পিতৃকুলপতিগণ ও ভাববাদীগণ

213/333

গিবিয়োনীয়েরা কিভাবে নিজদিগকে দাস করে

গিবিয়োনীয়দের প্রাণে বাঁচতে দেয়া হল কিন্তু দৈহিক কাজ করার জন্য তাদের প্রার্থনার স্থানে দাসরূপে নিযুক্ত করা হল। “আর সদাপ্রভুর মনোনীত স্থানে মন্ডলীর ও সদাপ্রভুর যজ্ঞবেদীর জন্য কাঠকাটা ও জলতোলার কাজে যিহোশূয় সেই দিনে তাহাদিগকে নিযুক্ত করিলেন।” যে কোন শর্তে জীবন ক্রয় করার জন্য এই সকল শর্ত আনন্দিত চিত্তে গৃহীত হল। তারা যিহোশূয়কে বলল, “এখন দেখুন, আমরা আপনারই হস্তগত, আমাদের প্রতি যাহা করা আপনার ভাল ও ন্যায্য বোধ হয়, তাহাই করুন।” PPBeng 359.2

শহরগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর ছিল গিবিয়োন, ইহা ছিল “রাজধানীর ন্যায় বৃহৎ;...আর তথাকার সমস্ত লোক বলবান ছিল ।” ইস্রায়েলরা কনানের অধিবাসীদের মধ্যে যে ভীতির সঞ্চার করেছিল, এখানেই তার প্রমাণ হল যে এ ধরণের একটি শহরের অধিবাসীরা জীবন বাঁচানোর জন্য এরূপ ঘৃণ্য ও লজ্জাস্কর একটি চুক্তি সম্পন্ন করেছিল। PPBeng 359.3

কিন্তু গিবিয়োনীয়দের জন্য আরো ভালো হত যদি তারা ইস্রায়েল-সন্তানদের সাথে সততামূলক আচরণ করত। তাদের ছলনা তাদের জন্য অবিশ্বাস ও দাসত্ব বয়ে আনল । ঈশ্বর উপায় স্থির করেছিলেন যে যারা পৌত্তলিকতা বিসর্জন দিয়ে যিহূদীদের সহিত যুক্ত হবে তারা ঐ চুক্তির আশীর্বাদসমূহ লাভ করবে। কয়েকটি মাত্র ব্যতিক্রম ছাড়া ঐ দল ইস্রায়েলদের সমান অনুগ্রহ ও অধিকার উপভোগ করত। PPBeng 360.1

গিবিয়োনীয়দের সম অধিকারেই গ্রহণ করা হত। এটা কিন্তু সাধারণ একটি অবমাননাকর কাজ ছিল না যে ঐ ধরণের রাজকীয় একটি নগরের অধিবাসীরা, যারা ছিল “বলবান”, কাঠকাটা ও জলতোলার কাজে নিযুক্ত হবে। বংশ পরম্পরায় তাদের এই দাসত্বের জীবন মিথ্যার প্রতি ঈশ্বরের যে ঘৃণা রয়েছে তারই সাক্ষ্য বহন করবে। PPBeng 360.2

যিহোশূয়ের দীর্ঘ দিনটি PPBeng 360.3

গিবিয়োনীয়দের আত্মসমর্পণ কনানীয় রাজাদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি করল। আগ্রাসনকারীদের সাথে যারা শান্তি স্থাপন করেছে তাদের উপর প্রতিশোধ নেবার প্রস্তুতি করা হল । গিবিয়োনীয়দের বিপক্ষে পাঁচজন কনানীয় রাজা একটি মৈত্রী স্থাপন করল। গিবিয়োনীয়েরা আত্মারক্ষার জন্য প্রস্তুত ছিল না, তাই তারা যিহোশূয়ের নিকট একটি সংবাদ প্রেরণ করল “আপনার এই দাসদের প্রতি হস্ত শিথিল করিবেন না, ত্বরায় আসিয়া আমাদের নিস্তার ও সাহায্য করুন, কেননা পর্বতময় প্রদেশনিবাসী ইমোরীয়দের সমস্ত রাজা আমাদের বিরুদ্ধে একত্র হইয়াছেন।” এই বিপদ শুধু গিবিয়োনীয়দের জন্য ভীতিকর ছিল না, কিন্তু ইস্রায়েলদের জন্যও বিপজ্জনক ছিল। এই শহর মধ্য ও দক্ষিণ পলেষ্টীয়দের ছিল । আর দেশ জয়ের জন্য এটি অধীনস্থ রাখা প্রয়োজন । PPBeng 360.4

তারা যে প্রতারণা করেছিল এই জন্য যিহোশূয় তাদের অনুরোধ উপেক্ষা করবেন মনে করে আক্রান্ত শহরের অধিবাসীরা ভীত হল। কিন্তু যেহেতু তারা ইস্রায়েলদের নিকট আত্ম-সমর্পণ করেছিল এবং ঈশ্বরের আরাধনা গ্রহণ করেছিল, তাই তাদের জান-মালের রক্ষার তার কর্তব্য বলে তিনি মনে করলেন আর সদাপ্রভু তাকে উৎসাহ দিলেন। স্বর্গীয় সংবাদ এল, “তুমি তাহাদিগকে ভয় করিও না; কেননা আমি তোমার হস্তে তাহাদিগকে সমর্পণ করিয়াছি, তাহাদের কেহ তোমার সম্মুখে দাঁড়াইতে পারিবে না।” “তখন যিহোশূয় সমস্ত যোদ্ধা ও সমস্ত বলবান বীর সঙ্গে লইয়া গিলগল হইতে রওয়ানা হইলেন ।” PPBeng 360.5

মৈত্রীবদ্ধ রাজারা তাদের সৈন্যদের শহরের চারিদিকে একত্রিত করতে না করতেই যিহোশূয় তাদের অতিক্রম করলেন। ঐ বিশাল বাহিনী বৈ- হোরোণের গিরিখাত দিয়া পালাতে লাগল, আর চূড়ার উপর পৌঁছার পর তারা বিপজ্জনক উত্তাই দিয়ে অন্য প্রান্তে পৌছার চেষ্টা করল। এইখানে তাদের উপর একটি ভয়ঙ্কর শিলা বৃষ্টি শুরু হল। “তখন সদাপ্রভু আকাশ হইতে...তাহাদের উপরে মহাশিলা বর্ষাইলেন.... ইস্রায়েলসন্তানগণ যাহাদিগকে খড়্গগ দ্বারা বধ করিল, তদপেক্ষা অধিক লোক শিলাপাতে মরিল । ” PPBeng 361.1

যখন ইমোরীয়েরা প্রাণ ভয়ে দৌড়ে পালাচ্ছিল, তখন যিহোশূয় চূড়ার উপর হতে নীচের দিকে তাকালেন এবং দেখতে পেলেন যে কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য দিনটি খুবই ছোট হবে। যদি এখন এদের পূর্ণ ধ্বংস করা না যায়, তবে শত্রুরা আবার সঙ্গবদ্ধ হয়ে তাদের সহিত যুদ্ধে লিপ্ত হবে। “সেই দিন যিহোশূয় সদাপ্রভুর কাছে বিনতি করিলেন; আর তিনি ইস্রায়েলের সাক্ষাতে বলিলেন, “সূর্য্য, তুমি স্থির হও গিবিয়োনে, আর চন্দ্র, তুমি অয়ালোন তলভূমিতে। আর সূর্য্য স্থগিত হইল, ও চন্দ্র স্থির থাকিল, যাবৎ সেই জাতি শত্রুদিগের প্রতিশোধ না লইল।...আর আকাশের মধ্যস্থানে সূর্য্য স্থির থাকিল, অস্তগমন করিতে প্রায় সম্পূর্ণ এক দিবস ত্বরা করিল না।” PPBeng 361.2

সন্ধ্যা হবার আগেই যিহোশূয়ের নিকট ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা পূর্ণ হল । শত্রুদের তার হস্তে সমর্পণ করা হল । ঐ দিনের ঘটনাবলী ইস্রায়েলদের স্মরণে অনেক দিন পর্য্যন্ত থাকল। “তাহার পূর্বে কি পরে সদাপ্রভু যে মনুষ্যের রবে এইরূপ কর্ণপাত করিলেন, এমন আর কোন দিন হয় নাই; কেননা সদাপ্রভু ইস্রায়েলদের পক্ষে যুদ্ধ করিতেছিলেন।” “সূর্য ও চন্দ্র স্ব স্ব বাসস্থানে দাঁড়াইয়া থাকিল,- তোমার দ্রুতগামী বাণসমূহের দীপ্তিতে, তোমার বজ্ররূপ বড়শার তেজে। তুমি গজবে ভূতল দিয়া গমন করিলে, কোপে জাতিগণকে (শস্যের মত) মৰ্দ্দন করিলে। তুমি যাত্রা করিলে,- আপন প্রজাগণের পরিত্রাণার্থে।” হবক ৩:১১-১৩। PPBeng 361.3

যিহোশূয়কে এই প্রতিজ্ঞা দান করা হয়েছিল যে ঈশ্বর ইস্রায়েলদের এই শত্রুদের পরাস্ত করবেন, কিন্তু তথাপি তিনি এমন প্রচন্ড চেষ্টা চালালেন যেন কৃতকার্যতা ইস্রায়েলের সৈন্যদের উপর নির্ভর করে। মানুষের শক্তিতে যতটুকু সম্ভব, তার সবটুকুই তিনি সম্পন্ন করলেন, তারপর তিনি বিশ্বাসে স্বর্গীয় সাহায্যের কামনা করলেন। কৃতকার্য্যতার চাবিকাটি হল স্বর্গীয় প্রচেষ্টার সাথে মানবিক প্রচেষ্টার সম্মিলন। যে মানুষ আদেশ দিলেন, “সূর্য, তুমি স্থির হও গিবিয়োনে, আর চন্দ্র, তুমি অয়ালোন তলভূমিতে।” সেই মানুষ গিল্‌গলে ঘন্টার পর ঘন্টা মাটিতে উপুড় হইয়া প্রার্থনা করেছিলেন। প্রার্থনাকারী মানুষই ক্ষমতাবান মানুষ । PPBeng 361.4

এই শক্তিশালী আশ্চর্য্য কাজ প্রমাণ করে যে সৃষ্টি স্রষ্টার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যারা সৃষ্টিকে স্রষ্টার উপরে উন্নীত করে, এই আশ্চর্য্য কাজ তাদের প্রতি এক তিরস্কার। PPBeng 362.1

নিজ ইচ্ছানুসারে শত্রুদের পরাভূত করার জন্য ঈশ্বর প্রাকৃতিক শক্তিকে ব্যবহার করেন- “অগ্নি ও শিলা, তুষার ও বাষ্প, তাঁহার বাক্যসাধক প্রচন্ড বায়ু।” গীতসংহিতা ১৪৮৪৮। আমাদের বলা হয়েছে যে পৃথিবীর ইতিহাসের শেষ প্রান্তে একটি বৃহত্তর যুদ্ধ সংঘটিত হবে, তখন “সদাপ্রভু আপন অস্ত্রাগার খুলিলেন, নিজ ক্রোধের অস্ত্র সকল বাহির করিয়া আনিলেন।” যিরমিয় ৫০: ২৫। PPBeng 362.2

যখন “প্রার্থনাগৃহের মধ্য হইতে, সিংহাসন হইতে, মহাবাণী” ঘোষণা করবেন, “হইয়াছে,” প্রকাশক তখনকার বংশের বর্ণনা দিচ্ছেন। তিনি বলেন, “আর আকাশ হইতে মনুষ্যদের উপরে বৃহৎ বৃহৎ শিলাবর্ষণ হইল, তাহার এক একটি এক এক তালন্ত পরিমিত।” প্রকাশিতবাক্য ১৬:১৭, ২১ । PPBeng 362.3