মণ্ডলীর জন্য উপদেশ
নূতন নূতন স্থানে যাইয়া সাক্ষ্য দান
ঈশ্বরের লোকেরা বড় বড় জনপদে, বহুলোকর সঙ্গে একত্রে বাস করে, ইহা ঈশ্বরের অভিমত নহে। খ্রীষ্টের শিষ্যগণ জগতে তাঁহার প্রতি নিধি স্বরূপ। অন্ধকারের মধ্যে দীপ্তি বিকীর্ণ হইয়া, জগৎকে যেমন আলোকিত করে, খ্রীষ্টের শিষ্যগণ তেমনি সমুদয় দেশ, সহর, নগর ও গ্রামে ছিন্নভিন্ন হইয়া, তাঁহার সত্যের জ্যোতি বিকীর্ণ করিবে, ইহাই ঈশ্বরের অভিপ্রায়। ঈশ্বরের জন্য তাহাদের জন্য তাহাদের মিশনারী হইতে হইবে। বিশ্বাস ও কার্য্য দ্বারা ত্রাণকর্ত্তার সত্বর আগমন সস্বন্ধে সাক্ষ্য দান করিতে হইবে। CCh 115.1
আমাদের মণ্ডলীর অবৈতনক সভ্যগণ, এমন এক বিরাট কার্য্য সাধন করিতে পারেন, যাহা তাঁহারা এখনও আরম্ব করেন নাই বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। কেবল জাগতিক সুখ-সুবিধার জন্য কাহারও নূতন স্থানে যাইয়া বসবাস করা উচিত নহে; কিন্তু যে স্থানে জীবিকারনির্ব্বাহের উপায় আছে, দৃঢ়রূপে সত্যে বদ্ধমূল একটী কিংবা দুইটী পরিবারের সেই স্থানে যাইয়া বসবাস করা এবং মিশনারী হিসাবে কার্য্য করা কর্ত্তব্য। তাহাদের কর্ত্তব্য আত্মার জন্য প্রমোদীপ্ত হইয়া কার্য্যে প্রণোদিল হওয়া, এবং কি ভাবে আত্মা সকলকে সত্যে আনয়ন করা যায়, তাহার উপায় উদ্ভাবন করা। তাঁহার আমাদের প্রকাশিত কাগজপত্র ও পুস্তিকাদি বিতরণ করিতে এবং নিজেদের গৃহে সভাসমিতি করিয়া প্রতিবাসীদিগের সহিত সুপরিচিত ও তাহাদিগকে সভাসমিতিতে আসিতে নিমন্ত্রণ জানাইতে পারেন। এইরূপ সতকার্য্যের দ্বারা তাঁহারা তাঁহাদের জ্যোতি বিকীর্ণ করিতে পারেন। CCh 115.2
কার্য্যকারীদিগের কর্ত্তব্য, ঈশ্বরের সহিত একাকী দাঁড়াইয়া থাকিয়া ক্রন্দন করা, প্রার্থনা করা এবং সহমানবের পরিত্রাণের জন্য পরিশ্রম করা। স্মরণে রাখিবেন, আপনি এক ধাবন ক্ষেত্রে দৌড়াইতেছেন, অক্ষয় অজর মুকুট লাভের জন্য অপ্রাণ চেষ্টা করিতেছেন। ঈশ্বরের প্রিয়ভাজন হওয়া অপেক্ষা, মানবের প্রশংসাভাজন হওয়া অনেকই ভালবাসে; কিন্তু আপনি নম্রভাবে পরিশ্রম করুন। ঈশ্বর যেন আপনার প্রতিবাসীদিগের অন্তঃকরণ স্পর্শ করেন, তজজন্য তাহদের নিমিত্ত ঈশ্বরের নিকটে বিনতি ররুন এবং তাহাদিগকে অনুগ্রহ-সিংহাসনের সম্মুখে বিশ্বসপূর্ব্বক উপস্থিত করুন। এইরূপে কার্য্য-সাধক মিশনাররী কার্য্য সম্পাদন করা যাইতে পারে। পুরোহিতের কিংবা পুস্তক প্রচারকের কথায় যাহারা মনোনিবেশ করিবে না, এমন অনেককে হয়তো লাভ করা যাইবে। এইরূপে যাহারা নূতন নূতন স্থানে কার্য্য করিবে, তাহারা লোকদের সহিত সাক্ষাৎ করিবার উত্তম উত্তম পন্থা শিখিয়া অন্যান্য কার্য্যকারিগণের নিমিত্ত পথ প্রস্তুত করিয়া দিতে পারিবে।16 CCh 116.1
প্রতিবাসীদিগের সহিত সাক্ষাৎ করিয়া তাহাদের আত্মার পরিত্রাণের জন্য ঔৎসুক্য দেখাউন। প্রত্যেক আধ্যাত্মিক শক্তিকে কার্য্যে তৎপর রাখুন। যাহাদের সহিত সাক্ষাৎ হয়, তাহদিগকে বলুন যে, সমস্ত বিষয়ের পরিণাম সন্নিকট। প্রভু যীশু খ্রীষ্ট তাহাদের হৃদয়ের দ্বারা খুলিয়া দিবেন এবং তাহাদের মনে স্থায়ী ছাব অঙ্কিত করিবেন। CCh 116.2
ঈশ্বরের লোকেরা, এমন কি দৈবসিক কার্য্যের মধ্য দিয়া অন্যকে খ্রীষ্টের দিকে পরিচালিত করিতে পারেন। আর ইহা করিবার সময়ে, তাহাদের এই বহুমূল্য আশ্বাসে আশ্বস্ত থাকিতে হইবে যে, ত্রাণকর্ত্তা তাহাদের অতি নিকটেই আছেন। তাহাদের এই চিন্তার প্রয়োজন নাই যে, তাহদের নিজেদের দুর্ব্বল উদ্যমের উপরেই তাহাদের নির্ভর করিতে হইবে। বস্তুতঃ যে সকল দীন ও ক্লিষ্ট আত্মা, অন্ধকারে রহিয়াছে, তাহাদিগকে সতেজ, সবল ও উৎসাহিত করিবার জন্য খ্রীষ্টই তাহাদিগকে উপযুক্ত বাক্য যোগাইয়া দিবেন। মুক্তিকর্ত্তার প্রতিজ্ঞাবাণী পূর্ণ হইতেছে ইহা হৃদয়ঙ্গম করিয়া তাহাদের নিজেদের বিশ্বাস সবল হইবে। তাহারা যে কেবল অন্যের আশীর্ব্বাদ স্বরূপ হয়, এমন নহে, কিন্তু খ্রীষ্টের নিমিত্ত তাহারা যে কার্য্য করে, তাহাতে তাহাদের নিজেদের উপরেই আশীর্ব্বাদ আইসে।17 CCh 116.3
বাইবেলে যেমন আছে, ঠিক্ তেমনি ভাবে বাইবেল খানি লোকদের নিকটে উপস্থিত করিতে পারিলে, একটি মহৎ কার্য্য সাধিত হইবে। প্রত্যেক ব্যক্তির দ্বারে ঈশ্বরের বাক্য লইয়া যাউন, প্রত্যেক ব্যক্তির বিবেকের উপরে ইহার সরল উক্তিগুলি বদ্ধমূল করিয়া দিউন সকলের নিকটে ত্রানকর্ত্তার এই আদেশটী পুনরাবৃত্তি করুনঃ “শাস্ত্র অনুসন্ধান কর।” যোহন ৫:৩৯। ঐশ্বরিক জ্যোতি লাভার্থ বাইবেল খানি যেমন আছে, ঠিক্ সেইভাবে গ্রহণ করিতে এবং পরে যখন জ্যোতি প্রকাশিত হয়, তখন বহুমূল্য প্রত্যেকটী রশ্মি সানন্দে গ্রহন করিয়া নির্ভীক চিত্তে ইহার ফল ভোগ করিতে চেতনা দান করুন।18 CCh 117.1
বাইবেল শিক্ষা দিবার এবং ট্রাক্ট ও পুস্তিকাদি বিতরন করিবার জন্য আমাদের মণ্ডলীর সভ্যগণের আরও অধিক মাত্রায় গৃহে গৃহে যাওয়া প্রয়োজন। নিঃস্বার্থ ভাবে সত্য প্রচার করা এবং অর্থ দিয়া প্রভুর কার্য্য রক্ষা করা, লোকেরা যখন একটী সুযোগ বলিয়া মনে করিবে, কেবল তখনই খ্রীষ্টীয় চরিত্র সম্পূর্ণ ও যথোপযুক্তরূপে গঠিত হইবে। আমাদের আত্মা ঈশ্বরের প্রেমে পরিচালিত করিয়া ও যতক্ষণ দিনমান আছে, ততক্ষণ কার্য্যে রত থাকিয়া এবং পরে যে কোন কর্ত্তব্য আইসুক না কেন, তাহারা জন্য প্রভু-দত্ত অর্থ ব্যয় করিয়া সমস্ত জল প্রবাহের ধারে বীজ বপন করিতে হইবে। আমাদের হস্ত যে কোন কার্য্য করিতে পায়, তাহা বিশ্বস্ত ভাবে করিতে হইবে। সমস্ত জলপ্রবাহের ধারে বীজ বপন করিয়া আমরা হৃদয়ে এই ধারণা পোষণ করিতে পারি যে, “যে ব্যক্তি আশীর্ব্বাদের সহিত বীজ বুনে, সে আশীর্ব্বাদের সহিত শস্যও কাতিবে।” ২ করিন্থীয় ৯:৬।19 CCh 117.2