খ্রীষ্টের দৃষ্টান্তমূলক শিক্ষা

35/61

যে অর্জন হারিয়ে যাওয়ার

লূক ১২:১৩-২১ পদের উপর ভিওি করে রচিত

খ্রীষ্ট শিক্ষা দিচ্ছিলেন। আর, ঐ সময়, শিষ্যদের পাশাপাশি সাধারণ লোকেরাও তাঁর চারপাশে সমবেত ছিল। তিনি তাঁর শিষ্যদের কাছে একটি দৃশ্য সম্পর্কে কথা বলছিলেন। খুব শিঘ্রই তারা সেই দৃশ্যের একটি ঘটনায় অংশ গ্রহণ করতে যাচ্ছেন। তিনি তাদের সত্য প্রচারের জন্য দায়িত্ব দিয়েছিলেন আর তারা তা চারদিকে প্রচার করতে হবে। খ্রীষ্ট তাদের বলেছিলেন যে, তারা জগতের শাসনকর্তা এবং নেতাদের বিরোধীতার সম্মুখীণ হবেন। তাঁর নামের জন্য তাদের আদালতে ডেকে পাঠানো হবে, এবং তাদের রাজা এবং বিচারকদের সামনে দাঁড়াতে হবে। তিনি তাদের এই বলে আশ্বস্ত করলেন যে, তিনি তাদের প্রজ্ঞা দান করবেন। সেই প্রজ্ঞা অনুযায়ী কথা বললে কেউ তা অস্বীকার করতে পারবে না, তিনি যে সব কথা বলেন তা জনসাধারণের অন্তরকে আলোড়িত করে এবং তাঁর ধৃর্ত প্রতিপক্ষকে বিভ্রান্ত করে। তার অন্তরে যে আত্মা বাস করে তা তিনি তার শিষ্যদের দেবার জন্য প্রতিজ্ঞা করেছেন। COLBen 232.1

কিন্তু অনেকে আছেন যারা কেবল তাদের নিজেদের স্বার্থের জন্য ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভের আকাঙ্ক্ষা করে থাকেন। তারা খ্রীষ্টের বিস্ময়কর ক্ষমতা দেখেছিল, এই ক্ষমতা পরিস্কার আলোতে প্রকাশিত হয়েছিল। শাসন কর্তা এবং বিচারকদের সামনে প্রজ্ঞার সঙ্গে কথা বলার জন্য তিনি যে শিষ্যদের আশ্বাস বাক্য বলেছিলেন, তা তারা শুনেছিল। তিনি কি তাঁর ক্ষমতা তাদের জাগতিক সুবিধার জন্য সাময়িক ভাবে ধার দেন নি? COLBen 232.2

“পরে লোক সমূহের মধ্য হইতে এক ব্যক্তি তাহাকে বলিল, ‘হে গুরু, আমার ভ্রাতাকে বলুন, যেন আমার সহিত পৈতৃক ধন বিভাগ করে’”। ঈশ্বর মোশির মাধ্যমে সম্পত্তির ভাগ বাটোয়ারা সম্পর্কে নির্দেশ দিয়েছেন। বড় ভাই বাবার সম্পতি দুই অংশ পাবে (দ্বিতীয় বিবরণ ২১:১৭) যখন ছোট ভাই একই ভাবে বাবার সম্পতির ভাগ চাইবে। এই লোকটি মনে করে ছিল যে তার ভাই উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তি থেকে তাকে বঞ্চিত করবে। যে দিকে সে গভীর ভাবে মনোযোগ দিয়েছিল, তার সেই ন্যায্য স্বত্ব, তা সে নিজের চেষ্টায় পাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে ব্যর্থ হয়েছিল। সে ভেবেছিল যদি খ্রীষ্ট মধ্যস্ততা করে তাহলে এর ফলাফল তার জন্য লাভজনক হবে। সে খ্রীষ্টের জোরালো আবেদন শুনেছিল, এবং ধর্ম সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ধর্মীয় শিক্ষক এবং ফরীশীদের তীব্র ভাবে নিন্দা করতে শুনেছিল। যদি এই ভাবে এই রকম কোন আদেশ তিনি তার ভাইকে দিতেন, তাহলে সে তার এই দুঃখার্ত ভাইকে তার ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করতে সাহস পেত না। COLBen 233.1

খ্রীষ্ট তার আত্মিক শিক্ষার মাধ্যমে যা বলেছিলেন, তা লোকটি তার স্বার্থপর স্বভাবের মধ্যে প্রকাশ করেছিল। প্রভুর মমতা সম্পর্কে তার এই ধারণা হয়েছিল যে, এই যাতনা তার অস্থায়ী বিষয়ের উন্নতি সাধনের মূল্য জোরালো ভাবে গ্রাহ্য করবে; কিন্তু আত্মিক সত্য তার চিন্তায় এবং অন্তরে কোন স্থান পায়নি। উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তি লাভ করাই ছিল তার একান্ত চিন্তার বিষয় । যীশু, গৌরবের রাজা, যিনি ধনবান হলেও আমাদের জন্য দরিদ্র হলেন, আমাদের জন্য স্বর্গীয় ভালবাসার ধন ভাণ্ডার খুলে দিতে এসেছিলেন। পবিত্র আত্মা উত্তরাধিকারী হওয়ার জন্য তার সঙ্গে পথ সমর্থন করেছেন যা “অক্ষয় ও বিমল, অমর” ১ পিতর ১:৪। সে খ্রীষ্টের ক্ষমতার প্রমাণ দেখতে পেয়েছিল। এখন সে মহান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেল যাতে সে তার হৃদয়ে তীব্র আকাঙ্ক্ষার কথা বলতে পারে। সে এমন লোকের মত যে মন্দ ভাবে অর্থ উপার্জন করতে সচেষ্ট, যার দৃষ্টি পৃথিবীর উপর নিবদ্ধ রয়েছে। সাইমন মেগাসের মত, যিনি ঈশ্বরের দানকে জাগতিক অর্জন বলে মূল্যায়ন করেছিলেন। COLBen 233.2

এই জগতে ত্রাণকর্তার কার্যকাল খুব দ্রুত শেষ হয়ে আসছিল। তার অনুগ্রহের রাজ্য স্থাপনের যে কাজ করার জন্য তিনি এই জগতে এসেছিলেন, তা সম্পন্ন হতে মাত্র কয়েক মাস বাকি ছিল। তবুও মানুষের এক খণ্ড জমি পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষার বিষয়ে সমাধানের জন্য নিজেকে জড়িত করলে তার প্রকৃত কাজ থেকে তাঁকে দূরে সরাতে পারত। কিন্তু যীশু তার কর্তব্য থেকে বিচ্যূত হননি। তার উওর ছিল “মনুষ্য, তোমাদের উপরে বিচারকর্তা বা বিভাগকর্তা করিয়া আমাকে কে নিযুক্ত করিয়াছে?” COLBen 234.1

যীশু যা সঠিক কেবল সেই কথাই এই লোকটিকে বলতে পারতেন। বিষয়টি কি ছিল তা তিনি ভাল করেই জানতেন; কিন্তু এই দুই ভাই পরস্পর বিবাদে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল কারণ তারা উভয়ে ছিল লোভী। তাই খ্রীষ্ট তাদের বললেন যে এই রকম বিবাদপূর্ণ বিষয় মীমাংসা করা আমার কাজ নয়। তিনি এসেছিলেন ভিন্ন একটি উদ্দেশ্যে, তা ছিল সুসমাচার প্রচার, যেন এভাবে মানুষের মধ্যে শাশ্বত বাস্তবতার চেতনা জাগ্রত হয়। COLBen 234.2

যারা প্রভু যীশুর নামে সুসমাচার করেন তাদের প্রত্যেকের জন্য এই বিষয়ে তাঁর মীমাংসার কাজটি ছিল একটি শিক্ষা যখন তিনি বারো জনকে প্রেরিত পদে নিযুক্ত করলেন এবং তাদের প্রেরণ করলেন তখন তিনি তাদের বললেন, “আর তোমরা যাইতে যাইতে এই কথা প্রচার কর, স্বর্গ রাজ্য সন্নিকট হইল। পীড়িতদিগকে সুস্থকরিও, মৃতদিগকে উত্থাপন করিও, কুষ্ঠদিগকে শুচি করিও, ভূতদিগকে ছাড়াইও, তোমরা বিনামূল্যে পাইয়াছ, বিনামূল্যে দান করিও” মথি ১০:৭-৮। তারা লোকদের অস্থায়ী বিষয়ে কোন কাজ করেন নি, তাদের কাজ ছিল ঈশ্বরের সঙ্গে মানুষের পূর্ণ সম্মিলন করানোর জন্য মানুষকে উদ্দীপ্ত করা। মানব জাতি যাতে আশীর্বাদ পেতে পারে এই জন্য তাদের ক্ষমতাকে প্রয়োগ করেছিলেন। পাপ ও দুঃখের একমাত্র প্রতিকার হলেন খ্রীষ্ট। যে মন্দতা সমাজের জন্য অভিশাপ তা থেকে একমাত্র তাঁর অনুগ্রহের সুসমাচারই আরোগ্য দায়ক মিমাংশা করতে পারে। দরিদ্রদের প্রতি ধনীদের অন্যায় আচরণ, ধনীদের প্রতি দরিদ্রের ঘৃণার মনোভাব, তাদের উভয়ের শিকড় ছিল স্বার্থপরতার মধ্যে গ্রথিত। আর এই স্বার্থপরতার শিকর সমূল্যে উৎপাটিত হতে পারে কেবল যীশু খ্রীষ্টের কাছে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে। পাপে পূর্ণ স্বার্থপর হৃদয়কে একমাত্র তিনি নতুন হৃদয়ে রূপান্তরিত করতে পারেন এবং এ হৃদয় হবে ভালবাসার নতুন হৃদয়। খ্রীষ্টের সেবকদের পবিত্র আত্মার মাধ্যমে সুসমাচার প্রচার করতে হবে, যা স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে। আর তারা পবিত্র আত্মার সাহায্যে মানুষের মঙ্গলের জন্য কাজ করবেন, যেভাবে খ্রীষ্ট করেছিলেন। আর তখন আশীর্বাদ মানব জাতির আত্মিক উন্নতি এবং আশীর্বাদের মধ্যে এমন ফল প্রকাশ পাবে, যা মানুষের ক্ষমতার দ্বারা সম্পন্ন হওয়ার একেবারেই সম্ভব নয়। COLBen 234.3

এই প্রশ্নকারীকে যা উদ্বিগ্ন করেছিলেন সেই বিষয়টির শিকড়ে আমাদের প্রভু আঘাত করলেন, সেই সঙ্গে আঘাত করলেন একই ধর্মের সমস্ত বিবাদের শিকরে, তার উক্তি, “সাবধান, সর্বপ্রকার লোভ হইতে আপনাদিগকে রক্ষা করিও, কেননা উপচিয়া পড়িলেও মনুষ্যের সম্পত্তিতে তাহার জীবন হয় না।” COLBen 235.1

“আর তিনি তাহাদিগকে এই দৃষ্টান্ত কহিলেন, একজন ধনবানের ভূমিতে প্রচুর শস্য উৎপন্ন হইয়াছিল। তাহাতে সে মনে মনে বিবেচনা করিতে লাগিল, কি করি? আমার কাছে রাখিবার তো স্থান নাই। পরে কহিল, এইরূপ করিব, আমার গোলাঘর সকল ভাঙ্গিয়া বড় বড় গোলাঘর নির্মাণ করিব, এবং তাহার মধ্যে আমার সমস্ত শস্য ও আমার দ্রব্য রাখিব। আর আপন প্রাণকে বলিব, প্রাণ, বহু বৎসরের নিমিত্ত তোমার জন্য অনেক দ্রব্য সঞ্চিত আছে; বিশ্রাম কর, ভোজন পান কর, আমোদ প্রমোদ কর। কিন্তু ঈশ্বর তাহাকে কহিলেন, হে নির্বোধ, অদ্য রাত্রিতেই তোমার প্রাণ তোমা হইতে দাবি করিয়া লওয়া যাইবে, তবে তুমি এই যে আয়োজন করিলে, এই সকল কাহার হইবে? আপনার জন্য ধন সঞ্চয় করে, এবং ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে ধনবান নয়, সে এই রূপ।” COLBen 235.2

দৃষ্টান্তমূলক গল্পের বোকা ধনী লোকটির মধ্য দিয়ে দেখিয়েছেন যে যারা এই জগতের নিজেদের জন্য সবকিছু জমা করে তারা হল নির্বোধ। এই লোকটি ঈশ্বরের কাছ থেকে সব কিছু গ্রহণ করেছিলেন। ঈশ্বরের অনুমতি ক্রমেই সূর্য তার জমিতে কিরণ দিয়েছিলেন। কারণ ধার্মিক অধার্মিক সবার উপরেই সূর্য আলো দেয়। স্বর্গের বৃষ্টির জল ভাল এবং মন্দ সবার উপরে নেমে আসে। প্রভু তার জমির শস্যের গাছগুলোকে বৃদ্ধি পেতে দিয়েছেন এবং এই গাছগুলোতে প্রচুর শস্য এবং ফল উৎপাদন করেছেন। এই ধনী লোকটি তার জমিতে উৎপাদিত প্রচুর পরিমাণে শস্য নিয়ে কি করবে এ নিয়ে চিন্তা করতে গিয়ে হতবুদ্ধি হয়ে গেল। তার উপচে পড়া শস্যগুলো রাখবার কোন জায়গা ছিল না। সে একবারও ঈশ্বরের কথা ভাবে নি যার কাছ থেকে তার এই দয়ার দান এসেছে। সে একবার উপলব্ধি করে নি যে ঈশ্বর তাকে তার সমস্ত জিনিসের তত্বাবধানকারী করেছেন; যেন সে অভাবগ্রস্তদের সাহায্য করতে পারে। সে ঈশ্বরের একজন দানশীল ব্যক্তি হওয়ার সুযোগ লাভের জন্য আশীর্বাদ পেয়েছিলেন। কিন্তু সে কেবল নিজের সুখ ভোগ লাভের এবং আমোদ প্রমোদ করে জীবন কাটিয়ে দেবার কথাই ভেবেছিল। COLBen 235.3

দারিদ্রতার জন্য শারীরিক ও মানসিক কষ্ট ভোগ করা লোক, অনাথ, বিধবা, বিভিন্ন সমস্যার জর্জরিত লোক, ক্ষতিগ্রস্থলোকেরা এই ধনী লোকটির দৃষ্টিগোচরে ছিল। সেখানে অনেক জায়গা ছিল যেখানে সে তার ফসল এবং তার দ্রব্যগুলো রাখতে পারত। প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত ফসল এবং অন্যান্য দ্রব্যের অংশ থেকে সে সহজেই মুক্ত হতে পারত এবং অনেক পরিবারের অভাব দূর হত, যারা ক্ষুধার্ত তারা খাবার পেত, যারা উলঙ্গ তারা পোশাক পেত, অনেকের হৃদয় আনন্দে ভরে উঠতো, অনেকের খাদ্য এবং পোশাকের অভাব পূরণ হত, এবং একটি প্রশংসার গানের সুর স্বর্গের দিকে উঠে যেত। প্রভু অভাবীদের প্রার্থনা শোনেন তিনি তার দয়াশীলতার মধ্য দিয়ে দরিদ্রদের জন্য সব কিছু দিয়ে থাকেন। গীতসংহিতা ৬৮:১০। COLBen 236.1

অভাবীদের জন্য প্রচুর খাবার এবং অন্যান্য জিনিস দিয়ে সাহায্য করার জন্য এই ধনী লোকটিকে ঈশ্বর দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কারণ ঈশ্বর তাকে উপচে পড়া আশীর্বাদ দান করেছিলেন। কিন্তু অভাবীদের কান্না যাতে শুনতে না হয়, এই জন্য সে তার হৃদয়ের কান বন্ধ করে রেখেছিলেন। সে তার চাকরদের বলল, “আমি এইরূপ করিব, আমার গোলাঘর সকল ভাঙ্গিয়া বড় বড় গোলাঘর নির্মাণ করিব। এবং তাহার মধ্যে আমার সমস্ত শস্য ও আমার দ্রব্যাদি রাখিব। আর আপন প্রাণকে বলিব, প্রাণ, বহু বৎসরের নিমিত্ত তোমার জন্য অনেক দ্রব্য সঞ্চিত আছে। বিশ্রাম কর, ভোজন পান কর, আমোদ প্রমোদ কর।” COLBen 236.2

এই লোকটির লক্ষ্য যে সব পশুরা ধ্বংস হয়ে যায়, তাদের থেকে উন্নত ছিলনা। সে এমনভাবে জীবন যাপন করছিল যে, যেন কোন ঈশ্বর নেই, কোন স্বর্গ নেই, ভবিষ্যত জীবন নেই, সব কিছুই যেন তার নিজের অধিকারভুক্ত, ঈশ্বর কিংবা মানুষ কারো কাছেই সে ঋণী নয়। গীতসংহিতায় গীতরচক এই ধনী লোকটি সম্পর্কে যেন এই কথাই লিখিয়াছিলেন, “মূঢ় মনে মনে বলিয়াছে” গীতসংহিতা ১৪:১। COLBen 236.3

এই লোকটি তার নিজের জন্য জীবন যাপন করতে চেয়েছিল। এবং তার নিজের জীবনের মূল্য পরিকল্পনা করেছিল। সে দেখতে পেয়েছিল যে, তার জীবন যাপনের জন্য ভবিষ্যতের প্রয়োজনীয় সব কিছুর বন্দোবস্ত আছে। এখন তার আর কোন কিছুরই প্রয়োজন নেই। সব সম্পদ তার আছে। তার যা কিছু আছে সব কিছু তার পরিশ্রমের ফল। এখন সে কেবল আমোদ প্রমোদ আর আনন্দে জীবন যাপন করতে পারবে। সে নিজের সম্পর্কে এই ধারণা পোষণ করেছিলেন যে, সমস্ত লোকের চেয়ে তার সুযোগ সুবিধা বেশি এবং খুব প্রজ্ঞার সঙ্গে পরিকল্পনা করে কাজ করতে পেরেছে, বলে সে কৃতিত্ত্বের অধিকারী হয়েছে। একজন ভাল বিচার বুদ্ধি সম্পন্ন লোক হিসেবে এবং সৌভাগ্যবান নাগরিক হিসেবে লোকদের কাছে সম্মানিত ছিল। কারণ, “আর তুমি আপনার মঙ্গল করিলে লোকে তোমার স্তব করিবে,” গীতসংহীতা ৪৯:১৮। COLBen 237.1

“এই জগতের যে জ্ঞান, তাহা ঈশ্বরের নিকট মুর্খতা।” ১ করিন্থীয় ৩:১৯। যখন এই ধনী লোকটি বহু বছর ধরে আনন্দ আর আমোদ প্রমোদ করবে বলে প্রত্যাশা করেছিল, ঠিক তখন ঈশ্বর তার সম্পর্কে সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিকল্পনা করেছিলেন, এই অবিশ্বস্ত ধনাধ্যক্ষের কাছে একটি বার্তা এল, “হে নির্বোধ, অদ্য রাত্রিতেই তোমার প্রাণ তোমা হইতে দাবী করিয়া লওয়া যাইবে”। এখানে একটি দাবী করা হয়েছে যা টাকা পয়সা দিয়ে মেটানো সম্ভব নয়। তার যে ধন সম্পদ ছিল তা দিয়ে এই দণ্ডাজ্ঞা স্থগিত কিংবা বন্ধ করা কোন ক্রমেই সম্ভব ছিল না। এই দণ্ডাজ্ঞা তার ধন সম্পদ দিয়ে কিনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। সারা জীবনের পরিশ্রমের ফলে সে যা কিছু অর্জন করেছিল তা এক মুহূর্তের মধ্যে তার কাছে মূল্যহীন হয়ে গেল। “তবে তুমি এই যে, “আয়োজন করিলে এই সকল কাহার হইবে,” তার বিশ্বাস ভূমি এবং প্রচুর ফসল উৎপন্ন করে, এমন সব উত্তম ভূমিগুলো তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেল। “সে ধনরাশি সঞ্চয় করে, কিন্তু কে তাহা সংগ্রহ করিবে, জানে না,” গীতসংহীতা ৪৯:৬। তার কাছে এখন সবচেয়ে মূল্যবান বিষয় হল যে, সে নিরাপদ নয় এবং তার জীবন হল অনিশ্চয়তায় ভরা জীবন। সে তার নিজের জন্য জীবন যাপন করিতে গিয়ে এমন স্বর্গীয় ভালবাসাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল যার মধ্য দিয়ে সে সকলের কাছে একজন মহান দয়াশীল ব্যক্তি হিসাবে পরিণিত হতে পারত। এই ভাবে তার জীবন প্রত্যাখ্যান হল। কারণ ঈশ্বর হলেন ভালবাসা এবং ভালবাসা হল জীবন। এই লোকটি আধ্যাত্মিকতার চেয়ে জাগতিকতাকে বেশি পছন্দ করেছিল। আর জাগতিকতার মধ্য দিয়েই তাকে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল। “যে মনুষ্য ঐশ্বর্যশালী অথচ অবোধ, সে নস্বর পশুদের স্বদৃশ্য,” গীতসংহিতা ৪৯:২০। COLBen 237.2

“যে কেহ আপনার জন্য ধন সঞ্চয় করে, এবং ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে ধনবান নয়, সে এই রূপ”। এই চিত্রটি সব সময়ের জন্য প্রযোজ্য। আপনি নিজ স্বার্থের জন্য খুব ভালো কোন পরিকল্পনা করতে পারেন, আপনি অনেক সম্পদ সংগ্রহ করতে পারেন, আপনি প্রকা- ও শৌচ ঘর তৈরি করতে পারেন, যে ভাবে ব্যবিলনের স্থাপত্যগুলো তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু ঈশ্বরের শাস্তির রায়কে প্রতিহত করতে পারে, এমন কোন উঁচু দেয়াল তৈরি করতে পারেন না। “রাজা বেলশৎসর মহা ভোজ প্রস্তুত করিলেন” এবং সুবর্ণময়, রৌপময়, পিত্তলময়, লৌহময়, কাষ্ঠময় ও প্রস্তরময় দেবগণের প্রশংসা করিতে লাগিলেন”। কিন্তু একটি অদৃশ্য হাত রাজ প্রাসাদের দেয়ালে তার শাস্তির কথা লিখেছিল এবং রাজ প্রাসাদের প্রবেশ দ্বারের কাছে উপস্থিত হওয়া তার শত্রুপক্ষের সৈন্যবাহিনীর পায়ের আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। “সেই রাত্রিতে কলদীয় রাজা বেল্শৎসর হত হন,” দানিয়েল ৫:৩০। COLBen 238.1

নিজের জন্য জীবন যাপন করার অর্থ হল নিজের ধ্বংস ডেকে আনা। অর্থের প্রতি লোভ, নিজের লোভের জন্য তীব্র আকাঙ্খা করলে, জীবন থেকে আত্মা হারিয়ে যায়। শয়তানের আত্মা কাজ করে নিজের লাভের জন্য উপকারের জন্য। আর খ্রীষ্টের আত্মার কাজ হল মানুষকে দান করা, অপরের মঙ্গলের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করা। “আর সেই স্বার্থ এই যে, ঈশ্বর আমাদিগকে অনন্ত জীবন দিয়েছেন, এবং সেই জীবন পুত্রে আছে, পুত্রকে যে পাইয়াছেন সে সেই জীবন পাইয়াছেন, ঈশ্বরের পুত্রকে যে পায় নাই, সে সেই জীবন পায় নাই।” ১ যোহন ৫:১১-১২। COLBen 238.2

এই জন্য তিনি বলেছেন, “সাবধান, সর্বপ্রকার লোভ হইতে আপনাদিগকে রক্ষা করিও, কেননা উপচিয়া পড়িলেও মনুষ্যের সম্পত্তিতে তাহার জীবন হয় না”। COLBen 239.1