মণ্ডলীর জন্য উপদেশ

5/327

ভাববাদীর নিকট কি প্রকারে জ্যোতি প্রকাশিত হইল

সদাপ্রভু ভাববাদীর মধ্যদিয়া কিরূপে তাঁহার লোকদের সহিত আলাপ করিবেন, ইস্রায়েল সন্তানগণের অভিজ্ঞতায় পুর্ব্বে একবার তাহা দেখান হইয়াছে। তিনি বলেন :- CCh 22.4

“তোমাদের মধ্যে যদি কেহ ভাববাদী হয়, তবে আমি সদাপ্রভু তাহার নিকটে কোন দর্শন দ্বারা আপনার পরিচয় দিব, স্বপ্নে তাহার সহিত কথা কহিব।” গণনা ১২ : ৬। CCh 23.1

মহা-সংগ্রাম সম্বন্ধে মিসেস্ হোয়াইট্ যখন দর্শন প্রাপ্ত হন, তখন তাঁহার শারীরিক অবস্থা যে কিরূপ অদ্ভুত হইয়াছিল, পূর্ব্ব অধ্যায়ে তাহা পাঠ করিয়াছেন। এক্ষণে একজনে এই যুক্তিযুক্ত প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিতে পারেন যে, এইভাবে দর্শন দেওয়া হইত কেন? ইহার সুনিশ্চিত উত্তর এই যে, সত্যই ঈশ্বর ভাববাদীর নিকট কথা বলেন, লোকে যেন দৃঢ়রূপে ইহা বিশ্বাস করে, এই জন্যই দর্শনে ঐরূপ অবস্থা ঘটিত। দর্শনে মিসেস্ হোয়াইটের যেরূপ অবস্থা ঘটিত, প্রায়শঃই তিনি তাহা সবিস্তারে বর্ণনা করিতেন না; কিন্তু কোন এক ঘটনা উপলক্ষে তিনি বলিয়াছিলেন, এই শেষ কালে ভাব্বানীর আত্মার প্রতি আমাদের সকলের বিশ্বাস যেন অটল থাকে, তজ্জন্যই ঐরূপ ভাবে এই সকল বার্ত্তা দেওয়া হইয়াছিল। CCh 23.2

মিসেস্ হোয়াইটের কাজের যখন শ্রীবৃদ্ধি হইতেছিল, তখন বাইবেলের দ্বারাই ইহার পরীক্ষা করা যাইত, যেমন লিখিত আছে, “ফল দ্বারাই উহাদিগকে চিনিতে পারিবে।” কিন্তু ফলের বৃদ্ধি হইতে সময়ের প্রয়োজন, তজ্জন্য দর্শনের প্রারম্ভেই প্রভু প্রমাণ দিয়াছিলেন, যেন লোকে বিশ্বাস করিতে পারে। CCh 23.3

অসাধারণ শারীরিক অবস্থার সহিত একযোগে সকল দর্শন সাধারন্যে দেওয়া হয় নাই। এই অধ্যায়ের আরম্ভেই যে পদটী ব্যবহার করা হইয়াছে, তাহাতে বলা হইয়াছে যে, “দর্শন দ্বারা” ঈশ্বর কেবল যে নিজের পরিচয় দিবেন, এমন নহে, অধিকন্তু তিনি স্বপ্নে তাহার সহিত কথাও কহিবেন। এই স্বপ্ন দৈববাদিক স্বপ্ন, দানিয়েল এই স্বপ্নের বিষয় উল্লেখ করিয়া কহেন,- “বাবি-রাজ বেলশৎসরের প্রথম বৎসরে দানিয়েল শয্যার উপরে স্বপ্ন ও মনের দর্শন দেখিলেন; তখন তিনি সেই স্বপ্ন লিখিয়া কথার সার প্রকাশ করিলেন।” দানিয়েল ৭:১। CCh 23.4

দানিয়েলের নিকট যাহা প্রকাশিত হইয়াছিল, তাহা বর্ণনা করিতে গিয়া কতিপয় ঘটনা উপলক্ষ্যেই তিনি বলেছিলেন, “আমি রাত্রিকালীন দর্শনে দৃষ্টিপাত করিলাম।” মিসেস্ হোয়াইটের জীবনের অভিজ্ঞতায় দেখা যায় যে, রাত্রিকালে যখন তাঁহার মন সুস্থির থাকিত, সচরাচর তখনই তিনি দর্শন পাইতেন। ঐ সম্বন্ধে ভূমিকারূপে বলা হইয়াছে যে, “রাত্রিকালীন দর্শনে কোন কোন বিষয় আমাকে সুস্পষ্টরূপে দেখান হইয়াছে;” অথবা দৈববাদিক স্বপ্ন দ্বারা ঈশ্বর বারংবার ভাববাদীর সহিত কথা বলিতেন। দৈববাদিক স্বপ্ন কিংবা রাত্রিকালীন দর্শন এবং সাধারন স্বপ্নের মধ্যে কি সম্বন্ধ আছে, এতদ্ সম্পর্কে প্রশ্ন উঠিতে পারে। এজন্য মিসেস্ হোয়াইট্ ১৮৬৮ খৃষ্টাব্দে লিখিয়াছিলেন :- CCh 24.1

“জীবনের সামান্য বিষয় লইয়া লোকে অনেক স্বপ্ন দেখিয়া থাকে, কিন্তু ঈশ্বরের আত্মার সহিত ইহাদের কোনই সম্পর্ক নাই। আবার অনেক মিথ্যা স্বপ্ন ও মিথ্যা দর্শনও আছে, সেগুলি শয়তানের অনুপ্রেরণা মাত্র। কিন্তু সদাপ্রভুর নিকট হইতে যে স্বপ্ন আইসে, ঈশ্বরের বাক্যে তাহাকে দর্শনের পর্য্যায়ভুক্ত করা হইয়াছে। লোক বিশেষে এবং ঘটনা বিশেষে এইরূপ স্বপ্নের অকৃত্রিমতা প্রমানিত হয়।” CCh 24.2

যাহারা মিসেস্ হোয়াইটের দর্শনের বিষয় তত বেশী অভিজ্ঞ নহে, তাহাদের অবগতির নিমিত্ত তাঁহার জীবনের শেষ ভাগে তাঁহার জ্যেষ্ঠ পুত্র এল্ডার ডাব্লিউ, সি, হোয়াইট্ একবার তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিয়া ছিলেন- “মা ! আপনি প্রায়ই বলিয়া থাকেন যে, রাত্রিকালে আপনার নিকট বিষয় ব্যক্ত করা হয়; স্বপ্নে আপনার নিকট জ্যোতি প্রকাশিত হয়। আমরা তো সকলেই স্বপ্ন দেখি। আপনি বারবার বলিয়া থাকেন যে, ঈশ্বর স্বপ্নে আপনার সহিত কথা বলেন, কিন্তু আপনি কি প্রকারে ইহা জানেন ? CCh 24.3

তিনি উত্তর করিলেন, “দিনের বেলা যে স্বর্গীয় বার্ত্তাবাহক দূত আমার পার্শ্বে দাঁড়াইয়া আমার দিনের বেলার দর্শন বুঝাইয়া দেন, তিনিই আমার পার্শ্বে দাঁড়াইয়া রাত্রিকালীন দর্শনও বুঝাইয়া দেন।” স্বর্গীয় ব্যক্তিকে অন্য সময়ে “দূত,” “আমার চালক,” “আমার উপদেশক” ইত্যাদি আখ্যা দেওয়া হইয়াছে। CCh 24.4

ভাববাদীর মনে কোন প্রকার চাঞ্চল্য ঘটে নাই, রাত্রিকালে যে প্রত্যাদেশ আসিয়াছিল, তৎসম্বন্ধে তাঁহার মনে কোন সংশয় উপস্থিত হয় নাই, কারণ ইহার সহিত যে সকল ঘটনা সংঘটিত হইয়াছিল, তর্দ্দ্বারা সুস্পষ্টরূপে প্রমানিত হইয়াছিল যে, এই শিক্ষা ঈশ্বর হইতেই আগত শিক্ষা। CCh 25.1

অন্যান্য সময়ে মিসেস্ হোয়াইট্ যখন প্রার্থনা করিতে, কথা বলিতে ও লিখিতে থাকিতেন, তখন তাঁহাকে দর্শনাদি দেওয়া হইত। সাধারন্যে কথা বলিবার কিংবা প্রার্থনা করিবার সময়ে ক্ষণেক বিরাম না দিলে পার্শ্ববর্ত্তী লোকে তাঁহার দর্শনের বিষয় কিছুই টের পাইত না। এইরূপে তিনি একবার লিখিয়াছিলেনঃ- CCh 25.2

“ব্যগ্রমনে প্রার্থনা করিবার কালে আমার চতুর্দ্দিকস্হ প্রত্যেকটি বিষয় সম্বন্ধে আমি অজ্ঞ ছিলাম; কক্ষটী আলোকময় হইয়াছিল, এবং এক মহাসভার প্রতি দেয়-একবার্ত্তা আমি শুনিতেছিলাম, আমার মনে হইতেছিল, যেন ঐ বার্ত্তা জেনারেল কন্ফারেন্সকেই দেওয়া হইতেছিল।” CCh 25.3

৭০ বৎসর ব্যাপী সুদীর্ঘ কর্ম্ম-জীবনের মধ্যে মিসেস্ হোয়াইট্ যে, সকল দর্শন প্রাপ্ত হইয়াছিলেন, তন্মধ্যে দীর্ঘতম দর্শনটী চারি ঘণ্টা পর্য্যন্ত এবং সর্ব্বাপেক্ষা নাতিদীর্ঘ দর্শনটী মাত্র কয়েক মুহূর্ত্ত স্থায়ী ছিল। দর্শনগুলি প্রায়ই আধ ঘণ্টা পর্য্যন্ত বা তদ্পেক্ষা কিঞ্চিৎ দীর্ঘ সময় পর্য্যন্ত স্থায়ী হইত। কিন্তু সকল দর্শনের কেবল একই নিয়ম ছিল না; কারণ পৌল যেমন বলেন, ইহা ঠিক্ সেইরূপ ছিল। CCh 25.4

“ঈশ্বর পুর্ব্বকালে বহুভাগে ও বহুরূপে ভাবভাদিগণে পিতৃলোকদিগকে কথা বলিয়া এই শেষকালে পুত্রেই আমাদিগকে বলিয়াছেন।” ইব্রীয় ১:১। CCh 25.5

দর্শনের মধ্যদিয়া ভাববাদীর নিকট জ্যোতি প্রকাশিত হইত, কিন্তু দর্শনের সময়ে ভাববাদী কিছুই লিখিতেন না। তাঁহার কার্য্য যন্ত্র-চালিত কার্য্যের মত ছিলনা। কোন বিশেষ ঘটনা ভিন্ন প্রভু তাঁহাকে ঐ সকল বাক্য বলিতে দেন নাই; আর তাহাও অতি বিরল। আবার সুনিশ্চিত বাক্যগুলি লিপিবদ্ধ করিয়া রাখিবার জন্য ভাববাদীর হস্ত দুতের দ্বারা পরিচালিতও হয় নাই। দর্শনের দ্বারা জ্ঞানোদীপ্ত হইয়া ভাববাদী নিজের মন হইতে ঐ বাক্যগুলি বলিয়াছেন কিংবা লিখিয়াছেনঃ আর ঐ গুলি যাহারা পড়িবে কিংবা কর্ণে শুনিবে, তাহাদের নিকটে ঐ সকল বাক্য জ্যোতি ও শিক্ষা বহন করিয়া লইয়া যাইবে। CCh 26.1

আমরা জিজ্ঞাসা করিত পারি, ভাববাদীর মন কি ভাবে জ্ঞানোদীপ্ত হইত? লোকদিগকে প্রদান করিবার নিমিত্ত কি ভাবে তিনি বার্ত্তা ও শিক্ষা লাভ করিতেন? দর্শন দিবার জন্য যেমন কেবল একটা বাঁধা নিয়ম স্থাপন করা চলে না, ঠিক্ তেমনি ভাববাদী কি ভাবে প্রত্যাদিষ্ট বার্ত্তা প্রাপ্ত হন, তাহারও কোন একটা বাঁধা বাঁধি নিয়ম স্থাপন করা চলে না। যাহা হউক, প্রত্যেক ব্যাপারেই ইহা এমন এক জ্বলন্ত অভিজ্ঞতা, যাহা ভাববাদীর মন হইতে কস্মিনকালেও মুছিয়া ফেলা যায় না। আমরা যাহা শ্রবণ করি, তাহা অপেক্ষা, আমরা যাহা দর্শন করি এবং যাহা ভোগ করি বা অনুভব করি, তাহা অপেক্ষা, আমরা যাহা দর্শন করি এবং যাহা ভোগ করি বা অনুভব করি, তাহা যেমন আমাদের মনে অধিকতর গভীর ছাপ অঙ্কিত করিয়া দেয় তেমনি ভাব্বাদিগণের নিকট যাহা কিছু বর্ণনা করা হয়, তাহা যেন তাঁহাদের চক্ষুর সম্মুখে ঘটিয়া যাইতেছে বলিয়া প্রতীয়মান হয়, আর এই জন্যই ঐ সকল দৃশ্য তাঁহাদের মনে গভীর ও স্থায়ী চিহ্ন অঙ্কিত করিয়া দেয়। CCh 26.2

মহা-সংগ্রাম সম্বন্ধে মিসেস্ হোয়াইট্ যে দর্শন পাইয়াছিলেন, পুর্ব্ব অধ্যায়ে সেই কাহিনী বর্ণনা কালে ঐতিহাসিক ঘটনার বিষয় তিনি কি প্রকারে জানিতে পারিলেন, আমরা তাঁহার নিজের বাক্য উদ্ধার করিয়া তাহা জানাইয়াছি। দর্শনে কি ভাবে তাঁহার নিকট জ্যোতি প্রকাশিত হইয়াছিল, তাহা বর্ণনা কালে অন্য এক সময়ে তিনি কহেন,- “পৃথিবীতে যে সকল দৃশ্য দেখা যাইতেছিল, আমার মনোযোগ প্রায় সেই দিকেই আকর্ষিত হইত। মধ্যে মধ্যে আমাকে ভবিষ্যতের বহু দূরে লইয়া যাইয়া পরিনামে কি ঘটিবে তাহা দেখান হইত। পরে পুনরায় আমাকে দেখান হইত, যেন সে সকল অতীতে ঘটিয়া গিয়াছে।” CCh 26.3

ইহা হইতে স্পষ্ট মনে হয় যেন, এলেন হোয়াইট্ এই সকল ঘটনা স্বচক্ষে ঘটিতে দেখিয়াছিলেন। দর্শনে এই সকল ঘটনা তাঁহার সম্মুখে পুনরাভিনয় করিয়া, তাঁহার মনে এক জ্বলন্ত রেখাপাত করিয়া দেওয়া হইত। CCh 27.1

অন্যান্য সময়ে তাঁহার মনে হইত, যেন তাঁহার নিকট প্রদর্শিত দৃশ্যে, কার্য্যতঃ তিনিই অংশ গ্রহন করিতেছেন;- তিনি অনুভব করিতেছেন, দর্শন করিতেছেন, শ্রবন করিতেছেন এবং আজ্ঞাবহ হইতেছেন; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ইহার কোনটাই তিনি করেন নাই; তথাপি তাঁহার মনে এরূপ এক গভীর ছাপ অঙ্কিত হইত যে, কস্মিনকালেও তাহা ভুলিবার নহে। তাঁহার সর্ব্ব প্রথম দর্শনটী এই ধরনেরই ছিল;-.........৬৫-৭২ পৃষ্ঠায় এই দর্শনের বিষয় উল্লেখ আছে। CCh 27.2

অন্যান্য সময়ে মিসেস্ হোয়াইট্ যখন দর্শন পাইতেন, তখন মনে হইত যেন, তিনি কোন সভায় কিংবা নিজের বাটিতে অথবা দুরস্থিত কোন প্রতিষ্ঠানে বসিয়া দর্শন দেখিতেছেন। এইরূপ সভায় উপস্থিত থাকা সম্বন্ধে মিসেস্‌ হোয়াইটের এরূপ সুস্পষ্ট জ্ঞান থাকিত যে, সভায় ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি যে সকল কথা বলিতেন ও যে কার্য্য করিতেন, পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে তাহাও বলিতে পারিতেন। একদা মিসেস্ হোয়াইট্ দর্শনে দেখিতে পাইলেন, তিনি যেন আমাদের একটি চিকিৎসালয় পরিদর্শনার্থে গিয়াছেন, এবং কামরাগুলি ঘুরিয়া ঘুরিয়া কি হইতেছে, না হইতেছে দেখিতেছেন। এই বিষয়ে তিনি লেখেনঃ- CCh 27.3

“চপল বাক্য, নির্ব্বোধ ব্যঙ্গ ও অর্থহীন হাস্য তীব্রভাবে কর্ণকুহরে প্রবিষ্ট হইল। ......... ঈর্ষ্যা-প্রবণতা দেখিয়া, হিংসার বাক্য এবং অসতর্কতার আলাপ শুনিয়া আমি বিস্মিত হইলাম; ঈশ্বরের দূতগণও লজ্জিত হইলেন।” CCh 28.1

ঐ একই প্রতিষ্ঠানের অপেক্ষাকৃত প্রীতিজনক অবস্থার বিষয়ও প্রকাশিত হইয়াছিল। তিনি যেন এমন এক কক্ষে নীত হইয়াছিলেন, “যে স্থান হইতে প্রার্থনার রব উন্থিত হইতেছিল। এই শব্দ কতই না মধুর ছিল !” উক্ত প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বিষয় লইয়া এবং যে দূত তাঁহাকে বিভিন্ন বিভাগের বিভিন্ন কক্ষে লইয়া গিয়াছিলেন, তাঁহার বাক্য সকল ভিত্তি করিয়া শিক্ষামূলক বার্ত্তা লিখিত হইয়াছিল। CCh 28.2

সুস্পষ্ট নিদর্শনের দ্বারাও অনেক সময়ে মিসেস্ হোয়াইটের নিকট জ্যোতি প্রকাশিত হইয়াছে। নিম্নলিখিত চারিটী বাক্যে এইরূপ নিদর্শন সুস্পষ্টরূপে বর্ণিত হইয়াছে। বিপদে পতিত জনৈক বিশেষ কার্য্যকারীকে যে ব্যক্তিগত বার্ত্তা পাঠান হইয়াছিল, এই বাক্যগুলি তাহা হইতে গৃহীত। CCh 28.3

“অন্য সময়ে আমি তোমাকে একজন জেনারেলের মত দেখিয়া ছিলাম, তুমি অশ্বে আরোহণ করিয়া পতাকা বহন করিয়া লইয়া যাইতে ছিলে। ঐ পতাকায় লিখিত ছিল, ‘ঈশ্বরের আজ্ঞাসকল ও যীশুর বিস্বাস’। কিন্তু এক ব্যক্তি আসিয়া তোমার হস্ত হইতে পতাকাটী ছিনাইয়া লইয়া ধূলিতে দলিত করিল। আমি তোমাকে এরূপ লোকপরিবেষ্টিত দেখিলাম, যাহারা তোমাকে জগতের সহিত শৃঙ্খলাবদ্ধ করিতেছিল।” CCh 28.4

দর্শনে মিসেস্ হোয়াইট্কে সময় সময় দুই বিভিন্ন দৃশ্যও দেখান হইয়াছে- একটি দ্বারা দেখান হইয়াছে, কোন কোন পরিকল্পনা কিংবা নিয়ম অনুসরন করিলে তাহার কি ফল হইবে; আবার আর একটী দ্বারা দেখান হইয়াছে, - ঐ সকল পরিকল্পনানুযায়ী কার্য্য না করিয়া অন্য পরিকল্পনা বা নিয়মানুযায়ী কার্য্য করিলে, তাহারই বা ফল কি হইবে। এই বিষয়ে এক অত্যুৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত দেখিতে পাওয়া যায়, আমেরিকার পশ্চিমাংশে লোমালিণ্ডা নামক স্থানে হেল্‌থ ফুড ফ্যাক্টরীর জন্য স্থান নির্ব্বাচন সম্পর্কে। ম্যানেজার এবং তাঁহার সহকার্য্যকারিগণ প্রধান স্বাস্থ্যনিবাসের অতি নিকটে প্রকাণ্ড একটী গৃহ নির্ম্মাণ করিবার পরিকল্পনা করিতেছিলেন। যখন এই পরিকল্পনা কার্য্যে পরিনত হইতে যাইতেছিল, তখন মিসেস্ হোয়াইট্ শত শত মাইল দূরে নিজ গৃহে অবস্থান করিতেছিলেন; আর ঐ গৃহে থাকিয়া কোন এক রাত্রিতে তিনি দুইটী দর্শন দেখিলেন। ইহাদের মধ্যে প্রথমটি সম্বন্ধে তিনি বলেনঃ- CCh 28.5

“আমাকে একটী প্রকাণ্ড গৃহ দেখান হইল; এই গৃহে বহু খাদ্য প্রস্তুত করা হইয়াছিল। রুটীশালার নিকটে আরও কতকগুলি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গৃহ ছিল তথায় দাঁড়াইয়া শুনিতে পাইলাম যে, আরদ্ধ কার্য্য লইয়া উচ্চৈস্বরে বাদানুবাদ চলিতেছে। কার্য্যকারিগণের মধ্যে একতা নাই, তাই গোলমাল দেখা দিয়াছে।” CCh 29.1

পরে তিনি দর্শনে দেখিলেন, ঐ বিপাকগ্রস্ত কার্য্যাধ্যক্ষ স্বীয় সহকার্য্যকারিগণের মধ্যে একতা আনয়নের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করিতেছেন। তিনি দেখিলেন যে, রোগীরা এই সকল তর্কবিতর্ক শুনিতেছে এবং দুঃখের সহিত এই কথা বলিতেছে যে, স্বাস্থ্য নিবাসের এত নিকটে এই সুন্দর স্থানে খাদ্যের আড়ত স্থাপন করিলে ইহা বড়ই পরিতাপের বিষয় হইবে।” “পরে এই দৃশ্যপটে একব্যক্তি উপস্থিত হইয়া কহিলেন, কোন কোন পরিকল্পনানুযায়ী কার্য্য নির্ব্বাহ করিতে গেলে যে কি ফল হইবে, তাহা যেন তুমি সম্যকরূপে বুঝিতে পার, তজ্জন্য এই সকল ঘটনা তোমার সম্মুখে সংঘটিত হইতে দেওয়া হইয়াছে। CCh 29.2

পরে এই দৃশ্যের পরিবর্ত্তন হইল, আর তিনি দর্শনে খাদ্যের এই আড়তটীকে ” স্বাস্থ্য-নিবাস হইতে দূরে রেল-রাস্তা-অভিমুখে যে রাস্তাটী গিয়াছে, তাহারই উপরে দেখিলেন।” ঈশ্বরের পরিকল্পনানুযায়ী অতি দীন ভাবে এই স্থানে কার্য্য পরিচালিত হইতেছিল। এই দর্শন প্রাপ্তির কয়েক ঘন্টা পরেই মিসেস্‌ হোয়াইট্‌ লোমালিন্ডার কার্য্যাকারিগণের নিকটে চিঠি লিখিয়া কোথায় খাদ্যের আড়ত নিম্মিত হওয়া উচিত, তাহা নির্দ্দেশ করিয়া দিলেন। তাঁহাদের প্রথম পরিকল্পনানুযায়ী স্বাস্থ্যনিবাসের সম্মুখে প্রকাণ্ড এক বানিজ্য-গৃহ নির্ম্মান করিলে পরিনামে আমাদের বড়ই মুস্কিলে পড়িতে হইত। CCh 29.3

এইরূপে আমরা দেখিতে পাই যে, প্রভুর বার্ত্তাবাহিকা নানা উপায়ে প্রভুর নিকট হইতে বার্ত্তা পাইয়া দর্শনের মধ্যদিয়া দিবারাত্র আমাদিগকে শিক্ষা দিয়াছেন। ভাব্বাদী স্বীয় জ্ঞানোদীপ্ত মন হইতে কথা বলিয়া কিংবা কাগজে কলমে লিখিয়া লোকদের নিকটে শিক্ষা ও জ্ঞান মূলক বার্ত্তা পাঠাইয়াছন। প্রভুর আত্মা দ্বারা পরিচালিত হইয়া মিসেস্ হোয়াইট্ এইরূপ করিয়াছেন; কোন যন্ত্র দ্বারা চালিত হইয়া নহে। বার্ত্তা জ্ঞাপন করিবার জন্য শব্দ মনোনীত করিয়া লইবার স্বাধীনতা তাঁহাকে দেওয়া হইয়াছিল। তাঁহার পরিচর্য্যা কার্য্যের প্রথম দিকে তিনি আমাদের মণ্ডলীর কাগজে লিখিয়াছিলেন:- CCh 30.1

“ঈশ্বরের আত্মার সাহায্যে আমি যেমন দর্শন পাইয়া থাকি, তেমনি তাঁহার আত্মার সাহায্যে যদিও সে সকল লিখি, তথাপি দর্শনগুলি বর্ণনা কালে আমি আমার নিজের শব্দগুলি ব্যবহার করি। কিন্তু আমার নিজের শব্দগুলি ব্যবহার করি। কিন্তু আমার নিকট কথিত দুতের বাক্যগুলি আমি সর্ব্বদা “কোটেশন” চিহ্নের মধ্যে রাখি।” CCh 30.2