মণ্ডলীর জন্য উপদেশ
১৩ অধ্যায়
মণ্ডলী গঠন
খ্রীষ্ট যে আদেশে গিয়াছিলেন, কাহারও না কাহারও তাহা পালন করিতেই হইবে, তিনি পৃথিবীতে যে কার্য্য আরম্ভ করিয়াছিলেন, কাহারও না কাহারও তাহা নির্বাহ করিতেই হইবে ; তন্নিমিত্ত এই কার্য্যের বিশেষ দায়িত্বভার মণ্ডলীকেই অর্পণ করা হইয়াছে । আর এই উদ্দেশ্যের জন্যই মণ্ডলী গঠিত হইয়াছে ।1 CCh 203.1
ধর্মযাজকগণের স্রিংখলা-প্রিয় হওয়া ও নিজেদিগকে সুব্যবস্থিত করা আবশ্যক ; তাহা হইলে তাঁহারা কৃতকার্য্যতার সহিত ঈশ্বরের মণ্ডলীতে শৃঙ্খলা রক্ষা করিতে ও এক দল সুশিক্ষিত যোদ্ধার ন্যায় এক যোগে কার্য্য করিতে মণ্ডলীকে শিক্ষা দিতে পারিবেন । বিপক্ষদলের সহিত যুদ্ধে কৃতকার্য্যতা লাভের নিমিত্ত যুদ্ধক্ষেত্রে যদি শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্ত্তিতার আবশ্যকতা থাকে, তবে আত্মিকযুদ্ধে, বহুমূল্য ও উন্নতর চরিত্র গঠনের নিমিত্ত তদপেক্ষা অধিকতর শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্ত্তিতার প্রয়োজন। আমরা যে যুদ্ধে নিয়োজিত আছি, তাহাতে অনন্ত স্বার্থ সংকটাপন্ন । CCh 203.2
দূতগণ একতাবদ্ধ হইয়া কার্য্য করিয়া থাকেন । তাঁহাদের সকল গতিবিধিতে পূর্ণ শৃঙ্খলা দেখিতে পাওয়া যায় । দূতের বাহিনীর একতা ও শৃঙ্খলা যত সূক্ষ্মরূপে আমরা অনুকরন করিব, আমাদের জন্য স্বর্গীয় প্রতিনিধিগণের চেষ্টা তত অধিকতর মাত্রায় ফলবতী হইবে । যাহারা ঊর্ধ্ব হইতে ধর্মানুরাগ প্রাপ্ত, তাহারা তাহাদের সকল কার্য্যে শৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্ত্তিতা ও একতা প্রদর্শন করিলে ঈশ্বরের দূতগণ তাহাদের সহিত সহযোগিতা রক্ষা করিতে পারেন । কিন্তু, অনিয়ম, উচ্ছৃঙ্খলতা, ও বিশৃঙ্খলতায় স্বর্গীয় বার্তাবাহকগণ কস্নিনকালেও অনুমোদন করিতে পারেন না।আমাদের শক্তি খর্ব্ব, ও সাহস ভগ্ন করিবার এবং কৃতকার্য্যতায় বাধা প্রদানের নিমিত্ত শয়তানের চেষ্টায় এই সকল অমঙ্গল ঘটিয়া থাকে। CCh 203.3
শয়তান উত্তমরূপে জানে যে, একমাত্র শৃঙ্খলা ও একতার উপরেই কৃতকার্য্যতা নির্ভর করে । স্বর্গের সহিত সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকটী জিনিষই সুশৃঙ্খলিত ; আজ্ঞাবহতা ও পূর্ণ-নিয়মানুবর্ত্তিত, দূত বাহিনীর গতিবিধির চিহ্ন, ইহা সে সম্যকরুপে অবগত আছে । নামধারী খ্রীষ্টীয়ানদিগকে যতদূর সাধ্য স্বর্গীয় শৃঙ্খলতা হইতে দূরে লইয়া যাওয়াই তাহার সর্ব্বপ্রযত্নের চেষ্টা ; আর এই জন্যই সে এমন কি, ঈশ্বরের নামধারী লোকদিগকেও ভুলায় এবং তাহাদিগকে এইরূপ বিশ্বাস করিতে প্রবৃত্তি দেয় যে, শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্ত্তিতা আধ্যাত্মিকতার শত্রু : অতএব তাহাদের পক্ষে একমাত্র নিরাপত্তা, প্রত্যেকের আপন আপন পথে চলে এবং সঙ্ঘবদ্ধ খ্রীষ্টীয়ান-দিগের হইতে সম্পূর্ণরূপে পৃথক্ থাকিয়া শৃঙ্খলা ও একতা স্থাপনের চেষ্টা করা । শৃঙ্খলা স্থাপনের সর্ব্বপ্রকার প্রচেষ্টা, বিপদজনক ও ন্যায়সঙ্গত স্বাধীনতার প্রতিবন্ধক বলিয়া মনে হয়, আর এইজন্যই ইহাকে রোমান ক্যাথলিক ধর্ম্মের ন্যায় ভয় করা হয় । ব্যক্তিগত ভাবে চিন্তা ও কার্য্য করিতে তাহাদের স্বাধীনতা আছে — এই সকল প্রতারিত লোক — এই বিষয়ে গর্ব্ব করা একটী সদগুণ বলিয়া মনে করে । তাহারা কাহারও কথায় ভ্রুক্ষেপ করিবে না । কাহারও বাধ্য হইবে না । আমাকে দেখান হইয়াছিল যে, শয়তান লোকদিগকে বিশেষ ভাবে বুঝাইবে যে, নিজেরা কোন মতবাদ উদ্ভাবন করিয়া ভ্রাতৃগণের ইচ্ছামত নহে, কিন্ত নিজেদের ইচ্ছামত চলাই ঈশ্বরের অভিপ্রেত ।2 CCh 204.1
পৃথিবীতে ঈশ্বর স্বীয় মণ্ডলীকে দিপ্তি-প্রবাহরুপে স্থাপন করিয়াছেন । ইহারই মাধ্যমে তিনি লোকদিগকে তাঁহার উদ্দেশ্য ও ইচ্ছা জ্ঞাপন করেন । তিনি তাঁহার কোন দাসকেই এমন কোন অভিজ্ঞতা দান করেন না, যাহা তাঁহার কোন মণ্ডলীর বিরুদ্ধভাবাপন্ন । আবার মণ্ডলীর (খ্রীষ্টের দেহের) অগোচরে, সমগ্রমণ্ডলীর জন্য ব্যক্তি বিশেষকে তিনি তাঁহার ইচ্ছা জ্ঞাত করেন না। তাঁহার ঐশ্বরিক বিধান অনুযায়ী তিনি তাঁহার দাস-গণকে মণ্ডলীর সহিত ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িত রাখেন ; উদ্দেশ্য এই, যেন তাঁহারা নিজেদের উপরে অল্প প্রত্যয় রাখিয়া ঈশ্বর যাঁহাদিগকে তাঁহার কার্য্য বিস্তৃতির জন্য পরিচালিত করিতেছেন, তাঁহাদের উপরে অধিকতর প্রত্যয় রাখেন ।3 CCh 204.2