খ্রীষ্টের দৃষ্টান্তমূলক শিক্ষা

25/61

দেয়ার জন্য যাচ্ঞা করা

লূক ১১:১-১৩ পদের উপর ভিত্তি করে রচিত

খ্রীষ্ট ক্রমাগতভাবে পিতার কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয় গ্রহণ করছিলেন, যেন তিনি তা আবার আমাদেরকে দিতে পারেন। “আর তোমরা যে বাক্য শুনিতে পাইতেছ,” খ্রীষ্ট বলেছেন, “তাহা আমার নয়, কিন্তু পিতার, যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন।” যোহন ১৪:২৪। “যেমন মনুষ্যপুত্র পরিচর্যা পাইতে আইসেন নাই, কিন্তু পরিচর্যা করিতে, এবং অনেকের পরিবর্তে আপন প্রাণ মুক্তির মূল্যরূপে দিতে আসিয়াছেন।” মথি ২০:২৮। তাঁর নিজের জন্য নয়, বরং অন্যদের জন্যই তিনি নিজ জীবন নির্বাহ করেছেন, চিন্তা করেছেন, ও প্রার্থনা করেছেন। অবিশ্রান্ত ভাবে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করার পর তিনি প্রতি সকালে মানুষের জন্য ঈশ্বরের স্বর্গীয় আলো নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন। প্রতি দিন তিনি পবিত্র আত্মার দ্বারা নতুন করে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করেছেন। দিনের আলো ফোটার আগেই সদাপ্রভু তাঁকে নিদ্রা থেকে জাগিয়েছেন এবং তাঁর আত্মা ও তাঁর কণ্ঠকে আশীর্বাদে পরিপূর্ণ করেছেন, যেন তিনিও একইভাবে অন্যদেরকে আশীর্বাদ যুক্ত করতে পারেন। তিনি মুখ দিয়ে যত কথা বলতেন, তা ঈশ্বর কর্তৃক অনুপ্রাণিত হয়ে বলতেন। দুঃখী, পীড়িত, ও পাপী মানুষদের প্রতি তিনি যত কথা বলেছেন তা প্রকৃতপক্ষে ছিল ঈশ্বরের মুখঃনিসৃত বাক্য। “প্রভু সদাপ্রভু আমাকে শিক্ষাগ্রাহীদের জিহ্বা দিয়াছেন,” তিনি বলেছেন, “যেন আমি বুঝিতে পারি, কিরূপে ক্লান্ত লোককে বাক্য দ্বারা সুস্থির করিতে হয়; তিনি প্রভাতে প্রভাতে জাগরিত করেন, আমার কর্ণ জাগরিত করেন, যেন আমি শিক্ষাগ্রাহীদের ন্যায় শুনিতে পাই।” যিশাইয় ৫০:৪। COLBen 116.1

যীশু খ্রীষ্টের শিষ্যরা তাঁর প্রার্থনার কারণে এবং ঈশ্বরের সাথে তাঁর কথোপকথনের অভ্যাসের কারণে অত্যন্ত অভিভূত হয়েছিলেন। একদিন তারা তাদের প্রভুর কাছ থেকে অল্প কিছু সময়ের জন্য অনুপস্থিত থাকার জন্য তাঁকে প্রার্থনায় রত অবস্থায় দেখতে পেলেন। সম্ভবত তিনি প্রার্থনায় এতটাই নিমগ্ন ছিলেন যে, শিষ্যরা কাছে আসলেও তিনি তাদের উপস্থিতি টের পেলেন না। এতে শিষ্যদের হৃদয় প্রচণ্ডভাবে আন্দোলিত হয়েছিল। তাঁর প্রার্থনা শেষ হলে পর শিষ্যরা বিস্ময়াভিভূত হয়ে বললেন, “প্রভু, আমাদিগকে প্রার্থনা করিতে শিক্ষা দিউন।” COLBen 117.1

এর উত্তরে খ্রীষ্ট আমাদের প্রভুর প্রার্থনা উচ্চারণ করলেন, যেভাবে তিনি তা পর্বতে উপদেশ দেয়ার সময় বলেছিলেন। এরপর তিনি তাদেরকে একটি দৃষ্টান্ত বলার মধ্য দিয়ে একটি শিক্ষা দিলেন। তিনি তাদেরকে বললেন, “তোমাদের মধ্যে কাহারও যদি বন্ধু থাকে, আর সে যদি মধ্যরাত্রে তাহার নিকটে গিয়া বলে, ‘বন্ধু আমাকে তিনখানা রুটি ধার দেও, কেননা আমার এক বন্ধু পথে যাইতে যাইতে আমার কাছে আসিয়াছেন, তাঁহার সম্মুখে রাখিবার আমার কিছুই নাই; তাহা হইলে সেই ব্যক্তি ভিতরে থাকিয়া কি এমন উত্তর দিবে, ‘আমাকে কষ্ট দিও না, এখন দ্বার বদ্ধ, এবং আমার সন্তানেরা আমার কাছে শুইয়া আছে, আমি উঠিয়া তোমাকে দিতে পারি না?’ আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, সে যদ্যপি বন্ধু বলিয়া উঠিয়া তাহা না দেয়, তথাপি উহার আগ্রহ প্রযুক্ত উঠিয়া উহার যত প্রয়োজন, তাহা দিবে।” COLBen 117.2

এখানে খ্রীষ্ট রুটি ধার চাওয়া ব্যক্তিকে উপস্থাপন করেছেন এমন একজন মানুষ হিসেবে যিনি আরেকজনকে দান করবেন। আগে তাকে সেই রুটি হাতে পেতে হবে, তা না হলে তিনি তার কাছে আগত পরিশ্রান্ত ও ক্লান্ত বন্ধুটির প্রয়োজন মেটাতে পারবেন না। যদিও তার প্রতিবেশী কোন ঝামেলা পোহাতে চান না, তথাপি তিনি আবেদনকারীর কথায় না করবেন না। আবেদনকারী যে করেই হোক তার বন্ধুর ক্ষুধা নিবারণ করবে। শেষ পর্যন্ত আবেদনকারীর ধৈর্যের পুরস্কার মিলল, তার যা প্রয়োজন তা তিনি পেলেন। COLBen 117.3

শিষ্যদেরও ঠিক একই ভাবে ঈশ্বরের কাছ থেকে আশীর্বাদ যাচ্ঞা করতে হবে। পাঁচ হাজার লোককে খাওয়ানো এবং স্বর্গ থেকে খাবার দানের উপর শিক্ষার মধ্য দিয়ে খ্রীষ্ট তাদেরকে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে পালনীয় দায়িত্বের কথা প্রকাশ করেছেন। মানুষের কাছে জীবন খাদ্য পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব তাদেরকে দেয়া হয়েছিল। যিনি তাদেরকে এই কাজে নিযুক্ত করেছেন তিনি প্রাশয়ই দেখেছেন যে, কত ভাবে তাদের বিশ্বাস প্রলোভনের মুখে পড়েছে। কখনো কখনো তারা অনাকাঙ্ক্ষিত বিভিন্ন পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন এবং মানুষ হিসেবে তাদের মধ্যে যে সকল দুর্বলতা রয়েছে সেগুলোকে চিহ্নিত করতে পেরেছেন। জীবন খাদ্যের জন্য ক্ষুধিত সমস্ত আত্মা তাদের কাছে আসত এবং এতে করে তারা নিজেদেরকে নিঃস্ব এবং অসহায় বলে মনে করতেন। তাদের অবশ্যই নিজেদের আত্মিক খাদ্য গ্রহণ করতে হবে, নতুবা তারা কিছুই মানুষকে দিতে পারবেন না। কিন্তু একটি আত্মাকেও খাদ্য যোগান না দিয়ে ফিরিয়ে দেয়ার অধিকার তাদের ছিল না। খ্রীষ্ট তাদেরকে দেখিয়ে দিয়েছিলেন এই জীবন খাদ্যের উৎস কী। যে লোকটির কাছে তার বন্ধু খাবার চাইতে এসেছিল, তখন মাঝ রাত হলেও তিনি তাকে ফিরিয়ে দেন নি। তার নিজের কোন কিছু ছিল না, কিন্তু তিনি সেই রাতেই উঠে খাবারের খোঁজে বের হলেন এবং তার প্রতিবেশী তাকে সেই খাবার না দেয়া পর্যন্ত তিনি ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করলেন ও চেষ্টা চালিয়ে গেলেন। তাহলে ঈশ্বরের পরিচর্যাকারীরা যখন ক্ষুধিতদের খাদ্য দেয়ার জন্য ঈশ্বরের কাছে যাচ্ঞা করবেন, যাদেরকে তিনিই স্বয়ং এই কাজে নিযুক্ত করেছেন, তাদেরকে কি তিনি সেই প্রয়োজন মিটিয়ে দেবেন না? COLBen 117.4

কিন্তু এই দৃষ্টান্তের স্বার্থপর প্রতিবেশীর মধ্য দিয়ে ঈশ্বরকে উপস্থাপন করা হয় নি। এখানে তুলনা করার জন্য নয়, বরং বৈপরীত্য প্রকাশের জন্যই দৃষ্টান্তটি বলা হয়েছে। একজন স্বার্থপর মানুষ শুধু তখনই এ ধরনের আবেদনে সাড়া দেবে, যখন সে দেখবে কাজটি না করা পর্যন্ত তাকে বিশ্রামের সময় কেবল বিরক্তই করা হবে। কিন্তু এর বিপরীতে ঈশ্বর দান করে আনন্দিত হন। তিনি সহানুভূতিতে পূর্ণ এবং যারা বিশ্বাস করে তাঁর কাছে আসবে, তাদের অনুরোধ রক্ষা করার জন্য তিনি সব সময় আকাঙ্ক্ষা করেন। তিনি আমাদেরকে সেটাই দেন যা আমরা পরিচর্যা কাজের মধ্য দিয়ে অন্যদেরকে দিতে পারব এবং এভাবেই আমরা তাঁর মত হয়ে উঠব। COLBen 118.1

খ্রীষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন, “যাচ্ঞা কর, তোমাদিগকে দেওয়া যাইবে; অন্বেষণ কর, পাইবে; দ্বারে আঘাত কর, তোমাদের জন্য খুলিয়া দেওয়া যাইবে। কেননা যে কেহ যাচ্ঞা করে, সে গ্রহণ করে, এবং যে অন্বেষণ করে, সে পায়; আর যে দ্বারে আঘাত করে, তাহার জন্য খুলিয়া দেওয়া যাইবে।” COLBen 119.1

ত্রাণকর্তা আরও বলেছেন: “তোমাদের মধ্যে এমন পিতা কে, যাহার পুত্র রুটি চাহিলে তাহাকে পাথর দিবে? কিম্বা মাছ চাহিলে মাছের পরিবর্তে সাপ দিবে? কিম্বা ডিম চাহিলে তাহাকে বৃশ্চিক দিবে? অতএব তোমরা মন্দ হইয়াও যদি তোমাদের সন্তানদিগকে উত্তম উত্তম দ্রব্য দান করিতে জান, তবে ইহা কত অধিক নিশ্চয় যে, স্বর্গস্থপিতা, যাহারা তাঁহার কাছে যাচ্ঞা করে, তাহাদিগকে পবিত্র আত্মা দান করিবেন।” COLBen 119.2

ঈশ্বরের প্রতি আমাদের নির্ভরতা ও বিশ্বাস আরও সুদৃঢ় করার জন্য খ্রীষ্ট আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন যেন আমরা তাঁকে এক নতুন নামে ডাকি, যে নামের সাথে মানব হৃদয়ের সুগভীর ভালবাসা জড়িত। তিনি এই মহান সুযোগ দিয়েছেন, যেন আমরা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে পিতা বলে সম্বোধন করি। তাঁকে এই নামে ডাকার অর্থ হচ্ছে তাঁর প্রতি আমাদের অপরিমেয় ভালবাসা ও বিশ্বাস প্রকাশ করা এবং আমাদের প্রতি তাঁর ভালবাসা ও তাঁর সাথে আমাদের সুমধুর সম্পর্ককে স্বীকার করা। আমরা যখন তাঁর কাছে কোন কিছু চাই বা প্রার্থনা করি, তখন তা তাঁর কানে সঙ্গীতের ধ্বনি হয়ে বাজে। ঈশ্বরকে পিতা বলে সম্বোধন করাটাকে যেন আমরা সহজ ভাবে গ্রহণ করি, সে কারণে যীশু বার বার এই নামটি তাঁর কথায় উল্লেখ করেছেন। তিনি চেয়েছেন যেন আমরা এই সম্বোধনে সাবলীল হয়ে উঠি। COLBen 119.3

ঈশ্বর আমাদেরকে তাঁর সন্তান হিসেবে গণ্য করেন। তিনি আমাদেরকে এই নিষ্ঠুর পৃথিবী থেকে আলাদা করে তাঁর নিজের জন্য বেছে নিয়েছেন; যেন আমরা তাঁর রাজকীয় পরিবারের সদস্য হতে পারি, স্বর্গের রাজার পুত্র ও কন্যা হয়ে উঠতে পারি। জাগতিক পিতার প্রতি একটি শিশু যেভাবে নির্ভর করে ও বিশ্বাস করে, তার চেয়েও গভীর ও শক্তিশালী বিশ্বাস ও আস্থা ঈশ্বরের উপরে স্থাপনের জন্য আমাদেরকে তিনি আহ্বান জানাচ্ছেন। বাবা মায়েরা তাদের সন্তানদেরকে ভালবাসেন, কিন্তু ঈশ্বরের ভালবাসা যে কোন মানবীয় ভালবাসার চেয়ে অনেক গুণে দীর্ঘ, প্রশস্ত, ও গভীর। এটা পরিমাপ করা যায় না। জাগতিক পিতা মাতারা যদি জানেন যে তাদের সন্তানদের জন্য কিভাবে ভাল উপহার দেয়া যায়, তাহলে স্বর্গে আমাদের যে পিতা রয়েছেন, তিনি কি তাঁর সন্তানদের যাচ্ঞা অনুসারে তাদেরকে পবিত্র আত্মা দান করবেন না? COLBen 119.4

প্রার্থনা সম্পর্কে খ্রীষ্টের শিক্ষাগুলোকে সতর্কতার সাথে বিবেচনা করা প্রয়োজন। প্রার্থনায় একটি ঐশ্বরিক বিজ্ঞানের অবস্থান রয়েছে। খ্রীষ্টের দৃষ্টান্ত রূপায়নের মধ্য দিয়ে আমরা তা উপলব্ধি করার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান লাভ করি। তিনি আমাদেরকে দেখিয়েছেন যে, প্রার্থনার আত্মা প্রকৃত অর্থে কেমন হতে পারে। আমাদের চাওয়াগুলো ঈশ্বরের কাছে উপস্থাপন করার ক্ষেত্রে অধ্যবসায় ও ধৈর্য ধারণের প্রয়োজনীয়তা তিনি আমাদেরকে শিখিয়েছেন। সেই সাথে তিনি আমাদেরকে এই নিশ্চয়তা জ্ঞাপন করেছেন যে, ঈশ্বর আমাদের প্রার্থনা শুনতে চান ও তার উত্তর দিতে চান। COLBen 120.1

আমাদের প্রার্থনায় কখনো স্বার্থপরতার স্থান থাকবে না, আমরা কেবল নিজেদের লাভের জন্য প্রার্থনা করতে পারি না। অন্যদেরকে দিতে পারি এমন বস্তু আমাদের চাইতে হবে। খ্রীষ্টের জীবনের আদর্শই যেন আমাদের জীবনের আদর্শ হয়ে ওঠে। “আর তাহাদের নিমিত্ত আমি আপনাকে পবিত্র করি,” খ্রীষ্ট তাঁর শিষ্যদের সম্পর্কে বলেছেন, “যেন তাহারাও সত্যই পবিত্রীকৃত হয়।” যোহন ১৭:১৯। খ্রীষ্টের মধ্যে ঈশ্বরের বাক্যের আদেশ পালনের প্রতি যে একাগ্রতা, যে ভক্তি, যে আত্মত্যাগ, যে আনুগত্য দেখা গিয়েছিল, ঠিক সেগুলোই যেন তাঁর পরিচর্যাকারীদের মধ্যে দেখা যায়। এই পৃথিবীতে আমাদের জীবন ধারণের লক্ষ্য নেহায়েত নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধি বা নিজেদের প্রয়োজন মেটানো ও সন্তুষ্ট করা নয়; পাপীদের জীবন দানের জন্য ঈশ্বর আমাদেরকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন তা সঠিকভাবে সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে তাঁকে গৌরবান্বিত করাই হওয়া উচিত আমাদের প্রার্থনার বিষয়। আমাদের ঈশ্বরের কাছ থেকে আশীর্বাদ যাচ্ঞা করা উচিত যেন আমরা অন্যদেরকেও আশীর্বাদ করতে পারি। দান করার মধ্য দিয়ে আমাদের গ্রহণের সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পায়। যারা আমাদের চারপাশে বসবাস করে তাদের সাথে স্বর্গীয় ঐশ্বর্য সহভাগিতা করার কথা না ভেবে আমরা কখনো তা ঈশ্বরের কাছ থেকে চাইতে পারি না। COLBen 120.2

দৃষ্টান্তে যে লোকটি প্রতিবেশীর কাছে খাবার চাইতে এসেছিল তাকে বার বার ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছিল, কিন্তু সে তার লক্ষ্য থেকে সরে আসে নি। কাজেই আমাদের প্রার্থনার ক্ষেত্রেও অনেক সময় আমরা হয়তো তাৎক্ষণিক ভাবে উত্তর পাব না; কিন্তু খ্রীষ্ট আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন যেন আমরা কখনো প্রার্থনা করা থেকে বিরত না থাকি। প্রার্থনার কারণে ঈশ্বরের কাজে কোন ধরনের পরিবর্তন আসে না, কিন্তু প্রার্থনার মধ্য দিয়ে আমরা ঈশ্বরের সাথে একাত্ম হই। যখন আমরা কোন বিষয়ে ঈশ্বরকে প্রার্থনায় অনুরোধ করি, তখন তিনি দেখতে পান সেটি আমাদের অন্তরে অনুসন্ধান করা ও পাপের জন্য মন পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কি না। এ কারণে তিনি আমাদেরকে পরীক্ষায় ফেলেন, তিনি আমাদেরকে কষ্ট ভোগ করতে দেন, যাতে করে আমরা দেখি যে আমাদের মধ্য দিয়ে তাঁর পবিত্র আত্মার কাজকে কোন বিষয়টি বাধা দিচ্ছে। COLBen 121.1

ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ করার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। আর প্রার্থনা কখনোই আমাদের দায়িত্বের পরিপূরক হতে পারে না। “তোমরা যদি আমাকে প্রেম কর,” যীশু বলেছেন, “তবে আমার আজ্ঞা সকল পালন করিবে।” “যে ব্যক্তি আমার আজ্ঞা সকল প্রাপ্ত হইয়া সেই সকল পালন করে, সেই আমাকে প্রেম করে; আর যে আমাকে প্রেম করে, আমার পিতা তাহাকে প্রেম করিবেন; এবং আমিও তাহাকে প্রেম করিব, আর আপনাকে তাহার কাছে প্রকাশ করিব।” যোহন ১৪:১৫, ২১। যারা ঈশ্বরের কাছে তাদের আবেদন নিয়ে উপস্থিত হয় এবং তাঁর প্রতিজ্ঞার পরিপূর্ণতা দাবী করে, তারা নিজেরাই যদি নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন না করে, তাহলে তারা যিহোবাকেই অপমানিত করে। তারা তাদের প্রতিজ্ঞার পরিপূর্ণতা দাবী করার জন্য খ্রীষ্টের নাম ব্যবহার করে, কিন্তু তারা সেই কাজগুলো করে না, যেগুলো করলে খ্রীষ্টের উপরে তাদের বিশ্বাস ও তাঁর প্রতি তাদের ভালবাসা প্রকাশ পাবে। COLBen 121.2

অনেকেই আছে যারা পিতার কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য অপরিহার্য শর্তগুলো লঙ্ঘন করে। আমরা যখন ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে চাইব তখন অবশ্যই আমাদের বিশ্বাসের কাজগুলো খুব সূক্ষ্মভাবে যাচাই করে দেখা প্রয়োজন। যদি আমরা তাঁর অবাধ্য হই তাহলে আমরা প্রভুর কাছে এমন এক দায়ে আবদ্ধ হই, যা আমাদের অপরিহার্য শর্ত পালন না করার দায় থেকে মুক্ত করতে পারে না। আমরা ঈশ্বরকে তাঁর প্রতিজ্ঞার কথা মনে করিয়ে দিই এবং তাঁকে সেগুলো পরিপূর্ণ করতে বলি, কিন্তু এর মধ্য দিয়ে আমরা তার নামকেই অপমান করি। COLBen 121.3

প্রতিজ্ঞাটি ছিল যে, “তোমরা যদি আমাতে থাক, এবং আমার বাক্য যদি তোমাদের মধ্যে থাকে, তবে তোমাদের যাহা ইচ্ছা হয়, যাচ্ঞা করিও, তোমাদের জন্য তাহা করা যাইবে।” যোহন ১৫:৭। অন্য দিকে সাধু যোহন এই ঘোষণা দিয়েছেন: “আর আমরা ইহাতেই জানিতে পারি যে, তাঁহাকে জানি, যদি তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করি। যে ব্যক্তি বলে, আমি তাঁহাকে জানি, তথাপি তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন না করে, সে মিথ্যাবাদী এবং তাঁহার অন্তরে সত্য নাই। কিন্তু যে তাঁহার বাক্য পালন করে, তাহার অন্তরে সত্যই ঈশ্বরের প্রেম সিদ্ধ হইয়াছে। ইহাতেই আমরা জানিতে পারি যে, তাঁহাতে আছি।” ১ যোহন ২:৩-৫। COLBen 122.1

শিষ্যদের প্রতি যীশুর শেষ আদেশগুলোর মধ্যে একটি ছিল, “আমি যেমন তোমাদিগকে প্রেম করিয়াছি, তোমরাও তেমনি পরস্পর প্রেম কর।” যোহন ১৩:৩৪। আমরা কি এই আদেশ পালন করছি, না কি আমরা কেবলই আমাদের চরিত্রের খ্রীষ্ট বিহীন বৈশিষ্ট্যগুলোকে ক্রমেই আরও বেশি করে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছি? যদি আমরা কোন ভাবে অন্য কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকি বা আঘাত দিয়ে থাকি, তাহলে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে নিজেদের ভুল স্বীকার করা এবং তাদের সাথে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করা। বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের কাছে আসা এবং তাঁর কাছ থেকে আশীর্বাদ যাচ্ঞা করার জন্য এটি অন্যতম একটি পূর্বশর্ত। COLBen 122.2

যারা প্রার্থনায় প্রভুর অন্বেষণ করে তাদের কাছে আরেকটি বিষয় প্রায়শই অবহেলিত হয়। আপনি কি ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন? ভাববাদী মালাখির মধ্য দিয়ে প্রভু এই ঘোষণা দিয়েছেন, “তোমাদের পিতৃপুরুষদের সময়াবধি তোমরা আমার বিধি-কলাপ হইতে সরিয়া পড়িয়াছ, সেই সকল পালন কর নাই। আমার কাছে ফিরিয়া আইস, আমিও তোমাদের কাছে ফিরিয়া আসিব, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন। কিন্তু তোমরা বলিতেছ, আমরা কিসে ফিরিব? মনুষ্য কি ঈশ্বরকে ঠকাইবে? তোমরা ত আমাকে ঠকাইয়া থাক। কিন্তু তোমরা বলিতেছ, কিসে তোমাকে ঠকাইয়াছি? দশমাংশে ও উপহারে।” মালাখি ৩:৭, ৮। COLBen 122.3

সমস্ত প্রকার আশীর্বাদ দানকারী হিসেবে ঈশ্বর অবশ্যই আমাদের যা কিছু আছে তার কিছু অংশ চাইতে পারেন। সুসমাচার প্রচারের কাজকে বেগবান করার জন্য এটি তাঁর অন্যতম একটি পরিকল্পনা। আর অন্য দিকে ঈশ্বরের কাছে এই অংশটুকু ফিরিয়ে দেয়ার মধ্য দিয়ে আমরা তাঁর দেয়া উপহারের জন্য আমাদের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি। কিন্তু যে সম্পদ ঈশ্বরের নিজের সেটি তাঁকে না দিয়ে যদি আমরা নিজেদের কাছে ধরে রাখি, তাহলে কি করে আমরা তাঁর কাছ থেকে আশীর্বাদ যাচ্ঞা করতে পারি? যদি আমরা পার্থিব বস্তুর ক্ষেত্রে অবিশ্বস্ত ধনাধ্যক্ষ হই, তাহলে ঈশ্বর কি করে আমাদেরকে স্বর্গীয় বস্তু দিয়ে বিশ্বাস করবেন? হয়তো এখানেই প্রার্থনার উত্তর না পাওয়ার রহস্য নিহিত। COLBen 123.1

কিন্তু প্রভু তাঁর মহা দয়ার গুণে আমাদেরকে ক্ষমা করে দিতে প্রস্তুত, তিনি বলেন “তোমরা সমস্ত দশমাংশ ভাণ্ডারে আন, যেন আমার গৃহে খাদ্য থাকে; আর তোমরা ইহাতে আমার পরীক্ষা কর . . . আমি আকাশের দ্বার সকল মুক্ত করিয়া তোমাদের প্রতি অপরিমেয় আশীর্বাদ বর্ষণ করি কি না। আর আমি তোমাদের নিমিত্ত গ্রাসককে ভর্ৎসনা করিব, সে তোমাদের ভূমির ফল বিনষ্ট করিবে না, এবং ক্ষেত্রে তোমাদের দ্রাক্ষালতার ফল অকালে ঝরিবে না . . . আর সর্ব জাতি তোমাদিগকে ধন্য বলিবে, কেননা তোমরা প্রীতিজনক দেশ হইবে, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন।” মালাখি ৩:১০-১২। COLBen 123.2

কাজেই ঈশ্বরের আরও অনেক অপরিহার্য শর্ত ও নিরূপিত দায়িত্বের মধ্যে এটিও একটি। তাঁর প্রতিজ্ঞাত সমস্ত দানের মূলে রয়েছে আমাদের বাধ্যতা। যারা তাঁর কাজে সহযোগিতা করবে তাদের জন্য ঈশ্বরের কাছে আশীর্বাদে পরিপূর্ণ স্বর্গ রয়েছে। তারা সকলে তাঁর বাধ্য হয়ে জীবন ধারণ করবে তারা নিশ্চিন্তে ও আত্মবিশ্বাসের সাথে তাঁর প্রতিজ্ঞার পরিপূর্ণতা দাবী করতে পারে। COLBen 123.3

কিন্তু আমাদের অবশ্যই ঈশ্বরের প্রতি এক সুদৃঢ় এবং অটল নির্ভরতা প্রদর্শন করতে হবে। অনেক সময় তিনি আমাদের বিশ্বাসকে পরীক্ষা করার জন্য কিংবা আমাদের আকাঙ্ক্ষার শুদ্ধতা যাচাই করার জন্য প্রার্থনার উত্তর দিতে দেরি করেন। তাঁর বাক্য অনুসারে যদি আমরা প্রার্থনা করি, তাহলে আমাদের অবশ্যই তাঁর করা প্রতিজ্ঞায় বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে এবং এমন একাগ্রতা নিয়ে তাঁর কাছে আমাদের আবেদন রাখতে হবে যেন তা প্রত্যাখ্যান না হয়। COLBen 123.4

ঈশ্বর বলেন নি যে, তোমরা একবার চাও এবং তোমরা তা পাবে।তিনি আমাদেরকে যাচ্ঞা করতে বলেছেন। আমাদেরকে প্রার্থনায় দীর্ঘসহিষ্ণু হতে হবে। একাগ্রতা ও ধৈর্যের সাথে যাচ্ঞা করার কারণে আমাদের মধ্যে আরও বেশি করে ভক্তি জাগ্রত হয় এবং সেই বস্তুর প্রতি আমাদের আকাঙ্ক্ষা আরও বেশি করে বৃদ্ধি পায়। লাসারের কবরের সামনে যীশু মার্থাকে বলেছিলেন, “আমি কি তোমাকে বলি নাই যে, যদি বিশ্বাস কর, তবে ঈশ্বরের মহিমা দেখিতে পাইবে?” যোহন ১১:৪০। COLBen 124.1

কিন্তু অনেকেরই বিশ্বাস জীবন্ত নয়। এ কারণে তারা ঈশ্বরের ক্ষমতার পূর্ণ রূপ দেখতে পায় না। তাদের অবিশ্বাসের কারণেই তাদের দুর্বলতা দেখা দেয়। ঈশ্বর তাদের জন্য যে কাজ করতে পারেন তার চেয়ে বরং তাদের নিজেদের কাজের উপরেই তাদের আস্থা বেশি। তারা নিজেরাই নিজেদেরকে সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করে। তারা নিজেরা পরিকল্পনা করে ও চিন্তা ভাবনা করে, কিন্তু খুব অল্প পরিমাণে প্রার্থনা করে এবং ঈশ্বরের উপরে তাদের প্রকৃত বিশ্বস্ত খুবই কম। তারা মনে করে তাদের মধ্যে বিশ্বাস আছে, কিন্তু সেটা কেবল সেই মুহূর্তটুকুর জন্যই। তাদের নিজেদের প্রয়োজন, কিংবা সেই বস্তুটি দান করার ক্ষেত্রে ঈশ্বরের ইচ্ছা বুঝতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে তারা প্রভুর কাছে তাদের প্রার্থনায় অধ্যবসায় থাকে না। COLBen 124.2

মাঝ রাতে বন্ধুর জন্য রুটি যোগাড় করতে প্রতিবেশীর দরজায় এসে কড়া নাড়ছিল যে লোকটি, ঠিক তার মত একাগ্রতা ও অধ্যবসায় থাকতে হবে আমাদের মধ্যে। আমরা যত বেশি ঐকান্তিকতা ও আন্তরিকতা নিয়ে প্রভুর কাছে যাচ্ঞা করব, তত বেশি করে আমরা খ্রীষ্টের সাথে আমাদের আত্মিক মিলনের দিকে এগিয়ে যাবে। আমাদের বিশ্বাস যদি বৃদ্ধি না পায়, তাহলে আমাদের উপরে বর্ষিত আশীর্বাদও বৃদ্ধি পাবে না। COLBen 124.3

আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে প্রার্থনা করা এবং বিশ্বাস করা। প্রার্থনার সময়ও সতর্ক থাকতে হবে। সতর্ক থাকতে হবে এবং প্রার্থনা শ্রবণকারী ঈশ্বরের সাথে সহযোগিতা করতে হবে। এই কথা অন্তরে ধারণ করতে হবে যে, “আমরা ঈশ্বরেরই সহকার্যকারী।” ১ করিন্থীয় ৩:৯। প্রার্থনার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কথা বলতে ও কাজ করতে হবে। ঈশ্বরের পরীক্ষাই বলে দেবে যে, আপনার বিশ্বাস খাঁটি ছিল কি না, না কি আপনার করা প্রার্থনাগুলো কেবলই লোক দেখানো অসার ছিল। COLBen 124.4

যখন আপনি কোন জটিলতায় পড়বেন বা কোন সমস্যা আপনার সামনে এসে দাঁড়াবে, তখন কোন মতেই মানুষের কাছে সাহায্য চাইতে যাবেন না। সমস্ত কিছু দিয়ে ঈশ্বরের উপরে নির্ভর করুন। আমাদের সমস্যাগুলো অন্যদের কাছে প্রকাশ করলে আমরা কেবল আরও বেশি করে দুর্বল হয়ে পড়ব এবং তাতে করে তারাও কোন নতুন শক্তি পাবে না। এতে করে আমাদের আত্মিক অক্ষমতার বোঝা তাদের উপরেও পতিত হবে, যা থেকে তারা নিজেরা মুক্ত হতে পারবে না। আমরা সমস্যায় পড়লে ভ্রান্ত ও দুর্বল মানুষের কাছে সাহায্য পেতে যাই, যেখানে পবিত্র ও সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাদেরকে সাহায্য করতে সব সময় প্রস্তুত আছেন। COLBen 125.1

জ্ঞান লাভের জন্য আমাদের পৃথিবীর প্রান্ত পর্যন্ত যাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই, কারণ আমাদের ঈশ্বর রয়েছেন। যে গুণগুলো নিকটবর্তীই বা যা থাকবে সেগুলোই আপনাকে সাফল্য এনে দেয় নি। একমাত্র সদাপ্রভুর যা করার সামর্থ আছেন, সে কারণেই আপনি সাফল্য লাভ করেছেন। মানুষ যা করতে পারে তার উপরে নির্ভর না করে, বরং ঈশ্বর প্রত্যেকটি বিশ্বাসী আত্মার প্রতি কী করতে পারেন, তার উপরে আমাদের নির্ভর করতে হবে। তিনি চান যেন আমরা বিশ্বাসে তাঁর উপরে নির্ভর করি। তিনি চান যেন আমরা তাঁর কাছ থেকে মহান কোন ঘটনা প্রত্যাশা করি। তিনি চান যেন আমরা জাগতিক বিষয়ে উপলব্ধির পাশাপাশি আত্মিক বিষয়েও তাঁর কাছ থেকে উপলব্ধি লাভ করি। তিনি আমাদের বুদ্ধিমত্তাকে প্রখর করে তুলতে পারেন। তিনি আমাদের দক্ষতা ও যোগ্যতা দান করতে পারেন। কাজে আপনার মেধা তাঁর কাজে খাটান, ঈশ্বরের কাছে প্রজ্ঞা যাচ্ঞা করুন, এবং তা তিনি আপনাকে প্রজ্ঞা দেবেন। COLBen 125.2

খ্রীষ্টের বাণী আপনার নিশ্চয়তা হিসেবে বিবেচনা করুন। ইতোমধ্যেই কি তিনি আপনাকে তাঁর কাছে আসার আমন্ত্রণ জানান নি? কখনো নিরাশ ও নিরুৎসাহিত ভঙ্গিতে কথা বলবেন না। যদি আপনি তা করেন তাহলে আপনি আরও বেশি করে নিজেকে হারিয়ে ফেলবেন। শুধুমাত্র বাহ্যিক অবস্থান দেখে বিচার করা এবং কোন সমস্যা বা চাপের মুখে পড়লে অভিযোগ করার মাধ্যমে আপনি আপনার দুর্বল ও ক্ষীণ বিশ্বাসের পরিচয় দেন। এমন ভাবে কথা বলুন ও এমন কাজ করুন যাতে আপনার দৃঢ় বিশ্বাসের পরিচয় পাওয়া যায়। ঈশ্বর সম্পদে ঐশ্বর্যশালী, তিনি এই জগতের মালিক। বিশ্বাসে স্বর্গপানে মুখ তুলুন। যাঁর কাছে আলো, ক্ষমতা, ও কার্যকারিতা রয়েছে সেই ঈশ্বরের দিকে দৃষ্টি দিন। COLBen 125.3

খাঁটি বিশ্বাসে রয়েছে এমন আদর্শগত দৃঢ়তা ও লক্ষ্যের প্রতি অবিচলতা যা সময় বা ক্লান্তির কারণে কখনো বিচ্যুত হয় না। “তরুণেরা ক্লান্ত ও শ্রান্ত হয়, যুবকেরা স্খলিত, স্খলিত হয়; কিন্তু যাহারা সদাপ্রভুর অপেক্ষা করে, তাহারা উত্তরোত্তর নূতন শক্তি পাইবে; তাহারা ঈগল পক্ষীর ন্যায় পক্ষসহকারে ঊর্ধ্বে উঠিবে; তাহারা দৌড়াইলে শ্রান্ত হইবে না; তাহারা গমন করিলে ক্লান্ত হইবে না।” যিশাইয় ৪০:৩০, ৩১। COLBen 126.1

এমন অনেকে রয়েছে যারা অন্যদেরকে সাহায্য করতে চান, কিন্তু তারা অনুভব করেন যে, তাদের দেয়ার মত কোন আত্মিক শক্তি বা আলো অবশিষ্ট নেই। তারা অনুগ্রহের সিংহাসনের সামনে তাদের আবেদন পেশ করুক। পবিত্র আত্মার কাছে যাচ্ঞা করুন। ঈশ্বর মানুষের কাছে যত প্রতিজ্ঞা করেছেন, তার সবই তিনি পূরণ করবেন। আপনার বাইবেলটি হাতে নিয়ে বলুন, তুমি যেমন বলেছিলে ঠিক তেমনটাই আমি করেছি। আমি তোমার প্রতিজ্ঞার কথা তোমাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, “যাচ্ঞা কর, তোমাদিগকে দেওয়া যাইবে; অন্বেষণ কর, পাইবে; দ্বারে আঘাত কর, তোমাদের জন্য খুলিয়া দেওয়া যাইবে।” COLBen 126.2

আমাদের কোন মতেই শুধু যীশু খ্রীষ্টের নামে প্রার্থনা করলে চলবে না, বরং আমাদেরকে অবশ্যই পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণায় প্রার্থনা করতে হবে। এ থেকে বোঝা যায় পবিত্র আত্মা সম্পর্কিত এই কথায় আসলে কী বোঝানো হয়েছে: “আর সেইরূপে আত্মাও আমাদের দুর্বলতায় সাহায্য করেন; কেননা উচিত মতে কি প্রার্থনা করিতে হয়, তাহা আমরা জানি না, কিন্তু আত্মা আপনি অবক্তব্য আর্তস্বর দ্বারা আমাদের পক্ষে অনুরোধ করেন।” রোমীয় ৮:২৬। এ ধরনের প্রার্থনার উত্তর দান করে ঈশ্বর সব সময়ই আনন্দিত হন। যখন আমরা একাগ্রতা ও ঐকান্তিকতার সাথে খ্রীষ্টের নাম নিয়ে প্রার্থনা করি তখন তা ঈশ্বরকে এমন ভাবে আন্দোলিত করে যে, তিনি তখন “আমাদের সমস্ত যাচ্ঞা ও চিন্তার অতীত অতিরিক্ত কর্ম করিতে পারেন।” ইফিষীয় ৩:২০। COLBen 126.3

যীশু খ্রীষ্ট বলেছেন, “যাহা কিছু তোমরা প্রার্থনা ও যাচ্ঞা কর, বিশ্বাস করিও যে, তাহা পাইয়াছ, তাহাতে তোমাদের জন্য তাহাই হইবে,” মার্ক ১১:২৪। “আর তোমরা আমার নামে যাহা কিছু যাচ্ঞা করিবে, তাহা আমি সাধন করিব, যেন পিতা পুত্রে মহিমান্বিত হন,” যোহন ১৪:১৩। যীশুর প্রিয় শিষ্য যোহন পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণায় খুব সহজভাবে এবং নিশ্চয়তা নিয়ে এই কথা বলেছেন: “আর তাঁহার উদ্দেশে আমরা এই সাহস প্রাপ্ত হইয়াছি যে, যদি তাঁহার ইচ্ছানুসারে কিছু যাচ্ঞা করি, তবে তিনি আমাদের যাচ্ঞা শুনেন। আর যদি জানি যে, আমরা যাহা যাচ্ঞা করি, তিনি তাহা শুনেন তবে ইহাও জানি যে, আমরা তাঁহার কাছে যাহা যাচ্ঞা করিয়াছি সেই সকল পাইয়াছি,” ১ যোহন ৫:১৪, ১৫। এর পর যীশুর নামে পিতার কাছে আপনার প্রার্থনা তুলে ধরুন। ঈশ্বর অবশ্যই তাঁর নামের মর্যাদা রক্ষা করবেন। COLBen 127.1

সিংহাসনের চারপাশে জুড়ে থাকা রংধনুটি আমাদের এই আশ্বাস দেয় যে, ঈশ্বর খাঁটি ও সত্য, তাঁর কোন পরিবর্তন হয় না, কিংবা তিনি কখনো তাঁর কথার বরখেলাপ করেন না। আমরা তাঁর বিরুদ্ধে পাপ করেছি এবং আমাদের শাস্তি প্রাপ্য রয়েছে; তথাপি তিনি নিজে আমাদের ঠোঁটে এই অপূর্ব বাক্য দান করেছেন, “তুমি আপন নামের অনুরোধে আমাদিগকে ঘৃণা করিও না, তোমার প্রতাপের সিংহাসন অনাদরের পাত্র করিও না; আমাদের সহিত তোমার নিয়ম স্মরণ কর, ভঙ্গ করিও না।” যিরমিয় ১৪:২১। যখন আমরা তাঁর কাছে এসে আমাদের অযোগ্যতা স্বীকার করব এবং আমাদের পাপের জন্য ক্ষমা চাইব, তখন তিনি আমাদের কান্না শুনবেন। তাঁর বাক্য যখন আমাদের মধ্য দিয়ে পরিপূর্ণতা লাভ করে, তখন আমার তাঁর সিংহাসনের গৌরব ও মহিমা প্রকাশ করে। COLBen 127.2

হারোণ ছিলেন খ্রীষ্টের প্রতীক। হারোণের মতই আমাদের ত্রাণকর্তা খ্রীষ্ট পবিত্র স্থানে তাঁর পবিত্র হৃদয়ে তাঁর সমস্ত লোকদের নাম ধারণ করে রেখেছেন। আমাদের মহান মহা যাজক আমাদেরকে যে সকল প্রতিজ্ঞা করেছেন ও আমাদেরকে ধারণ করতে বলেছেন, তার সবগুলোই তাঁর স্মরণে আছে। তিনি তাঁর শপথ ও নিয়মের কথা কখনো ভোলেন না। COLBen 127.3

যারা যারা তাঁর অন্বেষণ করবে, তারা সকলে তাঁকে খুঁজে পাবে। যারা দরজায় এসে আঘাত করবে, তাদের জন্য দরজা খুলে দেওয়া হবে। কখনো এই অজুহাত দেখানো হবে না: আমাকে বিরক্ত কোরো না; দরজা বন্ধ আছে; এখন আমি ওটা খুলতে পারব না। একজন মানুষকেও কখনো এই কথা বলা হবে না, আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারব না। যারা মাঝ রাতে উঠে এসে ক্ষুধার্ত লোকদের জন্য খাবার ভিক্ষা চাইতে আসবে, তাদেরকে কখনো ব্যর্থ হতে দেয়া হবে না। COLBen 128.1

এই দৃষ্টান্তে যিনি অচেনা পথিকের জন্য খাবার চাইতে এসেছিলেন, তিনি তার “যত প্রয়োজন” তত পরিমাণে খাবার পেয়েছিলেন। ঈশ্বর যখন আমাদেরকে এই পরিমাণে দান করেন, তখন আমাদের কী পরিমাণে অন্যদেরকে দান করা উচিত? “খ্রীষ্টের দানের পরিমাণ অনুসারে,” ইফিষীয় ৪:৭। একজন মানুষ তার সহমানবের প্রতি কী ধরনের আচরণ করে তা দেখার জন্য স্বর্গদূতেরা গভীর আগ্রহ নিয়ে পর্যবেক্ষণ করছেন। যখন তারা দেখেন কোন একজন মানুষ খ্রীষ্টের মত সহানুভূতি ও দয়ার মনোভাব খ্রীষ্টের কাছ থেকে বিচ্যুত অন্য কোন একজন মানুষের জন্য প্রকাশ করছেন, তখন তারা সেই মানুষটির পাশে গিয়ে দাঁড়ান এবং তাকে সেই কথাগুলো মনে করিয়ে দেন, যা তার জন্য আত্মার খাদ্য হিসেবে প্রতীয়মান হয়। কাজেই “আমার ঈশ্বর গৌরবে খ্রীষ্ট যীশুতে স্থিত আপন ধন অনুসারে তোমাদের সমস্ত প্রয়োজনীয় উপকার পূর্ণরূপে সাধন করিবেন।” ফিলিপীয় ৪:১৯। মানুষের কাছে আপনি যে সাক্ষ্য বহন করবেন তার যথার্থতা ও বাস্তবতার কারণে যীশু তাঁর নিজ শক্তিতে সেই সাক্ষ্যকে জীবন্ত ও ক্ষমতাশালী করে তুলবেন। সদাপ্রভুর বাক্য আপনার মুখে সত্য ও ন্যায় হয়ে প্রকাশ পাবে। COLBen 128.2

অন্যদের জন্য ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা যতটা সম্ভব, গোপন প্রার্থনার মধ্য দিয়ে পরিচালিত করা উচিত। কারণ এর জন্য আত্মাকে রক্ষা করার প্রক্রিয়া সম্পর্কিত গভীর জ্ঞান অর্জন করার প্রয়োজন হয়। মানুষের সাথে এ নিয়ে কথা বলার আগে খ্রীষ্টের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলুন। মানুষের পরিচর্যা করতে নিজেকে প্রস্তুত করে তোলার জন্য নিজেকে স্বর্গীয় অনুগ্রহের সিংহাসনের সামনে উপস্থিত করুন। COLBen 128.3

জীবন্ত ঈশ্বরকে পাওয়ার আকুল আকাঙ্ক্ষা আপনার হৃদয়ে জাগ্রত করুন। যীশু খ্রীষ্টের জীবন আমাদেরকে দেখিয়েছে যে, মানবীয় সত্তা যদি স্বর্গীয় সত্তার সাথে সংযুক্ত হয় তাহলে তা কী অভূতপূর্ব কাজ সাধন করতে পারে। খ্রীষ্ট ঈশ্বরের কাছ থেকে যা কিছু লাভ করেছেন তা আমরাও পেতে পারি। সেক্ষেত্রে আমাদেরকে চাইতে হবে এবং গ্রহণ করতে হবে। যাকোবের মত ধৈর্যপূর্বক বিশ্বাস নিয়ে, এলিয়ের অটল দীর্ঘসহিষ্ণুতা নিয়ে আমাদের জন্য ঈশ্বরের যে প্রতিজ্ঞা রয়েছে তার পরিপূর্ণতা দাবী করতে হবে। COLBen 129.1

আপনার অন্তর ঈশ্বরের গৌরবময় পরিকল্পনা দ্বারা অধিকৃত হোক। আপনার জীবন যীশুর জীবনের সাথে অদৃশ্য সূতা দ্বারা গ্রথিত হোক। যিনি অন্ধকারে আলো ছড়াবার জন্য দ্বীপ্তিকে আদেশ দিয়েছিলেন তিনি আপনার অন্তরেও আলো ছড়াতে চান। যীশু খ্রীষ্টের অবয়ব ধারণকারী ঈশ্বরের গৌরব ও মহিমার জ্ঞনের আলো তিনি আপনাকে দান করে চান। পবিত্র আত্মা ঈশ্বীয় সমস্ত বিষয় আপনার কাছে উন্মোচিত করনে ও আপনাকে জ্ঞাত করবেন, আপনি সেই জ্ঞানকে এক জীবন্ত শক্তিরূপে আপনার বাধ্যগত অন্তরে ধারণ করুন। খ্রীষ্ট আপনাকে অনন্ত জীবনের পথে দিক নির্দেশনা দিয়ে নিয়ে যাবেন। আপনি পর্দা সরিয়ে ফেলে ঈশ্বরের মহিমা নিজ চোখে দেখতে পাবেন এবং তাঁর প্রাচুর্যের কথা আপনি মানুষকে বলতে পারবেন, যিনি আমাদের সাথে ঈশ্বরের মধ্যস্থতা করার জন্যই আমাদের মাঝে মানুষ হয়ে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। COLBen 129.2