মণ্ডলীর জন্য উপদেশ
কি প্রকারে অভাবগ্রস্তের সাহায্য করা যায়
অভাবগ্রস্তদিগকে কি কি উপায়ে সাহায্য করিতে পারা যায়, তাহা অতি সতর্কতার সহিত ও প্রার্থনা পূর্ব্বক চিন্তা করিয়া দেখিতে হইবে । এই বিষয়ে আমাদের ঈশ্বরের নিকট হইতে জ্ঞান চাহিয়া লইতে হইবে, কারণ তিনি যে জীবগণের সৃষ্টি করিয়াছেন, তাহাদের যত্ন কি ভাবে লইতে হইবে, অদূরদর্শী মর্ত্ত্য মানব অপেক্ষা, তিনি তাহা অধিকতর ভালরুপে জানেন । অনেকে নির্ব্বিচারে প্রত্যেক সাহায্য প্রার্থীকেই সাহায্য করিয়া থাকেন । এই বিষয় তাহারা ভুল করিয়া থাকেন । অভাবগ্রস্তদিকের সাহায্য করিতে চেষ্টা করিতে যাইয়া তাহাদিগকে ঠিক্ মত সাহায্য করণের বিষয়ে সবিশেষ সতর্ক থাকিতে হইবে । এমন অনেকে আছে, যাহাদিগকে একবার সাহায্য করিলে, বরাবরই সাহায্য-প্রার্থী হইয়া থাকে । যতদিন পর প্রত্যাশী থাকা যায়, তত দিন তাহারা পর প্রত্যাশীই থাকে । এইরূপ লোকদিগের পিছে অযথা সময় ব্যয় করিলে, অযথা তাহাদের আবেদন মনোযোগ করিলে, তাহাদিগকে অলস, নিঃসহায়, অমিতাচারী ও অসংযমী করিয়া তোলা হয় । CCh 239.1
দরিদ্রদিগকে দান করিবার সময়ে, চিন্তা করিতে হইবে— “আমি কি অমিতব্যয়িতার প্রশ্রয় দিতেছি ? আমি কি তাহাদের সাহায্য করিতেছি, না, ক্ষতি করিতেছি ?” যে ব্যক্তি নিজের জীবিকাজর্জন করিতে পারে, তাহার অন্যের উপরে নির্ভরশীল হওয়ার অধিকার নাই । CCh 239.2
যে সকল দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত বিশ্বাসবাটীর অন্তরঙ্গ, প্রথমতঃ তাহাদেরই তত্ত্বাবধানের ভার বিচক্ষণ ও পরিমাণদর্শী, ঈশ্বর-ভীত নর-নারিগণের উপরে ন্যস্ত করা আবশ্যক । কি করিতে হইবে, ইহাঁরাই মণ্ডলীকে ও মহাসভাকে তাহা জানাইবেন ।8 CCh 239.3
এই বার্তা যাহারা গ্রহণ করিবে, তাহাদের প্রত্যেকটী দরিদ্র পরিবারের ভার আমাদের ভ্রাতৃগণ বহন করিবেন, ঈশ্বর ইহা চাহেন না । যদি তাহাদের ইহা করিতেই হয়, তবে পুরোহিতের কর্ত্তব্য নূতন ক্ষেত্রের কার্য্য বন্ধ করা, কারণ ইহা না করিলে ধনভাণ্ডার শূন্য হইয়া যাইবে । মিতব্যয়িতার ও শ্রমশীলতার অভাবে অনেকে দরিদ্র হইয়া পড়ে ; কারণ টাকা পয়সা ঠিক্ কি ভাবে ব্যবহার করতে হয়, তাহা তাহারা জানে না । এইরূপ লোকদের সাহায্য করিলে, তাহাদের ক্ষতি হইয়া থাকে । কেহ কেহ সর্ব্বসময়েই দরিদ্র থাকিবে । সর্ব্বোত্তম সুযোগ সুবিধা পাইলেও তাহাদের অবস্থার উন্নতি হইবে না । কারণ তাহারা বে-হিসাবী ; অল্প হউক, কিংবা অধিক হউক, যাহা তাহাদের হাতে আসিবে, তাহার সকলই তাহারা খরচ করিয়া ফেলিবে । CCh 240.1
এইরূপ লোকেরা যখন সত্য গ্রহণ করে, তখন তাহারা মনে করে যে, তাহাদের সাহায্য করা ধনবান ভ্রাতৃগণের অবশ্য কর্ত্তব্য ; আর যদি তাহাদের এই আশা পূর্ণ না হয়, তবে তাহারা মণ্ডলীর দোষারোপ করিয়া থাকে ও মণ্ডলীর সভ্যগণের সম্বন্ধে বলিয়া থাকে যে, তাঁহারা তাঁহাদের বিশ্বাসনুযায়ী জীবন যাপন করেন না । এই ক্ষেত্রে কে কষ্টভোগ করিবে ? এই সকল বৃহৎ দরিদ্র পরিবারের তত্ত্বাবধানের জন্য ঈশ্বরের কার্য্য কি ক্রমশঃ ধ্বংস হইইয়া যাইবে ? বিভিন্ন স্থানের ধনভাণ্ডার কি শূন্য হইয়া যাইবে ? না, মাতা পিটাগণেরই কষ্টভোগ করিতে হইবে । বিশ্রামবার পালন করিতে আরম্ভ করিবার পূর্ব্বে তাহাদের যতটা কষ্টভোগ করিতে হইয়াছে, বিশ্রামবার পালন করিতে আরম্ভ করিয়া সাধারণতঃ তদপেক্ষা অধিকতর কষ্টভোগ করিতে হইবে না । CCh 240.2
প্রত্যেক মণ্ডলীর পরিসীমার মধ্যে ঈশ্বর দরিদ্রগণকে থাকিতে দিয়াছেন । তাহারা সর্ব্বসময়েই আমাদের মধ্যে থাকিবে, আর তাহাদের তত্ত্বাবধানের ভার সদাপ্রভু প্রত্যেক সভ্যের উপরে ন্যস্ত রাখিয়াছেন । আমাদের উপরে অর্পিত এই দায়িত্বভার, আমাদের আবার অন্যের উপরে স্থাপন করা কর্ত্তব্য নহে । খ্রীষ্ট যদি আমাদের স্থানে হইতেন, তাহা হইলে তিনি যেমন প্রত্যেকের প্রতি প্রেম ও সহানুভূতি দেখাইতেন, তেমনি আমাদের পরিসীমার মধ্যে যাহারা আছে, তাহাদের প্রতি তদ্রুপ প্রেম ও সহানুভূতি প্রদর্শন করা আমাদের একান্ত কর্ত্তব্য । খ্রীষ্টের পক্ষে কার্য্য করিবার নিমিত্ত আমরা এই প্রকারে সুশিক্ষিত হইবে পারি ?10 CCh 240.3