ভাববাদিগণের এবং রাজগণের কাহিনী
৫—শলোমনের অনুশোচনা
শলোমনের শাসনকাল ব্যাপী দুই বার সদাপ্রভু তার কাছে অনুমোদন এবং পরামর্শ বাণী নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন- গিবিয়োনে রাতের দর্শনে যখন তার কাছে জ্ঞান, ঐশ্বর্য এবং সম্মানের প্রতিজ্ঞা করা হয়েছিল একই সঙ্গে তাকে নম্র এবং আজ্ঞাবহ থাকতে বলা হয়েছিল; এবং ধর্মধাম উৎসর্গ করার পরে সদাপ্রভু তাকে আরও একবার বিশ্বস্ত থাকবার জন্য সনির্বন্ধ অনুরোধ করেছিলেন। ভর্ৎসনা ছিল মৃদু, চমৎকার প্রতিজ্ঞামালা শলোমনকে দেয়া হয়েছিল, তথাপি, পারিপার্শ্বিক অবস্থার চরিত্র এবং জীবনে দেখা গেল তিনি স্বর্গের প্রত্যাশানুসারে কর্তব্য এবং দায়িত্ব পালন করলেন না, এরূপ লেখা আছে: “কিন্তু সদাপ্রভু যা আজ্ঞা দিয়েছিলেন তা তিনি পালন করলেন না।” “কেননা তাঁর অন্তঃকরণ ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু হতে বিপথগামী হয়েছিল, যিনি দুবার তাকে দর্শন দিয়েছিলেন, যেন তিনি অন্য দেবতাদের অনুগামী না হন।” (১রাজাবলি ১১:৯, ১০)। তার ধর্মোদ্রোহিতা এতই স্পষ্ট ছিল, আজ্ঞা লঙ্ঘনে তার অবস্থা প্রায় হতাশাজনক হয়ে পড়েছিল। PKBeng 62.1
শলোমন ঐশ্বরিক লালসা চরিতার্থের দিকে মনোনিবেশ করলেন। এই অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন:- “আমি আপনার জন্য মহ মহ কার্য করলাম, আপনার জন্য নানা স্থানে বাটী নির্মাণ করলাম, আপনার জন্য দ্রাক্ষাক্ষেত্র সমূহ প্রস্তুত করলাম... আমি অনেক দাস দাসী ক্রয় করলাম, ...আমি রৌপ্য ও সুবর্ণ এবং নানা রাজার ও নানা প্রদেশের বিশেষ বিশেষ ধন সঞ্চয় করলাম; আমি অনেক গায়ক গায়িকা ও মনুষ্য সন্তানদের সন্তোষকারিণী কত উপপত্নী পেলাম। বাস্তবিক আমি মহান ছিলাম, আমার পূর্বে যারা যিরূশালেমে ছিলেন, সেই সকল অপেক্ষা সমৃদ্ধশালী হলাম...। আর আমার চক্ষু দুটি যা ইচ্ছা করত তা আমি তাদের অগোচর রাখতাম না; আমার হৃদয়কে কোন আনন্দভোগ করতে বারণ করতাম না; বাস্তবিক আমার সমস্ত পরিশ্রমে আমার হৃদয় আনন্দ করত....। পরে আমার হাত যে সকল কাজ করত, যে পরিশ্রমে আমি পরিশ্রান্ত হতাম, সে সমস্তের প্রতি দৃষ্টিপাত করলাম, আর দেখ, সে সবই অসার ও বায়ু ভক্ষণ মাত্র; সূর্যের নীচে কিছুই লাভ হয়নি । PKBeng 62.2
“পরে আমি প্রজ্ঞা, এবং ক্ষিপ্ততা ও অজ্ঞানতা দেখতে প্রবৃত্ত হলাম; কারণ যে ব্যক্তি রাজার পশ্চাতে আসবে, সে কি করবে? পূর্বে যা করা গিয়েছিল, তাই মাত্র । ....আমি জীবনে বিরক্ত হলাম । ...সূর্যের নীচে আমি যে পরিশ্রমে পরিশ্রান্ত হতাম, আমার সেই সকল পরিশ্রমে বিরক্ত হলাম।” উপদেশক ২:৪১৮। PKBeng 63.1
তার নিজের অভিজ্ঞতা দ্বারা, শলোমন একটি জীবনের একটি শূন্যতা সম্পর্কে জানতে পারলেন যা পার্থিব বিষয়গুলোর মধ্যে এর সর্বোচ্চ উত্তমের অন্বেষণ করে। তিনি পৌত্তলিক দেবদের উদ্দেশ্যে বেদী নির্মাণ করলেন কেবলমাত্র এটি শিক্ষা লাভ করার জন্য, আত্মায় বিশ্রাম লাভের জন্য তাদের প্রতিজ্ঞা কত মূল্যহীন। বিষন্ন এবং জীবন হয়রানি চিন্তারাশি তাকে রাতদিন জ্বালাতন করত। তার জীবন আনন্দ অথবা মনের শান্তি ছিল না, এবং নিরাশায় তার ভবিষ্যৎ ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন। PKBeng 63.2
তথাপি সদাপ্রভু তাকে ত্যাগ করলেন না। অনুযোগের বার্তা এবং কঠোর বিচার দ্বারা তিনি রাজাকে তার জীবনের পাপপূর্ণতা উপলব্ধি করার সুযোগ দিলেন। তিনি তাঁর নিরাপত্তা তুলে নিলেন এবং তাকে হয়রানি এবং তার রাজ্য দুর্বল করার জন্য বিপক্ষদেরকে অনুমতি দিলেন। “আর সদাপ্রভু ---- একজন বিপক্ষ উৎপন্ন করলেন, তিনি ইদোমীয় হৃদ... ঈশ্বর শলোমনের আর একজন বিপক্ষ উৎপন্ন করলেন; তিনি ইলিয়াদার পুত্র রমোন, ... দলপতি হয়েছিলেন, “যিনি ইস্রায়েলকে দ্বেষ করলেন এবং অরামের ওপরে রাজত্ব করলেন। যারবিয়াম শলোমনের দাস ছিলেন” “একজন বলবান বীর ছিলেন” “রাজার বিরুদ্ধে তাঁর হাত তুললেন।” ১ রাজাবলি ১১:১৪-২৮। PKBeng 63.3
অবশেষে সদাপ্রভু, একজন ভাববাদীর মাধ্যমে আতঙ্কজনক বার্তা দিলেন; “তোমার এই ব্যবহার তুমি আমার নিয়ম ও আমার আদিষ্ট বিধি সকল পালন করোনি; এই কারণ আমি অবশ্য তোমা হতে রাজ্য চিরে নিয়ে তোমার দাসকে দেব। তথাপি তোমার পিতা দায়ূদের জন্য তোমার বর্তমান কালে তা করব না, কিন্তু তোমার পুত্রের হাত হতে তা চিরে নেব।” ১১, ১২ পদ । PKBeng 63.4
স্বপ্নে তার এবং তার বাটীর বিরুদ্ধে এই বিচারাজ্ঞা ঘোষণার পর নিদ্রা ভঙ্গ হবার পরে শলোমন অনুপ্রাণিত বিবেকে, এর প্রকৃত আলোকে তার নির্বুদ্ধিতা দেখতে লাগলেন। আত্মায় সংশোধিত হয়ে দুর্বল মন এবং শরীরে তিনি আরও একবার জীবনের প্রস্রবণের কাছে এলেন। অবশেষে, শাসন এবং দুঃখভোগ কার্য সাধন করল। নির্বুদ্ধিতা হতে ফিরে আসার অসমর্থতা হেতু নিশ্চিত ধ্বংসের ভয়ে দীর্ঘকাল ব্যাপী হয়রানির শিকার হয়েছিলেন; কিন্তু তাকে প্রদত্ত বার্তার মধ্যে এখন আশার একটি আলোক রশ্মি দেখতে পেলেন । ঈশ্বর সম্পূর্ণরূপে তাকে উচ্ছেদ করেননি, কিন্তু ঈশ্বর তাকে কবর হতে ও নিষ্ঠুর একটি দাসত্ব হতে উদ্ধার করার জন্য তার পাশে প্রস্তুত ছিলেন এবং যা হতে তার নিজেকে মুক্ত করার জন্য তার কোনই শক্তি ছিল না। PKBeng 64.1
শলোমন কৃতজ্ঞতা সহকারে একজন ব্যক্তির শক্তি এবং প্রেমপূর্ণ দয়া উপলব্ধি করলেন যিনি “উচ্চ পদান্নিত লোক অপেক্ষা উচ্চতর পদান্বিত” (উপদেশক ৫:৮); তিনি ধৈর্যসহকারে বিশুদ্ধতা এবং পবিত্রতার উন্নতি সমতল ভূমির দিকে পদচারণা করতে লাগলেন, যে স্থান হতে তিনি অনেক দূরে পতিত হয়েছিলেন। তিনি কখনও পাপের ভয়াবহ পরিণাম হতে রক্ষা পাবার আশা করতে পারতেন না, তিনি কখনও তার মনকে ভোগপরায়নার পথ অনুসরণের স্মৃতি হতে মুক্ত করতে পারতেন না কিন্তু তিনি একান্তভাবে চেষ্টা করলেন, অন্য লোকদেরকে মুর্খতার অনুসরণ হতে বিরত থাকবার উপদেশ দিতেন। তিনি নম্রভাবে তার চলার পথে ভুল-ভ্রান্তি স্বীকার করলেন এবং উচ্চরবে অন্যদেরকে সতর্ক করে দিলেন পাছে তার স্থাপিত প্রভাব হেতু তারা চিরদিনের স্মৃতি হতে তার অতীত পাপ সমূহ মুছে ফেলেন না। শান্তি লাভ করার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি তার কৃত ভুল সম্পর্কে নিরুদ্বেগ হননি। তিনি তাদের বিষয় চিন্তা করেন যারা তার পথ অনুসরণ করে পাপের পথে পরিচালিত হয়েছে, এবং সম্ভাব্য সব উপায়ে চেষ্টা করেন তাদেরকে সত্যের পথে ফিরিয়ে আনতে। তিনি যে পথে প্রবেশ করেছেন সেই পথের মতই স্বচ্ছ হবে, তার বাসনা ততই দৃঢ় হবে যেন অন্য লোকেরা সঠিক পথে চরণ ফেলতে পারে। তার অজুহাতের দ্বারা স্বেচ্ছাচারিতার বা দোষ ঢাকেন না, তার অপরাধকে হালকা করেন না, কিন্তু বিপদ সংকেত তুলে ধরেন যেন অন্য লোকে সতর্ক হতে পারে। PKBeng 64.2
শলোমন উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, “মনুষ্যসন্তানদের অন্ত :করণ দুষ্টতায় পরিপূর্ণ এবং যাবজ্জীবন ক্ষিপ্ততা তাদের হৃদয় মধ্যে থাকে।” (উপদেশক ৯:৩)। আর তিনি পুনরায় বলেন, “দুস্কর্মের দন্ডাজ্ঞা ত্বরায় সিদ্ধ হয় না, এই কারণ মনুষ্যসন্তানদের অন্তঃকরণ দুষ্কর্ম করতে সম্পূর্ণরূপে রত হয়। পাপী যদ্যপি শতবার দুষ্কর্ম করে দীর্ঘকাল থাকে তথাপি আমি নিশ্চয় জানি, ঈশ্বর-ভীত লোকদের যারা ঈশ্বরের সাক্ষাতে ভীত হয়, তাদের মঙ্গল হবে; কিন্তু দুষ্ট লোকদের মঙ্গল হবে না ও সে দীর্ঘকাল থাকবে না; তার আয় ছায়াস্বরূপ, কারণ সে ঈশ্বরের সাক্ষাতে ভীত হয় না।” উপদেশক ৮:১১-১৩। PKBeng 65.1
শলোমন ত্বরান্বিত বিবেকসহকারে পাপপূর্ণ পথ দেখতে পেলেন এবং পাপ হতে ফিরলেন । PKBeng 65.2
তিনি ইস্রায়েলের মধ্যে ব্যাপক সংস্কার সাধান করলেন । PKBeng 65.3
অনুপ্রেরণার আত্মা দ্বারা রাজা কয়েক যুগ পরে তার নিস্ফলা বছরগুলো তাদের সতর্কবাণীর শিক্ষামালা তালিকাভুক্ত করলেন । আর এরূপে, যদিও বা তার প্রজাগণ কর্তৃক, তার বপিত বীজের পাপের ফসল চয়ন করা হল, তার জীবনের কার্য সম্পূর্ণরূপে বৃথা যায়নি। নম্রতা এবং বিনয়ের সাথে শলোমন তার অবশিষ্ট বছরগুলোতে লোকদেরকে জ্ঞান শিক্ষা দেবেন, এবং মনোনিবেশ ও বিবেচনা করতেন, অনেক প্রবাদ বিন্যাস করতেন।” তিনি “উপদেশক মনোহর বাক্য, এবং যে বিষয় সরলভাবে লেখা হয়েছে অর্থাৎ সত্যের বাক্য, পাবার জন্য অনুসন্ধান করতেন।” “জ্ঞানবানদের বাক্য সকল অঙ্কুশস্বরূপ, ও সভাপতিদের [বাক্য] পোতা গোঁজস্বরূপ, তারা একই পালক দ্বারা দত্ত হয়েছে। আর শেষ কথা এই, হে বৎস, তুমি এসকল হতে উপদেশ গ্রহণ কর।” উপদেশক ১২:৯-১২। PKBeng 65.4
“এস, আমরা সমস্ত বিষয়ের উপসংহার শুনি,” তিনি লিখেছেন, “ঈশ্বরকে ভয় কর, ও তার আজ্ঞাসকল পালন কর, কেননা এটিই সকল মানুষের কর্তব্য। কারণ ঈশ্বর সমস্ত কর্ম এবং ভাল হোক, কি মন্দ হোক, সমস্ত গুপ্ত বিষয়, বিচারে আনবেন।” ১৩, ১৪ পদ । PKBeng 65.5
শলোমনের পরবর্তী লেখনীগুলো প্রকাশ করেছিল যে, তিনি তার মন্দতা যত অধিক উপলব্ধি করতে পারলেন, তিনি যুবকদেরকে মন্দতায় পড়ার বিরুদ্ধে সতর্ক করে দেবার জন্য বিশেষ মনোযোগ প্রদান করলেন যা তাকে স্বর্গের সর্বোৎকৃষ্ট উপহারসমূহের পরিবর্তে আশার বস্তুর জন্য অপব্যয়ের দিকে পরিচালিত করেছিল। দুঃখ ও লজ্জায় তিনি স্বীকার করলেন যে, যৌবনের প্রভাতেই, যখন ঈশ্বর তার সান্ত্বনা তার সাহায্য তার জীবন পাবার কথা, তখন তিনি স্বর্গের জ্যোতি এবং ঈশ্বরের জ্ঞান লাভ হতে পশ্চাদপদ হলেন, এবং যিহোবার উপাসনার স্থানে পুতুল পূজা স্থাপন করেছিলেন। আর এখন, এরূপ একটি জীবনের অপরাধের মাধ্যমে শিক্ষালাভ করে এখন তার একান্ত বাসনা তিনি তার তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্যে প্রবেশ হতে, অন্যদেরকে রক্ষা করবেন। PKBeng 66.1
মর্মস্পর্শী করুণ ভঙ্গিমায় তিনি, ঈশ্বরের সেবায় যুবকদের সামনে সুযোগ এবং দায়িত্ব সম্পর্কে লিখেছেন: “সত্যই, আলো মিষ্ট, এবং চক্ষুর পক্ষে সুর্যদর্শন ভাল । কোন মনুষ্য যদি অনেক বছর জীবিত থাকে, তবে সেই সকলে আনন্দ করুক, কিন্তু অন্ধকারের দিন সকল মনে রাখুক; কেননা সেই সকল দিন অনেক হবে। যা যা ঘটে, সে সবই অসার। হে যুবক, তুমি তোমার তরুণ বয়সে আনন্দ কর, যৌবনকালে তোমার হৃদয় তোমাকে আহ্লাদিত করুক তুমি তোমার মনোগত পথসমূহে ও তোমার চক্ষুর দৃষ্টিতে চল কিনতু জেনো ঈশ্বর এসকল ধরে তোমাকে বিচারে আনবেন। অতএব তোমার হৃদয় হতে বিরক্তি দূর কর শরীর হতে দুঃখ অপসারণ কর, কেননা তরুণ বয়স ও জীবনের তারুণোদয়কাল অসার।” উপদেশক ১১০৭-১০। PKBeng 66.2
“আর তুমি যৌবনকালে আপন সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ কর,
যেহেতু দুঃসময় আসছে,
এবং সেই বছর সকল সন্নিকট হচ্ছে
যখন তুমি বলবে, এটিতে আমার প্রীতি নেই ।
তকালে সূর্য, দীপ্তিহীন
চন্দ্র ও তারকারা
অন্ধকারময় হবে, শলোমনের অনুশোচনা
এবং বৃষ্টির পরে পুনর্বার মেঘ ফিরে আসবে।
সেই দিন গৃহের রক্ষকেরা কম্পিত হবে
ও পেষণকারী লোকেরা অল্প হয়েছে বলে
কর্মত্যাগ করবে
এবং গবাক্ষ দিয়ে দর্শকারিণীরা অন্ধীভূতা হবে;
আর পথের দিকের দ্বার রুদ্ধ হবে
এবং পক্ষীর রবে লোকে উঠে দাঁড়াবে,
ও বাদ্যকারিণী কন্যারা সকলে ক্ষীণ হবে;
আবার লোকে উচ্চস্থান হতে ভীত হবে,
ও পথে ত্রাস হবে,
কদম পুষ্পিত হবে,
ফরিঙ্গ অতি কষ্টে চলবে,
ও কামনা নিস্তেজ হবে;
কেননা মানুষ আপন নিত্যস্থায়ী নিবাসে চলে যাবে
ও বিলাপকারীরা পথে পথে বেড়াবে।
সেই সময়ে রৌপ্যের তার খুলে যাবে,
সোনার পানপাত্র ভাঙ্গবে,
এবং উনুইর ধারে কলস খন্ড খন্ড হবে,
ও কুপের চক্রভগ্ন হবে ।
আর ধূলি পূর্বব মৃত্তিকাতে প্রতিগমন করবে,
এবং আত্মা যাঁর দান
সেই ঈশ্বরের কাছে প্রতিগমন করবে।”
PKBeng 66.3
উপদেশক ২২:১-৭।
কেবলমাত্র যুবক যুবতীদের প্রতি নয়, কিন্তু প্রাপ্ত বয়স্ক এবং যারা গতবয়স্ক এবং জীবন-সূর্য অস্তমিত প্রায়, তাদের প্রতিও শলোমনের জীবন সতর্ক বাণীতে পরিপূর্ণ । আমরা যৌবনের চাঞ্চল্য দেখতে ও শুনতে পাই যুবক যুবতীরা সঠিক ও ভুলের মধ্যে দোদুল্যমান, মনের মন্দ উত্তেজনার স্রোত তাদেরকে অত্যাধিক শক্তিশালী বলে প্রমাণ করছে। পূর্ণ বয়স্ক লোকদের মধ্যে আমরা অস্থিরতা এবং অবিশ্বস্ততা আশা করি না; আমরা চাই চরিত্র প্রতিষ্ঠিত হোক, নীতিমালা দৃঢ়রূপে স্থাপিত হোক। কিন্তু তা সর্বদা এরূপ হয় না । যখন শলোমনের চরিত্রের দিক হতে বলিষ্ঠ ওক বৃক্ষের তুল্য হবার কথা, তখনই তিনি প্রলোভনের ক্ষমতা বলে তার স্থিরসংকল্প হতে পতিত হলেন, যখন তার মহা শক্তিশালী হবার কথা, আর তখনই তিনি সর্বাধিক দুর্বল হয়ে পড়লেন। PKBeng 67.1
এরূপ দৃষ্টান্ত হতে আমাদেরকে শিক্ষা করতে হবে যে, সতর্কতা এবং প্রার্থনা যুবক যুবতী এবং বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্য একমাত্র নিরাপত্তা। উচ্চ পদ এবং মহা সুযোগের মধ্যে নিরাপত্তা। একজন ব্যক্তি হয়ত বহু বছর একটি প্রকৃত খ্রীষ্টান অভিজ্ঞতা উপভোগ করতে পারে, কিন্তু সে তখনও শয়তানের আক্রমণের শিকার হতে পারে। অভ্যন্তরীণ পাপ বাহ্যিক প্রলোভনের সংগ্রামের সাথে, এমনকি জ্ঞানী এবং শক্তিশালী শলোমনও পরাস্ত হয়েছিলেন তার ব্যর্থতা আমাদেরকে শিক্ষা দেয় যে একজন মানুষ যতই বুদ্ধিবৃত্তি সম্পন্ন গুণাবলির অধিকারী হোক না কেন, এবং সে অতীতে যতই বিশ্বস্তভাবে ঈশ্বরের সেবা করে থাকুক না কেন সে কখনও তার নিজের জ্ঞান এবং ন্যায়পরায়ণতার উপর নির্ভর করতে পারে না । PKBeng 68.1
প্রতিটি যুগে এবং প্রতিটি দেশে, চরিত্র গঠনের ভিত্তি এবং নমুনা একই রয়ে গেছে ঐশ্বরিক ব্যবস্থা, “তুমি তোমার সমস্ত অন্তঃকরণ...মন দিয়ে তোমার ঈশ্বর প্রভুকে প্রেম করবে, এবং তোমার প্রতিবেসীকে আপনার মত প্রেম করবে,” আমাদের ত্রাণকর্তার চরিত্রে এবং জীবনে মহান নীতি প্রকাশিত হয়েছিল, যা একমাত্র নিরাপদ ভিত্তি একমাত্র নিশ্চিত পথ প্রদর্শক। লুক ১০:২৭। “আর তোমার সময়ে সুস্থিরতা হবে, ত্রাণের প্রজ্ঞার ও জ্ঞানের বাহুল্য হবে,” প্রজ্ঞা ও জ্ঞান যা কেবলমাত্র ঈশ্বরের বাক্যই বণ্টন করতে পারে । যিশাইয় ৩৩:৬। PKBeng 68.2
যখন ইস্রায়েলের কাছে তাঁর আজ্ঞা সকলের প্রতি আজ্ঞাবহ হবার কথা বলা হয়েছিল, তা তখন যেমন সত্য ছিল, এটি এখনও তদ্রূপ সত্য “কেননা জাতি সকলের সমক্ষে তাই তোমাদের জ্ঞান ও বুদ্ধিস্বরূপ হবে। দ্বিতীয় বিবরণ ৪:৬। এই স্থানেই ব্যক্তিগত ন্যায়পরায়ণতা, গৃহের পবিত্রতা, সমাজের মঙ্গল এবং জাতির সুস্থিরতা। জীবনের সকল ঝঞ্ঝাট এবং বিপদ এবং পরস্পর বিরোধী দাবী সময়ের মধ্যে একটি নিরাপদ এবং নিশ্চিত নিয়ম, ঈশ্বর যা কিছু বলেন তা করা। “সদাপ্রভুর বিধি সকল যথার্থ,” এবং এসকল কর্ম যে করে, সে কখনও বিচলিত হবে না।” গীতসংহিতা ১৯:৮; ১৫:৫। PKBeng 68.3
যারা শলোমনের ধর্মোদ্রোহিতার প্রতি মনোযোগ প্রদান করবে, তারা পাপের প্রতি সর্ব প্রথম পদক্ষেপ বর্জন করবে যা তাকে পরাজিত করেছিল। একমাত্র স্বর্গের অবশ্য করণীয়ের প্রতি আজ্ঞাবহতাই তাকে ধর্মোদ্রোহিতা হতে মানুষকে রক্ষা করবে ঈশ্বর মানুষের ওপরে মহা জ্যোতি এবং অনেক আশীর্বাদ ন্যাস্ত করেছেন; কিন্তু যদি এই আলো এবং এই আশীর্বাদ সকল গ্রহণ করা না। হয় তাহলে ঐ সকল অনাজ্ঞাবহতা এবং ধর্মোদ্রোহিতার বিরুদ্ধে নিরাপত্তা স্বরূপ হবেনা। যখন, যাদেরকে ঈশ্বর উচ্চ পদ এবং দায়িত্ব উন্নীত করেছেন, তারা তার কাছ থেকে মানব-জ্ঞানের প্রতি ফিরে তখন তাদের জ্যোতি ক্ষীণ হয়ে আসে। তাদের ওপরে ন্যাস্ত, দক্ষতা একটি ফাদস্বরূপ হয় । PKBeng 69.1
বিরোধীতার অবসান হলে কিছু সংখ্যক লোক থেকে যাবে যারা ঈশ্বরের কাছ হতে সরে যাবে। এরূপে শয়তান পরিস্থিতির রূপ দেবে যে, যাবৎ না আমরা ঐশ্বরিক শক্তি দ্বারা সুরক্ষিত হই, সে পর্যন্ত ঐ সকল আত্মার ---- নির্মাণ কৌশল অতিন্দ্রীয় ভাবে দুর্বল করবে। আমাদেরকে প্রতিটি ধাপ পরীক্ষা করে দেখতে হবে, “এই কি সদাপ্রভুর পথ?” যে পর্যন্ত জীবন থাকবে, ততদিন একটি দৃঢ় উদ্দেশ্য নিয়ে আবেগ এবং উত্তেজনাকে চৌকি দিতে হবে । আমরা যদি ঈশ্বরের ওপরে নির্ভর না করি এবং খ্রীষ্টের জীবন আড়াল করে না রাখি, তবে আমরা এক মুহূর্তও নিরাপদ থাকতে পারি না। সতর্কতা এবং প্রার্থনা পবিত্রতার রক্ষা কবচ। PKBeng 69.2
যারা ঈশ্বরের নগরে প্রবেশ করে, তারা সংকীর্ণ পথ দিয়ে প্রবেশ করে- মানসিক যন্ত্রণাদায়ক প্রচেষ্টা; কেননা “অপবিত্র কিছু অথবা ঘৃণ্যকারী” সেখানে “প্রবেশ করতে পাবে না।” প্রকাশিত বাক্য 22:27। কিন্তু পতিত কোন ব্যক্তির হতাশাগ্রস্ত হবার প্রয়োজন নেই। প্রাচীনেরা, একদা ঈশ্বরের সমাদর করেছে, হয়ত বা তাদের আত্মাকে অপবিত্র করেছে, সৎগুণ যৌনবাসনার বেদীর ওপরে জলাঞ্জলী দিয়েছে কিন্তু যদি তারা অনুতপ্ত হয় পাপ পরিত্যাগ করে এবং ঈশ্বরের কাছে ফিরে আসে, তাহলে তাদের জন্য আশা রয়েছে। যিনি এই কথা বলেন, “তুমি মরণ পর্যন্ত বিশ্বস্ত থাক, তাতে আমি তোমাকে জীবন মুকুট দেব,” এবং নিমন্ত্রণও জানাচ্ছেন, “দুষ্ট আপন পথ অধার্মিক আপনা সংকল্প ত্যাগ করুক; এবং সে সদাপ্রভুর প্রতি ফিরে আসুক তাতে তিনি তার প্রতি করুণা করবেন; আমাদের ঈশ্বরের প্রতি ফিরে আসুক, কেননা তিনি প্রচুর রূপে ক্ষমা করবেন।” প্রকাশিত বাক্য ২:১০; যিশাইয় ৫৫:৭। ঈশ্বর পাপ ঘৃণা করেন, কিন্তু তিনি পাপীকে ভালবাসেন। “আমি তাদের বিপথগমণের প্রতিকার করব।” হোশেয় ১৪:৪ । PKBeng 69.3
শলোমনের অনুতাপ ছিল অকপট; কিন্তু তার মন্দ কাজের দৃষ্টান্ত যে ক্ষতি করেছিল, তার সুরাহা করা যাবে না। তার ধর্মোদ্রোহিতার কাল ব্যাপী রাজ্যের মধ্যে এমন লোক ছিল, যারা তাদের ওপরে ন্যাস্ত দায়িত্বে অটল ছিল, তাদের পবিত্রতা ও বিশ্বস্ততা রক্ষা করেছিল। কিন্তু অনেকেই বিপথে চলে গিয়েছিল; এবং মন্দ বাহিনী পুতুল পূজা এবং জাগতিক আচরণ চালু করেছিল, যা অনুতপ্ত রাজা কর্তৃক সহজে থামান যাবে না। উত্তমের জন্য তার প্রভাব ছিল ভীষণ দুর্বল। অনেকে তার নেতৃত্বের পূর্ণ আস্থা স্থাপন করতে ইতঃস্তত করেছিল। রাজা যদিও তার পাপ স্বীকার করেছিলেন এবং তার পরবর্তী বংশধরদের উপকারার্থে তার অন্যায় এর অনুতাপের কথা লিপিবদ্ধ করেছিলেন তথাপি তিনি তার অন্যায় কাজের অমঙ্গলপূর্ণ প্রভাব সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করার প্রত্যাশা করতে পারেননি। তার ধর্মোদ্রোহিতা দ্বারা সাহসী হয়ে অনেকে মন্দকার্য, কেবল মন্দকার্যই করে যেতে লাগল। আর তার অনুগামী শাসনকর্তাদের অনেকের নিম্নাভিমুখী গতিপথ তার ঈশ্বর-প্রদত্ত ক্ষমতার অপব্যবহারের দুঃখজনক প্রভাবের প্রমাণ চিহ্নিত করা যেতে পারে । PKBeng 70.1
তার সময়ের মন্দের ওপরে তিক্ত মানসিক চেতনার নিদারুণ যন্ত্রণার মধ্যে, শলোমন বাধ্য হলেন ঘোষণা করতে, “যুদ্ধাস্ত্র অপেক্ষাও প্রজ্ঞা উত্তম কিন্তু একজন পাপী বহু মঙ্গল নষ্ট করে।” “আমি সূর্যের নীচে এক মন্দ বিষয় দেখেছি, তা শাসনকর্তার সামনে উৎপন্ন ভ্রমের ন্যায় দেখায়; অজ্ঞানতা অতি উচ্চপদে স্থাপিত হয়।” PKBeng 70.2
“মৃত মক্ষিকাদের দ্বারা বণিকের সুগন্ধি তৈল দুর্গন্ধ হয় ও মেতে উঠে; প্রজ্ঞা ও সম্মান অপেক্ষা যৎকিঞ্চিৎ অজ্ঞানতা গুরুভার।” উপদেশক ৯:১৮; ১০:৩, ৬, ১। PKBeng 70.3
শলোমনের জীবন দ্বারা প্রদত্ত অনেক শিক্ষামালার মধ্যে আমরা মন্দের প্রভাবের শক্তি অপেক্ষা অন্য কোন কিছুর গুরুত্ব প্রদান করা হয়নি। আমাদের পারিপার্শ্বিক অবস্থা যতই সংকীর্ণ হোক না কেন আমরা একটি প্রভাব বিস্তার করব, হয় তা আশীর্বাদ অথবা অভিশাপের জন্য। আমাদের জ্ঞান অথবা নিয়ন্ত্রণের বাইরে, এটি অন্যদের ওপরে আশীর্বাদ অথবা অভিশাপের বাণী উচ্চারণ করে। এটি হয়ত অসন্তোষ এবং স্বার্থপরতার বিষণ্নতার ভারগ্রস্ত হতে পারে, অথবা লালিত কোন পাপের মারাত্মক কলংক দ্বারা বিষময় হতে পারে; অথবা এটি বিশ্বাসের জীবন-দায়ী শক্তির উৎসাহ এবং প্রত্যাশা দ্বারা পূর্ণ এবং প্রেমের সুগন্ধ দ্বারা মধুরাস্বাদযুক্ত হতে পারে। কিন্তু এটি নিশ্চিত যে এই শক্তি হয় উত্তম না হয় মন্দ হবেই । PKBeng 70.4
আমাদের প্রভাব হবে মৃত্যু হতে মৃত্যুর একটি আস্বাদ; একটি ভয়াবহ চিন্তা, তথাপি এটি সম্ভব ভুল পথে পথে পরিচালিত একটি আত্মা, অনন্তশান্তির অধিকারী খোয়াচ্ছে যে ক্ষতির হিসেব দিতে পারে! আর তথাপি একটি ত্বরাপূর্ণ কাজ, একটি চিন্তাহীন বাক্য অন্যের জীবনের ওপরে এমন গভীর একটি প্রভাব ফেলতে পারে যে, এটি তার আত্মার ধ্বংস সাধন করবে। চরিত্রের ওপরে একটি দাগ অনেককে খ্রীষ্টের কাছ হতে দূরে নিয়ে যেতে পারে। PKBeng 71.1
বপিত বীজ যেমন শস্য উৎপন্ন করে, আর ঐ বীজ পুনরায় বপন করে বহুগুণে শস্য লাভ হয়। অন্যদের সাথে আমাদের সম্পর্কেও এ নিয়ম সত্য। প্রতিটি কাজ, প্রতিটি বাক্য, একটি বীজ, যা ফল উৎপন্ন করে। চিন্তাপূর্ণ প্রতিটি দয়ার কার্য আজ্ঞাবহতা, আত্ম অস্বীকার, অন্যদের মধ্যে ফল উৎপন্ন করবে এবং তাদের মাধ্যমে অন্যদের মধ্যেও ফল উৎপাদিত হবে। সুতরাং প্রতিটি ঈর্ষা, পরশ্রীকাতরতা অথবা বিরুদ্ধ মত প্রকাশ একটি জীব যা “তিক্ততার কোন মূল অঙ্কুরিত” করবে, যার দ্বারা অনেকে কলুষিত হবে। ইব্রীয় ১২:১৫। আর বিষের পরিমাণ কত অধিকই না হবে! এরূপে উত্তম এবং মন্দের বপন বহুকাল, এবং অনন্তকাল পর্যন্ত চলতে থাকে । PKBeng 71.2