প্রেরিতগণের কার্য-বিবরণ

7/59

৬ষ্ঠ অধ্যায়—মন্দির দ্বারে

খ্রীষ্টের শিষ্যদের মধ্যে তাঁদের নিজেদের অযোগ্যতা নিয়ে বেশ গভীর চিন্তা ছিল এবং নম্রতাপূর্ণ প্রার্থনার মধ্য দিয়ে তাঁরা একসাথে তাঁদের দুর্বলতাকে শক্তিতে রূপান্তর করেছেন, তাঁদের অজ্ঞতাকে পরিণত করেছেন প্রজ্ঞায়, তাঁদের অযোগ্যতাকে করে তুলেছেন তাঁদের ধার্মিকতা, তাঁদের দারিদ্রকে করেছেন প্রভুর গৌরবের ঐশ্বর্য। এভাবেই বলবান ও যোগ্য হয়ে তাঁরা তাঁদের প্রভুর পরিচর্যায় নির্ভীয় ও দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে গেছেন। AABen 48.1

পবিত্র আত্মার অবতরণ এবং একাগ্রচিত্তে প্রার্থনার কাল শেষ হওয়ার পর পিতর ও যোহন মন্দিরে উপাসনা করতে গেলেন। সেখানে সুন্দর নামক দ্বারে তাঁরা দেখতে পেলেন চল্লিশ বছর বয়সী একজন পঙ্গু ব্যক্তিকে, যে তার জন্মের পর থেকেই পক্ষাঘাতগ্রস্থ অবস্থায় নিদারুন কষ্ট ও যন্ত্রণা ভোগ করছে। হতভাগ্য এই মানুষটির বহু দিন ধরে যীশুকে দেখার ইচ্ছা ছিল, যেন সে সুস্থ হতে পারে; কিন্তু মহান চিকিৎসকের পরিচর্যার ক্ষেত্র থেকে তার অবস্থান ছিল বহু দূরে। তার পীড়াপীড়িতে কয়েকজন বন্ধু অবশেষে তাকে সুন্দর নামক দ্বারে নিয়ে আসে; কিন্তু এখানে এসে সে জানতে পারে, যার উপর নির্ভর করে তার সমস্ত আশা ভরসা কেন্দ্রীভ‚ত হয়েছিল তাকে নৃশংসভাবে ক্রুশে টাঙিয়ে হত্যা করা হয়েছে। AABen 48.2

তার হতাশা দেখে তার বন্ধুরা সমবেদনায় পূর্ণ হয়েছিল, যারা তাকে অনেক দিন ধরে চেনে এবং জানে যে, সে যীশুর হাতে সুস্থ হওয়ার জন্য কতটা উদগ্রীব হয়ে ছিল। তারা তাকে মন্দিরের সুন্দর নামক দ্বারে বয়ে নিয়ে আসত যেন লোকেরা আসা যাওয়ার পথে তাকে দেখে মায়া করে এবং কিছু অর্থ দান করে। পিতর ও যোহন যখন তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন সে তাঁদের কাছে ভিক্ষা চাইল। শিষ্যরা অত্যন্ত সমবেদনা নিয়ে তার সাথে কথা বললেন। পিতর তাকে বললেন, “আমাদের প্রতি দৃষ্টিপাত কর। AABen 48.3

______________________________________«

এই অধ্যায়টি প্রেরিত ৩; ৪:১—৩১ পদের উপর ভিত্তি করে রচিত

______________________________________«

তাহাতে সে তাঁহাদের প্রতি দৃষ্টি করিয়া রহিল, তাঁহাদের নিকট হইতে কিছু পাইবার অপেক্ষা করিতেছিল। কিন্তু পিতর বলিলেন, রৌপ্য কি স্বর্ণ আমার নাই।” পিতর এভাবে অকপটে নিজের দারিদ্রের কথা ব্যক্ত করায় পক্ষাঘাতগ্রস্থ লোকটির উৎসাহ নিমিষে হারিয়ে গেল; কিন্তু তা আবারও জ্বলে উঠল যখন প্রেরিত আবারও বলতে শুরু করলেন, “কিন্তু যাহা আছে, তাহা তোমাকে দান করি; নাসরতীয় যীশু খ্রীষ্টের নামে হাঁটিয়া বেড়াও। AABen 49.1

“পরে তিনি তাঁহার দক্ষিণ হস্ত ধরিয়া তাহাকে তুলিলেন; তাহাতে তৎক্ষণাৎ তাহার চরণ ও গোড়ালি সবল হইল। আর সে লম্ফ দিয়া উঠিয়া দাঁড়াইল, ও হাঁটিয়া বেড়াইতে লাগিল, এবং বেড়াইতে বেড়াইতে, লম্ফ দিতে দিতে, ঈশ্বরের প্রশংসা করিতে করিতে তাঁহাদের সহিত ধর্মধামে প্রবেশ করিল। সমস্ত লোক তাহাকে বেড়াইতে ও ঈশ্বরের প্রশংসা করিতে দেখিল; আর তাহারা তাহাকে চিনিতে পারিল যে, এ সেই ব্যক্তি, যে ধর্মধামের সুন্দর দ্বারে বসিয়া ভিক্ষা করিত; আর তাহার প্রতি যাহা ঘটিয়াছিল, তাহাতে অতিশয় চমৎকৃত ও বিস্ময়াপন্ন হইল।” AABen 49.2

“আর সে পিতরকে ও যোহনকে ধরিয়া থাকাতে লোক সকল অতিশয় চমৎকৃত হইয়া তাঁহাদের নিকটে শলোমনের নামে আখ্যাত বারান্দায় দৌড়াইয়া আসিল।” তারা এই ভেবে আশ্চর্য হয়েছিল যে, প্রেরিতরা যীশুর মতই অলৌকিক কাজ করতে পারেন। তথাপি তাদের সামনে এখন চল্লিশ বছর ধরে পক্ষাপাত রোগে ভুগতে এক রোগী তার সমস্ত কষ্ট থেকে মুক্ত হয়ে হাত পা ছুড়ে নাচতে নাচতে আনন্দ করছে এবং উল্লসিত অন্তরে যীশুর উপরে বিশ্বাস এনেছে। AABen 49.3

শিষ্যেরা যখন লোকদের বিস্ময় লক্ষ্য করলেন তখন পিতর তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, “এই ব্যক্তির বিষয়ে কেন আশ্চর্য জ্ঞান করিতেছ? অথবা আমরাই যে নিজ শক্তি বা ভক্তিগুণে ইহাকে চলিবার শক্তি দিয়াছি, ইহা মনে করিয়া কেনই বা আমাদের প্রতি একদৃষ্টে চাহিয়া রহিয়াছ?” তিনি তাদেরকে এই নিশ্চয়তা দিতে চাচ্ছিলেন যে, এই সুস্থতা দান কেবল নাসরতীয় যীশুর নামে ও তাঁরই গুণে সম্ভব হয়েছে, যাঁকে ঈশ্বর মৃতদের মধ্য থেকে পুনরুত্থিত করেছেন। “তাঁহার নামে বিশ্বাস হেতু,” প্রেরিত ঘোষণা করলেন,“এই যে ব্যক্তিকে তোমরা দেখিতেছ ও জান, তাঁহারই নাম ইহাকে বলবান করিয়াছে; তাঁহারই দত্ত বিশ্বাস তোমাদের সকলের সাক্ষাতে ইহাকে এই সম্পূর্ণ সুস্থতা দিয়াছে।” AABen 49.4

প্রেরিতগণ খুব পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, যিহূদীদের সবচেয়ে বড় পাপ ছিল জীবনদায়ী রাজাকে প্রত্যাখ্যান করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া; তবে তাঁরা সতর্ক ছিলেন যেন তাঁদের শ্রোতারা হতাশায় একেবারে ভেঙে না পড়ে। “তোমরা সেই পবিত্র ও ধর্মময় ব্যক্তিকে অস্বীকার করিয়াছিলে,” পিতর বললেন,“এবং চাহিয়াছিলে যেন তোমাদের জন্য এক জন নরঘাতককে দেওয়া হয়,কিন্তু তোমরা জীবনের আদিকর্তাকে বধ করিয়াছিলে; তাঁহাকে ঈশ্বর মৃতগণের মধ্যে হইতে উঠাইয়াছেন, আমরা ইহার সাক্ষী।” “এখন, হে ভ্রাতৃগণ, আমি জানি, তোমরা অজ্ঞানতা বশতঃ সেই কার্য করিয়াছ, যেমন তোমাদের অধ্যক্ষেরাও করিয়াছিলেন। কিন্তু ঈশ্বর তাঁহার খ্রীষ্টের দুঃখভোগের বিষয়ে যে সকল কথা সমস্ত ভাববাদীর মুখ দ্বারা পূর্বে জ্ঞাত করিয়াছিলেন, সেই সকল এইরূপে পূর্ণ করিয়াছেন।” তিনি ঘোষণা করলেন যে, পবিত্র আত্মা তাদেরকে অনুতাপ ও মন পরিবর্তন করতে আহ্বান জানাচ্ছেন। সেই সাথে তিনি তাদেরকে এই নিশ্চয়তাও দিলেন যে, যাঁকে তারা ক্রুশে বিদ্ধ করেছে তাঁরই করুণা না পেলে তাদের পরিত্রাণ লাভের কোন আশা নেই। একমাত্র তাঁর প্রতি বিশ্বাসের মধ্য দিয়েই তাদের পাপের ক্ষমা হতে পারে। AABen 50.1

“অতএব তোমরা মন ফিরাও, ও ফির,” পিতর আকুতি জানালেন, “যেন তোমাদের পাপ মুছিয়া ফেলা হয়,যেন এইরূপে প্রভুর সম্মুখ হইতে তাপশান্তির সময় উপস্থিত হয়।” AABen 50.2

“তোমরা ভাববাদিগণের সন্তান, আর সেই নিয়মেরও সন্তান, যাহা ঈশ্বর তোমাদের পিতৃপুরুষদের সহিত স্থাপন করিয়াছিলেন, তিনি তো অব্রাহামকে বলিয়াছিলেন, ”“আর তোমার বংশে পৃথিবীস্থ সমস্ত পিতৃকুল আশীর্বাদ পাইবে।” ঈশ্বর আপন দাসকে উৎপন্ন করিয়া প্রথমে তোমাদেরই নিকটে তাঁহাকে প্রেরণ করিলেন, যেন তিনি তোমাদের অধর্ম সকল হইতে তোমাদের প্রত্যেক জনকে ফিরাইয়া তদ্দ¡ারা তোমাদিগকে আশীর্বাদ করেন।” AABen 50.3

এভাবেই শিষ্যরা খ্রীষ্টের পুনরুত্থানের কথা প্রচার করলেন। যারা শুনেছিল তাদের মধ্যে অনেকেই এই সাক্ষ্যের অপেক্ষায় ছিল, কাজেই এখন এই বাণী শোনা মাত্রই তারা খ্রীষ্টেতে বিশ্বাস করল। খ্রীষ্ট যা বলেছিলেন সেই জানালেন। খ্রীষ্ট যেভাবে আসবেন বলে তারা ভেবেছিল সেভাবে তিনি আসেননি এবং যদিও বিভিন্ন সময়ে তারা প্রমান পেয়েছেন যে তিনিই ঈশ্বরের পুত্র, তথাপি তারা তাদের অবস্থান থেকে এক চুল নড়েনি এবং শেষ পর্যন্ত তারা তাঁকে ক্রূশে দিয়েছিল। ঈশ্বরের তাদের প্রতি করুণা করে আরও সাক্ষ্য তাদের সামনে উপস্থাপন করেছেন এবং তাঁর প্রতি মন ফিরানোর জন্য আরেকটি সুযোগ তাদেরকে দেওয়া হয়েছে। তিনি শিষ্যদেরকে তাদের কাছে এই কথা পাঠিয়েছেন যে, তারা জীবনের আদিকর্তাকে বধ করেছেন, আর এই ভয়ঙ্কর অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি তাদেরকে আরেকটিবার অনুতাপ করার সুযোগ দিলেন। কিন্তু যিহূদী ধর্মগুরুরা নিজেদের অবস্থা অবস্থান ও ধার্মিকতাকে এতটাই সুরক্ষিত ভেবেছিল যে, খ্রীষ্টকে ক্রূশবিদ্ধ করার জন্য যে মানুষগুলো তাদেরকে অভিযুক্ত করেছিলেন তাঁরা যে আসলে পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণা ও নির্দেশনায় চলছিলেন সেটা তারা মানতে অস্বীকার করল। AABen 50.4

খ্রীষ্টের বিরোধী অবস্থান গ্রহণ করায় প্রতিরোধের প্রতিটি ধাপ এই যাজকদের কাছে তাদের একই অবস্থানে অটল থাকার জন্য একেকটি বাড়তি শক্তি হয়ে উঠতে লাগল। তাদের অন্তরে কঠিনতা ক্রমেই আরও বেশি করে দৃঢ় হয়ে উঠতে লাগল। তারা যে মানতে পারত না তা নয়; তারা পারত, কিন্তু তারা চাইত না। ——————— AABen 52.1

______________________________________«

৬২, ৬৩ পৃষ্ঠা নেই

______________________________________«

———— বরং খ্রীষ্ট যেভাবে কথা বলতেন এই সাক্ষীরাও সেভাবে এমন এক বিশ্বসনীয় শক্তি নিয়ে কথা বলেন যে, তাদের সমস্ত বিরোধীরা নীরব হয়ে গেল। “তিনিই সেই প্রস্তর, যাহা গাঁথকেরা যে আপনারা, আপনাদের দ্বারা অবজ্ঞাত হইয়াছিল, যাহা কোণের প্রধান প্রস্তর হইয়া উঠিল।” AABen 52.2

এখানে পিতর রূপক ভাষা ব্যভার করলেন যা যাজকদের কাছে পরিচিত ছিল। ভাব্বাদীগন বাতিল হয়ে যাওা পাথরের কথা বলেছেন; আর খ্রীষ্ট নিজেই একবার যাজক ও প্রাচীনদেরকে বলেছিলেনঃ “তোমরা কি কখনও শাস্ত্রে পাঠ কর নাই, “যে প্রস্তর গাঁথকেরা অগ্রাহ্য করিয়াছে, তাহাই কোণের প্রধান প্রস্তর হইয়া উঠিল;ইহা প্রভু হইতে হইয়াছে, ইহা আমাদের দৃষ্টিতে অদ্ভুত”? এই জন্য আমি তোমাদিগকে কহিতেছি, তোমাদেরে নিকট হইতে ঈশ্বরের রাজ্য কড়িয়া লওয়া যাইবে, এবং এমন এক জাতিকে দেওয়া হইবে, যে জাতি তাহার ফল দিবে। আর এই প্রস্তরের উপর যে পড়িবে, তাহাকে চুরমার করিয়া ফেলিবে।” মথি ২১:৪২—৪৪। AABen 52.3

যাজাকেরা যখন প্রেরিতদের নির্ভীক কন্ঠস্বর শুনেছিলেন তখন তারা “চিনিতে পারিলেন যে, ইহারা যীশুর সঙ্গে ছিলেন।” AABen 53.1

খ্রীষ্টের রূপান্তরের পর এই অভূতপূর্ব দৃশ্যের শেষে শিষ্যদের সম্পর্কে বলা হয়েছে,“তখন তাঁহারা চক্ষু তুলিয়া আর কাহাকেও দেখিতে পাইলেন না, কেবল যীশু একা ছিলেন।” মথি ১৭:৮। “কেবল যীশু একা” — এই কথাতেই নিহিত আছে জীবন ও ক্ষমতার গূঢ় রহস্য, যা আদি মন্ডলীর ইতিহাস্কে চিহ্নিত করেছিল। শিষ্যরা যখন প্রথম খ্রীষ্টের বাক্য শুনেছিলেন তখন তাঁরা তাঁর প্রয়োজন অনুভব করেছিলেন। তাঁরা ধর্মধামে, ভোজে, পর্বতে, মাঠে তাঁর সাথে অবস্থান করেছেন। শিক্ষকের সাথে যেমন শিক্ষার্থী থাকে তেমনিভাবে তাঁরা খ্রীষ্টের সাথে ছিলেন এবং প্রতিদিন তাঁর কাছ থেকে চিরন্তন সত্যের শিক্ষা গ্রহন করতেন। ক্রাণকর্তার স্বর্গারোহণের পর ভালবাসা ও জ্যোতিতে পূর্ণ স্বর্গীয় উপস্থিতি তাঁদের ছেড়ে চলে যায়নি। এই উপস্থিতি ছিল যেন এক ব্যক্তির উপস্থিতি। ক্রাণকর্তা যীশু, যিনি তাঁদের সাথে চলেছেন,কথা বলেছেন ও প্রার্থনা করেছেন, যিনি তাদেরকে আশা ও সান্ত্বনার বাণী শুনিয়েছেন, তাঁরা ওষ্ঠাধরে শক্তির বানী উচ্চারিত হতে থাকা অবস্থায় তাঁকে স্বর্গে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। স্বর্গদূতেদের রথ এসে তাঁকে গ্রহণ করে তখনও তাঁরা মুখে এই বাণী উচ্চারিত হতে থাকা অবস্থায় তাঁকে স্বর্গে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। স্বর্গদূতদের রথ এসে যখন তাঁকে গ্রহণ করে তখনও তাঁর মুখে এই বানী উচ্চারিত হচ্ছিল, “আর দেখ, আমিই যুগান্ত পর্যন্ত প্রতিদিন তোমাদের সঙ্গে আছি।” মথি ২৮:২০। তিনি মানব মূর্তি ধারণ করে স্বর্গে আরোহণ করেছেন। তাঁরা জানতেন যে, তিনি তাঁদের বন্ধু ও ক্রাণকর্তা হয়ে ঈশ্বরের সিংহাসনের সামনে উপস্থিত হয়েছেন; তাঁদের প্রতি তাঁর সহমর্মিতা এতটুকু পরিবর্তন হয়নি; তিনি সবসময় পীড়িত মানুষের পাশে থাকবেন। তাঁরা জানতেন যে তিনি ঈশ্বরের সামনে তাঁর রক্তের গুনে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন, তাঁরা রক্তাক্ত হাত ও পা দেখিয়ে মনে করিয়ে দিচ্ছেন তিনি তাঁর ত্রাণকৃতদের জন্য কী মূল্য দান করেছেন। আর এই চিন্তা থেকেই তাঁরা আরও বেশি করে তাঁর পরিচর্যায় নিজেদেরকে দৃঢ় করেছেন। তিনি জগতের থাকতে যেমন ছিল সে তুলনায় তাঁর সাথে শিষ্যদের বন্ধন এখন আরও অনেক মজবুত। তাঁদের অন্তরে বসবাসকারী খ্রীষ্টের জ্যোতি ও প্রেম ও ক্ষমতা এখন এতটা ঔজ্জ্বল্য নিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে যা দেখে মানুষ বিস্ময়ে অভিভূত হয়েছে। AABen 53.2

পিতর খ্রীষ্টের পক্ষে যে কথাগুলো বলেছেন তা খ্রীষ্ট স্বয়ং সীলমোহর দিয়েছেন। এই শিষ্যের একেবারে পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল এই ঘটনার সবচেয়ে বড় সাক্ষীটি , যে অলৌকিকভাবে সুস্থ করা হয়েছে। মাত্র করেয় ঘন্টা আগেও এই লোকটিকে দেখে মনে হয়েছিল হতভাগ্য পঙ্গু একজন মানুষ। কিন্তু এখন সে সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকায় এবং তাঁর সাথে পিতরের দুর্বহ সাক্ষ্য যুক্ত হওয়ায় যাজেকেরা ও শাসনকর্তা সম্পূর্ণনীরব হয়ে রইলেন। পিতরের জবানবন্দী খন্ডন করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব ছিল না ,কিন্তু শিষ্যদের শিক্ষা সান বন্ধ করতে তাঁরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন। AABen 54.1

খ্রীষ্টের অন্যতম বিস্ময়কর একটি অলৌকিক কাজ ছিল লাসারকে মৃত্যু থেকে জীবন দান, যা যাজকদেরকে প্রত্যয়ী করেছিল যীশু ও তাঁর আশ্চর্য সমস্ত কাজ এই জগত থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্য, যা জনগণের উপরে তাঁদের প্রভাব ধ্বংস করে দিচ্ছিল। তাঁরা তাঁকে ক্রূশে দিয়েছিল; কিন্তু এখন খুব স্পষ্টভাবে পাওয়া গেল যে, তাঁর নেম অলৌকিক কাজ করা বন্ধ করতে পারেনি, কিংবা তাঁর নামে সত্যের বাণী ঘোষণাও তাঁরা রুদ্ধ করতে পুরো যিরূশালেম আন্দোলিত হয়ে উঠেছিল। AABen 54.2

নিজেদের হতবুদ্ধি অবস্থা লুকানোর জন্য যাজক ও শাসকেরা প্রেরিতদেরকে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন, যেন তাঁর নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করতে পারেন। তাঁরা সকলে এ বিষয়ে একমত হলেন যে, এই লোকটি যে সুস্থ হয়েছেন সেটি অস্বীকার করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না । অলৌকিক কাজটি মিথ্যা বলে প্রচার করতে পারলে তাঁরা খুশিই হতেন ; কিন্তু সেটা অসম্ভব ছিল, কারণ নিখাদ দিনের আলোতে অসংখ্য মানুষের সামনে ঘটনাটি ঘটেছে এবং এতক্ষনে আরও হাজার হাজার মানুষ এই ঘটনার কথা জেনে গেছে। তাঁরা বুঝতে পারছিলেন যে, অবিলম্বে প্রেরিতদের কাজ করা থামাতেই হবে, নতুবা যীশুর অনুসারীদের সংখ্যা কেবল বাড়তেই থাকবে। তাঁদের নিজেরাই তখন বিপদে পড়ে যাবেন, কারণ তাদেরকে ঈশ্বরের পুত্রের হত্যাকান্ডের জন্য দোষী হিসেবে অভিযুক্ত করে বিচার করে হবে। AABen 54.3

তবে শিষ্যদেরকে শেষ করে দেওয়ার জন্য যাজকদের যতই ইচ্ছা থাকুক না কেন , তাঁরা শিষ্যদেরকে কেবল এতটুকুই ভয় দেখাতে পারলেন যে, যদি তাঁরা এরপরেও যীশুর নামে তাঁদের শিক্ষা দানের কাজ অব্যাহত রাখেন তাহলে তাঁরা তাঁদের বিরুদ্ধে মারাত্মক শাস্তিত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবেন। কিন্তু পিতর ও যোহন জবাব দিলেনঃ “ঈশ্বরের কথা অপেক্ষা আপনাদের কথা শুনা ঈশ্বরের সাক্ষাতে বিহিত কি না, আপনারা বিচার করুন; কারণ আমরা যাহা দেখিয়াছি ও শুনিয়াছি তাহা না বলিয়া থাকিতে পারি না।” AABen 55.1

______________________________________«

৬৭-৬৮ পৃষ্ঠা নেই

______________________________________«

----- এই মহান উপহারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাঁদের উপরে যাহাদেরকে ঈশ্বরে তাঁর বাক্যের প্রজ্ঞা দ্বারা আশীর্বান্বিত করেছেন। এই বাক্যকে আমরা চূড়ান্ত বিধান হিসেবে গ্রহণ করব। মানবীয় শাসনব্যবস্থাকে আমরা দেখব ঈশ্বর কর্তৃক নিরূপিত বিধান হিসেবে এবং এর প্রতি বাধ্য হওয়া আমাদের পবিত্র দ্বায়িত্ব। কিন্তু যখন মানবীয় শাস্ন ঈশ্বরীয় শাসনের সাথে সংঘাতে যাবে তখন অবশ্যই আমাদের মানবীয় শাসনের বদলে ঈশ্বরীয় শাসণের অনুগত হতে হবে। সমস্ত মানবীয় আইন কানুনের ঊর্ধ্বে ঈশ্বরের বাক্যকে বিবেচনা করতে হবে। “মণ্ডলী এই কথা বলে” বা “রাষ্ট্র এই কথা বলে” এমন যুক্তি দেখিয়ে কখনোই “প্রভু এই কথা বলেন” কথাটি এড়িইয়ে যাওয়া যাবে না। সব ধরনের পার্থিব কর্তৃত্বের উপরে খ্রীষ্টের মুকুটকে তুলে ধরতে হবে। AABen 55.2

আমরা কখনোই কর্তৃত্বের অবাধ্য হব না। আমাদের লিখিত বা কথিত যে কোন বক্তব্যই অবশ্যই সুবেচ্য হতে হবে, যেন আমরা নিজেদেরকে আইনের চোখে অনাকাঙ্ক্ষিত বা বিপজ্জনক করে না তুলি । আমাদের চলার পথকে রুদ্ধ করে এমন কিছু না ঘটালে আমরা ব্যতিক্রমী কিছু বলব না করব না। আমরা খ্রীষ্টের নামে সামনে এগিয়ে যাব এবং যে সত্য আমাদেরকে ন্যস্ত করা হয়েছে তাঁর পক্ষে দাঁড়াব। যদি মানুষ আমাদেরকে এই কাজ করতে বাধা দেয়, তখন আমরাও প্রেরিতদের মত করে বলব, “ঈশ্বরের কথা অপেক্ষা আপনাদের কথা শুনা ঈশ্বরের সাক্ষাতে বিহিত কি না, আপনারা বিচার করুন; কারণ আমরা যাহা দেখিয়াছি ও শুনিয়াছি , তাহা না বলিয়া থাকিতে পারি না।” AABen 55.3