মণ্ডলীর জন্য উপদেশ
একমাত্র অনুভুতিই পবিত্রীকরণের চিহ্ন নহে
কেহ পবিত্রীকৃত হইয়াছে, কিংবা না হইয়াছে, সুখকর অনুভূতি কংবা নিরানন্দই ইহার প্রমান নহে। ক্ষনিক পবিত্রীকরণ বলিয়া কোন কছু নাই। প্রকৃত পবিত্রীকরণ প্রতিদিন পরীক্ষা প্রলোভনের সহিত সংগ্রাম করিতেছে, পাপ প্রবনাতার উপরে জয়লাভ করিতেছে, এবং জীবনের ও হৃদয়ের পবিত্রতার চেষ্টা করিতেছে, তাহারা সগর্ব্বে পবিত্রতা লাভের দাবী করে না। তাহারা ধার্ম্মিকতার জন্য ক্ষুদিত ও তৃষিত। তাহাদের নিকটে পাপ অতিশয় পাপময়।16 CCh 191.2
আমাদের পাপের জন্য ঈশ্বর আমাদিগকে পরিত্যাগ করেন না। আমরা পাপ করিতে ও ঈশ্বরের পবিত্র আত্মাকে দুঃখিত করিতে পারি, কিন্তু যখন আমরা অনুতাপ করি ও অনুতপ্ত হৃদয়ে তাঁহার নিকটে ফিরিয়া আইসি, তখন তিনি আমাদিগকে তাড়াইয়া দেন না। বস্তুতঃ বাধাবিঘ্নগুলি দূর করিয়া দিতে হইবে। কাহারও বিরুদ্ধে পোষিত অবৈধ মনোবৃত্তি, গর্ব্ব, অভিমান, অধৈয্য ও বচসা ইত্যাদি দূর করিয়া দিতে হইবে। যেহেতু এই সকল পাপ আমাদিগকে ঈশ্বর হইতে পৃথক্ করিয়া রাখে। সকল পাপ স্বীকার করিতেই হইবে; ফলতঃ হৃদয়ে অনুগ্রহের গভীরতর কার্য্য সাধিত হওয়া আবশ্যক। যাহারা নিজেদিগকে দুর্ব্বল ও হতাশ মনে করে, তাহারা ঈশ্বরের সবল লোক হইতে; এবং প্রভুর নিমিত্ত মহৎ কার্য্য সাধন করিতে পারে। কোন প্রকার স্বার্থপর উদ্দেশ্যে প্রণোদিত হইয়া নহে, কিন্তু উচ্চ মুলতথ্য লইয়া তাহাদের কার্য্য করিতে হইবে। CCh 192.1
কেহ কেহ মনে করেন যে, তাহারা নিশ্চয়ই অনুসন্ধানসুচক বিচারকালে বসবাস করিতেছে, সুতরাং তাঁহার আশীর্ব্বাদ দাবী করিবার পুর্ব্বে প্রভুর কাছে তাহাদের প্রমাণ করিতে হইবে যে, তাহারা সম্পূর্ণ পরিবর্ত্তিত। কিন্তু এই সকল প্রিয় ভ্রাতা এবং ভগিনী, এখনই তাঁহার আশীর্ব্বাদ দাবী করিতে পারে। তাহাদের দুর্ব্বলতার প্রতিকারের জন্য তাঁহার অনুগ্রহ বা খ্রীষ্টের আত্মা প্রাপ্ত হওয়া তাহাদের একান্ত প্রয়োজন, নতুবা তাহারা খ্রীষ্টীয় — স্বভাব ধারণ করিতে পারে না। আমরা যেমন পাপী, অসহায় ও আশ্রিত, ঠিক্ তেমনিভাবে যীশুর নিকটে আসিলে তিনি আনন্দিত হন। CCh 192.2
অনুতাপ যেমন, পাপের ক্ষমাও তেমনি খ্রীষ্টের মাধ্যমে ঈশ্বরদত্ত দান। পবিত্র আত্মার প্রভাবে আমরা পাপের সম্বন্ধে চেতনা প্রাপ্ত হই এবং ক্ষমা লাভের আবশ্যকতা অনুভব করি। অনুতপ্ত ব্যক্তি ভিন্ন অন্য কেহ ক্ষমা লাভ করিতে পারে না। কিন্তু ঈশ্বরের অনুগ্রহেই মানবান্তঃকরণে অনুতাপ আনায়ন করে। তিনি আমাদের যাবতীয় দুর্ব্বলতা ও দোষত্রুটী অবগত আছেন, আর তিনি আমাদের সাহায্যও করিবেন।17 CCh 192.3
কখন কখন জীবনে দুঃখকষ্টরূপ অন্ধকার ও নিরাশা আসিয়া আমাদিগকে ভয়ে বিহ্বল করে, কিন্তু আমাদের কখনই বিশ্বাস ত্যাগ করা কর্তব্য নহে। আমরা অনুভব করিতে পারি, অথবা না পারি, যীশুর উপরে আমাদের দৃষ্টি নিবন্ধ রাখিতেই হইবে। জানিত প্রত্যেকটী কর্ত্তব্য —কর্ম্ম বিশ্বস্ত ভাবে সম্পাদন করিবার চেষ্টা করিতে হইবে এবং তৎপরে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞায় স্থির নির্ভর রাখিতে হইবে। CCh 193.1
আমাদের অযোগ্যতা সম্বন্ধে গভীর ভাবে বুঝিতে পারিলে সময়ে সময়ে আমাদের প্রাণে এক আতঙ্কের সৃষ্টি হয়, কিন্তু এতদ্দ্বারা ইহাই প্রমানিত হয় না যে, ঈশ্বর আমাদের দিকে, অথবা আমরা ঈশ্বরের দিকে পরিবর্ত্তিত হইয়াছি। এক নির্দ্দিষ্ট প্রবল আবেগ পর্য্যন্ত মনকে বশে রাখিবার কোন চেষ্টা করা কর্ত্তব্য, - বিশ্বাস দ্বারা খ্রীষ্টের হস্ত আঁকড়িয়ে ধরা এবং আলোতে যেমন, অন্ধকারেও তেমনি তাহাতে পুর্ণ নির্ভর রাখা। CCh 193.2
যাহারা জয়লাভ করিবে তাহাদের জন্য যে মুকুট তোলা রহিয়াছে, বিশ্বাস নেত্রে তাঁহার দিকে দৃষ্টি পাত করুন; মুক্তি প্রাপ্তগনের জয়োল্লাসের সঙ্গীত —ধ্বনি শ্রবন করুন, তাহারা গাহিতেছেন- যোগ্য, যে মেষশাবক হত হইয়া ঈশ্বরে আমাদিগকে মুক্ত করিয়াছেন, তিনি যোগ্য ! এই সকল দৃশ্য বাস্তব বলিয়া গ্রহন করিতে চেষ্টা করুন। CCh 193.3
আমরা যদি খ্রীষ্ট সম্বন্ধে এবং স্বর্গীয় জগৎ সম্বন্ধে অধিকতর মাত্রায় বিশ্বাস করি, তাহা হইলে সদাপ্রভুর জন্য সংগ্রামে এক শক্তিশালী উদ্দীপনা ও সাহায্য প্রাপ্ত হইব। যে সুন্দর দেশ শীঘ্রই আমাদের বাসস্থান হইবে, তাঁহার গৌরবের বিষয় চিন্তা করিলে, আমাদের অহংকার ও জগতের প্রতি আসক্তি কমিয়া যাইবে। খ্রীষ্টের সৌন্দর্য্য ব্যতীত, জাগতিক সমস্ত আকর্ষণ নগন্য বলিয়া মনে হইবে। CCh 193.4
পৌল যদিও অবশেষে রোমীয় কারাগৃহে বদ্ধ হইয়া স্বররগীয় আলো বাতাস হইতে বঞ্চিত, সুসমাচার প্রচার কার্য্যের বস্ততা হইতে নিবৃত্ত ছিলেন এবং যে কোন মুহূর্ত্তে মৃত্যুদণ্ডে দন্ডিত হইবার আশঙ্কায় আশঙ্কিত ছিলেন, তথাপি তিনি সন্দেহ বাঁ নৈরাশ্যে পতিত হন নাই। মৃত্যুর পুর্ব্বে বিশ্বাসের ও সাহসের চূড়ান্ত পরাকাষ্ঠা দেখাইয়া সেই অন্ধকারাচ্ছন্ন কারাকূপ হইতে তিনি যে সাক্ষ্য দিয়াছিলেন, তাহা পরবর্ত্তী যুগকলাপে সাধু ও সাক্ষ্যমর গনের হৃদয় অনুপ্রানিত করিয়াছে। এই পুস্তকের পৃষ্ঠাগুলিতে আমরা যে পবিত্রীকরণের বিষয় দেখাইতে চেষ্টা করিয়াছি, তাঁহার বাক্যে উহার ফলের বিষয় যথাযথ রূপে বর্ণিত আছেঃ- “এখন আমি পেয় নৈবেদ্যের ন্যায় ঢালা যাইতেছি, এবং আমার প্রস্থানের সময় উপস্থিত হইয়াছে। আমি উত্তম যুদ্ধে প্রাণপণ করিয়াছি, নিরূপিত পথের শেষ পর্য্যন্ত দৌড়িয়াছি, বিশ্বাস রক্ষা করিয়াছি। এখন অবাধ আমার নিমিত্ত ধাম্মিকতার মুকুট তোলা রহিয়াছে ; প্রভু সেই ধর্ম্মময় বিচারকর্ত্তা, সেই দিন আমাকে তাহা দিবেন; কেবল আমাকে নয়, বরং যত লোক তাঁহার প্রকাশ —প্রাপ্তি ভালো বাসিয়াছে, সেই সকলকেও দিবেন।” ২ তীমথিয় ৪ঃ৬-৮।18 CCh 194.1