স্বাস্থ্য এবং সুখ
৫ - আত্মার সুস্থতা লাভ
“আপনারা যেন জানতে পারেন এই পৃথিবীতে পাপ ক্ষমা করবার
ক্ষমতা প্রভু যীশুর আছে।”
অনেকে যারা যীশুর কাছে সাহায্যের জন্য এসেছিল তারা তাদের অসুস্থতাও সঙ্গে এনেছিল, তবুও তিনি তাদের ভাল করতে অস্বীকার করেন নি। এই আত্মাদের মাঝে যখন তাঁর মধ্য থেকে আরোগ্যকারী শক্তি প্রবেশ করে, তখন তারা পাপী বলে দোষী সাব্যস্ত হয় এবং তাদের অনেকেই আধ্যাত্মিকভাবেও সুস্থ হয়েছিল যেমন সুস্থ হয়েছিল তাদের শারীরিক রোগ থেকে। MHBen 54.1
এদের মাঝে ছিল কফরনাহূমের সেই পক্ষাঘাত রোগী। যেমন কুষ্ঠ রোগী আরোগ্য লাভের ভরসা ছেড়ে দিয়েছিল তদদ্রূপ পক্ষাঘাত রোগীও সুস্থতা লাভের সব আশা হারিয়ে ফেলেছিল। তার পাপ লিপ্ত জীবন যাপনের জন্য তার এই রোগ হয়েছিল এবং তার যাতনা ভোগ অনুতাপের দ্বারা তিক্ত হয়েছিল। সে মিছামিছিই ফরীশী ও ডাক্তারদের কাছে মুক্তিলাভের আবেদন করেছিল; তারা তাকে নিরাময় লাভের অযোগ্য বলে ঘোষণা করেছিল। তারা তাকে পাপী বলে দোষী সাব্যস্ত করল এবং ঘোষণা করেছিল যে, সে ঈশ্বরের শাস্তিতেই মারা যাবে। MHBen 54.2
পক্ষাঘাত রোগী হতাশায় ডুবে গিয়েছিল। পরে সে যখন যীশুর কাজ-কর্ম সম্পর্কে শুনতে পেল, তার মত অন্যান্য পাপী লোকও সুস্থ হয়েছিল। আর সেও বিশ্বাস করতে উৎসাহী হল যে, যদি তাকেও পরিত্রাণকর্তার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়, তবে সেও সুস্থ হয়ে যাবে। কিন্তু তার অসুস্থতার কারণ ভেবে সে উদ্যম হারিয়ে ফেলল, তবু সে তার আরোগ্য লাভের সম্ভাবনাকে দূরে ফেলতে পারল না। MHBen 54.3
তার একান্ত বাসনা ছিল পাপের বোঝা থেকে মুক্তিলাভ করা। সে যীশুর সাথে দেখা করতে এবং ক্ষমা ও স্বর্গীয় শান্তির নিশ্চয়তা লাভের আকাঙ্ক্ষা করেছিল। তারপর সে ঈশ্বরের ইছানুসারে বাঁচবে অথবা মরেও তৃপ্তি লাভ করবে। MHBen 55.1
কালক্ষেপণের অবকাশ ছিল না; ইতোপূর্বেই তার অব্যবহৃত মাংসে মৃত্যুর চিহ্ন দেখা গেল। সে তার বন্ধুদের অনুরোধ করল যেন তারা তাকে যীশুর কাছে নিয়ে যায়। আর তারা তা খুশি মনেই করতে চাইল। কিন্তু যে ঘরে পরিত্রাণকর্তা ছিলেন, তার আশেপাশে এত লোকের ভিড় হয়েছিল যে, রুগ্ন লোকটি ও তার বন্ধুদের সেখানে পৌঁছান ছিল অসম্ভব, এমন কি তাঁর স্বর পর্যন্তশোনা যাচ্ছিল না। যীশু পিতরের বাড়ীতে ঈশ্বরের কথা শিক্ষা দিচ্ছিলেন। তাদের নিয়ম অনুসারে তাঁর শিষ্যরা তাঁর চারদিকে ঘিরে বসা ছিলেন আর “ফরীশীরা ও ব্যবস্থার গুরুরা নিকটে বসিয়াছিল; তাহারা গালীল ও যিহূদিয়ার সমস্ত গ্রাম এবং যিরূশালেম হইতে আসিয়াছিল;” (লূক ৫:১৭)। এদের অনেকেই গোয়েন্দাগিরি করতে ও যীশুর বিরুদ্ধে কোন দোষ ধরা যায় কিনা তার জন্য এসেছিলেন। এঁদের পেছনে ছিল এলোমেলো ভাবে জনতার ভিড় যাদের মাঝে ছিল আগ্রহী, ধর্মভীরু, কৌতুহলী এবং অবিশ্বাসী দল। বিভিন্ন জাতীয় এবং সমাজের সব ধরনের লোকই সেখানে ছিল। আর “আর প্রভুর শক্তি উপস্থিত ছিল, যেন তিনি সুস্থ করেন।” (লূক ৫:১৭)। জীবনদায়ী আত্মার আবেশ সমবেত জনতার ওপরে নেমে এসেছিল, কিন্তু ফরীশী ও ধর্মগুরুরা তাঁর উপস্থিতি অনুভব করতে পারে নি। তাদের কোন চাহিদা তারা উপলব্ধি করতে পারে নি এবং সে জন্যই কোন আরোগ্য তাদের জন্য ছিল না। “তিনি ক্ষুধার্তদিগকে উত্তম উত্তম দ্রব্যে পূর্ণ করিয়াছেন, এবং ধনবানদিগকে রিক্তহস্তে বিদায় করিয়াছেন।” (লূক ১:৫৩)। বারংবার পক্ষাঘাত রোগীকে বহনকারীরা ভিড় ঠেলে প্রবেশের চেষ্টা করল কিন্তু সফল হল না। রোগাক্রান্তলোকটি অব্যক্ত নিদারুণ মানসিক যন্ত্রণায় কেবল চারদিকে তাকাতে লাগল। সে কিভাবে তার আশা ছেড়ে দেবে যখন তার কািক্ষত সাহায্য তার নাগালের মধ্যে? তার পরামর্শে তার বন্ধুরা তাকে ঘরের চালের ওপরে নিয়ে গেল এবং ছাদ খুলে তাকে যীশুর পায়ের কাছে নামিয়ে দিল। MHBen 55.2
নিরুৎসাহ বিঘ্নিত হল। পরিত্রাণকর্তা শোকার্ত বেদনা ক্লিষ্ট ব্যক্তির চেহারার দিকে তাকালেন এবং যীশুর দিকে একদৃষ্টে তাকানো তার অনুনয় বিনয়কারী চোখ দেখলেন। এই ভারী বোঝা বহনকারীর হৃদয়ের আকাক্ষা তিনি ভালভাবেই জানতেন। সে যখন তার ঘরে ছিল, তখন তার বিবেকে, যে বিশ্বাস জন্মেছিল তাও যীশু এনে দিয়েছিলেন। যখন সে তার পাপ সম্পর্কে অনুতাপ করল এবং তাকে সুস্থ করতে যীশুর ক্ষমতায় বিশ্বাস করল। তখন পরিত্রাণকর্তার আশীর্বাদ তার অনন্ত প্রবেশ করল। যীশু তার মাঝে প্রথম ধর্মগুরুদের মৃদু আলো দেখতে পেলেন যা পরে বৃদ্ধি পেয়ে এমন আত্মপ্রত্যয়ী হল যে, সে অনুভব করল তিনিই পাপীর একমাত্র সাহায্যকারী এবং তিনি লক্ষ্য করলেন যে,তার সেই বিশ্বাস তাকে তাঁর সাক্ষাতে নিয়ে আসার প্রত্যেক প্রচেষ্টায় বৃদ্ধি পএয়ে আরও দৃঢ়তর হচ্ছে। ইনি সেই যীশু যিনি বেদনাক্লিষ্ট ব্যক্তিকে তাঁর কাছে আকর্ষণ করেছিলেন। আর এখন শ্রোতাদের কানে সুমধুর তানের ন্যায় পরিত্রাণকর্তা বললেন, “বৎস, সাহস কর, তোমার পাপ ক্ষমা হইল।” (মথি ৯:২)। MHBen 56.1
অপরাধের বোঝা লোকটার আত্মা থেকে সরে গেল। সে সন্দেহ করতে পারল না। অন্তর পাঠ করবার তাঁর ক্ষমতা যীশুর বাক্যে প্রকাশ পেল। কে তাঁর পাপ ক্ষমা করার ক্ষমতাকে অস্বীকার করতে পারে? হতাশার স্থান আশায় ও বিষন্নতার স্থান আনন্দে পূর্ণ হল। লোকটার শারীরিক ব্যথা ভাল হয়ে গেছে এবং তার গোটা শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন হল। অন্য আর কোন অনুরোধ না করে লোকটা এমন সুখী হল যে ভাষায় ব্যক্ত করতে না পেরে শান্তিপূর্ণভাবে নীরবে শুয়ে থাকল। MHBen 56.2
অনেকেই শ্বাসরূদ্ধকর অবস্থায় এই অদ্ভুত ঘটনার প্রতিটি দৃশ্য দেখতে লাগল। অনেকেই অনুভব করল যীশুর কথা তাদের জন্য একটা আহ্বান। তারা কি পাপের কারণে আত্মিক ভাবে অসুখী ছিল না? এই বোঝা থেকে মুক্তি পেতে তারা কি আগ্রহী ছিল না? MHBen 56.3
কিন্তু ফরীশীরা লোকদের সাক্ষাতে তাদের ভাবমূর্তি নষ্ট হতে পারে এই ভয়ে মনে মনে বলল, “সে ঈশ্বর নিন্দা করিতেছে; সেই একজন, অর্থাৎ ঈশ্বর, ব্যতিরেকে আর কে পাপ ক্ষমা করিতে পারে?” (মার্ক ২:৭)। MHBen 56.4
তারা মনের মধ্যে যে বিষয় নিয়ে জড়সড় হয়ে পিছুটান দিচ্ছিল তা বুঝতে পেরে তাদের প্রতি তাকিয়ে যীশু বললেন। “তোমরা কেন মনে মনে কুচিন্তাকরিতেছ? কারণ কোন্টা সহজ, তোমার পাপ ক্ষমা হইল বলা, না তুমি উঠিয়া বেড়াও, বলা?” আপনারা যেন জানতে পারেন এই পৃথিবীতে পাপ ক্ষমা করিবার ক্ষমতা মনুষ্যপুত্রের আছে।”তিনি পক্ষাঘাতীকে বললেন, “উঠ, তোমার শয্যা তুলিয়া লও, এবং তোমার ঘরে চলিয়া যাও।”(মথি ৯:৪, ৫)। MHBen 57.1
তখন যে ব্যক্তিকে বিছানায় করে যীশুর কাছে আনা হয়েছিল, সে তার পায়ে ভর দিয়ে যুবকের ন্যায় শক্তিশালী ও প্রাণবন্ত অবস্থায় ওঠে দাঁড়াল। আর সঙ্গে সঙ্গে সে “তাহাতে সে উঠিল, ও তৎক্ষণাৎ খাট তুলিয়া লইয়া সকলের সাক্ষাতে বাহিরে চলিয়া গেল; ইহাতে সকলে অতিশয় আশ্চার্য্যান্বিত হইল, আর এই বলিয়া ঈশ্বরের গৌরব করিতে লাগিল যে, এমন কখনও দেখি নাই।” (মার্ক ২:১২)। MHBen 57.2
কেবল সৃষ্টিকারী ক্ষমতাই পারে এধরনের ক্ষয়প্রাপ্ত দেহে সুস্বাস্থ্য ফিরিয়ে দিতে। সেই স্বর যা পৃথিবীর ধূলি হতে তৈরী মানুষের দেহে প্রাণবায়ু প্রবেশ করিয়েছিলেন, সেই একই স্বর মৃতপ্রায় পক্ষাঘাত রোগীর মাঝে প্রাণ সঞ্চার করে দিলেন। সেই একই শক্তি যা দেহে প্রাণ সঞ্চারিত করল, তা অন্তরকে ও নবীনীকৃত করল। যিনি সৃষ্টি কালে “তিনি কথা কহিলেন, আর উৎপত্তি হইল, তিনি আজ্ঞা করিলেন, আর স্থিতি হইল।”(গীত ৩৩:৯), তিনিই আজ্ঞালঘনকারী ও পাপে মৃত আত্মাতে জীবন দান করলেন। দেহ সুস্থকরণ ছিল শক্তির প্রমাণ যা অন্তরকে নবীনীকৃত করেছিল। যীশু অবশ রোগীকে ওঠে হাঁটতে আহ্বান জানালেন, তিনি বললেন, “যেন আপনারা জানতে পারেন যে পৃথিবীতে পাপ ক্ষমা করিবার ক্ষমতা মনুষ্যপুত্রের আছে।” MHBen 57.3
পক্ষাঘাত রোগী যীশুর মাঝে দেহ ও আত্মা উভয়ের জন্য আরোগ্য খুঁজে পেল। দৈহিক স্বাস্থ্যের মর্ম উপলব্ধির পূর্বে তার আত্মার সুস্থতা লাভের প্রয়োজন ছিল। তার শারীরিক ব্যাধি সুস্থকরবার পূর্বে যীশুর প্রয়োজন ছিল তার মনে শান্তি আনয়ন করা এবং তার আত্মাকে পাপ মুক্ত করা। এই শিক্ষাকে অবহেলা করা যাবে না। বর্তমান যুগে হাজার হাজার লোক শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছে যারা ঐ পক্ষাঘাত রোগীর মত এই বাণী “তোমার পাপ ক্ষমা করা হইল”শোনার জন্য আকাঙ্ক্ষিত। অশান্তি ও অতৃপ্ত বাসনা পূর্ণ পাপের বোঝাই তাদের সকল ব্যাধির মূল। তারা আত্মার আরোগ্যকারীর কাছে না আসা পর্যন্ত মুক্তি লাভ করবে না। একমাত্র তিনি যে শান্তি দিতে পারেন, তাতেই মনের সঞ্জীবনী শক্তি ও দেহের সুস্থতা পুনরুদ্বার করতে পারে। MHBen 57.4
অবশ রোগীকে সুস্থ করার ফলে লোকদের মাঝে যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হল, তাতে মনে হল যেন স্বর্গ খুলে গেছে এবং একটা উত্তমতর পৃথিবীর মহিমা প্রকাশিত হয়েছে। সুস্থ হওয়া ব্যক্তি যেমন প্রতিটি পদক্ষেপে ঈশ্বরের প্রতি তার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে জনতার মধ্য দিয়ে তার বোঝা পাখির পালকের মত হালকার মত বয়ে নিয়ে যাচ্ছিল, লোকেরা পাশে সরে গিয়ে তার জন্য পথ করে দিয়ে ভীত সন্ত্রস্ত চোহারায় তার দিকে তাকিয়ে নিজেদের মাঝে ফিস্ ফিস্ করে মৃদুভাবে বলছিল, “আজ আমরা কি আশ্চর্য ব্যাপার দেখিলাম।”(লূক ৫:২৬)। MHBen 58.1
যে খাটের ওপরে করে ধীরে ধীরে তাদের সামনে দিয়ে পক্ষাঘাত রোগীকে বয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেই খাটটি অতি সহজে বয়ে নিয়ে যখন সে তার পরিবারের মাঝে ফিরে এল; তখন তার বাড়ীতে মহা আনন্দ উপস্থিত হল। তাদের চোখকে বিশ্বাস করা কঠিন হলেও তারা আনন্দ অশ্রু সজল নয়নে তাকে ঘিরে জড়ো হল। সে তাদের সম্মুখে যে․বনের পূর্ণ সতেজতা নিয়ে দাঁড়াল। তার যে হাত দু’টো নিষ্প্রাণ হয়ে পড়েছিল, এখন তা তার ইছা পূরণে ব্যস্ত। তার যে মাংস সংকুচিত হয়ে অসাড়, বিবর্ণ হয়েছিল, তা সতেজ ও লালবর্ণ ধারণ করল। সে দৃঢ় ও স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারবে। তার চেহারার প্রতিটি রেখায় আনন্দ ও প্রত্যাশা ব্যক্ত করছিল এবং পাপ ও ক্লেশের পরিবর্তে পবিত্রতা ও শান্তির অভিব্যক্তি প্রকাশ পেল। ঐ গৃহ থেকে আনন্দ পূর্ণ কৃতজ্ঞতার অর্ঘ্য উর্দ্ধে ঈশ্বরের কাছে পেঁ․ছাল এবং তিনি তাঁর পুত্রের মাধ্যমে মহিমান্বিত হলেন, যিনি আশাহীনদের কাছে আশা ও আহতকে শক্তি যোগালেন। এই লোকটা ও তার পরিজন যীশুর জন্য তাদের জীবন বিসর্জন দিতেও প্রস্তুত ছিল। কোন সন্দেহ তাদের বিশ্বাসকে ম্লান করতে পারেনি। তাদের MHBen 58.2
অন্ধকারাছন্ন পরিবারে যিনি আলো এনেছেন তাঁর প্রতি তাদের আনুগত্যতা কোন অবিশ্বাসে চিড় ধরাতে পারেনি। MHBen 58.3
“হে আমার প্রাণ, সদাপ্রভুর ধন্যবাদ কর; br/> হে আমার অন্তর সকল, তাঁহার পবিত্র নামের ধন্যবাদ কর।
হে আমার প্রাণ, সদাপ্রভুর ধন্যবাদ কর,
তাঁহার সকল উপকার ভুলিয়া যাইও না।
তিনি তোমার সমস্ত অধর্ম ক্ষমা করেন;
তোমার সমস্ত রোগের প্রতিকার করেন।
তিনি কূপ হইতে তোমার জীবন মুক্ত করেন;
দয়া ও করুণার মুকুটে তোমাকে ভূষিত করেন।
তিনি উত্তম দ্রব্যে তোমার মুখ তৃপ্ত করেন,
ঈগল পক্ষীর ন্যায় তোমার নূতন যৌবন হয়।
সদাপ্রভু ধর্মকার্য সাধন করেন,
উপদ্রুত লোকদের পক্ষে বিচার নিষ্পত্তি করেন।
তিনি জানাইলেন মোশিকে আপনার পথ,
ইস্রায়েল-সন্তানগণকে আপনার কার্য সকল।
সদাপ্রভু স্নেহশীল ও কৃপাময়,
ক্রোধে ধীর ও দয়াতে মহান।
তিনি নিত্য অনুযোগ করিবেন না,
চিরকাল ক্রোধ রাখিবেন না। তিনি আমাদের প্রতি আমাদের
পাপানুযায়ী ব্যবহার করেন নাই, আমাদের কর্মানুযায়ী প্রতিফল
আমাদিগকে দেন নাই।
কারণ পৃথিবীর উপরে আকাশমণ্ডলযত উচ্চ,
যাহারা তাঁহাকে ভয় করে, তাহাদের উপরে তাঁহার দয়া তত মহৎ।
পশ্চিমদিক্ হইতে পূর্বদিক যেমন দূরবর্তী,
তিনি আমাদের হইতে আমাদের অপরাধ
সকল তেমনি দূরবর্তী করিয়াছেন।
পিতা সন্তানদের প্রতি যেমন করুণা করেন,
যাহারা সদাপ্রভুকে ভয় কর,
তাহাদের প্রতি তিনি তেমনি করুণা করেন। কারণ তিনিই আমাদের গঠন জানেন;
আমরা যে ধূলিমাত্র,
ইহা তাঁহার স্মরণে আছে।”
MHBen 59.1
(গীত ১০৩: ১-১৪ পদ)।
“তোমার কি ভাল হবার ইছা আছে?”
“উঠ ...এবং হেটে বেড়াও।”
MHBen 60.1
“যিরূশালেমে মেষ-দ্বারের নিকটে একটি পুকুর আছে; ইব্রীয় ভাষায় সেটির নাম বৈথেস্দা, তাহার পাঁচটি চাঁদনি ঘাট। সেই সকল ঘাটে বিস্তর রোগী, অন্ধ, খঞ্জ, ও শুষ্কাঙ্গ পড়িয়া থাকিত। তাহারা জল সঞ্চালনের অপেক্ষায় থাকিত। ।”(যোহন ৫:২,৩)। MHBen 60.2
নির্দিষ্ট কোন এক সময়ে এই পুকুরের জল সঞ্চালিত হত এবং এটা সবাই বিশ্বাস করতো যে জল কাঁপার পেছনে ক্সদব কোন শক্তি কাজ করত। আর জল কাঁপার সঙ্গে প্রথমে যে জলের মধ্যে নামতে পারত তার যে কোন রোগ থাকুক না কেন, তা ভাল হয়ে যেত। শত শত রুগ্ন লোকেরা এখানে আসত, কিন্তু এত লোকের ভিড় হত যে, যখন জল কাঁপত তখন সকলের চাপাচাপিতে অনেক দুর্বল লোকেরা, শিশুরা এবং মহিলারা যারা অন্যদের থেকে রুগ্ন তারা পায়ের নীচে চাপা খেত। অনেকে পুকুরের কাছেও যেতে পারত না। অনেকে যারা কাছে যেতে কৃতকার্য হত, তারাও পুকুরে নামতে পারত না। পুকুরের পাড়ে দিনের প্রচন্ড তাপ থেকে ও রাতের বেলার ঠান্ডা থেকে রোগীদের আশ্রয়ের জন্য ছাদ বানিয়ে দেয়া হয়েছিল। এই ছাদের নীচে অনেকে রাত কাটিয়েছে, হামাগুড়ি দিতে দিতে পুকুরের কিনারে গিয়ে সুস্থ হবার বৃথা আশায় দিনের পর দিন কাটিয়েছে। MHBen 60.3
যীশু এ সময় যিরূশালেমে ছিলেন। ধ্যান ও প্রার্থনা মগ্ন অবস্থায় তিনি একাকী পথ চলতে চলতে ঐ পুকুরের পাড়ে এলেন। আরোগ্য লাভের একমাত্র ভরসা হিসেবে জল কাপার জন্য অপেক্ষমান হতভাগ্য যাতনা গ্রস্তদের তিনি দেখলেন। তিনি তাঁর আরোগ্যকারী ক্ষমতা ব্যবহার করতে আগ্রহী ছিলেন এবং সেখানকার প্রত্যেক অসুস্থকে সুস্থ করতে বাসনা করলেন। কিন্তু এদিনটি ছিল বিশ্রাম বার অনেক লোক প্রার্থনাঘরে প্রার্থনা করতে যাচ্ছিল। আর তিনি জানতেন যে, এই বিশ্রামবারে এ ধরনের সুস্থ করার কাজ করলে যিহূদীদের কুসংস্কার হেতু তারা তাঁর কর্মকান্ডকে সংক্ষিপ্ত করেফেলবে। MHBen 60.4
কিন্তু পরিত্রাণকর্তা এমন এক রোগীকে দেখলেন, যে চরমভাবে যাতনা ক্লিষ্ট ছিল। এ ছিল একজন অসহায় ৩৮ বছরের পঙ্গু ব্যক্তি। মূলতঃ তার এ রাগ নিজস্ব কু-অভ্যাসের জন্যই হয়েছিল এবং ধরে নেয়া হত এটা তার প্রতি ঈশ্বরের দেয়া শাস্তি। একাকী বন্ধু বান্ধবহীন অবস্থায় অনুমান করা হত যে ঈশ্বরের আশির্বাদ থেকে বঞ্চিত হয়েছে, আর এইভাবে সে বহু বছর যাবৎ যাতনা ভোগ করছিল। যখন অনুমান করা হত যে জল কাঁপবে তখন বন্ধুবান্ধবহীন অসহায় এই ব্যক্তির প্রতি যাদের দয়া হত তারা তাকে ধরে ঔ চাঁদনী ঘাটে নিয়ে যেত। কিন্তু ঐ সঠিক মুহূর্তে তাকে জলে নামাতে সাহায্যকারী কেউ ছিল না। সে জলের কাঁপা দেখেছে কিন্তু পুকুরের কিনারার নীচে কখনও নামতে পারে নি। তার থেকে সবল অন্য কেউ তার আগে জলে ঝাপ দিয়ে পড়ত। বেচারা হতভাগ্য অসহায় যাতনা ক্লিষ্ট ব্যক্তি স্বার্থপর জনতার সাথে ঠেলাঠেলি করে কৃতকার্য হতে সক্ষম ছিল না। এক লক্ষ্য অর্জনে তার অবিরাম প্রচেষ্টা এবং তার উদ্বেগ ও অব্যাহত নিরাশা তার অবশিষ্ট বল শক্তিকে দ্রুত নিঃশেষ করে ফেলছিল। MHBen 61.1
রুগ্ন লোকটা তার মাদুরের ওপরে শোয়া ছিল এবং মাঝে মাঝে মাথা তুলে পুকুরের দিকে দেখছিল। যখন একটা কোমল দয়াবান মুখ তার দিকে নত হল এবং তাকে বলা হল, “তুমি কি সুস্থহইতে চাও?” (যোহন ৫:৬)। এই কথা তার মনোযোগ আকর্ষণ করল। তার অনন্ত আশার সঞ্চার হল। সে অনুভব করল, যে কোন ভাবেই হোক সে সাহায্য পেতে যাচ্ছে। কিন্তু তার উৎসাহের আলো দ্রুত ম্লান হয়ে এল। সে স্মরণ করল কত বারই না সে পুকুর পাড়ে যেতে চেষ্টা করেছে। আর এখন পরবর্তী জল কাপা পর্যÍন্তবেঁচে থাকার সামান্য ভরসাই তার আছে। ক্লান্তিতে মুখ অন্য দিকে ঘুড়িয়ে বলল, “মহাশয়, আমার এমন কোন লোক নাই যে, যখন জল কম্পিত হয়, তখন আমাকে পুষ্করিণীতে নামাইয়া দেয়; আমি যাইতে যাইতে আর একজন আমার আগে নামিয়া পড়ে”(যোহন ৫:৭)। MHBen 61.2
যীশু তাকে ডেকে বললেন, “উঠ, তোমার খাট তুলিয়া লইয়া চলিয়া বেড়াও।”(যোহন ৫:৮)। এক নূতন প্রত্যাশায় রুগ্ন লোকটি যীশুর দিকে তাকাল। তাঁর মুখমণ্ডলের চেহারা, তাঁর কণ্ঠস্বর অন্যান্য লোকদের ন্যায় ছিল না। তাঁর উপস্থিতির মধ্যে থেকে যেন প্রেম ও ক্ষমতা বেরিয়ে আসছিল। যীশুর বাক্যে পঙ্গু লোকটার বিশ্বাস এল। প্রশ্ন না করে আজ্ঞাবহ হতে তার ইচ্ছা স্থির করল, আর যখনই সে তা করল, তার গোটা শরীর তার সিদ্ধান্ত মতে সাড়া দিল। MHBen 62.1
নূতন জীবনের ছোঁয়ায় তার প্রতি স্নায়ু-তন্ত্র ও মাংসপেশী শিহরিত হল এবং তার পঙ্গু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা ফিরে পেল। তার পায়ে ভর করে লাফ দিয়ে ওঠে জোর পায়ে স্বাভাবিক ছন্দে ঈশ্বরের প্রশংসা করতে করতে হেঁটে চলল এবং তার এই নূতন ভাবে পাওয়া সবলতার জন্য আনন্দ করতে লাগল। MHBen 62.2
প্রভু যীশু তাকে কোন ঐশ্বরিক সহযোগিতার নিশ্চয়তা দেন নি। তাহলে হয়তো লোকটা বলতে, পারত, “প্রভু, আপনি যদি আমাকে ভাল করেন তবে আমি আপনার বাক্যের বাধ্য থাকিব।”সে হয়তো সন্দেহ করা থেকে বিরত থাকতে পারত। আর এভাবে তার আরোগ্য লাভের সুযোগটাও হাতচাড়া হতে পারত। কিন্তু না, সে ত্রাণকর্তার বাক্যে বিশ্বাস করল, যে তাকে সুস্থ করেছে; সঙ্গে সঙ্গে সে কাজে লাগাতে চেষ্টা করল, আর ঈশ্বর তাকে শক্তি দিলেন, সে হাঁটতে মনস্থ করল এবং হাঁটল। যীশুর কথায় বিশ্বাস করে কাজ করল, আর তাতে সে আরোগ্য লাভ করল। MHBen 62.3
পাপের কারণে আমরা ঈশ্বরের জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছি, আমাদের আত্মা পঙ্গু হয়ে আছে। পঙ্গু লোকটার পক্ষে যেমন হাঁটা সম্ভবপর ছিল না, তদ্রূপ নিজেদের ওপর নির্ভর করে আমাদের পবিত্র জীবন যাপন করাও সম্ভব না। অনেকে তাদের অসহায়ত্ব অনুভব করছে, ঈশ্বরের সাথে তাদের জীবনের ঐক্যতা ফিরিয়ে আনতে তারা আত্মিক জীবনের জন্য গভীরভাবে আকাঙ্ক্ষা করছে এবং তা অর্জনের জন্য কঠোর সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কোন ফল হচ্ছে না। হতাশার মাঝে তারা বিলাপ করছে, “দুর্ভাগ্য মনুষ্য আমি! এই মৃত্যুর দেহ হইতে কে আমাকে নিস্তার করিবে?” (রোমীয় ৭:২৪)। এই হতাশাগ্রস্ত কঠিন সংগ্রামে লিপ্ত ব্যক্তিরা ঊর্ধ্ব দৃষ্টি করুন। পরিত্রাণকর্তা তার রক্তে কেনা লোকদের ওপরে নত হয়ে তাঁর দরদী ও করুণা মিশ্রিত স্বরে বলছেন, “তোমার কি ভাল হবার ইছা আছে?” তিনি সুস্বাস্থ্য ও শান্তিতে ওঠে দাঁড়াতে আহ্বান করেন। আরোগ্য লাভ করেছেন কি না তা অনুভব করতে অপেক্ষা করবেন না। পরিত্রাণকর্তার বাক্যের ওপর বিশ্বাস করুন। আপনার ইছা যীশুর পক্ষে রাখুন। তাঁর সেবা করবার ইছা ও তাঁর বাক্য অনুসারে কাজ করলে আপনি শক্তি লাভ করবেন। যে কোন প্রকার মন্দ অভ্যাস থাকুক না কেন, যার প্রভুত্বকারী আসক্তির কারণে আত্মা ও দেহকে দীর্ঘ অসংযম প্রশ্রয়দানের মাধ্যমে আবদ্ধ করেছে, যীশু তাদেরকে মুক্ত করতে আকাক্ষী এবং সক্ষম। তিনি আত্মার মাঝে জীবন দান করবেন, যে সকল আত্মা “আপন আপন অপরাধে ও পাপে মৃত ছিল।”(ইফিষীয় ২:১)। তিনি দুর্বলতা, হতভাগ্য ও পাপের শিকলে আবদ্ধ বন্দিকে মুক্ত করবেন। MHBen 62.4
পাপের অনুভূতি জীবনের ঝর্ণাধারাকে বিষাক্ত করেছে। কিন্তু যীশু বলেন, “আমি তোমার পাপ সকল বহন করিব; আমি তোমাকে শাস্তি দিব, আমি তোমাকে আমার রক্তের বিনিময়ে কিনেছি। তুমি আমার। আমার আশীর্বাদ তোমার দুর্বল ইছাকে সবল করিবে; পাপের কারণে তোমার মনস্তাপ আমি দূর করিব,” যখন প্রলোভন আপনাকে আক্রমণ করে যখন উদ্বেগ ও জটিলতা আপনাকে ঘিরে ফেলে, যখন আপনি হতোদ্যম ও নিরুৎসাহিত, প্রায় হতাশ হবার উপক্রম, তখন যীশুর প্রতি দৃষ্টিপাত করুন, এবং তাঁর উপস্থিতির উজ্জ্বল আলোর প্রভাবে আপনাকে ঘিরে থাকা অন্ধকার কেটে যাবে। যখন পাপ আপনার আত্মার ওপরে কর্তৃত্ব করতে কঠোর প্রচেষ্টা চালায় এবং আপনার বিবেককে ভারগ্রস্ত করে, তখন পরিত্রাণকর্তার প্রতি নজর দিন। পাপ দমনে তাঁর কৃতজ্ঞতাপূর্ণ অন্তর তাঁর প্রতি ফেরান, আপনার সম্মুখে স্থাপন করা প্রত্যাশা দৃঢ়ভাবে ধরুন। যীশু আপনাকে তাঁর পরিবারে দত্তকরূপে গ্রহণ করতে চান। তাঁর শক্তি আপনার দুর্বলতায় সাহায্য করবে; তিনি আপনাকে পদে পদে চালনা করবেন। তাঁর হাতে আপনার হাত রাখুন এবং তাঁকে চালাতে দিন। MHBen 63.1
কখনও মনে করবেন না যে, যীশু অনেক দূরে। তিনি সব সময়ই কাছে আছেন। তাঁর সদয় উপস্থিতি আপনাকে বেষ্টন করে রাখে। তিনি চান যেন আপনি তাকে খুঁজে পান, তাঁর অন্বেষণ করুন। আপনি কেবল তাঁর কাপড়ের আঁচল স্পর্শ করুন, তিনি কেবল তাই চান না বরং তিনি চান যেন আপনি অবিরাম তাঁর সংস্পর্শে তাঁর সঙ্গে পথ চলেন। MHBen 64.1
“যাও, আর পাপ করিও না।” MHBen 64.2
কুটিরবাস পর্ব কেবল শেষ হয়েছে। যিরূশালেমে যীশুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে ধর্মগুরুরা পরাজিত হলো, আর সন্ধ্যা হলে, “পরে তাহারা প্রত্যেকে আপন আপন গৃহে চলিয়া গেল, কিন্তু যীশু জৈতুন পর্বতে গেলেন।”(যোহন ৮:১)। MHBen 64.3
নগরের উত্তেজনা ও বিভ্রান্তি থেকে, উৎসুক জনতা ও বিশ্বাসঘাতক ধর্মযাজকদের থেকে দূরে জলপাই (জৈতুন) বাগানের নিভৃত পাহাড়ে যীশু গেলেন, যেখানে তিনি ঈশ্বরের সঙ্গে একাকী কাটাতে পারবেন। কিন্তু পরদিন ভোরের আগে তিনি ধর্মধামে ফিরে এলেন; আর লোকেরা যেমন তাঁর চারদিকে ভিড় জমাল তিনি বসে তাদের শিক্ষা দিতে লাগলেন। MHBen 64.4
শীঘ্রই মাঝ পথে তাঁকে বিঘ্নিত করা হল। একদল ফরীশী ও ধর্মযাজক একজন ভীত সন্ত্রস্ত স্ত্রী লোককে টেনে হেঁচড়ে তাঁর কাছে নিয়ে এলেন। কঠোর ও তীক্ষ্ণ স্বরে তারা এই স্ত্রীলোকটিকে সপ্তম আজ্ঞা লঘন করেছে বলে অভিযুক্ত করলেন। তাকে যীশুর সামনে ঠেলে দিয়ে তারা সম্মান দেখানোর ভন্ডামী করে বললেন, “হে গুরু, এই স্ত্রী লোকটি ব্যভিচার করিয়াছে, সেই ক্রিয়াতেই ধরা পড়িয়াছে। ব্যবস্থায় মোশি এই প্রকার লোককে পাথর মারিবার আজ্ঞা আমাদিগকে দিয়াছেন। তবে আপনি কি বলেন?” (যোহন ৮:৪, ৫)। MHBen 64.5
তাদের ভান করা শ্রদ্ধার পেছনে তাঁকে ধ্বংস করার গভীর ষড়যন্ত্রের জাল পাতা ছিল। যীশু যদি স্ত্রীলোকটিকে রেহাই দেন তাহলে তাঁকে মোশির আইন ভঙ্গকারী বলে অভিযুক্ত করা যেতে পারে; আর যদি মৃত্যু দন্ডের উপযোগী বলে ঘোষণা করেন, তবে তাঁকে রোমীয়দের ক্ষমতা নিজ হাতে তুলে নিয়েছেন বলে অভিযুক্ত করা হতে পারে। MHBen 64.6
যীশু দৃশ্যপটের প্রতি তাকালেন, দোষারোপকৃত স্ত্রীলোকটি লজ্জায়, ভয়ে কম্পমান, কঠোর মনোভাবাপন্ন সম্মানিত পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গ একেবারে মানবিক দয়ামায়াহীন। নিষ্কলঙ্ক বিশুদ্ধতায় পূর্ণ তার আত্মা দৃশ্যপট থেকে ফিরে গেল। তিনি যে প্রশ্নটা শুনেছেন এমন ইঙ্গিতও প্রকাশ করলেন না। তিনি বসে পড়লেন এবং মাটির দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে ধূলির ওপরে লিখতে শুরু করলেন। MHBen 65.1
তাঁর বিলম্ব ও স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান উদাসীনতার কারণে অধৈর্য দোষারোপকারীরা তাঁর কাছে এসে বিষয়টার প্রতি তাঁর মনোযোগ আকর্ষণে প্ররোচিত করতে লাগলেন। কিন্তু তাদের নজর যখন যীশু মাটি সমান করে কি লিখছেন তার ওপর পড়ল, তখন তাদের উচ্চস্বর নীরব হয়ে এলো। সেখানে তাদের নিজেদের জীবনের গোপন পাপের চিত্র তুলে ধরা হল। ওঠে ষড়যন্ত্র রচনাকারী প্রাচীনদের দিকে নজর দিয়ে যীশু বললেন, “তোমাদের মধ্যে যে নিষ্পাপ, সেই প্রথমে ইহাকে পাথর মারুক।” (যোহন ৮:৭)। আবার তিনি হেঁট হয়ে তাঁর লেখা চালিয়ে যেতে থাকলেন। MHBen 65.2
তিনি মোশির আইন বাদ দেন নি, কিম্বা রোমীয় শাসকদেরও না। শর্তও ভঙ্গ করেন নি। দোষারোপকারীরা পরাভূত হলেন। আর এখন তাদের ভানকৃত ধার্মিকতাররূপ বস্ত্র চিরে খসে পড়ল। ঐশ্বরিক পবিত্রতার উপস্থিতিতে তারা দোষী ও অপরাধী সাব্যস্ত হলেন। জনতার সামনে তাদের গোপন পাপও ফাঁস হয়ে যায় এই ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে তারা আধোমুখে, নতচোখে, গোপনে একে একে সবাই কেটে পড়লেন, রেখে গেলেন দরদী পরিত্রাণকর্তার কাছে দোষারোপকৃত স্ত্রীলোকটিকে। MHBen 65.3
যীশু ওঠলেন, স্ত্রীলোকটির প্রতি নজর দিয়ে বললেন, “হে নারী, যাহারা তোমার নামে অভিযোগ করিয়াছিল, তাহারা কোথায়? কেহ কি তোমাকে দোষী করে নাই? সে কহিল, না, প্রভু কেহ করে নাই। তখন যীশু তাহাকে বলিলেন, আমিও তোমাকে দোষী করি না; যাও, এখন অবধি আর পাপ করিও না।” (যোহন ৮:১০-১১)। MHBen 65.4
ভয়ে জড়সড় হয়ে স্ত্রীলোকটি যীশুর সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। “তোমাদের মধ্যে যে নিষ্পাপ, সেই প্রথমে ইহাকে পাথর মারুক।”তাঁর এই বাক্য স্ত্রীলোকটির কাছে তার মৃত্যুদন্ডাদেশরূপে প্রতীয়মান হয়েছিল। পরিত্রাণকর্তার মুখের দিকে সে তার চোখ তুলে তাকাতে সাহস পেল না, কিন্তু নীরবে তার নিয়তির অপেক্ষা করতে লাগল। বিষ্ময়ের সাথে সে লক্ষ্য করল, তার দোষারোপকারীরা নির্বাক ও পরাভূত হয়ে চলে যাচ্ছে। তারপর ঐ আশার বাণী তার কানে পৌছল, “আমিও তোমাকে দোষী করি না; যাও, এখন অবধি আর পাপ করিও না।”তার অন্তর গলে গেল এবং যীশুর পায়ে পড়ে কেঁদে কেঁদে তার কৃতজ্ঞতা এবং ভালবাসা প্রকাশ করল এবং তিক্ত চোখের জলে তার সব পাপ স্বীকার করল। MHBen 66.1
এটা ছিল তার নূতন জীবনের সূচনা, ঈশ্বরের উদ্দেশে নিবেদিত পবিত্র ও শান্তির জীবন। এই পদস্খলিত আত্মাকে পাপের গর্ত থেকে তুলে আনতে যীশু সর্বাধিক যাতনাদায়ক শারীরিক ব্যাধি থেকে নিরাময় করা অপেক্ষাও অধিকতর অলৌকিক কাজ সাধন করলেন। তিনি অরনড়মৃত্যুজনক আধ্যাত্মিক রোগ মুক্ত করলেন। এই অনুতপ্ত স্ত্রীলোকটিই পরে তাঁর সর্বাপেক্ষা অবিচল অনুসারী হয়েছিল। তার আত্মোৎসর্গকৃত প্রেম ও ভক্তি দ্বারা সে তাঁর ক্ষমাকারী আশীর্বাদের জন্য তার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছিল। এই ভ্রান্ত পথে যাওয়া স্ত্রীলোকটির জন্য এই পৃথিবী কেবল অপবাদ, ঘৃণা এবং অবজ্ঞাই উপহার দিয়েছে; কিন্তু সেই নিষ্পাপ ব্যক্তি তার দুর্বলতায় দরদ দেখালেন এবং তার প্রতি তাঁর সাহায্যকারী হাত বাড়িয়ে দিলেন। যখন ভন্ড ফরীশীরা তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে তখন যীশু তাকে আহ্বান জানালেন, “যাও, আর পাপ করিও না।” MHBen 66.2
যীশু প্রত্যেক আত্মার পারিপার্শ্বিক অবস্থা জানেন। পাপীদের অপরাধ যত অধিক, পরিত্রাণকর্তাকে তার তত অধিক প্রয়োজন। শত্রুর ফাঁদে যে ব্যক্তি সর্বাধিক আশাহীন অবস্থায় আটকা পড়েছে, তাঁর তরফ থেকে প্রেম ও দরদী অন্তর তার প্রতি সর্বাধিক আকর্ষিত হয়। তাঁর নিজ রক্ত দ্বারা তিনি এ কুলের বন্ধন মুক্তির দলিল স্বাক্ষর করেছেন। MHBen 66.3
যারা এই প্রকার মূল্য দ্বারা ক্রীত হয়েছে যীশু চান না যে তারা শত্রæর প্রলোভনের খেলনায় পরিণত হয়। তিনি চান না, আমরা পরাজিত হয়ে বিনষ্ট হই। যিনি সিংহের খাতে, সিংহদের বশে এনেছিলেন, এবং জ্বলন্ত আগুনের চুল্লির মধ্যে তাঁর বিশ্বস্ত সাক্ষীদের সঙ্গে হেঁটেছিলেন, তিনি আমাদের প্রত্যেক মন্দ অভ্যাস বা আচরণকে পরাভূত করবার জন্য আমাদের পক্ষে কাজ করতে ততটাই প্রস্তুত। আজ তিনি দয়ার বেদিতে দাঁড়িয়ে আছেন আর ঈশ্বরের কাছে সেই সব প্রার্থনা তুলে ধরছেন, যারা তাঁর আশীর্বাদ কামনা করে। তিনি কোন ক্রন্দনরত, অনুতাপীকে ফিরিয়ে দেন না। যারা তাঁর ক্ষমা পাবার ও পুনরুদ্ধারের জন্য আসে, তাদের সবাইকে তিনি ক্ষমা করেন। তিনি যা বলতে পারতেন, তা কাকেও বলেন না বরং তিনি প্রত্যেক ভীত-সন্ত্রস্ত আত্মাকে সাহস করতে আহ্বান করেন। যে কেউ ইছা করে সে ঈশ্বরের শক্তি ধারণ করতে পারে এবং যে কেউ তাঁর সাথে মিত্রতা স্থাপন করতে চায় তিনিও তার সাথে শান্তি স্থাপন করবেন। MHBen 67.1
যে আত্মা সকল আশ্রয়ের জন্য তাঁর প্রতি ফিরে, যীশু তাদেরকে অভিযোগ ও নিন্দার উর্দ্ধে তুলে ধরবেন। এই আত্মাদেরকে কোন মানুষ কিম্বা শয়তানের দূত ও অভিযুক্ত করতে পারবে না। যীশু তাদেরকে তাঁর ঐশ্বরীয়, মানবিক চরিত্রের সাথে সংযুক্ত করেন। তারা ঈশ্বরের সিংহাসন হতে যে আলো প্রবাহিত হয়, তার মাঝে মহান পাপ বাহকের সাথে দাঁড়ান। MHBen 67.2
“যীশুর রক্ত আমাদিগকে সমস্ত পাপ হইতে শুচি করে।”(১যোহন ১:৭)। MHBen 67.3
“ঈশ্বরের মনোনীতদের বিপক্ষে কে অভিযোগ করিবে? ঈশ্বর ত তাহাদিগকে ধার্মিক করেন; কে দোষী করিবে? খ্রীষ্ট যীশু ত মরিলেন বরং উত্থাপিতও হইলেন; আর তিনিই ঈশ্বরের দক্ষিণে আছেন, আবার আমাদের পক্ষে অনুরোধ করিতেছেন।”(রোমীয় ৮:৩৩, ৩৪)। MHBen 67.4
“ভয়ঙ্কর লোকের হাত থেকে লুটের জিনিস উদ্ধার করা হবে।”ঝড়-বাতাস ও ঢেউয়ের ওপরে এবং ভূতে পাওয়া লোকের ওপরে যীশু দেখালেন যে তাঁর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। যিনি ঝড় থামালেন, উত্তাল সমুদ্রে শান্তি ফিরিয়ে আনলেন, তিনিই শয়তান কর্তৃক বল প্রয়োগের মাধ্যমে বশীভূত করে পাগল বানিয়েছে এমন লোকের মনেও শান্তির বাণী শোনালেন। MHBen 67.5
কফরনাহূমের সমাজগৃহে যীশু পাপীদের ক্রীতদাসদের স্বাধীন করবার কাজ করারসময়ে চিৎকারে বিঘ্নিত হলেন। এক পাগল, লোকদের মধ্য থেকে বেড়িয়ে এসে চিৎকার করে বলল, আমাদের একা থাকতে দিন; “হে নাসরতীয় যীশু, আপনার সহিত আমাদের সম্পর্ক কি? আপনি কি আমাদিগকে বিনাশ করিতে আসিলেন? আমি জানি আপনি কে; ঈশ্বরের সেই পবিত্র ব্যক্তি।” MHBen 68.1
যীশু ভূতকে ধমক দিয়ে বললেন, “চুপ কর, এবং উহা হইতে বাহির হও, তখন সেই ভূত তাহাকে মাঝখানে ফেলিয়া দিয়া তাহা হইতে বাহির হইয়া গেল, তাহার কোন হানি করিল না।” (মার্ক ১:২৪; লূক ৪:৩৫)। MHBen 68.2
এই লোকটির এসকল যাতনা ভোগের পেছনের কারণ হলো তার নিজের জীবন পদ্ধতি। সে পাপের লালসায় মুগ্ধ হয়েছিল এবং জীবনকে মহা আমোদ প্রমোদে অতিবাহিত করতে চেয়েছিল। অসংযম ও চপলতা তার আচরণের সৎ গুণাবলীকে বিপথগামী করল, আর শয়তান তার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করল। অনুশোচনা খুব দেরীতে আসল। যখন সে তার হারান পুরুষত্ব ফিরে পেতে তার অর্থ ও ভোগ বিলাস বিসর্জন দিতে পারত, কিন্তু করতে পারে নি, সে অসহায় হয়ে শয়তানের খপ্পরে পড়ে গিয়েছিল। MHBen 68.3
পরিত্রাণকর্তার উপস্থিতিতে মুক্তি পাওয়ার স্পৃহা তার মাঝে জাগরিত হল, কিন্তু ভূত যীশুর ক্ষমতাকে বাধা দিতে চেষ্টা করল। সাহায্যের জন্য লোকটা যীশুর কাছে আবেদন করতে চাইল তখন মন্দ আত্মা তার মুখের বাক্য আটকিয়ে দিল, আর তখন সে ভয়ের নিদারুণ যাতনায় চিৎকার করে ওঠল। ভূতগ্রস্ত ব্যক্তি আংশিক উপলব্ধি করতে পারল যে সে এমন একজনের সাক্ষাতে উপস্থিত, যিনি তাকে মুক্ত করতে পারেন কিন্তু সে যখন ঐ শক্তিশালী হাতের নাগালে আসার চেষ্টা করছিল, তখন অন্য একজনের ইছাশক্তি তাকে পিছু ধরে রাখল; অন্যের বাক্য তার মুখে উচ্চারিত হল। MHBen 68.4
শয়তানের শক্তি ও মুক্তিলাভের জন্য তার নিজ বাসনার মধ্যে ভীষণ দ্বন্দ্ব হল। মনে হল যেন নির্যাতিত লোকটা তার শত্রুর সাথে সংগ্রাম করতে করতে হয়তো নিজ প্রাণই হারাবে, যে শত্রু তার পুরুষত্ব ধ্বংস করেছে। কিন্তু পরিত্রাণকর্তার ক্ষমতার সাথে কথা বললেন ও তাকে মুক্ত করলেন। যে লোকটাকে ভূতে পেয়েছিল সে আত্ম-নির্ভরশীল স্বাধীনতায় কৌতুহলী জনতার সামনে দৃঢ় হয়ে দাঁড়াল। MHBen 69.1
মুক্তির জন্য খুশির আনন্দে সে ঈশ্বরের প্রশংসা করতে লাগল। এতদিন যে চোখে মত্ততার আগুন জ্বল জ্বল করে জ্বলত তাতে এখন বিচক্ষণতার আলো বিকিরত হল এবং কৃতজ্ঞতার অশ্রæ উপচে পড়তে লাগল। লোকেরা বিষ্ময়ে হতবাক হয়ে গেল। কথা বলার শক্তি ফিরে পাবার সাথে সাথে তারা পরষ্পর বলাবলি করতে লাগল, “আ! এ কি? কেমন নূতন উপদেশ! উনি ক্ষমতা সহকারে অশুচি আত্মাদিগকেও আজ্ঞা করেন, আর তাহারা উঁহার আজ্ঞা মানে।”(মার্ক ১:২৭)। MHBen 69.2
কফরনাহূমের ভূতগ্রস্ত ব্যক্তির ন্যায় বামড়বিক পক্ষে ন্যায় বর্তমান যুগে অসংখ্য লোক মন্দ আত্মার অধীনে রয়েছে। সকলে যারা স্বেছায় ঈশ্বরের হুকুম (আজ্ঞা) ত্যাগ করে চলে যায় তারাই শয়তানের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। অনেকে গোপনে মন্দতার সাথে হাত মেলায়, মনে করে যে সে যখন মনে চাইবে তখনই ছেড়ে চলে আসতে পারবে, কিন্তু সে একের পর এক লোভ করতেই থাকে, যে পর্যÍৈনা সে উপলব্ধি করে যে, সে তার ইছা শক্তির চেয়েও এক শক্তিশালী জালে ধরা পড়ে গেছে। সে আর এই রহস্যজনক শক্তি থেকে পালিয়ে আসতে পারে না। আপন পাপ কিম্বা পরম ভাবাবেগ এমন অসহায় করে তাকে বন্দি করে রাখে যে সে ঐ কফরনাহূমের ভূতগ্রস্ত ব্যক্তির ন্যায় নিরূপায় হয়ে পড়ে। MHBen 69.3
তবু তার অবস্থা নিরাশাযুক্ত নয়। ঈশ্বর আমাদের মতামত ছাড়া আমাদের মনকে নিয়ন্ত্রণ করেন না; বরং প্রত্যেক মানুষ কোন শক্তির অধীনে পরিচালিত হবে তা মনোনয়নের স্বাধীনতা তার আছে। কেউ এত নীচ পর্যায়ে যায় নি, কেউ এত জঘন্য নয়, বরং তারা যীশুর মাঝে মুক্তি খুঁজে পেতে পারে। ভ‚তগ্রস্ত ব্যক্তি প্রার্থনার স্থলে কেবল শয়তানের বাক্যই বলতে পারত; তবুও তার অনন্তর গোপন আবেদন শোনা গেল। প্রয়োজনে আত্মার কোন গোপন কান্নার অশ্রুও থাকবে না। যারা ঈশ্বরের সাথে নিয়মে আবদ্ধ হতে রাজি হয় তাদেরকে শয়তানের শক্তির কিম্বা নিজেদের দুর্বল চরিত্রের অধীনে ছেড়ে দেয়া হয় না। MHBen 69.4
“বীর হইতে কি যুদ্ধে ধৃত প্রাণী হরণ করা যায়? কিম্বা ন্যায়বানের বন্দিদগণকে কি মুক্ত করা যায়? সদাপ্রভু এই কথা কহেন, অবশ্য বীরের বন্দিগণকে হরণ করা যাইবে, ও ভীমবিক্রান্তের ধৃত প্রাণীকে মুক্ত করা যাইবে; কারণ তোমার প্রতিবাদীর সহিত আমিই বিবাদ করিব, আর তোমার সন্তানদিগকে আমিই ত্রাণ করিব।”(যিশাইয় ৪৯:২৪, ২৫)। MHBen 70.1
পরিত্রাণকর্তার জন্য যে তার অনন্তর দরজা বিশ্বাস সহকারে খুলে দেয় তার মাঝে এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন সাধিত হবে। “আমি ...তোমাদের শত্রু শয়তানের সমস্ত শক্তির উপরেও ক্ষমতা দিয়াছি, কোন কিছুই তোমাদের ক্ষতি করিবে না।” MHBen 70.2
বারো জন শিষ্যের ন্যায় যীশু সত্তর জন শিষ্যদের পাঠালেন যারা পরে তাদের কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ অলৌকিক (দৈব) ক্ষমতায় বিভূষিত হলেন। তাদের কর্তব্য কাজ সম্পন্ন হলে তারা আনন্দ সহকারে ফিরে এসে বললেন, “পরে সেই সত্তর জন আনন্দে ফিরিয়া আসিয়া কহিল, প্রভু, আপনার নামে ভূতগণও আমাদের বশীভূত হয়। তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, আমি শয়তানকে বিদ্যুতের ন্যায় স্বর্গ হইতে পতিত দেখিতে পাইলাম।” (লূক ১০:১৭, ১৮)। এখনাবধি যীশুর অনুসারীরা শয়তানকে পরাজিত শত্রুরূপে দেখবে। যীশু ক্রুশের ওপরে তাদের জন্য এই বিজয় অর্জন করেছেন। তিনি কামনা করেন যেন তারা এই বিজয়কে তাদের নিজেদের বিজয় হিসেবে গ্রহণ করে। তিনি বলেন, “দেখ, আমি তোমাদিগকে সর্প ও বৃশ্চিক পদতলে দলিত করিবার এবং শত্রুর সমস্ত শক্তির উপরে কর্ত্তৃত্ব করিবার ক্ষমতা দিয়াছি।” (লূক ১০:১৯)। MHBen 70.3
অনুতপ্ত প্রত্যেক আত্মার প্রতিরক্ষার জন্য রয়েছে পবিত্র সর্বশক্তিমানের ক্ষমতা। যে কেউ অনুতাপ ও বিশ্বাস সহকারে তাঁর প্রতিরক্ষার দাবি করে, যীশু তাকে কখনও শত্রুর শক্তির কাছে অরক্ষিত ছেড়ে দেবেন না। এটা বাস্তব যে শয়তান এক শক্তিশালী শত্রু; তবে ঈশ্বরের প্রশংসা করি যে, আমাদের এক মহাশক্তিশালী পরিত্রাণকর্তা আছেন যিনি শয়তানকে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করেছেন। আমরা যখন শয়তানের শক্তি বৃদ্ধি করি তখন সে সুখী হয়। কেন আমরা যীশুর বিষয় আলোচনা করি না? কেন আমরা তাঁর ক্ষমতা ও প্রেমকে বর্ধিত করি না? MHBen 71.1
উর্দ্ধে স্থাপিত সিংহাসন বেষ্টনকারী তাঁর প্রতিজ্ঞার মেঘধনু এক চিরস্থায়ী সাক্ষ্য যে, “ঈশ্বর জগতকে এত প্রেম করিলেন যে, আপনার একজাত পুত্রকে দান করিলেন, যেন যে কেহ তাহাতে বিশ্বাস করে সে বিনষ্ট না হয় কিন্তু অনন্তজীবন পায়।”(যোহন ৩:১৬)। এটা সমস্ত বিশ্বব্রহ্মান্ডের কাছে স্বাক্ষ্য বহন করে যে, মন্দদের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত তাঁর সন্তানদের ঈশ্বর কখনও ভুলে যাবেন না। যতদিন স্বর্গের সিংহাসন টিকে থাকবে ততদিন এটা আমাদের কাছে শক্তি ও প্রতিরক্ষার নিশ্চয়তা স্বরূপ। MHBen 71.2
*****