পিতৃকুলপতিগণ ও ভাববাদীগণ
রিবিকা বিশ্বাস করেন যে ঈশ্বর কথা বলেছেন
রিবিকার সহিত আলোচনা করা হল যে তিনি কি তার পিতার গৃহ ছেড়ে অব্রাহামের পুত্রকে বিয়ে করার জন্য এত দূর যাবেন। তিনি বিশ্বাস করলেন যে ঈশ্বর তাকে ইসহাকের স্ত্রী হওয়ার জন্য মনোনীত করেছেন, তাই তিনি বললেন, “যাইব”। PPBeng 113.4
ভৃত্যটি তার কর্তার আনন্দের কথা স্মরণ করে ফিরে যাবার জন্য অধৈর্য্য হয়ে উঠিলেন এবং ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তারা বাড়ীর দিকে যাত্রা করলেন। অব্রাহাম বেরসেবাতে বাস করতেন, এবং ইস্হাক যিনি কাছেই মেষ চরাচ্ছিলেন, তার পিতার তাঁবুতে ফিরে এসে হারোণ হতে বাণী বাহকের প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষা করছিলেন। “ইস্হাক সন্ধ্যাকালে ধ্যান করিতে ক্ষেত্রে গিয়াছিলেন, পরে চক্ষু তুলিয়া চাহিলেন, আর দেখ, উষ্ট্র আসিতেছে। আর রিবিকা চক্ষু তুলিয়া যখন ইস্হাককে দেখিলেন, তখন উষ্ট্র হইতে নামিয়া তিনি দাসকে জিজ্ঞাসা করিলেন, আমাদের সংগে সাক্ষাৎ করিতে ক্ষেত্রের মধ্য দিয়া আসিতেছেন, ঐ পুরুষ কে? দাস বলিলেন, উনি আমার কর্তা। তখন রিবিকা আবরক লইয়া আপনাকে আচ্ছাদন করিলেন। পরে সেই দাস ইস্হাককে আপনার কৃত সমস্ত কাৰ্ম্মের বিবরণ কহিলেন। তখন ইস্হাক রিবিকাকে গ্রহণ করিয়া সারা মাতার তাঁবুতে লইয়া গিয়া তাঁহাকে বিবাহ করিলেন, এবং তাঁহাকে প্রেম করিলেন। তাহাতে ইস্হাক মাতৃ-বিয়োগের শোক হইতে সান্ত্বনা পাইলেন।” PPBeng 113.5
যারা ঈশ্বরকে ভয় করে এবং যারা তাঁকে ভয় করে না তাদের মধ্যে মিস্ত্র-বিয়ের ফল কয়িনের সময় হতে তার সমসাময়িক কাল পর্য্যন্ত অব্রাহাম লক্ষ্য করেছেন। হাগারের সহিত তার বিয়ে এবং ইশ্মায়েলের ও লোটের বৈবাহিক সম্পর্ক সমূহ তার সামনে ছিল। ইশ্মায়েলের মার পৌত্তলিক আত্মীয় স্বজন ও তার পৌত্তলিক স্ত্রীদের সহিত তার সম্পর্কের প্রভাব তার উপর তার পিতার প্রভাবকে ব্যর্থ করেছিল। হাগারের ও হাগারের দ্বারা মনোনীত ইশ্মায়েলের স্ত্রীদের ঈর্ষা তার পরিবারকে এমন এক বেষ্টনীতে আবদ্ধ করেছিল যা অব্রাহাম ভাঙ্গার জন্য বৃথাই চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। PPBeng 114.1
অব্রাহামের প্রাথমিক শিক্ষা ইশ্মায়েলের উপর নিষ্ফল হয় নি, কিন্তু তার স্ত্রীদের প্রভাবের ফলে তার পরিবারে পৌত্তলিকতা শুরু হয়। পিতা থেকে দূরে থাকা, আর ঈশ্বরের প্রতি প্রেম ও ভয়হীন ঘরের বিবাদ ও হিংসা ইশ্মায়েলকে মরুভূমির-সর্দারের বন্য ও লুণ্ঠনকারী জীবন বেছে নিতে বাধ্য করে। “তাহার হস্ত সকলের বিরুদ্ধ ও সকলের হস্ত তাহার বিরুদ্ধ হইবে।” আদিপুস্তক ১৬:১২। জীবনের প্রান্তে এসে তিনি অনুতাপ করে তার পিতার ঈশ্বরের কাছে ফিরে এসেছিলেন, কিন্তু তার বংশধরদের যে চরিত্র সৃষ্টি করা হয়েছিল, তা তাদের মধ্যে রয়ে গেল। যে শক্তিশালী জাতি তার মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছিল তারা ছিল এক অশান্ত পৌত্তলিক জাতি । PPBeng 114.2
লোটের স্ত্রী ছিলেন একজন স্বার্থপর, অধার্মিক মহিলা যার প্রভাবের ফলেই তার স্বামী অব্রাহামের নিকট হতে পৃথক হয়েছিলেন । তার জন্য না হলে লোট সদোমে বাস করতেন না। বাল্যকালে বিশ্বস্তভাবে অব্রাহামের নিকট হতে প্রাপ্ত শিক্ষা ব্যতিরেকে, তার স্ত্রীও ঐ ভ্রষ্ট শহরের প্রভাব লোটকে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস হারাতে পরিচালিত করতে পারত । PPBeng 114.3
যে ঈশ্বরকে ভয় করে সে, যে ঈশ্বরকে ভয় করে না তার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করলে অবশ্যই বিপদের সম্ভাবনা রয়েছে। “এক পরামর্শ না হইলে দুই ব্যক্তি কি এক সঙ্গে চলে ?” আমোষ ৩:৩। বিবাহের আনন্দ ও উন্নতি দুই পক্ষের ঐক্যের মধ্যে নিহীত; কিন্তু বিশ্বাসীর ও অবিশ্বাসী জাতির মধ্যে সৌন্দর্য্য বোধ, ঝোঁক ও লক্ষ্যের প্রচন্ড পার্থক্য রয়েছে। একজন যত খাঁটি ও সত্য নীতির অনুসারীই হোক না কেন, একজন অবিশ্বাসী সাথীর প্রভাব তাকে ঈশ্বরের নিকট হতে দূরে সরিয়ে নেয়ার প্রবণতা রাখবে । PPBeng 115.1
ধর্মান্তরিত হওয়ার আগে যে বিয়ে করেছে ধর্মান্তরিত হওয়ার পর তার দায়িত্ব আরো অধিক হয় যেন সে স্ত্রীর প্রতি বিশ্বস্ত থাকে, তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস যত ভিন্নই হোক না কেন । তথাপি পৃথিবীর সকল সম্পর্কের ঊর্ধ্বে হল ঈশ্বরের দাবী যদিও এর ফলে কষ্ট ও অত্যাচারের মোকাবেলা করতে হয়। প্রেম ও বিশ্বস্ততার আত্মা অবিশ্বাসী সাথীকে জয় করে নিতে পারে। কিন্তু অবিশ্বাসীদের সহিত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বাইবেলে নিষেধ করা হয়েছে। “তোমরা অবিশ্বাসীদের সহিত অসমভাবে যোঁয়ালীতে বদ্ধ হইও না।” ২ করিন্থীয় ৬:১৪ । PPBeng 115.2