যখন তারা কাজ করবে, তখন। অভিভাবক এবং শিক্ষক হৃদয়-জমির বিষয়ও বুঝিয়ে দেবেন, জমিতে উত্তম। অথবা মন্দ বীজ বােনা হয়, এবং যেমন প্রাকৃতিক বীজ বােনার জন্য জমি প্রস্তুত করবে, ঠিক তেমনি অন্তঃকরণও সত্যের বীজের জন্য প্রস্তুত করবে। মাটির মধ্যে বীজ বােনার মাধ্যমে আমরা খ্রীষ্টের মৃত্যুর বিষয় শিক্ষা লাভ করতে পারি; এবং যে অঙ্কুর গজিয়ে ওঠে, তা পুনরুত্থানের সত্যের প্রতীক। যেমন গাছ বেড়ে ওঠে, একই ভাবে প্রাকৃতিক এবং আত্মিক বপনের মধ্যে যােগাযােগ বহাল রাখা যেতে পারে। EdBen 101.2

তারুণ্যে একই ভাবে শিক্ষা দিতে হবে। জমি চাষ করা থেকে অবিরত শিক্ষা লাভ করা যেতে পারে। কেউই ফেলে রাখা জমি হতে আশু ফসল প্রত্যাশা করতে পারে না। মনােযােগ এবং ধৈর্য সহকারে মাটি প্রস্তুত করতে হবে, বীজ বুনতে হবে, এবং শস্যের যত্ন নিতে হবে। আত্মিক বীজ বােনার জন্য ততটাই শ্রম করতে হবে। হৃদয় বাগিচা চাষ করতে হবে। অনুতপ্ত হৃদয়ে মাটি চুর্ণ-বিচূর্ণ করতে হবে। মন্দ এবং আগাছা, গাছ পালা ও লতাকুঞ্জ যা শস্যকে চাপা দিয়ে রাখে তা উপড়ে ফেলতে হবে। যে জমিতে একবার কাটা গাছ জন্মে, তা কঠোর পরিশ্রমের দ্বারা পরিষ্কার করতে হবে এবং চাষের উপযােগি করতে হবে । ড্রপ হৃদয়ের মন্দ ইচ্ছার ওপরে একমাত্র খ্রীষ্টের নাম এবং তাঁর শক্তিতে, একান্ত চেষ্টায় বিজয়ী হওয়া সম্ভব হবে। EdBen 101.3

জমি চাষের সময় চিন্তাশীল শ্রমিক লক্ষ করবেন যে, তিনি সম্পদের যে একটু স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই সম্পদ যেন তার সামনে রাখা হচ্ছে। কৃষি কাজে অথবা জমি তৈরির জন্য যে নিয়মাবলী রয়েছে তার প্রতি মনােযােগ আকর্ষণ ব্যতিত কেউই তাতে সাফল্য অর্জন করতে পারবে না। প্রতিটি গাছপালার বিশেষ বিশেষ অভাব সম্পর্কে অবশ্যই অধ্যয়ন করতে হবে। বিভিন্ন গাছের বিভিন্ন প্রকারের মাটি প্রয়ােজন, এবং নিয়ন্ত্রণকারী আইন মেনে না চললে কৃতকার্যতা লাভ সম্ভব নয়। চারা গাছ এক জায়গা হতে অন্য জায়গায় লাগানাের সময় লক্ষ রাখতে হবে যেন শিকড় জড়িয়ে না থাকে এবং ভুল জায়গায় লাগানাে না হয়। চারা গাছটির যত্ন নিতে হবে, অতিরিক্ত শাখা ছেটে দিতে হবে এবং গাছের গােড়ায় জল দিতে হবে, রাতের ঘন কুয়াসা এবং দিনের বেলায় প্রখর রৌদ্রের তাপ থেকে চারা গাছকে রক্ষা করতে হবে, আগাছা পরিষ্কার করতে হবে, গাছটি রােগাক্রান্ত হয়েছে কিনা অথবা গাছে পােকা লেগেছে কি-না সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে; এ সব কেবল চরিত্রের উল্কর্ষ লাভ সম্পর্কেই গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয় না, কিন্তু তা ক্রমবৃদ্ধি সম্পর্কেও শিক্ষা দেয়। যত্নশীলতা, ধৈর্য প্রদর্শন বিভিন্ন বিষয়ের প্রতি মনােযােগ আকর্ষণ, নিয়মের প্রতি আজ্ঞাবহতা এ সবে এটি অত্যাবশ্যকীয় প্রশিক্ষণ দান করে। জীবনের রহস্য এবং প্রকৃতির সৌন্দর্যের সঙ্গে অবিরাম সম্পর্ক এবং ঈশ্বরের এ সব সৃষ্ট বস্তুর প্রতি সেবার মনােভাব মনকে সঞ্জীবিত করে এবং চরিত্রকে বিশুদ্ধ ও উন্নত করে; এবং যে শিক্ষা লাভ হয় তা কার্যকারীকে অন্য লােকের সঙ্গে আরও কতকার্যতার সঙ্গে আচরণ করতে প্রস্তুত করে। EdBen 102.1