পিতৃকুলপতিগণ ও ভাববাদীগণ

225/333

দরিদ্র লোকদের প্রতি ঈশ্বরের অনুগ্রহ

প্রত্যেক সপ্তম বসরে দরিদ্রদের জন্য বিশেষ বন্দোবস্ত করা হত । শস্য সংগ্রহের পর, বীজ বপনের সময় লোকদের বীজ বপন করা হতে বিরত থাকতে হত; আঙ্গুর ক্ষেত বসস্ত কালে ছাটা হত না; আর তারা কোন শস্য-সংগ্ৰহণ বা আঙ্গুর সংগ্রহণ আশা করতে পারত না। আর ঐ বসর মাঠে যা কিছু ফলত তা এতিম, বিদেশী, বিধবা এমন কি মাঠের প্রাণীদের জন্য ছেড়ে দেয়া হত। যাত্রাপুস্তক ২৩:১০, ১১; লেবীয় ২৫:৫। PPBeng 381.2

কিন্তু যদি জমি শুধুমাত্র লোকদের চাহিদা মিটানোর পরিমাণ ফসল উপন্ন করত তা হলে যে বসর কোন শস্য সংগ্রহ করা হত না, সে বসর ওরা বাঁচবে কি ভাবে? ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতিতে এর জন্য পর্যাপ্ত বন্দোবস্ত ছিল। তিনি বলেছিলেন, “তবে আমি ষষ্ঠ বসরে তোমাদিগকে আশীর্বাদ দান করিব; তাহাতে তিন বৎসরের জন্য শস্য উৎপন্ন হইবে। পরে অষ্টম বৎসরে তোমরা বপন করিবে, ও নবম বৎসর পর্যন্ত পুরাতন শস্য ভোজন করিবে; যাব ফল না হয়, তাব পুরাতন শস্য ভোজন করিবে।” লেবীয় ২৫:২১, ২২। PPBeng 381.3

সপ্তম বসর জমি ও মানুষ উভয়ের জন্যই উপকারী ছিল। এক বসর ফসল না করার ফলে পরবর্তীতে জমি অধিক উৎপাদন করত। আর লোকেরা এক বসর মাঠের কঠিন কাজ হতে বিশ্রাম নিতে পারত। সকলেই তখন অধিক বিশ্রাম নিতে পারত, ফলে দৈহিক শক্তি পূর্ণরূপে পূনর্বহাল হত, ধ্যান করতে ও ঈশ্বরের বাক্য হতে শিক্ষা লাভের সুযোগ হত, আর পরিজনদের অধিক শিক্ষা দান করা যেত । PPBeng 381.4

সপ্তম বসর যিহূদী দাসকে ছুটি দিতে হত। “আর মুক্ত করিয়া তোমার নিকট হইতে বিদার দিবার সময়ে তুমি তাহাকে রিক্ত হস্তে বিদায় করিবে না; তুমি আপন পাল, শস্য ও দ্রাক্ষারস হইতে তাহাকে প্রচুর পুরস্কার দিবে; তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে যেমন আশীর্বাদ করিয়াছেন; তদনুসারে তাহাকে দিবে।” দ্বিতীয় বিবরণ ১৫:১৩, ১৪ । PPBeng 382.1

চামাত শ্রমিকের বেতন দ্রুত পরিশোধ করতে হত। “কার্য্যের দিবসে তাহার বেতন তাহাকে দিবে; সূর্য্যের অস্তগমন পর্য্যন্ত তাহা রাখিবে না; কেননা সে দরিদ্র, এবং সেই, বেতনের উপরে তাহার মন পড়িয়া থাকে।” দ্বিতীয় বিবরণ ২৪:১৫। PPBeng 382.2

দাসত্ব হতে পলাতক সম্পর্কে বিশেষ নির্দেশ দান করা হয়েছিল: “যে দাস আপন স্বামীর নিকট হইতে পলাইয়া তোমার নিকটে আইসে, তুমি তাহাকে সেই স্বামীর হস্তে সমর্পণ করিবে না। সে...যেখানে তাহার ভাল লাগে, সেই মনোনীত স্থানে তোমার সঙ্গে তোমার মধ্যে বাস করিবে; তুমি তাহার উপরে দৌরাত্ম্য করিবে না।” দ্বিতীয় বিবরণ ২৩:১৫, ১৬। PPBeng 382.3

দরিদ্রদের নিকট সপ্তম বসর ছিল ঋণ মুক্তির বসর। যিহূদীদের বিনা সুদে অভাবগ্রস্থ নিজ ভ্রাতাদের ঋণ দিতে বলা হয়েছিল। দরিদ্রদের নিকট হতে সুদ গ্রহণ বিশেষ ভাবে মানা করা হয়েছিল। “আর তোমার ভ্রাতা যদি দরিদ্র হয়, ও তোমার নিকটে শূন্যহস্ত হয়, তবে তুমি তাহার উপকার করিবে; সে বিদেশী ও প্রবাসীর ন্যায় তোমার সহিত জীবন ধারণ করিবে। তুমি তাহা হইতে সুদ কিংবা বৃদ্ধি লইবে না, কিন্তু আপন ঈশ্বরকে ভয় করিবে, তোমার ভ্রাতাকে তোমার সহিত জীবন ধারণ করতে দিবে । তুমি সুদের জন্য তাহাকে টাকা দিবে না, ও বৃদ্ধির জন্য তাহাকে অন্ন দিবে না।” লেবীয় ২৫:৩৫-৩৭। যদি ঋণ মুক্তির বসর পর্যন্ত পরিশোধিত না হয়, তবে ঋণ আদায় করা চলবে না। “যদি তোমার নিকটস্থ কোন ভ্রাতা দরিদ্র হয়, তবে তুমি আপন হৃদয় কঠিন করিও না, বা দরিদ্র ভ্রাতার প্রতি আপন হস্ত রুদ্ধ করিও না।... সাবধান, সপ্তম বসর অর্থা ক্ষমার বসর নিকটবর্ত্তী, ইহা বলিয়া তোমার হৃদয়ে যেন অধম চিন্তার উদয় না হয়; তুমি যদি আপন দরিদ্র ভ্রাতার প্রতি অশুভ দৃষ্টি করিয়া তাহাকে কিছু না দাও; তবে সে তোমার বিরুদ্ধে সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করিলে তোমার পাপ হইবে।” “কেননা তোমার দেশমধ্যে দরিদ্রের অভাব হইবে না; অতএব আমি তোমাকে এই আজ্ঞা দিতেছি, তুমি আপন দেশে তোমার ভ্রাতার প্রতি তোমার দুঃখী ও দীনহীনের প্রতি, তোমার হস্ত অবশ্য খুলিয়া রাখিবে।” “কিন্তু তাহার প্রতি মুক্তহস্ত হইয়া তাহার অভাবের জন্য প্রয়োজনানুসারে তাহাকে অবশ্য ঋণ দিও।” দ্বিতীয় বিবরণ ১৫৪৭, ১১,৮ । PPBeng 382.4

কারও এই ভয় থাকা উচিত নয় যে তাদের উদারতা তাদের অভাবগ্রস্ত করবে। ঈশ্বর বলেছেন, “আর তুমি অনেক জাতির উপর কর্তৃত্ব করিবে, কিন্তু তাহারা তোমার উপরে কর্তৃত্ব করিবে না।” দ্বিতীয় বিবরণ ১৫:৬ পদ । PPBeng 383.1