প্রেরিতগণের কার্য-বিবরণ
৯ম অধ্যায়—সাতজন পরিচারক
আর এই সময়ে, যখন শিষ্যগণের সংখ্যা বৃদ্ধি পাইতেছিল, তখন গ্রীক ভাষাবাদী যিহূদীরা ইব্রীয়দের বিপক্ষে বচসা করিতে লাগিল, কেননা দৈনিক পরিচর্যায় তাহাদের বিধবারা উপেক্ষিত হইতেছিল।” AABen 69.1
আদি মণ্ডলী গঠিত হয়েছিল বহু শ্রেণী, জাতি ও বর্ণের মানুষের সমন্বয়ে। পঞ্চাশত্তমীতে পবিত্রা আত্মার অবতরণের সময় “যিহূদীরা, আকাশের নিম্নস্থিত সমস্ত জাতি হইতে আগত ভক্ত লোকেরা , যিরূশালেমে বাস করিতেছিল।” প্রেরিত ২:৫। সে সময়ে যিরূশালেমে যে সকল যিহূদীরা সমবেত হয়েছিলেন তাদের মধ্যে অনেকেই গ্রীক ভাষাবাদী তথা ভাষাভাষী যিহূদী নামে পরিচিত ছিলেন, যাদের সাথে প্যালেষ্টাইনের যিহূদীদের দীর্ঘদিনের অনাস্থা ও দ্বন্দ্ব চলে আসছিল AABen 69.2
প্রেরিতদের প্রচারের কারণে যারা ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন তাদের সকলের হৃদয় নম্র হয়েছিল এবং খ্রীষ্টিয় প্রেমে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। অতীতের সমস্ত ভেদাভেদ ভুলে তারা একে অপরের সাথে সম্প্রীতিতে বসবাস করছিলেন। শয়তান জানত যে, যতদিন এই একতা অটুট থাকবে ততদিন সে সুসমাচারের সত্যের প্রসারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে অসমর্থ। কাজেই সে বিশ্বাসীদের অতীতের সমস্ত অভ্যাসকে কাজে লাগিয়ে তাঁর উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার চেষ্টা করতে লাগল, যেন যে কোনভাবে হোক মণ্ডলীতে দলভেদ ও অসন্তোষ সৃষ্টি করা যায়। AABen 69.3
শিষ্যরা যখন একদিকে সংখ্যায় বৃদ্ধি পাচ্ছিলেন, তখন অন্যদিকে শয়তান কোন কোন ভাইয়ের মনে অন্য বিশ্বাসী ভাইদের প্রতি , তথা তাদের আত্মিক নেতাদের প্রতি ঈর্ষা ও অসন্তোষ জাগিয়ে তুললেন। সে কারণে “গ্রীক ভাষাবাদী যিহূদীরা ইব্রীয়দের বিপক্ষে বচসা করিতে লাগিল।” এই বচসার মূলে ছিল গ্রীক বিধবাদের দৈনিক পরিচর্যায় তথা খাবারে উপেক্ষা করা । সুসমাচারের চেতনায় কোন ধরনের বৈষম্যই গ্রাহ্য নয়, তথাপি AABen 69.4
______________________________________«
এই অধ্যায়টি প্রেরিত ৬:১—৭ পদের উপর ভিত্তি করে রচিত
______________________________________« শয়তান এই সন্দেহ তৈরিতে সফল হয়েছিল। এখন যে ধরণের অসন্তোষ ও সন্দেহ দূর করতে দ্রূত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন, পাছে বিশ্বাসীদের মধ্যে সতিকারের ভাঙন ধরাতে শ্ত্রু সফলকাম হয়।
যীশুর শিষ্যরা একত্রে পরিশ্রম করে যাচ্ছিলেন, সেই প্রেরিতদের বিজ্ঞ নেতৃত্বে সুসমচারে বারতাবাহকদের কাজে দারুণ অগ্রগতি সাধন হচ্ছিল। মণ্ডলী ক্রমাগতভাবে বৃদ্দি পাচ্ছিল এবং সদস্যতার এই ক্রমবর্ধমানতায় যাদের উপরে কর্তব্য ন্যস্ত ছিল তাদের উপরে দুর্বাহ বোঝা চেপে বসছিল। একজন মাত্র মানুষ কিংবা কয়েকজন মানুষ মিলেও এই ভার ক্রমাগতভাবে বহন করা সম্ভব নয়, উপরন্ত এক সময় তা মণ্ডলীর ভবিষ্যৎ অগ্রাগতিকেই আরও বেশি অনিশ্চিত করে তুলবে। কাজেই মণ্ডলীর আদি লগ্ন থেকে যে অল্প কয়েকজন ব্যক্তি মণ্ডলী পরিচালণার গুরু দায়িত্ব সিশ্বাস্ততার সাথে পালণ করে আসছিলেন, তাদের দায়িত্ব বন্টন করে অন্যদের উপরে আরোপ করাপ্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। প্রেরিতদেরকে এখন অবশ্যই মনশ্লীতে সুসমাচারের শাসন বজায় রাখতে হলে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে করে যারা নিজেদের সহ্যের অতিরিক্ত কর্তব্যের ভার বহন করছিলেন তাদের ভার লাঘব করে অন্যদের উপর বন্টন করা যায় । AABen 70.1
বিশ্বাসীদের নিয়ে একটি সভা আহ্বান করে সেখানে প্রেতিগণ পবিত্র আত্মা দ্বারা চালিত হয়ে মণ্ডলীর সমস্তস কার্যক্রমকে আরও ভালভাবে পরিচালণা করার জন্য একটি সুচিন্তিত পরিকল্পনা নকশা করলেন। অবশেষে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে প্রেরিতগণ জানালেন, অত্মিক নেতাদেরকে মণ্ডলীর দরিদ্র পীড়িত মানুষদের পরিচর্যার ভার থেকে মক্ত করা হবে, যেন তারা সুসমাচার প্রচারের কাজে আত্মনিয়োগ করতে পারেন। “কিন্তু হে ভ্রাতৃগণ,” তাঁরা বললেন, “তোমরা আপনাদের মধ্য হইতে সুখ্যাতিপন্ন এবং আত্মায় ও বিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ সাত জনকে দেখিয়ে লও; তাহাদিগকে আমরা এই কাজের ভার দিব । কিন্তু আমরা প্রার্থনায় ও বাক্যের পরিচর্যায় নিবিষ্ট থাকিব।” এই পরামর্শ অনুসারে প্রার্থনা ও হস্তার্পণের মধ্য দিয়ে সাতজন মনোনীত ব্যক্তিকে পরিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালণের জন্য নিযুক্ত করা হল। AABen 70.2
এই সাতজনকে পরিচারক হিসেবে বিশেষ দায়িত্ব পালনের অনুমতি দেওয়ার কাজটি মণ্ডলীর জন্য চমৎকার আশীর্বাদ হিসেবে প্রকাশ পেল। এই কর্মকর্তাগণ অত্যন্ত যত্নের সাথের প্রত্যেকের ব্যক্তিগত চাহিদাগুলো তদারক করতেন এবং সেই সাথে মণ্ডলীর আর্থিক সমস্ত বিষয়ও দেখাশোনা করতেন। তাঁদের বিজ্ঞ ব্যবস্থাপনা এবং সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাবের কারণে তাঁদের অধীনস্থ ও সহযোগী কর্মকর্তারাও উদ্বুদ্ধ হয়হে মন্ডলীকে ঐক্যে গেঁথে তোলার জন্য একাগ্র হয়ে উঠলেন। AABen 70.3
তাৎক্ষণিকভাবে প্রাপ্ত ফলাফলের মধ্যে দিয়ে বোঝা গেল যে, এই সিদ্ধান্ত ঈশ্বরের কাছ থেকেই এসেছে। “আর ঈশ্বরের বাক্য ব্যাপিয়া গেল, এবং যিরূশালেমে শিষ্যদের সংখ্যা অতিশয় বৃদ্ধি পাইতে লাগিল; আর যাজকদের মধ্যে বিস্তর লোক বিশ্বাসের বশবর্তী হইল।” প্রেরিতরা বাক্যের পরিচর্যা ও প্রচারে আরও বেশি সময় পাওয়ায় ও সাতজন পরিচারক তাঁদের কাজে অনুপম উৎসাহ ও ক্ষমতা প্রদর্শন করার কারাণেই এত বেশি পরিমাণ আত্মা মণ্ডলীতে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছিল। এই ভাইদেরকে দরিদ্র পীড়িতদের দেখাশোনা করার বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হলেও বিশ্বাসের শিক্ষা দানে তাঁরা পিছিয়ে থাকেনি। বরং তারাও অন্যদের কাছে সত্য প্রচারে পূর্ণ যোগ্যতা সম্পন্ন ছিলেন এবং তাঁরা তীব্র উৎসাহ ও সাফল্যের সাথে তাঁদের কাজ করতেন। AABen 71.1
আদি মণ্ডলীকে ক্রমবর্ধমান একটি কাজে নিযুক্ত করা হয়েছিল— বিভিন্ন স্থানে সুসমাচারের আলোর কেন্দ্র পতিষ্ঠা করা এবং যেখানেই সততার আত্মা যীশুর পক্ষে পরিচর্যা কাজ করার জন্য উচ্ছুক ছিল সেখানেই তাঁদেরকে আশীর্বান্বিত করা । সুসমাচার প্রচারের কাজটি ছিল মূলত বিশ্বাব্যাপী প্রসারিত একটি কাজ এবং ক্রূশের বার্তাবাহকরা কখোনই তাঁদের লক্ষে সঠিকভাবে পৌছাতে পারতেন না যতক্ষণ না তাঁরা প্রত্যেকে খ্রীষ্টিয় একতায় আবদ্ধ হতেন এবং এভাবেই তাঁরা জগতের কাছে প্রকাশ করতেন যে ,তাঁরা খ্রীষ্টেতে ঈশ্বেরের সাথে সম্মিলিত হয়েছেন। তাঁদের ঈশ্বরীয় নেতা কি পিতার কাছে এই বলে প্রার্থনা করেননি, “তোমর নামে তাহাদিগকে রক্ষা কর— যে নাম তুমি আমাকে দিয়াছ— যেন তাহারা এক হয়, যেমন আমরা এক”? তিনি কি তাঁর শিষ্যদের ব্যাপারে এই ঘোষনা দেননি,” জগৎ তাহাদিগকে দ্বেষ করিয়াছে, কারণ তাহারা জগতের নয়”? তিনি কি পিতার কাছে এই বলে যাচ্ঞা করেননি যেন তাঁরা “সিদ্ধ হইয়া এক হয়,” “যেন জগৎ বিশ্বাস করে যে, তুমি আমাকে প্রেরণ করিয়াছ”? যোহন ১৭: ১১, ১৪, ২৩, ২১। তাঁদের আত্মিক জীবন ও ক্ষমতা তাঁর সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের উপর নির্ভরশীল ছিল, যিনি তাঁদেরকে সুসমাচার প্রচারের জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন। AABen 71.2
শুধুমাত্র খ্রীষ্টের সাথে এক হলেই শিষ্যরা পবিত্র আত্মার ক্ষমতা এবং স্বর্গের দূতগণের সহযোগিতা আশা করতে পারেন। এই স্বর্গীয় স্বত্বাগণের সহায়তায় রকতায় একতা বদ্ধ হয়ে তাঁরা জগতের সামনে উপস্থিত হবে এবং অন্ধকারের শক্তির সাথে প্রাণপণে লড়াই করে বিজয়ী হবেন । একমতবদ্ধ এই প্রচেষ্টায় স্বর্গের দূতগণ তাঁদের আগ্রগামী হয়ে পথ প্রস্তুত করে দেবেন; সত্যকে গ্রহণ করার জন্য মানুষের হৃদয় উন্মোচিত হবে এবং অনেকের আত্মা খ্রীষ্টের জন্য জয় করা হবে। যতদিন তাঁরা একমতাবদ্ধ থাকবেন মন্ডলী এগিয়ে যাবেন “অরুণের ন্যায় উদীয়মানা, চন্দ্রের ন্যায় সুন্দরী, সূর্যের ন্যায় তেজস্বিনী, সপতাকা বাহিনীর ন্যায় ভয়ঙ্করী” হয়ে। পরমগীত ৬: ১০ । মণ্ডলীর এই অগ্রযাত্রা কেউ ব্যাহত করতে পারবে না । বিজয়ীয়ের পর অর্জন করে মণ্ডলী এগিয়ে যাবে এবং সারা পৃথিবীতে সুসমাচার প্রচারের ঈশ্বরীয় লক্ষ্যকে গৌরবের সাথে সুসম্পন্ন করবে। AABen 72.1
যীরূশালেম মণ্ডলীর সংগঠনটি অন্য সমস্ত স্থানে মণ্ডলী সংগঠনের জন্য একটি আদর্শ হিসেবে উপনীত হয়েছিল যেন তা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে সুসমাচার প্রচারের মাধ্যমে আত্মা জয় করতে পারে। মণ্ডলীর সার্বিক পরিচালণার ভার যাদের উপর ন্যস্ত করা হয়েছিল তাঁরা কোন শাসনকর্তা হিসেবে সেই অভিষেক পাননি , বরং তাঁদেরকে বিজ্ঞ মেষস্পালক হিসেবে অভিষেক দেওয়া হয়েছিল , যাদের দ্বায়িত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছিল “ঈশ্বরের যে পাল আছে , তাহা পালন কর ... পালের আদর্শ হইয়াই কর।” (১ পিতর ৫: ২—৩); এবং প্রাচীরদের সম্পর্কে বলা হয়েছে , “অধ্যচক্ষের কার্য কর, আবশ্যকতা প্রযুক্ত নয়, কিন্তু ইচ্ছাপূর্বক , ঈশ্বরের অভিমতে , কুৎসিত লাভার্থে নয়, কিন্তু উৎসুক ভাবে কর।” এই ব্যক্তিদের দায়িত্ব ছিল ন্যায্যতা এবং সুদৃঢ় বিবেচনার সাথে তাঁদের কর্তব্য পালণ করা । এভাবেই পুরো মেষ্পালের উপরে তাঁরা একতার প্রভাব ফেলতে সক্ষম হবেন। AABen 72.2
পরবর্তীতে আদি মণ্ডলীর ইতিহাসে যখন পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের বিশ্বাসীদের বিভিন্ন দল একেকটি মণ্ডলী স্থাপর করেছিল , তখন এই মণ্ডলী সংগঠন হয়ে উঠেছিল আরও নিখাদ, যার ফলে শৃঙ্খলা এবং সম্প্রীতি বজায় রাখা হয়ে উঠেছিল আরও সহজ। প্রত্যেক সদস্যস্কে তাঁর দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালণে উদ্বুদ্ধ করা হত। প্রত্যেককে তাঁর তালন্তগুলো যথাযিথভাবে ব্যবহার করতে হত— “প্রথমতঃ প্রেরিতগণকে , দ্বিতীয়তঃ ভাববাদিগণকে, তৃতীয়তঃ উপদেশকগণকে স্থাপন করিয়াছেন; তৎপরে নানাবিধ পরাক্রমকার্য , তৎপরে আরোগ্যসাধক অনুগ্রহ—দান, উপকার, শাসনপদ, নানাবিধভাষা।” ১ করিস্থীয় ১২: ২৮। কিন্তু এই সব শেণীর পরিচর্যাকারীদেরই একতাদ্ধ হয়ে কাজ করতে হত। AABen 72.3
“অনুগ্রহ—দান নানা প্রকার , কিন্তু আত্মা এক; এবং পরিচর্যা নানা প্রকার , কিন্তু প্রভু এক; এবং ক্রীয়াসাধক গুণ নানা প্রকার , কিন্তু ঈশ্বর এক; তিনি সকলের মধ্যে সকল ক্রীয়ার সাধনকর্তা। কিন্তু প্রত্যেক জনকে হিতের জন্য আত্মার আবির্ভাব দত্ত হয়। কারণ এক জনকে সেই আত্মা দ্বারা প্রজ্ঞার বাক্য দত্ত হয়, আর এক জঙ্কে সেই আত্মানুসারে জ্ঞানের বাক্য , আর এক জনকে সেই আত্মাতে বিশ্বাস, আর এক জনকে সেই একই আত্মাতে আরোগ্য সাধনের নানা অনুগ্রহ—দান , আর একজনকে পরাক্রম — কার্য — সাধক গুণ, আর একজনকে ভাববাণী, আর একজনকে আত্মাদিগকে চিনিয়া লইবার শক্তি, আর একজনকে নানাবিধ ভাষা কহিবার শক্তি, এবং আর এক জনকে বিশেষ ভাষার অর্থ করিবার শক্তি দত্ত হয়; কিন্তু এই সকল কর্ম সেই একমাত্র আত্মা সাধন করেন; তিনি সবিশেষ বিভাগ করিয়া যাহাকে যাহা দিতে বাসনা করেন, তাহাকে তাহা দেন। কেননা যেমন দেহ এক, আর তাহার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অনেক, এবং দেহের সমুদয় অঙ্গ অনেক হইলেও , এক দেহ হয়, খ্রীষ্টও সেইরূপ।” ১ করিন্থীয় ১২: ৪—১২। AABen 73.1
জগতে ঈশ্বরের মণ্ডলীতে যাদের নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হয় তাদের উপরেই সবচেয়ে গুরুদায়িত্ব অর্পিত থাকে । ঈশ্বরীয় শাসনের যুগে মোশী যখন ইস্রায়েল জাতিকে নেতৃত্ব দানে দুর্বহ বোঝা বহন করতে করতে নিঃশেষ হয়ে পড়েছিলেন সে সময় যিথ্রো তাঁকে বিজ্ঞতার সাথে দায়িত্ব বন্টনের জন্য একটি পরিকল্পনা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। “তুমি ঈশ্বরের সম্মুখে লোকদের পক্ষে হও, ” যিথ্রো পরামর্শ দিলেন, “এবং তাহাদের বিচার ঈশ্বরের কাছে উপস্থিত কর, আর তাহাদিগকে বিধি ও ব্যবস্থার উপদেশ দেও, এবং তাহাদের গন্তব্য পথ ও কর্তব্য জ্ঞাত কর। “যিথ্রো আরও পরামর্শ দিলেন যে লোকদেরকে নিয়োগ দিতে হবে “সহস্রপতি, শতপতি, পঞ্চাৎপতি ও দশপতি করিয়া।” এরা হবেন “কার্যদক্ষ পুরুষ, ঈশ্বরভীত, সত্যবাদী ও অন্যায়—লাভ—ঘৃণাকারী ব্যক্তি।” “তাহাঁরা সকল সময়ে লোকদের বিচার করিবেন,” যেন এর মধ্য দিয়ে ছোট অনেক সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে মোশীর উপরে অধিক চাপ সৃষ্টি না হয় এবং তিনি এই বিজ্ঞ সহযোগীদের উপরে নির্ভর করতে পারেন। AABen 73.2
মণ্ডলীতে নেতৃস্থানীয় দায়িত্ব যারা পালন করছেন তাদের সময় ও শ্রম এমন কাজে ব্যয় করা উচিৎ যেখানে বিশেষ ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা ও সুবিবেচনার আবশ্যকতা রয়েছে। অন্যরা যে সমস্ত ছোট খাট সমস্যা সমাধান করতে পারেন সে সব বিষয়ে এমন গুরুদায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তিরা মাধা ঘামাবেন সেটা ঈশ্বর চান না। “বড় বড় বিচার সকল তোমার নিকটে আনিবেন,“” যিথ্রো মোশীকে পরামর্শ দিলেন, “কিন্তু ক্ষুদ্র বিচার সকল তাহারাই করিবেন। তাহাকে তোমার কর্ম লঘু হইবে , আর তাহাঁরা তোমার সহিত ভার বহিবেন। তুমি সহিতে পারিবে, এবং এই সকল লোকও কুশ্লে আপনাদের স্থানে গমন করিবে।” AABen 74.1
এই পরিকল্পনা অনুসারে , “মোশি সমস্ত ইস্রায়েল হইতে কার্যদক্ষ পরুষদিগকে মনোনীত করিয়া লোকদের উপরে প্রধান, অর্থাৎ সহস্রপতি, শতপতি, পঞ্চাশটপতি ও দশপতি করিয়া নিযুক্ত করিলেন। তাঁহার সকল সময়ে লোকদের বিচার করিতেন; কঠিন বিচার সকল মোশারি কাছে আনিতেন, কিন্তু ক্ষুদ্র কথা সকলের বিচার আপনারাই করিতেন।” যাত্রাপুস্তক ১৮:১৯— ২৬। AABen 74.2
পরবর্তীতে সত্তর জন পাচীনকে তাঁর সাথে নেতৃত্বের দায়িত্ব পালনের ভার অর্পণ করার সমং মোশী সতর্ক ছিলেন যেন তাঁর সহযোগী হিসেবে এই ব্যক্তিরা সুখ্যাতি সম্পন্ন, সুবিবেচক ও অভিজ্ঞ হন। এই প্রাচীনদেরকে অভিষেক দানের সময় তিনি কিছু গুণের কথা উল্লেখ করেছিলেন যা প্রতিটি মণ্ডলীর পরিচালকদের থাকা আবশ্যক। “তোমার আপন ভ্রাতাদের কথা শুনিয়া,” মোশী বললেন, “বাদীর ও তাঁহার ভ্রাতার কিম্বা সহবাসী বিদেশীর মধ্যে ন্যায্য বিচার করিও। তোমার বিচারে কাহারও মুখাপেক্ষা করিবে না; সমভাবে ক্ষুদ্র ও মহান উভয়ের কথা শুনিবে। মানুষ্যের মুখ দেখিয়া ভয় করিবে না, কেননা বিচার ঈশ্বরের।” দ্বিতীয় বিবরণ ১:১৬, ১৭। AABen 74.3
রাজা দায়ূদ তাঁর রাজত্বের শেষ দিকে তাঁর আমলে ঈশ্বরের পরিচর্যার ভার বহঙ্কারী ব্যক্তিদের জন্য একটি বিশেষ আজ্ঞা দিয়েছিলেন। “ইস্রায়েলের সমস্ত অধ্যক্ষকে অর্থাৎ বংশাধ্যক্ষগণকে, পালানুক্রুমে রাজার পরিচর্যাকারী দলের অধ্যক্ষগণকে, সহস্রপতি ও শতপতিগণকে এবং রাজার ও রাজপুত্রদের সমস্ত সম্পত্তির ও পশুপালনের অধ্যক্ষগণকে, কর্মচারীদগকে এবং বীরগণকে , এমন কি , সমস্ত বলবান বীরকে যিরূশালেমে” আহবান জানিয়ে বৃদ্ধ রাজা তাদেরকে এই আদেশ দিলেন, “সদাপ্রভুর সমাজ সমস্ত ইস্রায়েলের সাক্ষাতে ও আমাদের ঈশ্বরের কর্ণগোচারে তোমারা যত্নপূর্বক তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সমস্ত আজ্ঞার অনুশীলন কর। ” ১ বংশাবলি ২৮:১, ৮। AABen 74.4
ভবিষ্যতে শীর্ষ নেতৃত্বের কর্ণধার শলোমানকে দায়ূদ বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছিলেনঃ “হে আমার পুত্র শলোমান, তুমি আপন পিতার ঈশ্বরকে জ্ঞাত হও, এবং একাগ্র অন্তঃকরণে অনুসন্ধান করেন, ও চিন্তার সমস্ত কল্পনা বুঝেন; তুমি যদি তাঁহার অন্বেষ্ণ কর, তবে তিনি তোমাকে আপনার উদ্দেশ পাইতে দিবেন, কিন্তু যদি তাঁহাকে ত্যাগ কর, তবে তিনি তোমাকে চিরকালের জন্য দূর করিবেন। এখন সাবধান হও, কেননা ধর্মধামের জন্য এক গৃহ নির্মাণ করিতে সদাপ্রভু তোমাকে মনোনীত করিয়াছেন; তুমি বলবান হইয়া কার্য কর।” ১ বংশাবলি ২৮:৯, ১০ । AABen 75.1
মোশী ও দায়ূদের সময়ে ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে শাসনকর্তারা যে পবিত্রতা ও ন্যায্যতার নীতিতে চালিত হয়ে শাসন করেছেন, সেই একই নীতি ও আদর্শ দ্বারা চালিত হয়ে সুসমাচারের যুগে ঈশ্বরের মণ্ডলীর পরিচালকদের নেতৃত্ব দানের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। সমস্ত মণ্ডলীতে শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে এবং যোগ্য ও উপযুক্ত কার্যকারী ব্যক্তিকে নিযুক্ত করার ক্ষেত্রে প্রেরিতগণ পুরাতন নিয়মের শাস্ত্র অনুসারে উচ্চ মান বজায় রেখেছেন। তাঁর এই বিষয়টি মাথায় রেখেছেন যে, মণ্ডলীতে যাকে নেতা হিসেবে নিযুক্ত করা হবে তিনি যেন “ঈশ্বরের ধনাধ্যক্ষ বলিয়া আনিন্দনীয় হন; স্বেচ্ছাচারী কি আশুক্রোধী কি মদ্যপানে আসক্ত কি প্রহারক কি কুৎসিত লাভের লোভী না হন, কিন্তু অতিথিসেবক, সৎপ্রেমিক, সংযত, ন্যায়পরায়ণ, সাধু ও জিতেন্দ্রিয় হন, এবং শিক্ষানুরূপ বিশ্বাসনীয় বাক্য ধরিয়া থাকেন, এই প্রকারে যেন তিনি নিরাময় শিক্ষাতে উপদেশ দিতে এবং প্রতিকূলবাদীদের দোষ ব্যক্ত করিতে সমর্থন হন।” ততী ১:৭—৯ । AABen 75.2
আদি মণ্ডলীতে যে আদর্শ অনুসরণের জন্য স্থির করা হয়েছিল সে অনুসারে ঈশ্বরের সুসজ্জিত সৈন্যদল হিসেবে সামনে এগিয়ে যাওয়া তাদের জন্য সজ হয়েছিল। বিশ্বসীদের সলগুলো বিভিন্ন ভৌগলিক অবস্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও প্রত্যেকে এক দেহের অংশ ছিলেন; তারা প্রত্যেকেই একে অন্যের সাথে ভাব বিনিময় ও চিন্তাধারা সমতা বজায় রাখতেন। পরবর্তীতে আন্তিয়খিয়ার মত করেকটি মণ্ডলীতে যখন মতবিরোধ দেখা দেয় এবং বিশ্বাসীরা যখন কোন বিষ্য নিয়ে নিজেদের মধ্যে ঐক্যমতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হন, তখন সেসব বিষয়ের উপর ভিত্তি করে মণ্ডলীকে বিভক্ত হতে দেওা হয়নি, বরং সমস্ত বিশ্বাসীদেরকে নিয়ে একটি বৃহৎ মাণ্ডলিক পরিষদ গঠন করা হয়, যেখানে বিভিন্ন স্থানীয় মণ্ডলীর নেতৃবর্গ প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত থাকতেন এবং তাদের সাথে নেতৃস্থানীয় প্রেরিত ও প্রাচীনগণও ছিলেন। এভাবেই বিভিন্ন বিছিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা মন্ডলীগুলোর উপরে শয়তানের আক্রমন বন্ধ করা হয় এবং শত্রুর সামস্ত পরিকল্পনাও রুদ্ধ করে দেওয়া হয়। AABen 76.1
“কেননা ঈশ্বর গোলযোগের ঈশ্বর নহেন, কিন্তু শান্তির। যেমন পবিত্রগণের সমস্ত মণ্ডলীতে হইয়া থাকে।” ১ করিন্থীয় ১৪:৩৩ ,৩৪। তিনি চান অতীতে মন্ডলীগুলো যেমন শৃংখলাবদ্ধ ছিল এখনও তেমনি শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকে। তিনি চান যেন তাঁর অনুমোদনের সীলমোহরের চিহ্ন দিতে পারেন। খ্রীষ্টিয়ানদেরকে অবশ্যই অন্য সকল খ্রীষ্টিয়ানদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, মণ্ডলীকে মণ্ডলীর সাথে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে , মানব জাতিকে স্বর্গীয় সত্তার সাথে সহযোগিতা করতে হবে, প্রত্যেক আত্মার প্রতিনিধিকে পবিত্র আত্মার সাথে সংযুক্ত হতে হবে এবং সমস্ত কিছুকে একত্রে এই জগতের সাথে ঈশ্বরের অনুগ্রহের সুসমাচারের মধ্য দিয়ে একীভূত হতে হবে। AABen 76.2