মণ্ডলীর জন্য উপদেশ
“বিশ্রামবারে সৎকর্ম্ম করা বিধেয়”
গৃহে হউক, কিংবা মণ্ডলীতে হউক, এই উভয় স্থানেই সেবাকার্য্য করিতে হইবে। ঐহিক কাজকর্ম্মের জন্য যিনি আমাদিগকে ছয় দিন দিয়াছেন, তিনিই সপ্তমদিনকে আশীর্ব্বাদ করিয়াছেন ও পবিত্র করিয়াছেন এবং তাঁহার নিজের জন্য এই দিনকে পৃথক্ করিয়াছেন। তাঁহার সেবাকার্য্যে যাহারা নিজেদিগকে উৎসর্গ করে, এই দিনে তিনি তাঁহাদিগকে বিশেষ ভাবে আশীর্ব্বাদ করিয়া থাকেন। CCh 97.3
সমুদয় স্বর্গই শাব্বাথ পালন করিতেছে, কিন্তু অনাবিষ্ট ও নিষ্ক্রিয় ভাবে নহে। এই দিনে আত্মার প্রত্যেকটী জীবনীশক্তি জাগ্রৎ হওয়া উচিত, কারণ আমরা কি ঈশ্বরের সহিত এবং আমদের ত্রাণকর্ত্তা খ্রীষ্টের সহিত সাক্ষাৎ করিবার নিমিত্ত সমবেত হই না? বিশ্বাসে আমরা তাঁহাকে দেখিতে পারি। তিনি প্রত্যেককেই সতেজ করিবার ও আশীর্ব্বাদ দান করিবার জন্য ইচ্ছুক।”11 CCh 98.1
ঐশ্বরিক দয়া, পীড়িত ও ক্লেশাপন্নদিগের সেবা শুশ্রুষা করিবার আদেশ দিয়াছেন, এজন্য তাহাদিগকে আরাম দিবার নিমিত্ত আবশ্যক বিধায় বিশ্রামবারে কার্য্য করিলে, তাহাতে বিশ্রামবার লঙ্ঘন করা হয় না। কিন্তু এই দিনে সমস্ত অপ্রয়োজনীয় কার্য্য পরিহার করিতে হইবে। আয়োজন দিনে যাহা করিতে পারা যাইত, এমন ছোট ছোট কার্য্যগুলি অনেকে অসাবধানতা-বশতঃ বিশ্রামবারে আরম্ভ পর্য্যন্ত ফেলিয়া রাখে। কিন্তু এইরূপ করা কোন মতেই উচিত নহে। পবিত্র সময়ের আরম্ভ পর্য্যন্ত যে কার্য্য ফেলিয়া রাখা হয়, বিশ্রামবার অতীত না হওয়া পর্য্যন্ত তাহা স্থগিত রাখা বিধেয়।12 CCh 98.2
বিশ্রামবারে রান্না পরিহার করিতে হইবে বলিয়া ঠাণ্ডা খাদ্য ভক্ষণের আবশ্যকতা নাই। পূর্ব্বদিনে যে সকল খাদ্য প্রস্তুত করা হইয়াছে, শীতকালে তাহা গরম করিয়া লওয়া যাইতে পারে। খাদ্যবস্তুগুলি সাদাসিধে হইলেও মুখরোচক ও চিত্তাকর্ষক হওয়া বিধেয়। প্রত্যেক দিন যেরূপ খাদ্য খাওয়া না হয়, বিশ্রামবারে সেইরূপ কোন নূতন ধরণের খাদ্যের আয়োজন করিবেন, যেন উহা একটি ভোজ বলিয়া মনে হয়। CCh 98.3
আজ্ঞাপালনকারীদিগকে যে আশীর্ব্বাদ দান করিবার প্রতিজ্ঞা করা হইয়াছে, আমরা যদি সেই আশীর্ব্বাদ পাইবার আকাঙ্ক্ষা করি, তাহা হইলে বিশ্রামদিন আমাদের আরও সূক্ষ্মরূপে পালন করিতে হইবে। আমার মনে হয়, বিশ্রামবারে আমরা প্রায়ই এদিক ওদিক যাতায়াত করি, যখন ইহা না করিয়াও পারা যায়। বিশ্রামবার পালন সম্পর্কে সদাপ্রভু যে জ্যোতি দিয়াছেন, তদনুযায়ী নৌকায় বা ষ্টীমারে অথবা গাড়ীতে যাতায়াতের বিষয়ে আমাদের আরও সতর্ক হওয়া বিধেয়। এই বিসয়ে আমাদের সন্তানসন্ততি ও যুবকযুবতিগণের সমক্ষে আমাদের ঠিক্ দৃষ্টান্ত দেখান কর্ত্তব্য। মণ্ডলীর সাহায্যের জন্য অথবা মণ্ডলীর লোকদিগকে ঈশ্বরের অভিলষিত বার্ত্তা জানাইবার জন্য, আমাদের যদি উপাসনা মন্দিরে যাইবার প্রয়োজন হয়, তবে হয়তো বিশ্রামবারে যাতায়াত করা আবশ্যক হইতে পারে; কিন্তু এক্ষেত্রে যতটা সম্ভব অন্যদিনে টিকিট কিনিয়া রাখা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় বন্দোবস্ত করা বিধেয়। কথাও যাইতে হইলে, প্রত্যেকটী সম্ভাব্য উপায়ে চেষ্টা করিতে হইবে, যেন শাব্বাথদিনের পূর্ব্বে নির্দ্দিষ্ট স্থানে পৌঁছান যায়। CCh 98.4
অগত্যা বাধ্য হইয়া বিশ্রামবারে যাতায়াত করিতে হইলে, যাহারা ঐহিক বিষয়ের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করিতে পারে, সেইরূপ লোকদের সঙ্গ পরিত্যাগ করিতে চেষ্টা করিতে হইবে। আমাদের মন ঈশ্বরে নিবদ্ধ রাখিয়া তাঁহার সহিত আলাপ করিতে বা তাঁহার ধ্যান চিন্তা করিতে হইবে। সুযোগ হইলেই, অন্যের কাছে সত্য প্রচার করিতে হইবে। যাহারা ক্লেশাপন্ন, তাহাদের ক্লেশ দূরীকরণের ও যাহারা অভাবগ্রস্ত তাহাদের সাহায্যের জন্য আমাদের সর্ব্বদা প্রস্তুত থাকিতে হইবে। আর ইরূপ ক্ষেত্রে ঈশ্বর চাহেন যেন, আমরা ইশরদত্ত জ্ঞান ও বৃদ্ধির উপযুক্ত সদ্ব্যবহার করি। কিন্তু বিশ্রাম বারে ব্যবসা-সংক্রান্ত কথাবার্ত্তা বলা কিংবা সাধারণ পার্থিব বিষয়ের আলাপ-আলোচনা করা কর্ত্ত্যব্য নহে। বিশ্রামবারের সমাদর করিয়া আমরা যেন সর্ব্বসময়ে ও সর্ব্বস্থানে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি প্রদর্শ্ন করি, ইহাই ঈশ্বর আমাদের নিকটে প্রত্যাশা করেন।13 CCh 99.1