পিতৃকুলপতিগণ ও ভাববাদীগণ

8/333

শাব্বাথের আশীর্বাদ

ছয় দিনে মহান সৃষ্টির কাজ বাস্তবায়িত হল। “আর ঈশ্বর সপ্তম দিনে নিজ কৃত কাৰ্য্য হইতে ক্ষান্ত হইলেন, সেই সপ্তম দিনে নিজের কৃত সমস্ত কার্য্য হইতে বিশ্রাম করিলেন। আর ঈশ্বর সেই সপ্তম দিনকে আশীর্বাদ করিয়া পবিত্র করিলেন, কেননা সেই দিনে ঈশ্বর সৃষ্ট ও কৃত সমস্ত কার্য্য হইতে বিশ্রাম করিলেন।” সমস্ত কিছু নিখুঁৎ ছিল, যা স্বৰ্গীয় স্রষ্টারই উপযুক্ত; এবং তিনি বিশ্রাম নিলেন, ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত বলে নয়, কিন্তু তার প্রজ্ঞার ও সদাশয়তার ফলাফল দেখে পূর্ণ সন্তুষ্ট চিত্তে। PPBeng 20.3

সপ্তম দিনে বিশ্রামের পর, ঈশ্বর ইহাকে বিশ্রামের দিনরূপে পৃথক করলেন । স্রষ্টার দৃষ্টান্ত অনুকরণ করে, মানুষকেও ঐ পবিত্র দিনে বিশ্রাম নেবার কথা, যেন সে ঈশ্বরের সৃষ্টির বিষয়ে জ্ঞান লাভ করতে পারে, যেন তার হৃদয় প্রভুর প্রতি প্রেম ও শ্রদ্ধায় পূর্ণ হয়ে উঠে । PPBeng 20.4

শাব্বাথ সমস্ত মানব পরিবারের প্রতি ন্যাস্ত করা হয়েছিল, ইহার প্রতিপালনের উদ্দেশ্য ছিল যেন কৃতজ্ঞ চিত্তে ঈশ্বরকে তারা তাদের স্রষ্টা এবং প্রকৃত সমস্ত কর্তৃত্বের অধিকারী বলে স্বীকার করে নেয়। তারা ছিল তাঁর হাতের তৈরী, এবং তাঁর কর্তৃত্বাধীন প্রজা । PPBeng 20.5

ঈশ্বর দেখেছিলেন যে শাব্বাথ মানুষের জন্য অত্যন্ত জরুরী ছিল, এমন কি স্বর্গেও ইহা জরুরী ছিল। সাত দিনের মধ্যে একদিন সে তাহার নিজের স্বার্থ, ভুলে যাওয়া উচিত। একটি শাব্বাথ তার প্রয়োজন ছিল যা তাকে ঈশ্বর সম্বন্ধে স্মরণ করিয়ে দেবে এবং যা কিছু সে উপভোগ করেছে তা ঈশ্বরের হাত থেকে এসেছে এই চিন্তা করে তার মধ্যে কৃতজ্ঞতা জাগিয়ে তুলবে । PPBeng 20.6

ঈশ্বর এই পরিকল্পনা করলেন যে শাব্বাথ মানুষের মনকে তাঁর সৃষ্ট কাজের দিকে ধাবিত করবে। যে সৌন্দর্য্য পৃথিবীকে মন্ডিত করে থাকে তা হল ঈশ্বরের প্রেমের নিদর্শন। চিরস্থায়ী পর্বত, সুউচ্চ বৃক্ষরাজী, ফুটন্ত কলি ও কমনীয় ফুল, সমস্ত কিছুই আমাদের নিকট ঈশ্বরের বিষয়ে বলে। শাব্বাথ, তাঁর প্রতি নির্দেশ করে যিনি তাদের সকলেরই স্রষ্টা এবং বলে যেন মানুষ প্রকৃতি পুস্তকটি খোলে ও এর মধ্যে নিহিত স্রষ্টার জ্ঞান, ক্ষমতা এবং প্রেমের অনুসন্ধান করে। PPBeng 21.1

আমাদের প্রথম পিতা-মাতা, যদিও নির্দোষ ও নিষ্কলঙ্করূপে সৃষ্ট হয়েছিলেন, তবুও অন্যায় কাজে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা বহির্ভূত ছিলেন না। ঈশ্বর তাদের স্বাধীন নৈতিক প্রতিনিধিরূপে সৃষ্টি করেছিলেন যাদের ঈশ্বরের প্রতি বাধ্য থাকার বা না থাকার স্বাধীনতা ছিল। তাই তাদের চিরকালের জন্য নিরাপত্তা দানের আগে তাদের বিশ্বস্ততার পরীক্ষার প্রয়োজন ছিল। মানুষের অস্তিত্বের আরম্ভেই তার আত্ম-অসংযতিকে রোধ করার জন্য একটি বাধা সৃষ্টি করা হলো, শয়তানের পতনের মূলে ছিল এই মারাত্মক আত্ম-অসংযতি । আমাদের প্রথম পিতামাতার বাধ্যতা, বিশ্বাস, এবং প্রেমের পরীক্ষার জন্য ছিল জ্ঞান-দায়ক বৃক্ষ। তাদের মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে এই গাছের ফল খেতে নিষেধ করা হয়েছিল। তারা শয়তানের প্রলোভনে পতিত হওয়ার সম্ভাবনায় উন্মুক্ত ছিলেন; কিন্তু যদি তারা পরীক্ষার উপর জয়লাভ করতেন তাহলে তাদেরকে তার ক্ষমতার নাগালের বাইরে স্থাপন করা হত, এবং ঈশ্বরের চিরস্থায়ী আশীর্বাদ উপভোগ করতেন। PPBeng 21.2