মণ্ডলীর জন্য উপদেশ
“হৃদয়ের ইচ্ছায় যে নিবেদন করে”
লোকদিগকে আশীর্ব্বাদস্বরুপ ধন সম্পত্তি দান করিয়া ঐ একটী মাত্র উপায়ে ঈশ্বর তাঁহার কার্য্য বিস্তৃতির ব্যবস্থা করিয়াছেন। তিনি তাহাদিগকে সূর্য্য কিরণ ও বৃষ্টি দান করেন; তিনি উদ্ভিজজাদি বর্দ্ধিত করেন; ঐশ্বর্য্য লাভার্থ স্বাস্থ ও ক্ষমতা দান করেন। তাঁহার উদার- হস্ত হইতে সর্ব্বপ্রকার আশীর্ব্বাদ আইসে। এই জন্য তিনি প্রতিদানে চাহেন, যেন নরনারিগণ দশমাংশে ও উপহারে — ধন্যবাদের দানে, স্বেচ্ছাদত্তদানে ও দোষার্থক উপহারে ইহার একাংশ কৃতজ্ঞতার চিহ্নরূপে প্রত্যর্পণ করেন।4 CCh 141.4
সমাগম তাম্বু ও মন্দিত নির্ম্মাণ কার্য্যে যিহূদিগণের বদান্যতা এমন এক দানশীলতার দৃষ্টান্ত, যাহার সমকক্ষ খ্রীষ্টীয়ানগণ কোন কালেই হইতে পারেন নাই। মিসরের সুদীর্ঘ দাসত্ব-শৃঙ্খল হইতে সবেমাত্র তাহরা মুক্ত হইয়া আসিয়াছিল; এবং প্রন্তরের মধ্যে ভ্রমণ করিতেছিল; তাহাদের দ্রুত পাদ বিক্ষেপের সময়ে মিস্রীয়- সৈন্যগণ যখন তাহাদের পশ্চাদ্ধাবিত হইয়াছিল, তখন তাহারা তাহাদের হস্ত হইতে প্রাণে বাঁচিয়াছিল; আর এমন সময়ে মশির নিকটে সদাপ্রভুর এই বাক্য উপস্থিত হইল, “তুমি ইস্রায়েল-সন্তানদিগকে আমার নিমিত্তে উপহার সংগ্রহ করিতে বল; হৃদয়ের ইচ্ছায় যে নিবেদন করে, তাহা হইতে তোমরা আমার সেই উপহার গ্রহন করিও।” যাত্রা ২৫:১, ২। CCh 142.1
তাঁহার প্রজাগণের অল্পই ধন সম্পত্তি ছিল; আর উহা বাড়াইবার বিষয়ে কোন স্তোকবাক্য না বলিয়া, বরং ঈশ্বরের নিমিত্ত একটী তাম্বু নির্ম্মাণ করিতে বলা হইয়াছিল। সদাপ্রভু বলিয়াছিলেন, সুতরাং তাঁহার রবে তাহাদের অবধান করিতেই হইবে। তাহারা কিছু হাতে না রাখিয়া, স্বইচ্ছায় সকলই দিয়াছিল; তাহারা তাহাদের অতিরিক্ত ধনসম্পত্তি হইতে কিয়দংশ দিয়াছিল এমন নহে, কিন্তু যথার্থতঃ তাহাদের যাহা ছিল, তাহার অধিকাংশই দিয়াছিল। তাহারা সন্তুষ্টচিত্তে এবং হৃদয়ের ইচ্ছায় সদাপ্রভুকে ইহা দিয়াছিল এবং এতদ্দ্বারা তাহারা তাঁহাকে সুখী করিয়াছিল। এই সকল কি তাঁহারই ছিল না? তাহাদের যাহা কিছু আছে, তাহা কি তিনিই তাহাদিগকে দেন নাই? এক্ষণে তিনি যদি উহা ফেরৎ চাহেন, তবে দাতার নিজের জিনিষ দাতাকে ফিরাইয়া দেওয়া তাহদের কর্ত্তব্য নহে কি? CCh 142.2
কোন পীড়াপীড়িত প্রয়োজন হয় নাই। লোকেরা প্রয়োজনাতিরিক্ত উপহার আনয়ন করিয়াছিল, তাহাতে তাহাদিগকে আর অধিক আনয়ন করিতে নিষেধ করা হইয়াছিল, কারণ যাহা প্রয়োজন ছিল, ইতঃপূর্ব্বেই তদপেক্ষা অধিক আনীত হইয়াছিল। পুনরায় মন্দির নির্ম্মাণার্থে অর্থের নিমিত্ত যখন অনুরোধ আসিল, তখন সকলেই সর্ব্বান্তঃকরণে তাহাতে সাড়া দিল। লোকেরা অনিচ্ছায় দান করে নাই। ঈশ্বরের আরাধনার নিমিত্ত একটী গৃহ নির্ম্মিত হইবে, এই আনন্দে উৎফুল্ল হইয়া তাহারা প্রয়োজনের অতিরিক্ত দান করিয়াছিল। CCh 143.1
ইব্রীয়দের অপেক্ষা অধিকতর জ্যোতি প্রাপ্ত হইয়াছে বলিয়া যে খ্রীষ্টীয়ানেরা গর্ব্ব করিয়া থাকে, তাহারা কি তাহাদের অপেক্ষা কম দান করিবে? শেষকালের নিকটবর্ত্তী হইয়া ইব্রীয়দের অর্দ্ধাংশ অপেক্ষাও কম দান করিয়া খ্রীষ্টীয়ানগণ কি তৃপ্তি লাভ করিতে পারে?5 CCh 143.2
যাহারা স্বর্গীয় দানের অংশী হইয়াছে, তাহাদের স্বেচ্ছাকৃত চেষ্টা ও ইচ্ছাদত্ত দানের উপরে নির্ভর করিয়া প্রভু পৃথিবীতে জ্যোতি ও সত্য দান করিয়াছেন। অপেক্ষাকৃত অল্প লোককেই পুরোহিত কিংবা মিশনারী হিসেবে দেশ বিদেশে ভ্রমণ করিবার জন্য আহ্বান করা হইয়াছে, কিন্তু বিস্তর লোককে তাহাদের অর্থের দ্বারা সত্য বিস্তার কার্য্যে সহযোগিতা রক্ষা করিতে বলা হইয়াছে। CCh 143.3
একজনে বলেন, দেখুন, কার্য্যের জন্য দান করিতে অনবরতই আবেদন আসিতেছে, আর আমি দিতে দিতে একেবারেই বিরক্ত হইয়া পড়িয়াছি। আপনি কি বিরক্ত হন নাই? তাহা হইলে এক্ষণে আমাকে একটী প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিতে দিউনঃ — ঈশ্বরের উদার হস্ত হইতে গ্রহন করিতে আপনি কি ক্লান্ত হইয়াছেন? অতএব তিনি যে পর্য্যন্ত না আশীর্ব্বাদ করিতে ক্ষান্ত হন, তাবৎ তাঁহার দাবির প্রাপ্ত অংশ তাঁহাকে দিতে, আপনার ক্ষান্ত হওয়া কখনই উচিত নহে। আপনি যেন অন্যকে আশীর্ব্বাদ করিতে পারেন, তজজন্য তিনি আপনাকে আশীর্ব্বাদ করেন। আপনি যখন গ্রহণ করিতে ক্লান্ত হন, কেবল তখনই আপনি বলিতে পারেনঃ- আমি বারবার দিতে দিতে ক্লান্ত হইয়া পরিয়াছি। আমরা যাহা কিছু গ্রহণ করি, তাহার একটী অংশ ঈশ্বরের নিজের জন্য বর্জিজত। এই বর্জিজত অংশ যখন তাঁহাকে প্রত্যর্পণ করা হয়, তখন তিনি ঐ অবশিষ্ট অংশে আশীর্ব্বাদ করেন; কিন্তু যখনি উহা বন্ধ কর হয়, শীঘ্রই হউক, আর বিলম্বেই হউক, সমস্ত আংশই তখন অভিশপ্ত হইয়া পড়ে। ঈশ্বরের দাবি মুখ্য, অন্য সকল গৌণ।6 CCh 143.4