প্রেরিতগণের কার্য-বিবরণ
২র্থ অধ্যায়—য় অধ্যায় বারো জনের প্রশিক্ষণ
তাঁর কাজ চালিয়ে নেয়ার জন্য খ্রীষ্ট উচ্চ শিক্ষিত বা সনহেন্দ্রিন মহাসভার বাকপটু লোকদের অথবা রোমীয় ক্ষমতা সম্পন্ন্য ব্যক্তদের নিযুক্ত করেন নি। আত্ম—ধার্মিক যিহুদী গুরুদের পাশ কাটিয়ে মহান কারিগর (খ্রীষ্ট) নগণ্য, অশিক্ষিত, ও অদক্ষ লোকদের মনোনিত করলেন যেন তাঁর সত্যের বার্তা দৃঢ় কন্ঠে ঘোষণা করে সারা বিশ্বকে তোলপাড় করতে পারেন। এসব লোকদের তিনি তাঁর মন্ডলীর নেতা হিসেবে প্রশিক্ষণ দিয়ে শিক্ষিত ও দক্ষ কারিগর গড়ে তুলবেন। পক্ষান্তরে তারা অন্যান্যদের প্রশিক্ষণ দেবেন যেন প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত লোকেরা সুসমাচার বার্তা নিয়ে বিশ্ব্যাপী ছড়িয়ে পড়েন। তারা যেন তাদের কার্যে কৃতকার্য হন, এর জন্য পবিত্র আত্মা তাদের উপর বর্ষিবে। মানুষের শক্তিতে নয় অথবা মানুষের জ্ঞানে নয় কিন্তু ঈশ্বরের ক্ষমতাতেই সুসমাচার প্রচারিত হবে। AABen 14.1
পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষকের দ্বারা সারে তিন বছর যাবত শিষ্যরা সরাসরি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়েছিলেন, ব্যক্তিগন সাহচর্য ও সম্পৃক্ততার মাধ্যমে খ্রীষ্ট তাঁর কাজের নিমিত্ত তাদের প্রশিক্ষণ দেন। দিনের পর দিন তারা তাঁর সহিত চলা—ফেরা ও কথা বলেন, তারা প্রত্যক্ষভাবে দেখেন কিভাবে তিনি পরিশ্রান্ত ভারাক্রান্ত লোকদের উৎসাহ ও উৎ্ফুল করেন, এবং তিনি কি ভাবে অসুস্থ পীড়িত লোকদের প্রতি সহানুভূতি দেখান ও তার ক্ষমতা দ্বারা তাদের উপর অলৌকিক কার্য সাধ্নের মাধ্যমে সুস্থ করেন। মাঝে মধ্যে তিনি তাদের সঙ্গে পর্বতর পাদ দেশে বসে তাদের শিক্ষা দেন; কোন কোন সাগর পাড়ে অথবা পথের পার্শ্ব্ তাদের শিক্ষা দেন, এভাবে তিনি ঈশ্বরের রাজ্যের রহস্য তাদের কাছে প্রকাশ করেন। যখনই মানুষের হৃদয় স্বগীয় বার্তা গ্রহণ করার জন্য তৈরী হত, তৎ্ক্ষণাৎ তিনি সত্যের বার্তা ও পরিত্রাণের পথ তাদের কাছে প্রকাশ করতেন। তিনি শিষ্যদের হুকুম করেন নি,” এ কাজ কর, ও কাজ কর” বলে, কিন্তু তিনি তাদের বলেছেন, “আমার পশ্চাৎ আইস।” গ্রামে— গঞ্জে ও শহরে—নগরে যাত্রা করার সময় তিনি তাদের সঙ্গে নেন যেন তিনি কিভাবে লোকদের শিক্ষা দেন তা তারা প্রত্যক্ষ ভাবে দেখতে পান। এক স্থান হতে অন্য স্থানে তারা তাঁর সঙ্গে যাত্রা করেন। খ্র্রীষ্টের মিতব্যয়ীতা বা হিসেব করে ব্যয় করার পদ্ধতি তারা তাঁর কাছ থেকে শিক্ষালাভ করেন, এবং তাঁরই মত তারাও মাঝে মধ্যে ক্ষুধিত ও পরিশ্রান্ত ছিলেন। জনাকীর্ণ রাস্তায়, হ্রদের পাশে, একাকীত্ব মরুভূমিতে, তারা তাঁর সঙ্গে সঙ্গে ছিলেন। জীবনের সব অবস্থান ও পরিস্তিতিতে তারা তাকে দেখেছেন। AABen 14.2
বারো জনকে অভিষেকের মাধ্যমে মন্ডলী সংগঠনের প্রথম ধাপটি সম্পাদন করা হয় যেন খ্রীষ্টের প্রস্থানের পর তারা এ জগতে তাঁর কাজ চালিয়ে রাখতে পারেন। এ অভিষেক সম্বন্ধে কথিত আছে, “পরে তিনি পবর্তে উঠিয়া, আপনি যাঁহাদিগকে ইচ্ছা করিলেন, নিকটে ডাকিলেন; তাহাতে তাঁহারা তাঁহার কাছে আসিলেন। আর তিনি বারোজনকে নিযুক্ত করিলেন, যেন তাঁহারা তাহার সঙ্গে সঙ্গে থাকেন, ও যেন তিনি তাহাদিগকে প্রচার করিবার জন্য প্রেরণক্রিতে পারেন। মার্ক ৩:১৩, ১৪। AABen 15.1
স্পর্শকাতর দৃশ্যের দিকে লক্ষ্য করুন। স্বর্গীয় রাজার প্রতি চেয়ে দেখুন, বারোজন শিষ্যের দ্বারা বেষ্টিত, যাদেরকে তিনি মনোনিত করেছেন। তাদেরকে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে প্রেরণের জন্য তিনি উদ্যত প্রায়। এসব দুবলচিত্ত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে, তার—বাক্য এবং আত্মার শক্তিতে, কিভাবে সবার কাছে পরিত্রাণ সহজলব্ধ হতে পারে তার রূপরেখা তিনি তৈরী করলেন। AABen 15.2
ঈশ্বর ও স্বর্গীয় দূতেরা আনন্দের সহিত ও প্রফুল্লচিত্তে এ দৃশ্য লক্ষ্য করছিলেন। পিতা ঈশ্বর জানতেন যে ঐ বারোজনের মাধ্যমেই স্বর্গীয় জ্যোতি বিশ্বব্যপী বিকিরণ হবে; তার পুত্রের জন্য তারা সাক্ষ্য বহন করবেন এবং তাদের ওষ্ঠ দ্বারা তাঁর বাক্য প্রচারিত হবে, পুরুষানুক্রমে এবাক্য প্রতিধ্বনিত হতে থাকবে, শেষকাল পর্যন্ত। শিষ্যরা খ্রীষ্টের সাক্ষী হিসেবে জগতব্যাপী ছড়িয়ে যাবে, এবং তারা ঘোষণা দিবেন যে তারা খ্রীষ্টিকে স্বচক্ষে দেখেছেন ও তার কথা শুনেছেন। তাদের দফতর বা দায়িত্ব ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এর পূর্বে এত গুরুত্বপূর্ণ কার্যে মানুষকে কখনও আহ্বান করা হয়নি, তাদের অবস্থান শুধু খ্রীষ্টের থেকে দ্বিতীয় ছিল। মানুষের পরিত্রাণ কল্পে তারা ঈশ্বরের সহিত সহকার্যকারী হতে যাচ্ছেন। পুরাকালের বারোজন পিতৃকূল পতিগণ যেমন ইস্রায়েল জাতির প্রতিনিধি ছিলেন, তদ্রুপ বারোজন প্রেরিতরাও খ্রীষ্টিয় মন্ডলীর প্রতিনিদি বা স্তম্ভ। AABen 15.3
তাঁর পার্থিব্য সেবাকার্যের সময় খ্রীষ্ট যিহুদী ও পরজাতিদের মধ্যে বিভেদের দেয়াল ভেঙ্গে ফেলার প্রচেষ্টা আর্তু করেন, এবং সমস্ত মানব জাতির কাছে পরিত্রাণ বার্তা প্রচার করা শুরু করেন। যদিও বা তিনি যিহুদী ছিলেন, তিনি শমরীয়দের সহিত খোলামেলা ভাবে মেলা—মেশা করেন, এবং অবজ্ঞাত লোকদের সম্বন্ধে ফরীশীদের প্রথা শূণ্যের কোঠায় নামিয়ে দিলেন। অবজ্ঞাত লোকদের সহিত তিনি একই ছাদের নিচে ঘুমিয়েছেন, তাদের সহিত একই টেবিলে খেয়েছেন, এবং তাদের রাজপথে শিক্ষা দিয়েছেন। AABen 16.1
ত্রাণকর্তার ইচ্ছা ছিল ইস্রায়েল জাতি ও অন্যান্য জাতিদের মধ্যে “বিচ্ছেদের মধ্যবর্তী দেয়াল” ভেঙ্গে ফেলার সত্যটি তাঁর শিষ্যদের কাছে উন্মোচন করা— সত্যাটি হচ্ছে যে, যিহুদীদের সহিত “সুসমাচার দ্বারা খ্রীষ্ট যীশুতে পরজাতিয়েরাও সহদায়াদ, দেহের সহাঙ্গ ও প্রতিজ্ঞার সহভাগী।” ইফি ২:১৪; ৩:৬। AABen 16.2
কফরনহূমে শতপতির বিশ্বাসের প্রশহসার মাধ্যমে তিনি আংশিক ভাবে এ সত্যটি প্রকাশ করেন, এবং শুখর নিবাসীদের কাছে যখন তিনি সুসমাচার প্রচার করেন তখনও তিনি এ সত্য উন্মোচন করেন। আরও সরল— সুন্দর ভাবে ইহা প্রকাশ করেন তাঁর কৈনীকিয়া ভ্রমণের সময়, যখন তিনি জনৈক ফৈনীকিয়া মহিলার কন্যাকে সুস্থ করেন। এ সব অভিজ্ঞতা শিষ্যদের সহায়তা করেছে ইহার গুরুত্ব ও ইহার অর্থ বুঝবার জন্য— অনেকে, যাদের তারা মনে করতেন যে ওরা পরিত্রাণ পাওয়ার অযোগ্য, তাদের মধ্যে অধিকাংশই সত্যের আলো পাওয়ার জন্য তাদের আত্মা ক্ষুধিত। AABen 16.3
এভাবে খ্রীষ্ট তাঁর শিষ্যদের সত্য সম্বন্ধে শিক্ষা দিতেন— ঈশ্বরের রাজ্যে কোন ভৌগলিক সীমারেখা নেই, নেই কোন বর্ণ, নেই অভিজাত শ্রেণী; সর্বজাতির কাছে যাওয়ার জন্য তিনি তাদের নির্দেশ দিলেন যেন তারা ত্রাণকর্তার প্রেমবার্তা সব লোকদের কাছে বিতরণ করেন। ঈশ্বরের ইচ্ছা তারা সম্পূর্ণ ভাবে অবগত হতে পারেন নি যতক্ষণ না “তিনি এক ব্যক্তি ইহতে মনুষ্যদের সকল জাতিকে উৎ্সন্ন করিয়াছেন, যেন তাহারা সমস্ত ভূতলে বাস করে; তিনি তাহাদের নির্দিষ্ট কাল ও নিবাসের সীমা স্থির করিয়াছেন; যেন তাহারা ঈশ্বরের অম্বেষণ করে, যদি কোন মত হাতড়াইয়া তাঁহার উদ্দেশ্য পায়; অথচ তিনি আমাদের কাহারও হইতে দূরে নহেন।” প্রেরিত ১৭:২৬, ২৭। AABen 16.4
প্রথম শিষ্যদের মধ্যে এ সব লক্ষ্যানীয় বৈচিত্রতা ছিল। তারা হবেন জগতের শিক্ষক, এবং বিভিন্ন চারিত্রিক বৈশিষ্টের প্রতিনিধি। যে সব কার্যের নিমিত্ত তাদেরকে আহ্বান করা হয়েছে তা কৃতকার্যতার সহিত কার্য সাধনের জন্য তাদের মধ্যে ঐক্যের প্রয়োজন ছিল, যদিওবা তারা বিভিন্ন চারিত্রিক বৈশিষ্টের ও ভিন্ন ভিন্ন অভ্যাসে অভ্যস্ত ছিলেন, এমন কি তাদের আবেগ অনুভূতি ও চিন্তারাশিও ভিন্নতর ছিল। ইহাই খ্রীষ্টের লক্ষ্য ছিল যেন তাদের মধ্যে ঐক্য গড়ে ওঠে। এ উদ্দেশ্য নিয়েই তিনি তাদের ও তাঁর মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালিয়ে যান প্রার্থনায় প্রতিফলিত হয়েছে, “পিতঃ, যেমন তুমি আমাতে ও আমি তোমাতে, তেমনি তাহারাও যেন আমাদের মধ্যে থাকে; “যেন জগৎ জানিতে পায় যে, তুমি আমাকে প্ররণ করিয়াছ, এবং আমাকে যেমন প্রেম করিয়াছ, তেমনি তাহদিগকে ও প্রেম করিয়াছ।” যোহন ১৭:২১, ২৩। তাদের জন্য তাঁর বরাবর প্রার্থনর বিষয়বস্তু ছিল যেন তারাও সত্যের দ্বারা পবিত্রকৃত হয়; তিনি তাদের জন্য নিশ্চয়তার সহিত প্রার্থনা করতেন, ইহা জেনে যে ইতিপূর্বে জগৎ পত্তনের আগেই মহান ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি জানতেন যে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত রাজ্যের এ সুসমাচার সমুদয় জগতে প্রচার করা হবে; তিনি এও জানতেন যে পবিত্র আত্মার ক্ষমতায় সজ্জিত হয়ে সত্য মন্দকে এ যুদ্ধে পরাজিত করবে, এবং রক্ত মিশ্রি ঝান্ডা উচু করে তার শিষ্যরা বিজয়ের সহিত তাদের জন্য তার ভারাক্রান্ত হৃদয় তাঁর মিছিল করবে। AABen 17.1
খ্রীষ্টের পার্থিব্য সেবাকার্য যেমন শেষ হয়ে আসছিল, তিনি অনুধাবন করলেন যে অতি শীঘ্র তাঁকে প্রস্থান করতে হবে ও তাঁর তত্ত্বাবধান ছাড়ায় তাঁর কাজ শিষ্যদের চালিয়ে যেতে হবে; এর জন্য তিনি তাদের উত্সাহ দিলেন ও ভবিষতের জন্য তাদের প্রস্তুত করলেন। মিথ্যা আশা দিয়ে তিনি তাদের ঠকাননি। খোলা বই—এর মত তিনি ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে তাদের কাছে উন্মোচন করলেন। তিনি জানতেন যে অতিশীঘ্র তিনি তাদের কাছ থেকে পৃথক হয়ে যাবেন, নেকড়ে বাঘদের মধ্যে মেষদের ছেড়ে দেয়ার মত। তিনি জানতেন যে তারা অত্যাচারিত হবেন, তারা সীনাগোগ (যিহুদীদের উপাসনা গৃহ) থেকে বিতারিত হবেন, এমন কি কারাগারে নিক্ষিপ্ত হবেন। তিনি এও জানতেন যে তাকে মশিত হিসেবে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য তাদের মধ্যে কেহ কেহ মৃত্যুবরণ করবেন। এসব বিষয়ে তিনি তাদের অবগত করেন। তাদের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে তিনি সরল ভাষায় ও সুস্পষ্ট ভাবে তাদের বুঝিয়ে বললেন, তাদের জীবন পরীক্ষার সম্মুখীন হলে যেন তারা তাঁর এসব কথাগুলি মনে রাখেন ও তাঁর প্রতি দৃঢ় প্রত্যয় রাখার মাধ্যমে নিজেদের বলবান রেখে তাকে ত্রাণকর্তা হিসেবে তাঁর ওপর আস্থা রাখেন। AABen 17.2
তিনি তাদের জন্য মনোবল ও আশারবাণী রাখলেন। “তোমাদের হৃদয় উদ্বিগ্ন না হউক,” তিনি বললেন, “ঈশ্বরে বিশ্বাস কর, আমাতেও বিশ্বাস কর। আমার পিতার বাটীতে অনেক বাসস্থান আছে, যদি না থাকিত, তোমাদিগকে বলিতাম, কেননা আমি তামাদের জন্য স্থান প্রস্তুত করিতে যাইতেছি। আর আমি যখন যাই ও তোমাদের জন্য স্থান প্রস্তুত করি, তখন পুণর্বার আসিব, এবং আমার নিকটে তোমাদিগকে লইয়া যাইব; যেন, আমি যেখানে থাকি, তোমরাও সেখানে থাক। আর আমি যেখানে যাইতেছি, তোমরা তাহার পথ জান।” যোহন ১৪:১—৪। তোমাদের নিমিত্ত আমি এ পৃথিবীতে এসেছি; তোমাদের জন্য আমি কাজ করে যাচ্ছি করব, তখনও আমি তোমাদের জন্য আন্তরিকতার সহিত কাজ করতে থাকব। নিজেকে তোমাদের কাছে প্রকাশ করার জন্য আমি জগতে এসেছি, যেন তোমরা বিশ্বাস কর। আমি আমার পিতার ও তোমাদের পিতার কাছে যাব যেন তোমাদের হয়ে তার সঙ্গে একত্রে কাজ করতে পারি। AABen 18.1
“সত্য, সত্য, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি যে আমাতে বিশ্বাস করে, আমি যে সকল কার্য করিতেছি, সেও করিবে, এমন কি, এই সকল হইতেও বড় বড় কার্য করিবে; কেননা আমি পিতার নিকটে যাইতেছি। যোহন ১৪:১২। ইহার মানে খ্রীষ্ট এ কথা বলেন নি যে শিষ্যরা তাঁর থেকেও মহৎ কিছু করবে, কিন্ত তাদের কাজের পরিধি আরও প্রসার লাভ করবে। তিনি কেবল আশ্চর্য কার্যের কথা বলেন নি, কিন্তু পবিত্রি আত্মার মাধ্যমে যে সব কার্যসাধিত হবে তা তিনি উল্লেখ করেছেন। “যাহাকে আমি পিতার নিকট হইতে তোমাদের কাছে পাঠাইয়া দিব,” তিনি বলেন, “সত্যের সেই আত্মা যিনি পিতার নিকট হইতে বাহির হইয়া আইসেন— যখন সেই সহায় আসিবেন— তিনিই আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দিবেন। আর তোমরাও সাক্ষী, কারণ তোমরা প্রথম হইতে আমার সঙ্গে সঙ্গে আছ। যোহন ১৫:২৬, ২৭। পিতার ও তোমাদের পিতার কাছে যাব যেন তোমাদের হয়ে তার সঙ্গে একত্রে কাজ করতে পারি। AABen 18.2
এ কথাগুলি অক্ষরে অক্ষরে ও বিস্ময়াকারে ঘটেছিল। পবিত্র আত্মা বর্ষণের পর, শিষ্যদের হৃদয় তার জন্য প্রেমে ভরপুর ছিল এবং যাদের জন্য তিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন, তাদের বাক্য শুনে ও তাদের প্রার্থনার ফলাফল হিসেবে অনেকের হৃদয় গলে গিয়েছিল। পবিত্র আত্মার ক্ষমতায় তারা কথা বলতেন; এবং ঐ আত্মার প্রভাবে হাজার হাজার লোক পরিবর্তিত হয়েছিল। AABen 19.1
খ্রীষ্টের প্রতিনিধি হিসেবে, এ পৃথিবীতে , প্ররিতদের সুস্পষ্ট ধারণা দেয়ার কথা। সত্য কথা হচ্ছে তারা যদিওবা বিনম্র ও নগণ্য লোক ছিলেন, তাদের প্রভাব কোন ক্ষেত্রেই কম ছিলনা, বরঞ্চ বেশী ছিল, শ্রোতাদের মনের কথা ত্রাণকর্তার কাছে বয়ে নিয়ে যাবেন, যদিও বা তিনি অদৃশ্য, তাদের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও কাজ করছিলেন। প্রেরিতদের সুন্দর সুন্দর শিক্ষামালা, তাদের সাহসের ও আস্থার কথাগুলি, শ্রোতাদের মনে ছাপ একে দেবে যে, এসব কথা তাদের শক্তি দ্বারা নয়, কিন্তু খ্রীষ্টের শক্তিতেই হচ্ছে। নিজেদের বিনয়ী করে, তারা ঘোষণা দেবেন। যে যিহুদীরা যাকে ক্রুশবিদ্ধ করেছিলেন তিনিই জীবনের রাজপুত্র , জীবন্ত ঈশ্বরের পুত্র, তাঁর নামই তারা ঐসব আশ্চর্য কাজ করেন। AABen 19.2
ক্রশবিদ্ধের পূর্বরাতে শিষ্যদের সহিত মিলিত হবার সময় তিনি যখন বিদায় বাণী তাদের জন্য রাখেন, তিনি যে ইতিমধ্যে যাতনাগ্রস্থ হয়েছেন ও পরে হবেন, তা উল্লেখ করেন নি। অতিসত্তর সম্মুখে তিনি যে আপমানিত ও নির্যাতিত হবেন তাও তিনি তাদের চাঙ্গা করার জন্য উপদেশ দিলেন, উৎসাহ দিলেন, যেন তারা বিজয়ী হয়ে আনন্দের জীবন কাটানোর দিকে লক্ষ্য রাখেন। AABen 19.3
তিনি সজ্ঞানে উল্লাস করেন যে তিনি তাদের কাছে যা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তার থেকেও অধিক তাদের জন্য করতে পারেন ও করবেন, তাঁর থেকে প্রেম ও অনুকম্পা প্রবাহিত হবে, আত্মিক ধর্মধাম পরিষ্কৃত হবে; এবং মানুষের চরিত্র তিনি তাঁরই মত গড়বেন; তাঁর সত্য, পবিত্র আত্মার শক্তি দ্বারা সুসজ্জিত হয়ে, জয় করতে করতে সামনের দিকে অগ্রসর তারা হবেন। AABen 19.4
“এই সমস্ত তোমাদিগকে বলিলাম,” তিনি বলেন, “যেন তোমরা আমাতে শান্তি প্রাপ্ত হও। জগতে তোমরা ক্লেশ পাইতেছ; কিন্তু সাহস কর, আমিই জগৎকে জয় করিয়াছি,” যোহন ১৬:৩৩। খ্রীষ্ট অকৃতকার্য হন নি, এমন কি তিনি নিরুসাহিত হয় নি; তার শিষ্যদের তদ্রুপ একই বিশ্বাস ও সহিষুতা দেখাবার কথা। শক্তির জন্য তাঁর ওপর নির্ভর করে তাদেরও তদ্রুপ শ্রম করার কথা যেমন তিনি শ্রম করেছেন। তাদের চলার পথে নানা রকমের বাধা বিপত্তি আসবে, তবু তারা অনুগ্রহের মাধ্যমে তাদের সামনে এগুতে হবে, কোন কিছুতে নিরাশ না হয়ে, সব কিছুর জন্য প্রত্যাশ করতে হবে। AABen 19.5
যে কাজটা তাঁকে দেয়া হয়েছিল, খ্রীষ্ট তা সাধন করেছেন। যারা তার কাজ জগতে চালিয়ে যাবেন তাদের তিনি সংগ্রহ করেছেন। এবং তিনি এ কথা বলেন, “আমি তাহাদের মধ্যে মহিমানিত হইয়াছি নাই। আমি আর জগতে নাই, কিন্তু ইহারা জগতে রহিয়াছে. এবং আমি তোমার নিকটে আসিতেছি। পবিত্র পিতঃ তোমার নামে তাহাদিগকে রক্ষা কর— যে নাম তুমি আমাকে দিয়াছ— যেন তাহারা এক হয়, যেমন আমরা এক। “আর আমি ইহাদের নিমিত্ত নিবেদন করিতেছি, তাহা নয়, কিন্তু ইহাদের বাক্য দ্বারা যাহারা আমাতে বিশ্বাস করে, তাহাদের নিমিত্ত করিতেছি; যেন তাহারা সকলে এক হয়, .. আমি তাহাদের মধ্যে ওতুমি আমাতে, যেন তাহারা সিদ্ধ হইয়া এক হয়; যেন জগৎ জানিতে পায় যে, তুমি আমাকে প্রেরণ করিয়াছ, এবং আমাকে যেমন প্রেম করিয়াছ, তেমনি তাহাদিগকেও প্রেম করিয়াছ।” যোহন ১৭:১১, ২০—২৩। AABen 20.1