ভাববাদিগণের এবং রাজগণের কাহিনী
৩১—পৌত্তলিকদের জন্য আশা
তার পরিচর্যা কাজের মধ্য দিয়ে যিশাইয় পৌত্তলিকদের জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্য সম্পর্কে একটি পরিষ্কার সাক্ষ্য বহন করেছিলেন। অন্যান্য ভাববাদীগণ ঐশ্বরিক পরিকল্পনার বিষয় উল্লেখ করেছিলেন, কিন্তু তাদের ভাষা সর্বদা বোধগম্য ছিল না। যিশাইয়ের কাছে এটি প্রদান করা হয়েছিল, যিহুদার কাছে সত্যটি অত্যন্ত পরিষ্কার করে দিতে যে, ঈশ্বরের ইস্রায়েল জাতির মধ্যে অনেককে গণনা করতে হবে, যারা মাংসে অব্রাহামের বংশধর ছিল না। এই শিক্ষাটি এই যুগের ধর্মতত্ত্বের সাথে সমন্বয় রক্ষা করেনি, তথাপি, নির্ভিকভাবে ঈশ্বর প্রদত্ত বার্তা ঘোষণা করেছিলেন এবং অনেক আকাঙ্ক্ষিত আত্মাগণের কাছে আশা আনয়ন করেছিল, যারা অব্রাহামের বংশের কাছে কৃত প্রতিজ্ঞাত আশীর্বাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। PKBeng 310.1
পরজাতিগণের কাছে প্রেরিত, রোমের বিশ্বাসীদের কাছে তার পত্রে, যিশাইয়ের শিক্ষার এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের প্রতি মনোযোগ আহ্বান করেন, যিশাইয় অতিশয় সাহসপূর্বক বলেন, পৌল ঘোষণা করেন “যাহারা আমার অন্বেষণ করে নাই, তাহারা আমাকে পাইয়াছে; যাহারা আমার নিকটে, জিজ্ঞাসা করে নাই, তাহাদিগকে দর্শন দিয়াছে।” রোমীয় ১০:২০। PKBeng 310.2
প্রায়ই দেখা গিয়েছে ইস্রায়েল সন্তানগণ, পৌত্তলিকদের জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্য বুঝতে অক্ষম বা অনিচ্ছুক ছিল । তথাপি এই উদ্দেশ্য ছিল যা তাদের একটি পৃথক লোক করেছিল এবং তাদের পৃথিবীর জাতিগণের মধ্যে একটি স্বাধীন জাতিরূপে প্রতিষ্ঠিত করলেন। অব্রাহাম, তাদের পিতা যার কাছে সর্বপ্রথম নিয়মের প্রতিজ্ঞা প্রদান করা হয়েছিল, তাকে তার জ্ঞাতিদের কাছ থেকে অনেক দূরে যেতে আহ্বান করা হয়েছিল, যেন তিনি পৌত্তলিকদের কাছে একজন আলোবাহক হন। যদিও বা তার কাছে প্রতিজ্ঞাটি একটি উন্নতি বিষয়ক অর্থা সমুদ্রতীরের বালুকণার ন্যায় অগণিত হবে; তথাপি এটি কোন স্বার্থপর উদ্দেশ্য নিয়ে ছিল না যে, তিনি কনান দেশে একটি মহাজাতির প্রতিষ্ঠাতা হবেন। তার সাথে ঈশ্বরের নিয়ম পৃথিবীর সমুদয় জাতিগণকে অন্তর্ভুক্ত করেছিল। “আমি তোমাকে আশীর্বাদ করিয়া” যিহোবা বলেন, “তোমার নাম মহ করিব; তাহাতে তুমি আশীর্বাদের আকর হইবে। যাহারা তোমাকে আশীর্বাদ করিবে, তাহাদিগকে আমি আশীর্বাদ করিব, যে কেহ তোমাকে অভিশাপ দিবে, আমি তাহাকে অভিশাপ দিব; এবং তোমাতে ভূমণ্ডলের যাবতীয় গোষ্ঠি আশীর্বাদ প্রাপ্ত হইবে।” আদিপুস্তক ১২:২,৩। PKBeng 310.3
ইসহাকের জন্মের কিয়কাল পূর্বে নিয়ম নবায়নের মধ্য দিয়ে, মানব জাতির জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্য পুনরায় সরলীকরণ করা হল । “পৃথিবীর যাবতীয় জাতি তাহাতেই আশীর্বাদ প্রাপ্ত হইবে;” প্রতিজ্ঞাত সন্ত ান সম্পর্কে এ ছিল সদাপ্রভুর নিশ্চয়বাণী। আদিপুস্তক ১৮:১৮। আর পরে স্বর্গীয় দর্শক আরও একবার বললেন, “আর তোমার বংশে পৃথিবীর সকল জাতি আশীর্বাদ প্রাপ্ত হইবে।” আদিপুস্তক ২২:১৮। PKBeng 311.1
এই নিয়মের সর্ব অন্তর্ভূক্তির শর্তাবলি অব্রাহামের সন্তানগণ এবং তার সন্তানদের কাছে পরিচিত ছিল, যেন ইস্রায়েল সন্তানগণ জাতিগণের একটি আশীর্বাদ স্বরূপ হতে পারে এবং “পৃথিবী ব্যাপী” ঈশ্বরের নাম কীর্তিত হয় (যাত্রা ৯:১৬), যেন তার মিসরের দাসত্ব হতে তারা মুক্তি লাভ করতে পারে। যদি তারা তাঁর নির্দেশ মালার প্রতি আজ্ঞাবহ হয় তবে তারা অন্যান্য লোকদের অপেক্ষা জ্ঞানে এবং বুদ্ধিতে অগ্রসর হতে পারত; কিন্তু এই মহাধিকারে পৌঁছতে হবে কেবলমাত্র যেন তাদের মাধ্যমে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য “পৃথিবীর সর্ব জাতির” জন্য পরিপূর্ণ হতে পারে। PKBeng 311.2
এই অত্যাশ্চর্য দূরদর্শীতা মিসরের দাসত্ব হতে ইস্রায়েলের মুক্তি এবং প্রতিজ্ঞাত দেশ অধিকারের সাথে যুক্ত যা অনেক পৌত্তলিকদের ইস্রায়েলের ঈশ্বরকে তারা সর্বোময় শাসনকর্তারূপে উপলব্ধি করতে পারে। “আমি মিসরের উপরে আপন হস্ত বিস্তার করিয়া মিস্ত্রীয়দের মধ্য হইতে ইস্রায়েল সন্তানগণকে বাহির করিয়া আনিলে, উহার জানিবে, আমিই সদাপ্রভু।” যাত্রাপুস্তক ৭:৫। এমনকি গর্বিত ফরৌণ যিহোবার ক্ষমতা উপলব্ধি করতে বাধ্য হয়েছিল। “যাও,” “সদাপ্রভুর সেবা কর গিয়া।” তিনি মোশি এবং হারোণকে জোর অনুরোধ করলেন, “এবং আমাকেও আশীর্বাদ কর।” যাত্রাপুস্তক ১২:৩১,৩২। PKBeng 311.3
ইস্রায়েলের অগ্রগামী বাহিনী দেখলেন, ইব্রীয়দের ঈশ্বরের ক্ষমতার কার্য সমূহের তথ্য তাদের অগ্রে গিয়েছে, আর পৌত্তলিকদের মধ্যে কেউ কেউ বুঝতে পারছিল যে, তিনিই একমাত্র সত্য ঈশ্বর। দুষ্ট নগর যিরিহোতে একজন পৌত্তলিক স্ত্রীলোকের সাক্ষ্য, “কেননা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু উপরিস্থ স্বর্গে ও নীচস্থ পৃথিবীতে ঈশ্বর।” যিহোশূয় ২:১১। যিহোবার সম্পর্কে জ্ঞান যা এরূপে তার কাছে এসেছিল, তার পরিত্রাণ নিশ্চিত করেছিল। “বিশ্বাসে রাহব বেশ্যা... অবাধ্যদের সহিত বিনষ্ট হইল না।” ইব্রীয় ১১:৩১। আর তার মন পরিবর্তন প্রতিমা পূজকদের প্রতি ঈশ্বরের অনুগ্রহের একটি বিচ্ছিন্ন ব্যাপার ছিল না, যে তাঁর ঐশ্বরিক ক্ষমতা উপলব্ধি করতে পেরেছিল । দেশের মধ্যে বহু সংখ্যক লোক- গিবীয়নিয়রা- তাদের পৌত্তলিকতা পরিত্যাগ করে ইস্রায়েলের সাথে সংযুক্ত হল, নিয়মের আশীর্বাদ সহভাগ করল । PKBeng 312.1
জাতীয়তা, গোষ্ঠী বা জাত, এসবের কোন পার্থক্য ঈশ্বর নির্ণয় করেন না। তিনি সকল মানব গোষ্ঠির নির্মাতা। সৃষ্টির দ্বারা সকল মনুষ্যই এক পরিবারভুক্ত, এবং মুক্তির মাধ্যমে সকলেই এক । খ্রীষ্ট প্রতিটি বিভাজন সৃষ্টিকারী প্রাচীর উচ্ছেদ করতে এসেছিলেন, মন্দিরের প্রাঙ্গণের প্রতিটি কক্ষ উন্মোচন করতে এসেছিলেন, যেন প্রতিটি আত্মা বিনা বাধায় ঈশ্বরের কাছে আসতে পারে। তাঁর প্রেম এতই প্রসারিত, এতই গভীর, এতই সম্পূর্ণ যে, এটি প্রত্যেক স্থানে প্রবেশ করতে পারে। এটি, শয়তানের প্রভাব দ্বারা প্রতারিত লোকদের তুলে ধরে, এবং ঈশ্বরের সিংহাসনের কাছাকাছি স্থাপন করে, যে সিংহাসন প্রতিজ্ঞার মেঘধনু দ্বারা বেষ্টিত। খ্রীষ্টেতে কোন যিহূদী, কি গ্রীক, দাস কি স্বাধীন হয় না । PKBeng 312.2
প্রতিজ্ঞাত দেশ অধিকারের পরে পরেই, পৌত্তলিকদের পরিত্রাণের জন্য যিহোবার হিতোকর পরিকল্পনা প্রায় সম্পূর্ণরূপে দৃষ্টি বহির্ভূত হয়েছিল, এবং তাঁর পরিকল্পনা নূতন করে স্থাপন করার আবশ্যকতা দেখা দিল। “পৃথিবীর প্রান্ত সকলে,” গীতরচক গীতগান করতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন, “স্মরণ করিবে এবং সদাপ্রভুর প্রতি ফিরিবে; জাতিগণের সমস্ত গোষ্ঠি তোমার সম্মুখে প্রণিপাত করিবে।” “মিসর হইতে প্রধান লোক আসিবে; কৃশ শীঘ্র ঈশ্বরের নিকট কৃতাঞ্জলি হইবে।” “ইহাতে জাতিগণ সদাপ্রভুর নামে ভয় করিবে, পৃথিবীর সমস্ত রাজা তোমার প্রতাপে ভীত হইবে।” “ইহা ভাবী বংশের জন্য লেখা হইবে; এবং যে জাতি সৃষ্ট হইবে, তাহারা সদাপ্রভুর প্রশংসা করিবে। কেননা তিনি আপন উচ্চ ধর্মধাম হইতে অবলোকন করিলেন; সদাপ্রভু স্বর্গ হইতে পৃথিবীতে দৃষ্টিপাত করিলেন; বন্দীর হাহাকার শুনিবার জন্য, মৃত্যুর সন্তানদিগকে মুক্ত করিবার জন্য; যেন প্রচারিত হয় সিয়োনে সদাপ্রভুর নাম, ও যিরূশালেমে তাহার প্রশংসা; যৎকালে জাতিগণ একত্র মিলিবে, ও রাজ্য সকল মিলিবে, সদাপ্রভুর সেবা করিবার জন্য।” গীতসংহিতা ২২:২৭; ৬৮:৩১; ১০২:১৫; ১৮-২২। PKBeng 313.1
যদি ইস্রায়েল তার ওপরে অর্পিত দায়িত্বের প্রতি বিশ্বস্ত থাকত পৃথিবীর সর্বজাতি তার আশীর্বাদের সহভাগী হতে পারত। কিন্তু যাদের কাছে ত্রাণকারী সত্যের একটি জ্ঞান অর্পণ করা হয়েছিল, তা তাদের চারপাশের লোকদের হৃদয় স্পর্শ করেনি। ঈশ্বরের উদ্দেশ্য যেমন লক্ষ্য ভ্রষ্ট হয়েছিল পৌত্তলিকগণও তেমনি তাঁর অনুগ্রহের প্রতি ক্ষীণ হয়ে এসেছিল । সত্যের জ্যোতি তুলে নেয়া হল, এবং সেখানে অন্ধকার বিরাজ করল। জাতিগণ অজ্ঞানতার যবনিকার উপর বিস্তৃত হল; ঈশ্বরের প্রেম লোকে খুব সামান্যই জানতে পারল; ভুল এবং কুসংস্কার সমৃদ্ধি লাভ করল । PKBeng 313.2
দৃশ্যটা এধরনের ছিল, যা যিশাইয়কে সম্ভাষণ জানিয়েছিল, যখন তিনি ভাববাণী বিষয়ক কার্যে আহত হয়েছিলেন; তথাপি তিনি নিরুৎসাহিত হননি, কেননা তার কাণে ঈশ্বরের সিংহাসন বেষ্টিত দূতগণের গান ধ্বনিত ইচ্ছিল, “সমস্ত পৃথিবী তাঁহার প্রতাপে পরিপূর্ণ।” যিশাইয় ৬:৩। ঈশ্বরের মণ্ডলী কর্তৃক গৌরবময় বিজয়ের দর্শন কর্তৃক তার বিশ্বাস শক্তিময় হল যখন “সমুদ্র যেমন জলে আচ্ছন্ন, তেমনি পৃথিবী সদাপভু বিষয়ক জ্ঞানে পরিপূর্ণ হয়।” যিশাইয় ১১:৯। “সর্বদেশীয় লোকদের যে ঘোমটা আচ্ছাদিত আছে, সর্বদেশীয় লোকদের সামনে যে আবরক বস্ত্র টাঙ্গানো আছে,” তা অবশেষে বিনষ্ট হবে। যিশাইয় ২৫:৭। কথা ছিল, ঈশ্বরের আত্মা তাদের ওপরে বর্ষিত হবে। যারা ধার্মিকতার জন্য ক্ষুধিত, তা ঈশ্বরের ইস্রায়েলের মধ্যে গণ্য হবে। “জলস্রোতের ধারে যেমন বাইশী বৃক্ষ, তেমনি তৃণের মধ্যে তাহারা অঙ্কুরিত হইবে,” ভাববাদী এ কথা বলেছিলেন। “একজন বলিবে, আমি সদাপ্রভুর; আর একজন যাকোবের নামে অভিহিত হইবে; আর একজন আপন হস্তে লিখিবে ‘সদাপ্রভুর উদ্দেশে’, ও ইস্রায়েল নামে উপাধি গ্রহণ করিবে।” যিশাইয় ৪৪:৪,৫। PKBeng 313.3
ভাববাদীর কাছে, পৃথিবীর মধ্যে অননুতপ্ত যিহুদীদের ছড়িয়ে দেবার জন্য ঈশ্বরের উপকার সাধক একটি প্রত্যাদেশ প্রদত্ত হয়েছিল। “এই জন্য আমার লোকেরা আমার নাম জানিবে।” সদাপ্রভু ঘোষণা করলেন, “এই জন্য তাহারা সেই দিন [জানিবে] যে, আমিই কথা বলিতেছি, দেখ, এই আমি।” যিশাইয় ৫২:৬। আর কেবলমাত্র তারাই আজ্ঞাবহতা এবং নির্ভরশীলতার শিক্ষা লাভ করবে না; তাদের প্রবাস স্থানে অন্যদের কাছে জীবন্ত ঈশ্বর সম্পর্কে একটি ধারণা দেয়া উচিত ছিল। বিজাতীয় সন্তানদের মধ্যে অনেকের মধ্য হতে তাঁকে তাদের স্রষ্টা এবং তাদের মুক্তিদাতারূপে জ্ঞাত হওয়া উচিত ছিল; তাদের উচিত ছিল, তাঁর সৃজনশীল ক্ষমতার একটি স্মারক রূপে তাঁর পবিত্র বিশ্রামবার পালন আরম্ভ করা; এবং যখন তিনি তাঁর লোকদের বন্দী দসা থেকে মুক্ত করতে “সর্ব জাতির দৃষ্টিতে আপন পবিত্র বাহু অনাবৃত করিবেন,” তখন “পৃথিবীর সমুদয় প্রান্ত” ঈশ্বরের পরিত্রাণ দেখিবে। ১০ পদ। পৌত্তলিকদের মধ্য থেকে ধর্মান্তরিত অনেকে সম্পূর্ণরূপে ইস্রায়েলের সাথে যোগদান করতে ইচ্ছা করেছিল এবং ফিরে গিয়ে তাদের সঙ্গী হতে চেয়েছিল। তাদের কেউই না বলুক, “সদাপ্রভু আপন প্রজাবৃন্দ হইতে আমাকে নিশ্চয়ই বিভিন্ন করিবেন।” (যিশাইয় ৫৬:৩), কেননা, যারা তাঁর কাছে নিজেদের সমর্পণ করবে এবং তাঁর ব্যবস্থা পালন করবে, তাদের কাছে ঈশ্বরের ভাববাদীর মাধ্যমে তাঁর বাক্য এরূপ ছিল যে, তারা ঐ সময় থেকে আত্মিক ইস্রায়েলের মধ্যে গণ্য হবে- পৃথিবীতে তার মণ্ডলী PKBeng 314.1
“আর যে বিজাতীয় সন্তানগণ সদাপ্রভুর পরিচর্যা করিবার নিমিত্ত, তাঁহার নামের প্রতি প্রেম দেখাইবার নিমিত্ত ও তাহার দাস হইবার নিমিত্ত সদাপ্রভুতে আসক্ত হয়, অর্থাৎ যে কেহ বিশ্রামবার পালন করে, অপবিত্র করে না, ও আমার নিয়ম দৃঢ় করিয়া রাখে, তাহাদিগকে আমি আপন পবিত্র পর্বতে আনিব, এবং আমার প্রার্থনা গৃহে আনন্দিত করিব; তাহাদের হোম বলি ও অন্য বলি সকল আমার যজ্ঞ বেদীর উপরে গ্রাহ্য হইবে, যেহেতু আমার গৃহ সর্বজাতির প্রার্থনার গৃহ বলিয়া আখ্যাত হইবে। প্রভু সদাপ্রভু, যিনি ইস্রায়েলের দূরীকৃত লোকদিগকে সংগ্রহ করেন, তিনি বলেন, আমি আরও অধিক সংগ্রহ করিয়া তাহার সংগৃহীত লোকদিগকে যোগ করিব।” ৬-৮ পদ। PKBeng 315.1
ভাববাদীকে বহুশতাব্দি পূর্বের প্রতিজ্ঞাত মশীহের আগমন কালের দিকে দৃষ্টিপাত করার অনুমতি প্রদান করা হয়েছিল। সর্ব প্রথম তিনি কেবলমাত্র “সঙ্কট ও অন্ধকার, যাতনার তিমির” দেখতে পেলেন । যিশাইয় ৮:২২। অনেকে যারা সত্যের আলো পাবার আকাঙ্ক্ষা করছিল, তারা ভুল শিক্ষা দ্বারা, দর্শন শাস্ত্র এবং আত্মিকবাদের হতবুদ্ধিকর গোলক ধাঁধার দিকে পরিচালিত হয়ে বিপথে চলে গিয়েছিল; অন্যান্যরা ভক্তির অবয়বধারী ছিল, কিন্তু তারা জীবনের বাস্তব ক্ষেত্রে প্রকৃত পবিত্রতা অর্জন করছিল না । দৃশ্যটি আশাহীন বলে মনে হল; কিন্তু অতি সত্ত্বর দৃশ্যটির পবির্তন হল, এবং ভাববাদীর চোখের সামনে একটি অতীব চমৎকার দৃশ্য পরিলক্ষিত হল । তিনি দেখলেন, ধার্মিকতার সূর্য তার পক্ষ মধ্যে আরোগ্য সহকারে উদিত হল; এবং যেন বিষ্ময়াভিভূত হয়ে বললেন, “কিন্তু যে দেশ পূর্বে যাতনাগ্রস্ত ছিল, তাহার তিমির আর থাকিবে না; তিনি পূর্বকালে সবূলূন দেশ ও নপ্তালি দেশকে তুচ্ছাস্পদ করিয়াছিলেন, কিন্তু উত্তরকালে সমুদ্রের নিকটবর্তী সেই পথ, যদনের তীরস্থ প্রদেশ, জাতিগণের গালীলকে, গৌরবান্বিত করিয়াছেন। যে জাতি অন্ধকারে ভ্রমণ করিত, তাহারা মহা আলোক দেখিতে পাইয়াছে; যাহারা মৃত্যুচ্ছায়ার দেশে বাস করিত, তাহাদের উপরে আলোক উদিত হইয়াছে।” যিশাইয় ৯:১, ২। PKBeng 315.2
জগতের এই গৌরবময় জ্যোতি, প্রত্যেক জাতি, বংশ, ভাষা, এবং প্রজাবৃন্দের কাছে পরিত্রাণ আনয়ন করবে। তাঁর সামনে কাজের বিষয় ভাববাদী অনন্ত পিতাকে বলতে শুনলেন, “তুমি যে যাকোবের বংশ সকলে উঠাইবার জন্য ও ইস্রায়েলের রক্ষিত লোকদিগকে পুনর্বার আনিবার জন্য আমার দাস হও, ইহা লঘু বিষয়; আমি তোমাকে জাতিগণের দীপ্তি স্বরূপ করিব, যেন তুমি পৃথিবীর সীমা পর্যন্ত আমার পরিত্রাণস্বরূপ হও।” সদাপ্রভু এই কথা বলেন, “আমি প্রসন্নতার সময়ে তোমার প্রার্থনার উত্তর দিয়াছি, এবং পরিত্রাণের দিবসে তোমার সাহায্য করিয়াছি; আর আমি তোমাকে রক্ষা করিব, ও প্রজাবৃন্দের সন্ধিরূপে নিযুক্ত করিব; তাহাতে তুমি দেশের উন্নতি সাধন করিবে, ও ধ্বংসিত অধিকার সকল অধিকারে আনিবে; তুমি বন্দিগণকে বলিবে, বাহির হও; যাহারা অন্ধকারে আছে, তাহাদিগকে বলিবে, প্রকাশিত হও। তাহারা পথে চলিবে ও বৃক্ষশূণ্য গিরি শ্রেণী তাহাদের চরাণিস্থান হইবে।” “দেখ, ইহারা দূর হইতে আসিবে; আর দেখ, ইহারা উত্তর ও পশ্চিম দিক হইতে আসিবে; আর ঐ লোকেরা সীনীম দেশ হইতে আসিবে।” যিশাইয় ৪৯:৬, ৮, ৯, ১২। PKBeng 316.1
যুগের মধ্য দিয়ে আরও দূরে দৃষ্টিপাত পূর্বক ভাববাদী এসকল গৌরবময় প্রতিজ্ঞার আক্ষরিক পূর্ণতা দেখলেন । তিনি দেখলেন, পরিত্রাণের সুসমাচার বাহকগণ পৃথিবীর শেষ পর্যন্ত, প্রত্যেক বংশ এবং প্রজাবৃন্দের কাছে যাচ্ছেন। তিনি শুনতে পেলেন, সদাপ্রভু সুসমাচার মণ্ডলীর বিষয় বলছেন, “কারণ সদাপ্রভু এই কথা বলেন, দেখ, আমি তাহার দিকে নদীর ন্যায় শান্তি ও উত্থলিত বন্যার ন্যায় জাতিগণের প্রতাপ বহাইব” “আর তিনি এই আদেশ শুনিতে পাইলেন, তুমি আপন তাম্বুর স্থান পরিসর কর; তোমার শিবিরের যবনিকা বিস্তারিত হউক, ব্যয়শঙ্কা করিও না; তোমার রজ্জু সকল দীর্ঘ কর, তোমার গোজ সকল দৃঢ় কর। কেননা তুমি দক্ষিণে ও বামে বিস্তীর্ণ হইবে, তোমার বংশ জাতিগণের অধিকার পাইবে।” যিশাইয় ৬৬:১২; ৫৪:২৩। PKBeng 316.2
যিহোবা ভাববাদীর কাছে ঘোষণা করলেন যে, তিনি “জাতিগণের কাছে, তশশি, পূল এবং ধনুর্দ্ধর লূদ, এবং ভূবল ও যবনের কাছে, যে দূরস্থ উপকূল সমূহ কখনও আমার খ্যাতি শুনে নাই ও আমার প্রতাপ দেখে নাই তাহাদরে কাছে প্রেরণ করিব এবং তাহারা জাতিগণের কাছে আমার প্রতাপ জ্ঞাত করিবে।” যিশাইয় ৬৬:১৯। PKBeng 316.3
“আহা; পর্বতগণের উপরে তাহারই চরণ কেমন শোভা পাইতেছে, সে সুসমাচার প্রচার করে; শান্তি ঘোষণা করে, মঙ্গলের সুসমাচার প্রচার করে, পরিত্রাণ ঘোষণা করে, সিয়োনকে বলে, তোমার ঈশ্বর রাজত্ব করেন।” যিশাইয় ৫২:৭। PKBeng 317.1
ভাববাদী ঈশ্বরের রব শ্রবণ করলেন, তিনি তাঁর মণ্ডলীকে তার নির্দ্ধারিত কাজে আহ্বান করলেন, যেন তাঁর চিরস্থায়ী রাজ্য আসার জন্য পথ প্রস্তুত হয়। নিঃসন্দেহে বার্তাটি ছিল সরল ও সহজ: PKBeng 317.2
“উঠ, দীপ্তিমতী হও, কেননা তোমার দীপ্তি উপস্থিত,
সদাপ্রভুর প্রতাপ তোমার উপরে উদিত হইল । ”
“কেননা, দেখ, অন্ধকার পৃথিবীকে; ঘোর
তিমির জাতিগণকে, আচ্ছন্ন করিয়াছে,
কিন্তু তোমার উপরে সদাপ্রভু উদিত হইবেন,
এবং তাঁহার প্রতাপ তোমার উপরে দৃষ্ট হইবে ।
রাজগণ তোমার অরুণোদয়ের আলোর কাছে আসিবে।”
“তুমি চারিদিকে চক্ষু তুলিয়া দেখ,
ইহারা সকলে একত্র হইয়া তোমার নিকট আসিতেছে;
তোমার পুত্রগণ দূর হইতে আসিবে,
তোমার কন্যাগণ কক্ষে করিয়া আনিত হইবে।
“আর বিজাতি সন্তানেরা তোমার প্রাচীর গাঁথিবে
তাহাদের রাজগণ তোমার পরিচর্যা করিবে :
কেননা আমি কোপ ভরে তোমাকে প্রহার করিতেছি;
কিন্তু অনুগ্রহে তোমার প্রতি করুণা করিলাম ।
আর তোমার পুরদ্বার সকল সর্বদা খোলা থাকিবে, কি দিন কি রাত কখনও রুদ্ধ হইবে না;
জাতিগণের ঐশ্বর্য তোমার নিকটে আনা যাইবে;
আর তাহাদের রাজগণকেও সঙ্গে আনা যাইবে।”
“হে পৃথিবীর প্রান্ত সকল, আমার প্রতি দৃষ্টি করিয়া
পরিত্রাণ প্রাপ্ত হও।
কেননা আমিই ঈশ্বর, আর কেহ নয়।’
PKBeng 317.3
যিশাইয় ৬০:১-৪, ১০, ১১, ৪৫:221
এক ঘোর অন্ধকারময় যুগে এক মহা আত্মিক জাগরণের এসকল ভবিষ্যদ্বাণী মিশন ক্ষেত্রগুলোর উন্নয়নের গতি পথে অদ্য পূর্ণতা লাভ হচ্ছে যা পৃথিবীর অজ্ঞান তিমির আচ্ছন্ন অঞ্চলসমূহে পৌছাচ্ছে । পৌত্তলিক দেশ সমূহে মিশনারী দল ভাববাদী কর্তৃক পতাকার কাছে সম্মানিত হয়েছেন, যারা সত্যের আলোর অন্বেষণ করছে, তাদের পথ দেখিয়ে দেবার জন্য স্থাপিত হয়েছিল । PKBeng 318.1
“আর সেই দিন এই ঘটিবে,” যিশাইয় বলেন, “যিশয়ের মূল, যিনি লোকবৃন্দের পতাকারূপে দাড়ান, তাঁহার কাছে জাতিগণ অন্বেষণ করিবে; আর তাঁহার বিশ্রাম স্থান প্রতাপান্বিত হইবে। আর সেই দিন এই ঘটবে, প্রভু আপন প্রজাগণের অবশিষ্টাংশকে, মুক্ত করিয়া আনিবার জন্য দ্বিতীয়বার হস্তক্ষেপ করিবেন।...আর তিনি জাতিগণের জন্য পতাকা তুলিবেন, ইস্রায়েলের তাড়িত লোকদিগকে একত্র করিবেন, ও পৃথিবীর চারকোণ হইতে যিহূদার ছিন্নভিন্ন লোকদিগকে সংগ্রহ করিবেন।” যিশাইয় ১১:১০- ১২। PKBeng 318.2
মুক্তির দিন সন্নিকট। “কেননা সদাপ্রভুর প্রতি যাহাদের অন্তঃকরণ একাগ্র, তাহাদের পক্ষে আপনাকে বলবান দেখিবার জন্য তাহার চক্ষু পৃথিবীর সর্বত্র ভ্রমণ করে।” ২ বংশাবলি ১৬:৯। সর্বজাতি, বংশ, এবং ভাষাবাদীর মধ্যে, তিনি এমন নর-নারীদের দেখেন যারা জ্ঞান এবং আলোর জন্য প্রার্থনা করছে। তাদের আত্মা অতৃপ্ত: তারা দীর্ঘদিন যাবৎ ভস্ম ভোজন করেছে। যিশাইয় ৪৪:২০। সমস্ত ধার্মিকতার শত্রু পশ্চাদপদ হয়েছে, এবং তারা অন্ধের ন্যায় হাতড়িয়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু অন্তরাত্মায় তারা স এবং এক উত্তম পথ জানবার বাসনা করছে। যদিওবা পৌত্তলিকতার গভীরে, ঈশ্বরের লেখা ব্যবস্থা সম্পর্কে এবং তাঁর পুত্র যীশুর সম্পর্কে কোন ধারণাবিহীন, তারা, মন ও চরিত্রের ওপরে ঈশ-শক্তির বহুবিধ-উপায় প্রকাশ করেছে। PKBeng 318.3
কখনও কখনও যাদের ঈশ্বর সম্পর্কে কোন জ্ঞান নেই, অন্যদিকে, যা থেকে তারা ঐশ্বরিক অনুগ্রহের শক্তি প্রয়োগের ভেতরে যা লাভ করেছে, তারা তাঁর দাসদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করেছে, তাদের নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের রক্ষা করেছে। পবিত্র আত্মা মহান চরিত্রের সত্যের অন্বেষীদের অনেকের অন্তরে খ্রীষ্টের অনুগ্রহ প্রতিস্থাপন করছেন। তার প্রকৃতির বিপরীতে, তার পূর্বের শিক্ষার বিরুদ্ধে তার সহানুভূতি জাগরুক করছে। “যিনি সকল মনুষ্যকে দীপ্তি দেন, তিনি জগতে এসিয়াছিলেন” (যোহন ১:৯), ঐ দীপ্তি তার অন্তরে আলো দিচ্ছে; আর এই জ্যোতি, কার্যতঃ তার চরণ ঈশ্বরের রাজ্যের দিকে পথ দেখিয়ে দেবে। ভাববাদী মীখা বলেছিলেন: “অন্ধকারে বসিলেও সদাপ্রভু আমার আলোকস্বরূপ হইবেন । ....তিনি আমাকে বাহির করিয়া আলোতে আনিবেন, আমি তাঁহার ধর্মশীলতা দর্শন করিব।” মীখা ৭:৮,৯। PKBeng 319.1
স্বর্গের পরিত্রাণ পরিকল্পনা অনেক প্রসারিত যা, সমুদয় জগকে গ্রহণ করে । ঈশ্বর বিনয়ী মানব সমাজের মধ্যে জীবন বায়ু সঞ্চারিত করতে চান। আর তিনি যে ব্যক্তি সরল চিত্তে উচ্চতর এবং শ্রেষ্ঠতর কোন কিছু যাচঞা করে, তাকে তাদের কাছে নিরুসাহিত করবেন না। তিনি অবিরত তাদের কাছে তাঁর দূত প্রেরণ করছেন, যারা অত্যন্ত নিরুসাহপূর্ণ পরিস্থিতি দ্বারা পরিবেষ্টিত থেকে কোন শক্তির জন্য প্রার্থনা করে যা তাদের অধিকার করতে এবং মুক্তি এবং শান্তি আনয়ন করার জন্য তাদের অপেক্ষা অধিক উচ্চে । ঈশ্বর বিভিন্ন উপায়ে আপনাকে তাদের কাছে প্রকাশ করবেন এবং দূরদর্শীতার স্পর্শে তাদের স্থাপন করবেন যা একজনের ওপরে বিশ্বাস প্রতিষ্ঠিত করবে যিনি সকলের জন্য মূল্য প্রদান করেছেন, “যেন তাহারা ঈশ্বরে প্রত্যাশা রাখে, এবং ঈশ্বরের কার্যসকল ভুলিয়া না যায়; কিন্তু তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করে।” গীতসংহিতা ৭৮:৭। PKBeng 319.2
“বীর হইতে কি ধৃত প্রাণী হরণ করা যায়? কিম্বা ন্যায়বানের বন্দীগণকে কি মুক্ত করা যায়?” “সদাপ্রভু এই কথা কহেন, অবশ্য বীরের বন্দীগণকে হরণ করা যাইবে, ও ভীম বিক্রান্তের ধৃত প্রাণীকে মুক্ত করা যাইবে।” যিশাইয় ৪৯:২৪, ২৫। “যাহারা ক্ষোদিত প্রতিমাতে নির্ভর করে, যাহারা ছাঁচে ঢালা প্রতিমাদিগকে বলে, তোমরা আমাদের দেবতা, তাহাদিগকে ফিরাইয়া দেয়া যাইবে, তাহারা নিতান্ত লজ্জিত হইবে । যিশাইয় ৪২:১৭। PKBeng 320.1
“ধন্য সেই, যাহার সহায় যাকোবের ঈশ্বর, যাহার আশাভূমি সদাপ্রভু, তাহার ঈশ্বর।” গীতসংহিতা ১৪৬:৫। “হে আমার বন্দিগণ তোমরা ফিরিয়া দৃঢ় দুর্গে আইস।” সখরিয় ৯:১২। পৌত্তলিক দেশের সকল “সরল লোকের জন্য অন্ধকারে জ্যোতি উদিত হয়।” গীতসংহিতা ১১২:৪। ঈশ্বর বলেছেন: “আমি অন্ধদিগকে তাহাদের অবিদিত পথ দিয়া লইয়া যাইব; যে সকল মার্গ তাহারা জানে না, সেই সকল মাৰ্গ দিয়া তাহাদিগকে চালাইব; আমি তাহাদের অগ্রে অন্ধকারকে আলোক, বক্রভূমিকে সরল করাইব; এই সমস্ত আমি করিব, তাহাদিগকে পরিত্যাগ করিব না।” যিশাইয় ৪২:১৬। PKBeng 320.2