প্রেরিতগণের কার্য-বিবরণ

48/59

৪৭ অধ্যায়—চূড়ান্ত বন্দী

রোমে পৌল তাঁর বিচার থেকে রেহাই পাবার পর মণ্ডলীর মধ্যে যে কাজ করেছিলেন, তা তাঁর শত্রুদের নজর এড়াতে পারেনি। নীরোর দ্বারা অত্যাচার নিপীড়ন শুরু হবার পর থেকে খ্রীষ্টিয়ানরা সমস্ত স্থানে নিষিদ্ধ দলে পরিণত হলেন। পরবর্তী সময় অবিশ্বাসী যিহূদীরা রোমে অগ্নিকান্ডের উসকানির দোষ পৌলের উপর আনবার পরিকল্পনা করে তাঁকে আটকাতে চাইল। তাদের মধ্যে একজনও এক মুহূর্তের জন্য এই কথা চিন্তা করেনি যে, তিনি অপরাধী; কিন্তু তারা জানত যে, এই রকম অভিযোগ বিশ্বাসযোগ্যতার ক্ষেত্রে দুর্বলতা রয়েছে তাঁকে দন্ড দেবার জন্য দোষী বলে প্রমাণ করার ক্ষেত্রে। তাদের অপপ্রচেষ্টার জন্য পৌল আবার বন্দী হলেন এবং এতে তাঁর চ‚ড়ান্ত কারাবাস তরান্বিত হল। AABen 409.1

রোমে তাঁর দ্বিতীয় যাত্রায় পৌল পূর্বের বিভিনড়ব সঙ্গীদের সঙ্গে মিলিত হয়েছিলেন; অন্যরা আন্তরিকভাবে চাইলেন যেন তাঁর ভাগ্যে যা ঘটবে তার অংশী হতে পারেন। কিন্তু তাদের জীবন এভাবে বিপদগ্রস্থ করতে তিনি চাইলেন না। তাঁর পূর্বের বন্দীদশার সময় যে আনুক‚ল্য তিনি পেয়েছিলেন ততটা পাওয়ার সুযোগ এবারে ছিল না। নীরোর নির্দেশে যে অত্যাচার নিপীড়ন তাঁর উপরে নেমে এসেছিল তা রোমে খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের জন্য অত্যন্ত ভয়াবহ দৃষ্টান্ত হয়েছিল। হাজার হাজার খ্রীষ্টবিশ্বাসী তাদের বিশ্বাসের কারণে সাক্ষ্যমর হয়েছিলেন, অনেকে শহর ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন এবং যারা শহরে অবস্থান করেছিলেন তারা উৎকণ্ঠা এবং ত্রাস নিয়ে বাস করেছিলেন। AABen 409.2

রোমে উপস্থিত হবার পর পৌলকে অন্ধকারময় ভ‚গর্ভস্থ একটি কারাকক্ষে রাখা হল, যেখানে তিনি তাঁর শেষ পরিণতি পর্যন্ত অবস্থান করেছিলেন। শহর এবং জাতির বিরুদ্ধে জঘন্য ও ভয়াবহ অপরাধ করার জন্য প্ররোচণা দেওয়ার অভিযোগে তিনি সার্বজনীনভাবে অভিশপ্ত ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন। কিছু কিছু বন্ধু যারা এক সময় তাঁর ভার বহন করার অংশী ছিলেন এখন তারা একে একে তাঁকে ছেড়ে চলে যেতে লাগলেন। কেউ কেউ পালিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে এবং অন্যরা বিভিনড়ব মণ্ডলীতে প্রচারকার্য করতে যাওয়ার মাধ্যমে। AABen 409.3

হর্মগীনি সবার প্রথমে তাঁকে ত্যাগ করে চলে গিয়েছিল। এরপর দীমা, যে পীড়ন ও বিপদের ঘন মেঘের দেখা দেওয়ার কারণে হতাশাগ্রস্ত হয়ে যন্ত্রণাগ্রস্থ প্রেরিতকে ছেড়ে চলে যায়। ক্রীস্কেন্ত পৌলের দ্বারা গালাতীয় মণ্ডলীতে প্রেরিত হয়েছিলেন, তীত দালমাতিয়াতে, তুখিক ইফিষে। এই অভিজ্ঞতার আলোকে পৌল তীমথিকে লিখেছিলেন, “একা লূক মাত্র আমার সাথে আছেন।” ২ তীমথি ৪:১১। একটি রোমীয় কারাগারের ভ‚গর্ভস্থ স্যাতস্যাতে এবং অন্ধকারময় কক্ষে, বয়সের ভারে এবং কঠোর পরিশ্রমে ভারাক্রান্ত, দুর্বল হয়ে পড়া এবং সীমাবদ্ধতার ফলে এখনকার মত আর কখনও প্রেরিত পৌল তাঁর ভ্রাতৃবর্গের সাহচার্যের আবশ্যকতা বোধ করেননি। প্রিয় শিষ্য এবং বিশ্বস্থ বন্ধু লূকের কার্যসকল পৌলের কাছে মহা সান্ত্বনার বিষয় ছিল এবং তাঁর মাধ্যমে তিনি তাঁর ভ্রাতৃবর্গের সঙ্গে এবং বিভিনড়ব স্থানে মণ্ডলীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। AABen 410.1

পৌলের এই কষ্টভোগের সময় ওনীষিমের ঘন ঘন সাক্ষাৎ করার কারণে তাঁর মন আনন্দে পূর্ণ ছিল। উষ্ণ হৃদয়ের অধিকারী এই ইফিষীয় তাঁর সমস্ত শক্তি দিয়ে কারারুদ্ধ প্রেরিতের কষ্টের ভার লাঘব করেছিলেন। তাঁর প্রিয় শিক্ষক সত্যের পক্ষে অবস্থান করতে গিয়ে বন্দী হয়েছিলেন, যখন তিনি মুক্তি পেয়েছিলেন এবং পৌলের ভাগ্য অধিক সহনীয় তখন তিনি বরাবর যেভাবে লিখে থাকেন সেভাবে তাঁর শেষ চিঠিতে এই প্রিয় শিষ্যকে লিখেছিলেন, “প্রভু অনীষিফরের পরিবারকে দয়া প্রদান করুন, কেননা তিনি বার বার আমার প্রাণ জুড়াইয়াছেন, এবং আমার শৃঙ্খল হেতু লজ্জিত হন নাই; বরং তিনি রোমে উপস্থিত হইলে যত্নপূর্বক অনুসন্ধান করিয়া আমার সঙ্গে দেখা করিয়াছিলেন— প্রভু তাঁহাকে এই বর দিউন, যেন সেই দিন তিনি প্রভুর নিকট দয়া পান— আর ইফিষে তিনি কত পরিচর্যা করিয়াছিলেন, তাহা তুমি বিলক্ষণ জ্ঞাত আছ।” ২ তীমথি ১:১৬—১৮। AABen 410.2

স্বয়ং ঈশ্বর ভালবাসা এবং সহানুভূতির জন্য আকাঙ্ক্ষা হৃদয়ের মধ্যে বপন করেছিলেন। গেৎশিমানী বাগানে মর্মভেদী দুঃখের সময় খ্রীষ্ট সহানুভূতির আকাঙ্ক্ষা করেছিলেন তাঁর শিষ্যদের কাছ থেকে। আর পৌল যদিও আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে, কঠোর পরিশ্রম ও কষ্টভোগ আর সহ্য করতে পারছেন না, তথাপি তিনি সহানুভূতি এবং সাহচার্যের তীব্র আকাঙ্ক্ষা করেছিলেন। তাঁর একাকিত্ব এবং অসহায়ত্বের সময় ওনীষিমের সাক্ষাৎ তাঁর বিশ্বস্ততা ও আনুগত্যকে প্রমাণ করে, এটি তাঁর মনে আনন্দ এবং সন্তুষ্টি বয়ে এনেছিল, যিনি অন্যদের সেবার জন্য নিজের জীবন অতিবাহিত করেছিলেন। AABen 410.3