মণ্ডলীর জন্য উপদেশ

54/327

পবিত্রীকরণের প্রকৃত প্রমান

আমাদের ত্রানকর্ত্তা জগতের জ্যোতি ছিলেন, কিন্তু জগৎ তাঁহাকে চিনিল না। তিনি অবিরত দয়ার কার্য্যে নিযুক্ত ছিলেন, সকলের জীবন পথে জ্যোতি দান করিতেন, তথাপি যাহাদের সহিত তিনি মেলামেশা করিতেন, তাহাদের কাহাকেও তিনি তাঁহার অনুপম পুণ্য, তাঁহার আত্মত্যাগ, তাঁহার স্বার্থত্যাগ অ তাঁহার দানশীলতার প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করিতে বলেন নাই । বস্তুতঃ যিহুদিগণ এরূপ জীবন বহুমুল্য জ্ঞান করে নাই। তাহারা তাঁহার ধর্ম্মকে অকিঞ্চিৎকর বলিয়া মনে করিয়াছিল, কারণ ইহা তাহাদের ধর্ম্মপরায়নতার আদর্শ অনুযায়ী ছিল না। তাহারা এই সিদ্ধান্তে উপনিত হইয়াছিল যে, আত্মায় ও স্বাভাবে যীশু ধর্ম্মপরায়ণ ছিলেন না; যেহেতু তাহাদের ধর্ম্ম ছিল, বাহ্যাড়ম্বর পূর্ণ, তাহারা লোককে দেখাইবার নিমিত্ত প্রকাশ্য স্থলে প্রার্থনা করিত, এবং সুনাম অজর্জনের জন্য দয়ার কার্য্য করিত। CCh 181.3

মৃদুশীলতা পবিত্রীকরণের সর্ব্বাপেক্ষা বহুমুল্য ফল। মানবান্তঃকরণে এই অনুগ্রহ দানটী অবস্থিতি করিলে, ইহার প্রভাবে প্রকৃতি সুগঠিত হয়। অবিরত ঈশ্বরের সেবা করিতে এবং তাঁহার ইচ্ছায় আত্মসমর্পণ করিতে হইবে। CCh 182.1

যাঁহারা ঈশ্বরের সহিত প্রকৃত ভাবে সংযুক্ত, আত্ম-ত্যাগ, ত্যাগস্বীকার, বদান্যতা, দয়া, ধৈর্য্য, সহিষ্ণুতা, ও খ্রীষ্টেয় বিশ্বাস তাহাদের জীবনের দৈনন্দিন ফল। তাহাদের কার্য্যাবলী জগতে প্রকাশিত নাও হইতে পারে, কিন্তু তাহারা প্রতিদিন মন্দের সহিত সংগ্রাম করিতেছেন এবং পরীক্ষা অ ভ্রান্তির উপরে জয় লাভ করিতেছেন। অবিরত ব্যাকূল প্রার্থনায় জাগ্রত থাকিয়া যে বল লাভ করিতেছে তদ্দ্বারা পবিত্র প্রতিজ্ঞা —সমূহ নূতন ভাবে পালন করা হইতেছে। ব্যগ্র ধর্ম্মোন্মত্ত ব্যক্তি এই সকল নীরব কার্য্যকারীর শ্রমাদি অনুভব করিতে পারে না; কিন্তু যিনি হৃদয়ের গুপ্ত স্থান সমুহ দেখেন, মৃদুতায় অ ন্ম্রতায় যে কোন চেষ্টা করা হইয়া থাকে তাঁহার প্রত্যেকটী চেষ্টা তিনি প্রশংসার সহিত লক্ষ্য করিয়া থাকেন অ উহার সমাদর করেন। স্বাভাবে, প্রেমের অ বিশ্বাসের বিশুদ্ধ স্বর্ণ চিনিয়া লইবার নিমিত্ত পরীক্ষার সময়ের প্রয়োজন। মন্ডলীর উপরে যখন নানাবিধ পরীক্ষা ও উদ্বেগ আসিয়া পড়ে, তখন খ্রীষ্টের প্রকৃত অনুগামিগণের দৃঢ় উদ্যম অ প্রখর অনুরাগ বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়। CCh 182.2

যাঁহারা তাঁহার (প্রকৃত ধর্ম্মপরায়ন ব্যক্তির) প্রভাবের মধ্যে আইসে, তাহারা সকলে তাঁহার খ্রীষ্টেয় জীবনের সৌন্দর্য্য ও সৌরভ অনুভব করিতে পারে; কিন্তু তিনি নিজে ইহার কিছুই জানিতে পারেন না, কারণ ইহা তাঁহার স্বাভাব ও প্রবণাতার সহিত ওতপ্রোত ভাবে জরিত থাকে। তিনি ঐশ্বরিক জ্যোতির নিমিত্ত প্রার্থনা করেন এবং জ্যোতিতে গমনাগমন করিতে ভালবাসেন। তাঁহার স্বর্গীয় পিতার ইচ্ছা পালন করাই তাঁহার খাদ্য ও পানীয়। তাহার জীবন খ্রীষ্টের সহিত ঈশ্বরে গুপ্ত থাকে, তথাপি তিনি এই বিষয়ে গর্ব্ব করেন না, অথবা এই বিষয় তিনি কিছু টের পাইতেছেন বলিয়া মনেও হয় না। যাঁহারা সূক্ষ্মভাবে গুরুর পদচিহ্নের অনুগমন করেন, সেই নম্র অ বিনীত লোকদের প্রতি ঈশ্বর সুপ্রসন্ন হন। দুতগণ তাহাদের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং তাহাদের পথে কষ্টকর ভাবে অতিবাহিত করতে ভালবাসেন। যাঁহারা গৌরবজনক কার্য্য করিয়াছে বলিয়া দাবী করে, ও তাহাদের সৎকর্ম্ম লোককে দেখাইয়া আনন্দ অনুভব করে, তাহারা হয়তো তাহাদিগকে অবজ্ঞা করিতে পারে, কিন্তু স্বর্গীয় দূতগণ সপ্রেমে তাহাদিগকে ঘেরিয়া থাকেন, ও তাহাদের চতুর্দ্দিকে অগ্নির প্রাচীরের ন্যায় অবস্থিতি করেন।7 CCh 183.1