পিতৃকুলপতিগণ ও ভাববাদীগণ
৯—আক্ষরিক সপ্তাহের আরম্ভ
বিশ্রামদিনের মত, সপ্তাহও সৃষ্টির সময় হতেই শুরু হয়, এবং বাইবেলের ইতিহাসে রক্ষা করা হয়। ঈশ্বর নিজেই প্রথম সপ্তাহকে পরিমাপ করে নির্ধারণ করে দেন। এর মধ্যে সাতটি আক্ষরিক দিন রয়েছে। সৃষ্টির কাজে ছয় দিনের প্রয়োজন হয়। সপ্তম দিন ঈশ্বর বিশ্রাম করলেন, আর এটাকে মানুষের জন্য একটি বিশ্রামের দিনরূপে নির্ধারিত করেন। “কেননা সদাপ্রভু আকাশমন্ডল ও পৃথিবী, সমুদ্র ও সেই সকলের মধ্যবর্তী সমস্ত বস্তু ছয় দিনে নির্মাণ করিয়া সপ্তম দিনে বিশ্রাম করিলেন; এই জন্য সদাপ্রভু বিশ্রামদিনকে আশীর্বাদ করিলেন, ও পবিত্র করিলেন।” যাত্রা পুস্তক ২০:৮-১১ পদ । PPBeng 67.1
যদি আমরা সৃষ্টির দিনগুলি আক্ষরিক অর্থে বুঝতে সক্ষম হই তবে এ কারণটি খুবই সুন্দর ও শক্তিশালী হয় । সপ্তাহের প্রথম ছয় দিন মানুষকে কাজ করার জন্য দেয়া হয়। কিন্তু সপ্তম দিনে স্রষ্টার বিশ্রামের নামে মানুষ পরিশ্রম হতে বিরত হবে। PPBeng 67.2
প্রথম ছয় দিনের ঘটনা সমূহের জন্য হাজার হাজার বৎসরের প্রয়োজন ছিল এই ধারণা খুবই প্রতারণা মূলক আর তাই খুব বিপজ্জনক। এর প্রকৃত চরিত্র এমন ভাবে লুকানো যে যারা ঈশ্বরের বাক্যে বিশ্বাস করেন বলে স্বীকার করেন তারাও এটা বিশ্বাস করেন ও শিক্ষা দেন। “আকাশমন্ডল নির্মিত হইল সদাপ্রভুর বাক্যে, তাহার সমস্ত বাহিনী তাঁহার মুখের শ্বাসে।” গীতসংহিতা ৩৩৪৬। বাইবেল পৃথিবী অমূর্ত অবস্থা হতে বিবর্ধন হতে হাজার হাজার বৎসর লেগেছে বলে স্বীকার করে না। প্রতি পবিত্র বাক্যে বলে যে সৃষ্টির প্রতি ক্রমিক দিবস এক সন্ধ্যা ও এক প্রাতঃকাল দ্বারা আবদ্ধ, পরবর্তী সমস্ত দিনগুলোর মতই। PPBeng 67.3
ভূতত্ববিদরা দাবী করেন যে মোশির লিখনীতে যা শিক্ষা দেয়া হয়েছে পৃথিবী তার থেকে অনেক অনেক বেশী পুরাতন বলে মনে হয়। বর্তমান সময়ে যে ধরণের পাওয়া যায় তার থেকে অনেক বড় বড় মানুষ ও প্রাণীর হাড় আবিষ্কার করা হয়েছে, আর এ থেকে ধারণা করা হয় যে সৃষ্টির তত্ত্বে যখন থেকে বলা হচ্ছে তারও অনেক আগে থেকেই পৃথিবীতে মানুষ বসবাস করত। এই ধরণের যুক্তি অনেক পবিত্র পুস্তকে বিশ্বাসীদের এই ধারণা গ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করেছে যে সৃষ্টির দিনগুলি ছিল অপরিসীম দীর্ঘ। PPBeng 67.4
কিন্তু পবিত্র-বাক্যে প্রদত্ত ইতিহাস ছাড়া ভূতত্ববিদরা কোন কিছুই প্রমাণ করতে সক্ষম নন। পৃথিবীতে যে ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গিয়েছে তা এমন এক এক অবস্থার প্রমাণ করে যে অবস্থা বর্তমান অবস্থা থেকে অনেকাংশে ভিন্নরূপ ছিল, কিন্তু যে সময় সেই অবস্থা ছিল তা শুধুমাত্র ঈশ্বরের ঘটনা থেকে জানতে পারা যায়। ঈশ্বরের পুস্তক মহা-প্লাবনের ইতিহাস বর্ণনার সময় যে অবস্থার ব্যাখ্যা দান করেছে তা শুধুমাত্র ভূতাত্ত্বিক একাকী পরিমাপ করতে পারত না । নোহের কালে মানুষ, প্রাণী, ও গাছ বর্তমান কালের থেকে অনেক গুণ বেশী বড় ছিল, যা কবরস্থ হয়ে পড়ে এবং এই ভাবে পরবর্তী কালের প্রজন্মের জন্য সাক্ষী হয়ে থাকে যে মহা প্লাবনের আগের লোকেরা বন্যা দ্বারা ধ্বংস হয়েছিল । ঈশ্বর পরিকল্পনা করেছিলেন যে ঐ সমস্ত বস্তুর আবিষ্কার দ্বারা ঈশ্বরের পুস্তকে বর্ণিত ইতিহাসের উপর মানুষের বিশ্বাস স্থাপিত হবে। কিন্তু মানুষ, তার ভ্রান্ত যুক্তি দ্বারা, মহা প্লাবনের আগেকার লোকদের মত সেই একই ভুল করে...যে সমস্ত বস্তু ঈশ্বর তাদের উপকারের জন্য দিলেন সেগুলির ভুল ব্যবহার দ্বারা তারা সেগুলিকে একটি অভিশাপে রূপান্তরিত করে। PPBeng 68.1
সৃষ্টিকে প্রাকৃতিক কারণ দ্বারা ব্যাখ্যা করার অনবরত প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে, এবং এমন কি বিশ্বাসীরূপে যারা নিজদের পরিচয় দেন তারাও ঈশ্বরের বাক্যে বর্ণিত সত্যের বিপক্ষে গিয়ে মানুষের যুক্তি গ্রহণ করে নিচ্ছেন । অনেকেই ভাববাদীদের ভবিষ্যদ্বাণীর আলোচনায় বাধা দেন। বিশেষতঃ দানিয়েল ও প্রকাশিত বাক্যে, তারা বলেন যে আমরা এগুলি বুঝতে পারব না। আবার এরাই মোশির বর্ণিত ইতিহাসকে উপেক্ষা করে ভূতত্ববিদদের অনুমানকে অত্যন্ত একাগ্রতার সহিত গ্রহণ করে থাকেন। ঈশ্বর কি ভাবে তার সৃষ্টি সমাপ্ত করলেন তা মানুষের কাছে কখনো প্রকাশ করেন নি; মানুষের তৈরী বিজ্ঞান ঈশ্বরের রহস্য উদ্ঘাটন করতে সক্ষম নয়। দ্বিতীয় বিবরণ ২৯:২৯ দেখুন । PPBeng 68.2
যারা ঈশ্বরের সৃষ্ট কাজের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ঈশ্বরের বাক্য বাদ দিয়ে বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের উপর নির্ভর করেন, তারা কম্পাস ছাড়াই এক অপরিচিত সমুদ্রে যাত্রা করে থাকেন। যদি অনুসন্ধানে ঈশ্বরের বাক্য দ্বারা পরিচালিত না হয়, তবে অনেক বুদ্ধিমত্তা ব্যক্তিরাও বিজ্ঞান ও ঈশ্বরের বাক্যে প্রকাশিত তত্ত্বের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনে হতভম্ব হয়ে যান। যারা ভাববাদীদের পুস্তক ও নূতন নিয়মকে অবিশ্বাস করেন তারা আরো এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে ঈশ্বরের অস্তিত্বকেও অবিশ্বাস করেন। আর তখন তারা নোঙ্গর বিহীন অবস্থায় নাস্তিকতার তীরে ঘুরতে থাকেন। PPBeng 68.3
বাইবেলকে মানুষের বৈজ্ঞানিক ধারণা দিয়ে পরীক্ষা করা উচিত নয়। বিজ্ঞান ও ঈশ্বরের বাক্য উভয়টিরই অপরিপূর্ণ ধারণা নিয়ে নাস্তিকেরা বলেন যে তারা এর মধ্যে স্ববিরোধীতা দেখতে পান; কিন্তু পূর্ণ ভাবে বুঝতে পারলে দেখা যাবে যে তাদের মধ্যে ঐক্য রয়েছে। মোশি ঈশ্বরের আত্মার পরিচয় থেকে লিখেছিলেন; এবং ভূতত্বের একটি সঠিক ধারণা এমন কোন আবিষ্কারের দাবী উঠাবে না যা তার বক্তব্যের সাথে সমন্বিত হয় না। PPBeng 69.1