মণ্ডলীর জন্য উপদেশ
১১ শ অধ্যায়
পবিত্রীকৃত জীবন
আমাদের যাহা কিছু আছে, আমাদের ত্রাণকর্ত্তা তাহাই চাহিতেছেন; তিনি আমাদের প্রথম ও পবিত্রতম চিন্তারাশি, বিশুদ্ধ অ গভীরতম অনুরাগ চাহেন। আমরা যদি বাস্তবিকই ঈশ্বরের স্বভাবের সহভাগী হই, তাহা হইলে আমাদের হৃদয় অ ওষ্ঠদ্বয় হইতে অবিরত তাঁহার প্রশংসাধবনি উন্থিত হইবে। আমাদের যাহা কিছু আছে, তাঁহার সমস্তই তাঁহার হস্তে সমর্পণ করা এবং অনুগ্রহের অ সত্যের জ্ঞানে ক্রমাগত বৃদ্ধি প্রাপ্ত হওয়াই আমাদের একমাত্র নিরাপত্তা।1 CCh 178.1
পবিত্র শস্ত্রে যে পবিত্রীকরণের বিষয় উল্লেখ আছে, তাহাতে সমস্ত মানবকে, - আত্মা, প্রান অ দেহকে পবিত্রীকরণের বিষয় নির্দ্দেশ দেওয়া হইয়াছে। আর এতদ্দ্বারা পূর্ণ আত্মোৎসর্গের প্রকৃত ধারণা জন্মাইয়া দেওয়া হইয়াছে। থিষলনীকীয় মণ্ডলী যেন এই মহা আশীর্ব্বাদ লাভ করিতে পারে, তজ্জন্য প্রেরিত পৌলের প্রার্থনা এই- “আর শান্তির ঈশ্বর আপনি তোমাদিগকে সর্ব্বতোভাবে পবিত্র করুন, এবং তোমাদের অবিকল আত্মা, প্রাণ অ দেহ আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের আগমণকালে অনিন্দনীয়রূপে রক্ষিত হউক।” (১থিষলনীকীয় ৫;২৩ )। CCh 178.2
ধর্ম্মজগতে পবিত্রীকরিণের যে মতবাদ রহিয়াছে, তাহা যেমন সম্পুর্ন মিথ্যা, তেমনি ইহার প্রভাব অতীব বিপজ্জনক। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, যাহারা পবিত্রীকরণ মুখে স্বীকার করে, তাহারা বিশুদ্ধ পবিত্রতার অধিকারী নহে। তাহাদের পবিত্রীকরণ কেবল মৌখিক অ স্বেচ্ছা-উপাসনীয়। CCh 178.3
যুক্তিতর্ক অ বিচার বিবেচনা একদিকে ফেলিয়া রাখিয়া, কখন কখন তাহাদের মনে যে আবেগের উদয় হয়। তদানুযায়ী পবিত্রীকরনের দাবীতে ভিত্তি করিয়া তাহারা সম্পূর্ণরূপে তাহাদের অনুভুতির উপরে নির্ভর করে। তাহারা তাহাতে পবিত্রতা সম্বন্ধে অনম্য অ একগুয়ে ভাবে দাবী করে এবং ইহার অনুকূলে অনেক কথা বলে, কিন্তু ইহার প্রমান- স্বরূপ কোন বহুমূল্য ফল তাহারা ধারণ করিতে পারে না। নামধারী এই পবিত্র লোকেরা ভাণ করিয়া, কেবল যে নিজেদিগকে প্রতারণা করিতেছে। তাহারা হয়তো পুনঃ পুনঃ বলিবে, “ঈশ্বর আমাকে চালিত করেন ! আমাকে শিক্ষা দান করেন! আমি নিষ্পাপ জীবন যাপন করিতেছে !” যাহারা এইরূপ আত্মায় আবিষ্ট, তাহারা অন্ধকারে বিচরণ করে; নিগূঢ় বিষয় হৃদয়ঙ্গম করিতে অক্ষম। কিন্তু এইরূপ যাহা, তাহা একমাত্র প্রকৃত আদর্শ খ্রীষ্টের সম্পূর্ন বিপরীত।2 CCh 178.4
পবিত্রীকরণ ক্রমোন্নতির কার্য্য। বিশ্বাসিগণের পর পর কী অবস্থায় উপনীত হইতে হইবে, সাধু পিতরের বাক্যে তাহা বর্ণিত হইয়াছে, -“আর ইহার জন্য তোমরা সম্পুর্ন যত্ন প্রয়োগ করিয়া আপনাদের বিশ্বাসে সদ্গুন, ও সদ্গুণে জ্ঞান, ও জ্ঞানে জিতেন্দ্রিয়তা , ও জিতেন্দ্রিয়তায় ধৈর্য্য, ও ধৈর্য্যেভক্তি, অ ভক্তিতে ভ্রাতৃস্নেহ, ভ্রাতৃস্নেহে প্রেম যোগাও। কেননা এই সমস্ত যদি তোমাদিগেতে থাকে, ও উপচিয়া পড়ে, তবে আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের তত্ত্বজ্ঞান সম্বন্ধে তোমাদিগকে অলস কি ফলহীন থাকিতে দিবে না” (২ পিতর ১৫-৮) । ” অতএব, হে ভ্রাতৃগণ, তোমরা যে আহূত ও মনোনীত, তাহা নিশ্চয় করিতে অধিক যত্ন কর, কেননা এ সকল করিলে তোমরা কখনও উছোট খাইবে না; কারণ এইরূপে আমাদের প্রভু ও ত্রাণকর্ত্তা যীশু খ্রীষ্টের অনন্ত রাজ্যে প্রবেশ করিবার অধিকার প্রচুররুপে তোমাদিগকে দেওয়া যাইবে।” (১০, ১১ পদ)। CCh 179.1
এ স্থানে একটী ক্রমোন্নতির বিষয় উল্লেখ রহিয়াছে, যদ্দ্বারা আমরা স্থির-নিশ্চিত হইতে পারি যে, আমরা কখনও অধঃপতিত হইব না। খ্রীষ্টীয় গুণাবলি প্রাপ্ত হইবার নিমিত্ত যাহারা এই প্রকারে যোগের কার্য্য করে তাহারা এই দৃঢ় আশ্বাস প্রাপ্ত হইতে পারেন যে, আত্মার দান সকল বিতরণের নিমিত্ত ঈশ্বর গুনের কার্য্য করিবেন।3 CCh 179.2
পবিত্রীকরণ এক মুহুর্ত্তের, এক ঘন্টার, কিংবা এক দিনের কার্য্য নহে। ইহা অনুগ্রহে অবিরত বৃদ্ধির কার্য্য। এক দিন পরবর্ত্তী সংগ্রাম যে কত প্রবল হইবে, তাহা আমরা জানি না। শয়তান জীবিত আছে, এবং সে কার্য্যে তৎপর, সুতরাং তাঁহার প্রতিরোধের নিমিত্ত প্রতিদিন ব্যগ্রমনে ঈশ্বরের নিকটে সাহায্য অ বল ভিক্ষা করা নিমিত্ত একান্ত আবশ্যক। যে পর্য্যন্ত শয়তানের রাজত্ব আছে, তাবৎ নিজেকে দমনে রাখিতে হইবে, বাধাবিঘ্নের উপরে জয় লাভ করিতে হইবে; বস্তুতঃ থামিবার স্থান নাই, পহুছিবার কোন নির্দ্দিষ্ট স্থান নাই, যে স্থানে পহুছিয়া বলিতে পারি যে, আমরা শেষ প্রান্তে পহুছিয়াছি। CCh 180.1
খ্রীষ্টীয় জীবন ক্রমাগত আগ্রসরের জীবন। যীশু তাঁহার লোকদের পরিস্কারক ও শুচিকারকরূপে উপবিষ্ট আছেন; তাঁহার প্রতিমূর্ত্তি যখন তাহাদিগতে নিখুঁতরূপে প্রতিবিম্বিত হইবে, তখন তাহারা সিদ্ধ ও পবিত্র হইয়া রূপান্তর গ্রহনের জন্য প্রস্তুত হইবে। খ্রীষ্টীয়ানদিগকে একটী মহৎ কার্য্য করিতে বলা হইতেছে। আমাদিগকে মাংসের ও আত্মার সমস্ত মালিন্য হইতে শুচি হইতে এবং ঈশ্বর —ভয়ে পবিত্রতা সিদ্ধ করিতে উৎসাহ দেওয়া হইতেছে। কোথায় মহৎ কার্য্য সাধন করিতে হইবে, তাহা এই স্থানে প্রকাশিত হইয়াছে। খ্রীষ্টীয়ানগণের অবিরত কার্য্য করিতে হইবে। প্রচুর ফলে ফলবান হইবার নিমিত্ত, প্রত্যেক শাখার, মূল দ্রাক্ষালতা হইতে জীবন ও শক্তি সংগ্রহ করিতে হইবে।4 CCh 180.2
কেহ যদি নিজেদিগকে এই ভ্রান্ত বিশ্বাসে প্রতারিত না করে যে, ঈশ্বরের আজ্ঞাবহের মধ্যে কোন একটী আজ্ঞা লঙ্ঘন করিয়া ঈশ্বরের ক্ষমা ও আশীর্ব্বাদ লাভ করিবে। কোন জ্ঞাত পাপ স্বেচ্ছাপূর্ব্বক সাধন করিলে ঈশ্বরের আত্মা তাহাকে চেতনা প্রদান করেন না, ফলে সে ঈশ্বর হইতে পৃথকীকৃত হয়। ধর্ম্মানুভূতি যতই হউক না কেন, যাহারা ঐশ্বরিক ব্যবস্থার অবমাননা করে, যীশু তাহাদের হৃদয়ে বাস করিতে পারেন না। যাহারা ঈশ্বরের সমাদর করিবে, ঈশ্বর কেবল তাহাদের সমাদর করিবেন।5 CCh 180.3
যখন পৌল লিখিয়াছেন, “আর শান্তির ঈশ্বর আপনি তোমাদিগকে সর্ব্বতোভাবে পবিত্র করুন” (১ থিষলনীকীয় ৫ঃ ২৩), তখন তিনি তাহাদিগকে এমন একটী আদর্শের অনুকরণ করিতে বলেন নাই, যে আদর্শে উপনিত হওয়া তাহাদের পক্ষে অসম্ভব। যে আশীর্ব্বাদ দান করিতে ঈশ্বরের ইচ্ছা নাই, তাহারা যেন সেইআশীর্ব্বাদ লাভ করিতে পারে, এজন্য তিনি প্রার্থনা করেন নাই। তিনি জানিতেন যে, যাহারা শান্তিতে খ্রীষ্টের সহিত সাক্ষাৎ করিবার যোগ্য পাত্র বলিয়া বিবেচিত হইবে, তাহাদের নির্ম্মল ও পবিত্র চরিত্র বিশিষ্ট হইতে হইবে। (১ করিন্থীয় ৯ ঃ ২৫-২৭; ১ করিন্থীয় ৬ঃ ১৯, ২০ পদ পাঠ করুন)। CCh 181.1
খাঁটি খ্রীষ্টীয় মতবাদ, ফলাফলের বিষয় চিন্তা করিবে না। ইহা জিজ্ঞাসা করিবে না যে, আমি যিদি ইহা করি, তবে লোকেরা আমার সম্বন্ধে কি চিন্তা করিবে? অথবা ইহাতে আমার জাগতিক উন্নতিতে কিরূপ ফলাফল দেখা দিবে? ঈশ্বরের সন্তানগণের কার্য্যে যেন তাঁহার গৌরব প্রকাশিত হয়, তজ্জন্য তাহাদের কি করিতে হইবে, প্রবল আকাঙ্খার সহিত তাহারা তাঁহার নিকটে উহা জানিতে চাহে। খ্রীষ্টের অনুগামিগণের হৃদয় অ জীবন যেন ঐশ্বরিক অনুগ্রহে পরিচালিত হয় ও তাহারা যেন প্রচুর উপায় সরবরাহ করিয়া রাখিয়াছে।6 CCh 181.2