পিতৃকুলপতিগণ ও ভাববাদীগণ
ঈশ্বর কেন ইস্রায়েলদের সাথে কাজ করলেন
ঈশ্বর ইস্রায়েলকে এজন্য ডেকেছিলেন যেন তিনি তাদের মাধ্যমে পৃথিবীর সকল লোকদের নিকট নিজকে প্রকাশ করতে পারেন। এই লক্ষ্যে তিনি তাদের আদেশ করেছিলেন যে তারা যেন তাদের চতুষ্পার্শ্বের পৌত্তলিক জাতি হতে স্বতন্ত্র রাখে । PPBeng 260.1
যেরূপ তখন ছিল তদ্রূপ এখনও ঈশ্বরের লোকদের থাকা উচিত, “সংসার হইতে নিজকে নিষ্কলঙ্করূপে রক্ষা করা।” কিন্তু ঈশ্বরও চাননি যে তাঁর লোকেরা পৃথিবী হতে দূরে নির্জনে বাস করবে যেন তারা পৃথিবীকে কোন ভাবে প্রভাবিত না করে। তাদের বিশ্বাসহীন মন্দ হৃদয়ই অন্যান্য লোকদের আলোকিত না করে তাদের আলো গোপন করতো ও নিজদের গর্বভরে আলাদা করতে তাদের এইভাবে পরিচালিত করেছে যাতে মনে হয়েছে যে ঈশ্বরের প্রেম ও ভালবাসা যেন শুধুমাত্র তাদেরই জন্য। PPBeng 260.2
প্রথমে এদন বাগানে মানুষের সাথে অনুগ্রহের চুক্তি সম্পাদিত হয়। মানুষের পতনের পর ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে নারীর গর্ভের সন্তানই সর্পের মস্তক চূর্ণ করবে। সকল মানুষকেই খ্রীষ্টের উপর বিশ্বাসের মাধ্যমে ভবিষ্যতে পাপ ক্ষমার প্রতিজ্ঞা এই চুক্তিতে ছিল। আর ঈশ্বরের ব্যবস্থার প্রতি বাধ্যতার সত্ত্বে ইহা তাদের অনন্ত জীবনের প্রতিজ্ঞা দান করে। এই ভাবে অতীতে আমাদের প্রাচীনেরা মুক্তির প্রত্যাশা লাভ করেছিলেন। PPBeng 260.3
যখন অব্রাহামকে বলা হয় যে, “আর তোমার বংশে পৃথিবীর সকল জাতি আশীর্বাদ প্রাপ্ত হইবে”। (আদিপুস্তক ২২:১৮) তখন এই একই চুক্তি নবায়ন করা হয়। পাপ ক্ষমার জন্য অব্রাহাম খ্রীষ্টের উপর বিশ্বাস করতেন। এই বিশ্বাসকেই তার জন্য ধার্মিকতা বলে গন্য করা হয়েছিল। অব্রাহামের সহিত চুক্তির ভিতর ঈশ্বরের ব্যবস্থার কর্তৃত্ব কার্য্যকর ছিল। ঈশ্বর সাক্ষ্য দিয়েছেন, “অব্রাহাম আমার বাক্য মানিয়া আমার আদেশ, আমার আজ্ঞা, আমার বিধি ও আমার ব্যবস্থা সকল পালন করিয়াছে।” আদিপুস্তক ২৬:৫। যদিও আদমের এই চুক্তি করা হয়েছিল, এবং অব্রাহামের প্রতি এটি নবায়ন করা হয়েছিল তবুও এই চক্তি খ্রীষ্টের মৃত্যুর আগে কার্য্যকর করা সম্ভব ছিল না। ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার PPBeng 260.4
মাধ্যমে এটি স্থাপিত হয়; বিশ্বাসের মাধ্যমে এটি গৃহীত হয়; তথাপি যখন খ্ৰীষ্ট এটিকে অনুমোদন করেন তখন এর নাম হল নূতন চুক্তি বা নূতন নিয়ম । এই চুক্তির ভিত্তি হল ঈশ্বরের ব্যবস্থা মানার জন্য সহায়তা দানের মাধ্যমে ঈশ্বরের ইচ্ছার সহিত ঐক্যে ফিরিয়ে আনার একটি বন্দোবস্ত মাত্র । PPBeng 261.1
আর একটি চুক্তি যাকে পুস্তকে “পুরাতন” চুক্তি বলা হয়েছে সীন পর্বতে ঈশ্বর ও ইস্রায়েলদের মধ্যে সম্পাদিত হয়েছিল যা একটি বলির রক্ত দ্বারা অনুমোদিত হয়েছিল। অব্রাহামের সহিত চুক্তি যা খ্রীষ্টের রক্ত দ্বারা অনুমোদিত হয়, তা হল “দ্বিতীয়”, বা “নূতন” চুক্তি, কেননা যে রক্ত দ্বারা এটিকে মোহরাঙ্কিত করা হয় সেই রক্ত প্রথম রক্তের পরে ঝরাণো হয়েছিল । PPBeng 261.2
কিন্তু যদি অব্রাহামের সহিত চুক্তিতে পরিত্রাণের প্রতিজ্ঞা থেকে থাকে। তবে সীনয় পর্বতে আর একটি চুক্তি কেন সম্পাদিত হল? দাসত্বের সময় লোকেরা অব্রাহামের সহিত চুক্তির নীতিমালার জ্ঞান অনেকাংশেই হারিয়ে ফেলেছিল। মিসর হতে তাদের মুক্তিদানের মাধ্যমে ঈশ্বর তাঁর ক্ষমতা ও অনুগ্রহ প্রকাশ করতে চাইলেন যেন তারা তাঁকে প্রেম করে ও বিশ্বাস করে। পৃথিবীর দাসত্ব থেকে তাদের রক্ষাকারীরূপে তিনি তাদের তাঁর সহিত আবদ্ধ করলেন । PPBeng 261.3
ঈশ্বরের পবিত্রতা সম্পর্কে, তাদের হৃদয়ের গভীর পাপ সমূহ সম্বন্ধে, নিজে থেকে ঈশ্বরের ব্যবস্থা রক্ষা করায় তাদের সম্পূর্ণ অক্ষমতা সম্বন্ধে এবং একজন মুক্তিদাতার প্রয়োজন সম্পর্কে তাদের কোন প্রকৃত ধারণা ছিল না । PPBeng 261.4
ঈশ্বর ব্যবস্থা দিয়েছিলেন এর প্রতি বাধ্যতায় মহা আশীর্বাদের প্রতিজ্ঞা সহকারে; “এখন যদি তোমরা আমার রবে অবধান কর ও আমার নিয়ম পালন কর....আমার নিমিত্তে তোমরাই যাজকদের এক রাজ্য ও পবিত্র এক জাতি হইবে।” যাত্রাপুস্তক ১৯:৫, ৬। লোকেরা তাদের হৃদয়ের পাপ ও খ্রীষ্টের সহায়তা ছাড়া তাদের জন্য ব্যবস্থা পালন করা সম্ভব নয় তা হৃদয়ঙ্গম করতে অক্ষম ছিল । নিজেরাই ধার্মিকতায় পরিণত হতে পারবে মনে করে তারা ঘোষণা করল, “সদাপ্রভু যাহা কহিলেন, আমরা সমস্তই পালন করিব ও আজ্ঞাবহ হইব।” যাত্রাপুস্তক ২৪:৭। তারা সহজেই ঈশ্বরের সহিত চুক্তিবদ্ধ হল । তথাপি PPBeng 261.5
মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তারা চুক্তি ভঙ্গ করল ও একটি নির্মিত মূর্ত্তির পূজা করল। এখন, তারা তাদের পাপ প্রবণতা অনুধাবন করল এবং অব্রাহামের সহিত চুক্তির মধ্যে বলির পদ্ধতিতে প্রকাশিত মুক্তিদাতার প্রয়োজন অনুভব করল । এখন তারা নূতন চুক্তির মধ্যে নিহীত আশীর্বাদের প্রতি কৃতজ্ঞ হল । PPBeng 262.1