খ্রীষ্টের দৃষ্টান্তমূলক শিক্ষা

34/61

ক্ষমার পরিমাণ

মথি ১৮:২১-৩৫ পদের উপর ভিত্তি করে রচিত

পিতর একটি প্রশ্ন নিয়ে খ্রীষ্টের কাছে উপস্থিত হলেন, “আমার ভ্রাতা আমার নিকটে কতবার অপরাধ করিলে আমি তাহাকে ক্ষমা করিব? কি সাতবার পর্যন্ত?” যিহুদী ধর্মীয় শিক্ষকরা ক্ষমা করার কাজকে এই সীমাবদ্ধতা দিয়েছিলেন যে, সর্বোচ্চ তিনবার দোষ ক্ষমা করা যাবে। পিতর মনে করেছিলেন যে, খ্রীষ্ট তার শিক্ষায় ক্ষমা করার বিষয়টি বৃদ্ধি করে সাত পর্যন্ত উন্নীত করবেন, যে সংখ্যা দ্বারা পরিপূর্ণতাকে বোঝানো হয়। কিন্তু খ্রীষ্ট ক্ষমা করার বিষয়ে এই শিক্ষা দিয়েছেন যে, আমরা যেন ক্ষমা করার ব্যাপারে বিরক্ত না হই, কিংবা ক্লান্তি বোধ না করি। কেবল “সাত বার পর্যন্ত নয়,” তিনি বললেন, “কিন্তু সত্তর গুণ সাতবার পর্যন্ত”। COLBen 223.1

তখন তিনি প্রকৃত ভিত্তি উল্লেখ করলেন, যার উপর ক্ষমা করার মনোভাব এবং ক্ষমা না করার মনোভাব মনে ধারণ করে রাখার বিপদের বিষয়টিও প্রতিষ্ঠিত। একটি উপমায় তিনি একজন রাজার কিছু কর্মচারীর কথা উল্লেখ করলেন, যারা তার রাজ্যের বিভিন্ন প্রশাসনের দায়িত্বে ছিল। এদের মধ্যে কয়েকজন কর্মচারী রাজ্যের কোষাগার থেকে বিশাল অঙ্কের টাকা ধার করেছিল। রাজা তার সম্পত্তির দেখাশোনাকারীদের তাদের কাজের বিষয়ে তদন্ত করতে শুরু করলেন। আর একজন লোককে তার কাছে আনা হল, যার হিসেবে দেখা গেল যে সে তার প্রভুর কাছ থেকে বিশাল অঙ্কের টাকা দশ হাজার তালন্ত ধার করেছিল। ওই টাকা পরিশোধ করার মত তার কোন সঙ্গতি ছিল না এবং সেই দেশের প্রা অনুযায়ী, রাজা তাকে বিক্রি করে দেবার হুকুম দিলেন। একই সঙ্গে তার যা কিছু আছে সব কিছু বিক্রি করে দেবার হুকুম দিলেন, যাতে ঐ টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করা হয়। আতঙ্কিত লোকটি রাজার পায়ের উপর পড়ল এবং মিনতি করে তাকে বলল, “আমার প্রতি ধৈর্য ধরুন, আমি আপনার সমস্তই পরিশোধ করিব।” তখন ঐ দাসের প্রভুর মনে তার প্রতি করুণার সৃষ্টি হল এবং তাকে মুক্ত করলেন এবং তার সব ঋণ মওকুফ করে দিলেন। COLBen 223.2

“কিন্তু সেই দাস বাহিরে গিয়া তাহার সহদাসের মধ্যে একজনকে, দেখিতে পাইল, যে তাহার একশত সিকি ধারিত। সে তাহাকে গলা টিপি দিয়া কহিল, তুই যা ধারিস, তাহা পরিশোধ কর। তখন তাহার সহদাস তাহার চরণে পড়িয়া বিনতিপূর্বক কহিল, আমার প্রতি ধৈর্য ধরুন, আমি আপনার ঋণ পরিশোধ করিব। তথাপি সে সম্মত হইল না, কিন্তু গিয়া তাহাকে কারাগারে ফেলিয়া রাখিল, যে পর্যন্ত ঋণ পরিশোধ না করে। এ ব্যাপার দেখিয়া তাহার সহদাসেরা বড়ই দুঃখিত হইল, আর আপনাদের প্রভুর কাছে গিয়া সমস্ত বৃত্তান্ত বলিয়া দিল। তখন তাহার প্রভু তাহাকে কাছে ডাকাইয়া কহিলেন, “দুষ্ট দাস! তুমি আমার কাছে মিনতি করাতে আমি তোমার ঐ সমস্ত ঋণ ক্ষমা করিয়াছিলাম। আমি যেমন তোমার প্রতি দয়া করিয়াছিলাম, তেমনি তোমার সহদাসের প্রতি দয়া করা কি তোমারও উচিত ছিল না? আর তাহার প্রভু ক্রুদ্ধ হইয়া পীড়নকারীদের নিকটে তাহাকে সমর্পন করিলেন, যে পর্যন্ত সে সমস্ত ঋণ পরিশোধ না করে।” COLBen 224.1

এই উপদেশমূলক গল্প ও ছবি পূর্ণতার জন্য যা প্রয়োজন তা বিস্তারিতভাবে উপস্থিত করেছে। কিন্তু এর মধ্যে যার কোন আত্মিক তাৎপর্যের গুরুত্ব ছিল না। তাদের মনোযোগ অন্য দিকে সরাতে পারে নি যাতে নিশ্চিত মহাসত্য স্পষ্ট হয় এবং এই সব নিয়ে আমরা চিন্তা করতে পারি। COLBen 224.2

রাজার ক্ষমা প্রদানের মধ্য দিয়ে সমস্ত পাপের স্বর্গীয় ক্ষমার বিষয়কে উপস্থাপন করা হয়েছে। রাজার মধ্য দিয়ে খ্রীষ্টকে উপস্থাপন করা হয়েছে, যিনি তার সমস্ত দাসদের সমস্ত ঋণ করুণার মধ্য দিয়ে ক্ষমা করেছেন। ঈশ্বরের আদেশ লঙ্ঘন করার দ্বারা মানুষ দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। মানুষ নিজেকে রক্ষা করতে পারে না। আর এই কারণে খ্রীষ্ট জগতে এসেছেন। তিনি তার ঐশ্বরিক রূপকে মানবীয় বস্ত্র দিয়ে আবৃত্ত করেছেন এবং তার জীবন উৎসর্গ করেছেন। এটি ছিল পাপীর জন্য ধার্মিকের মৃত্যু। তিনি নিজেকে আমাদের পাপের জন্য উৎসর্গ করেছেন। তিনি তার রক্তে আমাদের কিনেছেন এবং আমাদের পাপের মুক্তির জন্য আমাদের নিজেদের কোন মূল্য দিতে হয় নি। “কেননা তাহার কাছে দয়া আছে; আর তাহার কাছে প্রচুর মুক্তি আছে”, গীতসংগীতা ১৩০:৭। COLBen 224.3

এখানে একটি ভিত্তি রয়েছে যার উপর আমরা আমাদের সহ পাপীদের প্রতি করুণা দেখাবার কাজ করতে পারি। “ঈশ্বর যখন আমাদিগকে এমন প্রেম করিয়াছেন তখন আমরাও পরস্পর প্রেম করিতে বাধ্য”, ১ যোহন ৪:১১। “তোমরা বিনামূল্যে পাইয়াছ”, খ্রীষ্ট বললেন, “বিনামূল্যেই দান করিও” মথি ১০:৮। COLBen 225.1

দৃষ্টান্তে যখনই ঋণী লোকটি ঋণ পরিশোধের জন্য সময় চেয়ে মিনতি করল এবং প্রতিজ্ঞা করল, “আমার প্রতি ধৈর্য ধরুন, আমি আপনার সমস্তই পরিশোধ করিব,” তখন এই কথাটি বাতিল হয়ে গেল। তার সমস্ত ঋণ মওকুফ করা হল। যিনি তাকে ক্ষমা করেছেন, তার সেই ক্ষমা করার দৃষ্টান্তটি প্রয়োগ করার তাৎক্ষণিকভাবে সুযোগ এল। বাইরে আসার পর সে এমন একজন সহকর্মীর দেখা পেল, যে তার কাছ থেকে একশত সিকি ধার করেছিল। যা ছিল খুবই সামান্য। কিন্তু যে তার প্রভুর কাছ থেকে এমন করুণাপূর্ণ ব্যবহার পেয়েছে, সে তার সহকর্মীর সঙ্গে সম্পূর্ণ ভিন্ন আচরণ করল। সে যেভাবে তার প্রভুর কাছে মিনতির সঙ্গে অনুরোধ জানিয়েছিল, ঠিক তেমনি তার সহকর্মীটি মিনতির সঙ্গে অনুরোধ জানাল, যেন তাকে ঋণ পরিশোধ করার সময় দেয়া হয়। কিন্তু এর ফলাফল হল সম্পূর্ণ ভিন্ন। যাকে এমন করুণা দেখিয়ে ক্ষমা করা হয়েছিল সে তার সহকর্মীর প্রতি সহানভূতিপূর্ণ এবং দয়াপূর্ণ মনোভাব দেখালো না। যে দয়ার কাজ তার প্রতি দেখানো হয়েছিল সে তার সহকর্মীর প্রতি সে দয়ার কাজ দেখাল না। তাকে তো ধৈর্য ধরার জন্য অনুরোধ করার কোন প্রয়োজন ছিল না। সহকর্মীর কাছে পাওনা সামান্য ঋণের কথা এই অকৃতজ্ঞ দাসটি মনে রেখেছিল। তার চিন্তা অনুসারে সে যা পেত তার সবটুকুই ফিরিয়ে দেবার জন্য দাবী করল এবং তার মিনতির সঙ্গে অনুরোধ এই রকম প্রতিক্রিয়া হওয়া উচিত ছিল, ঠিক যে ভাবে তার ক্ষেত্রে হয়েছিল। COLBen 225.2

যখন ঋণগ্রস্ত দাস তার প্রভুর কাছে, দয়া লাভের জন্য অনুরোধ করেছিল, তার ঋণের বোঝা যে এত বেশি এ সম্পর্কে তার প্রকৃত ধারনা ছিল না। তার অসহায়ত্ব সম্পর্কে সে উপলব্ধি করতে পারে নি। সে নিজেকে মুক্ত করার আশা করেছিল। “আমার প্রতি ধৈর্য করুন,” যে বলল,“আমি আপনার সমস্তই পরিশোধ করিব”। একই ভাবেই অনেকেই আশা করেন যে তারা তাদের নিজ যোগ্যতার গুণে ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভ করতে পারবে। কিন্তু তারা তাদের অসহায়ত্বকে উপলব্ধি করতে পারে না। তারা বিনামূল্যের দানস্বরূপ ঈশ্বরের অনুগ্রহকে গ্রহণ করে না। কিন্তু তারা আত্মধার্মিকতার দ্বারা নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করে। তাদের পাপের জন্য তারা নিজেদের হৃদয়কে ভগ্নচূর্ণ করে না এবং তারা নিজেদের নম্র করে না। আর তারা অন্যদের কাছে তাদের পাওনা মেটাবার জন্য বাধ্য করে এবং তাদের প্রতি ক্ষমাহীনতার মনোভাব পোষন করে। COLBen 225.3

ঈশ্বরের সামনে তাদের নিজেদের পাপ, ভাইদের সামনে তাদের পাপের সঙ্গে তুলনা করা হল। দশ হাজার তালন্ত থেকে একশত সিকি দশ লক্ষের কাছাকাছি থেকে এক এর মত। তবুও তারা ক্ষমাহীন মনোভাব দেখাবার সাহস করে। COLBen 226.1

উপদেশমূলক গল্পে উল্লেখ রয়েছে যে, প্রভু সেই দয়াহীন ঋণীকে ডেকে পাঠালেন এবং “প্রভু তাহাকে কাছে ডাকাইয়া কহিলেন, দুষ্ট দাস! তুমি আমার কাছে মিনতি করাতে আমি তোমার এই সমস্ত ঋণ ক্ষমা করিয়াছিলাম, আমি যেমন তোমার প্রতি দয়া করিয়াছিলাম, তেমনি তোমার সহদাসের প্রতি দয়া করা কী তোমারও উচিত ছিল না? আর তাহার প্রভু ক্রুদ্ধ হইয়া পীড়নকারীদের নিকটে তাহাকে সমর্পণ করিলেন, যে পর্যন্ত সে সমস্ত ঋণ পরিশোধ না করে।” যীশু বললেন, “আমার স্বর্গীয় পিতাও তোমর প্রতি এই রূপ করিবেন, যদি তোমরা প্রতিজন অন্তঃকরণের সহিত আপন আপন ভ্রাতাকে ক্ষমা না কর।” যে ক্ষমা করতে অস্বীকার করে সে এর দ্বারা নিজের ক্ষমাকে দূরে সরিয়ে রাখে। COLBen 226.2

কিন্তু এই উপদেশমূলক গল্পের শিক্ষা যেন ভুল ব্যাখ্যা করা না হয়। আমাদের প্রতি ঈশ্বরের ক্ষমার উপদেশে তার প্রতি বাধ্যতার দায়িত্ব পালনের জন্য কোন উপায় দেয়া হয় নি। একইভাবে আমাদের সহমানবের প্রতি ক্ষমার মনোভাব কেবল বাধ্য বাধকতার দাবীর উপদেশ দেয়া হয় নি। খ্রীষ্ট তার শিষ্যদের প্রার্থনায় এটি শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “আর আমাদের অপরাধ সকল ক্ষমা কর, যেমন আমরাও আপন আপন অপরাধীদিগকে ক্ষমা করিয়াছি,“মথি ৬:১২। এর দ্বারা তিনি এই কথা বুঝাতে চান নি যে, এই অভিপ্রায়ে আমাদের পাপ ক্ষমা করা হয়েছে যে আমরা আমাদের ঋণীদের কাছ থেকে কেবল আমাদের প্রাপ্য চাওয়া আবশ্যক বোধ না করি। যদি তারা পরিশোধ করতে অসমর্থ হয়, এমনকি যদি এটি অবিবেচক ব্যবস্থাপনার ফলও হয়, তাদের যেন জেলে পাঠান না হয়, অত্যাচার করা না হয় কিংবা তাদের কর্কশ ভাষায় গালাগালি করা না হয়। কিন্তু এই উপদেশমূলক গল্পে আমাদের অলস হওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হয়নি। ঈশ্বরের বাক্যে এই কথা উল্লেখ রয়েছে যে, “যদি কোন লোক কাজ না করে, তাহলে সে যেন আহারও না করে (২ থিষলনীকীয় ৩:১০)। COLBen 226.3

ঈশ্বর এটা আবশ্যক বোধ করেন না যে, মানুষ কঠোর পরিশ্রম করে অন্যদের অলসতাকে সাহায্য করে। অযথা অনেক সময় ব্যয়, চেষ্টার অভাবে এসব বিষয় মানুষের জীবনে দারিদ্রতা এবং অভাব ডেকে আনে। যারা এই সব প্রশ্রয় দেয়, তারা যদি এই সব দোষ ত্রুটি সংশোধন না করে তাহলে ছিদ্র হওয়া কোন থলিতে সম্পত্তি রাখার মত তাদের অবস্থা হবে। তথাপি যাদের অনিবার্য দারিদ্রতা রয়েছে এবং যারা হতভাগ্য তাদের প্রতি আমাদের সহানুভূতি এবং করুণা দেখাতে হবে। আমরা নিজেদের সঙ্গে যে আচরণ করি একই রকম আচরণ অন্যদের সাথেও করতে হবে, এই রকম পরিস্থিতিতে আমাদের একই আচরণ করতে হবে। COLBen 227.1

পবিত্র আত্মা প্রেরিত পৌলের মাধ্যমে আমাদের এই নির্দেশ দিয়েছেন: “অতএব খ্রীষ্টে যদি কোন আশ্বাস, যদি প্রেমের কোন সান্তনা, যদি আত্মার কোন সহভাগীতা, যদি কোন স্নেহ ও করুণা থাকে, তবে তোমরা আনন্দপূর্ণ কর- একই বিষয়ে ভাব, এক প্রেমের প্রেমী, একপ্রাণ, এক ভাববিশিষ্ট হও। প্রতিযোগীতায় কিংবা অনর্থক দর্পের বশে তোমরা কিছুই করিও না, বরং নম্রভাবে প্রত্যেক জন আপন হইতে অন্যকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞন কর; এবং প্রত্যেকজন আপনার বিষয়ে নয়, কিন্তু পরের বিষয়েও লক্ষ্য রাখ। খ্রীষ্ট যীশুতে যে ভাব ছিল, তাহা তোমাদিগেতেও হউক।” ফিলিপীয় ২:১-৫। COLBen 227.2

কিন্তু পাপকে আমাদের হালকা বিষয় বলে মনে করা উচিত নয়। প্রভু আমাদের এই আদেশ দিয়েছেন আমরা যেন আমাদের ভাইদের অন্যায় কাজ করার অনুমতি না দেই। তিনি বলেছেন, “তোমার ভ্রাতা যদি পাপ করে, তাহাকে অনুযোগ করিও,” লূক ১৭:৩। COLBen 227.3

পাপকে যেন সঠিক ভাবে গণ্য করা হয়। এবং লোকদের অপরাধ করতে প্ররোচিত করে। পৌল ও পবিত্র আত্মা দ্বারা চালিত হয়ে তীমথিয়কে নির্দেশ দিয়ে লিখেছিলেন, “সময় ও অসময়ে কার্যে অনুরক্ত হও, সম্পূর্ণ সহিষ্ণুতা ও শিক্ষা দান পূর্বক অনুযোগ কর। ভর্ৎসনা কর, চেতনা দাও,” দ্বিতীয় তীমথিয় ৪:২। আর তীত এর কাছে তিনি লিখেছিলেন, “অনেক অদম্য লোক, অসার বাক্যবাদী ও বুদ্ধিভ্রামক লোক আছে, . . . এ জন্য তুমি তাহাদিগকে তীক্ষèভাবে অনুযোগ কর, যেন তাহারা বিশ্বাসে নিরাময় হয়, “তীত ১:১০ - ১৩। COLBen 228.1

“আর যদি তোমার ভ্রাতা তোমার নিকটে কোন অপরাধ করে, তবে যাও, যখন কেবল তোমাতে ও তাহাতে থাক, তখন সেই দোষ তাহাকে বুঝাইয়া দাও। যদি সে তোমার কথা শোনে, তুমি আপন ভ্রাতাকে লাভ করিলে। কিন্তু যদি সে না শুনে, তবে আর দুই এক ব্যক্তিকে সংগে লইয়া যাও, যেন, ‘দুই কিংবা তিনজন সাক্ষীর মুখে সমস্ত কথা নিস্পন্ন হয়।’ আর যদি সে তাহাদের কথা অমান্য করে, মণ্ডলীকে বল; যদি মণ্ডলীর কথা ও অমান্য করে, সে তোমার নিকটে পরজাতীয় লোকের ও করগ্রাহীর তুল্য হক।” মথি ১৮:১৫-১৭। COLBen 228.2

আমাদের প্রভু এই শিক্ষা দিয়েছেন যে খ্রীষ্টানদের পরস্পরের মধ্যে যে সব জটিল বিষয় ঘটে থাকে, তা যেন মণ্ডলীতে সমাধান করা হয়। যারা ঈশ্বরকে ভয় করে না তাদের সামনে যেন এই সব বিষয় তুলে ধরা না হয়। যদি কোন খ্রীষ্টান তার ভাইয়ের সংগে অন্যায় আচরণ করে তাহলে যেন এটি সমাধানের জন্য অবিশ্বাসীদের বিচারের আদালতে আবেদন না করে। খ্রীষ্ট যে নির্দেশ দিয়েছেন তাকে তা পালন করতে হবে। তাকে শাস্তি দেবার জন্য চেষ্টা করার পরিবর্তে তার ভাইকে রক্ষা করার জন্য আকাঙ্ক্ষী হতে হবে। যারা ঈশ্বরকে ভালবাসে ও ভয় করে তিনি তাদের স্বার্থকে রক্ষা করেন এবং আমরা বিশ্বাস করে আমাদের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য তার কাছে অর্পণ করতে পারি, যিনি ন্যায়ভাবে বিচার করে থাকেন। COLBen 228.3

যখন বারবার অন্যায় ঘটতে থাকে এবং অন্যায়কারী তার অন্যায় স্বীকার করে, তাহলে যার বিরুদ্ধে অন্যায় করা হয়েছে, সে ক্লান্ত বোধ করবে এবং সে মনে করবে যে তাকে সম্পূর্ণভাবে ক্ষমা করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের ত্রাণকর্তা সুস্পষ্টভাবে বলেছেন যে, কিভাবে অন্যায়ের জন্য ব্যবস্থা নেব: “তোমার ভ্রাতা যদি পাপ করে তাকে দূরে সরিয়ে রাখবেন না। এটি মনে রাখুন, “আপনাকে দেখ, পাছে তুমিও পরীক্ষাতে পড়”, গালাতীয় ৬:১। COLBen 228.4

যদি আপনার ভাইয়েরা অন্যায় করে, আপনাকে তাদের ক্ষমা করতে হবে। যখন তারা তাদের অন্যায় শিকার করার জন্য আপনার কাছে আসবে, আপনি তাদের এই কথা বলবেন না, আমি মনে করি না যে তারা যথেষ্ট নম্র হয়েছে। আমি মনে করি না যে তারা তাদের অপরাধ বুঝতে পেরেছে। COLBen 229.1

আপনি কি ভাবে এ বিচার করবেন? আপনি কি তাদের হৃদয়ের চিন্তা বুঝতে পারেন? ঈশ্বরের বাক্য এ কথা বলে, “যদি সে অনুতাপ করে, তাহাকে ক্ষমা করিও। যদি সে একদিনের মধ্যে সাতবার তোমার বিরুদ্ধে পাপ করে, আর সাতবার তোমার কাছে ফিরিয়া আসিয়া বলে, অনুতাপ করিলাম, তবে তাহাকে ক্ষমা করিও”। লূক ১৭:৩, ৬। কেবল সাতবার নয় কিন্তু সত্তর গুন সাতবার - যে ভাবে বারবার ঈশ্বর আপনাকে ক্ষমা করেন। COLBen 229.2

আমাদের যা কিছু আছে এর সব কিছুর জন্যই আমরা ঈশ্বরের কাছে ঋণী। কারণ এ সব তার বিনামূল্যের অনুগ্রহের দান। ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে অনুগ্রহ আমাদের দত্তক হিসেবে গ্রহণ করেছে। অনুগ্রহ মুক্তিদাতার মধ্য দিয়ে আমাদের পাপের মুক্তি এবং সৎ নতুন জন্মকে কার্যকর করেছে। আর খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে আমাদের উত্তরাধিকারত্বে ঊন্নত ও মর্যাদাপূর্ণ করেছে। এই অনুগ্রহের কথা অন্যদের কাছে প্রকাশ করতে হবে। COLBen 229.3

কেউ যদি অন্যায় করে তাহলে তাকে নিরুৎসাহিত না করার কোন কারণ নেই। ফরীশী সম্প্রদায়ের মত কাঠিন্য আপনার মধ্যে আসতে সুযোগ দেবেন না এবং আপনার ভাইকে কষ্ট দেবেন না। আপনার মনে কিংবা অন্তরে যেন তাদের সঙ্গে উগ্র আচরণ করার চিন্তা না আসে। আপনার কন্ঠ থেকে যেন তাদের প্রতি উগ্রতার ভাষা বের না হয়। আপনি যদি আপনার নিজের কথাই বলেন, যদি আপনি তার প্রতি উদাসীনতার আচরণ করেন, অথবা সন্দেহ পোষণ কিংবা অবিশ্বাস করেন, তাহলে তা আত্মা ধ্বংসকারী বলে গণিত হবে। তার একজন ভাইয়ের প্রয়োজন যিনি হবেন সহানূভূতি সম্পন্ন বড় ভাইয়ের মত, যেন মানবতার হৃদয় দিয়ে তাকে স্পর্শ করতে পারেন। তাকে একটি সহানুভুতি পরিপূর্ণ হাতের উষ্ণ করমর্দন অনুভব করতে দিন এবং ফিসফিস করে কথা শুনতে দিন, আসুন আমরা প্রার্থনা করি। ঈশ্বর আপনাদের উভয়কে মূল্যবান অভিজ্ঞতা দান করবেন। পরস্পরের সঙ্গে এবং ঈশ্বরের সংগে আমাদের প্রার্থনায় যুক্ত থাকতে হবে। প্রার্থনার মধ্য দিয়ে আমরা যীশুকে আমাদের কাছে নিয়ে আসতে পারব এবং আমাদের দুর্বলতা এবং হতাশাপূর্ণ হৃদয়ে নতুন শক্তি দিয়ে পূর্ণ করবেন যাতে আমরা জাগ্রত, মানসিক বিষয়ে, এবং শয়তানের উপর জয়লাভ করতে পারি। প্রার্থনা শয়তানের আক্রমণ এড়িয়ে যেতে সাহায্য করে। COLBen 229.4

যখন কেউ যীশুর দিকে তাকিয়ে মানবীয় দোষ ত্রুটি থেকে নিজেকে সরিয়ে আনে; তখন তার স্বভাবে স্বর্গীয় রুপান্তর স্থান করে নেয়। খ্রীষ্টের আত্মা তার অন্তরে তার প্রতিমুর্তির উপযোগী করার জন্য কাজ করে থাকে। আপনার প্রচেষ্টা থাকতে হবে যেন অনুগ্রহ লাভ করতে পারেন। আপনার অন্তরের চোখ যেন তাকে দেখতে পায়, যিনি, “ঈশ্বরের মেষশাবক, যিনি জগতের পাপ ভার লইয়া যান”, যোহন ১:২৯। যখন আপনি এই কাজে ব্যহৃত হবেন তখন মনে রাখবেন যে , “যে কেহ তাহাকে ফিরিয়া আনে, তখন জানিও, যে ব্যক্তি কোন পাপীকে তাহার ভ্রান্তিপথ হইতে ফিরিয়া আনে, সে তাহার প্রাণকে মৃত্যু হইতে রক্ষা করিবে, এবং পাপ রাশি আচ্ছাদন করিবে” যাকোব ৫:২০। COLBen 230.1

“কিন্তু তোমরা যদি লোকদিগকে ক্ষমা না করো, তবে তোমদের পিতা তোমাদেরও অপরাধ ক্ষমা করিবেন না”, মথি ৬:১৫। ক্ষমাহীন মনোভাব কোন ন্যায্যতা দাবী করতে পারে না। যে তার ভাইয়ের প্রতি দয়াহীন মনোভাব দেখাবে সে এটাই প্রমাণ করবে যে সে ঈশ্বরের ক্ষমার অংশী হতে পারে নি। ঈশ্বরের ক্ষমাশীলতা একজন পাপীর অন্তরকে অসীম ভালবাসার মহৎ হৃদয়ের কাছে টেনে নিয়ে যায়। স্বর্গীয় করুণার স্রোত পাপীর অন্তরের দিকে প্রভাহিত হয়। দয়াশীলতা এবং করুণা যা খ্রীষ্ট তার নিজ মহামূল্যবান জীবনের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করেছেন, যারা তার অনুগ্রহের অংশী হবে তার জীবনেও তা দেখা যাবে। “কিন্তু খ্রীষ্টের আত্মা যাহার নাই সে খ্রীষ্টের নয়,” রোমীয় ৮:৯। সে ঈশ্বরের অধীকারভুক্ত নয়, কেবল তার কাছ থেকে অনন্ত কালের জন্য বিচ্ছিন্ন হওয়ার যোগ্য হয়। COLBen 230.2

এটি সত্য যে কোন এক সময়ে সে ক্ষমা লাভ করেছে। কিন্তু তার দয়াহীন মনোভাব দেখায় যে ঈশ্বরের ক্ষমাপূর্ণ ভালোবাসাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। সে ঈশ্বরের কাছ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করেছে এবং একই সত্যে আগের মত সে ক্ষমা পেয়েছে। সে তার অনুতাপকে অস্বীকার করেছে এবং তার পাপ সকল তার উপর অবস্থিতি করল যেন সে অনুতাপই করেনি। COLBen 231.1

কিন্তু উপদেশমূলক গল্পে প্রধান শিক্ষায় ঈশ্বরের দয়া এবং মানুষের হৃদয়ের সঙ্গে পার্থক্য দেখানো হয়েছে। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ঈশ্বর যে দয়াপূর্ণ ক্ষমা দেখিয়েছেন, প্রকৃত পক্ষে এর দ্বারা আমাদের নিজেদের পরিমাপ করতে বলা হয়েছে।” আমি যেমন তোমার প্রতি দয়া করেছিলাম, তেমনি তোমার সহদাসের প্রতি দয়া করা কি তোমার উচিত ছিল না?” COLBen 231.2

অন্যদের আমরা ক্ষমা করছি না, কিন্তু যেহেতু আমরা ক্ষমা পেয়েছি তাই অন্যদের ক্ষমা করতে হবে। সমস্ত ক্ষমাশীলতার ভিত্তি ঈশ্বরের অপরিমেয় ভালবাসার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু অন্যদের প্রতি আমাদের আচরণের মধ্য দিয়ে আমরা দেখাই যে আদৌ’আমরা সেই ভালবাসার মধ্যে আছি কি না। এই জন্য খ্রীষ্ট বলেছেন, “কেননা যেরূপ বিচারে তোমার বিচার কর, সেই বিচারে তোমরাও বিচারিত হইবে, এবং যে পরিমাণে পরিমাণ কর, সেই পরিমাণে তোমার নিমিত্ত পরিমাণ করা যাইবে।” মথি ৭:২। COLBen 231.3