খ্রীষ্টের দৃষ্টান্তমূলক শিক্ষা
নূতন ও পুরাতন দ্রব্য
মথি ১৩:৫১, ৫২ পদের উপর ভিত্তি করে রচিত
খ্রীষ্ট যখন লোকদের মধ্যে সুসমাচার প্রচার করছিলেন, সে সময় তিনি একই সঙ্গে তাঁর শিষ্যদেরকে ভবিষ্যতে তাদের পরিচর্যা কাজের জন্য প্রস্তুত করে তুলছিলেন। তাঁর সমস্ত নির্দেশনাতে তাঁদের জন্য শিক্ষা নিহিত ছিল। জালের দৃষ্টান্তটি বলার পর তিনি তাঁদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমরা কি এই সকল বুঝিয়াছ?” শিষ্যরা তাঁকে বললেন, “হাঁ, প্রভু।” এরপর আরেকটি দৃষ্টান্তের মধ্য দিয়ে তিনি তাঁদেরকে বোঝাতে চাইলেন যে, তাঁরা যে সত্যকে ধারণ করেছেন সেই সত্যের প্রতি তাঁদের কী কী দায়িত্ব রয়েছে। তিনি বললেন, “এই জন্য স্বর্গ-রাজ্যের সম্বন্ধে শিক্ষিত প্রত্যেক অধ্যাপক এমন গৃহকর্তার তুল্য, যে আপন ভাণ্ডার হইতে নূতন ও পুরাতন দ্রব্য বাহির করে।” COLBen 104.1
গৃহকর্তা যে সম্পদ অর্জন করেন তা তিনি তা নিজের কাছে সঞ্চয় করে রাখেন না। তিনি তা অন্যদেরকে ধার দেন। আর এতে করে সেই সম্পদ পরিমাণে আরও বৃদ্ধি পায়। গৃহকর্তার কাছে নতুন ও পুরাতন উভয় প্রকার মূল্যবান বস্তু রয়েছে। এই ভাবধারায় খ্রীষ্ট এখানে শিক্ষা দিচ্ছেন যে, তাঁর শিষ্যদেরকে যে সত্য ধারণ করতে দেয়া হয়েছে, সেটি তাঁদের এই পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিতে হবে। সত্যের জ্ঞান যত আমরা ছড়িয়ে দেব, তত তা পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে। COLBen 104.2
যারা তাদের অন্তরে সুসমাচারের বার্তা গ্রহণ করবে, তাদের প্রত্যেককে তা অন্যের কাছে করতে হবে। খ্রীষ্টের স্বর্গজাত ভালবাসা অবশ্যই অন্যের প্রতি প্রকাশ করতে হবে। যারা খ্রীষ্টকে ধারণ করেছে তাদেরকে অবশ্যই পদে পদে পবিত্র আত্মাকে অনুসরণ করতে হবে। তাতে করে তারা ঈশ্বরকে ও তাঁর প্রেরিত পুত্র যীশু খ্রীষ্টকে জানার জন্য তাদের জ্ঞান-তৃষ্ণা, পবিত্র শাস্ত্রে তাদের সমস্ত অনুসন্ধান, তাদের প্রার্থনা, তাদের আত্মার মর্মযাতনা, এবং তাদের প্রতি খ্রীষ্টের অনুপম বাক্য “তোমার পাপ ক্ষমা করা হইল,” তারা জীবন দ্বারা অনুভব করতে পারবে। এই বিষয়গুলো গুপ্ত রাখা কোন মানুষের পক্ষেই স্বাভাবিক নয়। যারা খ্রীষ্টের ভালবাসায় পূর্ণ তারা কখনোই তা গুপ্ত রাখবেন না। প্রভু যেমন তাদেরকে এই চিরন্তন সত্যের ধারক হিসেবে নির্বাচন করেছেন, তেমনি তাদেরও আকাঙ্ক্ষা হবে অন্যদের কাছে ঠিক এই একই আশীর্বাদ পৌঁছে দেয়া। ঈশ্বরের অনুগ্রহের অপরিমেয় ঐশ্বর্যের কথা তারা যত বেশি করে মানুষকে বলবেন, তত বেশি করে খ্রীষ্টের অনুগ্রহ তাদের প্রতি বর্ষিত হবে। সরলতা ও নিঃশর্ত আনুগত্যের ক্ষেত্রে তাদেরকে হতে হবে একান্তভাবে শিশুর মত। পবিত্রতার জন্য তাদের আত্মা আকাঙ্ক্ষী হবে এবং আরও বেশি করে সত্য ও অনুগ্রহের ঐশ্বর্য তাদের কাছে উন্মোচন করা হবে, যেন তারা তা জগতের কাছে প্রকাশ করতে পারেন। COLBen 104.3
সত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ আকর হচ্ছে ঈশ্বরের বাক্য - তাঁর লিখিত বাক্য, প্রকৃতির গ্রন্থএবং মানব জীবনে ঈশ্বরের কাজের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন গ্রন্থ। এই গ্রন্থএক বিরাট ধনাগার, যেখান থেকে খ্রীষ্টের কর্মীদের যা প্রয়োজন তা উত্তোলন করতে হবে। সত্যের অনুসন্ধান করার ক্ষেত্রে তাদের ঈশ্বরের উপরে নির্ভর করতে হবে, মানবীয় বুদ্ধিমত্তার উপরে নয়। এই জগতের দৃষ্টিতে যে মানুষটি সবচেয়ে জ্ঞানী, সে ঈশ্বরের দৃষ্টিতে সবচেয়ে মূর্খ। যারা যারা ঈশ্বরের অনুসন্ধান করে তাদের প্রত্যেকে তিনি নিজ উপায়ে তাঁর সম্পর্কিত জ্ঞান দান করবেন। COLBen 105.1
খ্রীষ্টের একজন অনুসারী যদি তাঁর বাক্যে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তা পালন করে, তাহলে প্রকৃতির জগতে এমন কোন বিজ্ঞান নেই যার কারণে সে সেই বাক্য অনুধাবন ও আয়ত্ব করতে পারবে না। একমাত্র তার ইচ্ছাই তাকে খ্রীষ্টের বাক্যের আরও কাছে নিয়ে আসতে পারে এবং এই ইচ্ছা দ্বারাই সে এই বাক্যের অন্তর্নিহিত সত্য অন্যদের কাছে ছড়িয়ে দিতে পারে। প্রাকৃতিক বিজ্ঞান হচ্ছে জ্ঞানের এক বিশাল ভাণ্ডার, যেখানে খ্রীষ্টের প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে আসতেই হবে। আমরা যদি প্রকৃতির সৌন্দর্যের কথা চিন্তা করি, যদি আমরা দেখি ভূমি চাষাবাদের মধ্যে, বা গাছের বৃদ্ধির মাঝে, বা পৃথিবী ও সমুদ্র ও আকাশের সমস্ত আশ্চর্যের মধ্যে কী অদ্ভুত সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে, তাহলে আমরা এই সত্যকে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে আবিষ্কার করতে পারব। আর সেই সাথে মানুষের সাথে ঈশ্বরের গমনাগমনের সাথে সম্পর্কিত সমস্ত রহস্য, মানব জীবনে প্রকাশিত হওয়া ঈশ্বরের প্রজ্ঞা ও ন্যায়বিচার - এর সবই ঈশ্বরীয় সত্যের এই ধন ভাণ্ডার, তথা পবিত্র বাক্যে আমরা পাই। COLBen 105.2
ঈশ্বরের লিখিত বাক্য পতিত মানব জাতির কাছে তাঁর প্রজ্ঞা ও জ্ঞান সবচেয়ে বোধগম্য উপায়ে প্রকাশ করে। এটি হচ্ছে খ্রীষ্টের সেই ধনের ভাণ্ডার, যা মানুষ নিজের প্রচেষ্টায় কখনো খুঁজে পেতে পারে না। COLBen 106.1
ঈশ্বরের বাক্যে যেমন রয়েছে পুরাতন নিয়ম তেমনি রয়েছে নতুন নিয়ম। একটিকে ছাড়া আরেকটি কোনভাবেই পরিপূর্ণ হতে পারে না। খ্রীষ্ট এই কথা ঘোষণা করেছেন যে, পুরাতন নিয়মের নিহিত সত্যগুলো নুতন নিয়মে নিহিত সত্যগুলোর মতই সমান মূল্যবান। খ্রীষ্ট যেমন সৃষ্টির শুরুতে মানুষের জন্য ত্রাণকর্তা ছিলেন, তিনি এখনও আমাদের ত্রাণকর্তা হিসেবে অধিষ্ঠিত। ঐশ্বরিক সত্ত্বার উপরে মানবীয় বেশ ধারণ করে এই পৃথিবীতে অবতরণ করার পূর্বেই তিনি তাঁর সুসমাচারের বার্তা দান করেছিলেন, আদম, শেথ, হনোক, মথূশেলহ, এবং নোহকে। কনান দেশে অব্রাহাম এবং সদোম নগরীতে লোট এই বার্তা বহন করে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বিশ্বস্ত বার্তাবাহকেরা ঘোষণা করেছেন তাঁর বার্তা, যিনি আসছেন। যিহূদী সংস্কৃতির সমস্ত রীতিনীতি ও ঐতিহ্য স্বয়ং খ্রীষ্ট স্থাপন করেছেন। তিনিই ছিলেন তাদের উৎসর্গ ও বলিদানের সমস্ত পদ্ধতির ভিত্তি, তাদের সকল ধর্মীয় কর্মকা-ের প্রতিরূপ। যিহূদী জাতি, বলি উৎসর্গের সময় যে রক্ত সেচন করত, তা নির্দেশ করে ঈশ্বরের মেষশাবকের রক্ত সেচনকে। সমস্ত প্রাগত বলি উৎসর্গ খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে পরিপূর্ণতা পেয়েছিল। COLBen 106.2
পূর্বপুরুষদের কাছে খ্রীষ্ট নিজেকে প্রকাশ করেছিলেন বলি উৎসর্গের প্রতীকী আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে, ঈশ্বরীয় বিধানের মধ্য দিয়ে, এবং ভাববাদিদের ভাববাণীর মধ্য দিয়ে, যা প্রকাশ পেয়েছে পুরাতন নিয়মের ঐশ্বর্যের মাঝে। খ্রীষ্ট তাঁর জীবন, তাঁর মৃত্যু ও তাঁর পুনরুত্থানের মধ্য দিয়ে, এবং পবিত্র আত্মার ঘোষণায় নতুন নিয়মের ঐশ্বর্য হিসেবে প্রকাশিত হয়েছেন। আমাদের ত্রাণকর্তা পুরাতন ও নতুন উভয় নিয়মেই তাঁর পিতা ঈশ্বরের গৌরব ও মহিমা হয়ে উদ্ভাসিত হয়েছেন। COLBen 106.3
ভাববাদিরা আগেই খ্রীষ্টের জীবন, মৃত্যু, ও পুনরুত্থান সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী দিয়েছিলেন, যার সাক্ষ্য বহন করাই ছিল প্রেরিতদের কাজ। খ্রীষ্টের নম্রতা, তাঁর পবিত্রতা ও অপঙ্কিলতা, তাঁর অতুলনীয় ভালবাসা ছিল তাদের সাক্ষ্যের বিষয়বস্তু। সুসমাচারকে পরিপূর্ণভাবে প্রচার করার জন্য শুধুমাত্র ত্রাণকর্তার জীবন ও তাঁর শিক্ষাগুলোকে প্রচার করাই যথেষ্ট ছিল না, বরং সেই সাথে পুরাতন নিয়মের ভাববাদিরা তাঁর সম্পর্কে যে ভবিষ্যদ্বাণীগুলো করেছিলেন, এবং যেভাবে উৎসর্গের পরিচর্যা কাজের মধ্য দিয়ে তাঁর প্রতীক চিত্রিত করা হয়েছে তা উপস্থাপন করাও ছিল অপরিহার্য। COLBen 107.1
খ্রীষ্ট তাঁর শিক্ষায় সেই প্রাচীন সত্যকে তুলে ধরেছিলেন যার প্রণেতা ছিলেন তিনি নিজে, যে সত্যের কথা তিনি মনোনীত পূর্বপুরুষদের মধ্য দিয়ে ও ভাববাদিদের মধ্য দিয়ে বলেছেন। কিন্তু এখন তিনি এই সত্যের উপরে এক নতুন আলো প্রক্ষেপণ করছেন। এর অর্থ এখন কত না ভিন্নভাবে আমাদের সামনে এসে দেখা দিচ্ছে! তাঁর প্রদত্ত ব্যাখ্যার মধ্য দিয়ে যেন আলোর বন্যা ও আত্মিকতা এসে আছড়ে পড়ছে। তিনি আরও প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, পবিত্র আত্মা শিষ্যদের অন্তরে প্রজ্ঞার আলো জ্বালবেন, এবং ঈশ্বরের বাক্য চিরকাল তাদের কাছে উন্মোচিত থাকবে। তারা এই বাক্যের অন্তর্নিহিত সত্যকে এক নতুন সৌন্দর্যে উপস্থাপন করতে সক্ষম হবেন। COLBen 107.2
এদন উদ্যানে প্রথমবার পরিত্রাণের বাক্য উচ্চারিত হওয়ার পর থেকে খ্রীষ্টের জীবন, তাঁর চরিত্র, ও মধ্যস্থতামূলক কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে মানুষের অন্তরের অধ্যয়নের বিষয়বস্তু। তথাপি যে অন্তরে পবিত্র আত্মা আলো ছড়িয়েছে তা আবারও নতুন করে খ্রীষ্টকে এক নতুন দৃষ্টিতে ও নতুন ভঙ্গিতে দেখতে শিখেছে। পরিত্রাণের অন্তর্নিহিত সত্য প্রতিনিয়ত বর্ধিষ্ণু ও সমৃদ্ধ করতে সমর্থ। অনেক প্রাচীন হলেও এই সত্য সব সময় নতুন। সত্যের অনুসন্ধানকারীর জন্য তা প্রকাশ করে এক মহা গৌরব এবং এক অসীম ক্ষমতা। COLBen 107.3
প্রতিটি যুগেই সত্য এক নতুন সমৃদ্ধি অর্জন করে, ঈশ্বরের লোকদের কাছে প্রতিটি প্রজন্মে তাঁর প্রদত্ত বার্তা। পুরাতন সত্য সব সময়ই অপরিহার্য; নতুন সত্য পুরাতনটি থেকে পৃক ও স্বতন্ত্র নয়; বরং তা পুরাতন সত্যটিকেই আরও প্রস্ফুটিত করে। যদি আমরা পুরাতন সত্যটিকে উপলব্ধি করতে পারি তবেই আমরা নতুন সত্যটিকে আত্মস্থকরতে পারব। যখন খ্রীষ্ট তাঁর শিষ্যদের কাছে তাঁর পুনরুত্থানের সত্য উন্মোচন করতে চাইলেন, তিনি এভাবে তাঁর বক্তব্য শুরু করলেন: “পরে তিনি মোশি হইতে ও সমুদয় ভাববাদী হইতে আরম্ভ করিয়া সমুদয় শাস্ত্রে তাঁহার নিজের বিষয়ে যে সকল কথা আছে, তাহা তাঁহাদিগকে বুঝাইয়া দিলেন।” লূক ২৪:২৭। কিন্তু ঈশ্বরীয় আলো বিচ্ছুরিত না হলে পুরাতন এই সত্য উন্মোচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে গৌরবান্বিত হতে পারে না। যে ব্যক্তি নতুন সত্যটিকে প্রত্যাখ্যান করবে, সে আসলে পুরাতনটিকেই আত্মস্থকরতে পারেনি। তার কাছে এসে এই সত্য তার শক্তি হারিয়ে ফেলে এবং তা হয়ে পড়ে এক অসার বস্তু। COLBen 107.4
এমন অনেক মানুষ আছে যারা পুরাতন নিয়মের সত্যকে বিশ্বাস করে বলে স্বীকৃতি দেয় এবং তা থেকে শিক্ষাও দেয়, অথচ তারা নতুন নিয়মের সত্যকে অস্বীকার করে। কিন্তু খ্রীষ্টের শিক্ষা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানানোর মধ্য দিয়ে তারা বোঝায় যে, পুরাতন নিয়মের ও ভাববাদিদের কথা তারা বিশ্বাস করছে না। খ্রীষ্ট বলেছেন, “যদি তোমরা মোশিকে বিশ্বাস করিতে, তবে আমাকেও বিশ্বাস করিতে, কেননা আমারই বিষয়ে তিনি লিখিয়াছেন।” যোহন ৫:৪৬। এ কারণে পুরাতন নিয়ম থেকে তারা যে শিক্ষা দেয় তাতে আদৌ’কোন সত্যিকারের ঐশ্বরিক শক্তি নেই। COLBen 108.1
যারা সুসমাচারে বিশ্বাস করে বলে স্বীকার করে ও তা থেকে শিক্ষা দেয় তাদের অনেকের মধ্যেও এই একই ধরনের ভুল দেখা যায়। তারা পুরাতন নিয়মের শাস্ত্রকে দূরে সরিয়ে রাখে, যার সম্পর্কে যীশু খ্রীষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন, “তাহাই আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দেয়।” যোহন ৫:৩৯। পুরাতন নিয়ম অস্বীকার করার মধ্য দিয়ে তারা আসলে নতুন নিয়মকেই অস্বীকার করছে; কারণ দুটোই একটি পূর্ণাঙ্গ এককের দুটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। সুসমাচার ব্যতীত কোন মানুষ ঈশ্বরের বিধানকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারে না। আবার ঈশ্বরের বিধান ব্যতীত সুসমাচারকেও উপস্থাপন করা সম্ভব নয়। সুসমাচারের প্রতিটি পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে ঈশ্বরীয় বিধান। অপরদিকে ঈশ্বরীয় বিধানকে ব্যাখ্যা করে নতুন নিয়মের সুসমাচার। বিধান হচ্ছে শেকড়, আর সুসমাচার হচ্ছে তার ফল। COLBen 108.2
পুরাতন নিয়ম নতুন নিয়মের উপরে আলোকপাত করে এবং নতুন নিয়মও একইভাবে পুরাতন নিয়মের উপরে আলোকপাত করে। উভয়েই খ্রীষ্টেতে ঈশ্বরের মহিমা ও গৌরবের প্রত্যাদেশ। দুটোই সেই সত্যকে উপস্থাপন করে যা একাগ্র অনুসন্ধানকারীর কাছে ক্রমাগতভাবে আরও নতুন ও গভীরতর অর্থ প্রকাশ করতে থাকে। COLBen 109.1
খ্রীষ্টেতে ও খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত সত্যের কোন পরিসীমা নেই। পবিত্র শাস্ত্র থেকে যে শিক্ষা নিতে চায়, তার কাছে ঈশ্বরের বাক্য হল এমন এক ঝর্ণাধারা, যার গভীরতা ও প্রশস্ততা পরিমাপ করতে গেলে হাবুডুবু খেতে হয়। এই জীবনে আমরা অনুধাবন করতে পারব না যে, আমাদের পাপের মূল্য পরিশোধের জন্য ঈশ্বর তাঁর নিজ পুত্রকে উৎসর্গ করার মধ্য দিয়ে আমাদের প্রতি যে ভালবাসা প্রকাশ করলেন তার গভীরতা কতটুকু। এই পৃথিবীতে আমাদের ত্রাণকর্তার মুক্তি দানকারী কাজ চিরকালের জন্য এমন একটি কাজ হয়ে থাকবে যা আমাদেরকে চিন্তার সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত নিয়ে যাবে। এই রহস্যের গভীরতা পরিমাপ করার জন্য মানুষ তার মেধার সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত গেলেও তা ভেদ করতে পারবে না, বরং সে হয়ে পড়বে ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত। সবচেয়ে একাগ্র ও অধ্যবসায়ী ব্যক্তিটিও এই রহস্য ভেদ করতে গেলে সামনে দেখতে পাবে কেবল সীমাহীন, কূলকিনারা বিহীন এক সমুদ্র। COLBen 109.2
যীশুতে যে সত্য নিহিত রয়েছে তা অনুভব করা যায়, কিন্তু তা কখনো বলে ব্যাখ্যা করা যায় না। এর উচ্চতা, প্রশস্ততা, ও গভীরতা আমাদের জ্ঞানের অতীত নয়। আমরা আমাদের কল্পনার সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত যেতে পারি। কিন্তু তারপরও আমরা শুধু আবছাভাবে তাঁর ভালবাসার আদলটা অনুভব করতে পারব, কিন্তু তা পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারব না, তা ব্যাখ্যা করতে পারব না। কারণ স্বর্গ যেমন খ্রীষ্টের ভালবাসাও তেমনি উচু। সেই ভালবাসাই পৃথিবীতে সমস্ত মানব জাতির জন্য ঈশ্বরের পুত্রের প্রতিমূর্তিতে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। COLBen 109.3
তথাপি স্বর্গীয় এই দয়া আমরা আমাদের জীবনে গ্রহণ করতে পারি ও তা অনুভব করতে পারি। একমাত্র নম্র ও বিশ্বস্ত আত্মার প্রতি এই দয়া বর্ষিত হয়। আমাদের জন্য খ্রীষ্টের আত্মত্যাগকে যে ভাবে আংশিক বুঝব তেমনি ঈশ্বরের দয়া ও করুণাকেও আমাদের একইভাবে মহিমান্বিত করা প্রয়োজন। অন্তরের বিনম্রতায় যখন আমরা ঈশ্বরের বাক্যের অনুসন্ধান করব, তখন আমাদের সামনে পরিত্রাণের নিগূঢ় তত্ত্ব উন্মোচিত হবে যেন তা আমরা উপলব্ধি করতে পারি। আমরা যত তা দেখব ততই আমাদের সামনে তা উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। যতই আমরা তা আয়ত্ব করার চেষ্টা করব ততই এর উচ্চতা ও গভীরতা বৃদ্ধি পেতে থাকবে। COLBen 109.4
খ্রীষ্টের জীবনের সাথে আমাদের জীবনকে অবিচ্ছেদ্য ভাবে জড়িয়ে ফেলতে হবে; আমাদের অনবরত তাঁকে অনুসরণ করতে হবে, তাঁর প্রত্যেকটি অনুভূতির ও চিন্তার সহভাগী হতে হবে; তিনি যেমন স্বর্গ থেকে জীবন্ত রুটি হয়ে আমাদের মাঝে অবতীর্ণ হয়েছিলেন, আমাদেরও তেমনটি হতে হবে; তিনি আমাদের জন্য এক চিরসতেজ ঝর্ণাধারা, এক অসীম ধন ভাণ্ডার যা কখনো শূন্য হয় না। আমরা যদি প্রভুকে আমাদের সামনে রাখি এবং আমাদের এই অন্তর দিয়ে শুধু তাঁকেই প্রশংসা এবং ধন্যবাদ দিই তাহলে আমরা আমাদের ধর্মীয় জীবনে সব সময়ই সঞ্জীবিত থাকতে সক্ষম হব। ঈশ্বরের কাছে আমাদের প্রার্থনা হতে হবে একজন বন্ধুর সাথে করা কথোপকথনের মত। তিনি ব্যক্তিগতভাবে আমাদের কাছে তাঁর নিগূঢ় রহস্যের কথা প্রকাশ করবেন। তখন আমরা যীশুর উপস্থিতির সুমিষ্ট আনন্দময় অভিজ্ঞতা লাভ করব। হনোকের সাথে যেমন ঈশ্বর স্বয়ং গমনাগমন করতেন, তেমনি আমাদের সাথেও প্রভু নিজে কথা বলতে আসবেন, এবং তখন আমাদের অন্তর হয়ে উঠবে আরও পরিশুদ্ধ। একজন খ্রীষ্ট বিশ্বাসীর জীবনে ঈশ্বরীয় সত্য যখন এভাবে দেখা দেয়, তখন সেই ব্যক্তির জীবনে এক অভূতপূর্ব সরলতা, নম্রতা, মৃদুতা, ও অন্তরের শান্ত ভাব প্রতীয়মান হয়, যা তার সংস্পর্শে আসা সমস্ত মানুষের কাছে এ কথাই প্রকাশ করে যে, সেই ব্যক্তিটি যীশুর স্পর্শ লাভ করেছে, এবং তাঁর কাছ থেকেই এই সকল সদগুণ লাভ করেছে। COLBen 110.1
যাদের মধ্যে এই সকল সদগুণ রয়েছে, তাদের জীবনের মধ্য দিয়ে খ্রীষ্টের প্রচারিত ধর্ম এক অপরিহার্য, অপ্রতিরোধ্য, জীবন্ত, কার্যকারী, ও আত্মিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। অনন্ত জীবনের সজীবতা, শক্তি, ও আনন্দময়তা তাদের মধ্যে প্রকাশ পাবে। যে অন্তর ঈশ্বরের বাক্য ধারণ করে তা এমন কোন জলাশয় নয় যে, প্রচণ্ডদাবদাহে তার জল বাষ্প হয়ে উড়ে যাবে, কিংবা কোন ভাঙ্গা জলাধার নয়, যে তা থেকে সমস্ত জল চুঁইয়ে পড়ে যাবে। এই অন্তর পর্বতের দেহ ভেদ করে নির্গত হওয়া ঝর্ণাধারার মত, যার জলস্রোতের কোন শেষ নেই, যার শীতল ও চঞ্চল জলধারা পাথরে পাথরে লেগে ছলকে ওঠে, যা পরিশ্রান্ত ও ক্লান্ত পথিকের তৃষ্ণা মেটায়। COLBen 110.2
সত্যের শিক্ষা দানকারী প্রত্যেক শিক্ষককে এই অভিজ্ঞতা দান করে সেই গুণ ও যোগ্যতা, যা তাকে খ্রীষ্টের একজন প্রতিনিধি করে তোলে। খ্রীষ্টের শিক্ষা দানের আত্মা তাকে জীবনের সমস্ত কাজে ও প্রার্থনায় শক্তি এবং দিক নির্দেশনা দেবে। খ্রীষ্টের জন্য তিনি যে সাক্ষ্য দেন তা মোটেও সঙ্কীর্ণ, নির্জীব কোন সাক্ষ্য নয়। খ্রীষ্টের পরিচর্যাকারী কখনো একই বিষয় নিয়ে বার বার শিক্ষা দেন না। পবিত্র আত্মার আলো সার্বক্ষণিক ভাবে তার উপরে অবস্থান করার কারণে তার অন্তর থাকে উন্মুক্ত। COLBen 111.1
খ্রীষ্ট বলেছেন, “যে আমার মাংস ভোজন ও আমার রক্ত পান করে, সে অনন্ত জীবন পাইয়াছে, এবং আমি তাহাকে শেষ দিনে উঠাইব।” . . . যে আমার মাংস ভোজন ও আমার রক্ত পান করে, সে আমাতে থাকে, এবং আমি তাহাতে থাকি। যেমন জীবন্ত পিতা আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন, এবং পিতা হেতু আমি জীবিত আছি, সেইরূপ যে কেহ আমাকে ভোজন করে, সেও আমা হেতু জীবিত থাকিবে। এ সেই খাদ্য, যাহা স্বর্গ হইতে নামিয়া আসিয়াছে; পিতৃপুরুষেরা যেমন খাইয়াছিল, এবং মরিয়াছিল, সেইরূপ নয়; এই খাদ্য যে ভোজন করে, সে অনন্তকাল জীবিত থাকিবে। . . . আত্মাই জীবনদায়ক, মাংস কিছু উপকারী নয়; আমি তোমাদিগকে যে সকল কথা কহিয়াছি, তাহা আত্মা ও জীবন।” যোহন ৬:৫৪-৬৩। COLBen 111.2
যখন আমরা খ্রীষ্টের মাংস ভোজন করি ও তাঁর রক্ত পান করি, তখন পরিচর্যা কাজের মধ্যে অনন্ত জীবনের উপাদান খুঁজে পাওয়া যায়। খ্রীষ্টের দেহ ভোজন ও রক্ত পান কোন মধ্যযুগীয় বা একঘেয়ে ব্যাপার নয়। এই পরিচর্যা কাজ আমাদের মনকে শান্ত করে ও খ্রীষ্টের প্রতি আরও বেশি অনুরক্ত করে তোলে। এতে করে পুরাতন সত্য উপস্থাপিত হয় বটে, কিন্তু তাতে পবিত্র আত্মার নতুন আলো প্রক্ষেপিত হয়। সত্যের এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, এক নতুন সজীবতা, ও এক নতুন শক্তি তা থেকে নির্গত হয়। যারা এ ধরনের পরিচর্যার স্বাদ পাওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেছেন, তারা পবিত্র আত্মার প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে এসেছেন এবং এক নতুন জীবন লাভের জন্য শক্তি প্রাপ্ত হয়েছেন। ঈশ্বরের ভালবাসার আগুন তাদের জীবনে জ্বলে উঠবে। তাদের দৃষ্টি ও চিন্তার পরিধি এই সত্যের সৌন্দর্য ও মহিমার কারণে আরও প্রশস্ত হয়ে উঠবে। COLBen 111.3
শিশুদের ও যুবকদের যারা শিক্ষা দান করে, তাদের প্রত্যেকে বিশ্বস্ত গৃহকর্তার। যদি তিনি ঈশ্বরের বাক্যকে তাঁর ধন ভাণ্ডার হিসেবে বিবেচনা করেন, তাহলে তিনি সব সময় তাঁর শিক্ষার মধ্য দিয়ে নতুন সৌন্দর্য ও নতুন সত্য আনয়ন করবেন। যখন শিক্ষক প্রার্থনার সময় ঈশ্বরের উপরে নির্ভর করবে, তখন খ্রীষ্টের আত্মা তার উপরে অবতীর্ণ হন, এবং তাঁর মাধ্যমে পবিত্র আত্মার শক্তিতে ঈশ্বর তাদের ও অন্যান্যদের অন্তরে কাজ করেন। পবিত্র আত্মা আমাদের মন ও অন্তরকে সুমিষ্ট আশা ও সাহস যোগান এবং বাইবেলের বিভিন্ন অংশ কল্পনার শক্তিতে মনে করিয়ে দেন, প্রত্যেক যুবককে তার শিক্ষা দানের মাধ্যমে এই অভিজ্ঞতার সাথে পরিচিত করে দেবেন। COLBen 112.1
স্বর্গীয় শান্তি ও আনন্দের ধারাকে উৎসাহ ব্যঞ্জক বাক্য দ্বারা প্রত্যেকে শিক্ষককে দিতে হবে, যারা শিক্ষকের সাথে সংযুক্ত তারা আশীর্বাদযুক্ত হয়ে শক্তিশালী জল প্রবাহের মতো হয়। বাইবেল কখনোই শিক্ষার্থীদের কাছে কোন একঘেঁয়ে পাঠ্যবই হয়ে ওঠে না। একজন জ্ঞানী শিক্ষকের অধীনে থাকলে বাক্য আরও বেশি আকাঙ্ক্ষিত হয়ে উঠবে। ঈশ্বরের বাক্য আমাদের জীবনের জন্য এমন এক খাদ্য, যা কখনো পুরানো হয় না। এর সৌন্দর্য ও সজীবতা শিশু ও যুবকদের আকর্ষণ করবে। এ যেন পৃথিবীর আকাশে উদিত হওয়া সূর্য, যার চিরন্তন উজ্জ্বলতা ও উষ্ণতা কখনো হ্রাস পায় না। COLBen 112.2
ঈশ্বরের পবিত্র ও শিক্ষা দানকারী আত্মা তাঁর বাক্যের মাঝে নিহিত রয়েছে। পবিত্র শাস্ত্রের প্রতিটি পাতা থেকে এক নতুন ও মহামূল্য আলো বিচ্ছুরিত হয়। সেই আলোতে প্রকাশিত হয় ঈশ্বরের সত্য এবং তাঁর বাক্য ও বাক্যের প্রত্যেকটি শব্দকে তা করে তোলে আরও উজ্জ্বল ও যথোপযুক্ত, ঠিক যেভাবে ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর আত্মার সাথে কথোপকথন করেন। COLBen 112.3
পবিত্র আত্মা যুবকদের সাথে কথা বলতে এবং ঈশ্বরের বাক্যের ঐশ্বর্য ও সৌন্দর্য তাদের কাছে উন্মোচন করতে ভালবাসেন যেন তারা তা আবিষ্কার করতে পারে। মহান শিক্ষাদাতা খ্রীষ্ট যে সমস্ত প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তা আত্মায় অনুভব করতে ও তাতে পরিচালিত হতে পবিত্র আত্মা শক্তি যোগান। এভাবেই সমস্ত প্রলোভনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার সক্ষমতা অন্তরের ভেতরে তৈরি হয়। COLBen 113.1
সত্যের বাক্যের গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পায় এবং তা এমন নিগূঢ় ও ব্যাপক অর্থ প্রকাশ করে যা আমরা কখনো স্বপ্নেও কল্পনা করি নি। অন্তর ও চরিত্রকে পরিবর্তিত করার এক অপূর্ব ক্ষমতা আছে বাক্যের সৌন্দর্য ও ঐশ্বর্যের। বাক্যের অনুপ্রেরণার কারণে অন্তরে স্বর্গীয় ভালবাসার আলো পতিত হয়। COLBen 113.2
বাইবেল যত বেশি অধ্যয়ন করা হবে, তত এর প্রতি আমাদের নির্ভরশীলতা বাড়বে। একজন শিক্ষার্থী বাক্যের যে অংশেই দৃষ্টি দিক না কেন, সেখানেই ঈশ্বরের অপরিসীম জ্ঞান ও ভালবাসা সে খুঁজে পাবে। যিহূদীদের সংস্কৃতির তাৎপর্য এখনও আমরা পুরোপুরিভাবে বুঝে উঠতে পারি নি। যিহূদীদের ধর্মীয় রীতিনীতি ও বিভিন্ন চিহ্নের মাঝে ঈশ্বরীয় সত্যের গভীরতা ও ব্যাপকতা নিহিত রয়েছে। এর রহস্য উন্মোচন করার চাবি হচ্ছে সুসমাচার। পরিত্রাণের পরিকল্পনা সম্পর্কিত জ্ঞানের মধ্য দিয়ে এই সত্যকে অনুধাবন করা সম্ভব। এই চমৎকার বিষয় সম্পর্কে জানা ও বোঝা আমাদের জন্য এক অভূতপূর্ব সুযোগ। আমাদেরকে ঈশ্বরের নিগূঢ় তত্ত্ব উপলব্ধি করতে হবে। মানুষের কাছে প্রকাশিত হওয়া সত্য সম্পর্কে জানার জন্য স্বর্গদূতেরা আকাঙ্ক্ষা করেন। তারা ঐকান্তিক আগ্রহ নিয়ে ঈশ্বরের বাক্যে অনুসন্ধান করেন এবং ঐশ্বরিক জ্ঞানের প্রশস্ততা, উচ্চতা, ও গভীরতা আরও বেশি করে লাভ করার জন্য প্রার্থনা করেন, যা একমাত্র প্রভু যীশুই তাদেরকে দিতে পারেন। COLBen 113.3
আমরা যত এই পৃথিবীর শেষকালের সন্নিকটে আসব, শেষ কাল সম্পর্কিত ভবিষ্যদ্বাণীগুলো ততই আমাদের আরও বেশি করে অধ্যয়ন করার প্রয়োজন দেখা দেবে। নতুন নিয়মের শেষ পুস্তকটি ঈশ্বরীয় সত্যে পরিপূর্ণ, যা আমাদের উপলব্ধি করা একান্ত আবশ্যক। শয়তান অনেকেরই মনকে অন্ধ করে রেখেছে, যাতে করে তারা কোনভাবে প্রকাশিত বাক্যকে তাদের অধ্যয়নের বিষয় হিসেবে গ্রহণ না করে। কিন্তু যীশু খ্রীষ্ট তাঁর পরিচর্যাকারী যোহনের মাধ্যমে ঘোষণা দিয়েছেন যে, শেষ কালের দিনগুলোতে কী কী ঘটবে। যোহন বলেছেন, “ধন্য সে, যে এই ভাববাণীর বাক্য সকল উচ্চৈঃস্বরে পাঠ করে, ও ধন্য তাহারা, যাহারা শ্রবণ করে, এবং ইহাতে লিখিত কথা সকল পালন করে; কেননা কাল সন্নিকট।” প্রকাশিত বাক্য ১:৩। COLBen 113.4
যীশু বলেছেন, “আর ইহাই অনন্ত জীবন যে, তাহারা তোমাকে, একমাত্র সত্যময় ঈশ্বরকে, এবং তুমি যাঁহাকে পাঠাইয়াছ, তাঁহাকে, যীশু খ্রীষ্টকে, জানিতে পায়।” যোহন ১৭:৩। তাহলে কেন আমরা এই জ্ঞানের মূল্য বুঝতে পারি না? কেন তাহলে আমাদের অন্তরে এই গৌরবময় সত্য জ্বলজ্বলে হয়ে ওঠে না, আমাদের ঠোঁটে ভেসে ওঠে না, এবং আমাদের সমস্ত সত্তায় তা ভাস্বর হয়ে ওঠে না? COLBen 114.1
তাঁর বাক্য প্রদানের মধ্য দিয়ে ঈশ্বর আমাদের পরিত্রাণের অপরিহার্য সমস্ত সত্য আমাদেরকে জ্ঞাত করেছেন। কোটি কোটি মানুষ এই জীবন জলের কূপ থেকে জল পান করেছে, তথাপি এর মজুদ কখনো শেষ হবে না। কোটি কোটি মানুষ সদাপ্রভুকে তাদের জীবনে স্থান দিয়েছে এবং তাঁর পরিচয় পাওয়ার কারণে তারাও তাঁরই বৈশিষ্ট্য ও স্বভাব বিশিষ্ট হয়েছে। যখন তারা বলেন যে খ্রীষ্টের চরিত্র কেমন, খ্রীষ্ট তাদের জন্য কী করেছেন, এবং তারা খ্রীষ্টের সাথে কোন সম্পর্কে আবদ্ধ, তখন তাদের ভেতরে পবিত্র আত্মা প্রজ্জ্বলিত হয়ে ওঠেন। কিন্তু এই অনুসন্ধানকারীদের অধ্যয়নের কারণে এই মহান ও পবিত্র জ্ঞানের ভাণ্ডার যে ফুরিয়ে যাবে তা নয়। আরও কোটি কোটি মানুষ পরিত্রাণের রহস্য অনুসন্ধানের কাজে ব্যাপৃত হলেও এই জ্ঞান কখনো ফুরোবার নয়। খ্রীষ্টের জীবন ও চরিত্র ও তাঁর পরিচর্যা কাজ নিয়ে অধ্যয়ন করা হলে আবিষ্কৃত সত্যের প্রতিটি পরতে পরতে পবিত্র আত্মা সুস্পষ্টভাবে আলোকপাত করবেন। প্রত্যেকবার নতুন COLBen 114.2
করে অনুসন্ধান করা হলে, আরও নতুন ও আকর্ষণীয় কোন বিষয় খুঁজে পাওয়া যাবে। ঐশ্বরিক এই জ্ঞান অশেষ। খ্রীষ্টের মানব দেহে মূর্তিমান হওয়া, মানুষের পাপের মূল্য পরিশোধের জন্য তাঁর আত্ম্যোৎসর্গ, এবং মধ্যস্থতাকারী কাজ নিয়ে অধ্যয়ন করার মাধ্যমে একজন অধ্যবসায়ী শিক্ষার্থী এই জ্ঞান তার জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত ধরে রাখতে সক্ষম হবে অনন্তকাল ধরে। স্বর্গপানে চেয়ে সে আপন মনে বিস্ময়াভিভূত কণ্ঠে বলে উঠবে, “ঈশ্বরের নিগূঢ় তত্ত্ব কত না মহান।” COLBen 114.3
অনন্ত জীবনে প্রবেশ করে আমরা যে জ্ঞান লাভ করব তা আমরা এখনই এই জীবনেই লাভ করতে পারি, যদি আমরা আমাদের উপলব্ধির পরিসীমাকে উন্মুক্ত করে দিই। অনন্ত কাল জুড়ে পরিত্রাণ প্রাপ্ত ব্যক্তির হৃদয়, মন, ও জিহ্বায় কেবল ধ্বনিত হবে পরিত্রাণের মহা গৌরব। খ্রীষ্ট তাঁর শিষ্যদের কাছে যে সত্য উন্মোচন করেছিলেন তা গ্রহণ করার মত বিশ্বাস তাদের ছিল না। কিন্তু যারা পরিত্রাণ লাভ করবে তারা সেই সত্য যুগযুগ ধরে উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে। খ্রীষ্টের পরিপূর্ণতা ও গৌরবের নতুন নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তাদের সামনে আবির্ভূত হবে। অনন্ত কাল ধরে বিশ্বস্ত গৃহকর্তা তার ধন ভাণ্ডার থেকে নতুন ও পুরাতন দ্রব্য বের করবেন। COLBen 115.1