মণ্ডলীর জন্য উপদেশ

34/327

কার্য্যকারিগণের কর্ত্তব্য মণ্ডলীর সভ্যদিগকে শিক্ষা দেওয়া

ইহা সুস্পষ্ট যে, প্রচারিত সকল উপদেশই বৃহৎ একদল আত্মত্যাগী কার্য্যকারীর সৃষ্টি হয় নাই। এই বিষয়টি একটী গুরুতর বিষয়। অনন্তকালের জন্য আমাদের ভবিষ্যৎ বড়ই বিপদসঙ্কুল। মণ্ডলীগুলি ক্রমান্বয়ে নিস্তেজ হইয়া যাইতেছে, কারণ দীপ্তি দানার্থে তাহারা তাহাদের তালন্ত ব্যবহার করিতেছে না। তাহদিগকে এমন সযত্নে শিক্ষা দিতে হইবে, যেন উহা গুরুরই শিক্ষা; আর ইহার ফলে, তাহারা সকলেই যেন আপন আপন দীপ্তি কার্য্যতঃ প্রকাশ করিতে পারে। যাহারা লন্দলীর তত্ত্বাবধায়ক তাহাদের কর্ত্তব্য, সুদক্ষ-সভ্য মনোনীত করিয়া লইয়া তাহাদের উপরে দায়িত্বভার অর্পণ করা এবং কি প্রাকারে সর্ব্বোত্তমরূপে কার্য্য করিয়া অপরের আশীর্ব্বাদ স্বরূপ হইতে পারা যায়, সঙ্গে সঙ্গে তাহাও শিক্ষা দেওয়া।13 CCh 130.1

শিল্পী, উকিল, বনিক এবং সর্ব্বপ্রকারে ব্যবসায়িগণ আপন আপন ব্যবসায়ে সুনিপুণ হইবার নিমিত্ত নিজেদের সুশিক্ষিত করিয়া তুলে। খ্রীষ্টের অনুগামীদের কি ইহা অপেক্ষা কম নিপূণ হওয়া উচিত? এবং তাঁহারাই কার্য্যকারী বলিয়া পরিচয় দিয়া, কী পন্থায় বা কী উপায়ে কার্য্য করা যায়, তৎসম্বন্ধে কি অজ্ঞ থাকা উচিত? অনন্ত জীবন লাভের প্রচেষ্টা, প্রত্যেক পার্থিভ ব্যাপারের উর্দ্ধে। আত্মাগণকে যীশুর নিকট আনিবার জন্য মানব স্বভাব সম্বন্ধে পূর্ণ জ্ঞান থাকা ও মানব মন অধ্যয়ন করা আবশ্যক। নরনারিগণকে সত্যের নিগূড়ত্তত্ব কি প্রকারে জানান যাইতে পারে, তাহা সম্যকরূপে অবগত হইবার নিমিত্ত, যথেষ্ট সুচিন্তার ও ব্যাকুল প্রার্থনার প্রয়োজন।14 CCh 130.2

মণ্ডলী গঠিত হইবার পরক্ষণেই পুরোহিতের কর্ত্তব্য, মণ্ডলীর সভ্যগণকে কার্য্যে লাগান। কি ভাবে কার্য্য করিলে কৃতকার্য্য হওয়া যাইবে, তাহা তাহাদিগকে ভাল করিয়া শিখিইয়া দিতে হইবে। প্রচার কার্য্যে অধিক সময় ব্যয় না করিয়া পুরোহিতের কর্ত্তব্য, শিক্ষাদান কার্য্যে অধিক সময় ব্যয় করা। লোকেরা নিজেরা যে সত্যের তত্ত্বজ্ঞান পাইয়াছে, তাহা কি প্রকারে অপরকে দিতে পারে, পুরোহিতের তাহাও তাহাদিগকে শিক্ষা দিতে হইবে। যাঁহারা কার্য্যে অধিকতর অভিজ্ঞতা অজর্জন করিয়াছেন, নূতন সভ্যদিগকে তাহাদের নিকট হইতে পরামর্শ প্রহন করিতে শিক্ষা দিতে হইবে। তাহাদিগকে ইহাও শিক্ষা দিতে হইবে যে, তাহারা যেন পুরোহিতকে ঈশ্বরের স্থানে না বসায়।15 CCh 131.1

আমাদের লোকদিগকে পুরোহিতের উপর নির্ভর না রাখিয়া, ঈশ্বরের উপরে নির্ভর রাখিতে এবং ঈশ্বরের জন্য কার্য্য করিতে শিক্ষা দিলে, তাহাই তাহার পক্ষে সর্ব্বোত্তম সাহায্য হইবে। খ্রীষ্ট যেরূপ কার্য্য করিয়াছিলেন, তাহারা সেরূপ কার্য্য করিতে শিখুক। তাহারা তাঁহার কার্য্যকারিগণের সহিত যোগদান করিয়া তাঁহার জন্য বিশ্বস্তভাবে কার্য্য করুক।16 CCh 131.2

লোকদের মধ্যে কার্য্য করিবার জন্য শিক্ষকগণ নেতাস্বরূপ হউন, অন্যেরা তাঁহাদের সহিত যোগদান করিয়া, তাঁহাদের দৃষ্টান্ত হইতে শিক্ষা লাভ করুক। একটী দৃষ্টান্ত, বহু উপদেশ অপেক্ষা মূল্যবান।17 CCh 131.3

যাহারা মণ্ডলীর আধ্যাত্মিক তত্ত্বাবধায়ক, তাহাদের এমন উপায় ও সঞ্জমাদি উদ্ভাবন করা কর্ত্তব্য, যদ্দারা মণ্ডলীর প্রত্যেকটী সভ্য ঈশ্বরের কার্য্যে কোন ন কোন অংশ গ্রহন করিবার সুযোগ পায়। পূর্ব্বে সর্ব্বসময়ে এরূপ করা হয় নাই। সকেরই তালন্ত যেন সক্রিয় কার্য্যে নিয়োজিত হইতে পারে, তজজন্য পরিকল্পনাগুলি সম্পূর্ণরূপে কার্য্যে পরিণত করা হয় না। আর এই নিমিত্ত কত যে ক্ষতি হইয়াছে, তাহা অতি অল্প লোকেই অনুভব করিয়া থাকে। CCh 131.4

প্রত্যেক মণ্ডলীতেই তালন্ত দেওয়া হইয়াছে, ঐ তালন্ত যথোপযুক্ত রূপে ব্যবহার করিলে, আত্মালাভের কার্যে উহা এক বিশেষ সহায়ক হইবে। সুগঠিত পরিকল্পনানুযায়ী কার্য্যকাররী নিয়োগ করিলে তাহাদিগকে ছোট বড় সকল মণ্ডলীতে পাঠাইতে হইবে, যেন মণ্ডলীর উন্নতির জন্য ও অবিশ্বাসীদের পরিত্রাণের জন্য কি ভাবে পরিশ্রম করিতে হইবে, তাহা তাহারা মণ্ডলীর সভ্যদিগকে শিক্ষা দিতে পারেন। প্রভুর কার্য্যের জন্য শিক্ষা ও বিদ্যা একান্ত আবশ্যক। বর্ত্তমানকালের কার্য্যের জন্য সেই বিজ্ঞতালাভার্থ যে কার্য্যে তাহারা সর্ব্বাপেক্ষা উপযোগী হইবে, সেই কার্য্যোপযোগী গুন লাভাথ সকলেরই হৃদয় ও মন স্থির করা কর্ত্তব্য। CCh 132.1

আমাদের মণ্ডলীগুলির উন্নতিকল্পে এক্ষণে যাহা করা যায়, তাহা ইতেছে, -জ্ঞানী কার্য্যকারিগণের সুন্দর কার্য্য, যদ্দ্বরা মণ্ডলীর মধ্যে তালন্তের উন্নতি সাধিত হয়, -গুরুর কার্য্যে যে তালন্তের উৎকর্ষ সাধন করা যায়। যাহারা মণ্ডলী পরিদর্শন করিয়া বেড়ান, তাঁহাদের কর্ত্তব্য, মণ্ডলীর ভ্রাতা ও ভগ্নীদিগকে মিশনারী কার্য্যের প্রণালীগুলি প্রত্যক্ষভাবে শিক্ষা দেওয়া। যুবক-যুবতিগণের শিক্ষার নিমিত্ত একটী ক্লাশও খেলা যাইতে পারে। যুবকযুবতীদিগকে নিজ নিজ গৃহে, প্রতিবাসিগণের গৃহে ও মণ্ডলীতে কার্য্য করিবার জন্য শিক্ষা দিতে হইবে।18 CCh 132.2

স্বর্গীয় দূতগণ বহুকাল যাবৎ অপেক্ষায় আছেন, যেন মানবীয় প্রতিনিধিগণ বা মণ্ডলীর সভ্যগন, -মহৎ কার্য্য পরিসমাপ্তির জন্য তাঁহাদের সহযোগিতা করেন। তাঁহারা আপনার অপেক্ষায় আছেন। ক্ষেত্র এত প্রশস্ত, পরিকল্পনা এত ব্যাপক যে, পবিত্রীকৃত প্রত্যেকটী হৃদয়ই, ঐশ্বরিক শক্তির অব্যর্থ অস্ত্রের ন্যায় কার্য্যক্ষেত্রে অবতীর্ণ ইবে।19 CCh 132.3

এই উদ্দেশ্য সাধনার্থে একই শক্তিধরের অধীনে খ্রীষ্টীয়ানগণ যদি একগযোকে কার্য্যক্ষেত্রে অবতীর্ণ হইয়া এক ব্যক্তের ন্যায় সম্মুখদিকে অগ্রসর হইত, তবে তাহারা জগৎ আলড়িত করিতে পারিত।20 CCh 133.1

যাহরা জগতের প্রধান প্রধান কার্য্যে নিযুক্ত তাহাদিগের নিকটে, লোকদের গুরু ও নায়কগণের নিকটে, “রাজপথের” আহ্বান ঘোষণা করিতে হইবে। যাঁহারা জনসমাজে গুরু-দায়িত্ব বহন করিতেছেন, তাহদিগকে, -চিকেৎসক, শিক্ষক, উকিল, বিচারক, সরকারী কর্ম্মচারী এবং ব্যবসায়ীদিগকে এক পরিষ্কার ও সুস্পষ্ট বার্ত্তা দান করিতে হইবে। “বস্তুতঃ মনুষ্য যদি সমুদয় জগৎ লাভ করিয়া আপন প্রাণ খোয়ায়, তবে তাহার কি লাভ হইবে? কিংবা মনুষ্য আপন প্রাণের পরিবর্ত্তে কি দিতে পারে?” মার্ক ৮, ৩৬, ৩৭। CCh 133.2

উপেক্ষিত দরিদ্রগণের বিষয় আমরা অনেক কিছু বলিয়া বা লিখিয়া থাকি; উপেক্ষিত ধনিগণের বিষয়েও কি আমাদের কিছুটা মনোযোগ দেওয়া উচিত নহে? এই শ্রেণীর লোকদের বিষয়ে অনেকেই কোন আশা রাখেন না; যাহারা শয়তানের শক্তিতে আপন আপন চক্ষু অন্ধ করিয়াছে বা ঝল্সাইয়া দিয়াছে, যাহারা মনে করে, তাহারা অনন্তজীবন হারাইয়া ফেলিয়াছে, তাহাদের চক্ষু খুলিয়া দিবার জন্য তাঁহারা কিছুই করেন না। এমন সহস্র সহস্র ধনবান লোক কবরে শায়িত আছেন, যাঁহাদিগকে কখনও কোন চেতনা দেওয়া হয় নাই, কারণ তাঁহাদের বাহ্য বিষয় দেখিয়া তাঁহাদের সম্বন্ধে এই বিচার করা হইয়াছে যে, তাঁহাদের মনপরিবর্ত্তন কোন আশা নাই। ধর্ম্ম সম্বন্ধে তাঁহারা যতই উদাসীন বলিয়া মনে হউক না কেন, আমাকে দর্শনে দেখান হইয়াছে যে, এই শ্রেণীর লোকেরা প্রপীড়িত-আত্মাবিষ্ট। সহস্র সহস্র ধনবান ব্যক্তি আধ্যাত্মিক খাদ্যের অভাবে প্রাণ হারাইতেছেন। বহু রাজকর্ম্মচারী এমন জিনিষের অভাব বোধ করিতেছেন, যাহা তাঁহাদের নাই। তাঁহাদের অতি অল্প জনেই উপাসনাগৃহে গমন করেন, কারণ তাঁহারা মনে করেন, উহাতে তাঁহাদের কোনই প্রয়োজন নাই। যে উপদেশ তাঁহারা শ্রবণ করেন, তাহাতে তাঁহাদের প্রাণ স্পর্শ হয় না। তাঁহাদের জন্য আমরা কি কোন ব্যক্তিগত চেষ্টা করিব না? CCh 133.3

কেহ হয়তো জিজ্ঞাসা করিবেন, কেন? আমরা কি তাঁহাদের নিকট ষ্ট্রাক্ট, বই ইত্যাদি লইয়া যাইতে পারি না? অনেকে আছেন, যাহাদের নিকট এই ভাবে যাওয়া যায় না। তাঁহাদের নিকট পহুঁছিতে ব্যক্তিগত কার্য্যের প্রয়োজন। বিশেষ চেতনা না দিয়াই কি তাহাদের বিনষ্ট হইতে দেওয়া কর্ত্তব্য? পুরাকালে এরূপ ছিল না। উচচপদস্থ লোকেরা যেন প্রভু যীশু খ্রীষ্টেতে শান্তি ও বিশ্রাম পান, তজজন্য চেতনা দানার্থ ঈশ্বরের দাসগণ তাহাদের নিকট উচচস্থলীতে প্রেরিত হইতেন। CCh 134.1

স্বর্গের রাজরাজেশ্বর হারাণদিগের বা পাপে পতিত মানবজাতির উদ্ধারের নিমিত্ত আমাদের এই মর্ত্ত্যলোকে অবতীর্ণ হইয়াছেলেন। তিনি কেবল অনুন্নতদিগের মধ্যেই কার্য্য করেন নাই, কিন্তু উচ্চ-সম্মানিত লোকেদের মধ্যেও কার্য্য করিয়াছিলেন। উচচশ্রেণীর যে লোকেরা ঈশ্বরকে জানিতেন না এবং তাঁহার আজ্ঞাসকল পালন করিতেন না, তাহাদের মনের মধ্যে প্রবেশ করিবার জন্য তিনি বুদ্ধি ও কৌশল পূর্ব্বক কার্য্য করিতেন। CCh 134.2

খ্রীষ্টের স্বর্গারোহণের পরেও সেই একই কার্য্য চলিতে লাগিল। কর্ণীলিয়ের প্রতি প্রভুর অনুরাগের বিষয় অধ্যয়নকালে আমরা হৃদয় সহজেই বিগলিত হইয়া যায়। কর্ণীলিয় একজন উচচপদস্থ রাজকর্ম্মচারী ছিলেন; তিনি রমীয় সৈন্যগনের একজন অধ্যাক্ষ ছিলেন; তিনি যে দীপ্তি হয়াছিলেন, সূক্ষ্মাণুসূক্ষ্মরূপে তাহাতে চলিতেন। প্রভু স্বর্গ হইতে একটী বিশেষ বার্ত্তা তাঁহার নিকট প্রেরণ করিলেন এবং অন্য আর একটী বার্ত্তায় তিনি পিতরকে আদেশ দিলেন, যেন পিতর তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিয়া তাঁহাকে দীপ্তি দান করেন। যাঁহারা দীপ্তির অন্বেষণ করেন এবং দীপ্তিলাভের নিমিত্ত প্রার্থনা করেন, তাঁহাদের প্রতি ঈশ্বরের সহানুভূতি ও কোমল প্রেমের বিষয় যত অধিক চিন্তা করি, তত অধিক আমাদের মনে উৎসাহ ও বল প্রাপ্ত হই। CCh 134.3

নিদর্শনে আমাকে দেখান হইয়াছে যে, এই জগতে অনেকই কর্ণীলিয়ের মত, -আর ঈশ্বরের বাসনা এই, যেন তাহারা মণ্ডলীতে যোগদান করে। প্রভুর আজ্ঞাপালনকারী লোকদের প্রতি ইহাদের পূর্ণ সহানুভূতি। কিন্তু এক দৃঢ়-বন্ধন তাহাদিগকে জগতের সহিত বাধিয়া রাখিতেছে। নম্রলোকদের সঙ্গ লইতে তাঁহাদের মনে নৈতিক সাহস নাই। এই সকল আত্মার জন্য আমাদের বিশেষ চেষ্টার প্রয়োজন, ইহাদের নিমিত্ত বিশেষ প্ররিশ্রমের প্রয়োজন, কারণ ইহাদের দায়িত্ব ও প্রলোভন নানাবিধ। CCh 135.1

আমার নিকট যে জ্যোতি প্রকাশিত হইয়াছে, তাহাতে আমি জানি যে, জগতের প্রভাব ও প্রতিপত্তিশালী লোকদিগকে সুস্পষ্টরূপে বলিতে হইবে, -“সদাপ্রভু এই কথা কহেন।” তাঁহারা ধনাধ্যক্ষ। ঈশ্বর তাঁহাদের উপরে গুরুতর দায়িত্ব ভার ন্যস্ত রাখিয়াছেন। তাঁহারা যদি ঈশ্বরের আহ্বান গ্রহন করেন, তবে ঈশ্বর তাঁহাদিগকে তাঁহার কার্য্যে ব্যবহার করিবেন। CCh 135.2

কেহ কেহ উচচশ্রেণীর লোকদের মধ্যে কার্য্য করিবার পক্ষে বিশেষভাবে যোগ্য। তাঁহাদের কর্ত্তব্য, -এই সকল লোকের নিকট কি ভাবে উপস্থিত হইতে হইবে, তাহা জ্ঞাত হইবার নিমিত্ত প্রতিদিন প্রভুর অন্বেষণ করা; ইহাদের সহিত কেবল যে, কখনও কখনও আলাপ করিতে হইবে এমন নহে, কিন্তু তাঁহাদের আত্মার জন্য গভীর অনুরাগ দেখাইয়া ঈশ্বরের বাক্যে যে সত্য আছে, তৎসম্বন্ধে তাঁহারা যেন প্রকৃত জ্ঞান লাভ করিতে পারেন, তজজন্য ব্যক্তিগত চেষ্টা ও জীবিত বিশ্বাস সহকারে অবিরত যত্নবান হইয়া কার্য্য করিতে হইবে।21 CCh 135.3