মণ্ডলীর জন্য উপদেশ

49/327

খ্রীষ্টের সহিত এবং পরস্পরের সহিত একতাই আমাদের একমাত্র নিরাপত্তা

খ্রীষ্টীয়ান সমাজের মধ্যে অনৈক্য সন্দর্শন করিয়া জগৎ বড়ই তৃপ্তি লাভ করিতেছে। এজন্য ঈশ্বর তাঁহার প্রজাবৃন্দের মধ্যে এক পরিবর্ত্তন আনায়ন করিতে আহ্বান করিতেছেন। এই শেষকালে খ্রীষ্টের সহিত ও পরস্পরের সহিত একতাই আমাদের বল। আইসুন, আমরা এমন ভাবে জীবন যাপন করি যে, শয়তান যেন আমাদের মণ্ডলীর সভ্যগণের দিকে অঙ্গুলি নির্দ্দেশ করিয়া এক কথা বলিতে না পারেঃ- “দেখ ! এই লোকেরা খ্রীস্টের ধবজাতলে দণ্ডায়মান হইয়া, একজন আর জনকে কেমন ঘৃনা করিতেছে? আমার দলবলের সহিত যুদ্ধ না করিয়া পরস্পর পরস্পরের সহিত যুদ্ধ করিয়া নিজেদের শক্তি ক্ষয় করিতেছে, এজন্য আমাদের ভয়ের কিছুই নাই।” CCh 163.2

পবিত্র আত্মা অবতরণের পর শিষ্যগণ পুনরুন্থিত ত্রানকর্ত্তার বিষয় ঘোষণার্থ বহির্গত হইয়াছিলেন; তাঁহাদের একমাত্র আকাঙ্খা ছিল আত্মার পরিত্রান। তাঁহারা সাধুগণের সহিত সুমধুর মিলনে আনন্দ উপভোগ করিতেছিলেন। তাঁহারা কোমল স্বভাব বিশিষ্ট, চিন্তাশীল, ও নিঃ স্বার্থ ছিলেন; সত্যের নিমিত্ত যে কোন ত্যাগস্বীকার করিতে, তাঁহারা ইচ্ছুক ছিলেন। খ্রীষ্ট তাঁহাদিগকে যে প্রেম প্রকাশ করিতে আদেশ দিয়াছিলেন, পরস্পরের সহিত দৈনন্দিন মেলামেশায় তাঁহারা সেই প্রেম প্রকাশ করিয়াছিলেন। নিঃ স্বার্থ বাক্য ও কার্য্য দ্বারা তাঁহারা এই সুমধুর প্রেম অন্যের হৃদয়ে উদ্দীপিত করিবার চেষ্টা করিয়াছিলেন। CCh 164.1

পবিত্র আত্মা অবতীর্ণ হইবার পর, যে প্রেমে প্রেরিতগণের হৃদয় পূর্ণ হইয়াছিল, বিশ্বাসিগণেরও চিরকাল সেই প্রেম হৃদয়ে পোষণ করিয়া রাখা আবশ্যক। “আমি যেমন তোমাদিগকে প্রেম করিয়াছি, তোমরাও তেমনি পরস্পর প্রেম কর।” এই নূতন আজ্ঞাটী স্বেচ্ছাপূর্ব্বক পালন করিয়া তাঁহাদের সম্মুখ জীবনে অগ্রসর হইতে হইয়াছিল। তাঁহারা যেন খ্রীষ্টের এই দাবী পূর্ণ করিতে পারেন, তজজন্য তাঁহাদের খ্রীষ্টের সহিত ঘনিষ্ঠ ভাবে মিলিত হওয়া আবশ্যক ছিল। যিনি তাঁহাদিগকে নিজের ধার্ম্মিকতা দ্বারা ধার্ম্মিক করিতে পারিতেন, সেই ত্রানকর্ত্তার শক্তি মহৎ করিতে হইয়াছিল। CCh 164.2

কিন্তু আদিম খ্রীষ্টীয়ানগণ এক জন অন্যের দোষ অনুসন্ধান করিতে লাগিলেন। অন্যের দোষ লইয়া আলোচনা করিয়া, তীব্র সমালোচনা করিয়া তাঁহারা ত্রাণকর্ত্তার বিষয় এবং পাপীর জন্য তিনি যে মহা প্রেম প্রদর্শন করিয়াছিলেন, তদ্বিষয় ভুলিয়া গিয়াছিলেন। তাঁহারা বাহ্যানুষ্ঠান পালনে অধিকতর কড়া, বিশ্বাস মতবাদে অধিকতর সূক্ষ্ম, অন্যের বিষয় লইয়া সমালোচনায় অধিকতর কঠোর ছিলেন। অন্যকে দোষী করিতে তাঁহাদের এত উদ্যোগ ছিল যে, তাঁহারা তাঁহাদের নিজেদের ভ্রান্তির বিষয় একেবারে ভুলিয়া গিয়াছিলেন, খ্রীষ্ট ভ্রাতৃপ্রেম সম্বন্ধে যে শিক্ষা দিয়াছিলেন, তাঁহারা তাহা বিস্মৃত হইয়াছিলেন। সর্ব্বাপেক্ষা পরিতাপের বিষয় এই যে, তাঁহারা তাঁহাদের ক্ষতির বিষয়ে সম্পূর্ণ অজ্ঞ ছিলেন। সুখ ও আনন্দ তাঁহাদের হৃদয় হইতে চলিয়া যাইতেছিল। ঈশ্বরের প্রেম তাঁহাদের হৃদয়ে আসিতে না দেওয়ার ফলে শীঘ্রই তাঁহাদের অন্ধকারে বিচরণ করিতে হইবে, ইহা তাঁহারা উপলব্ধি করিতে পারেন নাই। CCh 164.3

প্রেরিত যোহন সম্যকরূপে হৃদয়ঙ্গম করিলেন যে, মন্ডলীর মধ্যে ভ্রাতৃ-প্রেম হ্রাস পাইয়া যাইতেছে, এজন্য তিনি তাঁহার পত্রে ঐ সম্বন্ধে বিশেষ ভাবে চেতনা দিয়াছিলেন। বিশ্বাসিগণ যেন পরস্পরকে অবিরত প্রেম করেন, তাঁহার মৃত্যুদিন পর্য্যন্ত তিনি তাঁহাদিগকে এই সনির্ব্বন্ধ অনুরোধ জানাইয়া গিয়াছেন। মন্দলীসমুহের নিকট তিনি যে সকল পত্র লিখিয়াছিলেন, সেগুলি ঐ চিন্তাধারায় পুর্ণ ছিল। তিনি লিখিয়াছিলেন, “প্রিয়তমেরা, আইস আমরা পরস্পর প্রেম করি; কারণ প্রেম ঈশ্বরের... ঈশ্বর আপনার একজাত পুত্রকে জগতে প্রেরণ করিয়াছেন, যেন আমরা তাহা দ্বারা জীবন লাভ করিতে পারি...... প্রিয়তমেরা, ঈশ্বর যখন আমাদিগকে এমন প্রেম করিয়াছেন, তখন আমরাও পরস্পর প্রেম করিতে বাধ্য।” ১ যোহন ৪ ঃ ৭-১১। CCh 165.1

অধুনা ঈশ্বরের মন্ডলীতে ভ্রাতৃপ্রেমের বড়ই অভাব দেখা যাইতেছে। যাহারা ত্রানকর্ত্তাকে প্রেম করেন বলিয়া প্রকাশ্যে স্বীকার করেন, তাঁহাদের মধ্যে অনেকে তাঁহাদের সহিত খ্রীষ্টীয় সহভাগিত্বে-মিলিত ভ্রাতা ও ভগ্নিগণকে প্রেম করিতে অবহেলা করেন। অমরতার একই পবিত্র আশায় আমরা একই বিশ্বাসে বিশ্বাসী, এক পরিবারের লোক এবং সকলে একই স্বর্গীয় পিতার সন্তানসন্ততি। যে বন্ধন আমাদিগকে পরস্পরের সহিত বাধিয়া রাখিয়াছে, তাহা কত ঘনিষ্ট ও কোমল হওয়া আবশ্যক ! জগতের লোকেরা বিশেষভাবে লক্ষ্য করিয়া দেখিতেছে যে, আমাদের বিশ্বাস আমাদের হৃদয়ের উপরে পবিত্র প্রভাব বিস্তার করিতেছে কিনা । তাঁহারা আমাদের জীবনের প্রত্যেকটী ত্রুটী, এবং আমাদের কার্য্যের প্রত্যেকটী আসামঞ্জস্য, অতি দ্রুত অবলোকন করিয়া থাকে। আমাদের বিশ্বাসের নিন্দা করিতে তাঁহাদিগকে কোনই সুযোগ দেওয়া কর্ত্তব্য নহে।2 CCh 165.2